ইসলামী দৃষ্টিতে যৌতুকের কুফল
এম এ রাজ্জাক হাওলাদার
সূচনা:
যৌতুক বাংলা শব্দ।
আরবী ভাষায় (বায়েনাহ) বলা হয়। প্রচলিত অর্থে
বরের পক্ষে কণের থেকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যা
কিছু আদায় করে থাকেন তারই নাম যৌতুক। ইসলামে যৌতুক প্রথাতো সমর্থন করেই না বরং
আল্লাহ পাক স্বামীকে স্ত্রীর নির্ধারিত মোহর আদায় করা ‘‘ফরজ’’ করে দিয়েছেন।
মহান আল্লাহ যৌতুকের পরিনাম সম্পর্র্কে এরশাদ করেন-
وَإِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَاء فَبَلَغْنَ
أَجَلَهُنَّ فَأَمْسِكُوهُنَّ بِمَعْرُوفٍ أَوْ سَرِّحُوهُنَّ بِمَعْرُوفٍ وَلاَ
تُمْسِكُوهُنَّ ضِرَارًا لِّتَعْتَدُواْ وَمَن يَفْعَلْ ذَلِكَ فَقَدْ ظَلَمَ
نَفْسَهُ وَلاَ تَتَّخِذُواْ آيَاتِ اللَّهِ هُزُوًا وَاذْكُرُواْ نِعْمَتَ
اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَمَا أَنزَلَ عَلَيْكُمْ مِّنَ الْكِتَابِ وَالْحِكْمَةِ
يَعِظُكُم بِهِ وَاتَّقُواْ اللَّهَ وَاعْلَمُواْ أَنَّ اللَّهَ بِكُلِّ شَيْءٍ
عَلِيمٌ
আর যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে
তালাক দিয়ে দাও এবং তারপর তারাও নির্ধারিত ইদ্দত পূর্ন করতে থাকে, তখন তাদেরকে পূর্ব
স্বামীদের সাথে পারস্পারিক সম্মতির ভিত্তিতে নিয়মানুযায়ী
বিয়ে করতে বাধাদান করো না। এ উপদেশ তাকেই দেয়া হচেছ, যে আল্লাহ্ ও কেয়ামত দিনের উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে। এর মধ্যে
তোমাদের জন্য রয়েছে একান্ত পরিশুদ্ধতা ও অনেক পবিত্রতা। আর আল্লাহ্ জানেন, তোমরা তাজান না। (সূরা বাকার-২:২৩১)
হাদীছে যৌতুকের সম্পর্কে বলা হয়ঃ
قَالَ رَسًوْلُ
اللهِ (صـ) مَنْ تَزَوَّجَ اِمْرَأَ ةً بِصَدَقٍ
يَنْوِىْ اَنْ لاَّ
يَؤْدِّيْهِ فَهُوَ ذَانَّ وَمَنْ
اَدَّانَ دَيْنَـا يَنْوِىْ اَنْ
لاَّ يَقْضِيْهِ فَهُوَسَارِقً
যে ব্যক্তি মোহর ধার্য করে কোন মেয়েকে এই নিয়াতে বিয়ে করে যে উক্ত মোহর দিবে না সে ব্যভিচারী। আর সে ব্যক্তি
কোন ঋণ এই নিয়াতে গ্রহণ করে যে তা শোধ করবে না সে
চোর হিসেবে সাব্যস্থ হবে। (কুহাস ৩য়-৭৩পৃঃ)
সুতরাং যৌতুক প্রথা
আজ আমাদের সমাজে একটি সামাজিক ব্যাধি হিসেবে
পরিণত হয়েছে। অসংখ্য মা বোনকে অকাতুরে মরতে হচ্ছে। যৌতুকের মরণ থাবায় আমাদের ব্যক্তি
সমাজকে গ্রাস করছে তিলে তিলে।
যৌতুক কি ?
