ঈদুল ফিতরের বিধি-বিধান সমূহ
এম এ রাজ্জাক হাওলাদার
সূচনা: ঈদ আরবী শব্দ। এর অর্থ হলো- খুশি, আনন্দ, উৎসব ইত্যাদি৷ আর ফিতর অর্থ উপবাস ভঙ্গ করা বা রোযা ভঙ্গ করা ইত্যাদি। সুদীর্ঘ এক মাস আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ পালনার্থে রোযা রাখার পর বিশ্ব-মুসলিম এ দিনটিতে রোযা ভঙ্গ করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসে আল্লাহ তায়ালার মেহমান হিসেবে আনন্দোৎসব করে থাকে৷ একারনেই এদিনটির নামকরণ করা হয়েছে ঈদুল ফিতর। তবে আকাশবাসীর কাছে এদিনটির নাম হলো- ‘‘ইয়াউমুল জাযা তথা প্রতিদান দিবস’’৷ তাই ঈদ হলো প্রতিদান পাওয়ার আনন্দ৷ ঈদ হলো পাপমুক্তির আনন্দ। ঈদ হলো ক্ষমাপ্রাপ্তির আনন্দ৷
ঈদ হলো সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ঐক্য, সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি গড়ে তোলার আনন্দ। ঈদ
হলো সফলতা ও বিজয়ের আনন্দ। এ বিজয় নাফসের ওপর আকলের৷ এ বিজয় শয়তানের ওপর ইনসানের।
এ বিজয় জাহান্নামের উপর জান্নাতের৷ সুতরাং মুসলিমদের ঈদ হবে পবিত্রতাময় ও ধর্মীয়
ভাবগাম্ভীর্যে পরিপূর্ণ। ইসলাম ধর্মে এরুপ দুটি আনন্দ বা উৎসবের দিন নির্ধারন করা
হয়েছে৷ একটির নাম হলো- 'ঈদুল ফিতর' তথা রোযা ভাঙ্গা বা ফিতরা দেওয়ার আনন্দ৷
অপরটির নাম হলো- 'ঈদুল আযহা' তথা কুরবানী করার আনন্দ৷ আর ইসলামী শরীয়ত উভয়
ঈদের দিনে সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে একত্রিত হয়ে মহাসমারোহে দু'রাকাত সালাত আদায় করার মাধ্যমে মহান রবের
কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করাকে ওয়াজিব হিসেবে সাব্যস্ত করেছে৷ (সুনানে নাসায়ী-১৫৬৬,নাসরুল
বারী শরহে বুখারী-৪/১৪০ পৃষ্ঠা, ফতোয়ায়ে শামী-১/৬১১ পৃষ্ঠা, আহকামুস সিয়াম-৪৭
পৃষ্ঠা, তাফহীমুল কুদুরী-৯১ পৃষ্ঠা)
#ঈদের_সূচনাঃ দ্বিতীয় হিজরীতে ঈদ উৎসবের বিধান দেয়া হয়েছে৷
যেমন হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ أَنَسٍ، قَالَ قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم
الْمَدِينَةَ وَلَهُمْ يَوْمَانِ يَلْعَبُونَ فِيهِمَا فَقَالَ " مَا هَذَانِ
الْيَوْمَانِ " . قَالُوا كُنَّا نَلْعَبُ فِيهِمَا فِي الْجَاهِلِيَّةِ
. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنَّ اللَّهَ قَدْ
أَبْدَلَكُمْ بِهِمَا خَيْرًا مِنْهُمَا يَوْمَ الأَضْحَى وَيَوْمَ الْفِطْرِ
" .
