Monday, May 15, 2023

ঘূর্ণিঝড় কি? এ প্রসঙ্গে ইসলামী দৃষ্টিকোণ

 


ঘূর্ণিঝড় কি? এ প্রসঙ্গে ইসলামী দৃষ্টিকোণ

-এম এ রাজ্জাক হাওলাদার

ঘূর্ণিঝড় কি?

ঘূর্ণিঝড় বা ঘূর্ণিবাত্যা হল ক্রান্তীয় অঞ্চলের সমুদ্রে সৃষ্ট বৃষ্টি, বজ্র ও প্রচন্ড ঘূর্ণি বাতাস সংবলিত আবহাওয়ার একটি নিম্ন-চাপ প্রক্রিয়া যা নিরক্ষীয় অঞ্চলে উৎপন্ন তাপকে মেরু অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত করে। এই ধরনের ঝড়ে বাতাস প্রবল বেগে ঘুরতে ঘুরতে ছুটে চলে বলে এর নামকরণ হয়েছে ঘূর্ণিঝড়। ঘূর্ণিঝড়ের ঘূর্ণন উত্তর গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার দিকে।

ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হানলে যদিও দুর্যোগের সৃষ্টি হয়, কিন্তু এটি আবহাওয়ার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যা পৃথিবীতে তাপের ভারসাম্য রক্ষা করে। গড়ে পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় ৮০ টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। এর অধিকাংশই সমুদ্রে মিলিয়ে যায়, কিন্তু যে অল্প সংখ্যক উপকূলে আঘাত হানে তা অনেক সময় ভয়াবহ ক্ষতি সাধন করে।

https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/8/89/Cyclone_Catarina_from_the_ISS_on_March_26_2004.JPG/220px-Cyclone_Catarina_from_the_ISS_on_March_26_2004.JPG

২৬ মার্চ, ২০০৪ সালে মহাশূণ্য স্টেশন থেকে তোলা ঘুর্নিঝড় ক্যাটরিনার ছবি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে-১৪ মে ২০২৩ সালের তোলা ছবি। ঘুর্ণিঝড় “মোখা” বা “মোচা”।

https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/1/1c/Animated_hurricane.gif

উত্তর গোলার্ধে ঘূর্ণিঝড়ের রাডার চিত্র

 

 

ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির কারণ

ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য আনুষংগিক কিছু প্রভাবক কাজ করে।

https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/1/1a/Baroclinicleafphasecyclogenesiscropped.png/220px-Baroclinicleafphasecyclogenesiscropped.png

ছবিতে লাল বিন্দুর অবস্থানে প্রাথমিকভাবে অতিরিক্ত ক্রান্তীয় নিম্ন-চাপ অঞ্চল তৈরি হয়। এটি সাধারণত লম্ব সমকোণে তৈরি পাতার মতো মেঘের গঠন যা সাইক্লোজেনেসিসের (ঘূর্ণবাত সৃষ্টির ঘটনা) প্রাথমিক পর্যায়ে উপগ্রহ চিত্রে দেখা যায়। উপরের স্তরের জেট স্ট্রিম অক্ষের অবস্থান হালকা নীল রঙে দেখানো হয়েছে।

https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/a/a2/Hurricane_profile_graphic.gif/220px-Hurricane_profile_graphic.gif

উচ্চতার সাথে বায়ুর গতি ও দিকের পরিবর্তন এবং দ্রুত শীতলীকরণের ফলে নির্গত তাপ ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি করতে পারে।

সমুদ্রের তাপমাত্রা

ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য সমুদ্রের জলের তাপমাত্রা কমপক্ষে ২৬-২৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস থাকা আবশ্যক এবং একটি নির্দিষ্ট গভীরতা(কমপক্ষে ৫০ মিটার)পর্যন্ত এ তাপমাত্রা থাকতে হয়। এজন্য আমরা দেখি সাধারণত কর্কট  মকর ক্রান্তিরেখার কাছাকাছি সমুদ্র গুলিতে গ্রীষ্মকালে বা গ্রীষ্মের শেষে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। অন্য কোথাও হয় না।

