ঈদ ও জুম‘আ একই
দিনে হলে সলাত প্রসঙ্গে অভিমত
-এম এ রাজ্জাক হাওলাদার
ঈদ ও জুম’আ: জুম’আর দিন ঈদ হলে জুম’আর সলাত এবং ঈদের সলাত উভয়টিই পড়তে হবে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন
মাজহাবের ইমামদের অভিমত:
১.হানাফী
মাজহাব:
ইমাম মুহাম্মদ রহ. ইমাম আবু হানিফা রহ. থেকে
"আল জামিউস সগীর" গ্রন্থে বর্ণনা করেন,
"ﻋﻴﺪاﻥ اﺟﺘﻤﻌﺎ ﻓﻲ ﻳﻮﻡ ﻭاﺣﺪ ﻓﺎﻷﻭﻝ ﺳﻨﺔ
ﻭاﻵﺧﺮ ﻓﺮﻳﻀﺔ ﻭﻻ ﻳﺘﺮﻙ ﻭاﺣﺪ ﻣﻨﻬﻤﺎ
দুই ঈদ একই দিনে একত্রিত হয়েছে। প্রথমটি
সুন্নাত। অপরটি ফরজ। দুটোর একটিও ছাড়া যাবে না।" (আল জামিউস সগীর তার ব্যাখ্যাগ্রন্থ আন নাফিউল
কাবির সহ, পৃষ্ঠা ১১৩)
২.ইমাম
শাফেয়ী (রহ.)-এর অভিমত:
ইমাম শাফেয়ী রহ. তার লিখিত বিখ্যাত গ্রন্থ
"কিতাবুল উম্ম"এর মধ্যে বলেছেন,
"ﻭﺇﺫا ﻛﺎﻥ ﻳﻮﻡ اﻟﻔﻄﺮ ﻳﻮﻡ اﻟﺠﻤﻌﺔ ﺻﻠﻰ
اﻹﻣﺎﻡ اﻟﻌﻴﺪ ﺣﻴﻦ ﺗﺤﻞ اﻟﺼﻼﺓ ﺛﻢ ﺃﺫﻥ ﻟﻤﻦ ﺣﻀﺮﻩ ﻣﻦ ﻏﻴﺮ ﺃﻫﻞ اﻟﻤﺼﺮ ﻓﻲ ﺃﻥ ﻳﻨﺼﺮﻓﻮا ﺇﻥ
ﺷﺎءﻭا ﺇﻟﻰ ﺃﻫﻠﻴﻬﻢ، ﻭﻻ ﻳﻌﻮﺩﻭﻥ ﺇﻟﻰ اﻟﺠﻤﻌﺔ ﻭاﻻﺧﺘﻴﺎﺭ ﻟﻬﻢ ﺃﻥ ﻳﻘﻴﻤﻮا ﺣﺘﻰ ﻳﺠﻤﻌﻮا ﺃﻭ
ﻳﻌﻮﺩﻭا ﺑﻌﺪ اﻧﺼﺮاﻓﻬﻢ ﺇﻥ ﻗﺪﺭﻭا ﺣﺘﻰ ﻳﺠﻤﻌﻮا ﻭﺇﻥ ﻟﻢ ﻳﻔﻌﻠﻮا ﻓﻼ ﺣﺮﺝ ﺇﻥ ﺷﺎء اﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ
(ﻗﺎﻝ اﻟﺸﺎﻓﻌﻲ) : ﻭﻻ ﻳﺠﻮﺯ ﻫﺬا ﻷﺣﺪ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ اﻟﻤﺼﺮ ﺃﻥ ﻳﺪﻋﻮا ﺃﻥ ﻳﺠﻤﻌﻮا ﺇﻻ ﻣﻦ ﻋﺬﺭ ﻳﺠﻮﺯ
ﻟﻬﻢ ﺑﻪ ﺗﺮﻙ اﻟﺠﻤﻌﺔ، ﻭﺇﻥ ﻛﺎﻥ ﻳﻮﻡ ﻋﻴﺪ (ﻗﺎﻝ اﻟﺸﺎﻓﻌﻲ) : ﻭﻫﻜﺬا ﺇﻥ ﻛﺎﻥ ﻳﻮﻡ اﻷﺿﺤﻰ ﻻ
ﻳﺨﺘﻠﻒ ﺇﺫا ﻛﺎﻥ ﺑﺒﻠﺪ ﻳﺠﻤﻊ ﻓﻴﻪ اﻟﺠﻤﻌﺔ ﻭيصلى اﻟﻌﻴﺪ، ﻭﻻ ﻳﺼﻠﻲ ﺃﻫﻞ ﻣﻨﻰ ﺻﻼﺓ اﻷﺿﺤﻰ، ﻭﻻ
اﻟﺠﻤﻌﺔ ﻷﻧﻬﺎ ﻟﻴﺴﺖ ﺑﻤﺼﺮ
ঈদুল ফিতরের দিন যদি জুমার দিন হয় ইমাম
সূর্যোদয়ের পর যখন নামাজ পড়া বৈধ তখন ইমাম ঈদের নামাজ পড়বে। এরপর শহরবাসী ব্যতীত পল্লী থেকে যারা তার
সাথে ঈদের জামাতে উপস্থিত হয়েছিল তাদেরকে অনুমতি দিবেন এ ব্যাপারে যে তারা ইচ্ছা
করলে তাদের পরিবারের কাছে চলে যাবে এবং জুমায় পুনরায় ফিরে আসবে না। এক্ষেত্রে তাদের স্বাধীনতা থাকবে। হয়তো তারা