যৌতুক প্রচলিত অর্থে
বরের পক্ষ থেকে কনের পক্ষ থেকে তাদের ইচ্ছার
বিরুদ্ধে যা কিছু আদায় করা হয় বিয়েতে নিযে থাকেন তার নাম যৌতুক। যৌতুক প্রথার পরিণতী
সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন-
وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ
তোমরা তাদের (স্ত্রীদের)
সাথে সৎভাবে জীবন যাপন কর। (সূরা নিসা-৪:১৯)
আমরা জানি পরিবার রাষ্ট্রের
প্রথম স্তর, সামগ্রিক জীবনের প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর। পরিবারেই বিকশিত রূপ রাষ্ট্র। স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, পিতা-মাতা, ভাই-বোন প্রভৃতি একান্নভূক্ত ব্যক্তিদের
সমন্বয়ে গড়ে ওঠে পরিবার। আর বৃহদায়তন পরিবার
কিংবা বহু সংখ্যক পরিবারের সমন্বিত রূপ হচ্ছে সমাজ। একটি সুসংগঠিত রাষ্ট্রের মূলে নিহিত
রয়েছে সুসংগঠিত সমাজ রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবার ওতপ্রোত এবং পারষ্পরিকভাবে
গভীর সম্পর্কযুক্ত। এর কোন একটিকে বাদ দিয়ে
অপর কোন একটির কল্পনাও অসম্ভব। পরিবার থেকেই শুরু হয় মানুষের সামাজিক জীবন। সামাজিক
জীবনের সুষ্ঠুতা নির্ভর করে পারিবারিক জীবনের সূষ্ঠুতার উপর। কলহ মুক্ত হয়। যৌতুক বিহিন
পরিবার হয়। তার প্রতি আল্লাহর রহমত থাকে।
একটি প্রাসাদের দৃঢ়তা
ও স্থায়িত্ব তার ভিত্তির দৃঢ়তা ও স্থায়িত্বের উপর নির্ভরশীল। তাই সামাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে
মানব সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রাথমিক ভিত্তি এই পরিবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
একজন পুরুষ ও একজন
নারী বিবাহিত হয়ে যখন একসঙ্গে জীবন যাপন করতে শুরু করে, তখনি একটি পরিবারের
ভিত্তি স্থাপিত হয়। এখানে পুরুষ হয় স্বামী,
আর নারী হয় স্ত্রী। বিয়ে ও দাম্পত্য জীবন বিশ্বপ্রকৃতির এক স্বভাবসম্মত
বিধান। এ এক চিরন্তন ও শাশ্বত ব্যবস্থা যা কার্যকর হয়ে রয়েছে বিশ্ব প্রকৃতির পরতে পরতে
প্রত্যেকটি জীব ও বস্তুর মধ্যে। আল্লাহ তাবারক ওতায়ালা বলেন-
وَمِن كُلِّ شَيْءٍ خَلَقْنَا زَوْجَيْنِ
لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ
আমি প্রত্যেক বস্তু
জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি, যাতে তোমরা হৃদয়ঙ্গম কর। ( সূরা যারিয়াত-৫১:৪৯)
মা, বাবা স্ত্রী,
সন্তান- সন্ততি সকলকে নিয়ে সমাজে গঠন হয় পরিবার। কর্তার পরিকল্পনা
অনুযায়ি যে পরিবার গঠন হয় তাকে আমরা পরিকল্পিত পরিবার বলে থাকি। সুতরাং পরিবারের কর্তার
প্রতি সকলের দায়িত্ব রয়েছে। তা সঠিক ভাবে পালন করতে হয়।
স্বামী-স্ত্রী পরিকল্পিত ভাবে পরিকল্পনা
করলে পরিবারের সকলের হক আদায় হবে। পরিকল্পিত
পরিবার গঠনে সকলের ভূমিকা থাকলে ভাল হয়।
স্ত্রীর হক বা অধিকার
সম্পর্কে আল্লাহ বলেন- هُنَّ لِبَسُوْ لَّكُمْ-‘‘তোমরা একে অপরের পরিপুরক।’’ এখানে আল্লাহ তায়ালা তাদের মধ্যকর মিল মহব্বত এবং পারিবারিক জীবন কে সুন্দর সুখিময়
করার জন্য বলেছেন।
মরণ বেদী যৌতুকের উদাহরণঃ
মরণ বেদী যৌতুক আমাদের