হযরত আনাস ইবনে মালিক রাযিঃ থেকে বর্ণিত৷
তিনি বলেনঃ হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাদীনায় এসে দেখলেন
মাদীনাবাসী নির্দিষ্ট দু’দিনে খেলাধুলা
ও আনন্দোৎসব পালন করে৷ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা
করলেনঃ এদু’টি দিন কিসের
উৎসব? তারা বললোঃ
আমরা জাহিলী যুগে এ দু’দিন ঈদ হিসেবে
পালন করতাম। তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ এ দু’দিনের পরিবর্তে তোমাদেরকে আল্লাহ তায়ালা আরও
উত্তম দু’টি দিন দান
করেছেন। তা হলো- ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন। সনদ সহীহ৷ (সুনানে আবু দাউদ-১১৩৪, সুনানে
নাসায়ী-১৫৫৬, মুসনাদে আহমাদ-১৩৬২২, মুস্তাদরাকে হাকীম-১০৯১, মিশকাতুল মাসাবীহ-১৪৩৯)
হাদীস
শরীফে আরও বর্ণিত হয়েছে-
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنَّ لِكُلِّ
قَوْمٍ عِيدًا وَهَذَا عِيدُنَا "
হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক
জাতির জন্যই আনন্দ-উৎসবের দিন রয়েছে আর ঈদ হলো আমাদের আনন্দ উৎসবের দিন। সনদ সহীহ৷
(সহীহুল বুখারী-৯৫২, সহীহু মুসলিম-১৯৪৬, সহীহ ইবনে হিব্বান-৫৮৭৬, সুনানে নাসায়ী-১৫৯৩)
নিম্নে
ঈদের কিছু মাসআলা নিয়ে আলোচনা করা হলো:
মাসআলাঃ০১
১৷ সুবহে সাদিকের পুর্বে ঘুম থেকে উঠা৷
(সুনানে বায়হাকী-৬১২৬)
২৷ উত্তমরুপে মিসওয়াক করা৷ (তাহতাবী-২৮৯
পৃষ্ঠা)
৩৷ উত্তমরুপে গোসল করা৷ (মুয়াত্তা মালিক-৪১৪)
৪৷ উত্তম পোষাক পরিধান করা৷ (সুনানে বায়হাকী-১৯০১)
৫৷ শরীয়ত সম্মত সাজ-সজ্জা করা৷ (সুনানে
নাসায়ী-১৫৭২)
৬৷ আতর-খুশবু ব্যাবহার করা৷ (মুস্তাদরাকে
হাকীম-৭৫৬০)
৭৷ ঈদগাহে যাওয়ার পুর্বে মিষ্টিদ্রব্য খাওয়া৷
(মিশকাতুল মাসাবীহ-১৪৩৩)
৮৷ ঈদগাহে যাওয়ার পুর্বে সদকাতুল ফিতর আদায়
করা৷ (সুনানে ইবনে মাজাহ- ১৮২৭)
৯৷ সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ঈদগাহে গমন করা৷
(সুনানে আবু দাউদ-১১৩৫)
১০৷ পায়ে হেটে ঈদগাহে গমন করা৷ (সুনানে
তিরমিযী-৫৩০)
১১৷ ঈদগাহে এক রাস্তায় যাওয়া অন্য রাস্তায়
পত্যাবর্তন করা৷ (বুখারী-৯৮৬)
১২৷ ঈদগাহে যাওয়া আসার সময় নিম্নস্বরে
তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা৷ (মুস্তাদরাকে হাকিম-১১০৫)
১৩৷ ঈদগাহে ঈদের সালাত আদায় করা৷ (সহীহুল
বুখারী-৯৫৬)
মাসআলাঃ০২
#ঈদের_সালাতের_সূচনাঃ দ্বিতীয় হিজরীতে রমযানের রোযা ফরয হওয়ার পর
ঈদের সালাতের বিধান দেয়া হয়েছে৷ তথা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দুই রাকাত সালাত
ওয়াজিব হিসেবে নির্ধারন করা হয়েছে৷ (সহীহুল বুখারী-৯৬৪, নাসরুল বারী-৪/১৪০ পৃষ্ঠা,
আনওয়ারুল মিশকাত-৩/৫৮৫ পৃষ্ঠা, আশরাফুল হিদায়া-১/৬১৬ পৃষ্ঠা, কানযুদ
দাকায়িক-১/১৯৫ পৃষ্ঠা)
মাসআলাঃ০৩