জুমার নামাজ পড়া পর্যন্ত অবস্থান করবে অথবা বাড়িতে চলে যাবে অতঃপর আবার ফিরে এসে
জুমা আদায় করবে যদি সক্ষম হয়। যদি তারা জুমা নাও পড়ে কোন অসুবিধা হবে না
ইনশাআল্লাহ।
তবে শহরবাসীর কারোর জন্য জুমা পরিত্যাগ করা
বৈধ হবে না। তবে যদি কোন ওজর থাকে তাহলে পরিত্যাগ করা বৈধ হবে যদিও তা ঈদের দিন
হয়ে থাকে।
অনুরূপ ঈদুল আযহা যদি জুমার দিনে হয় হুকুম
ভিন্ন হবে না; যখন তা এমন
এলাকায় হবে যেখানে জুমার নামাজ এবং ঈদের নামাজ আদায় করা বৈধ হয়। মিনা বাসীরা
ঈদুল আযহার নামাজ পড়বে না এবং জুমার নামাজ না। কেন মিনা শহর নয়।" (কিতাবুল উম্ম, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২৭৪)
উল্লেখ্য বর্তমানে আমাদের দেশের প্রায় সকল
গ্রামই সম্ভাবনার সাথে শরীয়াতের দৃষ্টিকোণ থেকে শহর বলে গণ্য।
৩.ইমাম
মালেক (রহ.)-এর অভিমত:
মালিকী মাযহাব এর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ফিকহী
গ্রন্থ "আল মুদাওয়ানাহ"-তে এসেছে,
"كان مالك يقول: لا يضَع ذلك عنه ما
وجب عليه مِن إتيان الجمعة، وقال مالك: ولم يَبلُغني أن أحدًا أَذِنَ لأهل العوالي
إلا عثمان، ولم يكن مالك يرى الذي فعل عُثمان، وكان يرى أن مَن وجبَت عليه الجمعة
لا يَضعُها عنه إذن الإمام، وإن شهد مع الإمام قبل ذلك مِن يَومِه ذلك عيدًا
ইমাম মালেক বলতেন, "ঈদের নামাজ ব্যক্তির উপর জুমার নামাজ আদায়ের
আবশ্যকতাকে রহিত করবে না।" তিনি আরো বলেন, "আমার নিকট পৌঁছেনি হযরত উসমান রা. ব্যতীত
অন্য কেউ "আওয়ালী" (মদীনার চার মাইল পূর্বে অবস্থিত) এর অধিবাসীদের
জন্য জুম্মার নামাজ না পড়ার অনুমতি দিয়েছেন।"
ইমাম মালেক উসমান (রা.)-এর মতের উপর আমল করত
না। তার মত ছিল, যার উপর জুমআর
নামায আবশ্যক হয়েছে ইমামের অনুমতি সে অবশ্যকতাকে কখনো রহিত করে না। যদিও সে জুমার
পূর্বে ইমামের সাথে ঈদের নামাজ আদায় করুক না কেন।" (১/৫৩; মিনাহুল জালীল শারহু মুখতাসারি খালীল, ২/৩০৬)
৪.