সমাজের এক রোগে পরিণত হয়েছে। যৌতুক ছাড়া কোন বিবাহ হয়না বলে আমাদের একটি ধারণা তৈরী
হয়েছে। অথচ রাসূল পাক (সাঃ) এবং সাহাবায় আজমাঈনের আমলে এইরকম কোন প্রথা চালু ছিলনা।
যৌতুকের দায়ে অনেককে একালা ছাড়া কিংবা প্রাণ হারাতে হয়েছে। বাস্তব কয়েকটি উদাহরণ আপনাদের সামনে পেশ করব।
সম্প্রতিক কিছু যৌতুকের সিকার:
০১. গত ১৮ ফেব্রুয়ারী/২০০৬ ইউনিট মুটি ভেশনের জন্য সকল ফরমেসনে সেনা সদরের পত্র দিয়েছে। ঘাটাইল
সেনাঃসৈনিক আমান- স্ত্রীকে শশুর বাড়ী থেকে
যৌতুক আনার জন্য চাপ প্রেয়েগ করে। এক
পর্যায়ে তার জের হিসেবে নিজে আত্মহত্যা করে।
০২. ২০০৪ সালের জুন মাসের গঠনা। রাজশাহীর বাঘামারা ইউনিয়ানের ঘটনা। দৈনিক আজকের কাগজ-১৪জুন রাজশাহী রহিমা
নামে হত দরিদ্র পিতা আবুলের সন্তান। দুই বছর আগে বিবাহ হয় পার্শবর্তী এলাকার কাজল নামে এক ব্যক্তির সাথে।
রহিমার বাবা যৌতুকের টাকা না দেওয়ায় তাকে হত্যা করে।
০৩. ২০০৫ সালে ২১ ডিসেম্ভর মাসের ঘটনা। ‘‘দৈনিক দিনকাল’’ ভাগের হাট জিলার আসাকান্দি গ্রামে। রিমা তার স্বামীর ও শাশুরীর হাতে খুনতি র দাগ খেতে হয় যৌতুকের টাকা তার পিতা পুরা
দিতে না পারায়।
০৪. বাংলাদেশের গত ২০০১০ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়
যে, গড়ে ১৫ জনের বেশী স্বামীর ঘর করা সম্ভাব হয়না।
যৌতুকের কুফলঃ
বিবাহ মানেই যৌতুক।
এটা প্রচলন হয়েছে সমাজের মধ্যে চাই তারা ধনী কিংবা গরীব সকলের মাঝে কম-বেশী চলন রয়েছে। যৌতুকের কুফলে সমাজ আজকের
ব্যধিতে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়াও অনেক তরু-তাজা
প্রাণ কেরে নিয়েছে অকালে। নিন্মে কয়েকটি গুরুত্ব পূর্ণ দিক তুলে ধরলাম-
১। আল্লাহর হুকুম অমান্য করাঃ
যৌতুকের প্রচলনের
কারণে মানুষ আল্লাহর হুকুম থেকে দুরে
যাচ্ছে। মহান আল্লাহ বিবাহের জন্য স্বামী-স্ত্রীকে ‘মহর ’ প্রদানের কথা বলছেন। আর এটা দেওয়া ‘ফরজ’
। মহর সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-
وَأُحِلَّ لَكُم مَّا وَرَاء ذَلِكُمْ أَن
تَبْتَغُواْ بِأَمْوَالِكُم مُّحْصِنِينَ غَيْرَ مُسَافِحِينَ
আর তোমাদের জন্যে সব
নারী হালাল করা হয়েছে, শর্ত এই যে, তোমরা তাদেরকে সীয় অর্থের (মহরানার) বিনিময়ে তলব করবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য-ব্যভিচারের
জন্য নয়। অনন্তর তাদের মধ্যে যাকে তোমরা ভোগ করবে, তাকে তার নির্ধারিত হক দান কর । (সূরা নিসা-৪:২৪)
হাদীছে নারীদের হক তথা অধিকার পুরনের জন্য বলেছেন-
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ (رضـ) قَالَ
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ (صـ) اَحَقٌّ
الشُّرُوْطِ اَنْ تُوْفُوْا بِهِ مَا اسْتَحْلَلْتُمْ بِهِ الْفُرُوْجَ
উকবা ইবনে আমের (রাঃ)
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- যে শর্তে তোমরা (স্ত্রীদের) লজ্জাস্থান হালাল কর তা
অবশ্যই তোমাদেরকে পুরণ করতে হবে। (বুখারী, মুসলিম, কুহাস- ৩য়-৭৩)
এখানে একটি কথা উলেখ করা প্রয়োজন যে, সমর্থানুযায়ী তার ‘‘মহর’’ বাধবে। কেউ কেউ কম