১। মুসলিম ব্যক্তির উপর৷ কেননা অমুসলিমের
ইবাদাত গ্রহণযোগ্য নয়৷
২৷ স্বাধীন ব্যক্তির উপর। কেননা গোলামের উপর
ঈদের সালাত ওয়াজিব নয়৷
৩। পুরুষ ব্যক্তির উপর। কেননা মহিলার উপর
ঈদের সালাত ওয়াজিব নয়৷
৪। প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির উপর। কেননা
নাবালেগের উপর ঈদের সালাত ওয়াজিব নয়৷
৫। জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তির উপর। কেননা পাগলের
উপর ঈদের সালাত ওয়াজিব নয়৷
৬। মুকীম ব্যক্তির উপর। কেননা মুসাফিরের উপর
ঈদের সালাত ওয়াজিব নয়৷
৭৷ সুস্থ ব্যক্তির উপর। কেননা যিনি অসুস্থ
ঈদগাহে যেতে অক্ষম এমন ব্যক্তির উপর ঈদের সালাত ওয়াজিব নয়৷ (আল হিদায়া-১৫৭ পৃষ্ঠা,
আল ফিকহুল মুয়াসসার-১৭৪ পৃষ্ঠা, বেহেশতী গাওহার-১১/১১৬ পৃষ্ঠা, শরহে তানবীর-১/৫৯০
পৃষ্ঠা, শরহে বেকায়া-১/৪৭৮ পৃষ্ঠা, কানযুদ দাকায়িক-১/১৯১ পৃষ্ঠা, আনওয়ারুল
মিশকাত-২/৫৮৯ পৃষ্ঠা)
মাসআলাঃ০৪
#ঈদের_সালাত_আদায়ের_নিয়মঃ প্রথমে কিবলামুখী হয়ে দাড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমা আল্লাহু আকবার বলে কান পর্যন্ত
দুই হাত উঠায়ে বুকের
ওপর বাঁধবে।
তারপর ইমাম মুক্তাদী উভয়ে ছানা পড়বে। এরপর ইমাম তিনবার তাকবীর বলবে ইমামের সঙ্গে
মুক্তাদীরাও বলবে এবং প্রত্যেক তাকবীর বলার সময় কান পর্যন্ত হাত উঠায়ে ছেড়ে দিবে ও
তৃতীয়বার তাকবীর বলে হাত বেঁধে নিবে। প্রত্যেক তাকবীরের পর তিনবার সুবহানাল্লাহ
বলা যায় পরিমাণ সময় দেরি করবে৷ তারপর ইমাম আউযুবিল্লাহ এবং বিসমিল্লাহ পড়ে সূরায়ে
ফাতেহা পাঠ করে একটা সূরা মিলাবে। এরপর রুকু- সাজদাহ করবে৷
অতপর দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে প্রথমে
বিসমিল্লাহসহ সূরা ফাতেহা পাঠ করে একটা সূরা মিলাবে। তারপর ইমাম আল্লাহু আকবার
বলার মাধ্যমে তিনটা তাকবীর সম্পন্ন করবে। এখানেও প্রতি তাকবীরের পর ইমাম মুক্তাদী
হাত ছেড়ে দিবে এবং চতুর্থ তাকবীর বলে হাত না বেঁধে রুকুতে চলে যাবে। এরপর সাজদা
এবং আখেরী বৈঠক করে যথারীতি সালাম ফিরায়ে সালাত সমাপ্ত করবে। (সুত্র: মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক-৩/২৯৩-২৯৪ পৃষ্ঠা,
ফতোয়ায়ে আলমগীরী-১/৩৬৬ পৃষ্ঠা, ফতোয়ায়ে ইউনুসিয়া-১/৩১৮ পৃষ্ঠা, আশরাফুল
হিদায়া-১/৬২৩ পৃষ্ঠা, বেহেশতী জেওর-২/২০৫ পৃষ্ঠা, আহকামুস সিয়াম-৪৭ পৃষ্ঠা)
মাসআলাঃ০৫
#ঈদের_সালাতের_সুন্নত_কিরাতঃ উভয় ঈদের সালাতের প্রথম রাকাতে সূরা ক্বফ এবং দ্বিতীয় রাকাতে সুরা কমার অথবা
প্রথম রাকাতে সূরা আলা এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা গশিয়া পাঠ করা সুন্নত৷ (সুনানে
নাসায়ী-১৫৬৭-১৫৬৮, সহীহু মুসলিম-১৯৪৪, সুনানে আবু দাউদ-১১৫৪,মুয়াত্তা মালিক-৪২০,মুয়াত্তা
মুহাম্মাদ-২৩৮,যাদুল মাআদ-১/৩৮ পৃষ্ঠা)
