Sunday, April 17, 2022

ইসলামের স্বাস্থ্যনীতি ও আমাদের করণীয়

 


ইসলামের স্বাস্থ্যনীতি আমাদের করণীয়

এম রাজ্জাক হাওলাদার

 

ভূমিকা: মানব জীবনে আল্লাহ তায়ালার অন্যতম নিয়ামত হচ্ছে স্বাস্থ্য। স্বাস্থ্য শুধু। দুনিয়ার নিয়ামতই নয়, বরং তা আল্লাহ তায়ালার ভালবাসা লাভের মাধ্যম, কারণ আল্লাহ তায়ালা শক্তিশালী ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী বান্দাকে ভালবাসেন। দৈহিক, মানসিক ও ঈমানী দিক থেকে যে বান্দা অধিক শক্তিশালী, আল্লাহ তায়ালা তাকে অধিক ভালবাসেন। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ স. বলেন,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْمُؤْمِنُ الْقَوِيُّ، خَيْرٌ وَأَحَبُّ إِلَى اللهِ مِنَ الْمُؤْمِنِ الضَّعِيفِ، وَفِي كُلٍّ خَيْرٌ احْرِصْ عَلَى مَا يَنْفَعُكَ، وَاسْتَعِنْ بِاللهِ وَلَا تَعْجَزْ، (رواه مسلم ــ2664)

শক্তিশালী মুমিন দুর্বল মুমিনের তুলনায় আল্লাহর নিকট উত্তম ও অধিকতর পছন্দনীয়। তবে উভয়ের মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে। যাতে তোমার উপকার রয়েছে তা অর্জনে তুমি আগ্রহী হও এবং আল্লাহর সাহায্য কামনা কর। তুমি অক্ষম হয়ে যেও না(মুসলিম-২৬৬৪,৬৫৩২ ইফা)

অন্য হাদীসে রয়েছে,

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " نِعْمَتَانِ مَغْبُونٌ فِيهِمَا كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ: الصِّحَّةُ وَالفَرَاغُ ( البخاري ــ6412 )

আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ স. বলেন: দু'টি নিয়ামতের বিষয়ে অধিকাংশ মানুষই অসতর্ক ও প্রতারিত: সুস্থতা ও অবসর। (বুখারী-৬৪১২,৬০৪৯; তিরমিযি-২৩০৪)

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِرَجُلٍ وَهُوَ يَعِظُهُ: " اغْتَنِمْ خَمْسًا قَبْلَ خَمْسٍ , شَبَابَكَ قَبْلَ هَرَمِكَ , وَصِحَّتَكَ قَبْلَ سَقَمِكَ , وَغِنَاكَ قَبْلَ فَقْرِكَ , وَفَرَاغَكَ قَبْلَ شُغُلُكَ , وَحَيَاتَكَ قَبْلَ مَوْتِكَ "(للبيهقى ــ809 )

রাসূল স, জনৈক ব্যক্তিকে নসীহত করার সময় বলেনঃ পাঁচটি জিনিসের পূর্বে পাঁচটি জিনিসের কদর কর, সদ্ব্যাবহার কর ১। তোমার বার্ধক্যের পূর্বে তোমার যৌবনের ২। অসুস্থতার পূর্বে সুস্থতার ৩। অভাবের পূর্বে প্রাচুর্যের ৪। কর্মব্যস্ততার পূর্বে অবসরের ৫। মৃত্যুর পূর্বে জীবনের(শুয়াবুল ঈমান বায়হাকি-৮০৯,১০২৫০; মুসান্নাফে আবি শায়বা-৯৭৬৭,৩৪৩১৯)

اَللّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِىْ رَجَبٍ وَ شَعْبَانَ وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ

হে আল্লাহ তুমি আমাকে রজব, শাবান, মাস অতিক্রম করে রমদান মাস পযন্ত  পৌছাও।(মিশকাতুল মাসাহবিহ-১৩৬৯;বায়হাকি শুয়ায়্ বুল ঈমান-৩২৩৪)

শারীরিক সুস্থতা, পরিবারের শান্তি ও নিরাপত্তা এবং খাদ্যের নিশ্চয়তা এ তিনটি বিষয় জাগতিক জীবনে মানুষের সবচেয়ে বড় পাওয়া। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ স. বলেন,

عَنْ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ أَبِي شُمَيْلَةَ الأَنْصَارِيُّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَصْبَحَ مِنْكُمْ آمِنًا فِي سِرْبِهِ مُعَافًى فِي جَسَدِهِ عِنْدَهُ قُوتُ يَوْمِهِ فَكَأَنَّمَا حِيزَتْ لَهُ الدُّنْيَا»: " ( الترمذي ــ 2346)

তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি দেহের সার্বিক সুস্থতা এবং পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে দিবসের শুরু করল এবং তার কাছে যদি সেদিনের খাদ্য সঞ্চিত থাকে, তবে সে যেন পুরো দুনিয়াই লাভ করল। (তিরমিযী-২৩৪৬; ইবন মাজাহ-৪১৪১)

ইসলামের স্বাস্থ্যনীতি: ইসলাম আমাদেরকে এমন জীবন পদ্ধতি প্রদান করেছে যে, যদি কোনো মানুষ ইসলামের এ নিয়মগুলো ন্যূনতমভাবেও মেনে চলে তবে সাধারণভাবে সে সুস্বাস্থ্য লাভ ও রক্ষা করতে পারবে। আমরা যে সমস্ত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ি তার কারণ অনুসন্ধান করে সেগুলো পরিহার করে চলা সুস্থতার জন্য একান্ত প্রয়ােজন। নিম্নে এমন কিছু বিষয় উল্লেখ করা হলঃ

ক। পরিমিত খাদ্যগ্রহণ: খাদ্য ও পানীয় মানুষের সুস্থতা ও অসুস্থতার অন্যতম উপাদান। ইসলামে এ বিষয়ে মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিকারক খাদ্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং অতিরিক্ত পানাহারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