বেধে বলে এর চেয়ে আমার আর কিছু করার নাই তা ঠিকনা। অথবা স্ত্রীর সাথে বাসর রাত্রে মহর মাপ করে নেওয়া
এক শ্রেনীর মানুষের অব্যাস। সাময়িক মাপ হলেও পরে আদায় করে দিতে হবে। নতুবা গুনাহ গারী
থাকবে । এহেন অবস্থায় মৃত্যু হলে এর জন্য গাহগারী
হতে হবে। (-ফতুয়া আলগীরি)
সুতরাং আল্লাহ পাক
যে, আদেশ করেছেন তা মান্য করা ‘‘ফরজ’’ । অসামাজিক ব্যধিগুল আজ আমাদের গ্রাস করছে পদে পদে।
২। বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনাঃ
বিবাহ বন্ধনের জন্য পাত্র ও পাত্রীকে মুসলিম, বালিগ, বুদ্ধিজ্ঞান সম্পূর্ণ
হতে হবে। ইসলাম শরীআতের দৃষ্টিতে ঠিক রাখতে হবে। এবং পরস্পরের প্রতি যেসব অধিকার ও
কর্তব্য রয়েছে তা পালন করতে হবে।
সামাজিক ব্যধির কারণে
যৌতুকের ফলে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা অহরহ হচ্ছে। ছেলে-মেয়ে তারা বিবাহের শর্ত পালন না
করায় অন্যায় হয়ে যাচ্ছে। মোহর মেয়ের অধীকার তাই আল্লাহ বলেন-
وَآتُواْ النِّسَاء صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً
فَإِن طِبْنَ لَكُمْ عَن شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَّرِيئًا
আর তোমরা স্ত্রীদেরকে
তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে। তারা যদি খুশী হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা ¯¦াচছšেদ্য ভোগ কর। (সূরা নিসা-৪:০৪)
আজকের সমাজে এর বিপরিত
হচ্ছে ছেলে মেয়েকে মোহর দিয়ে তার পরিবর্তে মেয়ে ছেলেকে যৌতুক দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অসামাজিক
কারণে অনেক মা-বোনের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটছে। যৌতুকের টাকা না দিলে চলে আসে নির্যাতন পরে
বিবাহ বিচ্ছেদ।
৩। কন্যা দায় গ্রস্থ হওয়াঃ
ইসলামী আইনে বিবাহকার্য
ও বিবাহ অনুষ্ঠান একটি পবিত্র ও ইবাদাতের অনুষ্ঠান। কোন
ব্যক্তির কন্যা জন্ম হওয়া মানি তার দায়গ্রস্থ হওয়া বলে মনে করে। বিবাহ দিতে
হলে তাকে অনেক টাকা পয়সা দিয়ে বিবাহ দিতে হবে । এই চিন্তা করা। নারীরা যেন একটি সমাজের
বোঝার ন্যায় হয়ে আছে। ইসলাম কিন্তু তা করেনি। ইসলাম সাম্যের দৃষ্টি ভঙ্গি দিয়েছে। আমরা
আমাদের আশে পার্শ্বের দিক লক্ষ্য করলে দেখবা যাবে
আমাদের অবস্থা কত নিচে নেমে গিয়েছে।
যৌতুকের টাকা সংগ্রহ না করার কারণে অনেক বাবা-মা
আছে তাদের বিবাহ দিতে পারছেনা। আমরা এই কথা
মনে রাখিনা যে আজকের আমি যৌতুক নিচ্ছি কালকের আমাকেই এর চেয়ে দ্বিগুণ দিতে হবে।
৪। যৌতুক সামাজিক ব্যধিতে পরিণত হয়েছেঃ
আমাদের দেশ বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে তুলনা করলে দেখা যায় যে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারতে যৌতুক প্রথার
প্রচলন দেখা যায় । কিন্তুু বিশ্নের বড় বড় দেশ
গুলিতে এর ছোয়াও যায় নি। অমুসলিমদের রিতি-নীতি আজ আমাদের মাঝে চলে আসছে। হিন্দু, বদ্ধ জাতীর বিবাহের
নীয়ম হলো তার সকল কিছু কল্যাকে দিয়ে দেন। এর পর বাবার থেকে আর অন্য কিছু পাননা। তাই
