Saturday, February 26, 2022

মিরাজের শিক্ষা ‘‘ইসলামী দৃষ্টিকোণ’’

 


মিরাজের শিক্ষা ‘‘ইসলামী দৃষ্টিকোণ’’

এম এ রাজ্জাক হাওলাদার

ভূমিকা:

মহানবী মুহাম্মদ (স.) এর জীবনে সংঘটিত সর্বাধিক আলোচিত ও বিস্ময়কর ঘটনাগুলোর মধ্যে মিরাজ একটি। আখেরী নবী মুহাম্মদ মোস্তফা (স.) এর উপর একটি বিশাল দায়িত্ব ছিল রিসালাতের দায়িত্ব। এই পবিত্র দায়িত্ব সফল ভাবে সম্পাদন করার জন্য প্রয়োজন ছিল প্রবল রূহানী শক্তির এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাঁর বাস্তব ভিত্তিক জ্ঞান। সেই জ্ঞান দান এবং পৃথিবীর মানুষকে সে সব বিষয়ের কিছু কিছু নিদর্শন প্রত্যক্ষ করানোর উদ্দেশ্যেই আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় হাবীবকে মিরাজ করিয়েছিলেনএই ইসরা ও মিরাজের মধ্যে আমাদের জন্য রয়েছে অনেকগুলো শিক্ষা।

মহান আল্লাহ ক্ষমতা:

মহান আল্লাহ এক রাতের কিছু অংশে মহানবী (স.)-কে মাসজিদুল হারাম থেকে মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত এবং সেখান থেকে সপ্তম আকাশের উপরে সিদরাতুল মুন্তাহা পর্যন্ত ভ্রমন করিয়েছেন। সাত আসমানে নবী-রাসূলগণের সাথে সাক্ষাত করিয়েছেন। জান্নাত-জাহান্নাম দেখিয়েছেন, বিভিন্ন পাপের শাস্তি প্রত্যক্ষ করিয়েছেন এবং ভালো কাজের পুরষ্কার দেখিয়েছেন। এ সব বিষয় চিন্তা করলে পরিষ্কার বোঝা যায় আল্লাহ তাআলা কত ক্ষমতাবান। 

রাসূলুল্লাহ (স.) মিরাজ একটি বড় মুজিযা:

মহান আল্লাহ নবী-রাসূলগণকে নবুওয়াতের স্বপক্ষে প্রমাণ স্বরূপ মুজিযা দান করেছিলেন। মহানবী মুহাম্মদ (স.) এর অনেকগুলো মুজিযা ছিল। মিরাজের ঘটনা তাঁর বড় একটি মুজিযা। যা মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবী মুহাম্মদ (স.) কে দিয়ে করিয়ে দেখিয়েছেন।

কিছু কাজ আছে শুরুর আগে প্রস্তুতি গ্রহণের শিক্ষা:

নিজ অবস্থান থেকে কাছে বা দূরে কোথাও কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে গেলে সে অনুযায়ী প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়। যদি কেউ কাউকে কোথাও প্রেরণ করে তাহলে তাকে সে অনুযায়ী প্রস্তুত করে পাঠাতে হয়। মহানবী (স.) আল্লাহ মহাকাশ ভ্রমন করাবেন সেজন্য তাঁকে সিনা সাক করিয়ে মহাকাশে যাওয়া ও অবস্থানের উপযুক্ত করে তুলেছেন।

নবী (স.)-এর ওপেন হার্ট সার্জারি:

মিরাজ রজনীর যাত্রার প্রারম্ভে মহানবী (স.) কে কাবার হাতিমে বক্ষ বিদারণ বা ওপেন হার্ট সার্জারি করা হয়েছে। এই পৃথিবীতে মহানবী (স.) এর আগে কারো এ রকম বক্ষ বিদারণ আর কারো করা হয়নি।

পথ প্রদর্শক বা গাইড সাথে নিয়ে পথচলার শিক্ষা:

অপরিচিত কোন স্থানে ভ্রমন করলে একজন পথ প্রদর্শক বা গাইড সাথে নেয়া প্রয়োজন। যিনি সঠিকভাবে পথ দেখিয়ে গন্তব্যে নিয়ে যাবেন। মিরাজ রজনীতে জিব্রাঈল (আঃ) ছিলেন আমীন মহানবী (স.) এর গাইড বা পথ প্রদর্শক।

