রমজানের পূর্ব প্রস্তুতি
-এম এ রাজ্জাক হাওলাদার
শুরুকথা:
রোজা ইসলামের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ব। সকল নবীগণের শরীয়তে রোজা ফরজ ছিল। উম্মমে মোহাম্মদীর উপর রমজানের রোজা ফরজ হয় দ্বিতীয় হিজরীতে। হিজরি সনের নবম মাস রমজান। রমজান মাস ইবাদতের ‘বসন্তকাল’। আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের বিশেষ মৌসুম। বছর ঘুরে সেই রমজান আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে। এ মাসে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য অর্জন করাই হলো রমজানের অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
রমজানের অবিরত বরকত ও কল্যাণ পেতে হলে আগে থেকেই যথাযথ
প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। কেননা যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজের ভালো প্রস্তুতি মানেই
ওই কাজটির অর্ধেক পূর্ণতা ও সফলতা অর্জিত হয়ে যায়।
মুসলিম উম্মাহর দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র রমজান মাস। আর মাত্র
কয়েক দিন পরেই শুরু হবে রমজান। এখনই রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য বেষ কিছু বিষয়
বাস্তবায়ন করা খুবই জরুরি।
মুমিন মুসলমানকে মনে রাখতে হবে, রমজান হলো কোরআন নাজিলের মাস, সংযমের মাস এবং ত্যাগের মাস। এ মাস ইবাদত-বন্দেগির মাস।
আল্লাহর রহমত বরকত মাগফেরাত নাজাত ও যাবতীয় কল্যাণ লাভের মাস। তাই এ মাসের আগমনের
আগে মুমিনের জন্য বিশেষ কিছু করণীয় রয়েছে। সেজন্য এখন থেকে প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর কোনো বান্দা যে কোনো ভালো কাজ বা আমল যদি
যথাযথভাবে উত্তম উপায়ে করে;
তবে সে আমল বা কাজ আল্লাহ
তাআলা পছন্দীয় হিসেবে গ্রহণ করেন।’ (তাবারানি)
হযরত মুয়াল্লা ইবনে ফজল (রাহঃ)
নামে এক বিখ্যাত তাবেয়ি বলেন, ‘সালাফে
সালেহিনগণ রমজানের ৬মাস আগে থেকে আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন- 'হে আল্লাহ! আপনি আমাদের রমজান পর্যন্ত হায়াত দান করেন। আর
রমজান শেষে তারা বাকি ৬মাস দোয়া করতেন- হে আল্লাহ! রমজানে যা আমল করেছি; তা আপনি কবুল করে নিন।
রমজান মাস আগমনের পূর্বে প্রস্তুতি ও
করণীয়গুলো কী কী?
রমজান মাস আগনের পূর্বে আমাদের
প্রস্তুতি নিতে হয় আর অনেকগুলো করণীয় বিষয় থাকে তা নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১.সামাজিক প্রস্তুতি:
সামাজিক পরিমণ্ডলে রমজানের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রতিবেশী
ও সমাজের লোকজন একে অন্যের সঙ্গে দেখা হলে রমজানের বিভিন্ন ফজিলত ও ইতিবাচক দিক
নিয়ে আলোচনা করে। এ ব্যাপারে অন্যকে রোজার বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করা চাই। রমজানের
পবিত্রতা রক্ষায় এ মাস আসার আগেই সামাজিকভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে, যেন সমাজটাও হয় ইসলামবান্ধব।
২.পরিবারিক প্রস্তুতি:
পরিবারের সদস্যদের রমজানের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে রোজার
ফজিলতের হাদিস ও এর বিভিন্ন উপকারিতা তুলে ধরে ঘরোয়া তালিম হতে পারে। এ ব্যাপারে
মাতা-পিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
৩.গৃহিণীদের প্রস্তুতি :
সাহরি ও ইফতার ব্যবস্থাপনা নিশ্চয়ই সওয়াবের কাজ। তবে
এগুলোতে লিপ্ত থেকে যেন নিজের ইবাদতে ব্যাঘাত না ঘটে, সেদিকে প্রত্যেক গৃহিণীর খেয়াল রাখা উচিত।
৪.গুনাহ ছেড়ে দেওয়ার
প্রস্তুতি :
পরিশুদ্ধ মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে দৃঢ় সংকল্প করতে
হবে। গুনাহগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোর অভ্যাস ছেড়ে দিতে হবে, গুনাহের উপায়-উপকরণগুলোও দূর করে ফেলতে হবে।
৫.চাকুরিজীবীদের
প্রস্তুতি :
রমজান তো ভালো মানুষ হওয়া ও দায়িত্বশীল মানুষ হওয়ার ট্রেনিং
কোর্স। অনৈতিক অভ্যাস থাকলে তা পরিহার করা, সময়কে কাজে লাগানো, কুরআনসহ বিভিন্ন ইসলামিক অ্যাপস চালু করে তা কাজে লাগানো
এবং ইসলামিক আয়োজন রাখা।
৬.ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতি
:
বেশি সওয়াব অর্জনের বিপরীতে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা
প্রস্তুতি নিতে থাকেন গণমানুষকে ঠকিয়ে বেশি লাভ করার। ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যের
প্রশিক্ষণের মাস রমজানে ভ্রাতৃত্বঘাতী ও নির্মমতার চর্চা করেন তাঁরা। মজুদকরণ বা
অপকৌশলে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে ‘বড়লোক’ হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হন। তাদের প্রতি আল্লাহ তাআলা ক্ষুব্ধ
হন এবং সম্পর্ক ছিন্ন করেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ৪০ দিন খাদ্য মজুদ রাখল সে আল্লাহর কাছ থেকে
নিঃসম্পর্ক হয়ে গেল,
আল্লাহ নিঃসম্পর্ক হয়ে গেলেন
তার থেকে। (মুসনাদে আহমাদ : ৮/৪৮১)
মজুদদারির মাধ্যমে কোটিপতি হলেও তার জন্য দারিদ্র্য অবধারিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কেউ যদি খাদ্য গুদামজাত করে কৃত্রিম উপায়ে সংকট তৈরি করে, আল্লাহ তাকে দুরারোগ্য ব্যাধি ও দারিদ্র্য দ্বারা শাস্তি দেন। (ইবনে মাজাহ : ২/৭২৯)
রমাদানের জন্য আমাদের পূর্ব-প্রস্তুতি
(১)শাবানের চাঁদের হিসাব
রাখা:
মহানবী (সাঃ) আমাদেরকে রমাদান মাস নির্ভুলভাবে জ্ঞাত হওয়ার জন্য
শাবান মাসের হিসাব রাখার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন, তিনি বলেছেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ
عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أحصوا
هِلَال شعْبَان لرمضان» (رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ)
রমদানের (তারিখ
সঠিকভাবে জানার) জন্য তোমরা শাবান মাসকে ভালভাবে গণনা কর।” (তিরমিযী-৬৯০) মহানবী (সাঃ)
নিজেও শাবান মাসের অধিক হারে হিসাব রাখতেন। হাদীসে আছে,
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا
قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَحَفَّظُ مِنْ
شَعْبَانَ مَالَا يَتَحَفَّظُ مِنْ غَيْرِهِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) যত গুরুত্ব সহকারে শাবান মাসের হিসাব রাখতেন ততটা হিসাব অন্য মাসে রাখতেন না। (আবূ দাঊদ; মিশকাত- ১৯৮০)
(২)রমাদান মাসের চাঁদ দেখার
জন্য প্রস্তুত থাকা:
মহানবী (সাঃ) সন্দেহ-সংশয় থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য রমাদান ও শাওয়াল
মাসের চাঁদ দেখা এবং আকাশ (মেঘ, ধুঁয়া ও জলীয়
বাষ্প ইত্যাদি দ্বারা) আচ্ছন্ন থাকলে আরবী মাসটিকে ত্রিশ দিন পূর্ণ করার নির্দেশ দিয়েছেন,
عَنْ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ
اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَصُومُوا حَتَّى تَرَوُا
الْهِلَالَ وَلَا تُفْطِرُوا حَتَّى تَرَوْهُ فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَاقْدِرُوا
لَهُ»(مُتَّفق عَلَيْهِ)
তোমরা (রমদানের)
চাঁদ না দেখা পর্যন্ত রোজা রাখবে না এবং (শাওয়ালের) চাঁদ না দেখা পর্যন্ত রোজা সমাপ্তও
করবে না। যদি চাঁদ তোমাদের থেকে গোপন (আচ্ছন্ন) থাকে তবে উহাকে তোমরা (ত্রিশদিন) পূর্ণ
কর। (বুখারী; মুসলিম; মিশকাত-১৯৬৯)
(৩)সন্দেহের দিন রোযা না
রাখা:
যে দিন শাবানের শেষ দিন অথবা রমদানের প্রথম দিন হওয়ার ব্যপারে
সন্দেহ থাকে সেদিনকে আরবীতে يوم الشك তথা সন্দেহের দিন বলা হয়। সেদিনে যারা রোজা রাখবে তাদেরকে সাবধান
করে দিয়ে মহানবী (সাঃ) বলেছেন,
عَنْ عَمَّارِ بْنِ يَاسِرٍ رَضِيَ
اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: «مَنْ صَامَ الْيَوْمَ الَّذِي يُشَكُّ فِيهِ فَقَدَ
عَصَى أَبَا الْقَاسِمِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ» (رَوَاهُ أَبُو
دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ والدارمي)
যে ব্যক্তি
সন্দেহের দিন রোজা রাখল, সে যেন আবুল
কাসেমের (নবীজির) বিরুদ্ধাচরণ করল। (আবূ দাঊদ; তিরমিযী; নাসাঈ; ইবন মাজাহ; দারেমী; মিশকাত-১৯৭৭)
(৪)চাঁদ দেখে দু‘আ পড়া:
রাসূলুল্লাহ(সাঃ)যখন চাঁদ দেখতেন তখন নিম্নের দু‘আটি পাঠ করতেন,
عَن طلحةَ بنِ عبيدِ اللَّهِ أَنَّ
النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا رَأَى الْهِلَالَ
قَالَ: «اللَّهُمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالْأَمْنِ وَالْإِيمَانِ وَالسَّلَامَةِ
وَالْإِسْلَامِ رَبِّي وَرَبُّكَ اللَّهُ» (رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ)
হে আল্লাহ!
