Thursday, May 30, 2024

আইয়ামে তাশরিক এবং তাকবির

 

আইয়ামে তাশরিক এবং তাকবির

-এম এ রাজ্জাক হাওলাদার

আশরায়ে যিলহজ্বের পরবর্তী তিন দিন অর্থাৎ এগার, বার ও তের তারিখকে পরিভাষায় আইয়ামে তাশরীক বলে। সুতরাং,  ঈদের দিনের ফজরের ফরজ সালাত থেকে প্রত্যেক ফরজ নামাজ শেষে তাকবিরে তাশরিক পড়া ওয়াজিব।

তাকবিরে তাশরীকের গোড়ার কথা 

সহীহ বুখারী শরিফের অন্যতম ভাষ্যকার ইমাম বদরুদ্দিন আল-আইনি (রহ.) এ সম্পর্কে বলেন, ‘সাইয়্যেদুনা হযরত ইবরাহিম (আ.) আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে আদিষ্ট হয়ে স্বীয়পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.) যখন জবেহ করতে পূর্ণ প্রস্তুত হলেন, তখন হযরত জিবরাইল (আ.) আল্লাহর নির্দেশে বেহেশত থেকে হাবিলের কোরবানি করা দুম্বাটি নিয়ে রওনা হলেন।

তার সন্দেহ হচ্ছিল, হয়তো তিনি জমিনে পৌঁছানোর আগেই হযরত ইবরাহিম (আ.) জবেহের কাজ সম্পন্ন করে ফেলবেন। তাই তিনি আকাশ থেকেই উচ্চ স্বরে আওয়াজ দিয়ে বললেন, ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবারহযরত ইবরাহিম (আ.) তার কণ্ঠ শুনে আকাশপানে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দেখলেন, হযরত জিবরাইল (আ.)-এর ছেলে ইসমাইলের পরিবর্তে বেহেশত থেকে একটি দুম্বা নিয়ে আসছেন।

ফলে তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলে উঠলেন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আল্লাহু আকবার। বাবার মুখে আল্লাহর একত্ববাদ ও বড়ত্বের বাণী শ্রবণে করে ছেলে ইসমাইল (আ.) ও আল্লাহর জালাল ও হামদ পেশ করে বললেন, ‘আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল্ হামদ।

কখন  তাকবিরে তাশরিক পড়তে হবে?

আরাফার দিন, ৯ যিলহজ ফজর থেকে ১৩ যিলহজ আছর পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পর একবার তাকবিরে তাশরিক তথাআল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, ওয়ালিল্লাহিল হামদ বলা ওয়াজিব।

কারা পড়বেন?

এটা ফরয নামাযের পর প্রত্যেক বালেগ পুরুষ, নারী, মুকিম, মুসাফির, গ্রামবাসী, শহরবাসী, জামায়াতের সঙ্গে সালাত পড়ুক বা একাকি পড়ুকপ্রত্যেককেই একবার করে পাঠ করতে হবে। (ফাতাওয়ায়ে শামী, বাহরুর রায়িক)

কতবার পড়বেন?

তবে পূর্ণ তাকবিরে তাশরিক তিনবার পড়ার বর্ণনা খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফিকহবিদরাও তিনবার বলার প্রতি গুরুত্ব দেননি। অবশ্য কেউ যদি সুন্নত মনে না করে এমনিতেই তিনবার বলে তবে সেটাকে বিদআত বলাও উচিত নয়। (আলআওসাত-২১৯৮; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-৫৬৯৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫২; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৫)

এই তাকবির তিনবার বলা সুন্নত বা মুস্তাহাব নয়। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) কীভাবে তাশরিকের দিনগুলোতে তাকবির বলতেন, তা হাদীসের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। সেখানে একাধিকবার তাকবিরের কথা উল্লেখ নেই। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-৫৬৯৮, ৫৬৯৯; আলআওসাত-২১৯৮,২২০০)

তাকবির সম্পর্কে আরো কিছু মাসআলা

১. ইমাম তাকবির বলতে ভুলে গেলে ও মুক্তাদির তাকবির বলা ওয়াজিব। (ফাতওয়ায়ে শামী ১ম খণ্ড ৭৭৭ পৃষ্ঠা)

২. পুরুষেরা তাকবির উচ্চ-মধ্যম স্বরে আর নারীরা অনুচ্চস্বরে বলবে। পুরুষ উচ্চস্বরে না পড়ে আস্তে আস্তে পড়লে ওয়াজিব আদায় হবে না।

৩. মাসবুক তার সালাত আদায় করে তাকবির বলবে। (ফাতাওয়ায়ে শামী ১ম খণ্ড-৭৮৬পৃষ্ঠা )

৪. যদি মুসল্লি ফরয নামাযের পর তাকবির বলতে ভুলে যায় এবং কিছু কাজ করে ফেলে যার দ্বারা সালাত নষ্ট হয়ে যায় (যেমন মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া, অথবা ভুলে বা ইচ্ছায় কথা বলা অথবা ইচ্ছা করে অজু ভঙ্গ করা), তবে তার উপর থেকে তাকবির বলা রহিত হয়ে যাবে। (ফাতাওয়া শামী ১ম খণ্ড, ৭৮৬ পৃষ্ঠা)

*২০২৪ সাল আইয়ামে তাশরিকের তাকবির শুরু এবং শেষ

(৯ যিলহজ ফজর থেকে ১৩ যিলহজ আছর পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পর  কমপক্ষে একবার তাকবিরে তাশরিক পরা)

দোয়াটি হলো:  আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, ওয়ালিল্লাহিল হামদ  বলা ওয়াজিব।

এ বছর আরাফা দিবস হচ্ছে:-১৫/০৬/২০২৪ আরবী  ৮ই যিলহজ্ব রোজ  শনিবার

শুরু:- ১৬/০৬/২০২৪ রবিবার বাদ ফজর সালাতের পর থেকে শুরু।

শেষ:- ২০/০৬/২০২৪ বৃহস্পতিবার বাদ আছর শেষ হবে সর্বমোট ২৩ ওয়াক্ত

 

No comments:

Post a Comment

razzakhowlader59@gmil.com