মুহাম্মদ (স.) সৃষ্টির সেরা:

মহানবী (স.) যে সৃষ্টির সেরা তার বহু কারণ রয়েছে। তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের একটি বড় প্রমাণ হলো মিরাজ। উর্ধ্বলোকে ভ্রমন করানোর মত এ রকম বিস্ময়কর ঘটনা কোন সাধারণ মানুষ তো নয়ই কোন নবী রাসূলের ক্ষেত্রে ঘটেনি। আল্লাহ তাআলা মূসা (আঃ) এর সাথে কথা বলেছেন তুর পাহাড়ে আর মহানবী (স.) এর সাথে কথা বলেছেন সপ্তম আকাশের উপরে তাঁর কাছে ডেকে নিয়ে

আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) ইমামুল মুরসালীন:

মহানবী (স.) মিরাজ রজনীতে মাসজিদুল হারাম থেকে যাত্রা শুরু করে যখন মাসজিদুল আকসায় পৌঁছলেন। মহান আল্লাহ তাঁর কুদরতি ব্যবস্থাপনায় সকল নবী-রাসূলকে একত্রিত করলেন। সেখানে মহানবী (স.) ইমামতি করে দুই রাকাআত সালাত আদায় করেন। এ জন্যই তিনি ইমামুল মুরসালীন বা সকল নবী-রাসূলের ইমাম।

আগন্তকের পরিচয় ও আগমনের কারণ জানা প্রহরীর দায়িত্ব:

কোন নির্দিষ্ট এলাকায় অপরিচিত কোন লোক প্রবেশ করতে চাইলে প্রবেশ পথে কর্তব্যরত প্রহরীর দায়িত্ব হলো তার পরিচয় সম্পর্কে জানা এবং তার আগমনের কারণ জিজ্ঞাসা করা। সঠিক পরিচয় জেনে এবং উপযুক্ত কারণ সম্পর্কে অবগত হয়ে তবেই প্রবেশ করতে দেয়া। মিরাজ রজনীতে প্রত্যেক আসমানে জিব্রাঈল (আঃ) এবং মহানবী (স.) এর সাথে দ্বাররক্ষী ফেরেশতাগণ তাই করেছেন।

ফিতরতের শিক্ষা:

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: أُتِيتُ بِالْبُرَاقِ، وَهُوَ دَابَّةٌ أَبْيَضُ طَوِيلٌ فَوْقَ الْحِمَارِ، وَدُونَ الْبَغْلِ، يَضَعُ حَافِرَهُ عِنْدَ مُنْتَهَى طَرْفِهِ قَالَ: فَرَكِبْتُهُ حَتَّى أَتَيْتُ بَيْتَ الْمَقْدِسِ قَالَ: فَرَبَطْتُهُ بِالْحَلْقَةِ الَّتِي يَرْبِطُ بِهِ الْأَنْبِيَاءُ قَالَ ثُمَّ دَخَلْتُ الْمَسْجِدَ، فَصَلَّيْتُ فِيهِ رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ خَرَجْتُ فَجَاءَنِي جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ بِإِنَاءٍ مِنْ خَمْرٍ، وَإِنَاءٍ مِنْ لَبَنٍ، فَاخْتَرْتُ اللَّبَنَ، فَقَالَ جِبْرِيلُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اخْتَرْتَ الْفِطْرَةَ

আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন, মরিাজ রজনীর এক পর্যায়ে জিব্রাঈল (আঃ) একটি শরাবের পাত্র এবং একটি দুধের পাত্র নিয়ে আমার কাছে এলেন। আমি দুধ গ্রহণ করলাম। জিব্রাঈল (আঃ) আমাকে বললেন, আপনি ফিতরতকেই গ্রহণ করেছেন। (সহীহ মুসলিম : ৩০০)

শিষ্টাচার তথা দবের শিক্ষা:

মহানবী (স.) মিরাজ রজনীতে জিব্রাঈল (স.) এর সাথে যে লম্বা পথ পাড়ি দিয়েছেন, সেখানে মাসজিদুল আক্বসায় সালাত আদায় থেকে শুরু করে উর্দ্ধলোকে আরোহণের সময় প্রত্যেক আকাশে নবী-রাসূলগণের সাথে সাক্ষাতকালে পরিপূর্ণ আদব রক্ষা করা হয়েছে। আসমানসমূহে অবস্থানরত নবীগণ সুন্দরভাবে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এই ভ্রমনে আদবের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ছিল।(সহীহ বুখারী : ৭৫১৭)

প্রত্যেক আকাশে দরজা আছে এবং তথায় দ্বাররক্ষী ফেরেশতাদের অভিবাদন:

জিব্রাঈল আমীন এবং মহানবী (স.) প্রতিটি আকাশে পৌঁছার সাথে সাথে দ্বাররক্ষী ফেরেশতা তাদের পরিচয় জানতে চেয়েছেন এরপর উর্ধ্বলোকে যাওয়ার জন্য দরজা খুলেছেন। এসব কথা সহিহ হাদিসমূহে বর্ণিত হয়েছে। এর দ্বারা বোঝা যায় যে, আসমানসমূহে দরজা রয়েছে এবং সেখানে ফেরেশতাগণ প্রহরায় নিয়োজিত রয়েছেন।

ভাল কাজের পুরুস্কার ও মন্দ কাজের শাস্তি সম্পর্কে অবগত:

মহানবী (স.) কে আল্লাহ তাআলা মিরাজ রজনীতে তাঁর উম্মতের ভালো কাজের পুরষ্কার এবং মন্দ কাজের শাস্তি প্রত্যক্ষ করিয়েছেন। জান্নাত-জাহান্নাম দেখিয়েছেন এবং সেখানে কারা কেন যাবেন সেটি বলে দিয়েছেন যাতে তিনি উম্মতকে সুসংবাদদান ও সতর্ক করতে পারেন।

সঠিক পরামর্শ দান ও অভিজ্ঞতার মূল্যায়নের শিক্ষা:

فَفَرَضَ عَلَيَّ خَمْسِينَ صَلَاةً فِي كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ، فَنَزَلْتُ إِلَى مُوسَى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: مَا فَرَضَ رَبُّكَ عَلَى أُمَّتِكَ؟ قُلْتُ: خَمْسِينَ صَلَاةً، قَالَ: ارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَاسْأَلْهُ التَّخْفِيفَ، فَإِنَّ أُمَّتَكَ لَا يُطِيقُونَ ذَلِكَ، فَإِنِّي قَدْ بَلَوْتُ بَنِي إِسْرَائِيلَ وَخَبَرْتُهُمْ

মহানবী (স.) বলেন, আমার উপর দিনে-রাতে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করলেন। এরপর আমি মূসা (আঃ) এর কাছে ফিরে আসলাম। তিনি বললেন, আপনার প্রতিপালক আপনার উম্মতের উপর কি ফরয করেছেন। আমি বললাম, পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। তিনি বললেন, আপনার প্রতিপালকের নিকট ফিরে যান এবং এক আরো সহজ করার আবেদন করুন। কেননা আপনার উম্মত এ নির্দেশ পালনে সক্ষম হবে না। আমি বানী ইসরাঈলকে পরীক্ষা করেছি এবং তাদের বিষয়ে আমি অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। (সহীহ মুসলিম : ৩০০)

পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের শিক্ষা:

فَأَوْحَى اللهُ إِلَيَّ مَا أَوْحَى، فَفَرَضَ عَلَيَّ خَمْسِينَ صَلَاةً فِي كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ، فَنَزَلْتُ إِلَى مُوسَى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: مَا فَرَضَ رَبُّكَ عَلَى أُمَّتِكَ؟ قُلْتُ: خَمْسِينَ صَلَاةً، قَالَ: ارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَاسْأَلْهُ التَّخْفِيفَ، فَإِنَّ أُمَّتَكَ لَا يُطِيقُونَ ذَلِكَ،

এরপর আল্লাহ তাআলা আমার উপর যে অহী নাযিল করার তা নাযিল করলেন। আমার উপর দিনে-রাতে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করলেন। এরপর মূসা (আঃ) এর পরামর্শে মহানবী (স.) আল্লাহর কাছ থেকে পর্যায়ক্রমে কমিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত করিয়ে নেন। (বুখারী : ৭৫১৭)