মাসআলাঃ০৬
#ঈদের_সালাতে_সিজদায়ে_সাহুর_বিধানঃ ঈদের জামাত যদি এ পরিমান বড় হয় যে, ইমাম সিজদায়ে সাহু করলে মুক্তাদীরা
বিভ্রান্তিতে পড়ে যাওয়ার আশংকা থাকে তাহলে সিজদায়ে সাহু না করলেও সালাত সহীহ হবে৷
আর যদি জামাত ছোট হয়, যেখানে ইমাম
সিজদায়ে সাহু করলে মুসল্লিরা বুজতে পারে যে, ইমাম সিজদায়ে সাহু করেছে বা মুক্তাদিদের
বিভ্রান্তিতে পড়ারও কোন আশংকা নেই, তাহলে সিজদায়ে সাহু করতে হবে৷ (ফতোয়ায়ে
আলমগীরী-১/১৬৩ পৃষ্ঠা, ফতোয়ায়ে কাসেমিয়া-১/২৪৫ পৃষ্ঠা, ফতোয়ায়ে শামী-২/৯২ পৃষ্ঠা,
ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া-১/৪৫৪ পৃষ্ঠা, ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া-১২/৫১৮ পৃষ্ঠা, ফতোয়ায়ে
মাদানিয়া-১/২৩০ পৃষ্ঠা, আপকে মাসায়িল-৪/১৫৭ পৃষ্ঠা)
মাসআলাঃ০৭
#ঈদের_সালাতে_আযান_ইকামাতের_বিধানঃ উভয় ঈদের সালাত ও ঈদের খুতবায় আযান ইকামাত
দেয়া মাকরুহে তাহরীমী৷ কেননা হযরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
ঈদের সালাত আযান ইকামত ব্যতীতই আদায় করেছেন৷ তাই ঈদের সালাত আযান ইকামাত ব্যতীত
আদায় করা ওয়াজিব৷ আর আযান ইকামাতের প্রচলন করা জঘন্যতম অন্যায় ও বিদআত৷ (সহীহুল
বুখারী-৯৬০,সহীহু মুসলিম ১৯৩৪-১৯৩৫,সুনানে আবু দাউদ-১১৪৮,সুনানে নাসায়ী-১৫৬২,মুয়াত্তা
মালিক-৪১৩)
মাসআলাঃ০৮
#ঈদের_সালাত_মাসজিদে_আদায়_করার_বিধানঃ ঈদের সালাত ঈদগাহে আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ৷ কেননা হযরত নবী কারীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদা ঈদগাহে ঈদের সালাত আদায় করতেন৷ তবে একবার
বৃষ্টির কারনে মাসজিদে পড়েছিলেন৷ যেমন হাদীস শরীফে বর্নিত হয়েছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّهُ أَصَابَهُمْ مَطَرٌ فِي يَوْمِ
عِيدٍ فَصَلَّى بِهِمُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم صَلاَةَ الْعِيدِ فِي
الْمَسْجِدِ
আবূ হুরাইরাহ রাযিঃ থেকে বর্ণিতঃ একদা ঈদের
দিন বৃষ্টি হলে নবীজি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সহাবীদেরকে নিয়ে ঈদের
সালাত মাসজিদে আদায় করেছেন। (সুনানে আবু দাউদ-১১৬০)
সুতরাং ওযরের কারনে ঈদের সালাত মাসজিদে পড়া জায়েয
আছে৷ যেমন কোন এলাকায় যদি মাঠ না থাকে অথবা মাঠ আছে কিন্তু বৃষ্টি হচ্ছে কিংবা
মাঠে কাঁদা বা পানি রয়েছে ইত্যাদি৷ (সূত্র: সহীহুল বুখারী-১/১৩১ পৃষ্ঠা, সুনানে আবু দাউদ-
১/১৬৪ পৃষ্ঠা, ফতোয়ায়ে কাসেমীয়া-১/২৪৪ পৃষ্ঠা, ফতোয়ায়ে তাতার খানিয়া-১/৫৫৯ পৃষ্ঠা,
আশরাফুল হিদায়া-১/৬১৯ পৃষ্ঠা, আল মাউসুয়াতুল ফিকহিয়্যা-২৭/২৪৫ পৃষ্ঠা)
মাসআলাঃ০৯
#ঈদের_খুতবার_বিধানঃ ঈদের খুতবাহ ঈদের সালাতের পর পাঠ করা সুন্নতে