يَا بَنِي آدَمَ خُذُوا زِينَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ وَكُلُوا وَاشْرَبُوا وَلَا تُسْرِفُوا إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ

এবং তোমার খাও এবং পান কর এবং অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না। (সূরা আরাফ-৭:৩১)

ইসলামে পবিত্র ও উপকারী খাদ্য হালাল করা হয়েছে এবং সকল ক্ষতিকর ও নোংরা খাদ্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মুসলিম ফকীহগণ উল্লেখ করেন, যে খাদ্য নিষিদ্ধ বলে কুরআন বা হাদীসে সুস্পষ্ট উল্লেখ করা হয় নি, কিন্তু তা স্বাস্থ্যের জন্য নিশ্চিত ক্ষতিকর বলে। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে তা গ্রহণ করা মুমিনের জন্য হারাম। আল্লাহ তায়ালা বলেন।

يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ (سورة المؤمنون ـــ51)

হে রসূলগণ! আপনারা পবিত্র বস্তু থেকে খাদ্য গ্রহণ করুন এবং সৎ কাজ করুন। নিশ্চয় আমি আপনাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে সবিশেষ অবগত। (সুরা মুমিনুন-২৩:৫১)

ইসলামে একদিকে যেমন অনাহারে থাকা নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তেমনি অতিভােজন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ স. বলেন,

عَنْ مِقْدَامِ بْنِ مَعْدِي كَرِبَ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: مَا مَلأَ آدَمِيٌّ وِعَاءً شَرًّا مِنْ بَطْنٍ. بِحَسْبِ ابْنِ آدَمَ أُكُلاَتٌ يُقِمْنَ صُلْبَهُ، فَإِنْ كَانَ لاَ مَحَالَةَ فَثُلُثٌ لِطَعَامِهِ وَثُلُثٌ لِشَرَابِهِ وَثُلُثٌ لِنَفَسِهِ. (ترمذي ــ 2328 وابن ماجه)

আদম সন্তান তার নিজের পেটের চেয়ে নিকৃষ্টতর কোনো পাত্র পূর্ণ করে নি। দেহকে সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম রাখতে যতটুকু খাদ্য প্রয়ােজন ততটুকুই একজন মানুষের জন্য যথেষ্ট। যদি কোনো মানুষের খাদ্য পূহা বেশি প্রবল হয় (বেশি খাওয়ার ইচ্ছা দমন করতে না পারে)তবে সে পেটের এক তৃতীয়াংশ খাদ্যের জন্য, এক তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য ও এক তৃতীয়াংশ শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য রাখবে। (তিরমিযী-২৩২৮,৫৯০; ইবন মাজাহ-৩৩৪৯)

যদি কোনো মুমিন রাসূলুল্লাহ স, এর নির্দেশনা অনুসারে পরিমিত আহারে অভ্যস্থ হন তবে তিনি অধিকাংশ রোগব্যধি থেকে মুক্ত তথা সুস্থ থাকতে পারবেন।

খ। অলসতা, পরিশ্রমহীনতা বা অতি পরিশ্রম পরিহার! নিয়মিত পরিশ্রম ও বিশ্রাম সুস্বাস্থ্যের জন্য অতীব প্রয়োজন। ইসলামে অলসতাকে অত্যন্ত ঘৃণা করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ স, সর্বদা অলসতা থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। তিনি বলতেন,

عَمْرُو بْنُ أَبِي عَمْرٍو، قَالَ: سَمِعْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الهَمِّ وَالحَزَنِ، وَالعَجْزِ وَالكَسَلِ، وَالجُبْنِ وَالبُخْلِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ، وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ» (رواه البخاري ــ6369 )

হে আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় চাচ্ছি উকণ্ঠা থেকে, মনোকষ্ট থেকে অলসতা থেকে, তর্কাপুরুষতা থেকে, কৃপণতা থেকে, ঋণগ্রস্থতা থেকে এবং মানুষের কর্তৃত্বাধীন হয়ে যাওয়া থেকে। (সহীহ বুখারী-১০৫৯,৬৩৬৯)

ইসলামের নিয়মিত ইবাদত, ফরয সালাত, তাহাজুদ সালাত ও নফল সালাত মানুষের পরিশ্রমের প্রাথমিক চাহিদা পূরণ করে এবং অলসতার পথ বন্ধ করেজামাতে সালাত আদায়ের জন্য সর্বদা হেঁটে মসজিদে যাওয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ স, উৎসাহ দিয়েছেন। হাঁটার ক্ষেত্রে তিনি নিজে সুদৃঢ় ও লম্বা পদক্ষেপে দ্রুত হাঁটতেন। অবিকল তার মত হাঁটা একজন মুমিনের জীবনে সুন্নাতের অনুসরণ এবং অসাধারণ দৈহিক কল্যাণ এনে দেয়। রাসূলুল্লাহ স, নিয়মিত পরিশ্রমের পাশাপাশি বিশ্রাম ও ঘুমের জন্য এক সাহাবীকে রাতে কিছু সময় ঘুমাতে ও কিছু সময় সালাত পড়তে এবং দিনে মাঝে মাঝে সিয়াম রাখতে নির্দেশ দিয়ে বলেন,

عَمْرِو بْنِ العَاصِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا عَبْدَ اللَّهِ، أَلَمْ أُخْبَرْ أَنَّكَ تَصُومُ النَّهَارَ وَتَقُومُ اللَّيْلَ؟» قُلْتُ: بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: «فَلاَ تَفْعَلْ، صُمْ وَأَفْطِرْ، وَقُمْ وَنَمْ، فَإِنَّ لِجَسَدِكَ عَلَيْكَ حَقًّا، وَإِنَّ لِعَيْنِكَ عَلَيْكَ حَقًّا، وَإِنَّ لِزَوْجِكَ عَلَيْكَ حَقًّا»(رواه البخاري  ــ5199)