ইমাম আহমাদ (রহ.)-এর অভিমত:
ইমাম আহমাদ (রহ.)-এর এ বিষয়ে বহু মত রয়েছে।
কোনটা যে ওনার আসল মত সেটাই বুঝা মুশকিল। প্রায় সব ইখতেলাফী মাসআলাতেই ওনার একাধিক
মত থাকে। কোন কোন
মাসআলায় দশ থেকে বারোটি মতও থেকে থাকে। আল্লামা কাউছারী রহ. এর প্রধান কারণ হিসেবে
উল্লেখ করেছেন, ওনার কাছ থেকে
ওনার মত বর্ণকারী রাবীরাই এ সমস্যা সৃষ্টি করেছে। তারা যে যে মতকে বিশুদ্ধ মনে করত সেটাকেই
ইমাম আহমাদের মত বলে চালিয়ে দিত।
এজন্য আল্লামা ইবনে জারীর আত-ত্ববারী রহ. তার
গ্রন্থসমূহে ইমাম আবু হানীফা, মুহাম্মাদ, আবু ইউসূফ, মালেক, শাফেয়ী ও অন্যান্য ফুকাহায়ে কেরাম
রাহিমাহুমুল্লাহ-দের মতামত আনলেও ইমাম আহমাদ রহ. এর মতামত আনেননি।
কারণ কোনটা যে ওনার প্রকৃত মত সেটা যাচাই করা
কষ্টসাধ্য করেছেন। এ কারণে হাম্বলীরা ইমাম তাবারী (রহ.)-কে অনেক কষ্টও দিয়েছে।
এজন্যই আমরা এ মাসআলায় হাম্বলীদের মাযহাব
বর্ণনায় তাদের মাযহাবের হেদায়া "মুগনী" এর উপর নির্ভর করব। ইবনে কুদামা বলেন,
ﻭ"ﺇﻥ اﺗﻔﻖ ﻋﻴﺪ ﻓﻲ ﻳﻮﻡ ﺟﻤﻌﺔ، ﺳﻘﻂ ﺣﻀﻮﺭ اﻟﺠﻤﻌﺔ ﻋﻤﻦ ﺻﻠﻰ اﻟﻌﻴﺪ،
ﺇﻻ اﻹﻣﺎﻡ، ﻓﺈﻧﻬﺎ ﻻ ﺗﺴﻘﻂ ﻋﻨﻪ ﺇﻻ ﺃﻥ ﻻ ﻳﺠﺘﻤﻊ ﻟﻪ ﻣﻦ ﻳﺼﻠﻲ ﺑﻪ اﻟﺠﻤﻌﺔ. ﻭﻗﻴﻞ: ﻓﻲ ﻭﺟﻮﺑﻬﺎ
ﻋﻠﻰ اﻹﻣﺎﻡ ﺭﻭاﻳﺘﺎﻥ
যদি জুম'আর দিনের সাথে ঈদ মিলে যায় তাহলে, ইমাম ব্যতীত অন্যান্য ঈদের নামায আদায়কারীর উপর
জুম'আয় উপস্থিত
হওয়াটা রহিত হয়ে যায়।
ইমাম থেকে রহিত না হওয়ার কারণ হল, যারা জুমআর জন্য উপস্থিত হবে তারা যাতে জুম'আ আদায় করতে পারে। বলা হয়, ইমাম আহমদ থেকে এমতাবস্থায় জুম'আ ওয়াজিব হওয়া না হওয়ার ব্যাপারে দুটি
বর্ণনা রয়েছে।" (আল-মুগনী, ২/২৬৫)
তিনি আরো বলেছেন,
ﻭﺇﻥ ﻗﺪﻡ اﻟﺠﻤﻌﺔ ﻓﺼﻼﻫﺎ ﻓﻲ ﻭﻗﺖ اﻟﻌﻴﺪ، ﻓﻘﺪ ﺭﻭﻱ ﻋﻦ ﺃﺣﻤﺪ، ﻗﺎﻝ: ﺗﺠﺰﺉ
اﻷﻭﻟﻰ ﻣﻨﻬﻤﺎ، ﻓﻌﻠﻰ ﻫﺬا ﺗﺠﺰﺋﻪ ﻋﻦ اﻟﻌﻴﺪ ﻭاﻟﻈﻬﺮ، ﻭﻻ ﻳﻠﺰﻣﻪ ﺷﻲء ﺇﻟﻰ اﻟﻌﺼﺮ ﻋﻨﺪ ﻣﻦ ﺟﻮﺯ
اﻟﺠﻤﻌﺔ ﻓﻲ ﻭﻗﺖ اﻟﻌﻴﺪ
(জুম'আ ও ঈদ এক হওয়া অবস্থায়) কেউ যদি জুমার নামাজ আগে পড়ে ফেলে ঈদের নামাজের সময়ে তাহলে ইমাম আহমাদ থেকে বর্ণিত আছে, উভয়টার মধ্যে প্রথমটা (জুম'আ) পড়াই যথেষ্ট হবে। এর ওপর ভিত্তি করে বলা যায় (জুম'আ) পড়াটাই ঈদের নামাজ ও যোহরের নামাজের জন্য যথেষ্ট হবে (অর্থাৎ পড়া লাগবে না)। (আল-মুগনী, ২/২৬৬)
৫.আহলে
হাদীস সালাফীদের মত:
জুম’আর দিনে ঈদ হলে সেদিন জুম’আর সলাত আদায়ও ঐচ্ছিক। অর্থাৎ জুম’আ মসজিদ হতে দূরবর্তী এলাকাবাসী নিজ নিজ ওয়াক্তিয়া
মাসজিদে ইচ্ছে করলে জুম’আর পরিবর্তে
