Wednesday, March 01, 2023

ইসলামী দৃষ্টিকোণে ভূমিকম্পের কারণ এবং করণীয়

ইসলাম দৃষ্টিকোণে ভূমিকম্পের কারণ এবং করণীয়

--এম এ রাজ্জাক হাওলাদার

ভূমিকম্প পরিচিতিঃ

ভূ-অভ্যন্তরে আকস্মিক ও ক্ষণস্থায়ী কম্পনকে ভূমিকম্প বলে। ভূমিকম্প সাধারণত কয়েক সেকেণ্ড থেকে ১/২ মিনিট স্থায়ী হয়।তবে কিছু কিছু ভূমিকম্প ৮-১০ মিনিটও স্থায়ী হয়।মাঝে মাঝে কম্পন এত দুর্বল হয় যে, তা অনুভব করা যায় না। তবে শক্তিশালী ও বিধ্বংসী ভূমিকম্পে ঘর-বাড়ি ও ধন-সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং অসংখ্য প্রাণহানি ঘটে।(উইকিপিডিয়া)

ভূমিকম্পের ধরণঃ

পৃথিবীতে বছরে গড়ে ছয় হাজার ভূমিকম্প হয়। এগুলোর বেশিরভাগই মৃদু, যেগুলো আমরা টের পাই না। সাধারণত তিন ধরনের ভূমিকম্প হয়ে থাকেপ্রচণ্ড, মাঝারি ও মৃদু। আবার উৎসের গভীরতা অনুসারে ভূমিকম্পকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়অগভীর, মধ্যবর্তী ও গভীরভূমিকম্প। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ভূ-পৃষ্ঠের ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে অগভীর, ৭০ থেকে ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে মধ্যবর্তী এবং ৩০০ কিলোমিটারের নিচে হলে তাকে গভীরভূমিকম্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

বুয়েটের গবেষণার উক্তি:

বুয়েটের গবেষকদের প্রস্তুতকৃত ভূকম্পন-এলাকাভিত্তিক মানচিত্রে দেখা যায়, বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা/অঞ্চল ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে।

Ø উচ্চমাত্রার ঝুঁকিতেঃ জোন-১)৪৩% এলাকা)পঞ্চগড়, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট,হবিগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ঠাকুরগাঁ, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সম্পূর্ণঅংশ, ও কক্সবাজারের অংশবিশেষ।

Ø মধ্যমমাত্রার ঝুঁকিতেঃ জোন-২)৪১% এলাকা)রাজশাহী, নাটোর, মাগুরা, মেহেরপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী,ঢাকা

Ø নিম্নমাত্রার ঝুঁকিতেঃ জোন-৩) ১৬% এলাকা)বরিশাল, পটুয়াখালী, এবং সব দ্বীপ ও চরএলাকা।

জ্ঞান-বিজ্ঞানে ভূমিকম্পের ব্যাখ্যাঃ

ভূমিকম্প হচ্ছে ভূমির কম্পন। ভূ অভ্যন্তরে যখন একটি শিলা অন্য একটি শিলার উপরে উঠে আসে তখন ভূমি কম্পন হয়। পৃথিবীপৃষ্ঠের অংশবিশেষের হঠাৎ অবস্থান পরিবর্তন বা আন্দোলনই ভূমিকম্পন।

ভূমিকম্প কি কারণে হয়ঃ

ভূ-অভ্যন্তরে স্থিত গ্যাস যখন ভূ-পৃষ্ঠের ফাটল বা আগ্নেয়গিরির মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে তখন সেই গ্যাসের অবস্থানটি ফাঁকা হয়ে পড়ে আর পৃথিবীর উপরের তলের চাপ ওই ফাঁকা স্থানে দেবে গিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখে। তখনই ভূ-পৃষ্ঠে প্রবল কম্পনের অনুভব হয় যা ভূমিকম্প নামে পরিচিত। সাধারণত তিনটি প্রধান কারণে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়ে থাকেভূ-পৃষ্ঠের হঠাৎ পরিবর্তন জনিত কারণে, আগ্নেয়গিরি সংঘটিত হওয়ার কারণে ও শিলাচ্যুতি জনিত কারণে।

