Sunday, September 11, 2022

আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয়ের ফজিলত

 


আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয়ের ফজিলত

এম এ রাজ্জাক হাওলাদার

প্রথম পর্ব

 ভূমিকাঃ

আল্লাহর পথে ব্যয় দুধরণের, আবশ্যিক ব্যয় ও ঐচ্ছিক ব্যয়। আবশ্যিক ব্যয়ের মধ্যে রয়েছে যাকাত, ওশর, ফিতরা, মান্নত, অসিয়ত, কুরবানী, কুরবানীর চামড়া ইত্যাদি। এছাড়া পরিবেশ-পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বিবেকের তাড়নায় নৈতিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে আল্লাহর সন্তুষ্টি তথা সওয়াবের উদ্দেশ্যে আর যত ব্যয় করা হয় তার সবগুলোই ঐচ্ছিক ব্যয় হিসেবে গণ্য। আবশ্যিক পরিমাণ ব্যয় করলেই একজন ধনী মুসলিম ব্যক্তির উপর থেকে তার সম্পদের যাবতীয় হক বা দায়িত্ব আদায় শেষ হয়ে যায় না বরং এছাড়াও তার সম্পদে আরও অনেক হক রয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَالَّذِيْنَ فِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ مَعْلُومٌ - لِلسَّائِلِ وَالْمَحْرُوْمِ   

যাদের ধন-সম্পদে নির্ধারিত হক আছে। যাঞ্চাকারী ও বঞ্চিতের।” (সূরা মাআরিজ-৭০:২৪-২৫)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,

وَفِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِلسَّائِلِ وَالْمَحْرُومِ ﴿الذاريات: ١٩﴾

তাদের ধন-সম্পদে, প্রার্থী ও বঞ্চিতের হক ছিল।” (সূরা যারিয়াত-৫১:১৯)

এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

عَنْ فَاطِمَةَ بِنْتِ قَيْسٍ قَالَتْ: قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ فِي الْمَالِ لَحَقًّا سِوَى الزَّكَاةِ»

নিশ্চয় সম্পদের উপর যাকাত ছাড়াও অন্য হক রয়েছে।”(তিরমিযী-৬৫৯; দারে কুতনি-২০১৬; মিশকাত-১৯১৪)

পবিত্র কুরআনে দান করার নির্দেশ দিয়েছেনঃ

আল্লাহ তাআলা বলেন,

آمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَأَنْفِقُوا مِمَّا جَعَلَكُمْ مُسْتَخْلَفِينَ فِيْهِ فَالَّذِيْنَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَأَنْفَقُوا لَهُمْ أَجْرٌ كَبِيْرٌ ﴿الحديد: ٧﴾

তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর এবং তিনি তোমাদেরকে যার উত্তরাধিকারী করেছেন, তা থেকে দান কর। অতএব তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও দান করে, তাদের জন্যে রয়েছে মহা পুরস্কার।” (সূরা হাদীদ-৫৭:৭)

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,

وَأَنفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ وَأَحْسِنُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ ﴿البقرة: ١٩٥﴾

আর দান কর আল্লাহর পথে, তবে নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না। আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ কর।আল্লাহ্ অনুগ্রহকারীদেরকে ভাল বাসেন।” (সূরা বাকারা-২:১৯৫)

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,

فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ وَاسْمَعُوا وَأَطِيْعُوا وَأَنفِقُوا خَيْرًا لِّأَنفُسِكُمْ وَمَنْ يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ ﴿التغابن: ١٦﴾

অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহ্কে ভয় কর, শোন, আনুগত্য কর এবং দান কর। এটা তোমাদের জন্যে কল্যাণকর। যারা মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত তারাই সফলকাম।” (সূরা তাগাবুন-৬৪:১৬)

وَأَنفِقُوا مِنْ مَّا رَزَقْنَاكُم مِّن قَبْلِ أَن يَأْتِيَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ فَيَقُولَ رَبِّ لَوْلَا أَخَّرْتَنِي إِلَىٰ أَجَلٍ قَرِيْبٍ فَأَصَّدَّقَ وَأَكُن مِّنَ الصَّالِحِيْنَ ﴿المنافقون: ١٠﴾

আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি তা থেকে মৃত্যু আসার আগেই দান কর। অন্যথায় সে বলবেঃ হে আমার প্রতিপালক! আমাকে আরও কিছুকাল অবকাশ দিলে না কেন? তাহলে আমি সাদকা করতাম এবং সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।” (সূরা মুনাফিকুন-৬৩:১০)

আমরা  প্রকৃত সম্পদের মালিক কতটুকু?

