Wednesday, May 29, 2024

অহংকার ও হিংসা

 


অহংকার ও হিংসা

-এম এ রাজ্জাক হাওলাদার

হিংসার আরবী প্রতিশব্দ হলো الحسد(হাসাদ) অর্থ হলো অনিষ্ট, ক্ষতি, পরশ্রিকাতরতা ইত্যাদি৷ পারিভাষিক অর্থে হিংসা হচ্ছে অন্যের ভালো কোনো কিছু দেখে তা ধ্বংস হওয়া বা হারিয়ে যাওয়ার কামনা করা। কেউ ভালো পথে চলতে থাকলে কিংবা ভালো কোনো কাজ করতে গেলে সেখান থেকে সে ফিরে আসা, বাধাগ্রস্ত হওয়া কিংবা ব্যর্থ হওয়ার কামনা করা। এগুলোই হিংসা। এসব হচ্ছে হিংসার প্রথম ধাপ।

মানবচরিত্রে যেসব খারাপ দিক আছে, তার মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ মারাত্মক ক্ষতিকারক। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজে পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ, ঈর্ষাকাতরতা, কলহ-বিবাদ প্রভৃতি মানুষের শান্তিপূর্ণ জীবনকে অত্যন্ত বিষময় করে তোলে। এতে মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। অন্যের সুখ-শান্তি ও ধন-সম্পদ বিনষ্ট বা ধ্বংস করে নিজে এর মালিক হওয়ার কামনা-বাসনাকে আরবিতে হাসাদঅর্থাৎ হিংসা বলা হয়। ইসলাম অন্যের প্রতি হিংসা করা বা প্রতিহিংসাপরায়ণ হওয়াকে সম্পূর্ণরূপে হারাম বা নিষিদ্ধ করেছে। মানুষের মধ্যে পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষের স্থলে সামাজিক শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার উদ্দেশ্যে পবিত্র করআনে আল্লাহ তাআলা সতর্ক করে বলেছেন,

أَمْ يَحْسُدُونَ النَّاسَ عَلٰى مَآ ءَاتٰىهُمُ اللَّهُ مِن فَضْلِهِۦ ۖ فَقَدْ ءَاتَيْنَآ ءَالَ إِبْرٰهِيمَ الْكِتٰبَ وَالْحِكْمَةَ وَءَاتَيْنٰهُم مُّلْكًا عَظِيمًا

বরং তারা কি লোকদেরকে হিংসা করে, আল্লাহ স্বীয় অনুগ্রহে তাদেরকে যা দিয়েছেন তার কারণে? তাহলে তো আমি ইবরাহীমের বংশধরকে কিতাব ও হিকমত দান করেছি এবং তাদেরকে দিয়েছি বিশাল রাজত্ব।(সূরা নিসা-৪:৫৪)

মহান আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,

وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ

 “এবং হিংসুকের অনিষ্ঠা থেকে যখন সে হিংসা করে” "And from the evil of the envier when he envies."(সূরা ফালাক-১১৩:০৫)

হিংসা-বিদ্বেষ একটি ভয়ানক সংক্রামক ব্যাধি। মানুষের হীন মনমানসিকতা, ঈর্ষাপরায়ণতা, সম্পদের মোহ, পদমর্যাদার লোভ-লালসা থেকে হিংসা-বিদ্বেষের উৎপত্তি ও বিকাশ হয়। হিংসা-বিদ্বেষ মুমিনের সৎ কর্ম ও পুণ্যকে তার একান্ত অজান্তে কুরে কুরে খেয়ে ফেলে। মানুষ হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা, শঠতা-কপটতা, অশান্তি, হানাহানি প্রভৃতি সামাজিক অনাচারের পথ পরিহার করে পারস্পরিক ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হবে

حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ صَالِحٍ الْبَغْدَادِيُّ، حَدَّثَنَا أَبُو عَامِرٍ، - يَعْنِي عَبْدَ الْمَلِكِ بْنَ عَمْرٍو - حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ بِلاَلٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ أَبِي أَسِيدٍ، عَنْ جَدِّهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏"‏ إِيَّاكُمْ وَالْحَسَدَ فَإِنَّ الْحَسَدَ يَأْكُلُ الْحَسَنَاتِ كَمَا تَأْكُلُ النَّارُ الْحَطَبَ ‏"‏ ‏.‏ أَوْ قَالَ ‏"‏ الْعُشْبَ ‏"‏ ‏

আবূ হুরারা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, সূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা অবশ্যই হিংসা পরিহার করবে। কারণ আগুন যেভাবে কাঠকে বা ঘাসকে খেয়ে ফেলে, তেমনি হিংসাও মানুষের নেক আমলকে খেয়ে ফেলে। (সুনানে আবু দাউদ-৪৯০৩)