ইসলামে ভূমিকম্পের ব্যাখ্যাঃ

ভূমিকম্প হলো মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা। যেন মানুষ তাওবা করে মহান আল্লাহর দিকে ফিরে আসে আত্মসমর্পণ করে। নিজেদের আচার-আচরণ শুধরে নেয়। সার্বিক নিরাপত্তার জন্য দোয়া করে। আল্লাহকে অনেক বেশি স্মরণ করে এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে।

আল্লামা ইবনু কাইয়িম (রহ.) বলেনঃ মহান আল্লাহ মাঝে মাঝে পৃথিবীকে জীবন্ত হয়ে ওঠার অনুমতি দেন। ফলে বড় ধরনের ভূমিকম্প অনুভূত হয়। তখন এই ভূমিকম্প মানুষকে ভীত করে। তারা মহান আল্লাহর নিকট তাওবা করে, পাপ কর্ম ছেড়ে দেয়, আল্লাহর প্রতি ধাবিত হয় এবং তাদের কৃত পাপ কর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে মোনাজাত করে। আগেকার যুগে যখন ভূমিকম্প হতো, তখন সঠিক পথে পরিচালিত সৎকর্মশীল লোকেরা বলতো, ‘মহান আল্লাহ আমাদেরকে সতর্ক করেছেন।

অন্যধর্মগুরুদের ভূমিকম্পের ব্যাখ্যাঃ

* কয়েক বছর আগে নেপালে ভূমিকম্প হলে সেখানকার হিন্দু ধর্মীয় নেতৃবন্দ বলেছিলেন, বহু পূর্বেই আমরা অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার আধিক্য দেখে সবাইকে সাবধান করেছিলাম। অন্যায় ও পাপাচার বৃদ্ধি পাওয়ায় ভগবান ক্ষুব্ধ হয়ে ভূমিকম্পরূপে শাস্তি পাঠিয়েছেন।

* ভারতের মন্দিরে আতশবাজি বিস্ফোরণে শতাধিক ভক্ত নিহত ও প্রায় তিনশগুরুতর আহত হওয়ার পেছনেও পাপাচারে মানুষের সীমালঙ্ঘনকে দায়ী করেছেন ধর্মীয় নেতারা।

* বছর কয়েক আগে কেদারনাথে প্রবল বন্যায় বহু হতাহতের জন্যে মানুষের পাপ ও সীমালঙ্ঘনকেই দায়ী করা হয়। ইহুদি ও খ্রিষ্ট ধর্মেও এমন ধারণা প্রতিষ্ঠিত।

 কুরআনের আলোকে ভুমিকম্পঃ

          এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,

إِذَا زُلْزِلَتِ الْأَرْضُ زِلْزَالَهَا () وَأَخْرَجَتِ الْأَرْضُ أَثْقَالَهَا

অর্থ: যখন পৃথিবী তার কম্পনে প্রকম্পিত হবে। যখন সে তার বোঝা বের করে দেবে।(সুরা ঝিলঝাল-৯৯:১-২ এবং সুরা হজ-২২:১)

পবিত্র কুরআনে ভূমিকম্প বিষয়ে যিলযালএবং দাক্কা২টি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে।যিলযাল’-এর অর্থ একটি বস্তুর নড়াচড়ায় আরেকটি বস্তু নড়ে ওঠা।দাক্কাএর অর্থ প্রচণ্ড কোনো শব্দ/আওয়াজের কারণে কোনো কিছু নড়ে ওঠা/ঝাঁকুনি খাওয়া। কেয়ামতের দিন ফেরেশতা হজরত ইসরাফিল (আ.)-এর সিঙ্গায় ফুৎকারের কারণে চূড়ান্ত ভূমিকম্পে পৃথিবী টুকরো টুকরো হয়ে ধূলিকণায় পরিণত হবে এবং তা হবে দাক্কা