অপরাধ থেকে মুক্ত থাকার শিক্ষা:

মহানবী (স.) কে আল্লাহ তাআলা মিরাজ রজনীতে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের শাস্তি প্রত্যক্ষ করিয়েছেন। যেমনÑ মিথ্যাচার, কুরআন অনুযায়ী আমল না করা, ব্যভিচার, সুদ ও গীবতের শাস্তি। মহানবী (স.) এর বর্ণনা থেকে আমাদের শিক্ষনীয় বিষয় হল এ ধরনের অপরাধ থেকে বিরত থাকা। (সহীহ বুখারী : ১৩৮৬)

আল্লাহর সাথে শরীক না করা:

لَا تَجْعَلْ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ فَتَقْعُدَ مَذْمُومًا مَخْذُولًا وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ

পবিত্র কুরআনুল কারীমে সূরা ইসরায় এসেছে, আল্লাহ সাথে অন্য কোন উপাস্য স্থির করো না। তাহলে তুমি নিন্দিত ও অসহায় হয়ে পড়বে। তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না(সূরা ইসরা-১৭:২২-২৩)

পিতা-মাতার সাথে ভালো ব্যবহারের শিক্ষা:

وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُلْ لَهُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُلْ رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا رَبُّكُمْ أَعْلَمُ بِمَا فِي نُفُوسِكُمْ إِنْ تَكُونُوا صَالِحِينَ فَإِنَّهُ كَانَ لِلْأَوَّابِينَ غَفُورًا

পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ কর। তাদের মধ্যে একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হন; তবে তাদেরকে উহ্ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা। তাদের সামনে ভালোবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বল: হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন। তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের মনে যা আছে তা ভালই জানেন। যদি তোমরা সৎ হও, তবে তিনি তওবাকারীদের জন্যে ক্ষমাশীল। (সূরা ইসরা : ২৩-২৫)

আত্মীয়-স্বজন, অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরের হক্ব আদায় করার শিক্ষা:

وَآتِ ذَا الْقُرْبَى حَقَّهُ وَالْمِسْكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ

আত্মীয়-স্বজনকে তাদের হক দান কর এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও তাদের হক্ব দিয়ে দাও। (সূরা ইসরা-১৭ : ২৬)

অপব্যয় না করার শিক্ষা:

وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيرًا إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُوا إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُورًا

তোমরা কিছুতেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ। (সূরা ইসরা-১৭ : ২৬-২৭)

কৃপণতা ও বিলাসিতা পরিত্যাগের শিক্ষা:

وَلَا تَجْعَلْ يَدَكَ مَغْلُولَةً إِلَى عُنُقِكَ وَلَا تَبْسُطْهَا كُلَّ الْبَسْطِ فَتَقْعُدَ مَلُومًا مَحْسُورًا إِنَّ رَبَّكَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَقْدِرُ إِنَّهُ كَانَ بِعِبَادِهِ خَبِيرًا بَصِيرًا

তুমি একেবারে ব্যয়-কুন্ঠ হয়ো না এবং একেবারে মুক্ত হস্তও হয়ো নাতাহলে তুমি তিরষ্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে। নিশ্চয় তোমার পালকর্তা যাকে ইচ্ছা অধিক জীবনোপকরণ দান করেন এবং তিনিই তা সংকুচিতও করে দেন। তিনিই তাঁর বান্দাদের স¤পর্কে ভালোভাবে অবহিত, সব কিছু দেখছেন। (সূরা ইসরা-১৭:২৯-৩০)

দারিদ্রের ভয়ে সন্তান হত্যা করা হারাম:

وَلَا تَقْتُلُوا أَوْلَادَكُمْ خَشْيَةَ إِمْلَاقٍ نَحْنُ نَرْزُقُهُمْ وَإِيَّاكُمْ إِنَّ قَتْلَهُمْ كَانَ خِطْئًا كَبِيرًا

দারিদ্রের ভয়ে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না। তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই জীবনোপকরণ দিয়ে থাকি। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মারাত্মক অপরাধ। (সূরা ইসরা-১৭ : ৩১)

