Sunday, April 23, 2023

সদকায়ে ফিতর টাকা দ্বারাও আদায় করা যায়

 


সদকায়ে ফিতর টাকা দ্বারাও আদায় করা যায়

-এম এ রাজ্জাক হাওলাদার

 টাকা দ্বারা ‘‘ফিতরা’’ দেয়া হাদীস,আছার ও ইমামগণের উক্তি দ্বারা প্রমাণিত। ইদানীং নামধারী আহলে হাদীসরা বলে বেড়াচ্ছে যে মুদ্রা তথা টাকা দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায়ের কথা কোন হাদীসে বর্ণিত হয়নি! এগুলো ইমামদের ইজতেহাদি কথা! সুতরাং টাকা দ্বারা সদকা ফিতর আদায় করা যাবে না বরং খাদ্য দ্বারাই সদকা ফিতর আদায় করতে হবে! এটা নামধারী আহলে হাদীসদের ফিক্বহ হাদীস এবং সাহাবায়ে কেরামের আমল সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে উপরোক্ত কথা বলে থাকেন। মূলত টাকা দ্বারাও সদকায়ে ফিতির আদায় করা যায়।

আসলে বিষয়টি ছিল উত্তম, অনুত্তমের মাসআলাইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর মতে টাকা দ্বারা প্রদান করা উত্তম আর ইমাম শাফী (রহঃ) এর মতে খাদ্য দ্রব্য দ্বারা উত্তম। উভয়ের পক্ষে দলিল রয়েছে! কিন্তু টাকা দ্বারা আদায়ের পক্ষে কোন দলিল নেই, এমন কথা বলা সঠিক নয়। প্রিয় রাসূল (সা.) এর যুগেও زَكَاةَ الفِطْرِزكوة ইত্যাদি টাকা দ্বারা আদায় করা হতো নিন্মের হাদীস দ্বারা প্রমান করে

 হাদীসটি হচ্ছে--

وَقَالَ طَاوُسٌ: قَالَ مُعَاذٌ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ لِأَهْلِ اليَمَنِ: «ائْتُونِي بِعَرْضٍ ثِيَابٍ خَمِيصٍ – أَوْ لَبِيسٍ – فِي الصَّدَقَةِ مَكَانَ الشَّعِيرِ وَالذُّرَةِ أَهْوَنُ عَلَيْكُمْ وَخَيْرٌ لِأَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْمَدِينَةِ» وَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: وَأَمَّا خَالِدٌ فَقَدِ احْتَبَسَ أَدْرَاعَهُ وَأَعْتُدَهُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ” وَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَصَدَّقْنَ وَلَوْ مِنْ حُلِيِّكُنَّ» فَلَمْ يَسْتَثْنِ صَدَقَةَ الفَرْضِ مِنْ غَيْرِهَا، فَجَعَلَتِ المَرْأَةُ تُلْقِي خُرْصَهَا وَسِخَابَهَا، وَلَمْ يَخُصَّ الذَّهَبَ وَالفِضَّةَ مِنَ العُرُوضِ (صحيح البخرى 2ـ 116)  

“হযরত মুয়ায (রাঃ) ইয়ামানবাসীকে বলেন তোমরা তোমাদের সদকার মধ্যে কাপড় নিয়ে এসো খাদ্য দ্রব্যাদির স্থলে। সেটা তোমাদের জন্য অধিকতর সহজ এবং মদিনার সাহাবিদের জন্য অধিক উপযোগী............... (সহীহ বুখারী-২/১১৬)

এ প্রসঙ্গে ইমাম আবু হানিফা (রহ.)এটাই বলেছেন। ইয়ামানবাসীর জন্য কাপড় ছিলো অধিকতর সহজ এবং উপযোগী, এজন্য তিনি সেটার নির্দেশ দিয়েছেন আর আমাদের বর্তমান যুগে টাকা অধিকতর সহজ এবং উপযোগী, এজন্য ফিকহে হানাফিদের মত অনুসারে টাকা দ্বারা সদকায়ে ফিতর প্রদান করা উত্তম।

