Monday, May 02, 2022

ইসলামের দৃষ্টিতে নারীর মর্যাদা ও অধিকার

ইসলামের দৃষ্টিতে নারীর মর্যাদা ও অধিকার

এম এ রাজ্জাক হাওলাদার

 

ভূমিকা:

নারীর অবস্থান ইসলামে সমুচিত। সৃষ্টি থেকে শুরু করে জীবনের প্রত্যেকটি স্তরে যথাযথ সম্মান, মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে ইসলাম। মানব জীবনে নারী ও পুরুষ একে অন্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ইসলামী বিধানে নারীদের মান-মর্যাদা, অবস্থান, অধিকার, দায়িত্ব-কর্তব্য, প্রতিদান সম্পর্কে অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনের একটি সূরার নামকরণ করা হয়েছেআন-নিসা (নারী) হিসেবে। সেখানে নারী অধিকার সম্পর্কীত এমন সব বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে যা অন্য কোন ধর্ম, সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ছিল।

নারী অধিকার ও সমতা প্রসঙ্গটি সামাজিক প্রেক্ষাপটে বর্তমান বিশ্বের সর্বোচ্চভাবে আলোচনার বিষয়। ইসলামের যেসব বিষয় নিয়ে প্রাচ্যবিদরা বিতর্ক করার চেষ্টা করে তন্মধ্যে অন্যতম হলো নারীর অধিকার এবং নারী-পুরুষের সমতা বিধান প্রসঙ্গ অথচ ইসলামই সেসব বিষয়গুলোকে শুধু বিধানের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে নি বরং তা বাস্তবায়নের জন্যে নিশ্চিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় আজকের খুৎবার বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছেইসলামে নারীর মর্যাদা ও অধিকার।

মর্যাদা ও অধিকারে নারী-পুরুষ পরস্পর সম্পূরক:

ইসলাম নারীর অধিকারকে সুনিশ্চিত করেছে। এমন অনেক বিষয় রয়েছে যেখানে পুরুষদের তুলনায় নারীদেরকে সুযোগ-সুবিধা বেশি দেয়া হয়েছে। যেমন: নারীর জন্যে বিবাহে মোহর নির্ধারণ করলেও পুরুষের জন্যে কোন কিছু রাখা হয়নি। পিতার থেকে মাতাকে ৩ গুন বেশি ভালো আচরণের নির্দেশ দিয়ে নারীকে সম্মানিত করা হয়েছে। প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে কোথাও নারীকে এমনকি পুরুষকেও হেয় করে দেখা হয়নি। সৃষ্টির শুরুর ইতিহাসে যেমন নারী-পুরুষের ভূমিকাতে কোন ভেদাভেদ রাখা হয়নি তেমনি জাগতিক বিষয়সমূহেও তাদেরকে একে অপরের সম্পূরক হিসেবে রাখা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা এ সম্পর্কে বলেন,

يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ (سورة الحجرات ــ13)

হে মানবমণ্ডলী! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিত হতে পার। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্মানিত, যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন। (সূরা হুজুরাত-৪৯:১৩)

শান্তি শৃংখলায় কেউ এককভাবে ভূমিকা রাখতে পারে না, এখানে উভয়ের অংশগ্রহণ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন:

وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ (سورة الروم ــ 21)

আর তাঁর নিদর্শনাবলীর একটি হল, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকেই জোড়া বানিয়ে দিয়েছেন যাতে তোমরা তাদের নিকট শান্তি লাভ করতে পার। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও করুণার সঞ্চার করে দিয়েছেন। (সূরা রুম-৩০:২১)

সংসার ও সমাজের দায়িত্ব বন্টন, ইনসাফ প্রতিষ্ঠা:

সংসার ও সমাজের দায়িত্ব বন্টন, ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় ন্যায়পরায়নতাকেই অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সেখানে নারী-পুরুষে কোন বৈষম্য করা হয় নি। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ بِالْقِسْطِ شُهَدَاءَ لِلَّهِ وَلَوْ عَلَى أَنْفُسِكُمْ أَوِ الْوَالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِينَ إِنْ يَكُنْ غَنِيًّا أَوْ فَقِيرًا فَاللَّهُ أَوْلَى بِهِمَا فَلَا تَتَّبِعُوا الْهَوَى أَنْ تَعْدِلُوا وَإِنْ تَلْوُوا أَوْ تُعْرِضُوا فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرًا (النساء: ۱۳۵)

হে ঈমানদারগণ! তোমরা ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক। আল্লাহর জন্য ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্যদান কর। তাতে যদি তোমাদের নিজের বা পিতা-মাতার অথবা নিকটবর্তী আত্মীয়-স্বজনের ক্ষতি হয় তবুও। কেউ যদি ধনী অথবা দরিদ্র হয়, তবে আল্লাহ তাদের শুভাকাঙ্খী তোমাদের চেয়ে বেশী। অতত্রব, তোমরা বিচার করতে গিয়ে রিপুর কামনা বাসনার অনুসরণ করো না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বল অথবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ-কর্ম সম্পর্কেই অবগত। (সূরা নিসা-৪:১৩৫) (এ ছাড়াও এ প্রসঙ্গে এসেছে, সূরা নিসা-৪:৫৮; সূরা মায়িদাহ-৫:; সূরা নাহল-১৬:৯০) একইভাবে ধর্মীয় আচার পালনে এবং তার প্রতিদানে কোন পার্থক্য ইসলাম করে নি। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন:

