Saturday, October 21, 2023

মুসলিম মুজাহিদদের বিজয় সুনিশ্চিত (শহীদের সম্মান)

 


মুসলিম মুজাহিদদের বিজয় সুনিশ্চিত

(শহীদের সম্মান)

-এম এ রাজ্জাক হাওলাদার

শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না যুগে যুগে ইসলামের জন্য যারা দিয়েছে প্রাণ তাদের কথা মানুষ স্মরণ রাখবে চিরকাল। যুগের আবর্তের সাথে সাথে যুদ্ধ বিগ্রহের নানা কৌশল তৈরী হয়েছে। তাইতো মর্দ্দে মুজাহীদ সকল সময়ই দিয়ে গেছে প্রাণ। আজ সারা বিশ্বে বেজে উঠেছে যুদ্ধের দামামা, হয়েছে আগুয়ান মুসলিম সেনারা, প্রাণ দিবে তবুও যেতে দিবেনা মুসলিম জাতীর সম্মান। সেই মূলমন্ত্র সামনে নিয়ে হয়েছে আগুয়ান “গাজাসহ, ফিলিস্তিনের মুসলমান”ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর সাম্প্রতিক বর্বরোচিত হামলায় ফিলিস্তিনি নাগরিকদের মৃত্যুতে সারা বিশ্বের মুসলিম আজ মর্মাহত। প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, টিকে থাকা লড়াই তাদের সম্বল।

শহীদের সম্মান:

شَهَادَةُ শব্দটি একটি আরবী শব্দ  ش ـ ه ـ د (شهد) শব্দ থেকে তার উৎপত্তি। এ শব্দ থেকেই নির্গত হয়েছে শহীদ, যার অর্থ দাঁড়ায় যিনি উপস্থিত হয়েছেন, যিনি দেখেছেন এবং জেনেছেন, যিনি স্বচক্ষে দেখে কিংবা অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখে উপলদ্ধি করেছেন, সেই ব্যক্তি যিনি দেখা, জানা ও উপলদ্ধি করা বিষয়ের বিবরণ বা সাক্ষ্য দিচ্ছেন। যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করা বা সমুন্নত রাখার জন্যে সংগ্রাম করে নিহত হয় সেই শহীদ। তাইতো তার সম্মান সুউচ্চে, আল্লাহ আয়ালা বলেন,

وَلَا تَقُولُوا لِمَنْ يُقْتَلُ فِي سَبِيْلِ اللَّهِ أَمْوَاتٌ بَلْ أَحْيَاءٌ وَلَكِنْ لَا تَشْعُرُونَ

“আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়, তাদেরকে মুত বলো না। প্রকৃত পক্ষে তারা জীবিত। কিন্তু তাদের জীবন সম্পর্ তোমরা অনুভব করতে পার না।” (সূরা বাকারা-২:১৫৪)

وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيْلِ الَهِ أَمْوَاتًا بَلْ أَحْيَاءٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ

“যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদের মৃত মনে করো না। প্রকৃতপক্ষে তারা জীবিত এবং আল্লাহর নিকট থেকে রিযিক প্রাপ্ত।” (সূরা আল ইমরান-৩:১৬৯)

فَإِذَا لَقِيتُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا فَضَرْبَ الرِّقَابِ حَتَّى إِذَا أَثْخَنْتُمُوهُمْ فَشُدُّوا الْوَثَاقَ فَإِمَّا مَنًّا بَعْدُ وَإِمَّا فِدَاءً حَتَّى تَضَعَ الْحَرْبُ أَوْزَارَهَا ذَلِكَ وَلَوْ يَشَاءُ اللَّهُ لَانْتَصَرَ مِنْهُمْ وَلَكِنْ لِيَبْلُوَ بَعْضَكُمْ بِبَعْضٍ وَالَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَلَنْ يُضِلَّ أَعْمَالَهُمْ (4) سَيَهْدِيهِمْ وَيُصْلِحُ بَالَهُمْ (5) وَيُدْخِلُهُمُ الْجَنَّةَ عَرَّفَهَا لَهُمْ (6) يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنْ تَنْصُرُوا اللَّهَ يَنْصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ

“যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়, আল্লাহ কখনো তাদের আমলসমূহ বিনষ্ট করবেন না। তিনি তাদের পথ দেখাবেন এবং তাদের অবস্থা সুসংহত করে দেবেন। আর সেই জান্নাতে তাদের দাখিল করবেন, যার সম্পর্কে পূর্বেই তাদের অবহিত করেছেন।” (সূরা মুহাম্মাদ-৪৭:৪-৬)

 أَتَقْتُلُونَ رَجُلًا أَنْ يَقُولَ رَبِّيَ اللَّهُ  

“তোমরা কি একজন লোককে শুধু এ কারণে হত্যা করবে যে, সে বলেছে, আল্লাহ আমার রব?” (সূরা মুমিন-৪০:২৮)

 

মুসলিম মুজাহিদদের বিজয় সুনিশ্চিত ইনশাআল্লাহঃ

 

আপাতদৃষ্টিতে ফিলিস্তিনী হামাসের মুজাহিদের সংখ্যা মাত্র ৬০ হাজারঅপরদিকে ইজরাইলের ৫ লাখেরও বেশি প্রশিক্ষিত সর্বাধুনিক সমরাস্ত্রসজ্জিত সৈন্য। যদি ৬ লাখ ধরা হয় তাহলে হামাসের প্রতি ১০ জন মুজাহিদের বিপরীতে ইজরাইলের সৈন্য হয় ১০০ জন। অর্থাৎ একজন মুজাহিদকে ১০জন ইজরাইলী সৈন্যের মোকাবিলা করতে হবে। এতো অসম সংখ্যায় মুজাহিদদের বিজয় কিভাবে সম্ভব?  তাইতো মহান আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন:

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ حَرِّضِ الْمُؤْمِنِينَ عَلَى الْقِتَالِ ۚ إِنْ يَكُنْ مِنْكُمْ عِشْرُونَ صَابِرُونَ يَغْلِبُوا مِائَتَيْنِ ۚ وَإِنْ يَكُنْ مِنْكُمْ مِائَةٌ يَغْلِبُوا أَلْفًا مِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لَا يَفْقَهُونَ

“হে নবী, আপনি মুসলমানগণকে উৎসাহিত করুন জেহাদের জন্য। তোমাদের মধ্যে যদি বিশ জন দৃঢ়পদ মুজাহিদ থাকে, তবে জয়ী হবে দুশর মোকাবেলায়। আর যদি তোমাদের মধ্যে থাকে একশ লোক, তবে জয়ী হবে হাজার কাফেরের উপর থেকে তার কারণ ওরা জ্ঞানহীন।” (সূরা আল-আনফাল-৮:৬৫)

উদ্ধৃত আয়াতে কারীমা থেকে সংখ্যাতত্বটি যেন একেবারে মিলে গেছে। ১০ জন কাফেরের মোকাবিলায় একজন মুজাহিদের বিজয়।  মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা-"হে বিজয়দাতা!ফিলিস্তিনী মুজাহিদদের সংখ্যা তোমার ঘোষিত সংখ্যার সাথে মিলে গেছে; এখন বিজয় তোমার কুদরতী কব্জায়। তুমি তোমার গায়েবী মদদ দিয়ে মুজাহিদদের বিজয় তরান্বিত করে মুসলমানদের প্রথম কিবলা “মসজিদুল আকসা-কে” মুক্ত করে দাও। স্বাধীন সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কায়েম করে দাও। তাকাব্বাল বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমীন।"

ইনশাআল্লাহ ফিলিস্তিনী মুসলিম ভাইদের বিজয় সুনিশ্চিত। এ প্রসঙ্গে মুসনাদে আহমাদের এই হাদীসটিতে সে ইঙ্গিত সুস্পষ্ট করেছেন

عَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي عَلَى الدِّينِ ظَاهِرِينَ لَعَدُوِّهِمْ قَاهِرِينَ لَا يَضُرُّهُمْ مَنْ خَالَفَهُمْ إِلَّا مَا أَصَابَهُمْ مِنْ لَأْوَاءَ حَتَّى يَأْتِيَهُمْ أَمْرُ اللهِ وَهُمْ كَذَلِكَ ". قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ وَأَيْنَ هُمْ؟ قَالَ: " بِبَيْتِ الْمَقْدِسِ وَأَكْنَافِ بَيْتِ الْمَقْدِسِ " (مسند احمد ــ 22320)

হযরত আবি উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান- আমার উম্মতের একটি দল দ্বীনের উপর তাদের শত্রুদের উপর বিজয়ী হবে। তাঁরা শত্রুদের প্রতি কঠোর। তাদেরকে তাদের শত্রুরা কোনই ক্ষতি করতে পারবেনা। এমনকি কিয়ামত এসে যাবে; তারা সে অবস্থায়ই থাকবে। সাহাবায়ে কিরাম (রা.) প্রশ্ন করলেন- তারা কোথাকার ইয়া রাসূলাল্লাহ? নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন- বায়তুল মুকাদ্দাস এবং বায়তুল মুকাদ্দাসের আশেপাশের বাসিন্দা (মুসনাদে আহমাদ-২২৩২০)

শহীদ ব্যক্তিদের তামান্না:

عَنْ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَا أَحَدٌ يَدْخُلُ الجَنَّةَ يُحِبُّ أَنْ يَرْجِعَ إِلَى الدُّنْيَا، وَلَهُ مَا عَلَى الأَرْضِ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا الشَّهِيدُ، يَتَمَنَّى أَنْ يَرْجِعَ إِلَى الدُّنْيَا، فَيُقْتَلَ عَشْرَ مَرَّاتٍ لِمَا يَرَى مِنَ الكَرَامَةِ» (بخارى ــ2817)

হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.)হতে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, “বেহেশতে প্রবেশের পরে একমাত্র শহীদ ব্যতীত আর কেউ দুনিয়াতে ফিরে আসতে চাবে না, অথচ তার জন্য দুনিয়ার সবকিছুই নিয়ামত হিসেবে থাকবে। সে দুনিয়ায় ফিরে এসে দশবার শহীদি মৃত্যুবরণের আকাংখা পোষণ করবে। কেননা, বাস্তবে সে শাহাদাতের মযাদা দেখতে পাবে।” (সহীহ বুখারী-২৮১৭ শামে)

 

শেষকথা:

    শহীদের সম্মানের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,

قِيْلَ ادْخُلِ الْجَنَّةَ قَالَ يَا لَيْتَ قَوْمِيْ يَعْلَمُونَ

“ব্যক্তি(নিহত হবার সাথে সাথে)তাকে বলা হলো, প্রবেশ করো জান্নাতে। সে বললো, হায়, আমার জাতির লোকেরা যদি (আমার এ সম্মান সম্পর্কে) জানতে পারতো।” (সূরা ইয়াসীন-৩৬:২৬)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَلَئِنْ قُتِلْتُمْ فِي سَبِيْلِ اللهِ أَوْ مُتُّمْ لَمَغْفِرَةٌ مِنَ اللهِ وَرَحْمَةٌ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ

“তোমরা যদি আল্লাহর পথে নিহত (শহীদ) হও কিংবা মরে যাও তবে আল্লাহর যে রহমত ও দান তোমাদের নসীব হবে, তা এইসব (দুনিয়ারদার) লোকেরা যা কিছু সঞ্চয় করেছে তা থেকে অনেক উত্তম।” (সুরা আল-ইমরান-৩:১৫৭)

সুতরাং প্রিয় সাথীরা আমরাও যাতে ঐ ব্যক্তির ন্যায়ে কিয়ামতের ময়দানে আফসুস না করি এজন্য আসেই তৈরী হতে হবে।

 

No comments:

Post a Comment

razzakhowlader59@gmil.com