Sunday, July 31, 2022

কাবা ঘরের ভিতরের অংশ

 


কাবা ঘরের ভিতরের অংশ

-এম এ রাজ্জাক হাওলাদার

 

কাবা ঘরের ভিতরের অংশের পরিচয়:
(
১) কাবা ঘরের ভেতরে কোনো ইলেকট্রিক লাইট নাই।

(২) এ ঘরের মেঝে এবং ওয়াল মার্বেল পাথর দ্বারা নির্মিত।

(৩) এ ঘরের কোনো জানালা নাই।

(৪) কাবা ঘরের ১টি মাত্র দরজা।

কাবা ঘরের ছাদে ১২৭ সে.মি লম্বা ও ১০৪ সে.মি. প্রস্থের একটি ভেন্টিলেটার আছে যেটি দিয়ে সূর্যের আলো ভেতরে প্রবেশ করে। এটি একটি কাচ দিয়ে ঢাকা থাকে। যখন কাবা ঘরের ভেতর পরিস্কার করা হয় তখন এই কাচটি খোলা হয়। কাবা শরীফের দুটি সিলিং রয়েছে। এর ভেতরের দেয়ালগুলি সবুজ ভেলভেটের পর্দা দিয়ে আবৃত। এই পর্দাগুলি প্রতি তিন বছর পর পর পরিবর্তন করা হয়। এর সিলিংকে তিনটি কাঠের পিলার ধরে রেখেছে। প্রতিটি পিলারের ব্যাস ৪৪ সে.মি.।

পবিত্র কাবা শরীফ পরিস্কার করার জন্যে এর দরজা বছরে দুইবার খোলা হয়। রমজান এর ১৫ দিন আগে এবং হজ্জ এর ১৫ দিন আগে। পরিস্কারের পরে মেঝে এবং দেয়াল সাদা কাপড় ও টিসু দিয়ে মোছা হয়। এরপর দেয়ালগুলি পারফিউম দিয়ে সুগন্ধযুক্ত করা হয়। কাবা শরীফের কালো কাপড়ের আবরনটি (কিশওয়া)

প্রতি বছর ৯জিলহজ্জ পরিবর্তন করা হয়। কাবা শরীফের দরজার চাবি বনী সায়বা নামক এক গোত্রের কাছে থাকে। মহানবী মুহাম্মদ (সাঃ) এই চাবি এই গোত্রের কাছে দিয়েছিলেন, যা কিয়ামতের আগ পর্যন্ত তাদের কাছেই থাকবে। তারা কাবা শরীফ পরিস্কার করার কাজের জন্য বিভিন্ন মুসলিম দেশের প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী, কুটনীতিক ও গন্যমান্য ব্যক্তিদেরদের অভিবাদন জানান। মক্কা শহরের গভর্নর তাদের কাবা শরীফের ভিতরে নিয়ে যান এবং তারা জমজম কুপের পানি এবং গোলাপ জল দিয়ে কাবা শরীফের ভিতর পরিস্কার করেন!

হে-আল্লাহ্‌ আমাদের সবাইকে তোমার ঘরে যাওয়ার তৌফিক দান করুন।আমীন

কাবা ঘরের আরো কিছু অজানা তত্থ্য:

সবাই মূলত কাবা শরীফ জিয়ারত করতে যায়। এই কাবার ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে মুসলিমদের কাছে। সবাই এই কাবার দিক ফিরেই নামাজ আদায় করে। কাবার ভিতরে কি আছে তা সবাই দেখার সুযোগ পায়না, এটা শুধুমাত্র বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মানার্থে অনুমতিক্রমে খোলা হয়। যাইহোক, যেহেতু আপনি জানতে চেয়েছেন ভিতরে কি আছে তাই নিচের উত্তরঃ

পবিত্র কাবার অভ্যন্তরে ১৮০ বর্গমিটার পরিধিতে তিনটি কাঠের খুটি আছে, যা এর ছাদকে দাড় করিয়ে রেখেছে।

খুটির কাঠগুলো এতই শক্ত প্রকৃতির যে, এর মতো বিকল্প কাঠ পাওয়া যায় না। এগুলো প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ বিন জুবাইর (রা:) স্থাপন করেছিলেন।

বর্তমানে এ কাঠনির্মিত খুটির বয়স ১ হাজার ৩৫০ বছর। হালকা কালো রঙের এ খুটিগুলোর আয়তন ১৫০ সেন্টিমিটার এবং ব্যাস ৪৪ সেন্টিমিটার।