এ সম্পর্কে বুখারী মুসলিম আর বড়জোর সুনানে আরবাআর হাদীসসমূহে আলবানীর তাহকীকে সহীহ হাদীস না পেলে বিপরীত মতকে বাতিল, বিদআত, শরীয়তে নেই ইত্যাদি বলে অপপ্রচার করা সঠিকনয়অথচ নবীজীর লক্ষ লক্ষ হাদীস বিভিন্ন কিতাবে সংকলিত হয়েছে। কেবল মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাতেই ৩৯,০০০ হাদীস রয়েছে। এটি কুতুবে সিত্তারও আগের কিতাব।

ইমাম বুখারীর উস্তাদ ইমাম আবু বকর ইবনে আবী শাইবা (রহঃ) তার পৃথিবী বিখ্যাত হাদীসের কিতাব মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবাএর ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৫০৭ নং পৃষ্ঠায় শিরোনাম এনেছেন فِي إِعْطَاءِ الدَّرَاهِمِ فِي زَكَاةِ الْفِطْرِ তথা টাকার বিনিময়ে সদকায়ে ফিতির প্রদান করা। এর অধীনে তিনি একাধিক আছার উল্লেখ করেছেন। যেখানে সাহাবায়ে কেরাম দিরহাম দিয়ে সদকা ফিতর আদায় করতেন তার প্রমাণ রয়েছে। যেমন:-

(১)

 فِي إِعْطَاءِ الدَّرَاهِمِ فِي زَكَاةِ الْفِطْرِ

  حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ، عَنْ زُهَيْرٍ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا إِسْحَاقَ، يَقُولُ: أَدْرَكْتُهُمْ وَهُمْ يُعْطُونَ فِي صَدَقَةِ رَمَضَانَ الدَّرَاهِمَ بِقِيمَةِ الطَّعَامِ (مصنف ابن ابى شيية 2 ـ394 ص  10371ـ حديث)

অর্থ: হযরত যুহাইর (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ ইসহাক (রহ.) থেকে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, আমি সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-কে এই অবস্থায় পেয়েছি যে, তারা রমযানে সদকায়ে ফিতর খাবারের বিনিময়ে টাকা দ্বারা আদায় করতেন। (ইবনে আবি শায়বা-২/৩৯৮, হাদীস-১০৩৭১)

(২)

عَنْ عَطَاءٍ ؛ أَنَّ عُمَرَ كَانَ يَأْخُذُ الْعُرُوضَ فِي الصَّدَقَةِ مِنَ الْوَرِقِ وَغَيْرِهَا

হযরত আতা (রহ.) বর্ণনা করেন, হযরত উমর (রাঃ) সদকার ক্ষেত্রে টাকা ইত্যাদি গ্রহণ করতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা-১০৫৩৯. শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামা দা.বা. তাহকিককৃত)

সুতরাং হযরত উমর (রা.) তাহলে হাদীসের বিপরীত আমল করেছেন? তিনি অনুত্তম আমল করেছেন?

খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতের উপর আমল করতে রাসূলে আরাবি (সা.)-এর নির্দেশ রয়েছে এ সম্পর্কে দেখুন-

فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِينَ تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ

‘‘তোমরা আমার সুন্নাত এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে এবং উহার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। তোমরা দ্বীনের মাঝে নতুন বিষয় আবিষ্কার করা থেকে বিরত থাকবে, কেননা প্রত্যেক নতুন বিষয়ই বিদআত। আর প্রত্যেক বিদআতের পরিণাম গোমরাহী।”(আবু দাউদ-৪৬০৭; তিরমিজী-২৬৭৬)

(৩)

حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ، عَنْ زُهَيْرٍ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا إِسْحَاقَ، يَقُولُ: «أَدْرَكْتُهُمْ وَهُمْ يُعْطُونَ فِي صَدَقَةِ رَمَضَانَ الدَّرَاهِمَ بِقِيمَةِ الطَّعَامِ»

তাবেয়ী ইমাম আবু ইসহাক রহঃ বলেন,আমি সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-কে পেয়েছি যে, তারা রমজানের সদকায়ে ফিতির খাদ্যের মূল্য পরিমাণ দিরহাম দ্বারা আদায় করতেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-৬/৫০৮, বর্ণনা নং-১০৪৭২, ১০৩৭১)

এ সকল দিয়ে মুলত: প্রমান করে যে, সাহাবায়ে কেরাম কি তাহলে অনুত্তম কাজ করেছেন? উনারা কি হাদিস জানতেন না? তাদের আমল কি রাসুলের হাদিস বিরোধি?  প্রশ্ন থেকে যায়।