হে আব্দুল্লাহ তুমি এরূপ (রাতভর ইবাদাতে দাড়িয়ে থাকা এবং দিনভর সিয়াম পালন করা) করো না, বরং সিয়ামও পালন কর, ইফতারও কর, রাতে ইবাদাতও কর এবং নিদ্রাও যাও। তোমার চক্ষুর প্রাপ্য অধিকার রয়েছে তোমার উপর, তোমার দেহের প্রাপ্য অধিকার রয়েছে তোমার উপর, তোমার স্ত্রীর প্রাপ্য অধিকার রয়েছে তোমার উপর, তোমার মেহমানের প্রাপ্য অধিকার রয়েছে তোমার উপর এবং তোমার বন্ধুর প্রাপ্য অধিকার রয়েছে তোমার উপর। (বুখারী-৫১৯৯,৪৮২০ইফা)

গ। অনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন পরিহারঃ একজন মুমিনের পক্ষে অনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন কোনভাবেই কাম্য নয়। সালাত, সিয়াম, খাবার গ্রহণ, বিশ্রাম, পরিশ্রম, পারিবারিক জীবন ইত্যাদির মাধ্যমে ইসলামে মুমিনের জন্য এমন একটি রুটিন করে দেওয়া রয়েছে যার মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত জীবন বা জীবনের প্রতি স্বেচ্ছাচারিতার কোন সুযোগ নেই।

 

ঘ। অপরিচ্ছন্নতা পরিহারঃ অপরিচ্ছন্নতা ইসলামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরিচ্ছন্নতা ইসলামের মৌলিক নির্দেশনা ও ঈমানের অংশ। রাসূলুল্লাহ স. বলেনঃ

عَنْ أَبِي مَالِكٍ الْأَشْعَرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الطُّهُورُ شَطْرُ الْإِيمَانِ (بیهقی و مسلم ــ223)

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতাকে ঈমানের অঙ্গ বলেছেন।(সহীহ মুসলিম-২২৩,৫৫৬)

সুতরাং ইস্তিনজা, মিসওয়াক, , গোসল, পোশাক-পরিচ্ছদের পবিত্রতা ইত্যাদি বিষয় যদি মুমিন সঠিকভাবে সুন্নত নির্দেশিত পদ্ধতিতে আদায় করেন তবে তিনি সহজেই পরিচ্ছন্নতা জনিত রোগব্যাধি থেকে সাধারণভাবে নিরাপদ থাকতে পারবেন।

অশ্লীলতাঃ অশ্লীলতা নিজেই একটি কঠিন ব্যধি। এর মাধ্যমে অগণিত মারাত্নক দৈহিক ও মানসিক রোগ মানুষকে আক্রমণ করে। ইসলাম প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অশ্লীলতা এবং অশ্লীলতার পথ উম্মুক্ত করতে পারে এমন সকল কর্ম নিষিদ্ধ করেছে। হাদীসে সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে যে, কোনো সমাজে অশ্লীলতার প্রসার ঘটলে সে সমাজে আল্লাহর শাস্তি হিসেবে নতুন নতুন মারাত্বক রোগব্যধির প্রসার ঘটে। এ প্রসঙ্গে রাসূল স. বলেন,

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، قَالَ: أَقْبَلَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: " يَا مَعْشَرَ الْمُهَاجِرِينَ خَمْسٌ إِذَا ابْتُلِيتُمْ بِهِنَّ، وَأَعُوذُ بِاللَّهِ أَنْ تُدْرِكُوهُنَّ: لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِي قَوْمٍ قَطُّ، حَتَّى يُعْلِنُوا بِهَا، إِلَّا فَشَا فِيهِمُ الطَّاعُونُ، وَالْأَوْجَاعُ الَّتِي لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِي أَسْلَافِهِمُ الَّذِينَ مَضَوْا، وَلَمْ يَنْقُصُوا الْمِكْيَالَ وَالْمِيزَانَ، إِلَّا أُخِذُوا بِالسِّنِينَ، وَشِدَّةِ الْمَئُونَةِ، وَجَوْرِ السُّلْطَانِ عَلَيْهِمْ، وَلَمْ يَمْنَعُوا زَكَاةَ أَمْوَالِهِمْ، إِلَّا مُنِعُوا الْقَطْرَ مِنَ السَّمَاءِ، وَلَوْلَا الْبَهَائِمُ لَمْ يُمْطَرُوا، وَلَمْ يَنْقُضُوا عَهْدَ اللَّهِ، وَعَهْدَ رَسُولِهِ، إِلَّا سَلَّطَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ عَدُوًّا مِنْ غَيْرِهِمْ، فَأَخَذُوا بَعْضَ مَا فِي أَيْدِيهِمْ، وَمَا لَمْ تَحْكُمْ أَئِمَّتُهُمْ بِكِتَابِ اللَّهِ، وَيَتَخَيَّرُوا مِمَّا أَنْزَلَ اللَّهُ، إِلَّا جَعَلَ اللَّهُ بَأْسَهُمْ بَيْنَهُمْ " (سنن بن ماجه ــ4019)

যখন কোন জাতির মধ্যে অশ্লীলতা এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ে যে, তারা প্রকাশ্যে অশ্লীলতায় লিপ্ত হতে থাকে, তখন তাদের মধ্যে এমন সব রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে যা তাদের পূর্ব পুরুষদের মধ্যে প্রসারিত ছিলনা। (ইবনু মাজাহ-৪০১৯)

চ। মানসিক অস্থিরতাঃ দৈহিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতা মানুষের জন্য। অপরিহার্য। মানসিক প্রশান্তি, স্থিরতা, উৎফুল্লতা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, মানসিক উৎকণ্ঠা ও অস্থিরতা দেহের অসুস্থতা ত্বরান্বিত করে। ইবাদত ও আল্লাহর যিকির প্রশান্তি ও স্থিতার জন্য অত্যন্ত সহজ, স্বাভাবিক, প্রাকৃতিক ও সর্বজনলভ্য পদ্ধতি। প্রতিদিন নিয়মিত ইবাদত ছাড়াও অন্তত কিছু সময় আল্লাহর যিকির করা উচিত।

