Monday, May 02, 2022

ইসলামে শ্রমিকের অধিকার

 


ইসলামে শ্রমিকের অধিকার

এম এ রাজ্জাক হাওলাদার

ভূমিকা: মহান আল্লাহ এই পৃথিবী সুন্দর করে পরিচালনা করার জন্য মানুষকে বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার উপযুক্ত করে সৃষ্টি করেছেন। তাদের মধ্যে একটি শ্রেণী হচ্ছে শ্রমিক শ্রেণী। এই শ্রেণরি মানুষ তাদের শ্রম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। এরা সাধারণত নিম্ন শ্রেণীর হয়ে থাকে। তারা অনেক ক্ষেত্রে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। কুরআন ও হাদিসে তাদের ন্যায্য অধিকারের বিষয়টি ‎‎গুরুত্ব সহকারে আলোচিত হয়েছে।

মালিক-শ্রমিক আল্লাহর সৃষ্টি:

أَهُمْ يَقْسِمُونَ رَحْمَتَ رَبِّكَ نَحْنُ قَسَمْنَا بَيْنَهُمْ مَعِيشَتَهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَرَفَعْنَا بَعْضَهُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِيَتَّخِذَ بَعْضُهُمْ ‏بَعْضًا سُخْرِيًّا وَرَحْمَتُ رَبِّكَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ

তারা কি আপনার পালনকর্তার রহমত বন্টন করে? আমি তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বন্টন করেছি পার্থিব জীবনে এবং একের মর্যাদাকে অপরের উপর উন্নীত করেছি, যাতে একে অপরকে সেবক রূপে গ্রহণ করে। তারা যা সঞ্চয় করে, আপনার পালনকর্তার রহমত তদপেক্ষা উত্তম। (সূরা যুখরুফ-৪৩:৩২)

وَهُوَ الَّذِي جَعَلَكُمْ خَلَائِفَ الْأَرْضِ وَرَفَعَ بَعْضَكُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِيَبْلُوَكُمْ فِي مَا آتَاكُمْ إِنَّ رَبَّكَ سَرِيعُ الْعِقَابِ وَإِنَّهُ لَغَفُورٌ ‏رَحِيمٌ ‏

তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছেন এবং কতককে কতকের উপর মর্যাদা সমুন্নত করেছেন, যাতে তোমাদেরকে এ বিষয়ে পরীক্ষা করেন, যা তোমাদেরকে দিয়েছেন। আপনার প্রতিপালক দ্রুত শাস্তি দাতা এবং তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, দয়ালু। (সূরা আনআম- : ১৬৫)

وَاللَّهُ فَضَّلَ بَعْضَكُمْ عَلَى بَعْضٍ فِي الرِّزْقِ فَمَا الَّذِينَ فُضِّلُوا بِرَادِّي رِزْقِهِمْ عَلَى مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَهُمْ فِيهِ سَوَاءٌ أَفَبِنِعْمَةِ اللَّهِ ‏يَجْحَدُونَ ‏

আল্লাহ তা'আলা জীবনোপকরণে তোমাদের একজনকে অন্যজনের চাইতে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। অতএব যাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে, তারা তাদের অধীনস্থ দাস-দাসীদেরকে স্বীয় জীবিকা থেকে এমন কিছু দেয় না, যাতে তারা এ বিষয়ে তাদের সমান হয়ে যাবে। তবে কি তারা আল্লাহর নেয়ামত অস্বীকার করে। (সূরা নাহল-১৬ : ৭১)

বেশি সম্পদের মালিক হওয়া সব সময় ইতিবাচক নয়:

وَلَوْلَا أَنْ يَكُونَ النَّاسُ أُمَّةً وَاحِدَةً لَجَعَلْنَا لِمَنْ يَكْفُرُ بِالرَّحْمَنِ لِبُيُوتِهِمْ سُقُفًا مِنْ فِضَّةٍ وَمَعَارِجَ عَلَيْهَا يَظْهَرُونَ وَلِبُيُوتِهِمْ ‏أَبْوَابًا وَسُرُرًا عَلَيْهَا يَتَّكِئُونَ وَزُخْرُفًا وَإِنْ كُلُّ ذَلِكَ لَمَّا مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةُ عِنْدَ رَبِّكَ لِلْمُتَّقِينَ