যুহরের সলাত আদায় করতে পারবে।
(সূত্র: https://islamqa.info/bn/answers/109323)
লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, হাম্বলী মাযহাব ছাড়া বাকী মাযহাবের ইমামগণ দু’ঈদ
একত্রিত হলে একটির দ্বারা অন্যটির আবশ্যকতা রহিত না হওয়ার বিষয়ে একমত।
হাম্বলী মাযহাবের মত হল, আগে ঈদের নামাজ পড়লে ইমাম ছাড়া বাকিদের ওপর
জুমু'আয় উপস্থিত
হওয়ার আবশ্যিকতা রহিত হয়ে যায়, তবে যোহর আদায় করতে হবে।
আর জুমআকে যদি যোহরের ওয়াক্তে না পড়ে ঈদের নামাজের ওয়াক্তে পড়া হয়, তাহলে আর ঈদের নামাজ পড়াই লাগবে না।
জমহুর
ফুকাহাদের দলীল সমূহ:
জুমার নামাজ ফরজ। যা কোরআন ও সুন্নাহ দ্বারা
অকাট্যভাবে প্রমাণিত। আর দুই ঈদের নামাজ আমাদের মাজহাবের ওয়াজিব অন্যদের নিকট
সুন্নাত। আর কোন ফরজ সুন্নত কিংবা ওয়াজিব দ্বারা রহিত হয় না।
১. জুম'আর নামাজ একটি ফরজ ইবাদত। আল্লাহ তা'আলা এরশাদ করেন,
"يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا
إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ
اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
২. জুম'আ পরিত্যাগের মারাত্মক পরিণতির ব্যপারে হুঁশিয়ারি
প্রদর্শনপূর্বক হাদিসে এসেছে,
وَحَدَّثَنِي الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ الْحُلْوَانِيُّ، حَدَّثَنَا
أَبُو تَوْبَةَ، حَدَّثَنَا مُعَاوِيَةُ، - وَهُوَ ابْنُ سَلاَّمٍ - عَنْ زَيْدٍ،
- يَعْنِي أَخَاهُ - أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا سَلاَّمٍ، قَالَ حَدَّثَنِي الْحَكَمُ
بْنُ مِينَاءَ، أَنَّحَدَّثَاهُ أَنَّهُمَا، سَمِعَا رَسُولَ اللَّهِ صلى الله
عليه وسلم يَقُولُ عَلَى أَعْوَادِ مِنْبَرِهِ " لَيَنْتَهِيَنَّ
أَقْوَامٌ عَنْ وَدْعِهِمُ الْجُمُعَاتِ أَوْ لَيَخْتِمَنَّ اللَّهُ عَلَى
قُلُوبِهِمْ ثُمَّ لَيَكُونُنَّ مِنَ الْغَافِلِينَ "
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার ও আবূ হুরায়রাহ
(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তাঁরা উভয়ে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে তাঁর মিম্বারের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে
বলতে শুনেছেন, যারা জুম‘আর নামাজ ত্যাগ করে তাদেরকে এ অভ্যাস বর্জন