وَعَدَ اللَّهُ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ وَرِضْوَانٌ مِنَ اللَّهِ أَكْبَرُ ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ (سورة التوبة ـ72)

আল্লাহ মুমিন নর-নারীদেরকে জান্নাতের ওয়াদা করেছেন, যার নীচ দিয়ে ঝর্ণা প্রবাহিত। সেখানে জান্নাতে আদনের পবিত্র স্থানে তারা চিরদিন থাকবে। আর আল্লাহর সন্তুষ্টিই অনেক বড়। সেটাই মহান সাফল্য। (সুরা আত-তাওবা-৯:৭২) (এ ছাড়াও এ প্রসঙ্গে এসেছে, সুরা নিসা-৪:১২৪; ইমরান-৩:১৯৫; আহযাব-৩৩:৩৫; আল-ফাতহ-৪৮:৫৭; আল-হাদিদ-৫৭:১২)

সৃষ্টি মূলে পুরুষ ও নারী সম্মান ও মর্যাদায় সমান:

মানব সমাজে নারীর জন্মের অধিকার প্রতিষ্ঠা, কন্যা সন্তানের অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ইসলাম সম্মান ও মর্যাদার ক্ষেত্রেও নারী-পুরুষকে সমান ঘোষণা করেছে। বিশেষ করে, আরব সমাজের ঐ পরিপ্রেক্ষিতে তাদের জন্যে এটি ছিল শুধু অসম্ভব একটি বিষয় নয় বরং অকল্পনীয়ও। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন:

يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا (سورة النساء ــ1)

হে মানুষ! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক উৎস থেকে। আর তা থেকে তোমাদের স্ত্রীদেরকেও সৃষ্টি করেছেন। এরপর তা থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চাও। আর ভয় কর রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক। (সূরা আন-নিসা-৪:১)

নারীর বেঁচে থাকারই অধিকার:

জাহিলী যুগে নারীর বেঁচে থাকারই অধিকার ছিল না জাহিলী যুগে নারীকে বলা হতশয়তানের ষষ্টি, অমঙ্গলের অগ্রদুত'সমাজের মূল ধারায় তাদের কোন অংশগ্রহণ ছিল না। আল্লাহ তা'আলা নারীদের প্রতি জাহিলি যুগের মানুষের মনোভাব তুলে ধরে বলেন:

وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُمْ بِالْأُنْثَى ظَلَّ وَجْهُهُ مُسْوَدًّا وَهُوَ كَظِيمٌ (58) يَتَوَارَى مِنَ الْقَوْمِ مِنْ سُوءِ مَا بُشِّرَ بِهِ أَيُمْسِكُهُ عَلَى هُونٍ أَمْ يَدُسُّهُ فِي التُّرَابِ أَلَا سَاءَ مَا يَحْكُمُونَ (سورة النحل ــ59 ــ58)

তাদের কাউকে যখন কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয় তখন তার মুখমণ্ডল কালো হয়ে যায় এবং সে অসহনীয় মানসিক যন্ত্রণায় ভূগতে থাকে। তাকে যে সুসংবাদ দেয়া হয়, তার গ্লাণির কারণে সে নিজ সম্প্রদায় হতে আত্মগোপন করে। সে চিন্তা করে অপমান সহ্য করে তাকে থাকতে দেবে, না তাকে মাটির নীচে পুতে ফেলবে। সাবধান! তাদের সিদ্ধান্ত খুবই নিকৃষ্ট। (সূরা নাহল-১৬:৫৮-৫৯)

আর যখন জীবন্ত সমাধিস্থ কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল? (সূরা তাকবীর-৮১:৮-৯)

নারীরা অভিশপ্ত নয়:

ইহুদিদের ধর্ম গ্রন্থতালমুদেবলা হয়েছে, নারী জাতী হল সকল। অপরাধ ও পাপের কেন্দ্রবিন্দু। সনাতন ধর্মে স্বামী মারা গেলে স্ত্রীকে অপরাধী বিবেচনায় সহমরণ তথা সতীদাহ প্রথার মাধ্যমে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হত। (রাজা রামমোহন রায়ের আন্দোলনের ফলে ১৮২৯ সালে লর্ড বেন্টিক সতীদাহ প্রথা উচ্ছেদ করেন)। খ্রীষ্টান ধর্মে নারীর সম্পদ অর্জনের সুযোগ ছিল না, বিবাহের পর সমস্ত সম্পদ স্বামীর মালিকানায় চলে যেত। মহানবী (স.) এ অবহেলিত নারী জাতীকে মা হিসাবে, স্ত্রী হিসাবে, কন্যা হিসাবে, বোন হিসাবে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করেন।

হাদীসে এসেছে,

اَلدُّنْيَا مَتَاعُ وَخَيْرُ مَنَّاعِهَا المَرْاَةُ الصَّالِحَةٌ

রাসূল (স.) নারীদেরকে দুনিয়ার সর্বোত্তম সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করে বলেন: সমগ্র পৃথিবীটাই সম্পদ, আর পৃথিবীর সর্বোত্তম সম্পদ হল সৎকর্মপরায়ণা স্ত্রী।(মুসলিম-৩৭১৬)

ক.নারীর প্রতি ভালো আচরণের নির্দেশ:

নারীর প্রতি ভালো আচরণের নির্দেশ দিয়ে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ، فَإِنَّ المَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلَعٍ، وَإِنَّ أَعْوَجَ شَيْءٍ فِي الضِّلَعِ أَعْلاَهُ، فَإِنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهُ كَسَرْتَهُ، وَإِنْ تَرَكْتَهُ لَمْ يَزَلْ أَعْوَجَ، فَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ»(بخاری-3331)

তোমরা আমার কাছ থেকে মেয়েদের সাথে সদ্ব্যবহার করার নসীহত গ্রহণ কর। কেননা, নারী জাতীকে পাঁজরের বাঁকা হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। পাঁজরের হাড় গুলোর মধ্যে উপরের হাড়টা সর্বাপেক্ষা বাঁকা। অতএব তুমি যদি তা সোজা করতে যাও, তবে ভেঙ্গে ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে এবং যদি ফেলে রাখ তবে বাঁকাই থাকবে। অতএব, তোমরা নারীদের সাথে ভালো ব্যবহার কর। (বুখারী-৩৩৩১,৩৩৬৬)

খ.স্ত্রীর নিকট যে ভাল সে-ই প্রকৃত ভাল:

স্ত্রীর নিকট যে ভাল সে-ই প্রকৃত ভাল। এ প্রসঙ্গে রাসূল (স.) বলেন,

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لأَهْلِهِ وَأَنَا خَيْرُكُمْ لأَهْلِي، وَإِذَا مَاتَ صَاحِبُكُمْ فَدَعُوهُ.

তোমাদের মধ্যে যে নিজের পরিবারের নিকট ভাল সে-ই প্রকৃত ভাল। আর আমি আমার পরিবারের নিকট ভাল। (তিরমিযি-৩৮৯৫; ইবনে মাজাহ-১১৯৭,২০৫৩)

গ.মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত:

মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। রাসূল (স.) বলেন,

عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ جَاهِمَةَ السَّلَمِيِّ، أَنَّ جَاهِمَةَ، جَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ أَرَدْتُ أَنْ أَغْزُوَ وَقَدْ جِئْتُ أَسْتَشِيرُكَ فَقَالَ: «هَلْ لَكَ مِنْ أُمٍّ؟» قَالَ: نَعَمْ قَالَ: «فَالْزَمْهَا فَإِنَّ الْجَنَّةَ عِنْدَ رِجْلَيْهَا» (سنن النسائى ــ 3104)

তোমার মায়ের খেদমতে লেগে থাক, কেননা, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। (মুসনাদে আহমদ-১৫৫৩৮, নাসায়ী-৩১০৪,৩১০৮, বাইহাকী-১৫৫৩৮)

ঘ.বিদায় হজ্জের ভাষণে রাসূলুল্লাহ (স.) নারী সম্পর্কে ঘোষণা:

বিদায় হজ্জের ভাষণে রাসূলুল্লাহ (স.) ঘোষণা করলেন, স্ত্রীগণ আল্লাহ তায়ালার জামানত।

فَاتَّقُوا اللهَ فِي النِّسَاءِ، فَإِنَّكُمْ أَخَذْتُمُوهُنَّ بِأَمَانِ اللهِ، وَاسْتَحْلَلْتُمْ فُرُوجَهُنَّ بِكَلِمَةِ اللهِ (بخارى ــ 1218)

তোমরা নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। কেননা তোমরা তাদের আল্লাহর জামানতে গ্রহণ করেছ এবং আল্লাহর নির্ধারিত কালেমার মাধ্যমে নিজেদের জন্য হালাল করেছ। (মুসলিম-১৫৯,১২১৮)

বিবাহের মাধ্যমে নারীকে অধিকার ও মর্যাদা প্রদান:

জাহিলী যুগে বিবাহে নারীদের কোনরূপ অধিকার ছিল না। তারা শুধু পুরুষের ভোগের সামগ্রী ছিল। ইসলাম এহেন ঘৃণিত প্রথার মূলোৎপাটন করতঃ নারী-পুরুষের বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে। শুধু স্বাধীন নারীই নয়, দাস-দাসী, ইয়াতিমকেও এর অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা বলেন,

فَانْكِحُوا مَا طَابَ لَكُمْ مِنَ النِّسَاءِ مَثْنَى وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ذَلِكَ أَدْنَى أَلَّا تَعُولُوا ( سورة النساء-3)

পরে ইসলাম তা নিশ্চিত করেছে। (সুরা নিসা-৪:৩)

ক.সম্পত্তিতে নারীর অধিকার প্রসঙ্গে: আল্লাহ তায়ালা বলেন,

لِلرِّجَالِ نَصِيبٌ مِمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْأَقْرَبُونَ وَلِلنِّسَاءِ نَصِيبٌ مِمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْأَقْرَبُونَ مِمَّا قَلَّ مِنْهُ أَوْ كَثُرَ نَصِيبًا مَفْرُوضًا (نساء-7)