মুসলমান তাদের রীতি-নীতি অনুস্মরণ করছে। মুসলমান কণ্যার বিবাহ হলেও বাবার বাড়ী বা সম্পত্তির
ভাগ সে পায়। বিবাহের নিয়ম নিতিতে অনেক কিছু পায় এতকিছুর পর যৌতুক নিতে হবে
এই চিন্তা তার মাথায় কাজ করে।
যৌতুক দুরীকরণে করণীয়:
সামাজিক ব্যধিকে দুর
করতে হলে কতিপয় করণীয় রয়েছেঃ
১। বিবাহের ইসলামী
শরীআতের নিয়ম-নিতী জানতে হবে।
২। সামাজিক ভাবে যৌতুক
বয়কট করতে হবে।
৩। সকলকে সচেতনতা বৃদ্ধি
করতে হবে।
৫। সম্বভ হলে ইসলামী
পারিবারিক আইন মানতে হবে।
৬। যৌতুক দিবনা ও নিবনা এই অঙ্গীকার করতে হবে।
৭। সরকারী ভাবে প্রতিরোধ করা।
৮। বিবাহে ‘‘কুফু বা ধান (ধনি-দরিদ্র রক্ষ করা।
যৌতুক প্রতিরোধে করণীয়:
অতি ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলতে হয়, অভিশপ্ত যৌতুকবিরোধী আইন থাকা সত্ত্বেও দেশের শহর, নগর, গ্রাম, গঞ্জসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের
এখানে-সেখানে প্রকাশ্যে, চুপিসারে যৌতুকজনিত হত্যাকাণ্ড, অত্যাচার, নির্যাতন, আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটছে। পরিণামে মা-বোন হচ্ছেন লাঞ্ছিত ও নারীকুল হচ্ছে অপমানিত।
ইসলামী দিকদর্শন ও নীতিমালায় যৌতুক লেনদেন শরিয়তের ঘোর পরিপন্থী। সেদিক দিয়ে আলেম, উলামা, ইমাম ও কাজি সাহেবদের
যৌতুক প্রতিরোধে অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। এ অভিশপ্ত প্রথাটির মূলোচ্ছেদ এবং
দেশকে যৌতুকবিহীন করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারেন তারা। দেশে লাখ লাখ মসজিদ-মাদ্রাসা
রয়েছে এবং এতে রয়েছেন অসংখ্য আলেম। এসব আলেম,
ইমাম ও কাজি সাহেব যদি মসজিদে নামাজের আগে যৌতুক থেকে বিরত
থাকার তাগিদ দিতে থাকেন, তাহলে যৌতুকের অভিশপ্ত প্রথা দেশ থেকে বিলুপ্ত হতে পারে। যৌতুক প্রতিরোধে আলেম, ওলামা, পীর-মাশায়েখ, মুফতি, ইমাম, কাজি সাহেব ও সরকারের
কাছে কয়েকটি সুপারিশমালা পেশ করছি।
১. যৌতুক লেনদেন একটি
অভিশপ্ত প্রচলন এবং ঘৃণাজনক প্রথা। এর বিরুদ্ধে গণসচেতনতা বাড়াতে জনমত গড়ে তোলার লক্ষ্যে
দেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়াজ, নসিহত, সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, আলোচনা অনুষ্ঠান করে যৌতুক প্রতিরোধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলা আবশ্যক। দুঃখজনক
হলেও সত্য যে, যৌতুকবিরোধী আইন থাকলেও তার বাস্তবায়ন নেই। তাই দেশের অসহায় নারীদের যৌতুকের
নির্যাতন থেকে রক্ষা করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
২. যৌতুক দিয়ে বিয়ে
সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে।
৩. দেশের সব মসজিদে
জুমার খুদবার আগে যৌতুক সম্পর্কে শরিয়তের বিধান ও হুকুম সম্পর্কে অবহিত করতে হবে।
৪. সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে
পরিণত বয়সের ক্লাসগুলোতে 'যৌতুক' যে অত্যন্ত জঘন্য ও অভিশপ্ত প্রথা সে বিষয়ে শিক্ষা প্রদান করতে হবে।
৫. গ্রাম, গঞ্জ, পাড়া-মহল্লায় সর্বস্তরের