করতে হবে। নতুবা আল্লাহ তাদের অন্তরে সীল মেরে দিবেন, অতঃপর তারা গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (সহিহ মুসলিম ৮৬৫ ও ১৮৮৭, নাসাঈ ১৩৭০, মুসনাদে আহমদ ২৩৩, ২২৯০, ৩০৮৯ ও ৫৫৩৫, ইবনে মাজাহ ৭৯৪ ও ১১২৭, সুনানে দারেমী ১৫৭০)
৩. এ ব্যপারে সাহাবী আবুল জা'দ দ্বামরী (রা.) থেকে নবীজী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আরেকটি হাদিস এসেছে-
أَخْبَرَنَا يَعْقُوبُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، قَالَ: حَدَّثَنَا
يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَمْرٍو، عَنْ عَبِيدَةَ بْنِ
سُفْيَانَ الْحَضْرَمِيِّ، عَنْ أَبِي الْجَعْدِ الضَّمْرِيِّ، وَكَانَتْ لَهُ
صُحْبَةٌ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ تَرَكَ
ثَلَاثَ جُمَعٍ تَهَاوُنًا بِهَا طَبَعَ اللَّهُ عَلَى قَلْبِهِ»
হযরত আবুল জা’দ দ্বামরী (রাঃ)থেকে বর্ণিত, --তিনি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর সাহাবী ছিলেন--নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি তিনটি জুম’আ অবহেলা প্রদর্শন পূর্বক ছেড়ে দেয়, আল্লাহ তা’আলা তার অন্তরে মোহর মেরে দেন। ইমাম তিরমিজি
হাদিসটিকে হাসান বলেছেন।
(নাসায়ী: ১৩৬৯, তিরমিজি: ৫০০, আবু দাউদ: ১০৫২; হাদিসটি সহীহ)
৪. জামে মসজিদের জুমআর আযান যে স্থান পর্যন্ত
শোনা যায় সে স্থানের পুরুষদের ওপর জুমুআ আবশ্যক। হাদিসে এসেছে-
وَعَنْ عَبْدِ اللّهِ بْنِ عَمْرٍو عَنِ النَّبِيِّ ﷺ:
«الْجُمُعَةُ عَلى مَنْ سَمِعَ النِّدَاءَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুম‘আর আযান শুনতে পায়, তার ওপর জুম‘আর নামাজ আবশ্যক। (আবূ দাউদ ১০৫৬, দারাকুত্বনী ১৫৯০, সুনানে কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৫৮১; হাদিসটি হাসান)
৫. বিনা কারণে জুম’আ পরিত্যাগকারীকে অর্ধ দিনার
সাদাকাহ করার আদেশ-
ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻳﺰﻳﺪ ﺑﻦ ﻫﺎﺭﻭﻥ، ﻗﺎﻝ: ﺃﻧﺎ ﻫﻤﺎﻡ ﺑﻦ ﻳﺤﻴﻰ، ﻋﻦ ﻗﺘﺎﺩﺓ، ﻋﻦ ﻗﺪاﻣﺔ
ﺑﻦ ﻭﺑﺮﺓ اﻟﻌﺠﻠﻲ، ﻋﻦ ﺳﻤﺮﺓ ﺑﻦ ﺟﻨﺪﺏ، ﻋﻦ اﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ: «ﻣﻦ ﺗﺮﻙ
اﻟﺠﻤﻌﺔ ﻣﻦ ﻏﻴﺮ ﻋﺬﺭ، ﻓﻠﻴﺘﺼﺪﻕ ﺑﺪﻳﻨﺎﺭ، ﻓﺈﻥ ﻟﻢ ﻳﺠﺪ، ﻓﺒﻨﺼﻒ ﺩﻳﻨﺎﺭ»
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
ইরশাদ করেছেন, "যে ব্যক্তি ওজর ছাড়াই জুম’আ পরিত্যাগ করল সে যেন অর্ধ দিনার সাদাকাহ দেয়।" (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, ৫৫৩৫, ইবনে হিব্বান, ২৭৮৮, সনদটি দ্বয়ীফ কুদামা ইবনে ওয়াবরা দ্বয়ীফ হওয়ায়)
