Monday, April 11, 2022

তাকওয়ার গুরুত্ব-প্রসঙ্গে ইসলামী দৃষ্টিকোণ

 


তাকওয়ার গুরুত্ব-প্রসঙ্গে ইসলামী দৃষ্টিকোণ

এম এ রাজ্জাক হাওলাদার

ভুমিকা:

তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় হল মানুষের মনের এমন একটি বিশেষ অবস্থা যা মানুষের মনে জাগ্রত হলে আল্লাহর হক্ব, আল্লাহর প্রতি ‎‎দায়িত্ব-কর্তব্য সর্বোপরি আখিরাতের কাজে উৎসাহ উদ্দীপনা প্রেরণা সৃষ্টি হয়। আর তখন তার দ্বারা দুনিয়াতে কোন প্রকার অপরাধ বা অন্যায় অবিচার, ভুল-ভ্রান্তি হতে পারে না। খুব সাবধনতার সাথে সে উপরোক্ত বিষয়াবলী থেকে বিরত থাকতে পারে।

তাকওয়ার পরিচয়:

তাকওয়া আরবী শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে বেঁচে থাকা, বিরত থাকা, ভয় করা ও সাবধানতা অবলম্বন করা ইত্যাদি। আর পরিভাষায় তাকওয়া হল মহান আল্লাহর সামনে একদিন দাঁড়াতে হবে এবং সকল কর্মকান্ডের জবাব দিতে হবে এই ভয়ে আল্লাহর সকল আদেশ ও নির্দেশ পালন এবং সকল প্রকার অপরাধমূলক কাজ থেকে বিরত থাকার নাম হল তাকওয়া।

উবাই ইবনে কাব (রাঃ)এর সংজ্ঞা:

إِنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، سَأَلَ أُبَيَّ بْنَ كَعْبٍ عَنِ التَّقْوَى، فَقَالَ لَهُ: أَمَا سَلَكْتَ طَرِيقًا ذَا شَوْكٍ؟ قَالَ: بَلَى قَالَ: فَمَا عَمِلْتَ؟ قَالَ: شَمَّرْتُ وَاجْتَهَدْتُ، قَالَ: فَذَلِكَ التَّقْوَى.(تفسير ابن كثير-جلد-1-صفحة-124-في ظلال القران-جلد-1-صفحة-39-المكتبة الشاملة)

ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ) একবার উবাই বিন কাব (রাঃ)-কে তাকওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। উত্তরে উবাই বিন কাব (রাঃ) বলেন, আপনি কি কাঁটাযুক্ত (কন্টকাকীর্ণ) পথে চলেছেন? ওমর (রাঃ) বলেন, হ্যাঁ। উবাই বিন কাব (রাঃ) পুনরায় বলেন, কিভাবে চলেছেন? জবাবে ওমর (রাঃ) বলেন, “পোশাকে যেন কাঁটা বিদ্ধ না হয়, শরীরে যেন কাঁটা না লাগে সে জন্য চেষ্টা করেছি ও সতর্কভাবে চলেছি। উবাই (রাঃ) বলেন, এটাই হচ্ছে তাকওয়া।” (এর উদাহরণ) (তাফসীর ইবনে কাছীর-খন্ড-১ পৃ;১২৪, তাফসীর ফী যিলালিল কুরআন-খন্ড-১ পৃ;৩৯)

তাকওয়া অবস্থান হল বুকের ভিতর:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَحَاسَدُوا، وَلَا تَنَاجَشُوا، وَلَا تَبَاغَضُوا، وَلَا تَدَابَرُوا، وَلَا يَبِعْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَيْعِ بَعْضٍ، وَكُونُوا عِبَادَ اللهِ إِخْوَانًا الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ، لَا يَظْلِمُهُ وَلَا يَخْذُلُهُ، وَلَا يَحْقِرُهُ التَّقْوَى هَاهُنَا» وَيُشِيرُ إِلَى صَدْرِهِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ «بِحَسْبِ امْرِئٍ مِنَ الشَّرِّ أَنْ يَحْقِرَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ، كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ حَرَامٌ، دَمُهُ، وَمَالُهُ، وَعِرْضُهُ» (مسلم ــ2564)