পিতামাতা ও নিকটজনদের পরিত্যাক্ত সম্পদে পুরুষদের অধিকার রয়েছে, অনুরূপভাবে পিতামাতা ও নিকটজনদের পরিত্যাক্ত সম্পদে নারীদেরও অধিকার রয়েছে, তা সামান্য হোক বা বেশী এবং এ অংশ (আল্লাহর পক্ষ থেকে) নির্ধারিত। (সুরা নিসা-৪:৭) এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّهُ حَدَّثَهُ، عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِنَّ الرَّجُلَ لَيَعْمَلُ وَالمَرْأَةُ بِطَاعَةِ اللهِ سِتِّينَ سَنَةً ثُمَّ يَحْضُرُهُمَا الْمَوْتُ فَيُضَارَّانِ فِي الوَصِيَّةِ فَتَجِبُ لَهُمَا النَّارُ (ترمذى ــ2117)

আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন: কোন পুরুষ বা নারী জীবনের ষাট বছর পর্যন্ত আল্লাহর ইবাদতে অতিবাহিত করেও যদি মৃত্যুকালে ওসিয়তের মাধ্যমে উত্তরাধিকারীদের ক্ষতি সাধন করে যায় তাহলে তাদের জন্য জাহান্নামের আগুন ওয়াজিব হয়ে যায়। (তিরমিযি-২২৬৩,২১১৭)

عَنْ شُرَحْبِيلَ بْنِ مُسْلِمٍ، سَمِعْتُ أَبَا أُمَامَةَ، سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَعْطَى كُلَّ ذِي حَقٍّ حَقَّهُ فَلَا وَصِيَّةَ لِوَارِثٍ» (سنن ابى داود ــ2870)

আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বিদায় হজ্জের বছর রাসূলুল্লাহ (স.) কে খুৎবায় বলতে শুনেছি, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক ওয়ারিশদের জন্য হক নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, সুতরাং ওয়ারিশদের জন্য কোন অসিয়ত নেই (এতে অন্য ওয়ারিশদের হক্ক নষ্ট হয়)।(আবু দাউদ-২৮৭০,২৮৭২)

(নোট: উল্লেখ্য মিরাসী সম্পত্তিতে ১২ শ্রেণীর তার মধ্যে ৮ শ্ৰেণীই হল নারী)

 

খ.স্ত্রী হিসাবে নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে:

ইসলাম পারিবারিক জীবনে নারীকে দিয়েছে তার ন্যায্য অধিকার। সংসার জীবনে নারী-পুরুষ পরস্পরের পরিপূরক। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন:

هُنَّ لِبَاسٌ لَكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَهُنَّ

তারা তোমাদের জন্য আর তোমরা তাদের জন্য পোষাকস্বরুপ।(সূরা বাকারা-২:১৮৭)

রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَكْمَلُ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا، وَخَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لِنِسَائِهِمْ. (ترمذی ــ 1162)

যে ব্যক্তির চরিত্র ও ব্যবহার সবচেয়ে উত্তম ঈমানের দিক দিয়ে সে-ই পরিপূর্ণ মুমিন। তোমাদের মধ্যে সে সব লোক উত্তম, যারা তাদের স্ত্রীদের জন্য উত্তম। (তিরমিযী-১১৬২)

সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে অধিকার ও মর্যাদা প্রদান:

ইসলাম নারী নির্যাতনমূলক ও নারী মর্যাদার পরিপন্থী সকল প্রকার কুসংস্কার এবং কুপ্রথাকে হারাম সাব্যস্ত করেছে। স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর প্রতি সদ্ব্যবহার ও সদাচরণের আদেশ দিয়েছে ইসলাম।

ক.স্ত্রীদের প্রতি সদাচরণ প্রসঙ্গে: আল্লাহ তা'আলা বলেন,

وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ فَإِنْ كَرِهْتُمُوهُنَّ فَعَسَى أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَيَجْعَلَ اللَّهُ فِيهِ خَيْرًا كَثِيرًا (سورة النساء ــ 19)

তাদের সাথে সৎভাবে জীবন যাপন করবে। অপছন্দ করলে এমনও হতে পারে যে, তোমাদের অপছন্দনীয় বিষয়ে আল্লাহ অনেক কল্যাণ রেখেছেন। (সূরা নিসা-৪:১৯) এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَفْرَكْ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنَةً، إِنْ كَرِهَ مِنْهَا خُلُقًا رَضِيَ مِنْهَا آخَرَ» أَوْ قَالَ: «غَيْرَهُ» (مسلم ــ 1469)

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন: কোন মুসলমান পুরুষ (স্বামী) যেন কোন মুসলমান মহিলার (স্ত্রীর) প্রতি হিংসা বিদ্বেষ ও শত্রুতা পোষণ না করে। কেননা, তার কোন একটি দিক তার কাছে খারাপ লাগলেও অন্য একটি দিক তার পছন্দ হবে (অথাৎ দোষ থাকলে গুণও আছে)।(মুসলিম-১৪৬৯,৩৭২১)

খ.প্রহার না করা প্রসঙ্গে: রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন:

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ زَمْعَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لاَ يَجْلِدُ أَحَدُكُمُ امْرَأَتَهُ جَلْدَ العَبْدِ، ثُمَّ يُجَامِعُهَا فِي آخِرِ اليَوْمِ» (بخارى ــ 5204)

আব্দুল্লাহ বিন যামআ রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন: কেউ যেন নিজের স্ত্রীকে গোলাম বা বাঁদীর ন্যায় না পেটায়, অতঃপর দিন শেষেই তার সাথে রাত্রিযাপন করে। (বুখারী-৫২০৪,৫২৫৯)

গ.স্ত্রীর ভরণ-পোষণের অধিকার:

ইসলামে পারিবারিক জীবনে স্বামী কর্তা বা পরিচালক বলে তার উপরই স্ত্রী, পরিবার পরিজনের দায়িত্বভার ন্যস্ত। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন,

الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنْفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللَّهُ (نساء ــ34)

পুরুষরা নারীদের কর্তা, কারণ আল্লাহ তায়ালা তাদের মধ্যে এক দলকে অপর দলের উপর শ্রেষ্টত্ব দিয়েছেন এবং এ জন্যে যে, পুরুষরা তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে। কাজেই পূণ্যশীলা নারীরা আনুগত্যপরায়ন হয়ে থাকে এবং লোক চক্ষুর আড়ালে আল্লাহর হিফাজতে তারা হিফাজত করে। (সূরা নিসা-:৩৪)

ঘ.খোরপোষের ব্যবস্থা করা প্রসঙ্গে: রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন:

عَنْ حَكِيمِ بْنِ مُعَاوِيَةَ الْقُشَيْرِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا حَقُّ زَوْجَةِ أَحَدِنَا عَلَيْهِ؟، قَالَ: «أَنْ تُطْعِمَهَا إِذَا طَعِمْتَ، وَتَكْسُوَهَا إِذَا اكْتَسَيْتَ، أَوِ اكْتَسَبْتَ، وَلَا تَضْرِبِ الْوَجْهَ، وَلَا تُقَبِّحْ، وَلَا تَهْجُرْ  ( أَبُو دَاوُدَ: 2142)

হাকিম বিন মুয়াবিয়াহ আলকুশাইরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম: হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কারও উপর তার স্ত্রীর কি অধিকার রয়েছে? তিনি (স.) বললেন: তুমি যখন আহার কর, তাকেও আহার করাও, তুমি যখন পরিধান কর, তাকেও পরিধান করাও, কখনও মুখমন্ডলে প্রহার করো না, কখনও অশ্লীল ভাষায় গালি দিও না এবং ঘরের মধ্যে (বিছানা) ছাড়া তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ো না। (আবু দাউদ-২১৪২,২১৪৪)

ঙ.ভ্রমনে স্ত্রীকে সফর সংগী করা:

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: «كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَرَادَ سَفَرًا أَقْرَعَ بَيْنَ نِسَائِهِ، فَأَيَّتُهُنَّ خَرَجَ سَهْمُهَا خَرَجَ بِهَا مَعَهُ، (بخارى ــ 2688)

আয়িশা রা. বলেন, নবী করীম (স.) যখন কোন সফরে যেতে ইচ্ছা করতেন, স্ত্রীদের মধ্যে লটারী করতেন, তাতে যার নাম উঠত, তাকেই সাথে নিয়ে সফর করতেন। (বুখারী-২৬৮৮,৪৩৯১)

চ.বিনোদনের ব্যবস্থা করা:

 

 عَن عَائِشَةَ (رضـ)، قَالَتْ سَابَقَنِيْ النَّبِيُّ صلى الله عليه و سلم فَسَبَقُنَّةٌ فَلَبْثُنَا حَتَّى إِذَاَ رَهِقَنِيْ اَللَّحْمُ سَاَبَقَّنِىْ فَسَبَقَّنِىْ فَقَالَ هَذِهِ  بِتِبْكِ (بِنَلَكِ المَّبْقَةِ)  ( مسند احمد ــ 22989)

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: سَابَقَنِي النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَبَقْتُهُ، فَلَبِثْنَا حَتَّى إِذَا رَهِقَنِي اللَّحْمُ سَابَقَنِي فَسَبَقَنِي، فَقَالَ: «هَذِهِ بِتِيكِ» (مسند احمد ــ24118)

আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, একবার রাসুল স, আমার সাথে দৌড়ের এক প্রতিযোগিতা করলেন এবং সেদিন আমি তার উপর জয়ী হলাম। অতঃপর যখন আমি মোটা হয়ে গেলাম, তখন আবার একদিন প্রতিযোগিতা করলেন কিন্তু এবার তিনি আমার উপর জয়লাভ করলেন এবং বললেন 'ঐ জয়ের পরিবর্তে এই জয়'(মুসনাদে আহমদ-২২৯৮৯,২৪১১৮; আবু দাউদ-২৫৮০)

কন্যা সন্তান প্রতিপালনের ফজীলত:

কন্যা সন্তান প্রতিপালনের ফজীলত প্রসংগে রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন,

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: جَاءَتْنِي امْرَأَةٌ مَعَهَا ابْنَتَانِ تَسْأَلُنِي، فَلَمْ تَجِدْ عِنْدِي غَيْرَ تَمْرَةٍ وَاحِدَةٍ، فَأَعْطَيْتُهَا فَقَسَمَتْهَا بَيْنَ ابْنَتَيْهَا، ثُمَّ قَامَتْ فَخَرَجَتْ، فَدَخَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَحَدَّثْتُهُ، فَقَالَ: «مَنْ يَلِي مِنْ هَذِهِ البَنَاتِ شَيْئًا، فَأَحْسَنَ إِلَيْهِنَّ، كُنَّ لَهُ سِتْرًا مِنَ النَّارِ» (بخارى ــ 5995)