# আল্লাহ বলেন,

وَمَا أَصَابَكُمْ مِنْ مُصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَنْ كَثِيرٍ

যে বিপদ-আপদই তোমাদের ওপর আসুক না কেন, তা হচ্ছে তোমাদের নিজেদের হাতের কামাই। আর আল্লাহ তোমাদের অনেক (অপরাধ)ক্ষমা করে দেন।(সুরা শুরা-৪২:৩০)

# মহান আল্লাহ বলেন,

وَمَا مَنَعَنَا أَنْ نُرْسِلَ بِالْآيَاتِ

(আসলে) আমি ভয় দেখানোর জন্যই (তাদের কাছে আজাবের) নিদর্শনসমূহ পাঠাই। (সুরা ইসরা-১৭:৫৯)

# আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন,

قُلْ هُوَ الْقَادِرُ عَلَى أَنْ يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عَذَابًا مِنْ فَوْقِكُمْ

বলে দাও, ‘আল্লাহ তোমাদের ওপর থেকে অথবা তোমাদের পায়ের নিচ থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষম।’ (সুরা আনআম-:৬৫)

হাদিসের আলোকে ভুমিকম্পঃ

# জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘যখন তোমাদের পায়ের নিচ থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষমআয়াতটি নাজিল হলো, তখন রাসুল (সা.)বললেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (বুখারী-)

অন্য হাদীসে এসেছে,

 عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ إِذَا اتُّخِذَ الْفَىْءُ دُوَلاً وَالأَمَانَةُ مَغْنَمًا وَالزَّكَاةُ مَغْرَمًا وَتُعُلِّمَ لِغَيْرِ الدِّينِ وَأَطَاعَ الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ وَعَقَّ أُمَّهُ وَأَدْنَى صَدِيقَهُ وَأَقْصَى أَبَاهُ وَظَهَرَتِ الأَصْوَاتُ فِي الْمَسَاجِدِ وَسَادَ الْقَبِيلَةَ فَاسِقُهُمْ وَكَانَ زَعِيمُ الْقَوْمِ أَرْذَلَهُمْ وَأُكْرِمَ الرَّجُلُ مَخَافَةَ شَرِّهِ وَظَهَرَتِ الْقَيْنَاتُ وَالْمَعَازِفُ وَشُرِبَتِ الْخُمُورُ وَلَعَنَ آخِرُ هَذِهِ الأُمَّةِ أَوَّلَهَا فَلْيَرْتَقِبُوا عِنْدَ ذَلِكَ رِيحًا حَمْرَاءَ وَزَلْزَلَةً وَخَسْفًا وَمَسْخًا وَقَذْفًا وَآيَاتٍ تَتَابَعُ كَنِظَامٍ بَالٍ قُطِعَ سِلْكُهُ فَتَتَابَعَ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى وَفِي الْبَابِ عَنْ عَلِيٍّ ‏.‏ وَهَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ ‏.‏

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত; তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন গানীমাতের (যুদ্ধলন্দ) মাল ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত হবে, আমানাতের মাল লুটের মালে প্রচলন হবে, পুরুষ স্ত্রীর অনুগত হয়ে যাবে কিন্তু নিজ মায়ের অবাধ্য হবে, কলরব ও হট্টগোল করবে, পাপাচারীরা গোত্রের নেতা হবে, নিকৃষ্ট লোক সমাজের কর্ণধার হবে, কোন মানুষের অনিষ্ট হতে বাঁচার জন্য তাকে সম্মান দেখানো হবে, গায়িকা-নর্তকী ও বাদ্যযন্ত্রের বিস্তার ঘটবে, মদপান করা হবে, এই উম্মাতের শেষ যামানার লোকেরা তাদের পূর্ববর্তী মনীষীদের অভিসম্পাত করবে, তখন তোমরা অগ্নিবায়ু, ভূমিধসভূমিকম্প, চেহারা বিকৃতি ও পাথর বর্ষণরূপ শাস্তির এবং আরো আলামতের অপেক্ষা করবে যা একের পর এক নিপতিত হতে থাকবে, যেমন পুরানো পুতির মালা ছিড়ে গেলে একের পর এক তার পুতি ঝরে পড়তে থাকে। (সুনানে তিরমিযি-২২১১, যঈফ, মিশকাত-৫৪৫০)