 এ সম্পর্কে হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.)বলেছেন,

عَنْ مُطَرِّفٍ، عَنْ أَبِيْهِ، قَالَ: أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَقْرَأُ: أَلْهَاكُمُ التَّكَاثُرُ، قَالَ: " يَقُوْلُ ابْنُ آدَمَ: مَالِيْ، مَالِيْ، قَالَ: وَهَلْ لَكَ، يَا ابْنَ آدَمَ مِنْ مَالِكَ إِلَّا مَا أَكَلْتَ فَأَفْنَيْتَ، أَوْ لَبِسْتَ فَأَبْلَيْتَ، أَوْ تَصَدَّقْتَ فَأَمْضَيْتَ؟  

আদম সন্তানরা কেবল বলে আমার ধন, আমার সম্পদ অথচ (হে আদম সন্তান!) তোমার সম্পদ তো ততটুকুই যতটুকু তুমি খেয়ে হজম করেছ, পরিধান করে পুরাতন করেছ এবং দান-খয়রাত করে আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করেছ।” (মুসলিম-৭১৫২ ই.ফা; মিশকাত-৫১৬৯)

অন্য একখানা হাদীসে এসেছে,

عَنْ أَسْمَاءَ: أَنَّ رَسُوْلَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أَنْفِقِي، وَلاَ تُحْصِيْ، فَيُحْصِيَ اللَّهُ عَلَيْكِ، وَلاَ تُوعِي، فَيُوْعِيَ اللَّهُ عَلَيْكِ»

খরচ করতে থাক হিসাব কর না, হিসাব করে দিতে থাকলে আল্লাহ তোমাকে হিসাব করে দিবেন। সম্পদ ধরে রেখো না, তাহলে আল্লাহ তাআলা তোমাকে দেয়ার সময় ধরে রাখবেন। যথাসাধ্য দান করতে থাক।” (সহীহ বুখারী-২৪২০, ই.ফা; মুসলিম-২২৪৫ ই.ফা)

দান সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আমলঃ

এ সম্পর্কে হাদীসে এসেছে,

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: «كَانَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَجْوَدَ النَّاسِ، وَكَانَ أَجْوَدُ مَا يَكُوْنُ فِي رَمَضَانَ حِيْنَ يَلْقَاهُ جِبْرِيْلُ، وَكَانَ يَلْقَاهُ فِي كُلِّ لَيْلَةٍ مِنْ رَمَضَانَ فَيُدَارِسُهُ القُرْآنَ، فَلَرَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَجْوَدُ بِالخَيْرِ مِنَ الرِّيْحِ المُرْسَلَةِ»

ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, “রাসুল (সাঃ) ছিলেন শ্রেষ্ঠ দাতা। রমজানে তিনি আরো বেশী দানশীল হতেন, যখন জিবরাঈল (আঃ) তার সাথে সাক্ষাৎ করতেন। আর রমজানের প্রতি রাতে জিবরাঈল (আঃ) রাসুলের সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং তঁাঁরা পরস্পর কুরআন তিলাওয়াত করে শুনাতেন। নিশ্চয় রাসুল (সা.) প্রবাহমান বায়ুর চেয়েও অধিক দানশীল ছিলেন।” (সহীহ বুখারী-০৫)

 

আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করার ফজিলত:

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

مَثَلُ الَّذِيْنَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيْلِ اللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنْبُلَةٍ مِائَةُ حَبَّةٍ وَاللَّهُ يُضَاعِفُ لِمَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ (سورة البقرة-২৬১)

যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ একটি বীজের মত, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। প্রত্যেকটি শীষে একশ করে দানা থাকে। আল্লাহ অতি দানশীল, সর্বজ্ঞ।” (সূরা বাকারা-২:২৬১)

এ প্রসঙ্গে সুন্দর একটি উদাহরণ পেশ করে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَمَثَلُ الَّذِيْنَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّهِ وَتَثْبِيتًا مِنْ أَنْفُسِهِمْ كَمَثَلِ جَنَّةٍ بِرَبْوَةٍ أَصَابَهَا وَابِلٌ فَآتَتْ أُكُلَهَا ضِعْفَيْنِ فَإِنْ لَمْ يُصِبْهَا وَابِلٌ فَطَلٌّ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ     

যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে আল্লাহর সস্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে এবং নিজের মনকে সুদৃঢ় করার জন্যে তাদের উদাহরণ টিলায় অবস্থিত বাগানের মত, যাতে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়; অতঃপর দ্বিগুণ ফসল দান করে। যদি এমন প্রবল বৃষ্টিপাত নাও হয়, তবে হাল্কা বর্ষণই যথেষ্ট। আল্লাহ তোমাদের কাজকর্ম যথার্থই প্রত্যক্ষ করেন।” (সূরা বাকারা-২:২৬৫)

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا أَنْفِقُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّا أَخْرَجْنَا لَكُمْ مِنَ الْأَرْضِ وَلَا تَيَمَّمُوا الْخَبِيْثَ مِنْهُ تُنْفِقُوْنَ (سورة البقرة-২৬৭)

হে ঈমানদারগণ! তোমরা স্বীয় উপার্জন থেকে এবং যা আমি তোমাদের জন্যে ভূমি থেকে উৎপন্ন করেছি তা থেকে উৎকৃষ্ট বস্তু ব্যয় কর এবং তা থেকে নিকৃষ্ট জিনিস ব্যয় করতে মনস্থ করো না।” (সূরা বাকারা-২:২৬৭)

আল্লাহ তায়ালা অন্য আরো বলেন,

إِنَّ الَّذِيْنَ يَتْلُوْنَ كِتَابَ اللَّهِ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَأَنْفَقُوا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَعَلَانِيَةً يَرْجُوْنَ تِجَارَةً لَنْ تَبُورَ - لِيُوَفِّيَهُمْ أُجُوْرَهُمْ وَيَزِيْدَهُمْ مِنْ فَضْلِهِ إِنَّهُ غَفُوْرٌ شَكُوْرٌ   

যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, নামায কায়েম করে এবং আমি যা দিয়েছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসা করে, যাতে কখনও লোকসান হবে না। পরিণামে তাদেরকে আল্লাহ তাদের সওয়াব পুরোপুরি দেবেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরও বেশি দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, গুণগ্রাহী।” (সূরা ফাতির-২৯-৩০)

খারাপ মৃত্যু রোধ করেঃ

মেশ কাতের হাদীসে এসেছে, মৃত্যু দুপ্রকারের, যথাঃ ভাল মৃত্যু ও খারাপ মৃত্যু। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

عَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الصَّدَقَةَ لَتُطْفِئُ غَضَبَ الرَّبِّ وَتَدْفَعُ مِيتَةَ السَّوْءِ» «هَذَا حَدِيْثٌ حَسَنٌ غَرِيْبٌ مِنْ هَذَا الوَجْهِ»

 হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, দান-সদকা আল্লাহর ক্রোধ প্রশমিত করে এবং খারাপ বা মন্দ মৃত্যু রোধ করে। (তিরমিযী-৬৬৪, শরহুস সুন্নাহ-১৬৩৪, মিশকাত-১৯০৯)

বিপদ-আপদ প্রতিহত করেঃ

বিপদ-আপদ মানুষের নিত্য-দিনের সাথী। মানুষেরই কোন কোন কর্ম তার জন্য বিপদ-আপদ টেনে আনে। তবে দান-খয়রাত তার সামনে এমন এক প্রতিবন্ধকতার দেয়াল সৃষ্টি করে যাকে সেই বিপদ-আপদ অতিক্রম করতে পারে না।

এ সম্পর্কে হাদীসে এসেছে,

عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بَادِرُوا بِالصَّدَقَةِ فَإِنَّ الْبَلَاءَ لَا يَتَخَطَّاهَا»

হযরত আলি (রাঃ) বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা দানের ব্যাপারে তাড়াতাড়ি কর। কেননা বিপদাপদ তা অতিক্রম করতে পারে না (অর্থাৎ দানে বিপদ দূরীভূত হয়)” (তাবারানী-৫৬৪৩; শরহুস সুন্নাহ-মিশকাত-১৮৮৭)