সম্ভব হলে প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে ওযু করে দু'চার রাক'আত সালাত আদায় করে কয়েক মিনিট সুন্নাত পদ্ধতিতে আল্লাহর যিকির, দরুদ ও দু'আ করে ঘুমানো যেতে পারে। ইনশা আল্লাহ উকণ্ঠা ও দুশ্চিন্তা দূরীভূত হবে এবং অন্তরে শক্তি ও শান্তি আসবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন,

الَّذِينَ آمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُمْ بِذِكْرِ اللَّهِ أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ (الرعد: ۲۸)

যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা প্রশান্তি লাভ করে; জেনে রাখ! আল্লাহর যিকর দ্বারাই অন্তর সমূহ প্রশান্তি পায়। (সূরা রাদ-১৩:২৮)

ছ। স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা: বিভিন্ন হাদীসে মুমিনদেরকে স্বাস্থ্য বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খাদ্য ও পানীয় আবৃত রাখা, খাদ্য ও পানীয়ের মধ্যে শ্বাস প্রশ্বাস না ফেলা বা ফুক না দেয়া, কঠিন রৌদ্রতাপ থেকে সাধ্যমত আত্নরক্ষা করা, ময়লা হাত পানিতে প্রবেশ না করা, ডান হাতকে খাওয়া-দাওয়া ও বাম হাতকে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অসুস্থতায় আমাদের করণীয়:

সর্বপ্রথম করণীয় হলো সকল অস্থিরতা ও হতাশা থেকে অন্তরকে মুক্ত রাখা। অসুস্থ্য হয়ে পড়লে মুমিনের ঈমানী দায়িত্ব হলো আল্লাহর সিদ্ধান্ত সর্বান্তকরণে যথাসম্ভব আনন্দিত চিত্তে মেনে নেওয়া। সকল বিপদাপদ, কষ্ট মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে গোনাহ মাফের জন্য বা মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য আসে। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ স. বলেন,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ: عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَا يُصِيبُ المُسْلِمَ، مِنْ نَصَبٍ وَلاَ وَصَبٍ، وَلاَ هَمٍّ وَلاَ حُزْنٍ وَلاَ أَذًى وَلاَ غَمٍّ، حَتَّى الشَّوْكَةِ يُشَاكُهَا، إِلَّا كَفَّرَ اللَّهُ بِهَا مِنْ خَطَايَاهُ»(رواه البخاري ــ 5641)

যে কোনো প্রকারের ক্লান্তি, অবসাদ, অসুস্থতা, দুশ্চিন্তা, মনোবেদনা, কষ্ট, উল্কণ্ঠা যাই মুসলিমকে স্পর্শ করুক না কেন, এমনকি যদি একটি কাঁটাও তাকে আঘাত করে, তবে তার বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা তার গোনাহ থেকে কিছু ক্ষমা করবেন। (বুখারী-২১৩৭,৫৬৪১)

রোগীর বিশ্রামঃ অসুস্থ ব্যক্তির সঠিক বিশ্রাম ও কষ্টদায়ক দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেওয়া ইসলামের নির্দেশ। অসুস্থতার কারণে সালাত বসে, শুয়ে বা ইশারায় পড়তে, রোযা কাযা করতে এবং ওযূ ও গোসলের বদলে তায়াম্মুম করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অসুস্থতায় আমাদের দায়িত্ব চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া। এ সম্পর্কে রাসূলুলল্লাহ স. বলেন,

عَنْ أُسَامَةَ بْنِ شَرِيكٍ، قَالَ: قَالَتِ الأَعْرَابُ: يَا رَسُولَ اللهِ، أَلاَ نَتَدَاوَى؟ قَالَ: نَعَمْ، يَا عِبَادَ اللهِ تَدَاوَوْا، فَإِنَّ اللَّهَ لَمْ يَضَعْ دَاءً إِلاَّ وَضَعَ لَهُ شِفَاءً، أَوْ قَالَ: دَوَاءً إِلاَّ دَاءً وَاحِدًا قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، وَمَا هُوَ؟ قَالَ: الهَرَمُ. (ترمذي ــ2038)

উসামা ইবন শারীক রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ স, আমরা কি ঔষধপত্র ব্যবহার করব? তিনি বললেন, হাঁ। হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা ঔষধ ব্যবহার কর। কেননা, বার্ধক্য রোগ ব্যতীত আল্লাহ এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেন নাই, যার (ঔষধ) নিরাময় সৃষ্টি করেন নি। (তিরমিযি-২০৩৮)

সংক্রমনের বিষয়ে সতর্ক থাকা রাসূলুল্লাহ স. এর নির্দেশ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,

عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، قَالَ: أَخْبَرَنِي أَبُو سَلَمَةَ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، وَغَيْرُهُ، أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لاَ عَدْوَى وَلاَ صَفَرَ وَلاَ هَامَةَ» فَقَالَ أَعْرَابِيٌّ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَمَا بَالُ إِبِلِي، تَكُونُ فِي الرَّمْلِ كَأَنَّهَا الظِّبَاءُ، فَيَأْتِي البَعِيرُ الأَجْرَبُ فَيَدْخُلُ بَيْنَهَا فَيُجْرِبُهَا؟ فَقَالَ: «فَمَنْ أَعْدَى الأَوَّلَ؟» (البخاري ــ 5717)

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ স. ইরশাদ করেন, সংক্রামক ব্যাধি, ক্ষুধায় পেট কামড়ানো কীট (বা সফর মাসের অগ্রপশ্চাকরণ) ও পাখির কুলক্ষণ বলে কিছু নেই। তখন এক বেদুঈন আরব বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ স, তা হলে সে উট পালের অবস্থা কী, যা কোন বালুকাময় ভূমিতে থাকে যা নিরোগ, সবল। তারপর সেখানে পাচড়া আক্রান্ত (কোন) উট এসে তাদের মাঝে ঢুকে পড়ে তাদের সবগুলোকে পাচড়ায় আক্রান্ত করে দেয়? তিনি বললেন, তা হলে প্রথম (উট)-টিকে কে সংক্রমিত করেছিল? (বুখারী-৫৭১৭,৪৫৭৮)