 # রাসুলুল্লাহ (স.)বলেছেন,

عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «فِي هَذِهِ الأُمَّةِ خَسْفٌ وَمَسْخٌ [ص:496] وَقَذْفٌ»، فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ المُسْلِمِينَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَمَتَى ذَاكَ؟ قَالَ: «إِذَا ظَهَرَتِ القَيْنَاتُ وَالمَعَازِفُ وَشُرِبَتِ الخُمُورُ»: وَقَدْ رُوِيَ هَذَا الحَدِيثُ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ سَابِطٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُرْسَلٌ وَهَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ

এ উম্মত ভূমিকম্প, বিকৃতি এবং পাথরবর্ষণের মুখোমুখি হবে।এক সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন, কখন সেটা হবে হে রাসুলাল্লাহ? তিনি বলেন,

Ø যখন গায়ক-গায়িকা ও নর্তকীদের ব্যাপক প্রচলন হবে।

Ø বিভিন্ন ধরণের বাদ্যযন্ত্রের প্রকাশ ঘটবে এবং

Ø মদপানের সয়লাব হবে।-(সূত্র: জামেয় তিরমিজি-২২১২শামেলা)

 # ভূমিকম্প হলে খলিফা হযরত উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) তার গভর্নরদের দান-সদকা করার প্রতি জোর দিয়ে চিঠি লিখতেন।

# অন্য হাদীসে এসেছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ إِذَا اتُّخِذَ الْفَىْءُ دُوَلاً وَالأَمَانَةُ مَغْنَمًا وَالزَّكَاةُ مَغْرَمًا وَتُعُلِّمَ لِغَيْرِ الدِّينِ وَأَطَاعَ الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ وَعَقَّ أُمَّهُ وَأَدْنَى صَدِيقَهُ وَأَقْصَى أَبَاهُ وَظَهَرَتِ الأَصْوَاتُ فِي الْمَسَاجِدِ وَسَادَ الْقَبِيلَةَ فَاسِقُهُمْ وَكَانَ زَعِيمُ الْقَوْمِ أَرْذَلَهُمْ وَأُكْرِمَ الرَّجُلُ مَخَافَةَ شَرِّهِ وَظَهَرَتِ الْقَيْنَاتُ وَالْمَعَازِفُ وَشُرِبَتِ الْخُمُورُ وَلَعَنَ آخِرُ هَذِهِ الأُمَّةِ أَوَّلَهَا فَلْيَرْتَقِبُوا عِنْدَ ذَلِكَ رِيحًا حَمْرَاءَ وَزَلْزَلَةً وَخَسْفًا وَمَسْخًا وَقَذْفًا وَآيَاتٍ تَتَابَعُ كَنِظَامٍ بَالٍ قُطِعَ سِلْكُهُ فَتَتَابَعَ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى وَفِي الْبَابِ عَنْ عَلِيٍّ ‏.‏ وَهَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ ‏.‏

এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) (১৬টি গুরুত্ব পূর্ণ কথা বলেছেন)যথা---

v যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জিত হবে

v কাউকে বিশ্বাস করে সম্পদ গচ্ছিত রাখা হবে কিন্তু তার খেয়ানত করা হবে

v জাকাতকে দেখা হবে জরিমানা হিসেবে

v ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া বিদ্যা অর্জন করা হবে

v পুরুষ তার স্ত্রীর আনুগত্য করবে কিন্তু মায়ের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করবে

v বন্ধুকে কাছে টেনে নিয়ে পিতাকে দূরে সরিয়ে দেব

v মসজিদে উচ্চস্বরে শোরগোল হবে

v জাতির সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তিটি সমাজের শাসকরূপে আবির্ভূত হবে

v সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি হবে নেতা

v একজন মানুষ যে খারাপ কাজ করে খ্যাতি অর্জন করবে

v তাকে তার খারাপ কাজের ভয়ে সম্মান প্রদর্শন করা হবে

v বাদ্যযন্ত্র এবং নারী শিল্পীর ব্যাপক প্রচলন হবে

v মদ পান করা হবে

v লোকজন তাদের পূর্ববর্তী মানুষগুলোকে অভিশাপ দেবে

v এমন সময় তীব্র বাতাস প্রবাহিত হবে

v এমন একটি ভূমিকম্প হবে যা সেই ভূমিকে তলিয়ে দেবে।-(সূত্র: সুনানে তিরমিজি-২২১৪ যঈফ, মিশকাত-৫৪৫০, তিরমিজী-২২১১ [আল মাদানী প্রকাশনী]

অতএব আমরা বর্তমান পৃথিবীর দিকে তাকালে এ হাদিসের বাস্তবতা খুঁজে পাই। আল্লাহ আমাদের মাফ করুক, সবাইকে হেফাজত করুক।

# রাসুলুল্লাহ (সা.)এরশাদ করেন- এই উম্মতের শেষভাগে (আখেরী জামানায়) খাসফ (ভূমিধ্বস), মাসখ (আকৃতি-বিকৃতি)এবং ক্বাযফ (প্রস্তর বর্ষন) হবেতিনি বলেন: আমি বললামইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাদের মধ্যে নেককার লোক থাকা সত্ত্বেও কি আমারা (মুসলমানরা) ধ্বংস হয়ে যাবো? রাসুলুল্লাহ (সা.)বললেন: হ্যাঁ, (এমন ঘটনা ঘটবে তখন) যখন (সমাজে) খাবাসাত (অশ্লীলতা, নোংরামী, বদচরিত্র এবং এসবের উপকরণ) ব্যাপক আকার ধারন করবে।’ [সুনানে তিরমিযী-৪/৪৭৯]

ফায়দা: এখানে যখন (সমাজে) খাবাসাত ব্যাপক আকার ধারন করবে” -এ বর্ণিত খাবাসাত’ -এর ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে অন্য হাদিসে। যেমন: মদ পান, জেনা ব্যাভিচার, সমকামীতা, গাইকা নারীদের গান বাজনা, রেশমী কাপড় ইত্যাদি অশ্লীলতা, নোংরামী, বদ স্বভাব গুলো, যা মুসলমানদের সমাজে ব্যাপক আকারে মাঝে প্রকাশ পাবে।

# রাসূল (সা.)-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদীস-একদিন রাসূল(সা.)সকলকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، قَالَ: أَقْبَلَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: " يَا مَعْشَرَ الْمُهَاجِرِينَ خَمْسٌ إِذَا ابْتُلِيتُمْ بِهِنَّ، وَأَعُوذُ بِاللَّهِ أَنْ تُدْرِكُوهُنَّ: لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِي قَوْمٍ قَطُّ، حَتَّى يُعْلِنُوا بِهَا، إِلَّا فَشَا فِيهِمُ الطَّاعُونُ، وَالْأَوْجَاعُ الَّتِي لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِي أَسْلَافِهِمُ الَّذِينَ مَضَوْا، وَلَمْ يَنْقُصُوا الْمِكْيَالَ وَالْمِيزَانَ، إِلَّا أُخِذُوا بِالسِّنِينَ، وَشِدَّةِ الْمَئُونَةِ، وَجَوْرِ السُّلْطَانِ عَلَيْهِمْ، وَلَمْ يَمْنَعُوا زَكَاةَ أَمْوَالِهِمْ، إِلَّا مُنِعُوا الْقَطْرَ مِنَ السَّمَاءِ، وَلَوْلَا الْبَهَائِمُ لَمْ يُمْطَرُوا، وَلَمْ يَنْقُضُوا عَهْدَ اللَّهِ، وَعَهْدَ رَسُولِهِ، إِلَّا سَلَّطَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ عَدُوًّا مِنْ غَيْرِهِمْ، فَأَخَذُوا بَعْضَ مَا فِي أَيْدِيهِمْ، وَمَا لَمْ تَحْكُمْ أَئِمَّتُهُمْ بِكِتَابِ اللَّهِ، وَيَتَخَيَّرُوا مِمَّا أَنْزَلَ اللَّهُ، إِلَّا جَعَلَ اللَّهُ بَأْسَهُمْ بَيْنَهُمْ "