যদি সব মানুষের এক মতাবলম্বী হয়ে যাওয়ার আশংকা না থাকত, তবে যারা দয়াময় আল্লাহকে অস্বীকার করে আমি তাদেরকে দিতাম াদের গৃহের জন্যে রৌপ্য নির্মিত ছাদ ও সিঁড়ি, যার উপর তারা চড়ত এবং তাদের গৃহের জন্যে দরজা দিতাম এবং পালংক দিতাম যাতে তারা হেলান দিয়ে বসত এবং স্বর্ণনির্মিতও দিতাম। এগুলো সবই তো পার্থিব জীবনের ভোগ সামগ্রী মাত্র। আর পরকাল আপনার পালনকর্তার কাছে তাঁদের জন্যেই ারা ভয় করে। (সূরা যুখরুফ : ৩৩-৩৫)

দুনিয়ার সকল সম্পদ আল্লাহর কাছে তুচ্ছ বিষয়:

عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَوْ كَانَتِ الدُّنْيَا تَعْدِلُ عِنْدَ اللهِ جَنَاحَ بَعُوضَةٍ مَا سَقَى كَافِرًا ‏مِنْهَا شَرْبَةَ مَاءٍ ‏

সাহল ইবনে সাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলার নিকট যদি এই পৃথিবীর মূল্য মশার একটি ডানার সমানও হত তাহলে তিনি কোন কাফেরকে এখানকার পানির এক ঢোকও পান করতে দিতেন না। (তিরমিযী : ২৩২০)

শ্রমিকের কাজ নিন্দনীয় কোন বিষয় নয়:

শ্রমিকের কাজ নিন্দনীয় কোন বিষয় নয়, সকল নবী-রাসূল ছাগল চরিয়েছেন

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَا بَعَثَ اللَّهُ نَبِيًّا إِلَّا رَعَى الغَنَمَ فَقَالَ أَصْحَابُهُ: وَأَنْتَ؟ ‏فَقَالَ: نَعَمْ، كُنْتُ أَرْعَاهَا عَلَى قَرَارِيطَ لِأَهْلِ مَكَّةَ

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা এমন কোন নবী প্রেরণ করেননি, যিনি বকরী না চরিয়েছেন। তখন তাঁর সাহাবীগণ বললেন, আপনিও? তিনি বললেন, হ্যাঁ; আমি কয়েক টাকার বিনিময়ে মক্কাবাসীদের ছাগল চরাতাম। (বুখারী : ২২৬২)

শ্রমিকের উপার্জন হালাল:

শ্রমিক তার শ্রম ব্যয় করে হালাল পথে উপার্জন করে। ইসলাম তার স্বীকৃতি দিয়েছে

عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: طَلَبُ كَسْبِ الْحَلَالِ فَرِيضَةٌ بَعْدَ ‏

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, অন্যান্য ফরজ উপাসনার পর হালাল উপার্জন একটি ফরজ কাজ। (আস সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী : ১১৬৯৫)

عَنْ جُمَيْعِ بْنِ عُمَيْرٍ، عَنْ خَالِهِ، قَالَ: سُئِلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: عَنْ أَفْضَلِ الْكَسْبِ فَقَالَ: بَيْعٌ مَبْرُورٌ، وَعَمَلُ الرَّجُلِ ‏بِيَدِهِ ‏

জুমাই ইবনে উমায়ের তার খালু থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (স.) কে সর্বোত্তম উপার্জন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো। তিনি বললেন, সৎ ব্যবসা এবং কোন ব্যক্তির নিজের হাতের উপার্জন। (মুসনাদে আহমদ : ১৫৮৩৬)

শ্রমিকের যোগ্যতা:

قَالَتْ إِحْدَاهُمَا يَا أَبَتِ اسْتَأْجِرْهُ إِنَّ خَيْرَ مَنِ اسْتَأْجَرْتَ الْقَوِيُّ الْأَمِينُ

বালিকাদ্বয়ের একজন বলল পিতা, তাকে চাকর নিযুক্ত করুন। কেননা, আপনার চাকর হিসেবে সে-ই উত্তম হবে, যে শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত। (সূরা কাসাস-২৮ : ২৬)