রাসুলুল্লাহ স. এর এ হাদিসটির মূল উদ্দেশ্য ছিল যাতে সংক্রামক কোনো ব্যাধি এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মাঝে ছড়িয়ে না পড়ে, সেদিকে লক্ষ্য রাখা এবং সতর্কতা অবলম্বন করা।

১. وَصَبٌদু:খ,কষ্ট,রোগ-ব্যধি।

২. نَصَبَا ক্লান্তি,কষ্ট, চেষ্ট, শ্রম।

মহামারি থেকে রক্ষায় ইসলামিক স্কলারগণের পরামর্শ:

ইসলামিক স্কলারগণ মানুষের জীবন রক্ষার অপরিহার্যতার বিষয়টি কুরআন-সুন্নাহর আলোকে তুলে ধরেন। মানুষের জীবন রক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে কুরআনে এসেছে,

وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ (البقرة: ۱۹۵)

এবং তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না। (সুরা বাকারা-:১৯৫)

وَلَا تَقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا (النساء: ۲۹)

আর নিজেদেরকে হত্যা করে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়াশীল। (সুরা নিসা-:২৯)

আয়াত দুটিতে এ কথাই প্রমাণিত হয় যে, জীবন নাশের কারণ তথা প্রাণঘাতী মহামারি। জনিত বিষয়গুলো থেকে বেঁচে থাকা ওয়াজিব বা আবশ্যক। রাসুলুল্লাহ স, মহামারি সংক্রান্ত হাদিসগুলোতে মহামারি বিস্তৃতি প্রশমনে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বনের অপরিহার্যতা তুলে ধরেন। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ স. বলেন:

عَنْ أَبِي سَلَمَةَ: سَمِعَ أَبَا هُرَيْرَةَ، بَعْدُ يَقُولُ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لاَ يُورِدَنَّ مُمْرِضٌ عَلَى مُصِحٍّ (بخارى ــ 5771)

কোনো ব্যক্তি যেন তার অসুস্থ উটকে সুস্থ উটের কাছে নিয়ে না যায় । (বুখারী-৫৭৭১, ৫৭৭৪; মুসলিম-২২২১; আহমদ-৯২৭৪)

রাসূলুল্লাহ স. আরো বলেন, কুষ্ঠরোগী থেকে এমনভাবে পালিয়ে যাও যেভাবে সিংহ থেকে পলায়ন কর। (বুখারী-৫৭০৭)

প্রিয় নবির এ হাদিস বর্ণনার উদ্দেশ্য হলো- যে কোনো মহামারিতে (নতুন নতুন রোগব্যাধিতে) যাতে মানুষ সতর্কতা বা সুস্থতার উপায় অবলম্বন করে, আতংকিত না হয়।

عَنْ عَمْرِو بْنِ الشَّرِيدِ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: كَانَ فِي وَفْدِ ثَقِيفٍ رَجُلٌ مَجْذُومٌ، فَأَرْسَلَ إِلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «إِنَّا قَدْ بَايَعْنَاكَ فَارْجِعْ»(رواه مسلم ــ 2231)

আমর ইবনু শারীদ রা, তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, সাকীফ গোত্রীয় প্রতিনিধি দলের মাঝে একজন কুষ্ঠ রোগী ছিলেন। নবী স, তার কাছে (সংবাদ) পাঠালেন যে, আমরা তোমাকে বায়আত করে নিয়েছি। তুমি ফিরে যাও। (মুসলিম-২২৩১,৫৬২৮ ইফা)

রাসূলুল্লাহ স. দেড় হাজার বছর পূর্বে সংক্রমন প্রতিরোধে বিচ্ছিন্নকরণ (Quarantine) ব্যবস্থার নির্দেশনা প্রদান করেন। এ প্রসঙ্গে রাসূল স. বলেন:

عَنْ أُسَامَةَ بْنَ زَيْدٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا سَمِعْتُمْ بِهِ بِأَرْضٍ فَلاَ تَقْدَمُوا عَلَيْهِ، وَإِذَا وَقَعَ بِأَرْضٍ وَأَنْتُمْ بِهَا، فَلاَ تَخْرُجُوا فِرَارًا مِنْهُ»(بخارى ــ5730)

যদি কোনো এলাকায় মহামারির কথা শুনো তবে সেখানে যেও না। আর যদি (মহামারি আক্রান্ত) কোনো এলাকায় তোমাদের থাকা অবস্থায় মহামারি সৃষ্টি হয় তাহলে সেখান থেকে বের হবে না। (বুখারী-৫৭৩০,৫৩০৮ইফা)

বিশ্ববিখ্যাত আলেমগণ বলেন, করোনায় আতঙ্কিত না হয়ে গোনাহ ছেড়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আসলেই মানুষ এসব মহামারি থেকে মুক্ত ও নিরাপদ থাকবে।'

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জারি করা প্রতিরোধ ও সতর্কতামূলক দিকনির্দেশনাগুলো পরিপূর্ণভাবে মেনে চলা এবং তাদেরকে সহযোগিতারকুরআনুল কারিমের এ আয়াতটি এ ক্ষেত্রে প্রনিধানযোগ্য। আল্লাহ তায়ালা বলেন:

وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ (سورة المائدة ــ2)

এবং তোমরা সকর্ম ও আল্লাহ ভীতির কাজে সহযোগিতা করো এবং পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে সহযোগিতা কর না। (সুরা মায়েদা-৫:২)