হে আনছার ও মুহাজিরের দল! তোমাদেরকে পাঁচটি ব্যাপারে পরীক্ষায় ফেলে কষ্ট দেওয়া হবে।তার পঞ্চমটি হল. যখন আলেম ও শাসকগণ আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী শাসন কাঠামো পরিচালনা করবে না; বরং আল্লাহর দেওয়া বিধানের উপর নিজ ইচ্ছা প্রয়োগ করবে, তখন আল্লাহ তাআলা মানুষের উপর দুঃখ-কষ্ট, দুর্ভোগ, দুরবস্থা, দরিদ্রতা ও দুর্যোগ চাপিয়ে দিবেন। (সূত্র: সুনানে ইবনু মাজাহ-৪০১৯শামেলা)

 ভূমিকম্প কেয়ামতের একটি আলামতঃ

রত আবু হুরায়রা (রা.)থেকে বর্ণিত,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُقْبَضَ الْعِلْمُ وَتَكْثُرَ الزَّلَازِلُ وَيَتَقَارَبَ الزَّمَانُ وَتَظْهَرَ الْفِتَنُ وَيَكْثُرَ الْهَرْجُ وَهُوَ الْقَتْلُ الْقَتْلُ حَتَّى يَكْثُرَ فِيكُمْ الْمَالُ فَيَفِيضَ

রাসুলুল্লাহ(সা.)বলেছেন, কিয়ামত ততক্ষণ পর্যন্ত হবে না, যে পর্যন্ত না ইলম (জ্ঞান) উঠিয়ে নেওয়া হবে, অধিক পরিমাণে ভূমিকম্প হবে, সময় সংকুচিত হয়ে আসবে, ফিতনা প্রকাশ পাবে, খুনখারাবি বৃদ্ধি পাবে এবং তোমাদের ধন-সম্পদ এত বৃদ্ধি পাবে যে তা উপচে পড়বে। (বখারী-১০৩৬ ইফা-৯৭৯ আধু-৯৭৩)

# আরেক বর্ণনায় এসেছে, ইবনে হাওয়ালা (রা.) বলেন,

 قَالَ: «يَا ابْنَ حَوَالَةَ، إِذَا رَأَيْتَ الْخِلَافَةَ قَدْ نَزَلَتْ أَرْضَ الْمُقَدَّسَةِ فَقَدْ دَنَتِ الزَّلَازِلُ وَالْبَلَابِلُ وَالْأُمُورُ الْعِظَامُ، وَالسَّاعَةُ يَوْمَئِذٍ أَقْرَبُ مِنَ النَّاسِ مِنْ يَدِي هَذِهِ مِنْ رَأْسِكَ»، قَالَ أَبُو دَاوُدَ: «عَبْدُ اللَّهِ بْنُ حَوَالَةَ حِمْصِيٌّ»

রত রাসুলুল্লাহ (সা.) আমার মাথা বা মাথার তালুতে হাত রেখে বলেন, হে ইবনে হাওয়ালা! যখন তুমি দেখবে যে বায়তুল মাকদিসে (সিরিয়ার) ভূমিতে খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তখন মনে করবে অধিক ভূমিকম্প, বিপদ-আপদ, মহাদুর্ঘটনা ও পেরেশানি সন্নিকটে। কিয়ামত তখন মানুষের এতই নিকটবর্তী হবে, যেমন আমার এ হাত তোমার মাথার যত কাছে আছে।’ (সুনানে আবু দাউদ-২৫৩৫ শামেলা)