দানকারীর পিছনে আল্লাহ স্বয়ং দান করেনঃ

 বিশ্বনবী (সা.) বলেছেন,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «مَا نَقَصَتْ صَدَقَةٌ مِنْ مَالٍ، وَمَا زَادَ اللهُ عَبْدًا بِعَفْوٍ، إِلَّا عِزًّا، وَمَا تَوَاضَعَ أَحَدٌ لِلَّهِ إِلَّا رَفَعَهُ اللهُ»  

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূল (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “সাদাকা করাতে সম্পদের ঘাটর্তি হয় না। যে ব্যক্তি ক্ষমা করে আল্লাহ তার সর্বদা সম্পদ বৃদ্ধি করে দেন। আর কেউ আল্লাহর সস্তষ্টির জন্য বিনীত হলে তিনি তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন।” (সহীহ মুসলিম-৬৩৫৬)

অন্য হাদীসে এসেছে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «لَا يَتَصَدَّقُ أَحَدٌ بِتَمْرَةٍ مِنْ كَسْبٍ طَيِّبٍ، إِلَّا أَخَذَهَا اللهُ بِيَمِينِهِ، فَيُرَبِّيهَا كَمَا يُرَبِّي أَحَدُكُمْ فَلُوَّهُ، أَوْ قَلُوصَهُ، حَتَّى تَكُونَ مِثْلَ الْجَبَلِ، أَوْ أَعْظَمَ

 হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্নিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “কোন ব্যক্তি হালাল মাল থেকে একটি খেজুর দান করে, তবে আল্লাহ তাআলা তা তাঁর ডান হাতে গ্রহণ করেন। অতঃপর তিনি তা লালন-পালন করতে থাকেন যেমন তোমরা ঘোড়ার বাচ্চা ও উটের শাবক লালন-পালন করে থাক। অবশেষে তা পাহাড় সমান কিংবা তার চেয়েও অধিক গুণে বেড়ে যায়।” (সহীহ মুসলিম-২২১২ ই,ফা) 

দানকারী আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন করেঃ

এ প্রসঙ্গে হাদীসে এসেছে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «السَّخِيُّ قَرِيْبٌ مِنَ اللَّهِ قَرِيْبٌ مِنَ الْجَنَّةِ قَرِيبٌ مِنَ النَّاسِ بَعِيْدٌ مِنَ النَّارِ

“দানশীল ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার নিকটবর্তী, মানুষের নিকটবর্তী, জান্নাতের নিকটবর্তী এবং দোযখ থেকে দূরবর্তী।” (তিরমিযী-১৯৬১; মিশকাত-১৮৬৯)

মৃত ব্যক্তি উপকৃত হয়ঃ 

এ সম্পর্কে হাদীসে এসেছে,

أَنَّ سَعْدَ بْنَ عُبَادَةَـ رضى الله عنه قَالَ يَا رَسُوْلَ اللَّهِ إِنَّ أُمِّي تُوُفِّيَتْ وَأَنَا غَائِبٌ عَنْهَا، أَيَنْفَعُهَا شَىْءٌ إِنْ تَصَدَّقْتُ بِهِ عَنْهَا قَالَ نَعَمْ قَالَ فَإِنِّي أُشْهِدُكَ أَنَّ حَائِطِي الْمِخْرَافَ صَدَقَةٌ عَلَيْهَا   

সাদ ইবন উবাদা (রাঃ) বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাঃ)! আমার আম্মা যখন ইন্তিকাল করেন, তখন আমি বাড়িতে ছিলাম না। এবার আমি যদি তার পক্ষ থেকে কিছু সদকা করি, এটা দ্বারা তার কি কোন উপকার হবে? হুজুর (সাঃ) বললেনঃ হ্যাঁ। তিনি বললেন, আপনাকে সাক্ষী রেখে আমার মেখরাফনামক বাগানটি তার জন্য দান করে দিলাম।” (সহীহ বুখারী-২৫৬৬, ২৫৭১ ই.ফা)

 কিয়ামতের দিন ছায়া প্রদান করা হবে

কিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়া ব্যতিত আন্য কোন ছায়া অবশিষ্ট থাকবে না, এমতাবস্থায় দুনিয়াতে যারা দানশীল ছিল তাদের দান-খায়রাতই সেদিন তাদেরকে ছায়া দান করবে। হাদীসে এসেছে,