সমাজকর্মীদের নিয়ে 'যৌতুক প্রতিরোধ কমিটি' গঠন করতে হবে। শুধু তাই নয়, এর বাস্তবায়নের জন্য মুরবি্বদের সচেতন ও শক্ত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। যৌতুক
দিয়ে বিয়ে-শাদিতে যারা জড়িত তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে।
৬. যৌতুক আদায়ে যেসব
পাষণ্ড স্বামী স্ত্রীকে মারধর করে বা বাবার বাড়িতে টাকা বা অর্থ আনতে পাঠিয়ে দেয়, তাদের তাৎক্ষণিকভাবে
পাকড়াও করে পুলিশে সোপর্দ করতে হবে।
৭. বিশেষ করে কাবিননামা
ফরমে 'যৌতুকের কোনো দাবি নেই' মর্মে আদালতগ্রাহ্য হলফনামায় স্বাক্ষরদানের ধারা প্রবর্তনের দাবি সরকারের কাছে
তুলে ধরতে হবে।
৮. দেশে অসংখ্য কন্যাদায়গ্রস্ত
গরিব-দুঃখী, অসহায় বাবা-মার বিয়েযোগ্য কন্যাদায়গ্রস্ত পরিবার আছে, যারা অভাবের জন্য বিয়ে
সুসম্পন্ন করতে পারছে না। বিয়েযোগ্য এসব মেয়ের বিয়ের বিষয়ে দেশের ধনাঢ্য, বিত্তবান ও সরকারকে
এগিয়ে আসতে হবে।
৯. দেশের সব জাতীয়
সংবাদপত্র, বেতার, টিভি এবং দেশি চ্যানেল মিডিয়াকে যৌতুক প্রতিরোধে যৌতুকবিরোধী টক শোর ব্যবস্থা
করতে হবে। এসব টক শোতে আলেম, ওলামা, ইমাম, পীর-মাশায়েখদের দিয়ে যৌতুকের ভয়াবহ কুফল পরিণতির কথা জনসমক্ষে তুলে ধরার ব্যবস্থা
করতে হবে।
১০. যৌতুকবিহীন বিয়ে
সম্পন্ন করতে দেশের সর্বত্র নিজ নিজ এলাকার গণ্যমান্য মুরবি্ব, অভিভাবক মহল, ধনাঢ্য-বিত্তবান, আলেম, ওলামা, ইমাম ও কাজি সাহেবদের
যৌতুক লেনদেন বন্ধ করার মনমানসিকতা তৈরি করতে হবে। মনে রাখবেন, বিয়ে-শাদি মানবজীবনের
একটি পবিত্র কাজ। অতএব আসুন, যৌতুক লেনদেন চিরতরে বিলুপ্ত করে নিজ নিজ ক্ষেত্রে মানবিক কর্তব্য পালনে সচেষ্ট
হই।
শেষকথা:
যৌতুক প্রথা আমাদের
সমাজের বেদী বলে মনে করি, কিন্তুু দুর করণের জন্য কোন কাজ করি না।
মেয়ের বাবা-মা দায় গ্রস্ত হয়ে যৌতুক দিচ্ছে।
প্রতিটি বাবা-মা অভিবাবক যদি সচেতন হয় এবং সমাজে যৌতুকের কুফুল থেকে বের হওয়ার চেষ্টা
করে তবে তার সফলতা পাবে ব্যক্তি পরিবার সমাজে ও সর্বপরি রাষ্ট্রের লোক । যৌতুক দিবনা এবং যৌতুক
নিবনা এই অঙ্গীকার করতে হবে তবেই সমাজে শান্তি আসবে।
সুতরাং যৌতুকের কারণে
আর যেন কোন সন্তাকে অকালে মরতে না হয এবং কোন বাবা-মা যেন অন্যের
কাছে বিচার নিয়ে যেতে না হয়। ইসলামের সেই সোনালী যুগে আমাদের ফিরে যেতে হবে।
প্রতিদিন পত্র/পত্রিকা খুলে দেখা যায় যে, যৌতুকের দায়ে আমাদের সমাজের অনেক নারী
আত্মহত্তা পথ বেচে নিয়েছে। কেন এই দুরাবস্থান
। এহেন অবস্থা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। ইসলামের যুগে কোন যৌতুক প্রথার প্রথা
ছিলনা বর্তমানে সমাজে কোন কোন এলাকায় এর প্রভাবতা
এত বেশী যে, যৌতুক ছাড়া বিবাহ কল্পনা করা যায় না।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে
আমরা বুঝতে পারি যে, ইসলাম দৃষ্টিতে যৌতুক লোভ লালসা পরিহার
করা। প্রিয় সৈনিক বৃন্দ আসুন আমরা সুন্দর সমাজ বির্নিমানে যৌতুক পরিহার করি, যৌতুক মুক্ত সমাজ গঠন
করতে নিজ থেকে শুরু করি। আল্লাহ আমাদের সহায় হউন। আমিন।।
No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com