Saturday, June 25, 2022

পদ্মা সেতুর উদ্ধোধন-২৫জুন-২২ অজনা তথ্য

 


পদ্মা সেতুর উদ্ধোধন-২৫জুন-২২ অজনা তথ্য

-এম এ রাজ্জাক হাওলাদার

স্বাধীনতা আজ সার্থক হলো-১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ দিবাগত রাতে একটা নিরীহ জনগোষ্ঠীর উপর হামলে পড়লো একদল হায়েনা। নির্বিচারে হত্যা করলো অসহায় মানুষগুলোকে। তাদের অপরাধ একটাই। ১৯৭০ সালে যে নির্বাচন হয়েছিলো তাতে তারা জিতে গিয়েছিলো। বঙ্গবন্ধুর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা কিন্তু তারা তা মানতে পারছে না। অতঃপর বেছে নিলো বিকল্প। মার্কিন প্রশাসন বিশেষ করে কিসিঞ্জারের প্রত্যক্ষ মদদে সেদিন পাকিস্তানী সামরিক জান্তা উম্মাদের মতো ঝাপিয়ে পড়েছিলো। তারপর নয় মাস চললো রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্রের জন্ম হলো।

এসব কথা আজ সবারই জানা। আরও জানা যে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল সময়কালটাতে আমাদের এই ভূখন্ডে লুকিয়ে থাকা কালসাপ কতোটা অস্থিরতা তৈরী করেছিলো। দুঃসময় আরও প্রকট আকার ধারণ করেছিলো বৈশ্বিক ষড়যন্ত্র আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে। সেদিন যে হিংসা, দলাদলি, রেষারেষি, দুর্র্নীতি, স্বজনপ্রীতি, লুট তরাজে মেতে ওঠার ঘৃণ্য পরিবেশ তৈরী করা হয়েছিলো তাতে মহান মানুষ জাতির জনক শেখ মুজিবের অসহায় আর বিব্রত হওয়া ছাড়া কোনো গত্যন্তর ছিলো না। অবশেষে ষড়যন্ত্রের ষোলকলা পূর্ণ করতে শেষমেষ ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টে সপরিবারে হত্যা করা হলো সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানকে। একটা মহান অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হয়েছিলো এভাবে। অবশ্য শেষ যে আশাটুকু বেঁচে থাকতে পারতো তাও সমাপ্ত হয়ে গেলো জেলখানায় জাতীয় চার নেতার হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে।

তারপর ঘোর অমানিশা। রাহু কাল চললো ১৯৯০ সাল পর্যন্ত। সামরিক স্বৈরাচারদের বিদায়ের পর এলো গণতান্ত্রিক ধারা। কিন্তু যারা নির্বাচিত হলো তারা সেই একই বীজ থেকে গজানো বৃক্ষ ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রথমবারের মতো সরকার গঠনের মাধ্যমে দেশের ক্ষমতায়ে আসেশুরু হলো যুদ্ধপরাধীদের বিচার। শুরু হলো বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার। কলংক আর পাপমুক্ত হওয়ার এই প্রক্রিয়ায় আমরা আলোর মুখ দেখলাম। তারপর শুরু হলো উন্নয়নের পথে যাত্রা। সেই যাত্রাও শুরুতেই থেমে গেলো। ২০০১ সালে আবারও বিএনপি নির্বাচিত হলো।

হরকাতুল জিহাদ, জেএমবি ইত্যাদি সন্ত্রাসী সংগঠনের শেষ পর্যন্ত যা করা হলো তা যে কতোটা জঘন্য তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আওয়ামী লীগকে সমূলে বিনাশ করার চেষ্টা। ২১শে আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে শেষ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র দেশবাসীকে নাড়া দিলো। এই ঘৃণ্য হামলায় নিহত হলেন অজর নেতাকর্মী। আইভি রহমানের মতো শীর্ষস্থানীয় নেত্রীর দেহ নিথর হয়ে গেলো হামলায়। সেই করুণ দৃশ্য সমস্ত বর্বরতাকে হার মানায়।

তারপরও সংকট এলো। ২০০৭-এ বিএনপি সরে দাঁড়লো বটে কিন্তু তত্বধায়ক সরকারের আড়ালে সামরিক সরকার গঠনের একটা বিরাট ষড়যন্ত্র চললো ২০০৮ সালের শেষ সময়টা পর্যন্ত। যা হোক সকল আধার সরিয়ে শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা মাথা তুলে দাঁড়ালেন। চারিদিকে অন্ধকারের বুক চিরে একটি প্রদীপ অবশেষে মাথা তুলে দাঁড়ালো।

ষড়যন্ত্র তারপরও হয়েছে। আজও হচ্ছে। কিন্তু ইতোমধ্যে শেখ হাসিনা ২০১৪ ও ২০১৮ সালে দুদুবার সরকার গঠন করে ফেলেছেন। আর তার এই সময়কালটাতে বাংলাদেশকে তিনি নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। এই সময়কালটাতে পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংকের রহস্যজনকভাবে সরে যাওয়া ছিলো সবচেয়ে লজ্জাজনক ঘটনা। অবশ্য তা আমাদের জন্যে নয় বরং তাদের জন্যে। কারণ ইতোমধ্যে বাংলাদেশ তার নিজস্ব অর্থায়নেই প্রকল্পটি সফলভাবে সমাধা করেছে। আগামী কাল ২৫শে জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন

সুতরাং আজ ২শে জুন ২০২২ এই চমৎকার দিনটিতে এসে মনে হচ্ছে আমাদের মহান স্বাধীনতা এতোদিনে এসে আজই যেন সার্থক হলো।

 

এক নজরে পদ্মা সেতু  অজানা তথ্যঃ

নাম : পদ্মা সেতু

দৈর্ঘ্য : ৬.১৫ কিলোমিটার

ভায়াডাক্ট (স্থলভাগে সেতুর অংশ) সহ দৈর্ঘ্য : ৯.৮৩ কিলোমিটার

প্রস্ত : ২১.৬৫ মিটার

মোট পিলারের সংখ্যা : ৪২টি

স্প্যানের সংখ্যা : ৪১টি

প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য: ১৫০ মিটার

স্প্যানগুলোর মোট ওজন: ১,১৬,৩৮৮টন

প্রতিটি পিলারে নিচে পাইলের সংখ্যা: ৬টি (কিছু কিছু পিলারে ৭টি পাইলও দেওয়া হয়েছে)

পাইলের ব্যাস: ৩ মিটার

পাইলের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য: ১২৮ মিটার

মোট পাইলের সংখ্যা: ২৬৪টি ( ভায়াডাক্টের পিলারের পাইলসহ ২৯৪টি)

জমি অধিগ্রহণ: ৯১৮ হেক্টর

ব্যবহৃত স্টিলের পরিমাণ : ১,৪৬,০০০ মেট্রিক টন

নির্মাণ কাজ শুরু : ৭ই ডিসেম্বর ২০১৪

মূল সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু : মাওয়া প্রান্তে ৬ নম্বর পিলারের কাজ দিয়ে

সক্ষমতা : দৈনিক ৭৫ হাজার যানবাহন

পানির স্তর থেকে সেতুর উচ্চতা: ১৮ মিটার

পদ্মা সেতুর আকৃতি: ইংরেজি এস (S) অক্ষরের মতো

ভূমিকম্প সহনশীলতা : রিক্টার স্কেলে ৮ মাত্রার কম্পন

অ্যাপ্রোচ রোডের দৈর্ঘ্য: ১২ কিলোমিটার

নদীশাসন: ১৬.২১ কিলোমিটার

সেতুর আয়ুষ্কাল: ১০০ বছর

সেতুর মোট ব্যয়: ৩০,১৯৩.৩৯ কোটি

ঢাকার সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে এমন জেলার সংখ্যা: ২১টি

সরাসরি উপকারভোগী মানুষের সংখ্যা: দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের ৩ কোটি মানুষ

যেসব দেশের বিশেষজ্ঞ ও প্রকৌশলীরা কাজ করেছেন : চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, অট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ন্যাদারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, জাপান, ডেনমার্ক, ইতালি, মালয়েশিয়া, কলম্বিয়া, ফিলিপাইন, থাইওয়ান, নেপাল ও দক্ষিণ আফ্রিকা।

 

 

প্রকল্পের অঙ্গ(component) ভিত্তিক ব্যয় বিভাজন:

ক. মূল সেতুর ব্যয়: ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন টাওয়ার ও গ্যাস লাইনের ব্যয়সহ ১১,৯৩৮.৬৩ কোটি টাকা (বরাদ্দ ১২,১৩৩.৩৯ কোটি টাকার বিপরীতে)

খ. নদীশাসন কাজ: ৮,৭০৬.৯১ কোটি টাকা (৯,৪০০ কোটি টাকার বিপরীতে)

গ. অ্যাপ্রোচ রোড: ২টি টোল প্লাজা, ২টি থানা বিল্ডিং ও ৩টি সার্ভিস এরিয়াসহ ১৮৯৫.৫৫ কোটি টাকা (১৯০৭.৬৮ কোটি টাকার বিপরীতে )

ঘ. পুনর্বাসন ব্যয়: ১,১১৬.৭৬ কোটি টাকা (১,৫১৫ কোটি টাকার বিপরীতে)

ঙ. ভূমি অধিগ্রহণ: ২৬৯৮.৭৩ কোটি টাকা

চ. পরিবেশ: ২৬.৭২ কোটি (১২৯.০৩ কোটি টাকা)

ছ. অন্যান্য বেতন ভাতা, পরামর্শক, সেনা নিরাপত্তা ইত্যাদি: ১৩৪৮.৭৮ কোটি (২৪০৯.৫৬ কোটি টাকার বিপরীতে)

প্রকল্পের মোট অনুমোদিত ব্যয়: ২৭,৭৩২.০৮ কোটি টাকা (৩০১৯৩.৩৯ কোটি টাকার বিপরীতে)

সেতু উদ্বোধন: ২৫ জুন ২০২২।


 

No comments:

Post a Comment

razzakhowlader59@gmil.com