عن قتادة قال: قال ابن مسعود رضي الله عنه:

(من كان منكم متأسياً فليتأس بأصحاب محمد صلى الله عليه وسلم، فإنهم كانوا أبر هذه الأمة قلوباً، وأعمقها علماً, وأقلها تكلفاً, وأقومها هدياً, وأحسنها حالاً، قوم اختارهم الله لصحبة نبيه صلى الله عليه وسلم، وإقامة دينه، فاعرفوا لهم فضلهم, واتبعوهم في آثارهم, فإنهم كانوا على الهدى المستقيم)

المصدر (جامع بيان العلم وفضله) (2/ 119).

(راجع الاعتصام جـ 1، ص 526.، وحلية الأولياء، جـ1، ص 305 - 306)،

অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অনুসরণ করতে চায় তবে সে যেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণেরই অনুসরণ করে। কারণ, তাঁরাই ছিলেন এ উম্মতের মধ্যে আত্মার দিক থেকে সবচে বেশি নেককার, ইলমের দিক থেকে গভীরতর, লৌকিকতার দিক থেকে সল্পতম, আদর্শের দিক থেকে সঠিকতম, অবস্থার দিক থেকে শুদ্ধতম। তাঁরা এমন সম্প্রদায় আল্লাহ যাদেরকে আপন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংস্পর্শধন্য হবার জন্য এবং তাঁর দ্বীন কায়েমের উদ্দেশ্যে বাছাই করেছেন। অতএব তোমরা তাঁদের মর্যাদা অনুধাবন করো এবং তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করো। কারণ, তাঁরা ছিলেন সীরাতে মুস্তাকীমের ওপর প্রতিষ্ঠিত।

(৪)

حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ هِشَامٍ، عَنِ الْحَسَنِ، قَالَ: «لَا بَأْسَ أَنْ تُعْطِيَ الدَّرَاهِمَ فِي صَدَقَةِ الْفِطْرِ

“হযরত হাসান বসরী রহঃ থেকে বর্ণিত আছে টাকার মাধ্যমে সদকায়ে ফিতির আদায় করাতে কোন সমস্যা নেই।” (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-৬/৫০৮, বর্ণনা নং-১০৪৭১, ১০৩৭০)

(৫)

عَنْ قُرَّةَ، قَالَ: جَاءَنَا كِتَابُ عُمَرَ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيزِ فِي صَدَقَةِ الْفِطْرِ «نِصْفُ صَاعٍ عَنْ كُلِّ إِنْسَانٍ أَوْ قِيمَتُهُ نِصْفُ دِرْهَمٍ

“হযরত কুররা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হযরত উমর বিন আব্দুল আজীজ রহঃ এর ফরমান আসল প্রত্যেক লোক থেকে আধা সাবা অর্ধেক দিরহামের সমমূল্য সদকায়ে ফিতির আদায় করার।” (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-৬/৫০৮, বর্ণনা নং-১০৪৭০)

(৬) মোট কথা টাকা” দ্বারা সদকায়ে ফিতির আদায়ের মত ব্যক্ত করেছেন, ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) ইমাম সুফিয়ান সাওরী (রহঃ) উমর বিন আব্দুল আজীজ (রহঃ) হযরত হাসান বসরী (রহঃ) ইমাম আবু ইউসুফ (রহঃ) ইমাম তাহাবী (রহঃ) ইমাম ইসহাক বিন রাহুয়াই (রহঃ) ইমাম আবু সাউর (রহঃ) প্রমুখের মতে(যাকাতুল ফিতরি আহকামূহা ওয়া নাওয়াজিলুহা, মুহাম্মদ বিন আব্দুল গাফফার শরীফকৃত-১২৫)

(৭) উল্লেখ্য যে, সদকায়ে ফিতর টাকা দ্বারা আদায় করা যাবে এটি ইমাম বুখারী (রহ.) এরও উক্তি-

فتح الباري لابن حجر (3/ 312)

(قَوْلُهُ بَابُ الْعَرْضِ فِي الزَّكَاةِ)