অন্য হাদীসে এসেছে,

أَخْبَرَنَا عِيسَى بْنُ حَمَّادٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنْ ابْنِ عَجْلَانَ، عَنْ سُهَيْلِ بْنِ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يَجْتَمِعَانِ فِي النَّارِ مُسْلِمٌ قَتَلَ كَافِرًا ثُمَّ سَدَّدَ وَقَارَبَ، وَلَا يَجْتَمِعَانِ فِي جَوْفِ مُؤْمِنٍ غُبَارٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَفَيْحُ جَهَنَّمَ، وَلَا يَجْتَمِعَانِ فِي قَلْبِ عَبْدٍ الْإِيمَانُ وَالْحَسَدُ»

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ জাহান্নামে একত্রিত হবে না সে মুসলমান যে কোন কাফিরকে হত্যা করেছে, এরপর সঠিক ও সরল পথে দৃঢ় রয়েছে। আর কোন মুমিনের পেটে আল্লাহ্‌র রাস্তার ধূলা এবং জাহান্নামের (আগুনের) শিখা একত্রিত হবে না। আর (আল্লাহ্‌র) বান্দার অন্তরে ঈমান ও হিংসা একত্রিত হবে না।(সুনানে আন-নাসায়ী-৩১০৯)

মানবদেহে ষড়রিপু হল কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য। এর মধ্যে মদল হিংসা, গর্ব ও অহংকার। জীবনে চলার পথে ষড়রিপু আমাদের সার্বক্ষণিক সাথী। এগুলি ডাক্তারের আলমারিতে রক্ষিত পয়জন’ (Poison)-এর বোতলের মত। দেহের মধ্যে লুক্কায়িত উপরোক্ত ৬টি আগুনের মধ্যে মদবা হিংসা ও অহংকারের স্ফুলিঙ্গ একবার জ্বলে উঠলে ও তা নিয়ন্ত্রণ হারালে পুরা মানব গাড়ীটাকে পুড়িয়ে ছারখার করে। এমনকি সমাজ ও রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দেয়।

আধুনিক বিশ্বে ১ম ও ২য় বিশ্বযুদ্ধ এবং জাপানের হিরোশিমানাগাসাকি’-র ধ্বংসযজ্ঞ ছাড়াও সর্বসাম্প্রতিক রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ যার বাস্তব প্রমাণ। হিংসুকের বৈশিষ্ট্য হল সর্বদা হিংসাকৃত ব্যক্তির নেমতের ধ্বংস কামনা করারাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন,

عَنْ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " لاَ حَسَدَ إِلَّا فِي اثْنَتَيْنِ: رَجُلٌ آتَاهُ اللَّهُ مَالًا فَسُلِّطَ عَلَى هَلَكَتِهِ فِي الحَقِّ، وَرَجُلٌ آتَاهُ اللَّهُ الحِكْمَةَ فَهُوَ يَقْضِي بِهَا وَيُعَلِّمُهَا " (بخارى ــ 73)

দুটি বস্ত্ত ভিন্ন অন্য কিছুতে হিংসা নেই।

১. আল্লাহ যাকে মাল দিয়েছেন। অতঃপর সে তা হক-এর পথে ব্যয় করে।

২. আল্লাহ যাকে প্রজ্ঞা দিয়েছেন, সে তা দ্বারা সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং শিক্ষা দেয় (বুখারী হা/৭৩; মিশকাত হা/২০২)

এটিকে মূলত হিংসাবলা হয় না, বরং ঈর্ষাবলা হয়। হিংসা নিষিদ্ধ এবং ঈর্ষা সিদ্ধ, বরং আকাংখিত। আসমানে প্রথম হিংসা করেছিল ইবলীস আদিপিতা আদম ও মা হাওয়ার সাথে। যমীনে প্রথম হিংসা করেছিল আদম পুত্র ক্বাবীল তার উত্তম ছোট ভাই হাবীলের সাথে। তাই ভাল-র প্রতি হিংসা চিরন্তন।

