সৎকর্ম বা আমলে সালেহার গুরুত্ব
এম এ রাজ্জাক হাওলাদার
ভুমিকা:
মহান আল্লাহ আমাদেরকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসাবে এই পৃথিবীতে
পাঠিয়েছেন। আমরা যেন পৃথিবীতে খারাপ কাজ করে অনর্থ সৃষ্টি না করি। বরং ভালো কাজ
করে দুনিয়াতে নিজেরা ভালোভাবে চলি এবং সমাজে বসবাসরত সকল মানুষকে ভালোভাবে থাকতে ও
চলতে সাহায্য করি। মহান আল্লাহর নির্দেশ মেনে এবং মহানবী (সাঃ) এর দেখানো পদ্ধতি
অনুসরণ করে যদি কাজ করি তাহলে আমরা সকলে মিলে অনেক বেশী ভালো থাকতে পারবো। আমাদের
কাজগুলো হবে আমলে সালেহ এবং আমরা পারলৌকিক অনন্ত কালের জীবনে পরম শান্তিতে থাকতে
পারবো।
আমলে সালেহ এর শর্ত:
আমাদের দৃষ্টিতে ভালো কাজ হলেই সেটা আমলে সালেহ হবে না। কোন
কাজ আমলে সালেহ হতে হলে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। সে শর্তগুলো নিম্নে আলোকপাত করা
হলোঃ-
ক. তাওহীদ ও রিসালাতের স্বীকৃতি:
مَنْ
عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ
حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا
يَعْمَلُونَ
যে সৎকর্ম
সম্পাদন করে এবং সে ঈমানদার, পুরুষ হোক
কিংবা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের
কারণে প্রাপ্য পুরষ্কার দেব যা তারা করত। (সূরা নাহল-১৬ : ৯৭)
وَالَّذِينَ
كَفَرُوا أَعْمَالُهُمْ كَسَرَابٍ بِقِيعَةٍ يَحْسَبُهُ الظَّمْآنُ مَاءً حَتَّى
إِذَا جَاءَهُ لَمْ يَجِدْهُ شَيْئًا وَوَجَدَ اللَّهَ عِنْدَهُ فَوَفَّاهُ
حِسَابَهُ وَاللَّهُ سَرِيعُ الْحِسَابِ
যারা
কাফের,
তাদের কর্ম মরুভুমির মরীচিকা
সদৃশ,
যাকে পিপাসার্ত ব্যক্তি পানি
মনে করে। এমনকি সে যখন তার কাছে যায়, তখন কিছুই পায় না এবং পায় সেখানে আল্লাহকে, অতঃপর আল্লাহ তার হিসাব চুকিয়ে দেন। আল্লাহ দ্রুত হিসাব
গ্রহণকারী। (সূরা নূর-২৪ : ৩৯)
খ. ইখলাস:
قُلْ
إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ
وَاحِدٌ فَمَنْ كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا
وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا
বলুন, আমিও তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহই একমাত্র ইলাহ। অতএব যে ব্যক্তি তার
পালনকর্তার সুসাক্ষাত কামনা করে, সে যেন
সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরীক না করে। (সূরা কাহাফ-১৮ : ১১০)
গ. সুন্নাহ মোতাবেক কাজ হতে হবে:
عَنْ
عَائِشَةُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ
عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ
আয়শা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি এমন কোন কর্ম করলো যাতে আমার নির্দেশনা নেই, তা প্রত্যাখ্যাত হবে। (মুসলিম : ৪৩৮৫)
হাদীসে রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন,
عَنْ
أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ َمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي
আনাস ইবনে
মালেক (রাঃ) বলেন বর্ণিত,
মহানবী (সাঃ) বলেছেন, যারা আমার সুন্নাতের ব্যতিক্রম করবে তারা আমার দলভুক্ত নয়।
(বুখারী-৫০৬৩)
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,
يَسْأَلُونَكَ
عَنِ الْأَنْفَالِ قُلِ الْأَنْفَالُ لِلَّهِ وَالرَّسُولِ فَاتَّقُوا اللَّهَ
وَأَصْلِحُوا ذَاتَ بَيْنِكُمْ وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنْ كُنْتُمْ
مُؤْمِنِينَ
আপনার
কাছে জিজ্ঞেস করে,
গনীমতের হুকুম। বলে দিন, গণীমতের মাল হল আল্লাহর এবং রাসূলের। অতএব তোমরা আল্লাহকে
ভয় কর এবং নিজেদের অবস্থা সংশোধন করে নাও। আর আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের হুকুম মান্য
কর-যদি ঈমানদার হয়ে থাক। (সূরা আনফাল-৮ : ০১)
অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন,
وَنَادَى
نُوحٌ رَبَّهُ فَقَالَ رَبِّ إِنَّ ابْنِي مِنْ أَهْلِي وَإِنَّ وَعْدَكَ الْحَقُّ
وَأَنْتَ أَحْكَمُ الْحَاكِمِينَ قَالَ يَا نُوحُ إِنَّهُ لَيْسَ مِنْ أَهْلِكَ
إِنَّهُ عَمَلٌ غَيْرُ صَالِحٍ فَلَا تَسْأَلْنِ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ
إِنِّي أَعِظُكَ أَنْ تَكُونَ مِنَ الْجَاهِلِينَ
আর নূহ
(আ:) তাঁর পালনকর্তাকে ডেকে বললেন: হে পরওয়ারদেগার! আমার পুত্র তো আমার পরিজনদের
অন্তর্ভুক্ত;
আর আপনার ওয়াদাও নিঃসন্দেহে
সত্য আর আপনিই সর্বাপেক্ষা বিজ্ঞ ফয়সালাকারী। আল্লাহ বলেন: হে নূহ! নিশ্চয় সে
আপনার পরিবারভুক্ত নয়। নিশ্চই সে দুরাচার! সুতরাং আমার কাছে এমন দরখাস্ত করবেন না, যার খবর আপনি জানেন না। আমি আপনাকে উপদেশ দিচ্ছি যে, আপনি অজ্ঞদের দলভুক্ত হবেন না। (সূরা হুদ-১১ : ৪৫-৪৬)
আমলে সালেহ যারা করেন তারা সৃষ্টির সেরা এবং তাদের
উপর আল্লাহ সন্তুষ্ট:
إِنَّ
الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أُولَئِكَ هُمْ خَيْرُ الْبَرِيَّةِ
جَزَاؤُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا
الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ
ذَلِكَ لِمَنْ خَشِيَ رَبَّهُ
যারা ঈমান
আনে ও সৎকর্ম করে,
তারাই সৃষ্টির সেরা। তাদের
পালনকর্তার কাছে রয়েছে তাদের প্রতিদান চিরকাল বসবাসের জান্নাত, যার তলদেশে নির্ঝরিণী প্রবাহিত। তারা সেখানে থাকবে
অনন্তকাল। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। এটা তার
জন্যে,
যে তার পালনকর্তাকে ভয় কর।
(সূরা বায়্যিনাহ-৯৮ : ০৭-০৮)
পবিত্র জীবন ও উত্তম প্রতিদান:
مَنْ
عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ
حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا
يَعْمَلُونَ
যে সৎকর্ম
সম্পাদন করে এবং সে ঈমানদার, পুরুষ হোক
কিংবা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের
কারণে প্রাপ্য পুরষ্কার দেব যা তারা করত। (সূরা নাহল-১৬ : ৯৭)
ক্ষতিগ্রস্ততা থেকে বাঁচা যাবে:
وَالْعَصْرِ
إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا
الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ
কসম
যুগের! নিশ্চয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত কিন্তু তারা নয়, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে উপদেশ
দেয় সত্যের এবং উপদেশ দেয় সবরের। (সূরা আসর-১০৩ : ০১-০৩)
আল্লাহর পক্ষ থেকে হেদায়েত পাওয়া যায়:
إِنَّ
الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ يَهْدِيهِمْ رَبُّهُمْ بِإِيمَانِهِمْ
تَجْرِي مِنْ تَحْتِهِمُ الْأَنْهَارُ فِي جَنَّاتِ النَّعِيمِ
অবশ্য
যেসব লোক ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তাদের পালনকর্তা তাদেরকে ঈমানের মাধ্যমে হেদায়েত দান করবেন।
এমন সুখের জান্নাতের দিকে পথ দেখাবেন যার তলদেশে প্রবাহিত হয় প্রস্রবণসমূহ। (সূরা ইউনুস-১০ : ০৯)
শাসনকর্তৃত্ব দান ও ধর্মকে সুদৃঢ়করণ:
وَعَدَ
اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ
لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِي الْأَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ
وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِينَهُمُ الَّذِي ارْتَضَى لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُمْ
مِنْ بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْنًا يَعْبُدُونَنِي لَا يُشْرِكُونَ بِي شَيْئًا وَمَنْ
كَفَرَ بَعْدَ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ
তোমাদের
মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন। যেমন তিনি
