Sunday, July 31, 2022

অতিরিক্ত তাপপ্রবাহের সময় বৃষ্টির জন্য দোয়া

 


অতিরিক্ত তাপপ্রবাহের সময় বৃষ্টির জন্য দোয়া

এম এ রাজ্জাক হাওলাদার 

অতিরিক্ত তাপপ্রবাহের সময় বৃষ্টির জন্য যে দোয়া করবেন কখনো কখনো বৃষ্টি, অনাবৃষ্টি কিংবা অতিবৃষ্টিতে আজাব নেমে আসে মানব সমাজে। কিন্তু কেন? এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আল্লাহ তায়ালা মহাগ্রন্থ কুরআনে ইরশাদ করেছেন,

ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُمْ بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ

মানুষের কৃতকর্মের কারণে স্থলে ও সমুদ্রে বিপর্যয় প্রকাশ পায়। ফলে আল্লাহ তাদের কতিপয় কৃতকর্মের স্বাদ তাদের আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে। (সূরা আর-রূম: ৩০:৪১)

তাই তো আল্লাহর নবরত নূহ (আ:) তাঁর জাতিকে বলেছিলেন,

فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا (10)  يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا (11) وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَلْ لَكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَارًا (12 مَا لَكُمْ لَا تَرْجُونَ لِلَّهِ وَقَارًا

তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। (সূরা নূহ:৭১:১০-১৩)

কুরআনে বর্ণিত একটি ঘটনা: 

রত মুসা আলাইহিস সালামের সময় মিশরে অনাবৃষ্টি ও তীব্র খরার কারণে মানুষের জীবন-যাপন খুব কষ্টকর হয়ে ওঠে। গবাদি পশুগুলো মারা যাওয়ার উপক্রম হয়। জমি চাষ করা যাচ্ছিল না। কোনো উপায় না দেখে মিশরের জনগণ হজরত মুসা আলাইহিস সালামের কাছে যান। আল্লাহর কাছে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনার আহ্বান জানান।

রত মুসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর কাছে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করে বলেন, ‘‘হে আল্লাহ! মিশরের জমিনে অনেক দিন বৃষ্টি নেই, তুমি বৃষ্টি দাও হে প্রভু! তুমি দয়া করো হে প্রভু!’’

হাদীসের ঘটনার দৃষ্টিপাত:

রত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময় একবছর দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। সে সময় একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুতবাহ দেওয়ার সময় এক বেদুঈন উঠে দাঁড়াল এবং আরজ করল, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! বৃষ্টি না হওয়ার কারণে সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, পরিবার-পরিজন অনাহারে মরছে। আপনি আমাদের জন্য দোয়া করুন।

অত:পর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই হাত তুলে দোয়া করলেন, ‘‘হে আল্লাহ! আমাদের মেঘ দিন।’’ আমাদের ফরিয়াদ শুনুন! আমাদের ফরিয়াদ শুনুন! সে সময় আকাশে কোনো মেঘ ছিল না। হরত আনাস (রা.) বলেন, আল্লাহর কসম করে বলছি! তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাত না নামাতেই পাহাড়ের মতো মেঘের খণ্ড এসে একত্র হয়ে গেল এবং তাঁর মিম্বর থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গেই ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়তে লাগল।(সহীহ বুখারী-৯৫৪ ইফা)

হাদীসটি হলো:

قَالَ عُمَرُ بْنُ حَمْزَةَ حَدَّثَنَا سَالِمٌ، عَنْ أَبِيهِ، رُبَّمَا ذَكَرْتُ قَوْلَ الشَّاعِرِ وَأَنَا أَنْظُرُ، إِلَى وَجْهِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يَسْتَسْقِي، فَمَا يَنْزِلُ حَتَّى يَجِيشَ كُلُّ مِيزَابٍ‏.‏ وَأَبْيَضَ يُسْتَسْقَى الْغَمَامُ بِوَجْهِهِ ثِمَالَ الْيَتَامَى عِصْمَةً لِلأَرَامِلِ وَهْوَ قَوْلُ أَبِي طَالِبٍ‏.‏

এভাবে দিনের পর দিন ক্রমাগত পরবর্তী জুমআ পর্যন্ত (বৃষ্টি) হতে থাকল। পরবর্তী জুমআর দিনে সেই বেদুঈন অথবা অন্য কেউ দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অতি বৃষ্টিতে আমাদের বাড়ি-ঘর ভেঙে পড়ে যাচ্ছে, ফসল ডুবে যাচ্ছে। অতএব আপনি আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য দোয়া করুন।

তখন তিনি দুই হাত তুললেন এবং বললেন, হে আল্লাহ! আমাদের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বৃষ্টি দাও, আমাদের এখানে নয়। এ সময় তিনি স্বীয় আঙুল দিয়ে মেঘের দিকে ইশারা করেছিলেন। ফলে সেখান থেকে মেঘ কেটে যাচ্ছিল। (বুখারী-)