আমাদেরকে নিরাপত্তা, ঈমান, শান্তি ও ইসলামের চাঁদ দেখাও। হে চন্দ্র! আমার ও তোমার প্রভু
আল্লাহ। (তিরমিযী; মিশকাত-২৪২৮)
(৫)শাবানের শেষার্ধে রোজা
রেখে শক্তি ব্যয় না করা:
শাবানের রোজার যতই ফজীলত থাকুক না কেন তা কিন্তু নফল, আর রমদানের রোজা হচ্ছে ফরয। শাবান মাসে নফল রোজা বেশি করে রেখে
এমন ক্লান্ত হওয়া উচিত নয় যাতে রমদানের ফরয রোজা রাখা কষ্টকর হয়ে যায়। তাই মহানবীর
নির্দেশনা হল, তারা যেন অর্ধ
শাবানের পর আর রোজা না রাখে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)
বলেছেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ
رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا بَقِيَ نِصْفٌ مِنْ
شَعْبَانَ فَلاَ تَصُومُوا. (ترمذى)
আবূ হুরায়রা
(রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)বলেছেন, যখন শাবানের শেষার্ধ বাকী থাকবে তখন তোমরা আর রোজা রাখবে না। (তিরমিযী-৭৩৮)
(৬)যথাসাধ্য নিজেকে (দুনিয়াবী
কাজ থেকে) ঝামেলামুক্ত করা:
হযরত
আনাছ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, সাহাবায়ে কেরামগণ
শাবানের চাঁদ দেখার পর বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করতেন, ধনী লোকেরা তাদের সম্পদের যাকাত আদায় করতেন যাতে দরিদ্র লোকেরা
উপকৃত হতে পারে। বিচারকগণ সাজার উপযোগী অপরাধীদেরকে শাস্তি প্রদান করতেন এবং অবশিষ্টদেরকে
মুক্ত করে দিতেন। ব্যবসায়ীগণ তাদের উপর অর্পিত ঋণ পরিশোধ করতেন। (মাসায়েলে শবে বরাত
আওর শরে ক্বদর, পৃ. ১৪)
(৭)রোজা সম্পর্কীয় মাসআলা-মাসায়েল
ও দু‘আ-কালাম স্মরণ করা:
দীর্ঘ এক বছর পর মাহে রমাদান আগমনের কারণে রোজা সম্পর্কীয় মাসআলা-মাসায়েল
ও দু‘আ-কালামের অনেকটাই আমরা ভুলে যাই। তাই রমদানের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে আমরা ঐ
সব মাসআলা-মাসায়েল ও জরুরী দু‘আ-কালাম সমূহ তাজা করে দিতে পারি।
এছাড়াও যারা কোন শুভ কাজ বাস্তবায়ন এবং অশুভ কাজ (বিড়ি-সিগারেট
খাওয়া ত্যাগ, নিয়মিত ভাবে
সালাত আদায় ইত্যাদি) পরিহার করার জন্য মাহে রমদানের অপেক্ষা করেন তারাও নিজ নিজ পরিকল্পনা
মোতাবেক উক্ত কাজটি করার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে পারেন।
(৮)কুরআনের প্রতি (অধ্যয়ন
ও তিলাওয়াত) অধিক মাত্রায় মনোনিবেশ করা:
রমাদান মাস কুরআনের মাস। মহানবী (সাঃ)রমাদান মাস আসলে কুরআনের
প্রতি অধিক গুরুত্বারোপ করতেন। রমদানের প্রতি রাতে জীবরিল(আঃ)নবীর নিকট আগমন করতেন
এবং নবীজিকে কুরআন শুনাতেন। কাজেই আমরা যারা কুরআন জানি না তারা এ মাসে কুরআন শিক্ষায়
বেশী করে মনোনিবেশ করব। আর যারা কুরআন শিখেছি তারা উহার অুনবাদ ও তাফসীর অধ্যয়ণ (বুঝে
পড়া) করে এর আদেশ-নিষেধ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করতে পারি। কারণ কুরআন বুঝে পড়ার মাধ্যমে
ঈমান বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ্ তাআলা বলেন,
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا
ذُكِرَ اللَّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ
إِيمَانًا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ ﴿الأنفال: ٢﴾
যারা ঈমানদার, তারা এমন যে, যখন আল্লাহ্র নাম নেয়া হয় তখন ভীত হয়ে পড়ে তাদের অন্তর। আর যখন
তাদের সামনে পাঠ করা হয় কালাম, তখন তাদের
ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা নিশচয় পরওয়ার দেগারের প্রতি ভরসা পোষণ করে। (সূরা আনফাল-০২)
(৯)ফরয-ওয়াজিব পর্যায়ের ইবাদতের
প্রতি যত্নবান হওয়া:
শয়তানের প্ররোচনায় দুনিয়ার বিভিন্ন মায়াজাল ও প্রলোভনে জড়িত
হয়ে আল্লাহ্র দেয়া বিধান ফরয ইবাদত (সালাত-রোযা) যেন হাতছাড়া বা কাযা না হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এমনকি কেউ ইবাদতে অনিয়মিত
থাকলে রোযার মাস থেকে নিয়মিত আদায় করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
(১০)রিয়া বা লোক দেখানো ইবাদতের
মনোভাব পরিত্যাগ করা:
রোজাদারের যাবতীয় ইবাদতের (ইফতার, সেহরী, সালাত-রোযা, হজ্জ্ব-যাকাত, দান-সাদকা ইত্যাদি) পিছনে একমাত্র উদ্দেশ্য থাকতে হবে আল্লাহর
সন্তুষ্টি তথা সওয়াব উপার্জন। যদি অন্য কোন উদ্দেশ্য এর সাথে মিশ্রিত হয় তাহলে ইবাদতের