শাসনকর্তৃত্ব দান করেছেন তাদের পূর্ববতীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের
ধর্মকে,
যা তিনি তাদের জন্যে পছন্দ
করেছেন এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে শান্তি দান করবেন। তারা আমার
ইবাদত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। এরপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে, তারাই অবাধ্য। (সূরা নূর-২৪ : ৫৫)
সন্তান ও সম্পদের হেফাযত:
وَأَمَّا
الْجِدَارُ فَكَانَ لِغُلَامَيْنِ يَتِيمَيْنِ فِي الْمَدِينَةِ وَكَانَ تَحْتَهُ
كَنْزٌ لَهُمَا وَكَانَ أَبُوهُمَا صَالِحًا فَأَرَادَ رَبُّكَ أَنْ يَبْلُغَا
أَشُدَّهُمَا وَيَسْتَخْرِجَا كَنْزَهُمَا رَحْمَةً مِنْ رَبِّكَ وَمَا فَعَلْتُهُ
عَنْ أَمْرِي ذَلِكَ تَأْوِيلُ مَا لَمْ تَسْطِعْ عَلَيْهِ صَبْرًا
প্রাচীরের
ব্যাপার-সেটি ছিল নগরের দুজন পিতৃহীন বালকের। এর নীচে ছিল তাদের গুপ্তধন এবং তাদের
পিতা ছিল সৎকর্ম পরায়ন। সুতরাং আপনার পালনকর্তা দায়বশতঃ ইচ্ছা করলেন যে, তারা যৌবনে পদার্পন করুক এবং নিজেদের গ্প্তুধন উদ্ধার করুক।
আমি নিজ মতে এটা করিনি। আপনি যে বিষয়ে ধৈর্যধারণ করতে অক্ষম হয়েছিলেন, এই হল তার ব্যাখ্যা। (সূরা কাহাফ-১৮ : ৮২)
বিপদমুক্তির ওয়াসীলা হয় আমলে সালেহ:
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, মহানবী (সাঃ) বলেছেন: একদা তিন ব্যক্তি হেঁটে চলছিল। এমন
সময় প্রবল বৃষ্টি শুরু হলে তারা এক পাহাড়ের গুহায় প্রবেশ করে। হঠাৎ একটি পাথর
গড়িয়ে তাদের গুহার মুখ বন্ধ করে দেয়। ঐ তিনজন তাদের তিনটি নেক কাজের ওয়াসীলা করে
মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। প্রথমজন পিতা-মাতার সাথে সদাচরণের, দ্বিতীয়জন ব্যভিচার থেকে বিরত থাকার এবং তৃতীয়জন কাজের
লোকের সাথে উত্তম আচরণের ওয়াসীলা করে দোয়া করেছিলেন। ফলে আল্লাহ গুহার মুখের
পাথরটি সরিয়ে দিয়ে তাদের বিপদ থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করেন। (সহীহ বুখারী : ২২১৫)
আল্লাহর মহব্বত ও নৈকট্য লাভ:
إِنَّ
الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَيَجْعَلُ لَهُمُ الرَّحْمَنُ وُدًّا
যারা
বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদেরকে দয়াময় আল্লাহ ভালোবাসা দেবেন। (সূরা মারইয়াম-১৯ : ৯৬)
উত্তম শেষ পরিণতি:
عَنْ
أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا
أَرَادَ اللَّهُ بِعَبْدٍ خَيْرًا اسْتَعْمَلَهُ فَقِيلَ: كَيْفَ يَسْتَعْمِلُهُ
يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: يُوَفِّقُهُ لِعَمَلٍ صَالِحٍ قَبْلَ الْمَوْتِ
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা যদি
কোন বান্দার কল্যাণ চান তাহলে তাকে কাজ করার তাওফীক দান করেন। প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি কিভাবে কাজ করার তাওফীক দান করেন? তিনি সেই বান্দাকে মারা যাওয়ার আগে সৎকাজের সুযোগ দান করেন।
(তিরমিযী : ২১৪২)
মৃত্যুর সময় জান্নাতের সুসংবাদ:
إِنَّ
الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ
الْمَلَائِكَةُ أَلَّا تَخَافُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَبْشِرُوا بِالْجَنَّةِ
الَّتِي كُنْتُمْ تُوعَدُونَ نَحْنُ أَوْلِيَاؤُكُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا
وَفِي الْآخِرَةِ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَشْتَهِي أَنْفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيهَا مَا
تَدَّعُونَ نُزُلًا مِنْ غَفُورٍ رَحِيمٍ وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِمَّنْ دَعَا
إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ
নিশ্চয়
যারা বলে,
আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ, অতঃপর তাতেই অবিচল থাকে, তাদের কাছে ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় এবং বলে, তোমরা ভয় করো না, চিন্তা করো না এবং তোমাদের প্রতিশ্রুত জান্নাতের সুসংবাদ
শোন। ইহকালে ও পরকালে আমরা তোমাদের বন্ধু। সেখানে তোমাদের জন্য আছে যা তোমাদের মন
চায় এবং সেখানে তোমাদের জন্যে আছে তোমরা দাবী কর। এটা ক্ষমাশীল করুণাময়ের পক্ষ
থেকে সাদর আপ্যায়ন। যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন একনিষ্ঠ মুসলমান, তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার? (সূরা ফুসসিলাত-৪১ : ৩০-৩৩)
কল্পনাতীত প্রতিদান লাভ:
عَنْ
أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: قَالَ اللَّهُ أَعْدَدْتُ لِعِبَادِي الصَّالِحِينَ مَا
لاَ عَيْنٌ رَأَتْ، وَلاَ أُذُنٌ سَمِعَتْ، وَلاَ خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ،
فَاقْرَءُوا إِنْ شِئْتُمْ فَلاَ تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ
قُرَّةِ أَعْيُنٍ
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেছেন: আমি আমার সৎকর্মশীল বান্দগণের জন্য এমন
জিনিস তৈরি করে রেখেছি,
যা কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শুনেনি এবং যার সম্পর্কে কোন মানুষের মনে কোন
ধারণাও জন্মেনি। তোমরা চাইলে এই আয়াতটি পাঠ করতে পার, ‘‘কেউ জানে না ত দের জন্য চোখ শীতলকারী কি জিনিস লুকানো আছে।’’ (সূরা সিজদাহ-৩২ : ১৩) {বুখারী : ৩২৪৪}
জান্নাতুল ফেরদাউসে স্থায়ীভাবে অবস্থান করা যাবে:
إِنَّ
الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَانَتْ لَهُمْ جَنَّاتُ
الْفِرْدَوْسِ نُزُلًا خَالِدِينَ فِيهَا لَا يَبْغُونَ عَنْهَا حِوَلًا
যারা
বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদের অভ্যর্থনার জন্যে আছে জান্নাতুল ফেরদাউস। সেখানে তারা
চিরকাল থাকবে,
সেখান থেকে স্থান পরিবর্তন
করতে চাইবে না। (সূরা কাহাফ-১৮ :
১০৭-১০৮)
আল্লাহর পক্ষ থেকে সমাদর পাওয়া যাবে:
فَأَمَّا
الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَهُمْ فِي رَوْضَةٍ يُحْبَرُونَ
যারা
বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে, তারা জান্নাতে সমাদৃত হবে। (সূরা রূম-৩০ : ১৫)
সৎকর্মশীলগণের নেক আমল আল্লাহ নষ্ট করেন না:
إِنَّ
الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ إِنَّا لَا نُضِيعُ أَجْرَ مَنْ
أَحْسَنَ عَمَلًا أُولَئِكَ لَهُمْ جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهِمُ
الْأَنْهَارُ يُحَلَّوْنَ فِيهَا مِنْ أَسَاوِرَ مِنْ ذَهَبٍ وَيَلْبَسُونَ
ثِيَابًا خُضْرًا مِنْ سُنْدُسٍ وَإِسْتَبْرَقٍ مُتَّكِئِينَ فِيهَا عَلَى
الْأَرَائِكِ نِعْمَ الثَّوَابُ وَحَسُنَتْ مُرْتَفَقًا
যারা
বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম ম্পপাদন করে আমি সৎকর্মশীলগণের পুরস্কার নষ্ট করি
না। তাদেরই জন্যে আছে বসবাসের জান্নাত। তাদের পাদদেশে প্রবাহিত হয় নহরসমূহ। তাদের
তথায় স্বর্ণ-কংকনে অলংকৃত করা হবে এবং তারা পাতলা ও মোটা রেশমের সবুজ কাপর পরিধান
করবে এমতাবস্থায় যে,
তারা সিংহাসনে সমাসীন হবে।
চমৎকার প্রতিদান এবং কত উত্তম আশ্রয়। (সূরা কাহাফ-১৮ : ৩০-৩১)
উপসংহার:
প্রিয় উপস্থিতি! আজকের
আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে, মানব জীবনে ভালোভাবে চলতে হলে আমলে সালেহ বা সৎকর্ম করা অনেক জরুরী। তাহলে দুনিয়া ও আখিরাতে সার্বিক কল্যাণ অর্জন করা সম্ভব হবে।
No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com