قَالَ يَا أَيُّهَا الْمَلَأُ أَيُّكُمْ يَأْتِينِي بِعَرْشِهَا قَبْلَ أَنْ يَأْتُونِي مُسْلِمِينَ قَالَ عِفْرِيتٌ مِنَ الْجِنِّ أَنَا آتِيكَ بِهِ قَبْلَ أَنْ تَقُومَ مِنْ مَقَامِكَ ‏وَإِنِّي عَلَيْهِ لَقَوِيٌّ أَمِينٌ قَالَ الَّذِي عِنْدَهُ عِلْمٌ مِنَ الْكِتَابِ أَنَا آتِيكَ بِهِ قَبْلَ أَنْ يَرْتَدَّ إِلَيْكَ طَرْفُكَ فَلَمَّا رَآهُ مُسْتَقِرًّا عِنْدَهُ قَالَ هَذَا ‏مِنْ فَضْلِ رَبِّي لِيَبْلُوَنِي أَأَشْكُرُ أَمْ أَكْفُرُ وَمَنْ شَكَرَ فَإِنَّمَا يَشْكُرُ لِنَفْسِهِ وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ رَبِّي غَنِيٌّ كَرِيمٌ

সুলায়মান বললেন, হে পরিষদবর্গ, তারা আত্মসমর্পণ করে আমার কাছে আসার পূর্বে কে বিলকীসের সিংহাসন আমাকে এনে দেবে? জনৈক দৈত্য-জিন বলল, আপনি আপনার স্থান থেকে উঠার পূর্বে আমি তা এনে দেব এবং আমি একাজে শক্তিবান, বিশ্বস্ত। কিতাবের জ্ঞান যার ছিল, সে বলল, আপনার দিকে আপনার চোখের পলক ফেলার পূর্বেই আমি তা আপনাকে এনে দেব। অতঃপর সুলায়মান যখন তা সামনে রক্ষিত দেখলেন, তখন বললেন এটা আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করেন যে, আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি না। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে নিজের উপকারের জন্যেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং যে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে জানুক যে, আমার পালনকর্তা অভাবমুক্ত কৃপাশীল। (সূরা নামল-২৭ : ৩৮-৪০)

শ্রমিকদের আত্ম সম্মানের দিকে সুদৃষ্টি রাখা:

عَنِ الْمَعْرُورِ بْنِ سُوَيْدٍ، قَالَ: مَرَرْنَا بِأَبِي ذَرٍّ بِالرَّبَذَةِ وَعَلَيْهِ بُرْدٌ وَعَلَى غُلَامِهِ مِثْلُهُ، فَقُلْنَا: يَا أَبَا ذَرٍّ لَوْ جَمَعْتَ بَيْنَهُمَا كَانَتْ ‏حُلَّةً، فَقَالَ: إِنَّهُ كَانَ بَيْنِي وَبَيْنَ رَجُلٍ مِنْ إِخْوَانِي كَلَامٌ، وَكَانَتْ أُمُّهُ أَعْجَمِيَّةً، فَعَيَّرْتُهُ بِأُمِّهِ، فَشَكَانِي إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ ‏عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَقِيتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: يَا أَبَا ذَرٍّ، إِنَّكَ امْرُؤٌ فِيكَ جَاهِلِيَّةٌ

মারূর ইবনে সুওয়াইদ (রহঃ) বলেন, আমরা রাবাযাহ নামক স্থানে আবু যর (রাঃ) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন তাঁর গায়ে একটি চাদর ছিল এবং তাঁর গোলামের গায়েও অনুরূপ একটি চাদর ছিল। তখন আমরা বললাম, হে আবু যর! যদি আপনি উভয়টি একত্রিত করতেন, তাহলে এক জোড়া চাদর হতো। তিনি বললেন, আমার মধ্যে এবং আমার ভাই সম্পর্কীয় ব্যক্তিটির মধ্যে কিছু কথা আছে। তার মা একজন অনারব। একদা আমি তার মাকে উল্লেখ করে তাকে ভর্ৎসনা করেছিলাম। তখন সে আমার বিরূদ্ধে মহানবী (স.) এর কাছে নালিশ করেছিল। এরপর যখন আমি মহানবী (স.) এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম। তিনি বললেন, হে আবু যর! তুমি এমন ব্যক্তি যার মধ্যে জাহেলী যুগের কাজকর্ম রয়েছে।

قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، مَنْ سَبَّ الرِّجَالَ سَبُّوا أَبَاهُ وَأُمَّهُ، قَالَ: يَا أَبَا ذَرٍّ، إِنَّكَ امْرُؤٌ فِيكَ جَاهِلِيَّةٌ،هُمْ إِخْوَانُكُمْ، جَعَلَهُمُ اللهُ تَحْتَ ‏أَيْدِيكُمْ، فَأَطْعِمُوهُمْ مِمَّا تَأْكُلُونَ، وَأَلْبِسُوهُمْ مِمَّا تَلْبَسُونَ، وَلَا تُكَلِّفُوهُمْ مَا يَغْلِبُهُمْ، فَإِنْ كَلَّفْتُمُوهُمْ فَأَعِينُوهُمْ

আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! যে ব্যক্তি মানুষদেরকে গালি দেয় তার প্রতিউত্তরে তারাও তার পিতামাতাকে গালি দেয়া ‎‎স্বাভাবিক। তিনি বললেন, হে আবু যর! তুমি এমন ব্যক্তি যার মধ্যে জাহেলী যুগের কর্মকান্ড এখনও বিদ্যমান। তারা তোমাদের ভাই, আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধিনস্থ করে দিয়েছেন। তোমরা যা খাবে তাদেরকেও তা খাওয়াবে এবং তোমরা যেমন পোশাক পরবে তাদেরকে তা পরাবে। তোমরা তাদের উপর এমন কোন কাজ চাপিয়ে দেবে না, যা করতে তারা হিমশিম খেয়ে যায়। যদি এমন কোন কাজ দিতেই হয় তাহলে কাজে তাদেরকে সাহায্যও করো (মুসলিম : ৪২০৫)

কাজে নিয়োগের পূর্বে মুজুরী নির্ধারণ করা:

قَالَ إِنِّي أُرِيدُ أَنْ أُنْكِحَكَ إِحْدَى ابْنَتَيَّ هَاتَيْنِ عَلَى أَنْ تَأْجُرَنِي ثَمَانِيَ حِجَجٍ فَإِنْ أَتْمَمْتَ عَشْرًا فَمِنْ عِنْدِكَ وَمَا أُرِيدُ أَنْ أَشُقَّ ‏عَلَيْكَ سَتَجِدُنِي إِنْ شَاءَ اللَّهُ مِنَ الصَّالِحِينَ قَالَ ذَلِكَ بَيْنِي وَبَيْنَكَ أَيَّمَا الْأَجَلَيْنِ قَضَيْتُ فَلَا عُدْوَانَ عَلَيَّ وَاللَّهُ عَلَى مَا نَقُولُ ‏وَكِيلٌ

তিনি (শুয়াইব) মূসাকে বললেন, আমি আমার এই কন্যাদ্বয়ের একজনকে তোমার সাথে বিবাহে দিতে চাই এই শর্তে যে, তুমি আট বছর আমার চাকুরী করবে। যদি তুমি দশ বছর পূর্ণ কর তা তোমার ইচ্ছা। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না। আল্লাহ চাহেন তো তুমি আমাকে সৎকর্মপরায়ণ পাবে। মূসা বললেন, আমার ও আপনার মধ্যে এই চুক্তি স্থির হল। দু'টি মেয়াদের মধ্য থেকে যে কোন একটি পূর্ণ করলে আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকবে না। আমরা যা বলছি, তাতে আল্লাহর উপর ভরসা। (সূরা কাসাস-২৮ : ২৭-‎‎২৮)

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنِ اسْتِئْجَارِ الْأَجِيرِ، يَعْنِي حَتَّى يُبَيِّنَ لَهُ أَجْرَهُ ‏

আবু সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) বলেন, মহানবী (স.) পারিশ্রমিক নির্ধারণ না করে শ্রমিক নিয়োগ করতে নিষেধ করেছেন। (আস সুনানুল কুবরা লিলবায়হকী : ১১৬৫২)