মূল উদ্দেশ্যই বাহ্যত হতে বাধ্য। বর্তমানে বিভিন্ন সংস্থা, সংগঠন, প্রতিষ্ঠান, সমিতি, এমনকি অনেক
বিত্তবান ব্যক্তি তাদের যশ-খ্যাতি লোক সম্মুখে তুলে ধরার জন্য এরূপ প্রতিযোগীতায় মেতে
ওঠে। আমাদের মধ্যে যাতে এ ধরণের কোন উদ্দেশ্য অনুপ্রবেশ না করে তা খেয়াল রাখতে হবে।
আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন বলেন,
قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوحَىٰ إِلَيَّ أَنَّمَا
إِلَٰهُكُمْ إِلَٰهٌ وَاحِدٌ ۖ فَمَن
كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ
بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا ﴿الكهف: ١١٠﴾
বলুন: আমিও
তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি
প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহই
একমাত্র ইলাহ। অতএব, যে ব্যক্তি
তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন, সৎকর্ম স¤পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরীক না করে। (সূরা কাহাফ-১১০)
(১১)বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে
পর্দার ফরযিয়াত লংঘন না করা:
রমাদান মাসে বিভিন্ন ইফতার পার্টিতে মহিলাদের দাওয়াত করা হয়
এবং আমন্ত্রিত মহিলাগণ (আমাদের স্ত্রী-কন্যা) যদি অশ্লীল, অশালীন, অমার্জিত পোষাক
ও অলংকার প্রদর্শন করে পর্দার যথাযথ ফরযিয়াত পালন না করে তাতে অংশগ্রহণ করে তাহলে আমরা
নফল পর্যায়ের একটি ইবাদত করতে গিয়ে অন্যদের ফরয লংঘনের কারণ হয়ে গেলাম। এমন আমল থেকে
কতটুকু সওয়াব হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।
১-মহান আল্লাহ্
তাআলা বলেন,
وَقَرْنَ
فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى ۖ ﴿الأحزاب: ٣٣﴾
তামরা গৃহাভ্যন্তরে
অবস্থান করব-র্মূখতা যুগরে অনুরূপ নজিদেরেকে প্রর্দশন করবে না। (সূরা আহযাব-৩৩)
২-মহান আল্লাহ্
তাআলা আরো বলেন,
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّأَزْوَاجِكَ
وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِن جَلَابِيبِهِنَّ ۚ
ذَلِكَ أَدْنَى أَن يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
﴿الأحزاب: ٥٩﴾
হে নবী! আপনি
আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে
চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ্ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব-৫৯)
(১২)তারাবীহ সালাতসহ নফল
ইবাদতের প্রতি আন্তরিক হওয়া:
রোযা রাখার সাথে সাথে তারাবী নামাযের প্রতি আন্তরিক হওয়া ও বেশী
বেশী নফল, মুস্তাহাব
ইবাদত করা। অর্থাৎ-তারাবীহ আরবী শব্দ, এর শাব্দিক অর্থ হলো, বিশ্রাম করা, আরাম করা। সাধারণতঃ রমাদান মাসে এশার নামাযের পর তারাবীহর সালাত
পড়তে হয়। এ নামাযে প্রতি চার রাকাত পর পর বিশ্রামের জন্য বসা হয় বলে একে ‘‘তারাবীহর
সালাত’’ বা সালাতুল
কিয়াম, ক্বিয়ামুল্লাইল, সালাতুল্লাইল বা রাতের সালাত বলা হয়। তাই সারা বছর রাতের সকল নফল ও সুন্নাত (তাহাজ্জুদ সালাতসহ)
সালাত এর অন্তর্ভূক্ত। তারাবীহর সালাত নারী-পুরুষ সবার জন্য সুন্নাত।
রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) বলেন,
«إِنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى فَرَضَ صِيَامَ رَمَضَانَ
عَلَيْكُمْ وَسَنَنْتُ لَكُمْ قِيَامَهُ، فَمَنْ صَامَهُ وَقَامَهُ إِيمَانًا
وَاحْتِسَابًا خَرَجَ مِنْ ذُنُوبِهِ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ» (نسائ)
আল্লাহ্ তোমাদের
উপর রমদানের রোযা ফরয করেছেন এবং আমি তোমাদের জন্য রমদানের সালাতুল কিয়ামকে সুন্নাত
করেছি। অতএব যে ব্যক্তি রমদানে ঈমানের সাথে ও সাওয়াবের আশায় রমদানের রোযা রাখে এবং
সালাতুল কেয়াম (সালাত আদায়ের জন্য রাত জাগরণ করল) আদায় করে, তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। (সুনানে নাসাঈ-২২১০)
সালাতুল কিয়াম
সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আরো বলেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ
قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ صَامَ
رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ.
وَمَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ
ذَنْبِهِ. وَمَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ
مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ» (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
যে ব্যক্তি
রমদানে ঈমানের সাথে ও সাওয়াবের আশায় রমদানের রোযা রাখল এবং সালাতুল কেয়াম (সালাত আদায়ের
জন্য রাত জাগরণ) করল, তার অতীতের
সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। (বোখারী; মুসলিম; মিশকাত-১৯৫৮)
(১৩)অধীনস্তদের প্রতি সহানুভূতি
হওয়া:
রমাদান মাসে দাস-দাসী, চাকর-বাকর, কাজের লোক
এবং অধিনস্তদের উপর যাতে আরও বাড়তি কার্যাভার অর্পিত না হয়, সেদিকেও হাদীসে খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে।
(১৪) আল্লাহ্র
হক্ব ও বান্দার হক্ব জানা ও আমল করা।
(১৫) মা-বাবার
সেবা করা, তাঁদেরকে কষ্ট
না দেয়া।
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْه
قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «رَغِمَ أَنْفُ
رَجُلٍ ذُكِرْتُ عِنْدَهُ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيَّ وَرَغِمَ أَنْفُ رَجُلٍ دَخَلَ
عَلَيْهِ رَمَضَانُ ثُمَّ انْسَلَخَ قَبْلَ أَنْ يُغْفَرَ لَهُ وَرَغِمَ أَنْفُ
رَجُلٍ أَدْرَكَ عِنْدَهُ أَبَوَاهُ الْكبر أَو أَحدهمَا فَلم يدْخلَاهُ الْجنَّة»
. (رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ)
ঐ পুরুষের
নাক ধুলায় মন্ডিত হউক, যার নিকট আমার
নাম উচ্চারণ করা হয়, অথচ সে আমার
উপর দরূদ পাঠ করে না। ঐ ব্যক্তির নাক ধুলায় মন্ডিত হউক যার জীবনে রমাদান আগমন করল অথচ
গুণাহ থেকে ক্ষমা প্রাপ্তি ব্যতিতই রমাদান বিদায় নিল। ঐ লোকের নাক ধুলায় মলিন হউক যে
পিতা-মাতাকে বৃদ্ধ অবস্থায় পেল অথচ তাদের খেদমত করে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না। (তিরমিযী; মিশকাত-৯২৭)
(১৬) ইসলামের
মৌলিক জ্ঞান: যেমনঃ (ফরজ, ওয়াজিব, হালাল, হারাম, অজু, গোসল, সালাত, রোযা, ঈমান, ইসলাম, শিরক্, বিদআত ইত্যাদি) বিভিন্ন ইসলামী বা ধর্মীয় বই-পুস্তক থেকে অর্জন
করা।
(১৭) মাহে রমদানের
যথার্থ মূল্যায়ন ও পবিত্রতা রক্ষা করা
(১৮) সঠিক সময়ে
সেহেরী ও ইফতার খাওয়া এবং ইফতারের দু‘আ পড়া আমাদের একান্ত কর্তব্য।
প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জনের প্রস্তুতি:
প্রত্যেকের উচিত রমজানের প্রয়োজনীয় বিধি-বিধান/মাসায়েল জেনে নেওয়া। জ্ঞানার্জনের জন্য বিভিন্ন আয়োজন রাখা। প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জনের প্রস্ততি ভলো হলে কাজটি সুন্দর ভাবে পালন করা যায়। তাই নিন্মে সে বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি।
১.ওমরাহ্ প্রস্তুতি:
নবীজি (সা.) বলেছেন, রমজান মাসে একটি ওমরাহ আদায় করা একটি ফরজ হজ আদায় করার
সমান। (বুখারী: ৩/২২২)
রোজা আগমনের পূর্বে ১৫টি বিষয়ে
প্রস্তুতি নেয়া খুবই জরুরিঃ
১.তাওবাহ-ইস্তেগফার করাঃ
রমজানের আগের সব গোনাহ থেকে তাওবাহ ইসতেগফার করতে হবে। কোনো
অন্যায়কারী যদি ভাবে যে,
রমজান চলে এসেছে, আর আমার সব গোনাহ এমনিতেই ক্ষমা হয়ে যাবে। বাস্তবে বিষয়টি