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তোমরা পরস্পর হিংসা করো না, পরস্পর ধোঁকাবাজি করো না, পরস্পর বিদ্বেষ পোষণ করো না, কে অপরের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে অগোচরে শত্রুতা করো না এবং একে অন্যের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ক্রয়-বিক্রয়ের চেষ্ঠা করবে না। তোমরা আল্লাহর বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে থাকো। এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার উপর অত্যাচার করবে না, তাকে অপদস্ত করবে না এবং হেয় প্রতিপন্ন করবে না। তাকওয়া এখানে, একথা বলে রাসূলুল্লাহ ‎‎(সাঃ) তিনবার তার তাঁর বক্ষের প্রতি ইঙ্গত করলেন। একজন মানুষ মন্দ হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে তার ভাইকে হেয় জ্ঞান করে। কোন মুসলিমের উপর প্রত্যেক মুসলিমের জান-মাল ইযযত-আবরু হারাম। (মুসলিম : ২৫৬৪,৬৪৩৫)

উমর (রাঃ) এর আমলে দুধবিক্রেতার মেয়ের গল্প:

উমর (রাঃ) প্রজা সাধারণের অবস্থা দেখার জন্য রাতের বেলা বের হয়ে এক কুটিরের পাশে যেয়ে শুনতে পান মা মেয়েকে বলছে, ‎‎দুধে পানি মিশাতে আর মেয়েটি এই বলে অস্বীকার করছে যে, খলিফা উমর তা করতে নিষেধ করেছেন। মা বলছে, উমর (রাঃ) ‎‎তো আর তা দেখছেন না। মেয়ে বলল, আল্লাহ তো দেখছেন। উমর (রাঃ) এই মেয়ের তাক্বওয়া দেখে তাকে পূত্রবধু হিসাবে গ্রহণ করলেন।

হাদিসে বর্ণিত পূর্বকালের একটি ঘটনা:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اشْتَرَى رَجُلٌ مِنْ رَجُلٍ عَقَارًا لَهُ، فَوَجَدَ الرَّجُلُ الَّذِي ‏اشْتَرَى العَقَارَ فِي عَقَارِهِ جَرَّةً فِيهَا ذَهَبٌ، فَقَالَ لَهُ الَّذِي اشْتَرَى العَقَارَ: خُذْ ذَهَبَكَ مِنِّي، إِنَّمَا اشْتَرَيْتُ مِنْكَ الأَرْضَ، وَلَمْ أَبْتَعْ ‏مِنْكَ الذَّهَبَ، وَقَالَ الَّذِي لَهُ الأَرْضُ: إِنَّمَا بِعْتُكَ الأَرْضَ وَمَا فِيهَا، فَتَحَاكَمَا إِلَى رَجُلٍ، فَقَالَ: الَّذِي تَحَاكَمَا إِلَيْهِ: أَلَكُمَا وَلَدٌ؟ قَالَ ‏أَحَدُهُمَا: لِي غُلاَمٌ، وَقَالَ الآخَرُ: لِي جَارِيَةٌ، قَالَ: أَنْكِحُوا الغُلاَمَ الجَارِيَةَ وَأَنْفِقُوا عَلَى أَنْفُسِهِمَا مِنْهُ وَتَصَدَّقَا

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সাঃ) বলেছেন,পূর্বকালে এক লোক অপর লোক হতে এক খন্ড জমি ক্রয় করেছিল। ‎‎ক্রেতা খরিদকৃত জমিতে একটি স্বর্ণ ভর্তি কলসী পেল। ক্রেতা বিক্রেতাকে তা ফেরত নিতে অনুরোধ করে বলল, আমি জমি ক্রয় করেছি, স্বর্ণ ক্রয় করিনি। বিক্রেতা বলল, আমি জমি ও এতে যা কিছু আছে সবই বিক্রি করেছি। অতঃপর তারা উভয়ে অপর এক ‎‎লোকের কাছে এর মীমাংসা চাইল। তিনি বললেন তোমাদের কি ছেলে-মেয়ে আছে ? একজন বলল, আমার একটি ছেলে আছে। অন্য লোকটি বলল, আমার একটি মেয়ে আছে। মীমাংসাকারী বললেন, তোমার মেয়েকে তার ছেলের সঙ্গে বিবাহ দাও আর প্রাপ্ত ‎‎স্বর্ণ থেকে বিয়েতে খরচ কর এবং অংশ তাদেরকে দিয়ে দাও।(বুখারী : ৩৪৭২)

সন্দেহজনক বিষয় থেকে বিরত থাকা:

عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ، قَالَ: سَمِعْتُهُ يَقُولُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ وَأَهْوَى النُّعْمَانُ بِإِصْبَعَيْهِ إِلَى أُذُنَيْهِ ‏إِنَّ الْحَلَالَ بَيِّنٌ، وَإِنَّ الْحَرَامَ بَيِّنٌ، وَبَيْنَهُمَا مُشْتَبِهَاتٌ لَا يَعْلَمُهُنَّ كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ، فَمَنِ اتَّقَى الشُّبُهَاتِ اسْتَبْرَأَ لِدِينِهِ، وَعِرْضِهِ، ‏وَمَنْ وَقَعَ فِي الشُّبُهَاتِ وَقَعَ فِي الْحَرَامِ، كَالرَّاعِي يَرْعَى حَوْلَ الْحِمَى، يُوشِكُ أَنْ يَرْتَعَ فِيهِ، أَلَا وَإِنَّ لِكُلِّ مَلِكٍ حِمًى، أَلَا وَإِنَّ ‏حِمَى اللهِ مَحَارِمُهُ، أَلَا وَإِنَّ فِي الْجَسَدِ مُضْغَةً، إِذَا صَلَحَتْ، صَلَحَ الْجَسَدُ كُلُّهُ، وَإِذَا فَسَدَتْ، فَسَدَ الْجَسَدُ كُلُّهُ، أَلَا وَهِيَ الْقَلْبُ ‏

নুমান ইবনে বশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয় হালাল স্পষ্ট এবং হারামও ‎‎স্পষ্ট। আর উভয়ের মাঝে রয়েছে সন্দেহজনক বিষয়, অনেক লোকই সেগুলো জানে না। যে ব্যক্তি এসব সন্দেহজনক বিষয় থেকে ‎‎দূরে থাকে সে তার দ্বীন মর্যাদাকে নিরাপদে রাখে। আর যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বিষয়ে পতিত হবে সে হারামের মধ্যে লিপ্ত হয়ে পড়বে। যেমন কোন রাখাল সংরক্ষিত চারণভূমির পাশে পশু চরায়, আশংকা রয়েছে সে পশু তার ভিতরে যেয়ে ঘাস খাবে। সাবধান প্রত্যেক রাজারই সংরক্ষিত এলাকা থাকে, সাবধান! আল্লাহর সংরক্ষিত এলাকা হল তাঁর হারামকৃত বিষয়গুলো। জেনে রাখ দেহের মধ্যে এক টুকরো গোশত আছে। যখন তা সুস্থ থাকে তখন সমস্ত দেহই সুস্থ থাকে। আর যখন তা নষ্ট হয়ে যায় তখন সমস্ত দেহই নষ্ট হয়ে যায়। স্মরণ রেখো, তা হল কালব বা হৃদয়। (সহীহ বুখারী : ৫২ ; মুসলিম : ৩৯৮৬)

মুমিনগণই হলেন মুত্তাক্বী:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ قَدْ أَذْهَبَ عَنْكُمْ عُبِّيَّةَ الْجَاهِلِيَّةِ، وَفَخْرَهَا بِالْآبَاءِ ‏مُؤْمِنٌ تَقِيٌّ، وَفَاجِرٌ شَقِيٌّ، أَنْتُمْ بَنُو آدَمَ وَآدَمُ مِنْ تُرَابٍ، لَيَدَعَنَّ رِجَالٌ فَخْرَهُمْ بِأَقْوَامٍ، إِنَّمَا هُمْ فَحْمٌ مِنْ فَحْمِ جَهَنَّمَ، أَوْ لَيَكُونُنَّ ‏أَهْوَنَ عَلَى اللَّهِ مِنَ الْجِعْلَانِ الَّتِي تَدْفَعُ بِأَنْفِهَا النَّتِنَ ‏

আবু হুরায়রা (রাঃ) তেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, মহান আল্লাহ তোমাদের জাহেলী যুগের মিথ্যা অহংকার ও পূর্বপূরুষদের নিয়ে গর্ব করার প্রথাকে বিলুপ্ত করেছেন। মুমিন হল আল্লাহভীরু আর পাপী হল দুর্ভাগা। তোমরা সকলে আদম সন্তান আর আদম (আঃ) মাটির তৈরী। লোকদের উচিৎ বিশেষ গোত্রভূক্ত হওয়ার কারণে অহংকার না করা। এখন তো তারা জাহান্নামের কয়লায় পরিণত হয়েছে। অন্যতায় তোমরামহান আল্লাহর কিট ময়লার কীটের চেয়েও জঘন্য গণ্য হবে যে তার নাক দিয়ে ময়লা ‎‎ঠেলে নিয়ে যায়। (আবু দাউদ : ৫১১৬)