৬. জামাআত ও জুম'আ পরিত্যাগ জাহান্নামের প্রবেশের কারণ হয়।
যেমনটি ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন,
ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺣﻔﺺ، ﻋﻦ ﻟﻴﺚ، ﻋﻦ ﻣﺠﺎﻫﺪ، ﻗﺎﻝ: اﺧﺘﻠﻒ ﺭﺟﻞ ﺇﻟﻰ اﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺷﻬﺮا،
ﻳﻘﻮﻡ اﻟﻠﻴﻞ ﻭﻳﺼﻮﻡ اﻟﻨﻬﺎﺭ، ﻭﻻ ﻳﺸﻬﺪ ﺟﻤﺎﻋﺔ ﻭﻻ ﺟﻤﻌﺔ، ﻗﺎﻝ: «ﻓﻲ اﻟﻨﺎﺭ»
প্রখ্যাত তাবেয়ী মুজাহিদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক লোক আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এর নিকট এক
মাস যাবৎ আসা যাওয়া করতো। সে রাত জেগে নামাজ পড়তো এবং দিনে রোজা রাখতো, কিন্তু জামাআত এবং জুম’আতে উপস্থিত হতো না।
(তার ব্যপারে প্রশ্ন করা হলে ইবনে আব্বাস রা. জবাবে) বললেন, সে জাহান্নামী।
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, ৫৫৪০, সনদ সহীহ মাওকূফ)
তবে যারা শহর বা শহরতলীর অধিবাসী নয় তাদের
উপর জুম’আ ফরয নয় বরং ঐচ্ছিক। যেমন হাদিসে এসেছে,
ﺃﺧﺒﺮﻧﺎ ﺃﺑﻮ ﻃﺎﻫﺮ اﻟﻔﻘﻴﻪ، ﺃﻧﺒﺄ ﺃﺑﻮ ﻋﺜﻤﺎﻥ اﻟﺒﺼﺮﻱ، ﺛﻨﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ
اﻟﻮﻫﺎﺏ، ﺃﻧﺒﺄ ﻳﻌﻠﻰ ﺑﻦ ﻋﺒﻴﺪ، ﺛﻨﺎ ﺳﻔﻴﺎﻥ، ﻋﻦ ﺯﺑﻴﺪ، ﻋﻦ ﺳﻌﺪ ﺑﻦ ﻋﺒﻴﺪﺓ، ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻋﺒﺪ
اﻟﺮﺣﻤﻦ ﻗﺎﻝ: ﻗﺎﻝ ﻋﻠﻲ ﺭﺿﻲ اﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ: " ﻻ ﺟﻤﻌﺔ ﻭﻻ ﺗﺸﺮﻳﻖ ﺇﻻ ﻓﻲ ﻣﺼﺮ ﺟﺎﻣﻊ
"
সায়্যিদুনা হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, 'মিছরে জামে' ব্যতিত অন্য স্থানে জুম'আর নামাজ ও তাকবীরে তাশরীক্ব আবশ্যক নয়।
(১) মারিফাতুস সুনানি ওয়াল আছার, ৬৩৩০;
(২) আস-সুনানুল কুবরা, ৫৬১৫;
(৩) শরহে মুশকিলুল আছার, ৩/১৮৮;
(৪) "আল জুম’আতু ওয়া ফাদ্বলুহা" (লি
আবি বকর আল মারওয়াযী-৬৯)
হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী ফতহুল বারীতে
হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন, ২/৪৫৭
শাব্দিক অর্থ একত্রকারী শহর; অর্থাৎ এমন এলাকা যেখানে সরকারী প্রশাসক
থাকেন এবং সেখানে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো পাওয়া যায়। তবে এর সংজ্ঞা নিয়ে ব্যাপক
মতানৈক্য রয়েছে।
কতিপয় সাহাবী রা.-গণের আমল সম্পর্কে আল্লামা
বায়হাকী (রহ.) বলেছেন,