ভূমিকম্প হলে যে দোয়া পড়বেনঃ

রাসুল (সা.)বলেছেন, যে ব্যক্তি এ দোয়া তিনবার পড়বে সে ভূমি ও আকাশের দুর্যোগ থেকে হেফাজতে থাকবে। এছাড়া যে কোনো দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে পড়তে পারেন-

 لَا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ

লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন

উচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লা আংতাসুবহানাকা ইন্নি কুংতু মিনাজ জ্বালিমিন।'

অর্থ: 'তুমি ব্যতীত সত্য কোনো উপাস্য নেই; তুমি পুতঃপবিত্র, নিশ্চয় আমি জালিমদের দলভুক্ত।'(সুরা আম্বিয়া-২১:৮৭)

অতপর আমি তাঁর আহবানে সাড়া দিলাম এবং তাঁকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিলাম। আমি এমনি ভাবে বিশ্ববাসীদেরকে মুক্তি দিয়ে থাকি।'

 ভূমিকম্পের সময় কী করবেনঃ

নিন্মে কতিপয় ভুমিকম্পের সময় করণীয় দিক বলে দিচ্ছি-

# ভূমিকম্প হচ্ছে জানতে পারলে সঙ্গে সঙ্গে ফাঁকা ও উন্মুক্ত স্থানে আশ্রয় নিন।

# উঁচু ভবনে থাকলে বা বের হতে না পারলে জানালা বা দেয়ালের পাশে অবস্থান না নিয়ে শক্ত কোনো ভীম, টেবিলের নিচে অবস্থান নিন।

# হতবিহ্বল না হয়ে/ভীত না হয়ে ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা করুন।

# বহুতল ভবনে একই জায়গায় বহুমানুষ একসঙ্গে না থেকে ভাগ হয়ে আশ্রয় নিন।

# আপনার মুঠোফোনে ফায়ার সাভির্স এবং দরকারি মোবাইল নম্বরগুলো আগাম সতর্কতা হিসেবে আগেই রেখে দিন। বিপদের সময় আপনার কাজে লাগবে।

# দ্রুত নামার জন্য ভবন থেকে লাফিয়ে পড়বেন না।

# ভূমিকম্পের সময় সম্ভব হলে মাথার ওপর শক্তকরে বালিশ অথবা অন্য কোনো শক্ত বস্তু [কাঠবোর্ড, নরম কাপড় চোপড়ের কুণ্ডলি] ধরে রাখুন।

# গ্যাস এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ থেকে দূরে অবস্থান নিন।

# উচু ভবন থেকে দ্রুত নামার জন্য লিফট ব্যবহার করবেন না।

# ভূমিকম্পের সময় গাড়িতে থাকলে গাড়ি খোলা জায়গায় থামিয়ে গাড়িতেই থাকুন।

# একবার ভূমিকম্পের পরপরই আরেকটা ছোট ভূমিকম্প হয়, যাকে আফটার শকবলে। নিজেকে বিপদমুক্ত ভাবতে অন্তত একঘণ্টা সময় নিন।

 উপসংহারঃ

প্রিয় বন্ধুরা! এতখন আমরা সংক্ষেপে ভুমিকম্প নিয়ে আলোচনায় জানতে পারলেন *ভূমিকম্প পরিচিতিঃ *ভূমিকম্পের ধরণঃ *বুয়েটের গবেষণার উক্তি *বিজ্ঞানে ভূমিকম্পের ব্যাখ্যাঃ *ইসলামে ভূমিকম্পের ব্যাখ্যাঃ *অন্যধর্মগুরুদের ভূমিকম্পের ব্যাখ্যাঃ *কুরআনের আলোকে ভুমিকম্পঃ *হাদিসের আলোকে ভুমিকম্পঃ *ভূমিকম্প হলে যে দোয়া পড়বেনঃ *ভূমিকম্পের সময় কী করবেন ইত্যাদি। আমি আশা করি আপনারা এটি বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতে পারবেন। ইনশাআল্লাহ।

No comments:

Post a Comment

razzakhowlader59@gmil.com