ন্যায্য পারিশ্রমিক প্রদান করা:

عَنِ الْمُسْتَوْرِدِ بْنِ شَدَّادٍ، قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: مَنْ كَانَ لَنَا عَامِلًا فَلْيَكْتَسِبْ زَوْجَةً، فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُ ‏خَادِمٌ فَلْيَكْتَسِبْ خَادِمًا، فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُ مَسْكَنٌ فَلْيَكْتَسِبْ مَسْكَنًا قَالَ: قَالَ أَبُو بَكْرٍ: أُخْبِرْتُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ‏مَنِ اتَّخَذَ غَيْرَ ذَلِكَ فَهُوَ غَالٌّ أَوْ سَارِقٌ

আর মুসতাওরিদ ইবনে শাদ্দাদ (রাঃ) বলেন, আমি মহানবী (স.) কে বলতে শুনেছি: যে আমাদের কর্মকর্তা নিযুক্ত হয়েছে সে যেন একজন স্ত্রীর খরচ গ্রহণ করে। খাদেম না থাকলে সে যেন একটি খাদেম গ্রহণ করে এবং বাসস্থান না থাকলে একটি বাসস্থানে খরচ গ্রহণ করে। যে ব্যক্তি এর অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করবে সে প্রতারক বা চোর হিসাবে গণ্য হবে। (আবু দাউদ : ২৯৪৫)

যথাসময়ে শ্রমিককে মুজুরী প্রদান করা:

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَعْطُوا الْأَجِيرَ أَجْرَهُ، قَبْلَ أَنْ يَجِفَّ عَرَقُهُ ‏

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, শ্রমিকের দেহের ঘাম শুকাবার পূর্বে তোমরা তার মুজুরী দাও। ‎‎(সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৪৪৩)

শ্রমিকের পাওনা সঠিক সময় আদায় করা:

          শ্রমিকের পাওনা যেন জোর করে আদায় করতে না হয় সে দিসে মালিককে লক্ষ রাখতে হবে।

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ: جَاءَ أَعْرَابِيٌّ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَقَاضَاهُ دَيْنًا كَانَ عَلَيْهِ، فَاشْتَدَّ عَلَيْهِ، حَتَّى قَالَ ‏لَهُ: أُحَرِّجُ عَلَيْكَ إِلَّا قَضَيْتَنِي، فَانْتَهَرَهُ أَصْحَابُهُ، وَقَالُوا: وَيْحَكَ تَدْرِي مَنْ تُكَلِّمُ؟ قَالَ: إِنِّي أَطْلُبُ حَقِّي، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ ‏عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: هَلَّا مَعَ صَاحِبِ الْحَقِّ كُنْتُمْ؟ ‏

আবু সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) বলেন, এক বেদুঈন মহানবী (স.) এর কাছে এসে তার ঋণ শোধের জন্য তাঁকে কঠোর ভাষায় তাগাদা দিলো, এমনকি সে তাঁকে বললো, আমার ঋণ পরিশোধ না করলে আমি আপনাকে নাজেহাল করবো। সাহাবীগণ তার উপর উদ্দত হয়ে বললেন, তোমার অনিষ্ট হোক! তুমি কি জানো কার সাথে কথা বলছো? সে বললো, আমি আমার পাওনা দাবি করছি। তখন মহানবী (স.) বললেন, তোমরা কেন পাওনাদারের পক্ষ নিলে না?

ثُمَّ أَرْسَلَ إِلَى خَوْلَةَ بِنْتِ قَيْسٍ فَقَالَ لَهَا: إِنْ كَانَ عِنْدَكِ تَمْرٌ فَأَقْرِضِينَا حَتَّى يَأْتِيَنَا تَمْرُنَا فَنَقْضِيَكِ فَقَالَتْ: نَعَمْ، بِأَبِي أَنْتَ يَا ‏رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: فَأَقْرَضَتْهُ، فَقَضَى الْأَعْرَابِيَّ وَأَطْعَمَهُ، فَقَالَ: أَوْفَيْتَ، أَوْفَى اللَّهُ لَكَ، فَقَالَ: أُولَئِكَ خِيَارُ النَّاسِ، إِنَّهُ لَا قُدِّسَتْ ‏أُمَّةٌ لَا يَأْخُذُ الضَّعِيفُ فِيهَا حَقَّهُ غَيْرَ مُتَعْتَعٍ