প্রতিটি খুটি একটি কাঠনির্মিত চৌকা ভিত্তিক ওপর দাঁড়িয়ে আছে, যাতে কাঠ খোদাই করে সুন্দর কারুকার্য করা হয়েছে।

তিনটি খুটির মাঝে লম্বা করে একটি দণ্ড স্থাপন করা হয়েছে। সেটিতে পবিত্র কাবার জন্য হাদিয়াস্বরূপ প্রেরিত মূল্যবান তাম্র-রূপা ও কাচের তৈরি প্রদীপ, (যা প্রাচীনযুগে আমির-বাদশাহরা পাঠিয়েছিলেন) ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

এ ছাড়াও খুটিগুলোতে বিস্তৃত একটি স্ট্যান্ড আছে, যা উত্তর ও পূর্বপার্শ্বের দেয়াল পর্যন্ত প্রসারিত।মেশক,আম্বর (সুগন্ধি দ্রব্য) ও উদের (এক ধরনের সুগন্ধি কাঠ) সুরভিত ঘ্রাণ পবিত্র কাবার অভ্যন্তরকে মোহনীয় করে রেখেছে।

ভিতরে একটি বাক্সে গোসলের বিভিন্ন সামগ্রী রাখা হয়েছে। প্রতি বছর একবার কাবাকে সাবান-পানি ও সুগন্ধি দিয়ে ধৌত করা হয়।

হারামাইন কর্তৃপক্ষ জানায়, পবিত্র কাবার অভ্যন্তরে ডান পাশের রুকনে শামি ছাদে ওঠার সিঁড়ি সংযুক্ত করেছে।

এটা সমকোণী চতুর্ভুজ একটি ভিত্তি, যা জানালা ব্যতীত অবরুদ্ধ কক্ষের মতো। এর বিশেষ চাবিবিশিষ্ট একটি দরজা আছে।একে স্বর্ণ-রূপা খচিত (কোরআনের আয়াতগুলো) লিপিমালায় কারুকার্য ও নকশাকৃত একটি রেশমের সুন্দর পর্দা দিয়ে আবৃত করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ আরও জানায় পবিত্র কাবাঘরের ফ্লোর (মেঝে) শ্বেতমর্মর (মার্বেল) পাথর দিয়ে সজ্জিত। এর অধিকাংশ সাদা আর বাকিটুকু রঙিন। আর কাবার ভেতরের দেয়াল দামি রঙিন মর্মর পাথর ও দৃষ্টিনন্দন নকশায় অলংকৃত। দেয়ালের অভ্যন্তরীণ অংশকে গোলাপি লাল রঙের রেশমি কাপড়ের পর্দা দ্বারা আচ্ছাদিত করা হয়েছে। এসব পর্দায় সাদা সুতা দিয়ে সাত-আট স্তরে শাহাদাতাইন (দুই কালেমা) ও কিছু আসমাউল হুসনা কারুকার্য করে বুনন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য এ পর্দা দিয়ে পবিত্র কাবার ছাদও ঢাকা হয়েছে। কাবার অভ্যন্তরে মোট নয়টি মার্বেল পাথরের ফলক আছে। এর মধ্যে আটটিতে খত্তে সুলুছে (সুলুছ লিপিরীতি) শিলালিপি অংকন করা হয়েছে। আর অবশিষ্ট একটিতে কুফি লিপিরীতিতে অঙ্কিত। চতুষ্পদী কুফি লিপিরীতিতে লিখিত এ ফলকের হতফগুলো রঙিন মূল্যবান মার্বেল পাথরের টুকরো দিয়ে অঙ্কিত এবং এর এক অংশ আরেক অংশের সঙ্গে সংযুক্ত।এসব শিলালিপি হিজরি ষষ্ঠ শতাব্দীর পরে লেখা হয়েছে। এছাড়াও কাবা ঘরের অভ্যন্তরে পূর্বাপাশের দেয়ালে কাবার দরজা এবং বাবুত তওবার মাঝে,

খাদিমুল হারামাইন বাদশার ফাহাদ বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদি কর্তৃক মর্মর পাথরে খোদাইকৃত একটি নথিপত্র আছে, যা তার আমলে কাবার ব্যাপক পুন:সংস্কারের তারিখ নির্দেশ কর। এ ফলক নিয়ে কাবার অভ্যন্তরে অবস্থিত মোট শিলালিপির সংখ্যা ১০ টি হয়, যার সবকয়টি সাদা মার্বেল পাথরে নির্মিত।