এমন নয় বরং আগে থেকে তাওবাহ-ইসতেগফার করে রমজানের যাবতীয় কল্যাণ লাভে নিজেকে প্রস্তুত
করে নিতে হবে। আর তাতে আল্লাহ তাআলা ঐ বান্দার আগের সব গোনাহ মাফ করে দিয়ে রমজানের
যাবতীয় কল্যাণ দিয়ে জীবন সুন্দর করে দেবেন।
এ জন্য
বান্দা বেশি বেশি পড়বে : আল্লাহুম্মাগফিরলি, অর্থঃ হে
আল্লাহ! আমাকে মাফ করে দিন।
২. রমজানের সব উপকারিতা স্মরণ করাঃ
বরকতময় মাস রমজান সম্পর্কে কুরআন-সুন্নায় যেসব ফজিলত মর্যাদা ও উপকারিতার বর্ণনা রয়েছে, রমজান শুরু হওয়ার আগেই সেসব সম্পর্কে জেনে নেওয়া। সেসব
উপকার পেতে কুরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনাগুলো মেনে চলার প্রস্তুতি নেওয়া।
রমজান মাস
আসছে, মানসিকভাবে বারবার এ কথার স্মরণ করা ও নেক আমলের প্রস্তুতি
গ্রহণ করতে এ দোয়াটি বেশি বেশি করা: আল্লাহুম্মা বাল্লিগনা রামাদান। হে আল্লাহ আপনি আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন। অর্থাৎ
রমজান পর্যন্ত হায়াত দান করুন।’
৩. রমজানের রোজার মানসিক প্রতিজ্ঞা নেওয়াঃ
রমজান মাসে পরিপূর্ণ সাওয়াব ও ক্ষমা পেতে মানসিকভাবে
প্রস্তুতি গ্রহণ করা। আফসোসের
বিষয়! অনেক সময় পূর্ব প্রস্তুতি না থাকার কারণে রমজান পেয়েও মুমিন মুসলমান
পরিপূর্ণ সাওয়াব ও ক্ষমা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়।
প্রতিজ্ঞা এমনভাবে করা যে, চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য বা নিজের কাজ যেমনই হোক, আমি আমার বিগত জীবনের সবে গোনাহ থেকে নিজেকে মাফ করিয়ে
নেবো। আমার প্রতি আল্লাহকে রাজি-খুশি করিয়েই ছাড়বো ইনশাআল্লাহ।
৪. রমজানের আগেই আগের কাজারোজা আদায় করাঃ
রমজান শুরু হওয়ার আগে বিগত জীবনে অসুস্থ হওয়ার কারণে বা
সফরের কারণে রমজানের ফরজ রোজা কাজা হয়ে থাকলে তা যথাযথভাবে আদায় করে নেওয়া। বিশেষ করে
মা-বোনদের ভাঙতি রোজা থাকতে পারে। তাই রমজানের আগে শাবান মাসের এ সময়ে কাজ রোজা
আদায় করে নেওয়া।
এতে দুইটি
ভালো আমল বাস্তবায়িত হবে-
১ম টি :
বিগত জীবনের কাজা রোজা আদায় হবে। রমজানের রোজা পালনের প্রতি আগ্রহ বাড়বে। ২য় টি :
সুন্নাতের অনুসরণ হবে।
রমজানের আগের মাস শাবানে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বেশি বেশি নফল রোজা রাখতেন। রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে। কাজা রোজা আদায়
করার মাধ্যমে সুন্নাতের অনুসরণও হয়ে যাবে।
৫. যাবতীয় গুনাহ থেকে সাধারণ ক্ষমা পাওয়ার চেষ্টা করাঃ
আল্লাহ তাআলা রমজান মাসে অনেক মানুষকে জাহান্নামের আগুন
থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। তবে এ সাধারণ ক্ষমা সবার ভাগ্যে জোটে না। কেননা এ ক্ষমা
পেতে হলে ২টি কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। ক্ষমা প্রার্থনা করে তা থেকে ফিরে আসতে
হবে।
১. শিরক থেকে মুক্ত
থাকা: আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শিরক না করা। কেউ ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছায়, ছোট বা বড় শিরক করে থাকলে রমজান আসার আগেই তা থেকে
তাওবাহ-ইসতেগফারের মাধ্যমে ফিরে আসা।
২.