নিরক্ষরেখা থেকে দূরত্ব

নিরক্ষীয় অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে পৃথিবীপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয়ে গেলে উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। এই শূন্যস্থান পূরণের জন্য মেরু অঞ্চল থেকে শীতল বায়ু উত্তর গোলার্ধে দক্ষিণে নিরক্ষরেখার দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়। কিন্তু পৃথিবীর ঘূর্ণনের প্রভাবে সৃষ্ট করিওলিস শক্তির (coriolis force) কারণে এ বায়ু সোজাসুজি প্রবাহিত না হয়ে উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে যায়এ জন্য আমরা দেখি, উত্তর গোলার্ধে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘুরতে থাকে। নিরক্ষরেখার উপর এ শক্তির প্রভাব শূন্য। কাজেই, এ অঞ্চলের তাপমাত্রা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির অনুকূলে থাকলেও করিওলিস শক্তি ন্যূনতম থাকায়নিরক্ষরেখার ০ ডিগ্রী থেকে ৫ ডিগ্রীর মধ্যে কোন ঘূর্ণিঝড় হতে দেখা যায় না। সাধারণত, নিরক্ষরেখার ১০ ডিগ্রী থেকে ৩০ ডিগ্রীর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়।

বায়ুমন্ডলের আর্দ্রতা

বায়ুমন্ডলের নিম্ন ও মধ্যস্তরে অধিক আর্দ্রতা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

বিরাজমান বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতি

ঘূর্ণিঝড় স্বতস্ফুর্তভাবে সৃষ্টি হতে পারে না। সমুদ্রে আগে থেকে বিরাজমান বিক্ষুব্ধ কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি থাকলে, ঘূর্ণিঝড় সাধারণত সেটাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। এছাড়া, পশ্চিমমুখী নিম্ন বায়ুচাপসম্পন্ন পূবালী স্রোত (easterly waves), আবহাওয়ায় উচ্চতার সাথে সাথে বায়ুর গতি  দিকের স্বল্প পরিবর্তন এবং দ্রুত শীতলীকরণের ফলে নির্গত তাপ ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য সহায়ক।

ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির অঞ্চল ও সময়কাল

ঘূর্ণিঝড় উৎপন্ন অঞ্চল হিসেবে ক্রান্তীয় অঞ্চলের সমুদ্রগুলিকে সাতটি বেসিন বা অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ও হুঁশিয়ারী প্রদানের জন্য বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার অধীনে বিভিন্ন দেশের আবহাওয়া বিভাগ কাজ করছে। নিচে সাতটি বেসিনের নাম এবং সেখানে তদারককারী সংস্থাগুলোর তালিকা দেয়া হলঃ

 

 

বেসিন এবং তদারককারী সংস্থা

বেসিন

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার অধীনস্থ আবহাওয়া বিভাগ

উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর

ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার

উত্তর পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগর

ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার এবং সেন্ট্রাল প্যাসিফিক হারিকেন সেন্টার

উত্তর পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর

জাপান আবহাওয়া সংস্থা

উত্তর ভারত মহাসাগর

প্যানেল দেশসমূহঃ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা,মায়ানমার ও থাইল্যান্ড আবহাওয়া বিভাগ

দক্ষিণ পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর

জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার

দক্ষিণ পূর্ব ভারত মহাসাগর

ব্যুরো অফ মিটিওরলজি (অস্ট্রেলিয়া)

দক্ষিণ পশ্চিম ভারত মহাসাগর

মিটিও ফ্রান্স

প্রতিটি বেসিনে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির মৌসুম ভিন্ন ভিন্ন। উত্তর আটলান্টিকে ঘূর্ণিঝড় মৌসুম শুরু হয় জুনের ১ তারিখ এবং শেষ হয় নভেম্বর ৩০ তারিখে। বাংলাদেশ উপকূলে মূলতঃ বর্ষাকালের শুরুতে এপ্রিল-মে মাসে এবং বর্ষার শেষে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ দেখা দেয়। তবে বর্ষাকালেও বিক্ষিপ্তভাবে ঘূর্ণিঝড় হতে দেখা যায়।