অতঃপর তিনি কায়েসের কন্যা খাওলা (রাঃ) এর নিকট লোক পাঠিয়ে তাকে বললেন, তোমার কাছে খেজুর থাকলে আমাকে ধার ‎‎দাও। আমার খেজুর আসলে তোমার ধার পরিশোধ করবো। খাওলা (রাঃ) বললেন: হ্যাঁ, আমার পিতা আপনার জন্য উৎসর্গিত ‎‎হোক, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি তাঁকে ধার দিলেন। তিনি বেদুঈনে পাওনা পরিশোধ করলেন এবং তাকে আহার করালেন। তিনি বললেন, উত্তম লোকেরা এমনই হয়। যে জাতির দুর্বল লোকেরা জোর-জবরদস্তি ছাড়া তাদের পাওনা আদায় করতে পারে না সেই জাতি কখনো পবিত্র হতে পারে না। (ইবনে মাজাহ : ২৪২৬)

কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাদী হবেন:

যে কাজ করানোর পর মুজুরী দেয় না কিয়ামতে আল্লাহ তার সাথে ঝগড়া করবেন এবং বাদী হবেন হাদীসে এসেছে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: قَالَ اللَّهُ: ثَلاَثَةٌ أَنَا خَصْمُهُمْ يَوْمَ القِيَامَةِ: رَجُلٌ أَعْطَى ‏بِي ثُمَّ غَدَرَ، وَرَجُلٌ بَاعَ حُرًّا فَأَكَلَ ثَمَنَهُ، وَرَجُلٌ اسْتَأْجَرَ أَجِيرًا فَاسْتَوْفَى مِنْهُ وَلَمْ يُعْطِ أَجْرَهُ ‏

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মহানবী (স.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন যে, কিয়ামত দিবসে আমি তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাদী হব। যে আমার নামে ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করল, যে কোন স্বাধীন মানুষকে বিক্রি করে তার অর্থ ভোগ করল এবং যে ব্যক্তি কোন শ্রমিক নিয়োগ করে তার কাছ থেকে পূর্ণ কাজ আদায় করে নিল কিন্তু তার পারিশ্রমিক প্রদান করল না। (বুখারী ‎‎: ২২২৭)

কাজের লোককে নিজের সাথে বসিয়ে এক সাথে আহার করা:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ يُخْبِرُهُمْ بِذَلِكَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِذَا كَفَى أَحَدَكُمْ خَادِمُهُ طَعَامَهُ حَرَّهُ وَدُخَانَهُ فَلْيَأْخُذْ بِيَدِهِ ‏فَلْيُقْعِدْهُ مَعَهُ، فَإِنْ أَبَى فَلْيَأْخُذْ لُقْمَةً فَلْيُطْعِمْهَا إِيَّاهُ

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মহানবী (স.) বলেছেন, তোমাদের কারোর খাদেম তার জন্য খাবার বানানোর সময় তাকে এর গরম ধোঁয়া সহ্য করতে হয়। সে যেন তার খাদেমকে নিজের সাথে একত্রে খেতে বসায়। খাদেম তার সাথে সংকোচবশতঃ খেতে সম্মত না হলে সে যেন তার মুখে অন্তত একটি লোকমা তুলে দেয়। (তিরমিযী : ১৮৫৩)

শ্রমিক আল্লাহর উপাসনায় দ্বিগুণ সাওয়াব পাবে:

عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: العَبْدُ إِذَا نَصَحَ سَيِّدَهُ، وَأَحْسَنَ عِبَادَةَ رَبِّهِ، كَانَ لَهُ ‏أَجْرُهُ مَرَّتَيْنِ

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ক্রিতদাস যদি তার মনিবের হিতাকাঙ্খী হয় এবং তার প্রতিপালকের উত্তমরূপে ইবাদত করে, তাহলে তার সাওয়াব হবে দ্বিগুণ। (বুখারী : ২৫৪৬)

দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ বলে অবহেলা না করা:

দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ বলে অবহেলা না করা, এই শ্রেণীর মানুষ বেশী পরিমাণে জান্নাতে যাবে

عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: اطَّلَعْتُ فِي الجَنَّةِ فَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا الفُقَرَاءَ، وَاطَّلَعْتُ فِي ‏النَّارِ فَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا النِّسَاءَ

ইমরান ইবনে হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মহানবী (স.) বলেছেন, আমি জান্নাতের অধিবাসী সম্পর্কে জ্ঞাত হয়েছি। আমি জানতে পারলাম, জান্নাতের অধিকাংশ অধিবাসী হবে দরিদ্র লোক। জাহান্নামীদের সম্পর্কে জ্ঞাত হয়েছি, আমি জানতে পারলাম এর বেশীর ভাগ অধিবাসী নারী। (বুখারী : ৩২৪১)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَدْخُلُ الْفُقَرَاءُ الْجَنَّةَ قَبْلَ الْأَغْنِيَاءِ بِخَمْسِ مِائَةِ عَامٍ نِصْفِ يَوْمٍ

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মহানবী (স.) বলেছেন, দরিদ্রগণ সম্পদশালীগণের চেয়ে পাঁচশত বছর পূর্বে জান্নাতে যাবে। আর তা হলো আখিরাতের অর্ধ দিবসের সমান। (জামেয় তিরমিযী : ২৩৫৩)

মহানবী (স.) দরিদ্র হয়ে বেঁচে থাকার প্রার্থনা করেছেন:

عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: اللَّهُمَّ أَحْيِنِي مِسْكِينًا وَأَمِتْنِي مِسْكِينًا وَاحْشُرْنِي فِي زُمْرَةِ الْمَسَاكِينِ يَوْمَ ‏القِيَامَةِ فَقَالَتْ عَائِشَةُ: لِمَ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: إِنَّهُمْ يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ قَبْلَ أَغْنِيَائِهِمْ بِأَرْبَعِينَ خَرِيفًا، يَا عَائِشَةُ لاَ تَرُدِّي ‏الْمِسْكِينَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ، يَا عَائِشَةُ أَحِبِّي الْمَسَاكِينَ وَقَرِّبِيهِمْ فَإِنَّ اللَّهَ يُقَرِّبُكِ يَوْمَ القِيَامَةِ

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মহানবী (স.) বলেছেন, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে দরিদ্র অবস্থায় বাঁচিয়ে রাখ, দরিদ্র থাকা অবস্থায় মৃত্যু দিও এবং কিয়ামত দিবসে দরিদ্র মানুষের সাথে হাশর করো। কথা শুনে আয়শা (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! কেন এরূপ বলেছেন? তিনি বললেন, হে আয়শা! তারা তো তাদের সম্পদশালীদের চেয়ে চল্লিশ বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। হে আয়শা! তুমি যাঞ্চাকারীদেরক ফিরিয়ে দিও না। যদি দেয়ার মত তোমার নিকট কিছু না থাকে, তাহলে একটি খেজুরের টুকরা হলেও াকে দিও। হে আয়শা! তুমি দরিদ্রদের ভালোবাসবে এবং তাদেরকে তোমর সান্নিধ্যে রাখবে। তাহলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তোমাকে তাঁর সান্নিধ্যে রাখবেন। (সুনানে তিরমিযী : ২৩৫২)

উপসংহার: প্রিয় হাজেরীন! আজকের আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে, মহান আল্লাহ তায়ালা সুপরিকল্পিতভাবে ধনী ও দরিদ্র শেণীকে সৃষ্টি করেছেন। দরিদ্র ‎‎শ্রেণীকে আল্লাহ তায়ালা এই দুনিয়ায় সম্পদ ও পদ মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করলেও পারলৌকিক জীবনে তারা বেশী সুবিধা পাবেন। ‎‎দুনিয়াতে সম্পদশালীগণের উচিত হবে তাদেরকে ভালোবাসা এবং তাদের ন্যায্য দিয়ে দেওয়া। যাতে সকলে মিলে দুনিয়াতে অধিকতর সুখে ও শান্তিতে অবস্থান করা যায়।মাহন আল্লাহ তায়ালা আমাদের তৌফিক দান করুন। আমিন।

 

No comments:

Post a Comment

razzakhowlader59@gmil.com