রহমাতুললিল আলামীন বা জগদ্বাবাসীর জন্য শান্তি বলে খ্যাত শেষনবী মুহাম্মাদ (সা.)-কে হিংসা করেছিল মদীনার মুনাফিক লাবীদ বিন আছাম। সে তার মেয়েকে দিয়ে গোপনে রাসূল (সা.)-এর মাথার একটি চুল ও চিরুনীর একটি ভাঙ্গা দাঁত সংগ্রহ করে। অতঃপর চুলটিতে জাদুমন্ত্র পাঠ করে উক্ত দাঁতে জড়িয়ে ১১টি গিরা দেয়। অতঃপর খেজুরের শুকনা মোচার মধ্যে বেঁধে বনু যুরায়েক্ব গোত্রের খেজুর বাগানে যারওয়ানকূয়ার নীচে পাথর চাপা দিয়ে রেখে আসে। এর ফলে রাসূল (সা.) মাঝে-মধ্যে কিছু ভুলে যেতে থাকেন। তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে সূরা ফালাক্ব ও নাস নাযিল হয়। তখন তিনি আলী (রাঃ)-কে পাঠিয়ে উক্ত কূয়ার নীচ থেকে সেটি উঠিয়ে আনেন। অতঃপর তিনি একেকটি আয়াত পাঠ করেন ও একেকটি গিরা খুলে যেতে থাকে। অবশেষে ১১টি গিরা সব খুলে যায় এবং তিনি হালকা বোধ করেন। প্রতিশোধ নেওয়ার কথা বলা হলে তিনি বলেন, ‘আল্লাহ আমাকে আরোগ্য দান করেছেন। আমি চাই না যে, লোকদের মধ্যে মন্দ ছড়িয়ে পড়ুক (বুখারী হা/৬৩৯১) তবে তিনি মৃত্যু অবধি ঐ মুনাফিকের চেহারা দেখেননি (কুরতুবী, ইবনু কাছীর)

ইমাম রাযী বলেন, আল্লাহ মানুষের সকল নষ্টের মূল হিসাবে হিংসাদিয়ে সূরা ফালাক্ব শেষ করেছেন। অতঃপর সকল অনিষ্টের মূল হিসাবে মানুষের মনে শয়তানের খটকাসৃষ্টি বা ওয়াসওয়াসা দিয়ে সূরা নাস শেষ করেছেনযা তারতীবের দিক দিয়ে কুরআনের সর্বশেষ সূরা। এর মাধ্যমে মানুষকে মানুষের হিংসা থেকে ও শয়তানের খটকা থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর আশ্রয় চাইতে বলা হয়েছে। কেননা আল্লাহর রহমত ব্যতীত হিংসা ও শয়তানের খটকা থেকে বাঁচার কোন উপায় নেই। হুসাইন বিন ফযল বলেন, আল্লাহ এই সূরায় সকল মন্দকে একত্রিত করেছেন এবং হিংসাদিয়ে সূরা শেষ করেছেন এটা বুঝানোর জন্য যে এটাই হল সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্বভাব

আনাস (রাঃ) বলেন, আমরা একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকটে বসেছিলাম। এমন সময় তিনি বললেন, ‘এখন তোমাদের নিকট একজন জান্নাতী মানুষের আগমন ঘটবেঅতঃপর আনছারদের একজন ব্যক্তি আগমন করল। যার দাড়ি দিয়ে ওযূর পানি টপকাচ্ছিল ও তার বাম হাতে জুতা জোড়া ছিল। দ্বিতীয় দিন ও তৃতীয় দিন রাসূল (সা.)একই রূপ বললেন এবং পরক্ষণে একই ব্যক্তির আগমন ঘটলো। অতঃপর যখন রাসূলুল্লাহ (সা.)মজলিস থেকে উঠলেন, তখন আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আছ তাঁর পিছু নিলেন।

আনাস (রাঃ) বলেন, আব্দুল্লাহ বিন আমর বলেন, আমি তার বাসায় একরাত বা তিন রাত কাটাই। কিন্তু তাকে রাতে ছালাতের জন্য উঠতে দেখিনি। কেবল ফজরের জন্য ওযূ করা ব্যতীত।তাছাড়া আমি তাকে সর্বদা ভাল কথা বলতে শুনেছি। এভাবে তিনদিন তিনরাত চলে গেলে আমি তার আমলকে হীন মনে করতে লাগলাম। তখন আমি ঐ ব্যক্তিকে বললাম, আপনার সম্পর্কে রাসূল (সা.)এই এই কথা বলেছিলেন এবং আমিও আপনাকে গত তিনদিন যাবৎ লক্ষ্য করছি। কিন্তু আপনাকে বড় কোন আমল করতে দেখলাম না।তাহলে কোন বস্ত্ত আপনাকে ঐ স্থানে পৌঁছিয়েছে, যার সুসংবাদ আল্লাহর রাসূল (সা.)আমাদেরকে শুনিয়েছেন? তিনি বললেন, আমি যা করি তাতো আপনি দেখেছেন। অতঃপর যখন আমি চলে আসার জন্য পিঠ ফিরাই, তখন তিনি আমাকে ডেকে বললেন, ‘আপনি যা দেখেছেন, তাতো দেখেছেন। তবে আমি আমার অন্তরে কোন মুসলিমের প্রতি বিদ্বেষ রাখি না এবং আমি কারু প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত কোন কল্যাণের জন্য হিংসা পোষণ করি নাএকথা শুনে আব্দুল্লাহ বিন আমর বললেন, ‘এটিই আপনাকে উক্ত স্তরে পৌঁছিয়েছে। এটি এমন এক বস্ত্ত যা আমরা করতে সক্ষম নই (হাকেম হা/৪৩৮০, আহমাদ হা/১২৭২০)