عَنْ مَرْثَدِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ: حَدَّثَنِي بَعْضِ أَصْحَابِ رَسُوْلِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُوْلَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ: «إِنَّ ظِلَّ الْمُؤْمِنِ يَوْمَ الْقِيَامَة صَدَقَتِهِ

 রাসূল (সা.) বলেছেন, “নিশ্চয় কিয়ামতের দিন ঈমানদারের জন্য ছায়া দেওয়া হবে এবং দান-সাদকা কারিকেও।” (আহমদ-১৮০৪৩)

সর্বোত্তম বস্তু দান করতে হবেঃ

এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,

لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ شَيْءٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيْمٌ   

কস্মিনকালেও কল্যাণ লাভ করতে পারবে না, যদি তোমাদের প্রিয় বস্তু থেকে তোমরা ব্যয় না কর। আর তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে আল্লাহ তা জানেন।” (সূরা আল-ইমরান-৩:৯২)

গরীবের কষ্টের দানঃ   

হাদীসে এসেছে,

عَنْ مَرْثَدِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ: حَدَّثَنِي بَعْضِ أَصْحَابِ رَسُوْلِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُوْلَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ: «إِنَّ ظِلَّ الْمُؤْمِنِ يَوْمَ الْقِيَامَة صَدَقَتِهِ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) একবার রাসূলুল¬¬াহ (সাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ্! (সা.) কোন দান সর্বোত্তম? তিনি বললেন, গরীবের কষ্টের দান। আর প্রথমে তাকে দান করবে, যে তোমার পোষ্য (পরিবারের সদস্যদের)  (আবূ দাঊদ-১৬৭৭; নাসায়ী-২৫২৬)

রমজান মাসের দানঃ

এ মাসের একটি নফল ইবাদতের দ্বারা ফরযের সওয়াব অর্জিত হয়। তাছাড়া দরিদ্র রোজাদারগণ এ মাসে দানের অর্থ হাতে পেলে উপকৃত হন, তাই হাদীস শরীফে রমজান মাসের দানকে সর্বোত্তম দান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে হাদীসে রয়েছে,

عَنْ أَنَسٍ قَالَ: سُئِلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَيُّ الصَّوْمِ أَفْضَلُ بَعْدَ رَمَضَانَ؟ فَقَالَ: «شَعْبَانُ لِتَعْظِيْمِ رَمَضَانَ»، قِيْلَ: فَأَيُّ الصَّدَقَةِ أَفْضَلُ؟ قَالَ: «صَدَقَةٌ فِي رَمَضَانَ

নবীজিকে (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হল, রমজানের পর সবচে ফযীলতের রোযা কোনটি? তিনি বললেন, রমজানের সম্মানার্থে শাবান (সিয়াম পালন করা) প্রশ্নকারী বললেন, কোন সাদকা উত্তম? তিনি বললেনঃ রমজান মাসের সাদকা।” (তিরমিযী-৬৬৩)

পরিবার-পরিজনের পিছনে ব্যয়ঃ

বাবা-মা, দাদা-দাদী, স্বামী-স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, নাতী-নাতনী ইত্যাদির পিছয়ে ব্যয় করা আল্লাহ তাআলার নিকট দান হিসেবে গণ্য। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,

يَسْأَلُونَكَ مَاذَا يُنْفِقُونَ قُلْ مَا أَنْفَقْتُمْ مِنْ خَيْرٍ فَلِلْوَالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِيْنَ وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِيْنِ وَابْنِ السَّبِيْلِ وَمَا تَفْعَلُوا مِنْ خَيْرٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيْمٌ ﴿البقرة: ٢١٥﴾

তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে, কি তারা ব্যয় করবে? বলে দাও- যে বস্তুই তোমরা ব্যয় কর, তা হবে পিতা-মাতার জন্যে, আত্মীয়-আপনজনের জন্যে, এতিম-অনাথদের জন্যে, অসহায়দের জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে। আর তোমরা যে কোন সৎকাজ করবে, নিঃসন্দেহে তা অত্যন্ত ভালভাবেই আল্লাহর জানা রয়েছে।” (সূরা বাকারা-২:২১৫)

 এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

عَنْ أَبِي مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «إِذا أَنْفَقَ الْمُسْلِمُ نَفَقَةً عَلَى أَهْلِهِ وَهُوَ يَحْتَسِبُهَا كَانَت لَهُ صَدَقَةُ