এ সব পদক্ষেপ ও নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে মেনে চলা মূলতঃ 'সকর্ম ও আল্লাহ ভীতির কাজে সহযোগিতার অন্তর্ভুক্ত। পাশাপাশি আল্লাহকে ভয় করা, অধিকহারে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা এবং বিনীতভাবে দুআ করার উপদেশ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَيَا قَوْمِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا وَيَزِدْكُمْ قُوَّةً إِلَى قُوَّتِكُمْ وَلَا تَتَوَلَّوْا مُجْرِمِينَ (سورة هود ــ 52)

(হুদ আ. বললেন) হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা চাও এবং তার কাছে তাওবাহ কর। আর তাতে তিনি তোমাদেরকে অঝোর ধারায় বৃষ্টি দিবেন এবং তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবেন। (সুরা হুদ-১১:৫২)

আয়াতে 'শক্তি' কথার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- জীবন-জীবিকার প্রাচুর্যতা, সার্বিক নিরাপত্তা এবং সব ধরনের সুস্থতা ও বিপদাপদ থেকে মুক্তির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত। নিজেদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সুন্নাতের আমলগুলো যথাযথ বাস্তবায়ন করা। সেগুলো মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরা। এ সবের মধ্যে সবক্ষেত্রেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে গুরুত্ব দেয়।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ

নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন। (সূরা বাকারা-২:২২২)

প্রিয়নবি স, বলেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতাকে ঈমানের অঙ্গ বলেছেন। (মুসলিম-৫৫৬)

عَنْ صَالِحِ بْنِ أَبِي حَسَّانَ، قَالَ: سَمِعْتُ سَعِيدَ بْنَ الْمُسَيَّبِ، يَقُولُ: إِنَّ اللَّهَ طَيِّبٌ يُحِبُّ الطَّيِّبَ، نَظِيفٌ يُحِبُّ النَّظَافَةَ، كَرِيمٌ يُحِبُّ الكَرَمَ، جَوَادٌ يُحِبُّ الجُودَ، فَنَظِّفُوا، أُرَاهُ قَالَ، أَفْنِيَتَكُمْ وَلاَ تَشَبَّهُوا بِاليَهُودِ قَالَ: فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لِمُهَاجِرِ بْنِ مِسْمَارٍ، فَقَالَ: حَدَّثَنِيهِ عَامِرُ بْنُ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِثْلَهُ، إِلاَّ أَنَّهُ قَالَ: نَظِّفُوا أَفْنِيَتَكُمْ. (رواه الترمذي ــ2799)

নিশ্চয়ই আল্লাহ পরিত্রতা পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করেন, তোমরা তোমাদের বাড়ী, চতুর পাশ পরিচ্ছন্ন রাখবে। (তিরমিযী-২৭৯৯)

আয়েজ আল কারনি: সৌদি আরবের বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার শায়খ ড, আয়াজ আলকারনি বলেন, 'করোনাভাইরাসে ভীত-সন্ত্রস্ত না হয়ে পরিবারের সঙ্গে ঘরে কাটানো সময়কে গুরুত্ব দিন। তাদের সঙ্গে নিয়ে নামাজ পড়ুন, কুরআনুল কারিমের তেলাওয়াত করুন, মাতাপিতার সেবায় মনোযোগ দিন, ছােট-বড় সবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করুন, নিজের ভুল কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর কাছে রোনাজারি করুন এবং সতর্কতা অবলম্বন করুন। মুফতি তকি উসমানিঃ বিশ্বব্যাপী আলোচিত করোনাভাইরাস নিয়ে পাকিস্তানের সাবেক বিচারপতি মুফতি তকি উসমানি বলেন, 'কেউ কেউ মনে করেন, সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা ইসলামের তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী। এ কথাটি একেবারেই সঠিক নয়। স্বয়ং প্রিয় নবি স, এরকম (মহামারি) পরিস্থিতিতে পূর্ব সতকর্তামূলক পদক্ষেপ গ্রহণের দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন। করোনাসহ যে কোনো মহামারি রোধে রাষ্ট্রের নির্দেশ অনুসরণ করা শুধু উচিত-ই নয়, বরং শরিয়তের দৃষ্টিতেও জরুরি।

ইউসুফ আল-কারযাভীঃ আরব বিশ্বের প্রখ্যাত শায়খ ইউসুফ আল-কারযাভী বলেন, ‘আল্লাহর জিক্রি এমন একটি আধ্যাত্মিক শক্তি এবং এমন শক্তিশালী দুর্গ যেখানে সব সময় শান্তি ও নিরাপত্তা পাওয়া যায়। যেখানে যুদ্ধের সময় শক্তি পাওয়া যায় এবং অস্থিরতারসমা স্থিরতা পাওয়া যায়। যেখানে নিরাশা বা হতাশার সময় আশা পাওয়া যায়। কাজেই । বেশি বেশি বিক্রি ও ইস্তেগফার পাঠ করুন।

করোনা থেকে বাঁচতে যা বললেন কাবা শরিফের ইমাম: কাবা শরিফ ও মসজিদে নববির প্রধান ইমাম শায়খ সুদাইসি এ ভাইরাসে আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্যধারণ ও আল্লাহর সাহায্য লাভের শরয়ী দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি মুসলিম উম্মাহর প্রতি করোনা ভাইরাস থেকে সতর্ক থাকতে পরামর্শ প্রদান করেন। তিনি কুরআনের উদ্ধৃতি তুলে ধরে বলেন,

وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ (البقرة: 155)

অবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধ, মাল ও জানের ক্ষতি এবং ফলফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে ধৈর্যধারণকারীদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ। (সুরা বাকারা-২:১৫৫)

لَنَا هُوَ مَوْلَانَا وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ  

তিনি আমাদের কার্যনির্বাহক।আল্লাহর ওপরই মুমিনদের ভরসা করা উচিত। (সূরা তাওবা-৯:৫১)

আল্লাহ তাআলা মানুষকে নানা মুসিবত দিয়ে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করেন। এটি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের বিপরীত কিছু নয়। একজন মুসলিম সব সময় আল্লাহর সিদ্ধান্ত এবং ফয়সালার প্রতি ঈমান রাখে।