বস্ত্তত হিংসুকের সবচেয়ে বড় শাস্তি হল সে হিংসার আগুনে নিজেই জ্বলে-পুড়ে মরে। হিংসা তার সকল নেকী খেয়ে ফেলে যেমন আগুন কাঠকে খেয়ে ফেলে’ (কুরতুবী)আর অন্যায় দম্ভ ও অহংকার মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যায় (যুমার ৩৯/৭২)

আল্লাহ বলেন,

إِنَّ الَّذِيْنَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا وَاسْتَكْبَرُوا عَنْهَا لَا تُفَتَّحُ لَهُمْ أَبْوَابُ السَّمَآءِ وَلَا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّى يَلِجَ الْجَمَلُ فِي سَمِّ الْخِيَاطِ وَكَذَلِكَ نَجْزِي الْمُجْرِمِيْنَ ـ

নিশ্চয়ই যারা আমাদের আয়াত সমূহে মিথ্যারোপ করে এবং তা থেকে অহংকারবশে মুখ ফিরিয়ে থাকে, তাদের জন্য আকাশের দুয়ার সমূহ উন্মুক্ত করা হবে না এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না ছুঁচের ছিদ্রপথে উষ্ট্র প্রবেশ করে। এভাবেই আমরা পাপীদের বদলা দিয়ে থাকি (রাফ ৭/৪০)

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كِبْرٍ» قَالَ رَجُلٌ: إِنَّ الرَّجُلَ يُحِبُّ أَنْ يَكُونَ ثَوْبُهُ حَسَنًا وَنَعْلُهُ حَسَنَةً، قَالَ: «إِنَّ اللهَ جَمِيلٌ يُحِبُّ الْجَمَالَ، الْكِبْرُ بَطَرُ الْحَقِّ، وَغَمْطُ النَّاسِ» (مسلم ــ91)

ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না যার অন্তরে কণা পরিমাণ অহংকার রয়েছে।...তিনি বলেন, ‘অহংকারসত্যকে দম্ভের সাথে প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে তুচ্ছ জ্ঞান করা (মুসলিম হা/৯১; মিশকাত হা/৫১০৮)

দুনিয়াতে অহংকারের পরিণতি হল লাঞ্ছনা। আর আখেরাতে এর পরিণতি হত্বীনাতুল খাবালঅর্থাৎ জাহান্নামীদের উত্তপ্ত পুঁজ-রক্ত পান করা (তিরমিযী হা/২৪৯২)

আল্লাহ মানুষকে মেধায়, শক্তিতে, সম্পদে ও মর্যাদায় পরস্পরে উঁচু-নীচু করেছেন কেবল তাদের পরীক্ষা করার জন্য এবং এগুলির মাধ্যমে পরকালীন পাথেয় সঞ্চয়ের জন্য। যারা এটা করেন, তারাই প্রকৃত অর্থে বিচক্ষণ ব্যক্তি (ইবনু মাজাহ হা/২৪৫৯)

বর্তমান যুগে দেশে দেশে বর্ণবিদ্বেষ, অঞ্চল বিদ্বেষ, দলীয় বিদ্বেষ, ব্যক্তিবিদ্বেষ মানুষকে অন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি পসন্দনীয় ব্যক্তি বা দলের বিপরীত কোন মুসলমানের মৃত্যুতে ইন্নালিল্লাহ...বলার স্বাধীনতাটুকুও হরণ করা হচ্ছে। অথচ মুখে সর্বদা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ফেনা উঠছে। এদেশে বহু সার্চ কমিশন, ট্রুথ কমিশন হয়েছে। তবে এটাই বাস্তব যে, সত্যকে সবাই ভালবাসলেও সত্যকে কেউ গ্রহণ করেনা। যার মৌলিক কারণ হল হিংসা ও অহংকার। রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কোন অঙ্গনই এ থেকে মুক্ত নয়। অথচ অহংকারের পতন যে অবশ্যম্ভাবী, তার বাস্তব প্রমাণ এদেশেই রয়েছে। আল্লাহ আমাদেরকে হিংসা ও অহংকারের অনিষ্টকারিতা হতে রক্ষা করুন।

সর্বপরি বর্তমান সমাজে আমরা দেখি সবলদের মাঝে অহংকারী বেশী দূর্বলদের মাঝে হিংসুক বেশী৷ হিংসা এবং অহংকার মানুষকে বেশী জাহান্নামের দিকে ধাবিত করবে৷ আল্লাহ আমাদের হিংসা ও অহংকার হতে রক্ষা করুন আমীন৷

 

No comments:

Post a Comment

razzakhowlader59@gmil.com