 কোন ব্যক্তি যখন সওয়াবের আশায় আপন পরিবারবর্গের জন্যে ব্যয় করে, তখন তা তার জন্যে সাদকা রূপে গণ্য হবে।” (সহীহ বুখারী- মুসলিম; মিশকাত-১৯৩০)

গোপনে দান-খয়রাত করাঃ

প্রকাশ্যে দান করলে রিয়া তথা লোক দেখানো মনোবৃত্তি জাগতে পারে তাই গোপনে দান করাই শ্রেয়।

প্রসঙ্গত আল্লাহ তায়ালা বলেন,

الَّذِينَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ سِرًّا وَعَلَانِيَةً فَلَهُمْ أَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ   

যারা স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে, রাত্রে ও দিনে গোপনে ও প্রকাশ্যে। তাদের জন্যে তাদের সওয়াব রয়েছে তাদের পালনকর্তার কাছে। তাদের কোন আশংকা নেই এবং তাদের চিন্তার কোন কারণ থাকবে না।” (সূরা বাকারা-২:২৭৪)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,

إِنْ تُبْدُوا الصَّدَقَاتِ فَنِعِمَّا هِيَ وَإِنْ تُخْفُوهَا وَتُؤْتُوهَا الْفُقَرَاءَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ وَيُكَفِّرُ عَنْكُمْ مِنْ سَيِّئَاتِكُمْ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيْرٌ   

যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান-খায়রাত কর, তবে তা কতই না উত্তম। আর যদি খায়রাত গোপনে কর এবং অভাব গ্রস্তদের দিয়ে দাও, তবে তা তোমাদের জন্যে আরও উত্তম। আল্লাহ তোমাদের কিছু গোনাহ দূর করে দিবেন। আল্লাহ তোমাদের কাজ-কর্মের খবর রাখেন।” (সূরা বাকারা-২:২৭১)

এ প্রসঙ্গে হাদীসে এসেছে,

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللَّهُ فِي ظِلِّهِ، يَوْمَ لاَ ظِلَّ إِلَّا ظِلُّهُ: الإِمَامُ العَادِلُ، وَشَابٌّ نَشَأَ فِي عِبَادَةِ رَبِّهِ، وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ فِي المَسَاجِدِ، وَرَجُلاَنِ تَحَابَّا فِي اللَّهِ اجْتَمَعَا عَلَيْهِ وَتَفَرَّقَا عَلَيْهِ، وَرَجُلٌ طَلَبَتْهُ امْرَأَةٌ ذَاتُ مَنْصِبٍ وَجَمَالٍ، فَقَالَ: إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ، وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ، أَخْفَى حَتَّى لاَ تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِيْنُهُ، وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللَّهَ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ "    

সাত শ্রেণীর লোককে আল্লাহ সেই কঠিন দিনে তার রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দান করবেন, যেদিন তার ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়াই থাকবে না। তারা হলেনঃ ঐ সব পুরুষ যারা সাদকা করে গোপন রাখে এমনকি তাদের ডান হাতে কী দান করল, তা বাম হাত জানতে পারে না।” (বুখারী-৬২৭,৬৩৫০ ই.ফা; মুসলিম-২২৪৯,ই.ফা)

দান করে খোঁটা না দেয়াঃ

দান করে পরবর্তী কোন এক সময় সে দানের কথা মনে করিয়ে দিয়ে খোঁটা দিলে কিংবা কষ্ট দিলে দানের সাওয়াব বিনষ্ট হয়ে যায়। দান করতে হবে আল্লাহর সস্তুষ্টির উদ্দেশ্যে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,

لاَ تُبْطِلُواْ صَدَقَاتِكُم بِالْمَنِّ وَالأذَى ﴿البقرة: ٢٦٤﴾

তোমরা তোমাদের সাদকাকে তুলনা দিয়ে কষ্ট দিয়ে বিনষ্ট কর না।” (সূরা বাকারা-২:২৬৪)

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,

الَّذِيْنَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيْلِ اللّهِ ثُمَّ لاَ يُتْبِعُوْنَ مَا أَنفَقُواُ مَنّاً وَلاَ أَذًى لَّهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُونَ ﴿البقرة: ٢٦٢﴾

যারা তাদের সম্পদকে আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে এবং যা খরচ করে তা নিয়ে খোঁটা বা কষ্ট দেয় না, তাদের জন্য তাদের প্রভুর নিকট রয়েছে প্রতিদান।” (সূরা বাকারা-২:২৬২)