ঘূর্ণিঝড়ের শ্রেণীবিভাগ

সাতটি বেসিনেই বাতাসের গতিবেগ অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়কে কতগুলো শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। আটলান্টিক এলাকার জন্য, প্রাথমিক অবস্থায় বাতাসের গতিবেগ যখন ঘণ্টায় ৬২ কি.মি.-র নিচে থাকে, তখন একে শুধু নিম্নচাপ (Tropical depression) বলা হয়। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কি.মি.-এ উন্নীত হলে এটিকে একটি নাম দেওয়া হয় এবং ঘণ্টায় ৬২ কি.মি. থেকে ১১৭ কি.মি. ব্যবধানে এটিকে একটি ঝড় বা Tropical storm বলা হয়। বাতাসের গতিবেগ যখন ঘণ্টায় ১১৭ কি.মি.-এর বেশি হয়, তখন এটি হারিকেন পর্যায়ে উন্নীত হয়। বাতাসের তীব্রতা এবং ধ্বংসক্ষমতা অনুযায়ী হারিকেনকে আবার এক থেকে পাঁচ মাত্রার ৫ টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। আবিষ্কারকের নামানুসারে এটি সাফির-সিম্পসন স্কেল নামে পরিচিত।

বাতাসের তীব্রতা এবং ধ্বংসক্ষমতা অনুযায়ী বাংলাদেশ ও ভারতে ঘূর্ণিঝড়কে চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সৃষ্ট বাতাসের গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হয়, তাকে ঘূর্ণিঝড় বা ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বলা হয়। গতিবেগ যদি ৮৯-১১৭ কিলোমিটার হয়, তখন তাকে তীব্র ঘূর্ণিঝড় বা সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্মবলা হয়। আর বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটার হয়, তখন সেটিকে হ্যারিকেন গতিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড় বা ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্মবলা হয়। গতিবেগ ২২০ কিলোমিটার বা তার বেশি হলে তাকে সুপার সাইক্লোনবলা হয়।

সাইক্লোন, হারিকেন ও টাইফুন

শুনতে তিনটি পৃথক ঝড়ের নাম মনে হলেও আসলে এগুলো অঞ্চলভেদে ঘূর্ণিঝড়েরই ভিন্ন ভিন্ন নাম। সাধারণভাবে ঘূর্ণিঝড়কে সাইক্লোন বা ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বলা হয়। সাইক্লোন শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ কাইক্লোস (kyklos) থেকে, যার অর্থ বৃত্ত বা চাকা। এটা অনেক সময় সাপের বৃত্তাকার কুন্ডলী বুঝাতেও ব্যবহৃত হয়। ১৮৪৮ সালে হেনরি পিডিংটন তার সেইলরস হর্ণ বুক ফর দি লঅফ স্টর্মস(Sailor's horn book for the law of storms) বইতে প্রথম সাইক্লোন শব্দটি ব্যবহার করেন। তারপর থেকেই ঘূর্ণিঝড় বুঝাতে সাইক্লোন শব্দের ব্যবহার শুরু হয়।

আটলান্টিক মহাসাগর এলাকা তথা আমেরিকার আশেপাশে ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতিবেগ যখন ঘণ্টায় ১১৭ কি.মি.-এর বেশি হয়, তখন জনগণকে এর ভয়াবহতা বুঝাতে হারিকেন শব্দটি ব্যবহার করা হয়। মায়া দেবতা হুরাকান- যাকে বলা হত ঝড়ের দেবতা, তার নাম থেকেই হারিকেন শব্দটি এসেছে। তেমনিভাবে,প্রশান্ত মহাসাগর এলাকা তথা চীনজাপানের আশেপাশে হারিকেন- এর পরিবর্তে টাইফুন শব্দটি ব্যবহূত হয়, যা ধারণা করা হয় চীনা শব্দ টাই-ফেং থেকে এসেছে, যার অর্থ প্রচন্ড বাতাস। অনেকে অবশ্য মনে করেন ফার্সি বা আরবি শব্দ তুফান থেকেও টাইফুন শব্দটি আসতে পারে।

·         আটলান্টিক হারিকেন

আটলান্টিক হারিকেন

 