أَيْ جَوَازُ أَخْذِ الْعَرْضِ وَهُوَ بِفَتْحِ الْمُهْمَلَةِ وَسُكُونِ الرَّاءِ بَعْدَهَا مُعْجَمَةٌ وَالْمُرَادُ بِهِ مَا عَدَا النَّقْدَيْنِ قَالَ بن رَشِيدٍ وَافَقَ الْبُخَارِيُّ فِي هَذِهِ الْمَسْأَلَةِ الْحَنَفِيَّةَ مَعَ كَثْرَةِ مُخَالَفَتِهِ لَهُمْ لَكِنْ قَادَهُ إِلَى ذَلِكَ الدَّلِيلُ ……الخ

…..আল্লামা ইবনু রাশীদ (রহ.) বলেন, উক্ত মাসয়ালাটির মাঝে ইমাম বুখারী (রহ.) হানাফীদের সহমত পোষ করেছেন….(ফাতহুল বারী লি ইবনে হাজার-৩/৩১২)

(৮) ইবনে তাইমিয়া (রহ.) প্রয়োজনবোধে হাদীসে নির্ধরিত খাদ্য ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা সদকায়ে ফিতির আদায়ের মত ব্যক্ত করেছেন। (দেখুন-মাজমূআ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া-১৩/৩৭, দারুল হাদীস কাহেরা প্রকাশনী)

Ø বিখ্যাত ইমাম, ইমাম ইবনে আবী শায়বা তার রচিত কিতাব ইবনে আবি শায়বা-২/৩৯৮ এর মাঝে এই ভাবে অনুচ্ছেদ স্থাপন করেন যে- فِي إِعْطَاءِ الدَّرَاهِمِ فِي زَكَاةِ الْفِطْرِ অর্থাৎ সদকায়ে ফিতর টাকা দ্বারা আদায় করার (বৈধতা) সম্পর্কে।

Ø আর ইমাম বায়হাকী (রহ.) তার রচিত কিতাব সুনানুল কুবরা-৪/১৮৯ এর মাঝে এই ভাবে অনুচ্ছেদ স্থাপন করেন যেبَابُ مَنْ أَجَازَ أَخْذَ الْقِيَمِ فِي الزَّكَوَاتِ. অথাৎ এই অনুচ্ছেদ হলো টাকা দ্বারা যাকাত আদায় করা অনুমোদিত।

Ø এ বিষয়ে আহমদ আল গুমারী (রহ.) এর আরবী ভাষায় ১৫০ পৃষ্ঠায় ‘‘تحقيق الامال فى فى اخراج زكوة الفطر بالمال’’ নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ পুস্তিকা রচনা করেছেন। যা সকলকে পড়ে রাখা আবশ্যক।

Ø এ বিষয়ে আরো দেখুন-(বাদায়েউস সানায়ে-২/৯৬৯, আল মাবসুত লিসসারাখসী -৩/১১৩ ইত্যাদি)

সদকা দ্বারা মূল মাকসাদ হল, গরীবদের উপকার করা। আর টাকা পয়সা প্রদান করলে গরীব তার ইচ্ছেমত প্রয়োজন অনুপাতে তা ব্যবহার করতে পারে। শুধু খাদ্য দিয়ে আদায় করলে যা সম্ভব নয়। তাই যুক্তিরও দাবি টাকা দিয়ে সদকায়ে ফিতর আদায় করা উচিত।

উপরোক্ত আলোচনার আলোকে আশা করি বিষয়টি দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার যে, টাকার মাধ্যমে সদকায়ে ফিতির আদায় করা সম্পূর্ণ শরীয়ত সম্মত। এতে সন্দেহ করার কোন সুযোগ নেই। এবার আমরা বলতে পারি মাসআলাটি ইমাম আবু হানিফা (রহ.) নিজে ইজতিহাদ করে বের করেছেন? নাকি অসংখ্য সাহাবি এবং তাবেয়ি এমন মত পোষণ করেছেন এবং আমল করেছেন?  আমরা ইচ্ছা করলে টাকা দ্বারা সদকায় ফিতরা আদায় করতে পারি কিন্তু পরিপূর্ণ সুন্নাহ সম্মত পদ্ধতি নায়। তবে উপরের হাদীস দ্বারা বুঝা যায় এবং বিভিন্ন ইমাম দের মাসয়ালা অনুযায়ী সদকা আদায় যায়।  