মুয়াক্কাদাহ৷ সুতরাং ঈদের সালাতের পুর্বে খুতবাহ পাঠ করা মাকরুহে তাহরীমী ও
জঘন্যতম বিদআত৷ (সহীহুল বুখারী-৯৫৭, ৯৬৩,সহীহু মুসলিম-১৯৩৭,সুনানে নাসায়ী-১৫৬৪,ফতোয়ায়ে
আলমগীরী-১/৩৬৬ পৃষ্ঠা)
মাসআলাঃ১০
#ঈদের সালাতে দুটি খুতবা পাঠ: ঈদের সালাতের পর দাড়িয়ে মুসল্লিদের দিকে
ফিরে দুটি খুতবা পাঠ করা সুন্নত এবং প্রথম খুতবায় নয়বার ও দ্বিতীয় খুতবায় সাতবার
তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা সুন্নত৷ আর উভয় খুতবার মাঝখানে তিন তাসবীহ পরিমান সময় নিরব
বসে থাকাও সুন্নত৷ আর উপস্থিত শ্রুতাদের জন্য মনোযোগ সহকারে খুতবা শ্রবন করা
ওয়াজিব৷ মুসল্লি অধিক হওয়ার কারনে খুতবার আওয়াজ না শুনলেও খুতবার সময় চুপ থাকা
ওয়াজিব এবং কোন প্রকার কথাবার্তা বলা মাকরুহে তাহরীমী৷ (সুনানে নাসায়ী-১৫৭৭-১৫৮৩,সহীহুল
বুখারী-৯৭৬, ফতোয়ায়ে আলমগীরী-১/৩৬৬ পৃষ্ঠা)
মাসআলাঃ১১
#ঈদের_দিন_নফল_সালাতের_বিধানঃ উভয় ঈদের দিন ঈদের সালাতের পুর্বে বাড়ীতে বা ঈদগাহে নারী পুরুষ সকলের জন্য
কোন প্রকার নফল সালাত পড়া মাকরুহে তাহরীমী৷ আর ঈদের সালাতের পরে ঈদগাহে কোন
প্রকার নফল পড়া মাকরুহে তাহরীমী৷ যেমন ইশরাক, চাশত, অন্যান্ন নফল ইত্যাদি৷ তবে ঈদের সালাতের পর
বাড়ীতে নফল পড়া জায়েয হবে৷ কিন্তু না পড়াই উত্তম৷ কেননা হযরত রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদের সালাতের পুর্বে বা পরে কোন প্রকার নফল সালাত
আদায় করেন নি৷ এমনকি কোন সাহাবীও আদায় করেন নি৷ তাই ঈদের দিন নফল সালাত না পড়াই
সুন্নতে নববী৷ (সূত্র:
সহীহুল বুখারী-৯৬৪-৯৮৯,
সহীহু মুসলিম-১৯৪২,সুনানে নাসায়ী-১৫৮৭,সুনানে দারামী-১৬১০,মুয়াত্তা মুহাম্মাদ-২৩৬,
মুয়াত্তা মালিক-৪২২,আল-হিদায়া-১/১৬২ পৃষ্ঠা)
মাসআলাঃ১২
#ঈদের_সালাতের_কাযার_বিধানঃ ঈদের সালাতের কোন কাযা নেই৷ তবে ঈদুল ফিতরের দিন যদি কোন কারনবশত ঈদের সালাত
আদায় করতে না পারে৷ যেমন আকাশ মেঘলার কারনে চাঁদ দেখা না যাওয়া বা অর্ধদুপুরের পর
চাঁদ দেখার সংবাদ আসা ইত্যাদি৷ তবে পরদিন ঈদের সালাত আদায় করে নিবে৷ কিন্তু
দ্বিতীয় দিন অর্ধদুপুর অতিবাহীত হয়ে যাওয়ার পর আর ঈদের সালাত আদায় করা জায়েয নয়৷
কেননা ঈদুল ফিতরের সালাত ঈদের দিন আদায় করাই ওয়াজিব৷ আর একদিন বিলম্ভ ছিল মূলত
উজরের কারনে৷ যা শরীয়ত অনুমোদিত৷ (সূত্র: সুনানে ইবনে মাজাহ-১৬৫৩, সুনানে নাসায়ী-১৫৫৭,
মুসনাদে আহমাদ-২০০৫৬, ২০০৬১,ফতোয়ায়ে
আলমগীরী-১/৩৬৮ পৃষ্ঠা, আল-হিদায়া-১/১৬৩, তাফহীমুল কুদুরী-৯১ পৃষ্ঠা)
শেষকথাঃ পরিশেষে বলা যায় যে, ঈদের আমল সমূহের মধ্যে উপরের আলোচনা গুলো থেকে আমাদের শিক্ষা নিয়ে বাস্তবতার জীবন পরিচলনা করা উচিৎ। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সঠিক আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com