কৃপণতার পরিণামঃ

দানশীলতার বিপরীত অবস্থা হল কৃপণতা। আল্লাহ তাআলা কৃপণতা করতে নিষেধ করেছেন। কৃপণতা খুবই নিন্দনীয় একটি স্বভাব যা ব্যক্তিকে তিলে তিলে ধংশ করে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ يَبْخَلُونَ بِمَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ هُوَ خَيْرًا لَهُمْ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَهُمْ سَيُطَوَّقُوْنَ مَا بَخِلُوْا بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلِلَّهِ مِيْرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ ﴿آل‌عمران: ١٨٠﴾

আল্লাহ তাদেরকে নিজের অনুগ্রহে যা দান করেছেন তাতে যারা কৃপণতা করে এই কার্পণ্য তাদের জন্য মঙ্গলকর হবে বলে তারা যেন ধারণ না করে। বরং এটা তাদের পক্ষে একান্তই ক্ষতিকর প্রতিপন্ন হবে। যাতে তারা কার্পণ্য করে সে সমস্ত ধন-সম্পদকে কিয়ামতের দিন তাদের গলায় বেড়ী বানিয়ে পরানো হবে। আর আল্লাহ হচ্ছেন আসমান ও যমীনের পরম স্বত্ত্বাধিকারী। আর যা কিছু তোমরা কর; আল্লাহ সে সম্পর্কে জানেন।” (সূরা আল-ইমরান-৩:১৮০)

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,

الَّذِينَ يَبْخَلُونَ وَيَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبُخْلِ وَيَكْتُمُونَ مَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ عَذَابًا مُهِينًا ﴿النساء: ٣٧﴾

যারা নিজেরাও কার্পণ্য করে এবং অন্যকেও কৃপণতা শিক্ষা দেয় আর গোপন করে সেসব বিষয় যা আল্লাহ তাদেরকে দান করেছেন স্বীয় অনুগ্রহে-বস্তুত তৈরি করে রেখেছি কাফেরদের জন্য অপমানজনক আযাব।” (সূরা আন্ নিসা-৪:৩৭)

এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «السَّخِيُّ قَرِيبٌ مِنَ اللَّهِ قَرِيبٌ مِنَ الجَنَّةِ قَرِيبٌ مِنَ النَّاسِ بَعِيدٌ مِنَ النَّارِ، وَالبَخِيلُ بَعِيدٌ مِنَ اللَّهِ بَعِيدٌ مِنَ الجَنَّةِ بَعِيدٌ مِنَ النَّاسِ قَرِيبٌ مِنَ النَّارِ، وَالْجَاهِلُ السَّخِيُّ أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ مِنْ عَابِدٍ بَخِيلٍ

 কৃপণ ব্যক্তি আল্লাহ তাআলা থেকে দূরে, মানুষ থেকে দূরে, জান্নাত থেকে দূরে এবং দোযখের নিকটে। একজন কৃপণ আবেদের চাইতে একজন মূর্খ দানশীল ব্যক্তি আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়।” (তিরমিযী-১৯৬১; মিশকাত-১৮৬৯)

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আরো বলেন,

عَنْ أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يَدْخُلُ الجَنَّةَ خِبٌّ وَلَا مَنَّانٌ وَلَا بَخِيلٌ

 প্রতারক, কৃপণ এবং দয়া দাক্ষিণ্যের প্রচারকারী (রিয়াকার) জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।” (তিরমিযী-১৯৬৩; মিশকাত-১৮৭৩)

সারকথাঃ

উপরোক্ত আলোচনার আলোকে আমরা জানতে পারলাম, আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয়ের মধ্যে অনেক ফজিলত রয়েছে। কাজেই আমাদের সকলের উচিৎ আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করে জন্নাত ক্রয় করা। পরিশেষে পবিত্র কুরআনের ভাষায় বলতে হয়-

إِنَّ اللَّهَ اشْتَرَىٰ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ ﴿التوبة: ١١١﴾

আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মুসলমানদের থেকে তাদের জান ও মাল এই মূল্যে যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত।” (সূরা তাওবা-৯:১১১)

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করার তৌফিক দান করুন, আমীন!

 

No comments:

Post a Comment

razzakhowlader59@gmil.com