হিংসা থেকে মুক্ত থাকা: কারো প্রতি কোনো
বিষয়ে হিংসা না করা। কারণ হিংসা মানুসের সব নেক আমলকে সেভাবে জালিয়ে দেয়; যেভাবে আগুন কাঠকে জালিয়ে দেয়। তাই হিংসা পরিহার করে মনকে
ক্ষমা লাভে স্বচ্ছ রাখা।
৬. রমজানের ফরজ রোজার নিয়ম-কানুন জেনে নেয়াঃ
রমজান মাস আসার আগে রোজা পালনের মাসআলা-মাসায়েল তথা নিয়ম
কানুনগুলো ভালোভাবে জেনে নেয়া। আর তাতে রমজানের রোজা নষ্ট হওয়া থেকে বা মাকরূহ
হওয়া
বা অন্যান্য বিষয়গুলো জেনে
নেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করা।
৭. বিগত রমজানের অসমাপ্ত কাজ চিহ্নিত করাঃ
রমজান মাস আসার আগে বিগত রমজানের নেক আমলগুলো করতে না পারার
কারণগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা
করা। যেমন-
Ø কেন নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত করা হয়নি?
Ø কেন তারাবিহ সঠিকভাবে পড়া হয়নি?
Ø কেন
তাহাজ্জুদ নামাজ
সঠিকভাবে পড়া হয়নি?
Ø কেন
গিবাত/পরনিন্দা থেকে বাচা হয়নি?
Ø কেন
মিথ্যা থেকে বাচা হয়নি?
Ø কেন
অন্যায়,
দূনীতি ও হারাম থেকে বাচা
হয়নি?
Ø কেন
ধুমপান/মাদক থেকে বাচা হয়নি?
Ø কেন চোখের
গোনাহ,
অশ্লিলতা ও যিনা থেকে বাচা
হয়নি?
Ø কেন
বেশি-বেশি দান-সদকা ও সহযোগিতা করা হয়নি?
Ø কেন শবে
কদর তালাশ ও ইতেকাফ করা হয়নি?
Ø কেন
রোজাদারকে ইফতার করানো হয়নি?
Ø কেন ৫ওয়াক্ত নামাজ জামাতে
আদায় করা সম্ভব হয়নি?
Ø কেন কোরআন-সুন্নার
আলোচনায়/তালিমে বসা হয়নি?
Ø কেন রমজানের পরিবারের হক
আদায় করা হয়নি?
Ø কেন
পাড়া-প্রতিবেশি/আত্মীয়দের হক আদায় করা হয়নি?
এ বিষয়গুলো
চিহ্নিত করে নেওয়া। এ বছর রমজান আসার আগে আগে চিহ্নিত কারণগুলো থেকে নিজেকে বিরত
রেখে কিংবা প্রস্তুতি গ্রহণ করে কল্যাণকর সব নেক আমল করার প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
৮. শাবান মাসজুড়ে রমজানের মহড়া চালু রাখাঃ
রমজান মাসের বেশি বেশি ইবাদত করতে এবং রোজা রাখার জন্য
শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখা। বেশি বেশি কোরআন অধ্যয়ন করা। নফল নামাজ পড়া।
তাওবাহ-ইসতেগফার করা। ত্যাগের মানসিকতা তৈরি করা। দান-সাদকাহ শুরু করা। যাতে এ
মহড়ার বাস্তবায়ন পুরো রমজানজুড়ে সুন্দরভাবে চালানো যায়।
৯. রমজান মাসজুড়ে ২৪ ঘণ্টার রুটিন করাঃ
রমজান মাসজুড়ে যে যেই কাজেই থাকুক না কেন, পুরো সময়টি কোন কোন কাজে কীভাবে ব্যয় হবে তার একটি সম্ভাব্য
রুটিন তৈরি করে নেয়া। আগাম রুটিন থাকলে রমজানে চরম ব্যস্ততার মাঝেও নেক আমলসহ
অন্যান্য কাজগুলোও ইবাদতের মধ্যেই কেটে যাবে। এককথায় সব কাজের তালিকা করে নেওয়া।
১০. শাবান মাসের শেষে রমজানের চাঁদের অনুসন্ধান করাঃ
শাবান মাসের ২৯ তারিখ সন্ধ্যায় চাঁদের অনুসন্ধান করা
সুন্নাত। রমজানের চাঁদ দেখলে কিংবা দেখার খবর শুনলেই হৃদয়ের গভীর থেকে আল্লাহর
কাছে মুমিনের আকুতিভরা প্রার্থনা হবে এমন- اللَّهُمَّ
سَلِّمْنِي لرمضان، وسلم رمضان لي، وتسلمه مني مُتَقَبَّلاً
অর্থ : হে
আল্লাহ! আমাকে শান্তিময় রমজান দান করুন। রমজানকে আমার জন্য শান্তিময় করুন। জন্য
রমজানকে শান্তিময় করে দিন। রমজানের শান্তিও আমার জন্য কবুল করুন।-( তাবারানি)
১১. রমজানের আগে থেকেই বেশি বেশি দোয়া করাঃ
রমজানের আগে আল্লাহর কাছে এ প্রার্থনা করা। হে আল্লাহ! আমি
যতই চেষ্টা করি,