·         প্রশান্ত মহাসাগরীয় হারিকেন

প্রশান্ত মহাসাগরীয় হারিকেন

 

·         প্রশান্ত মহাসাগরীয় টাইফুন

প্রশান্ত মহাসাগরীয় টাইফুন

 

·         উত্তর ভারত মহাসাগরীয় সাইক্লোন

উত্তর ভারত মহাসাগরীয় সাইক্লোন

 

·         দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় সাইক্লোন

দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় সাইক্লোন

 

·         অস্ট্রেলিয়ান অঞ্চলের সাইক্লোন

অস্ট্রেলিয়ান অঞ্চলের সাইক্লোন

 

·         দক্ষিণ-পশ্চিম ভারত মহাসাগরীয় সাইক্লোন

দক্ষিণ-পশ্চিম ভারত মহাসাগরীয় সাইক্লোন

 

 

 

 

 

 

 

 

ঘূর্ণিঝড়ের সময় রাসূল (সা.) যা করতে বলেছেন

ঘূর্ণিঝড়ের সময় রাসূল (সা.) যা করতে বলেছেনছবি: সংগৃহীত- ১৪ মে ২০২৩

আজ ১৪মে ২০২৩ শক্তিশালী মোখার আতঙ্ক:

৪৩ বছর পর সবচেয়ে শক্তিশালী আঘাত বয়ে আনছে ফনি বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অতিপ্রবল এ ঘূর্ণিঝড় আগামীকাল শুক্রবার বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ অতিক্রম করার সময় এটির গতি হবে ঘণ্টায় ১৫০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার। ধেয়ে আসা অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ফনির কারণে হতে পারে জলোচ্ছ্বাসও। সমুদ্রবন্দরগুলোতে সাত নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

প্রাকৃতিক এ মহাবিপর্যয়ে ইতিমধ্যে দেশব্যাপী আতংক শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে সমুদ্র উপকূলে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। প্রাকৃতিক এমন দুর্যোগ-দুর্ঘটনা আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছারই বহিঃপ্রকাশ।  

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَالْفُلْكِ الَّتِي تَجْرِي فِي الْبَحْرِ بِمَا يَنْفَعُ النَّاسَ وَمَا أَنْزَلَ اللَّهُ مِنَ السَّمَاءِ مِنْ مَاءٍ فَأَحْيَا بِهِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا وَبَثَّ فِيهَا مِنْ كُلِّ دَابَّةٍ وَتَصْرِيفِ الرِّيَاحِ وَالسَّحَابِ الْمُسَخَّرِ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَعْقِلُونَ

 

নিশ্চয়ই আসমান ও যমীনের সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের বিবর্তনে এবং নদীতে নৌকাসমূহের চলাচলে মানুষের জন্য কল্যাণ রয়েছে। আর আল্লাহ্ তা'আলা আকাশ থেকে যে পানি নাযিল করেছেন, তা মৃত যমীনকে সজীব করে তুলেছেন এবং তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সবরকম জীব-জন্ত্র আর আবহাওয়া পরিবর্তনে এবং মেঘমালার যা তাঁরই হুকুমের অধীনে আসমান ও যমীনের মাঝে বিচরণ করে, নিশ্চই সে সমস্ত বিষয়ের মাঝে নিদর্শন রয়েছে বুদ্ধিমান সম্প্রদায়ের জন্যে। (সূরা বাকারা-২:১৬৪)

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,

ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُمْ بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ

মানুষের গুনাহ ও কৃতকর্মের কারণেই এ ধরনের বিপর্যয় ঘটে থাকে। সমাজে অন্যায়-অনাচার বেড়ে গেলেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের বেশি আশঙ্কা থাকে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, জলস্থলে বিপর্যয় মানুষের কৃতকর্মের ফল। ( সুরা রুম-৩০: ৪১)  

তাই বিভিন্ন হাদিসে রাসূল (সা.) প্রাকৃতিক দুর্যোগের অনেক কারণ উল্লেখ করেছেন।  রাসূল (সা.) নিজেও উম্মতের ওপর এসব দুর্যোগের ব্যাপারে শঙ্কিত ছিলেন।