আয়িশা রা. বলেন, আমার নিকট এক মহিলা আসল এবং তার সাথে তার দুটি মেয়েও ছিল। সে কিছু চাইল কিন্তু আমার কাছে একটি খেজুর ছাড়া আর কিছুই পেল না। আমি খেজুরটা তাকে দিলাম। সে খেজুরটি তার দুই কন্যার মধ্যে বন্টন করল, কিন্তু সে নিজে তা থেকে খেল না। অতঃপর উঠে চলে গেল। আমি নবী করীম (স.) কে ব্যাপারটা অবহিত করলাম। তিনি বললেন: যে ব্যক্তিই এরূপ কন্যা সন্তানদের নিয়ে পরীক্ষার সম্মুখিন হবে এবং তাদের সাথে সুন্দর ব্যবহার করবে, কিয়ামতের দিন তারা জাহান্নামের আগুনের সামনে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে। (বুখারী-৫৯৯৫,১৩৩২, ৫৪৫৬; মুসলিম-৬৪৫৪ ই.ফা)

ক.তালাক প্রাপ্তা নারীর প্রতিপালন করা প্রসঙ্গে:

তালাক প্রাপ্তা নারীর প্রতিপালন করা প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন:

عَنْ سُرَاقَةَ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أَلَا أَدُلُّكُمْ عَلَى أَفْضَلِ الصَّدَقَةِ؟ ابْنَتُكَ مَرْدُودَةً إِلَيْكَ، لَيْسَ لَهَا كَاسِبٌ غَيْرُكَ» (سنن ابن ماجه ــ3667)

সুরাকা বিন মালিক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন: তোমাদেরকে সবচেয়ে উত্তম সদকার সংবাদ জানিয়ে দিব কি? (আর তা হল) তোমার তালাক প্রাপ্তা মেয়ে তোমার কাছে। যদি ফিরে আসে; তুমি ছাড়া তার জন্য উপার্জনের দ্বিতীয় কেউ নেই আর তুমি তার ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে(ইবনে মাজাহ-৩৭৯৮,৩৬৬৭)

খ.স্ত্রী পরিত্যাগ করতে চাইলে সম্পদ অধিগ্রহণ করা যাবে না:

এক স্ত্রীকে পরিত্যাগ করে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিলে সে ক্ষেত্রে স্ত্রীর সম্পদে কোন রকম হাত দেয়া যাবে না। এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَكَيْفَ تَأْخُذُونَهُ وَقَدْ أَفْضَى بَعْضُكُمْ إِلَى بَعْضٍ وَأَخَذْنَ مِنْكُمْ مِيثَاقًا غَلِيظًا (21) وَلَا تَنْكِحُوا مَا نَكَحَ آبَاؤُكُمْ مِنَ النِّسَاءِ إِلَّا مَا قَدْ سَلَفَ إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَمَقْتًا وَسَاءَ سَبِيلًا (سورة النساء ــ 22 ــ 21)

তোমরা যদি এক স্ত্রীর স্থলে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করা স্থির কর এবং তাদের একজনকে আগাম অর্থ দিয়ে থাক, তবুও এটা হতে কিছুই ফেরত নিও না। তোমরা কি মিথ্যা অপবাদ এবং প্রকাশ্য পাপাচার দ্বারা তা গ্রহণ করবে? কিরূপে তোমরা এটা গ্রহণ করবে, যখন তোমরা একে অপরের কাছে গমন করেছ এবং তারা তোমাদের নিকট হতে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি নিয়েছে। (সূরা আন নিসা-৪:২০-২১)

গ.অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অধিকার ও মর্যাদা দান:

ইসলাম জীবন-জীবিকার তাকীদে এবং স্বীয় সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার্থে যে কোন হালাল উপায়ে পর্দা রক্ষা করে আয়- রোযগার করার পূর্ণ অধিকার নারীকে দিয়েছে। সে যা কিছু আয় করবে, হোক তা চাকুরি থেকে কিংবা কোন ব্যাবসা থেকে, এসবের মালিকানা শুধুই তার। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন,

 لِلرِّجَالِ نَصِيبٌ مِمَّا اكْتَسَبُوا وَلِلنِّسَاءِ نَصِيبٌ مِمَّا اكْتَسَبْنَ (سورة النساء ــ32)

তোমাদের পুরুষেরা যা উপার্জন করবে তা তোমাদের থাকবে, আর নারী যা উপার্জন করবে তা তাদের জন্য থাকবে। (সূরা আন নিসা-:৩২)

ঘ.বিবাহবিচ্ছেদ ও দাম্পত্য তিক্ততা এড়িয়ে চলার নির্দেশনা:

তালাক তথা বিবাহবিচ্ছেদ এ বিষয়ে আল্লাহ মুসলমানদেরকে ধৈর্যের পরামর্শ দিয়েছেন এবং তালাক থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। তিনি প্রকৃতপক্ষে উভয়কে সমঝোতায় আসার ব্যপারে নির্দেশনা দিয়েছেন। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنْفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللَّهُ وَاللَّاتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلَا تَبْغُوا عَلَيْهِنَّ سَبِيلًا إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيرًا (34) وَإِنْ خِفْتُمْ شِقَاقَ بَيْنِهِمَا فَابْعَثُوا حَكَمًا مِنْ أَهْلِهِ وَحَكَمًا مِنْ أَهْلِهَا إِنْ يُرِيدَا إِصْلَاحًا يُوَفِّقِ اللَّهُ بَيْنَهُمَا إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا خَبِيرًا (سورة النساء ــ 35 ــ 34)