তিনি আরো বলেন, 'করোনা ভাইরাসের কারণে কিছু মানুষ মসজিদ থেকে পলায়ন করছে। এটি মানুষের মানবিক দুর্বলতা। তবে মানুষের মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহর অশেয় থেকে এক মুহুর্ত পলায়ন করার বা তার অমুখাপেক্ষী হওয়ার সুযোগ নেই। যেমন আল্লাহ তাআলা ইবরাহিম আ. এর উদ্ধৃতি দিয়ে কুরআনে ঘোষণা করেন,

وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِينِ

আর যখন আমি অসুস্থ হই, তখন তিনিই আমাকে আরোগ্য দান করেন। (সুরা শুআরা-২৬:৮০)

কুরআনের এ আয়াত প্রমাণ করে যে, মানুষ সুস্থতা লাভে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাআলা তাকে অসুস্থতা থেকে পূর্ণ সুস্থতা দান করবেন।

তাই বান্দাহর জন্য অবশ্য করণীয় হলো-'করোনাভাইরাস মোকাবিলায় হাদিসের নির্দেশনা অনুসারে আতঙ্কিত হয়ে সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি আল্লাহর সমীপে ধাবিত হওয়া এবং একমাত্র তাঁর প্রতি ভরসা রাখা। দু' কর

মহান আল্লাহ রোগ-ব্যধি সম্পর্কে বলেন,

وَأَيُّوبَ إِذْ نَادَى رَبَّهُ أَنِّي مَسَّنِيَ الضُّرُّ وَأَنْتَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ (83) فَاسْتَجَبْنَا لَهُ فَكَشَفْنَا مَا بِهِ مِنْ ضُرٍّ وَآتَيْنَاهُ أَهْلَهُ وَمِثْلَهُمْ مَعَهُمْ رَحْمَةً مِنْ عِنْدِنَا وَذِكْرَى لِلْعَابِدِينَ (الانبياء ــ 84 ـ 83)

এবং স্মরণ করুন আইয়্যুবের কথা যখন তিনি তাঁর পালনকর্তাকে আহবান করে বলেছিলেন: আমি দু:খ কষ্টে পতিত হয়েছি এবং আপনি দয়াবানদের চাইতেও সর্বশ্রেষ্ঠ দয়াবান।

অত:পর আমি তাঁর আহবানে সাড়া দিলাম এবং তাঁর দু:খকষ্ট দূর করে দিলাম এবং তাঁর পরিবারবর্গ ফিরিয়ে দিলাম, আর তাদের সাথে তাদের সমপরিমাণ আরও দিলাম আমার পক্ষ থেকে কৃপাবশত: আর এটা এবাদত কারীদের জন্যে উপদেশ স্বরূপ। (সুরা আম্বিয়া-২১:৮৩,৮৪)

হযরত আইয়ুব আ. তার রোগের জন্যে দু‘আ করে ছিলেন, আমরাও নিজ নিজ রোগের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে শেফা চাইবো।মহান আল্লাহ আমাদের মুক্তি দিবেন ইনশাআল্লাহ।

হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ স, কে জিজ্ঞাসা করল, আমি কীভাবে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করব? আমার উটনীটি ছেড়ে দিয়ে, না বেঁধে রেখে? রাসুলুল্লাহ স. বললেন, প্রথমে তোমার উটনীটি বাঁধ, এরপর আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল কর। (তিরমিজি)

সুতরাং আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা করা যেমন একজন মুমিনের ঈমানের অপরিহার্য অংশ তেমনি সচেতনতা বা সতর্কতা অবলম্বনও খুবই জরুরি। সতর্কতার সঙ্গে সঙ্গে মহান আল্লাহর ওপর যথাযথ আস্থা এবং বিশ্বাস রাখাই জরুরি। গোনাহের কাজ ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর দিকে তাওবা-ইস্তিগফার করে ফিরে আসায় রয়েছে কল্যাণ ও সফলতা।

 

অসুস্থের প্রতি আমাদের দায়িত্ব:

অসুস্থ মানুষের প্রতি সমাজের অন্য মানুষদের দায়িত্ব হলো তাদের সেবা করা, দেখতে যাওয়া, চিকিৎসা গ্রহণে উৎসাহ প্রদান, মানসিক আস্থা তৈরী করা ও দু'আ করা। অসুস্থ মানুষকে দেখতে যাওয়া, দুআ করা রাসূল স. এর সুন্নাহ। রাসূলুল্লাহ স. বলেন,

عَنْ ثَوْبَانَ، مَوْلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ،قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ عَادَ مَرِيضًا، لَمْ يَزَلْ فِي خُرْفَةِ الْجَنَّةِ حَتَّى يَرْجِعَ» (مسلم ــ2568)

যদি কেউ কোনো অসুস্থ মানুষকে দেখতে যায় তবে সে ফিরে না আসা পর্যন্ত অবিরত জান্নাতের বাগানে ফল চয়ন করতে থাকে। (মুসলিম-২৫৬৮,৬৭১৭)

অন্য হাদীসে এসেছে,

عَنْ عَلِيٍّ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " مَنْ عَادَ مَرِيضًا، مَشَى فِي خِرَافِ الْجَنَّةِ، فَإِذَا جَلَسَ عِنْدَهُ اسْتَنْقَعَ فِي الرَّحْمَةِ، فَإِذَا خَرَجَ مِنْ عِنْدِهِ وُكِّلَ بِهِ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ يَسْتَغْفِرُونَ لَهُ ذَلِكَ الْيَوْمَ (مسند احمد 1166)

যদি কেউ কোনো রোগীকে দেখতে যায় তবে রহমতের মধ্যে সাঁতার কাটতে থাকে। আর যখন সে রোগীর পাশে বসে তখন সে রহমতের মধ্যে ডুব দেয়। (মুসনাদে আহমাদ-১১৬৬,১৪২৯৯)

عَنْ عَلِيٌّ (رضـ): سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَعُودُ مُسْلِمًا غُدْوَةً إِلاَّ صَلَّى عَلَيْهِ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ حَتَّى يُمْسِيَ، وَإِنْ عَادَهُ عَشِيَّةً إِلاَّ صَلَّى عَلَيْهِ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ حَتَّى يُصْبِحَ، وَكَانَ لَهُ خَرِيفٌ فِي الجَنَّةِ.