যিনা ও এর সহায়ক সকল কাজ নিষিদ্ধ:

وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا

আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। (সূরা ইসরা-১৭ : ৩২)

অবৈধ হত্যাকান্ড নিষিদ্ধ:

وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَمَنْ قُتِلَ مَظْلُومًا فَقَدْ جَعَلْنَا لِوَلِيِّهِ سُلْطَانًا فَلَا يُسْرِفْ فِي الْقَتْلِ إِنَّهُ كَانَ مَنْصُورًا

সে প্রাণকে হত্যা করো না, যাকে আল্লাহ হারাম করেছেন; কিন্তু ন্যায়ভাবে। যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে নিহত হয়, আমি তার উত্তরাধিকারীকে ক্ষমতা দান করি। অতএব, সে যেন হত্যার ব্যাপারে সীমা লংঘন না করে। নিশ্চয় সে সাহায্যপ্রাপ্ত। (সূরা ইসরা-১৭ : ৩৩)

এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ না করা:

وَلَا تَقْرَبُوا مَالَ الْيَتِيمِ إِلَّا بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ حَتَّى يَبْلُغَ أَشُدَّهُ

আর তোমরা এতিমের মালের কাছেও যেয়ো না, একমাত্র তার কল্যাণ আকাংখা ছাড়া; সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির যৌবনে পদার্পণ করা পর্যন্ত (সূরা ইসরা-১৭ : ৩৪)

অঙ্গীকার পূর্ণ করা:

وَأَوْفُوا بِالْعَهْدِ إِنَّ الْعَهْدَ كَانَ مَسْئُولًا

তোমরা অঙ্গীকার পূর্ন কর। নিশ্চয় অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (সূরা ইসরা-১৭ : ৩৪)

ওজনে কম না দেয়া:

وَأَوْفُوا الْكَيْلَ إِذَا كِلْتُمْ وَزِنُوا بِالْقِسْطَاسِ الْمُسْتَقِيمِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا

মেপে দেয়ার সময় পূর্ণ মাপে দেবে এবং সঠিক দাঁড়িপাল্লায় ওজন করবে। এটা উত্তম; এর পরিনাম শুভ। (সূরা ইসরা-১৭ : ৩৫)

অজানা বিষয়ের অনুসরণ না করা:

وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا

যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তার পিছনে পড়ো না। নিশ্চয় কান, চক্ষু ও অন্তকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে। (সূরা ইসরা-১৭ : ৩৬)

অহংকার প্রদর্শন না করা:

وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا إِنَّكَ لَنْ تَخْرِقَ الْأَرْضَ وَلَنْ تَبْلُغَ الْجِبَالَ طُولًا

পৃথিবীতে দম্ভভরে পদচারণা করো না। নিশ্চয় তুমি তো ভূ পৃষ্ঠকে কখনই বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত সমান হতে পারবে না। (সূরা ইসরা-১৭ : ৩৭)

আল্লাহর সমকক্ষ কাউকে মনে না করা:

ذَلِكَ مِمَّا أَوْحَى إِلَيْكَ رَبُّكَ مِنَ الْحِكْمَةِ وَلَا تَجْعَلْ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ فَتُلْقَى فِي جَهَنَّمَ مَلُومًا مَدْحُورًا

এটা ঐ হিকমতের অন্তর্ভূক্ত, যা আপনার পালনকর্তা আপনাকে ওহী মারফত দান করেছেন। আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য স্থির করবেন না। তাহলে অভিযুক্ত ও আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বিতাড়িত অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবেন। (সূরা ইসরা-১৭ : ৩৯)

উপসংহার:

প্রিয় হাযেরীন! আজকের আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে, মিরাজ মহানবী (স.) এর জীবনে এক বিস্ময়কর ঘটনা। এটি নির্ভেজাল সত্য বিষয় যা মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর কুদরতী ব্যাবস্থাপনায় সংঘটিত হয়েছে। মিরাজের এই আশ্চর্যজনক ঘটনার মধ্যে আমাদের জন্য রয়েছে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। মহান আল্লাহ সে শিক্ষাগুলো জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করার তাওফীক দান করুন। আমিন।।

 

No comments:

Post a Comment

razzakhowlader59@gmil.com