এই উম্মতকে যেন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দিয়ে একসঙ্গে ধ্বংস করা না হয় এ জন্য রাসূল (সা.) আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন।  

প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিলে রাসূল (সা.) বিচলিত হয়ে পড়তেন। আল্লাহর শাস্তির ভয় করতেন। বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফার করতেন এবং সাহাবাদের তা করার নির্দেশ দিতেন। ঝড়-তুফান শুরু হলে রাসূল (সা.) মসজিদে চলে যেতেন। নফল নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।  

এ জন্য ঘূর্ণিঝড় ফনির আগমনে আমাদেরও এ আমলগুলোর প্রতি যত্মবান হতে হবে। বিশেষত অতীতের সব গুনাহ ও ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে।  পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে রাসূল (সা.) কয়েকটি দোয়া শিখিয়েছেন।   

জোরে বাতাশ প্রবাহিত হলে যে দোয়া পড়তে হবে

ﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﺳْﺄَﻟُﻚَ ﺧَﻴْﺮَﻫَﺎ، ﻭَﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ﺷَﺮِّﻫَﺎ

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট এর কল্যাণটাই কামনা করি। এবং আপনার নিকট এর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই।
(আবূ দাউদ ৪/৩২৬, নং ৫০৯৯; ইবন মাজাহ্ ২/১২২৮, নং ৩৭২৭) 

মেঘের গর্জন হলে যে দোয়া পড়তে হবে-

হজরত আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর (রা.) যখন মেঘের গর্জন শুনতেন তখন কথা বলা বন্ধ করে দিতেন এবং পবিত্র কোরআনের এই আয়াত তিলাওয়াত করতেন-

سُبْحَانَ الَّذِي يُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ، والـمَلائِكَةُ مِنْ خِيْفَتِهِ

অর্থ: পাক-পবিত্র সেই মহান সত্তা- তাঁর প্রশংসা পাঠ করে বজ্র এবং সব ফেরেশতা। 

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেঘের গর্জন শুনলে বা বিদ্যুতের চমক দেখলে সঙ্গে সঙ্গে এই দোয়া করতেন-

اللَّهُمَّ لا تَقْتُلْنَا بِغَضَبِكَ ، وَلا تُهْلِكْنَا بِعَذَابِكَ ، وَعَافِنَا قَبْلَ ذَلِكَ

অর্থ: হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে তোমার ক্রোধের কারণে মেরে ফেলো না আর তোমার আযাব দিয়ে আমাদের ধ্বংস করো না। বরং এর আগেই আমাদেরকে ক্ষমা ও নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করে নাও। (তিরমিজি)

ঝড় বা বাতাশ থেকে বাঁচতে যে দোয়া পড়তে হবে-

ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﺳْﺄَﻟُﻚَ ﺧَﻴْﺮَﻫَﺎ، ﻭَﺧَﻴْﺮَ ﻣَﺎ ﻓِﻴﻬَﺎ، ﻭَﺧَﻴْﺮَ ﻣَﺎ ﺃُﺭْﺳِﻠَﺖْ ﺑِﻪِ، ﻭَﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ﺷَﺮِّﻫَﺎ، ﻭَﺷَﺮِّ ﻣَﺎ ﻓِﻴﻬَﺎ، ﻭَﺷَﺮِّ ﻣَﺎ ﺃُﺭْﺳِﻠَﺖْ ﺑِﻪِ

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করি এর কল্যাণ, এর মধ্যকার কল্যাণ এবং যা এর সাথে প্রেরিত হয়েছে তার কল্যাণ। আর আমি আপনার আশ্রয় চাই এর অনিষ্ট থেকে, এর ভেতরে নিহিত অনিষ্ট থেকে এবং যা এর সঙ্গে প্রেরিত হয়েছে তার অনিষ্ট থেকে   (বুখারী- ৪/৭৬, ৩২০৬ ও ৪৮২৯)

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সব গুনাহ ক্ষমা করে ঘূর্ণিঝড় ফনিসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে নিরাপদ রাখুন। আমিন।

No comments:

Post a Comment

razzakhowlader59@gmil.com