তাকওয়ার গুরুত্ব

হান আল্লাহর আদেশ।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ ‏

হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাক। এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। (সূরা আলে মরান-:১০২)

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا ‏عَظِيمًا ‏

হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। তিনি তোমাদের আমল-আচরণ সংশোধন করবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ‎‎ক্ষমা করবেন। যে কেউ আল্লাহ্ তাঁর রসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করবে। (সূরা আহযাব-৩৩: ৭০- ৭১)

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَا قَدَّمَتْ لِغَدٍ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ نَسُوا اللَّهَ ‏فَأَنْسَاهُمْ أَنْفُسَهُمْ أُولَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ ‏

মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ্ তা'আলাকে ভয় কর। প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত, আগামী কালের জন্যে সে কি প্রেরণ করে, তা চিন্তা করা। আল্লাহ্ তা'আলাকে ভয় করতে থাক। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা'আলা সে স¤পর্কে খবর রাখেন। তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা আল্লাহ্ তা'আলাকে ভুলে গেছে। ফলে আল্লাহ্ তা'আলা তাদেরকে আত্ম বিস্মৃত করে দিয়েছেন। তারাই অবাধ্য। (সূরা হাশর-৫৯: ‎‎১৮- ১৯)

শত্রুর অপকৌশল ব্যর্থ হয়:

هَا أَنْتُمْ أُولَاءِ تُحِبُّونَهُمْ وَلَا يُحِبُّونَكُمْ وَتُؤْمِنُونَ بِالْكِتَابِ كُلِّهِ وَإِذَا لَقُوكُمْ قَالُوا آمَنَّا وَإِذَا خَلَوْا عَضُّوا عَلَيْكُمُ الْأَنَامِلَ مِنَ الْغَيْظِ ‏قُلْ مُوتُوا بِغَيْظِكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ إِنْ تَمْسَسْكُمْ حَسَنَةٌ تَسُؤْهُمْ وَإِنْ تُصِبْكُمْ سَيِّئَةٌ يَفْرَحُوا بِهَا وَإِنْ تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا ‏لَا يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًا إِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌ ‏

দেখ! তোমরাই তাদের ভালবাস কিন্তু তারা তোমাদের প্রতি মোটেও সদ্ভাব পোষণ করে না। আর তোমরা সমস্ত কিতাবেই বিশ্বাস কর। অথচ তারা যখন তোমাদের সাথে এসে মিশে, বলে, আমরা ঈমান এনেছি। পক্ষান্তরে তারা যখন পৃথক হয়ে যায়, তখন ‎‎তোমাদের উপর রোষবশত: আঙ্গুল কামড়াতে থাকে। বলুন, তোমরা আক্রোশে মরতে থাক। আর আল্লাহ্ মনের কথা ভালই জানেন। তোমাদের যদি কোন মঙ্গল হয়; তাহলে তাদের খারাপ লাগে। আর তোমাদের যদি অমঙ্গল হয় তাহলে আনন্দিত হয় আর তাতে যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে তাদের প্রতারণায় তোমাদের কোনই ক্ষতি হবে না। নিশ্চয়ই তারা যা কিছু করে সে সমস্তই আল্লাহর আয়ত্তে রয়েছে। (সূরা আলে ইমরান : ১১৯-১২০)

তাকওয়া অবলম্বন করলে পূর্বের গুনাহ মাফ হয়ে যায়:

لَيْسَ عَلَى الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ جُنَاحٌ فِيمَا طَعِمُوا إِذَا مَا اتَّقَوْا وَآمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ ثُمَّ اتَّقَوْا وَآمَنُوا ثُمَّ اتَّقَوْا ‏وَأَحْسَنُوا وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ ‏

যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তারা পূর্বে যা ভক্ষণ করেছে, সে জন্য তাদের কোন গোনাহ নেই যখন ভবিষ্যতের জন্যে সংযত হয়েছে, বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং সৎকর্ম স¤পাদন করেছে। এরপর সংযত থাকে এবং বিশ্বাস স্থাপন করে। এরপর সংযত থাকে এবং সৎকর্ম করে। আল্লাহ্ সৎকর্মীদেরকে ভালবাসেন। (সূরা মায়িদাহ-৫:৯৩)

তাকওয়া মুমিনের উত্তম পাথেয়:

الْحَجُّ أَشْهُرٌ مَعْلُومَاتٌ فَمَنْ فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي الْحَجِّ وَمَا تَفْعَلُوا مِنْ خَيْرٍ يَعْلَمْهُ اللَّهُ وَتَزَوَّدُوا ‏فَإِنَّ خَيْرَ الزَّادِ التَّقْوَى وَاتَّقُونِ يَا أُولِي الْأَلْبَابِ ‏

হজ্জের কয়েকটি মাস আছে সুবিদিত। এসব মাসে যে লোক হজ্জের পরিপূর্ণ নিয়ত করবে, তার পক্ষে স্ত্রীও সাথে নিরাভরণ হওয়া জায়েজ নয়। না অশোভন কোন কাজ করা, না ঝাগড়া-বিবাদ করা হজ্জের সেই সময় জায়েজ নয়। আর তোমরা যাকিছু সৎকাজ কর, আল্লাহ্ তো জানেন। আর তোমরা পাথেয় সাথে নিয়ে নাও। নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম পাথেয় হচেছ আল্লাহ্র ভয়। আর আমাকে ভয় করতে থাক, হে বুদ্ধিমানগন! তোমাদের উপর তোমাদের পালনকর্তার অনুগ্রহ অনে¦ষণ করায় কোন পাপ নেই। (সূরা বাকারাহ-:‎‎১৯৭)

তাকওয়া হল ইবাদতের সার বস্তু:

لَنْ يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَكِنْ يَنَالُهُ التَّقْوَى مِنْكُمْ كَذَلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمْ لِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَبَشِّرِ الْمُحْسِنِينَ ‏

এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহ্র কাছে পৌঁছে না, কিন্তু পৌঁছে তাঁর কাছে তোমাদের মনের তাকওয়া। এমনিভাবে তিনি এগুলোকে ‎‎তোমাদের বশ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আাল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণা কর এ কারণে যে, তিনি তোমাদের পথ প্রদর্শন করেছেন। সুতরাং সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। (সূরা হাজ্জ-২২:৩৭)

তাকওয়ার কাজে সহযোগিতা করা আল্লাহর আদেশ:

وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ ‏

সৎকর্ম ও আল্লাহভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালংঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহ্কে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ্ তা'আলা কঠোর শাস্তিদাতা। (সূরা মায়িদাহ-:০২)

তাকওয়া মুমিনদের সকল শয়তানের শয়তানি ধরিয়ে দেয়:

إِنَّ الَّذِينَ اتَّقَوْا إِذَا مَسَّهُمْ طَائِفٌ مِنَ الشَّيْطَانِ تَذَكَّرُوا فَإِذَا هُمْ مُبْصِرُونَ ‏

যাদের মনে ভয় রয়েছে, তাদের উপর শয়তানের আগমন ঘটার সাথে সাথেই তারা সতর্ক হয়ে যায় এবং তখনই তাদের বিবেচনাশক্তি জাগ্রত হয়ে উঠে। (সূরা রাফ-:২০১)

তাকওয়ার ফযিলত

সত্য ন্যায় পার্থক্যকারী জ্ঞান লাভ করা যায়:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنْ تَتَّقُوا اللَّهَ يَجْعَلْ لَكُمْ فُرْقَانًا وَيُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ ‏

হে ঈমানদারগণ তোমরা যদি আল্লাহ্কে ভয় করতে থাক, তবে তোমাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেবেন এবং তোমাদের থেকে ‎‎তোমাদের পাপকে সরিয়ে দেবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ্র অনুগ্রহ অত্যন্ত মহান। (সূরা আনফাল-৮:২৯)

মসিবত দূর হয় কল্পনাতীত উৎস থেকে রিযিকের ব্যবস্থা হয়:

وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ ‏

আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ্ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন। এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক ‎‎দেবেন। (সূরা তালাক-৬৫:০২-০৩)

সকল কাজ সহজ হয়ে যায়:

وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مِنْ أَمْرِهِ يُسْرًا ‏

যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ্ তার কাজ সহজ করে দেন। (সূরা তালাক-৬৫:০৪)

জান্নাতের দরজায় ফেরেশতাদের দ্বারা স্বাগত জানানো হবে:

وَسِيقَ الَّذِينَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ إِلَى الْجَنَّةِ زُمَرًا حَتَّى إِذَا جَاءُوهَا وَفُتِحَتْ أَبْوَابُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَا سَلَامٌ عَلَيْكُمْ طِبْتُمْ فَادْخُلُوهَا ‏خَالِدِينَ وَقَالُوا الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي صَدَقَنَا وَعْدَهُ وَأَوْرَثَنَا الْأَرْضَ نَتَبَوَّأُ مِنَ الْجَنَّةِ حَيْثُ نَشَاءُ فَنِعْمَ أَجْرُ الْعَامِلِينَ وَتَرَى الْمَلَائِكَةَ ‏حَافِّينَ مِنْ حَوْلِ الْعَرْشِ يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَقُضِيَ بَيْنَهُمْ بِالْحَقِّ وَقِيلَ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ ‏

যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় করত তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা উ¤মুক্ত দরজা দিয়ে জান্নাতে পৌছাবে এবং জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা সুখে থাক, অতঃপর সদাসর্বদা বসবাসের জন্যে তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর। তারা বলবে, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্র, যিনি আমাদের প্রতি তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করেছেন এবং আমাদেরকে ভূমির উত্তরাধিকারী করেছেন। আমরা জান্নাতের যেখানে ইচছা বসবাস করব। মেহনতকারীদের পুরস্কার কতই চমৎকার। আপনি ফেরেশতাগণকে দেখবেন, তারা আরশের চার পাশ ঘিরে তাদের পালনকর্তার পবিত্রতা ঘোষনা করছে। তাদের সবার মাঝে ন্যায় বিচার করা হবে। বলা হবে, সমস্ত প্রশংসা বিশ্বপালক আল্লাাহর। (সূরা যুমার-৩৯:৭৩-৭৫)

আকাশ জমিন থেকে বরকত লাভের উপায়:

وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَى آمَنُوا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَلَكِنْ كَذَّبُوا فَأَخَذْنَاهُمْ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ ‏

আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেযগারী অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানী ও পার্থিব ‎‎নেয়ামত সমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং মি তাদেরকে পাকড়াও করেছি তাদের কৃতকর্মের বদলাতে। (সূরা রাফ-:৯৬)

তাকওয়াবান এর জাহান্নামে যাওয়া অসম্ভব:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لاَ يَلِجُ النَّارَ رَجُلٌ بَكَى مِنْ خَشْيَةِ اللهِ حَتَّى يَعُودَ اللَّبَنُ فِي الضَّرْعِ، ‏وَلاَ يَجْتَمِعُ غُبَارٌ فِي سَبِيلِ اللهِ وَدُخَانُ جَهَنَّمَ

আবু হুরায়ারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করে তার জাহান্নামে যাওয়া তেমনি অসম্ভব যেমন অসম্ভব দোহনের পর বাটের ভিতরে দুধ প্রবেশ করানো। আর আল্লাহর পথের ধুলা ও জাহান্নামের ধোঁয়া কখনো একত্রিত হয় না। (তিরমিযী : ১৬৩৩)

মহানবী (সাঃ) তাকওয়া হাসিলের জন্য দোয়া করেছেন:

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَدْعُو: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الهُدَى وَالتُّقَى وَالعَفَافَ وَالغِنَى ‏

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবী (সাঃ) এই বলে দোয়া করতেন: হে প্রতিপালক! আমি আপনার কাছে হিদায়েত, তাকওয়া, চরিত্রের নির্মলতা ও আত্মনির্ভরশীলতা প্রার্থণা করি। (তিরমিযী : ৩৪৮৯)

আল্লাহর রহমত পাওয়া যায়:

إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ ‏

মুমিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই। অতএব, তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করবে এবং আল্লাহকে ভয় করবে-যাতে ‎‎তোমরা আল্লাহর রহমত পেতে পার। (সূরা হুজরাত-৪৯:১০)

জান্নাতুন নাঈমে স্থান লাভ করবে:

وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْكِتَابِ آمَنُوا وَاتَّقَوْا لَكَفَّرْنَا عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَلَأَدْخَلْنَاهُمْ جَنَّاتِ النَّعِيمِ ‏

আর যদি আহলে-কিতাবরা বিশ্বাস স্থাপন করত এবং খোদাভীতি অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের মন্দ বিষয়সমূহ ক্ষমা করে দিতাম এবং তাদেরকে নেয়ামতের উদ্যানসমূহে প্রবিষ্ট করতাম। (সূরা মায়িদাহ-৫:৬৫)

উপসংহার:

তাকওয়া সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসের এ আলোচনা থেকে সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করে প্রকৃত তাকওয়বান হয়ে দুনিয়া ও আখিরাতে সার্বিক কল্যাণ হাসিল করার তাওফীক মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে দান করুন। আমী

 

No comments:

Post a Comment

razzakhowlader59@gmil.com