যেসব নারীর অবাধ্যতার আশংকা কর তাদেরকে বুঝাবে, এরপর বিছানা পৃথক করে দিবে, শেষে মৃদু প্রহার করবে। এতে বাধ্য হলে অন্য উপায় খোঁজ না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অনেক উঁচু অনেক বড়। আর যদি কোথাও তোমাদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বিগড়ে যাবার আশংকা দেখা দেয় তাহলে পুরুষের আত্মীয়দের মধ্য থেকে একজন সালিশ এবং স্ত্রীর আত্মীয়দের মধ্য থেকে একজন সালিশ নির্ধারণ করে দাও। তারা দুজন সংশোধন করে নিতে চাইলে আল্লাহ তাদের মধ্যে মীমাংসা ও মিলমিশের পরিবেশ সৃষ্টি করে দেবেন। আল্লাহ সবকিছু জানেন, তিনি সর্বজ্ঞ। (সূরা আন নিসা-৪:৩৪-৩৫)

নারীর বাক স্বাধীনতা:

ইসলাম নারীকে কথা বলার অধিকার প্রদান করেছে। হুদায়বিয়ার। সন্ধির সময় রাসূল স, সালামা রা, এর পরামর্শ গ্রহণ করে কঠিন একটি পরিস্থিতি সামাল দেন। উমর রা, একদিন মসজিদে বললেন, হে পুরুষগণ! বিবাহ করার সময় তোমরা বেশী মাহর নির্ধারণ করবে না। যদি কেউ মাহর নির্ধারণ করতে চাও সর্বোচ্চ ৪০ দিনার নির্ধারিত করতে পারবে, যদি এর অতিরিক্ত তোমরা কর, তাহলে অতিরিক্ত অর্থ আমি কেড়ে নিয়ে। রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিব। মহিলাদের কাতার থেকে এক মহিলা দাড়িয়ে বললেন, হে উমর, আপনার এই অধিকার নেই যে, ৪০ দিনার পর্যন্ত মাহর নির্ধারণ করে দিবেন। কারণ, আল্লাহ বলেন,

وَإِنْ أَرَدْتُمُ اسْتِبْدَالَ زَوْجٍ مَكَانَ زَوْجٍ وَآتَيْتُمْ إِحْدَاهُنَّ قِنْطَارًا فَلَا تَأْخُذُوا مِنْهُ شَيْئًا أَتَأْخُذُونَهُ بُهْتَانًا وَإِثْمًا مُبِينًا

তোমরা যদি নারীদেরকে অনেক মাহরও যদি দাও, দেয়ার পর তা থেকে কিছুই নিতে পারবে। (সুরা নিসা-৪:২০)

এ আয়াতে তো আল্লাহ তায়ালা বেশি মাহর নির্ধারণ করার অধিকার দিয়েছেন, এ অধিকার আপনি কেন কেড়ে নিতে চান? কুরআন তো আপনাকে এ ক্ষমতা দেয়নি। উমর রা. একটু চিন্তা করলেন, বললেন: উমর ভূল করেছে আর একজন মহিলা তা শুধরিয়ে দিয়েছেন।

বিবাহে নারীর মতামতের মূল্য দেয়া:

বিবাহে নারীর মতামতের মূল্য দেয়া প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لاَ تُنْكَحُ الأَيِّمُ حَتَّى تُسْتَأْمَرَ، وَلاَ تُنْكَحُ البِكْرُ حَتَّى تُسْتَأْذَنَ» قَالُوا: كَيْفَ إِذْنُهَا؟ قَالَ: «أَنْ تَسْكُتَ» وَقَالَ بَعْضُ النَّاسِ: «إِنِ احْتَالَ إِنْسَانٌ بِشَاهِدَيْ زُورٍ عَلَى تَزْوِيجِ امْرَأَةٍ ثَيِّبٍ بِأَمْرِهَا، فَأَثْبَتَ القَاضِي نِكَاحَهَا إِيَّاهُ، وَالزَّوْجُ يَعْلَمُ أَنَّهُ لَمْ يَتَزَوَّجْهَا قَطُّ، فَإِنَّهُ يَسَعُهُ [ص:26] هَذَا النِّكَاحُ، وَلاَ بَأْسَ بِالْمُقَامِ لَهُ مَعَهَا» (بخارى ــ 6970)

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন: বালেগা বিবাহিতা নারীকে তার পূর্ব অনুমতি ব্যতিত বিবাহ দেয়া যাবে না। একইভাবে বালেগা কুমারীকেও বিবাহ দেয়া যাবে না, যতক্ষণ না তার অনুমতি গ্রহণ করা হয়। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! কিভাবে বুঝা যাবে তার অনুমতিটা? সে তো কথা বলে না। তিনি (স.) বললেন: চুপ থাকাই তার অনুমতি।(বুখারী-৫১৯১,৬৯৭০)

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ جَارِيَةً بِكْرًا أَتَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَذَكَرَتْ لَهُ أَنَّ «أَبَاهَا زَوَّجَهَا وَهِيَ كَارِهَةٌ، فَخَيَّرَهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ» (سنن ابن ماجه ــ 1875)