তোমার তাওফিক বা ইচ্ছা না
থাকলে আমি যেমন রমজান পাবো না। আবার রমজান পেলেও রবকত লাভে সক্ষম হবো না। সুতরাং
রমজান ও রমজানের নেক আমল করার তাওফীক তোমার কাছে চাই। হে আল্লাহ! রমজানে যত মানুষ
সৌভাগ্যবান হবে,
তাদের মধ্যে আমাকেও শামিল
করো;
হে রাব্বুল আলামিন।
১২. দুনিয়াবী কাজ-ব্যস্ততা কমিয়ে নিয়ে আসাঃ
রমজানের পুরো সময়ই গুরুত্বপর্ণ। একটা মুহূর্তও নষ্ট করা
যাবে না। রমজানের সময়কে কাজে লাগাতে হলে রমজানের কেনাকাটা রমজান শুরুর আগেই করে
রাখতে হবে। কেনাকাটা আবার ২ ধরনের।
১, নিত্যপ্রয়োজনীয় ২,
ঈদের কেনাকাটা।
১, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। তেল, চাল,
ডাল ইত্যাদি। কাঁচাবাজার
ব্যতীত বাকি সবকিছু একসাথে মাস বা পনেরো দিনের একসাথে করে রাখতে পারি। মাছ, গোশত কিনে ফ্রিজিং করতে পারি। পরবতীতে অফিসে বা দোকানপাটে
যাওয়া-আসার সময় কাঁচা বাজার নিয়ে আসতে পারি। খেয়াল রাখব যেন কোনোভাবেই সময়
নষ্ট না হয়।
২, ঈদের কেনাকাটা। সবচেয়ে ভালো হয় রমজানের আগে পারিবারিক
পরামর্শ করুন পরিবারে/আত্মীয়-স্বজন/প্রতিবেশীদের কার কার জামাকাপড় লাগবে/দিতে
হবে। লিস্ট করে পাইকারি মার্কেট হতে কেনাকাটা করে ফেলুন। টেইলার্সে বানানোর মতো
হলে অর্ডার দিয়ে দিন। অনেক ভাইকে দেখেছি, রমজান শুরু হওয়ার আগেই রমজান আসার আগেই কেনাকাটা করে ফেলে।
সব ঝামেলা শেষ
১৩. গরিবদের জন্য খাদ্য ও উপহার সামগ্রী দেয়াঃ
রমজান মাসে দেখবেন প্রায় বিত্তবান একে অন্যের বাড়িতে
দাওয়াত থাকে,
অধিকাংশ সময় আমরা এমন
লোকদের দাওয়াত করে খাওয়াই, যাদের ঘরে
খাবারের অভাব নেই। কিন্তু আমাদের সমাজের এমন অনেক পরিবার আছে যারা সামান্য খাবার
খেয়ে রোজা রাখবে। হাদিসে এসেছে, কেউ কোনো
রোজাদারকে ইফতার করালে রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব আল্লাহ তায়া’লা তাকে দান করেন। এখানে ইফতার করানো মানে আপনার সাথে বসে
ইফতার করাতে হবে,
এমন না। আপনি বাজার করে দেন; সে তার মতো রান্না করে খাবে। অথবা নগদ টাকাও দিয়ে দিতে
পারেন। সে বাজার করে নিবে।
১৪. কুরআনের তেলাওয়াত বিশুদ্ধ করাঃ
অনেকের তেলাওয়াত শুদ্ধ থাকেনা, রমজান মাসে অনেকের সময় থাকে। খাওয়া-দাওয়া, বাজার, কেনা-কাটার
ঝামেলা থাকে না। ব্যস্ততা কম তাকে। তাই যাদের তেলাওয়াত শুদ্ধ নয়, তারা তেলাওয়াত শুদ্ধ করার পরিকল্পনা করতে পারেন। বাসায় বা
মসজিদে বা অন্য কোথাও। সবচেয়ে ভালো হয় নির্দিষ্ট একটা সময়ে কয়েকজন মিলে একজন
অভিজ্ঞের কাছে পড়েন। কুরআন নাজিলের মাসে কুরআন বিশুদ্ধ করার চেষ্টাও ইবাদত হিসেবে
গণ্য হবে।
১৫. পরিবারের নারীদের সহযোগিতা করাঃ
রমজানে মহিলাদের রান্নাবান্নার ব্যস্ততা কমিয়ে আনুন, তাদের সহযোগিতা করুন। যেন অল্প সময়ে রান্নাবান্নার কাজ শেষ
করে তারাও ইবাদতে সময় দিতে পারে। বিশেষ করে সেহেরী ও ইফতারের মত ফজিলাতপূণ সময়ে
খাবার ও তার আয়োজন নিয়ে মাতামাতি না করে পরিবারের সকলকে নিয়ে সময়ের সঠিক উদ্দেশ্য
অজনে সচেষ্ট হোন।
শেষকথা: মহান আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মাহে রমজানের আগে পূর্ব প্রস্তুতি গুলো যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিসহ সকলকে জীবনে বেশি বেশি নেকী করার
তাওফিক দান করুন। আমিন।

No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com