অনাবৃষ্টির সময় লোকদের ইমামের নিকট বৃষ্টির জন্য দুআর আবেদন:

حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ مُحَمَّدٍ، قَالَ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ الأَنْصَارِيُّ، قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْمُثَنَّى، عَنْ ثُمَامَةَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَنَسٍ، عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ ـ رضى الله عنه ـ كَانَ إِذَا قَحَطُوا اسْتَسْقَى بِالْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَقَالَ اللَّهُمَّ إِنَّا كُنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّنَا فَتَسْقِينَا وَإِنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِعَمِّ نَبِيِّنَا فَاسْقِنَا‏.‏ قَالَ فَيُسْقَوْنَ‏.‏

হাসান ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ)আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) অনাবৃষ্টির সময় আব্বাস ইবনু আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) এর উসিলা দিয়ে বৃষ্টির জন্য দুআ করতেন এবং বলতেন, হে আল্লাহ! (প্রথমে) আমরা আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উসিলা দিয়ে দোয়া করতাম এবং আপনি বৃষ্টি দান করতেন। এখন আমরা আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চাচার উসিলা দিয়ে দুআ করছি, আপনি আমাদেরকে বৃষ্টি দান করুন। বর্ণনাকারী বলেন, দুআর সাথে সাথেই বৃষ্টি বর্ষিত হতো।(সহীহ বুখারী-৯৫৫ইফা)

 

মুসলমানদের শেষ নবরত মুহাম্মদ (সা.)বৃষ্টির জন্য দোয়া পাঠ করতেন। আর দোয়াটি হলো:

اَلْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْمِ مَلِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ  يَفْعَلُ مَا يُرِيْدُ اَللهُمَّ اَنْتَ  الله ُ لَا اِلَهَ اِلَّا اَنْتَ الْغَنِىُّ وَنَحْنُ الْفُقَرَاءُ اَنْزِلْ عَلَيْنَا الْغَيْثَ وَاجْعَلْ مَا اَنْزَلْتَ لَنَا قُوَّةَ وَبَىلَا غَااِلَى  خَيْرٍ

‘‘আলহামদু লিল্লাহি রাবি্বল আলামিন। আর রাহমানির রাহিম। মালিকি ইয়াউমিদ্দিন। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ইয়াফয়ালু মা ইউরিদ। আল্লাহুম্মা আনতাল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা আনতাল গানিয়্যু ওয়া নাহলুল ফুকারাউ। আনজিল আলাইনাল গাইছা ওয়াজয়াল মা আনজালতা লানা কুওয়্যাতান ওয়া বালাগান ইলা খাইরিন।’’

অর্থাৎ ‘‘সব প্রশংসা পৃথিবীর প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। তিনি পরম করুণাময় এবং দয়ালু ও শেষ বিচারের মালিক। আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো মাবুদ নেই, তিনি যা ইচ্ছা করেন, তা-ই করেন। হে আল্লাহ! তুমিই একমাত্র মাবুদ, তুমি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই। তুমি ধনী, আমরা গরিব। আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষণ করো এবং আমাদের জন্য যা অবতীর্ণ করো, তা আমাদের জন্য শক্তিময় ও কল্যাণ দান করো।’’

এ দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার কাছে তাঁর দয়া ও রহমত লাভের জন্য প্রার্থনা করা হয়।

 

দোয়ার উপকার: আয়েশা (রা.) বলেন, লোকজন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে অনাবৃষ্টির কষ্টের কথা নিবেদন করলে রাসুলুল্লাহ (সা.) ঈদগাহে সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে এই দোয়া করেন। অতঃপর আল্লাহর হুকুমে বৃষ্টি বর্ষণ হতে শুরু করে। বৃষ্টি থেকে পরিত্রাণ পেতে মানুষের ছোটাছুটি দেখে নবীজি হেসে ফেলেন। (আবু দাউদ: ১১৭৩)

সুতরাং বৃষ্টি যেন মানুষের জন্য কল্যাণকর হয়, এ জন্যও বিশ্বনব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন। বৃষ্টির জন্য কুরআনুল কারিমে ইসতেগফারের আমল করতেও বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا ()  يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا () وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَلْ لَكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَارًا

 

অতপর বলেছি, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দেবেন। তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি বাড়িয়ে দেবেন। তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদী-নালা প্রবাহিত করবেন। (সুরা নুহ:৭১:১০-১২)

অত:পর এ আয়াতে কারিমায় মানুষের ইসতেগফারের ফলে মহান আল্লাহ বান্দার জন্য বৃষ্টি দান করেন। আর বৃষ্টির মাধ্যমেই আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য রিজিকের ব্যবস্থা করেন। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী বৃষ্টির সময় কল্যাণের দোয়া করার তৌফিক দান করুন। আমিন

 

No comments:

Post a Comment

razzakhowlader59@gmil.com