উল্লেখ্য যে, রাসূল করিম (সা.)-এর যুগেও দীনার কিংবা পন্য ছিল কিন্ত এর পরেও রাসূল করিম (সা.) পন্য দিয়ে সদকা প্রদান করেন। রাসূল আকরাম (সা.) বলেছেন,

পাঁচ ধরনের খাদ্যদ্রব্য তথা গম, যব, খেজুর, পনির ও কিসমিসের মাধ্যমে সদকাতুল ফিতর আদায় করা যায়। গমের মাধ্যমে সদকাতুল ফিতর আদায় করা হলে অর্ধ সা (এক কেজি ৬৩৫ গ্রাম)-এর মাধ্যমে আদায় করতে হবে। আর যব, খেজুর, পনির বা কিসমিসের মাধ্যমে ফিতরা আদায় করলে সেগুলোর এক সা (তিন কেজি ২৭০ গ্রাম) পরিমাণ দান করতে হবে। (সহীহ বুখারী-২/৫৪৮; মুসলিম-২/৬৭৮-৬৭৯)

এ ব্যাপারে হাদিস শরিফে এসেছে,

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: «كُنَّا نُعْطِيهَا فِي زَمَانِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَاعًا مِنْ طَعَامٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ زَبِيبٍ» (بخارى )

হযরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, “রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে বর্তমান থাকা অবস্থায় আমরা সদকাতুল ফিতর বাবদ এক সা খাদ্য (গম) বা এক সা খেজুর অথবা এক সা যব কিংবা এক সা পনির অথবা এক সা কিসমিস দান করতাম।” (বুখারী: ১৫০৮,১৫০৬,১৫১০ শামেলা এবং ১৮২৯ ই.ফা)

অন্য একখানা হাদীসে এসেছে,

عَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ أَبِي بَكْرٍ، قَالَتْ: " كُنَّا نُؤَدِّي زَكَاةَ الْفِطْرِ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُدَّيْنِ مِنْ قَمْحٍ،

“রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে আমরা যাকাতুল ফিতরা আদায় করতাম দুই মুদ্দ গম দিয়ে। (সুত্র-আহমদ-২৬৯৩৬শামে, আল-মুসনাদ-৬/৩৫৫; তাহবী, শারহু মুশকিলিল আসার-৯/১৬-৪২পৃ.; খুৎবাতুল ইসলাম-৩০৬পৃ.)

মুদ্দাকথা হলো:   ততকালীন সময় আরব দেশে গম ছিল আমদানি পণ্য; তাই এর দাম ছিল সবচেয়ে বেশি। আমাদের দেশে গমের দাম কম। তাই গম ছাড়া অন্য পণ্যের তুল্য মূল্য করে ফিতরা আদায় করা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে কেবল গমের মাধ্যমে সদকাতুল ফিতর আদায় করার রীতি প্রচলিত হয়ে গেছে। অন্য চারটি দ্রব্যের মাধ্যমে সদকাতুল ফিতর খুব কমই আদায় করা হয়। অথচ নিয়ম হলো, প্রতিটি ব্যক্তি তার সামর্থ্য অনুযায়ী সদকাতুল ফিতর আদায় করবে।

সর্বপরি হাদীসে বর্ণিত উক্ত পাঁচ ধরনের বস্তুর দেশীয় মূল্যের তারতম্যের প্রতি লক্ষ্য করেই ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ (২০২৩সাল) এ বছরের সদকাতুল ফিতরের সর্বনিম্ন পরিমাণ নির্ধারণ করেছে ১১৫/- টাকা এবং সর্বোচ্চ পরিমাণ নির্ধারণ করেছে ২৬৪০/- টাকা। তাই প্রতিটি ব্যক্তিকে নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী ফিতরা দানের দ্রব্য নির্বাচন করে সে অনুযায়ী সদকাতুল ফিতর আদায় করা বাঞ্ছনীয়।

সুতরাং যদি কেউ পন্য দ্বারা সদকা আদায় করে তবে উত্তমতো বটেই। আর যদি কেউ টাকা দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করে তাতেও কোন দোষ নেই। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ফেৎনা সৃষ্টি থেকে সঠিক পথের দ্বীন বুঝে আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন

 

No comments:

Post a Comment

razzakhowlader59@gmil.com