কাবাঘরের ৪টি কোণের আলাদা নাম:

(১) হাজরে আসওয়াদ (২) রুকনে ইরাকী (৩) রুকনে শামী ও (৪) রুকনে ইয়ামেনী। বর্তমান কাবাঘরের আয়তন হলো পশ্চিম পাশ ২২ হাত, পূর্ব পাশ ১৮.৫ হাত, দক্ষিণ পাশ ১৮ হাত, উত্তর পাশ ১২ হাত, উচ্চতা ২৭ ফুট। হাজরে আসওয়াদ (দৈর্ঘ্য ৮ ইঞ্চি ও প্রস্থ ৭ ইঞ্চি) মানে কালো পাথর, এটি একটি বেহেশত পাথর। কাবা শরীফ দেখলেও সওয়াব হয় যেমন মাতাপিতার চেহারা দর্শনে ও কোরআন শরীফ দর্শনে সওয়াব হয়। তেমনি কাবা ঘরের দিকে তাকালেও আমল নামায় সওয়াব (নেকি) লিখা হয়। (সুবহান-আল্লাহ)

আল্লাহ তায়ালা আমরা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীকে পবিত্র কাবা শরীফ যিয়ারত করার তাওফিক দান করুক। (আমিন)

ক্বাবা ঘরে ঢুকার অনুমতি কাদের আছে ?

একসময় কাবা ঘরের দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। সবাই পবিত্র কাবা ঘরে প্রবেশ করতে পারতো। পরে কাবা ঘরে সবার অবাধ প্রবেশ বন্ধ করে দেয়া হয়।এখন তা বিশেষ নিয়ম মেনে দেশটির রাষ্ট্র প্রধান ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাই প্রবেশ করতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্র প্রধানসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা নিয়ম মেনে কাবা ঘরে প্রবেশ করতে পারেন।

পবিত্র কাবা শরীফ পরিস্কার করার জন্যে এর দরজা বছরে দুইবার খোলা হয়। রমজান এর ১৫ দিন আগে এবং হজ্জ এর ১৫ দিন আগে। পরিস্কারের পরে মেঝে এবং দেয়াল সাদা কাপড় ও টিসু দিয়ে মোছা হয়। এরপর দেয়ালগুলি পারফিউম দিয়ে সুগন্ধযুক্ত করা হয়। কাবা শরীফের দরজার চাবি বনী সায়বা নামক এক গোত্রের কাছে থাকে। মহানবী মুহাম্মদ (সাঃ) পবিত্র কাবার চাবী এই গোত্রের কাছে দিয়েছিলেন, যা কিয়ামতের আগ পর্যন্ত তাদের কাছেই থাকবে। তারা কাবা শরীফ পরিস্কার করার কাজের জন্য বিভিন্ন মুসলিম দেশের প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী, কুটনীতিক ও গন্যমান্য ব্যক্তিদের দের অভিবাদন জানান। মক্কা শহরের গভর্নর তাদের কাবা শরীফের ভিতরে নিয়ে যান এবং তারা জমজম কুপের পানি এবং গোলাপ জল দিয়ে কাবা শরীফের ভিতর পরিস্কার করেন।

পবিত্র কাবা শরীফে এখনো কি কোনো মূর্তি আছে?

 এক কথায় বলতে হয় না নাই

৬২৪ খৃষ্টাব্দের দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমজান ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ হয়।এ যুদ্ধে মুসলমানদের সৈন্যসংখ্যা ছিল মাত্র ৩১৩ জন।এ যুদ্ধে মুসলমানদের আসমানী ফেরেস্তা পাঠিয়ে সাহায্য করেছিলেন পরম করুণাময় আল্লাহপাক।

অষ্টম হিজরির রমজান মাসে নবিজি (সাঃ) মক্কা বিজয় করেন।তখন কাবা ঘরে ৩৬০ টি মূর্তি ছিল। মুসলমানরা সেগুলো অপসারণ করে আল্লাহর ঘর পবিত্র করেন।

নবম হিজরির রমজান মাসে তায়েফের সাকিফ গোত্র স্বেচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এবং তারা নিজেরাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজেদের উপাস্য লাতনামক মূর্তি অপসারণ করে। (আলবিদায়াহ ওয়াননিহায়াহ : ৫/৩১৬)

 

 

No comments:

Post a Comment

razzakhowlader59@gmil.com