"ﻳﺬﻛﺮ ﻋﻦ ﺃﻧﺲ ﺑﻦ ﻣﺎﻟﻚ: ﺃﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻳﺄﺗﻲ
ﻣﻦ اﻟﺰاﻭﻳﺔ ﻋﻠﻰ ﻓﺮﺳﺨﻴﻦ ﻣﻦ اﻟﺒﺼﺮﺓ ﻟﻴﺸﻬﺪ اﻟﺠﻤﻌﺔ، ﻭﺃﺣﻴﺎﻧﺎ ﻻ. ﺃﺧﺒﺮﻧﺎ ﺃﺑﻮ ﺳﻌﻴﺪ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ
ﻋﻤﺮﻭ، ﺛﻨﺎ ﺃﺑﻮ اﻟﻌﺒﺎﺱ اﻷﺻﻢ، ﺃﻧﺒﺄ اﻟﺮﺑﻴﻊ ﻗﺎﻝ: ﻗﺎﻝ اﻟﺸﺎﻓﻌﻲ: " ﻭﻗﺪ ﻛﺎﻥ ﺳﻌﻴﺪ ﺑﻦ
ﺯﻳﺪ، ﻭﺃﺑﻮ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﻳﻜﻮﻧﺎﻥ ﺑﺎﻟﺸﺠﺮﺓ ﻋﻠﻰ ﺃﻗﻞ ﻣﻦ ﺳﺘﺔ ﺃﻣﻴﺎﻝ ﻓﻴﺸﻬﺪاﻥ اﻟﺠﻤﻌﺔ ﻭﻳﺪﻋﺎﻧﻬﺎ
" ﻗﺎﻝ: " ﻭﻳﺮﻭﻯ ﺃﻥ ﻋﺒﺪ اﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﻤﺮﻭ ﺑﻦ اﻟﻌﺎﺹ ﻛﺎﻥ ﻋﻠﻰ ﻣﻴﻠﻴﻦ ﻣﻦ اﻟﻄﺎﺋﻒ
ﻓﻴﺸﻬﺪ اﻟﺠﻤﻌﺔ ﻭﻳﺪﻋﻬﺎ
হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) হতে বর্ণিত রয়েছে, তিনি বসরা থেকে দুই ফারসাখ দূরে অবস্থিত যাভিয়া নামক স্থান থেকে জুমুআয়
উপস্থিত হওয়ার জন্য কখনো আগমণ করতেন, কখনো করতেন না।
সনদ.............শাফেয়ী রহ. বলেছেন,
"সায়ীদ ইবনে
যায়েদ ও আবু হুরায়রা রা. শাজারাহ নামক স্থানে (জামে মসজিদ থেকে) ছয় মাইলেরও কম
দূরত্বে অবস্থান করতেন। তাঁরা উভয়েই কখনো জুমুআ পড়তেন, কখনো ছেড়ে দিতেন।"
তিনি (শাফেয়ী) আরো বলেছেন,
"বর্ণিত আছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রা. তায়েফ
থেকে দুই মাইল দূরে অবস্থান করতেন। তিনি সেখান থেকেও কখনো জুমুআয় আসতেন, কখনো ছেড়ে দিতেন।" (মারিফাতুস সুনানি ওয়াল আছার, ৫৫৯৩)
উল্লেখ্য
যে,---
1. এক ফারসাখ = ৩ হাজার হাত। (মু'জামুল ফিকহ আল ইসলামী)
2. কারণ 'মিছরে জামে' থেকে দূরবর্তী এলাকার লোকদের জন্য জুমুআ
ঐচ্ছিক বিষয়। ইচ্ছা করলে আদায় করবে, নতুবা যোহর পড়ে নিবে।
অত্র আলোচনা থেকে আমরা বুঝলাম, জুমুআর নামাজ একটি স্বতন্ত্র ফরজ ইবাদাত। এটা
'মিছরে জামে' এর বালেগ ও সুস্থ বিবেকবোধসম্পন্ন প্রত্যেক
মুসলমান পুরুষদের উপর আবশ্যক হয়।
পক্ষান্তরে একেবারে পল্লী কিংবা অস্থায়ী
যাযাবরদের উপর আবশ্যক হয় না। তবে ইচ্ছা করলে তারা 'মিছরে জামে'-তে এসে জুমুআয় শরীক হতে পারে।
এ মানের একটি ফরয ইবাদাতের আবশ্যকতা কোন নফল
বা সুন্নাত কিংবা ওয়াজিব দ্বারা রহিত হতে পারে না এবং হওয়ার উদাহারণ ও শরীয়তে নেই।
সুতরাং ঈদের নামাজ পড়ার দ্বারাও জুমুআর মত
ফরজ ইবাদাত রহিত হতে পারে না অকাট্য দলীল ব্যতিরেকে। আল্লাহ তায়ালা সবাইকে দ্বীনে সহিহ বুঝ দান করুক। আমিন।
No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com