ইবনে আব্বাস রা. বলেন, এক বালেগা কুমারী মেয়ে রাসূলুল্লাহ (স.) এর কাছে এসে জানাল, তার পিতা তার অমতে তাকে বিবাহ দিয়েছে তখন রাসূলুল্লাহ (স.) তাকে এ স্বামীর সাথে থাকা না থাকার ব্যপারে অধিকার দিলেন। (ইবনে মাজাহ-১৯৪৮,১৮৭৫)

ইসলামের বিধান পালনে ও জ্ঞানার্জনে নারীর অধিকার ও মর্যাদা:

ইসলামের বিধান পালনের ব্যাপারে ছওয়াবের ক্ষেত্রে বা প্রতিদান পাবার ক্ষেত্রে, জ্ঞান আহরণ ও বিতরণে নারী-পুরুষের মাঝে কোন পার্থক্য করা হয়নি। বরং পুরুষ হোক আর নারীই হোক উভয়েই তাদের নিজ নিজ আমলের বিনিময়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন,

وَمَنْ يَعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُولَئِكَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُونَ نَقِيرًا (سورة النساء ــ 124)

পুরুষ অথবা নারীর কেউ সৎ কাজ করলে ও মুমিন হলে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি অণু পরিমাণও যুলুম করা হবে না। (সূরা নিসা-৪:১২৪)

ক.দ্বীনের প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করা ফরয। এ ব্যাপারেই হাদীসে এসেছে,

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ، وَوَاضِعُ الْعِلْمِ عِنْدَ غَيْرِ أَهْلِهِ كَمُقَلِّدِ الْخَنَازِيرِ الْجَوْهَرَ وَاللُّؤْلُؤَ وَالذَّهَبَ» (سنن ابن ماجه ــ 224)

প্রত্যেক মুসলিমের উপর ইলম অর্জন করা ফরয। (ইবনে মাজাহ-২২৪)

খ.নারীদের জ্ঞানার্জনের গুরুত্ব প্রদান:

নারীদের জ্ঞানার্জনের গুরুত্ব প্রদান করে রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন:

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ: جَاءَتِ امْرَأَةٌ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللهِ ذَهَبَ الرِّجَالُ بِحَدِيثِكَ، فَاجْعَلْ لَنَا مِنْ نَفْسِكَ يَوْمًا نَأْتِيكَ فِيهِ، تُعَلِّمُنَا مِمَّا عَلَّمَكَ اللهُ، قَالَ: «اجْتَمِعْنَ يَوْمَ كَذَا وَكَذَا» فَاجْتَمَعْنَ، فَأَتَاهُنَّ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَعَلَّمَهُنَّ مِمَّا عَلَّمَهُ اللهُ، ثُمَّ قَالَ: «مَا مِنْكُنَّ مِنِ امْرَأَةٍ تُقَدِّمُ بَيْنَ يَدَيْهَا، مِنْ وَلَدِهَا ثَلَاثَةً، إِلَّا كَانُوا لَهَا حِجَابًا مِنَ النَّارِ» فَقَالَتِ امْرَأَةٌ: وَاثْنَيْنِ، وَاثْنَيْنِ، وَاثْنَيْنِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَاثْنَيْنِ، وَاثْنَيْنِ، وَاثْنَيْنِ» (مسلم ــ 2633)

এক মহিলা রাসূল (স.) এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! পুরুষরা তো আপনার হাদীস শিখে নিয়েছে। কাজেই আমাদের জন্যও আপনার পক্ষ থেকে একটি দিন নির্ধারিত করুন। সে সময় আপনি আমাদের সেসব জিনিস শেখাবেন, যা আল্লাহ তায়ালা আপনাকে শিখিয়েছেন। তিনি বললেন: তোমরা অমুক অমুক দিন সমবেত হও। কাজেই সেই মহিলারা ঐ সব দিনে সমবেত হল। নবী স, তাঁদের কাছে এলেন এবং আল্লাহ যা তাকে শিখিয়েছেন তিনি তাদেরকে তা শিখালেন।(সহিহ মুসলিম-২৬৩৩,৬৮৬৮, শামেলা-১৫২)

উপসংহার:

ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে প্রত্যেকটি বিষয়ে আমাদেরকে সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা দিয়েছেসেখানে ভেদাভেদ করা হয়নি নারী কিংবা পুরুষকে বরং নারীর প্রয়োজনেই নারীকে দেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ সম্মান মর্যাদা ও অধিকার। এটি তাদের প্রাপ্যও। যখন অন্য কোন ধর্ম, সমাজ, সভ্যতা নারীকে সঠিক মূল্যায়ণ করতে ব্যর্থ হয়েছে, অবমূল্যায়ণ করেছে জীবনের প্রত্যেকটি স্তরে, তখন ইসলাম সেই নারীকে প্রতিষ্ঠিত করেছে স্বমহিমায়। প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের অধিকারকে নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় সেগুলো না জানার কারণে বাস্তবায়নতো সম্ভব হচ্ছেই না বরং ইসলামের প্রতি একটি ভুল ধারণা তৈরি হচ্ছে।

সুতরাং নারী অধিকারের বিষয়ে ইসলামের দিক নির্দেশনা জেনে সে হিসেবে যদি তাদের অধিকারসমূহকে বাস্তবায়ন করতে পারা যায় তাহলেই সমাজে শান্তিশৃংখলা প্রতিষ্ঠা করা সহজ হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সেই তৌফিক দান করুন। আমিন।

No comments:

Post a Comment

razzakhowlader59@gmil.com