যদি কোনো মুসলিম সকালে কোনো রোগীকে দেখতে যায় তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত সত্তর হাজার ফিরিশতা তার জন্য দু'আ করতে থাকে, আর যদি কেউ বিকালে কোন রোগীকে দেখতে যায় তবে পরদিন সকাল পর্যন্ত ৭০ হাজার ফিরিশতা তার জন্য দু'আ করতে থাকে। আর সে জান্নাতে একটি বাগান লাভ করে। (তিরমিযী-৯৬৯) রাসূলুল্লাহ স, অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গেলে দু'আ পাঠ করতেন। এটা গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নাহ। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে।

عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، كَانَ إِذَا عَادَ مَرِيضًا يَقُولُ: «أَذْهِبِ الْبَاسَ، رَبَّ النَّاسِ، اشْفِهِ أَنْتَ الشَّافِي، لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ، شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا» (مسلم ــ 2119)

রাসূলুল্লাহ স. কোন অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গেলে বলতেন, 'সমস্যা বিদুরিত করে দিন হে মানুষের রব, তাকে সুস্থ করে দিন, আপনিই সুস্থতা দানকারী। আপনার শিক্ষা ছাড়া কোন শিফা নেই; এমন শিক্ষা যার পরে আর কোন রোগ অবশিষ্ট থাকে না। (বুখার-৫৩৫১; মুসলিম-২১১৯,৫৫২১)

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ عَلَى أَعْرَابِيٍّ يَعُودُهُ، قَالَ: وَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ عَلَى مَرِيضٍ يَعُودُهُ قَالَ: «لاَ بَأْسَ، طَهُورٌ إِنْ شَاءَ اللَّهُ» فَقَالَ لَهُ: «لاَ بَأْسَ طَهُورٌ إِنْ شَاءَ اللَّهُ» (بخارى ــ 3616)

রাসূল স, একদিন অসুস্থ একজন বেদুইনকে দেখতে গেলেন, ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ স. এর অভ্যাস ছিল যে, অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গেলে বলতেন, 'কোন দুশ্চিন্তার কারণ নেই, ইনশা আল্লাহ আপনি ভালো হয়ে যাবেন। (বুখার-৩৬১৬,৩৪২০, ৫৩৩২, ৫৩৩৮, ৭০৩২)

মহামারি থেকে আশ্রয় লাত্রে দু'আ:

নতুন নতুন সংক্রামক ব্যাধি ও মহামারি দেখা দিলে তা থেকে আশ্রয় লাভে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা, ধৈর্যধারণ করা । বিশ্বনবি স, দু'আর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতেন।

عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُولُ: «اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ البَرَصِ، وَالْجُنُونِ، وَالْجُذَامِ، وَمِنْ سَيِّئِ الْأَسْقَامِ» (سنن ابى داود ــ 1554)

হে আল্লাহ! আপনার কাছে আমি শ্বেত রোগ থেকে আশ্রয় চাই। সাতাত হয়ে যাওয়া থেকে আশ্রয় চাই। কুঘ্ন রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে আশ্রয় চাই। আর দুরারোগ্য ব্যাধি (যেগুলোর নাম জানি না) থেকে আপনার আশ্রয় চাই। (আবু দাউদ-১৫৫৪, নাসাঈ-৫৪৯৩)

عَنْ زِيَادِ بْنِ عِلَاقَةَ، عَنْ عَمِّهِ، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الأَخْلَاقِ، وَالأَعْمَالِ وَالأَهْوَاءِ» (ترمذى ــ3591)

হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার কাছে খারাপ (নষ্ট-বাজে) চরিত্র, অন্যায় কাজ ও কুপ্রবৃত্তির অনিষ্টতা এবং বাজে অসুস্থতা ও নতুন সৃষ্ট রোগ বালাই থেকে আশ্রয় চাই।(তিরমিজি-৩৫৯১)

উসমান রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ স. বলেন, প্রতিদিন ভোরে ও সন্ধ্যায় যে কোনো বান্দা এ দুআটি তিনবার পাঠ করবে, কোনো কিছুই তার অনিষ্ট/ক্ষতি করতে পারবে নাদোয়াটি হলো-

بِسْمِ اللهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ، وَهُوَ السَّمِيعُ العَلِيمُ (ترمذى ــ 3388)

ওই আল্লাহ তাআলার নামে, যাঁর নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো কিছুই কোনো অনিষ্ট করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রেতা, সর্বজ্ঞানী(তিরমিজি-৩৩৮৮)

উপসংহার:

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে রোগ বালাই আসাতে ও বর্তমান সমায়ে করোনাভাইরাসে কারণে আতঙ্কিত না হয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি আল্লাহর ওপর পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করার তাওফিক দান করুন। তিনি যেন তার বান্দাদের থেকে এ মহামারি বিপদ উঠিয়ে নেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে হেফাজত করেন।

পরিশেষে কুরআনে বানীটি শুনিয়ে শেষ করছি,

  فَاللَّهُ خَيْرٌ حَافِظًا وَهُوَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ

আল্লাহ উত্তম হেফাজতকারী এবং তিনিই সর্বাধিক দয়ালু।(সুরা ইউসুফ-১২:৬৪)

মাহন আল্লাহ তায়অলা আমাদের সকলের সু-স্বাস্থ্য রক্ষা করে চলার তৌফিক দান করুন। আমিন।

No comments:

Post a Comment

razzakhowlader59@gmil.com