“ঘুম” ইসলাম ও
স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ
-এম এ রাজ্জাক হাওলাদার
১ম পর্ব
ভূমিকা:
ঘুম আল্লাহ তাআলার অনেক বড় নিআমত। বান্দার প্রতি আল্লাহ
তাআলার এক বিশেষ অনুগ্রহ ও দান। সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য ঘুমের বিকল্প
নেই। শারীরিক-মানসিক ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করতে এই পৃথিবীতে আল্লাহ তাআলা ঘুমকে
অন্যতম প্রধান মাধ্যম বানিয়েছেন।
দিনভর ক্লান্তিকর চলাফেরার পর মানুষ যখন নিস্তেজ হয়ে পড়ে; কর্মক্ষম মানুষ অক্ষম হয়ে পড়ে, শক্তিমান মানুষ দুর্বল হয়ে পড়ে, সে সময় এ নিআমতই হয়ে ওঠে তার একমাত্র অবলম্বন, যার মাধ্যমে সে শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি লাভ করে। ফিরে
পায় পরবর্তী দিবসের জন্যে নতুন প্রাণশক্তি ও নবতর উদ্যম।
কোনো ব্যক্তি যত প্রখর মেধারই অধিকারী হোক, যত শক্তিশালীই হোক-কেবল দু-একটি রাত বিনিদ্র কাটলে বা
নিয়মতান্ত্রিক ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে মেধাশক্তি অকেজো হয়ে যায়। আচার-আচরণে, চলা-ফেরায় এবং কথাবার্তা ও কাজেকর্মে ভারসাম্য নষ্ট হয়ে
যায়। বস্তুত এ নিআমতের কদর সে-ই সর্বাধিক বুঝতে পেরেছে, যার রাত কাটে নিদ্রাহীন; বিভিন্ন ব্যবস্থাপত্র গ্রহণের পরও আরামের বিছানায় এপাশ ওপাশ
করে যার রাত ভোর হয়।
আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি, আল্লাহ তাআলার কী মহান নিআমত নিয়মিত ভোগ করে যাচ্ছি? অবিরত তাঁর কত বড় অনুগ্রহ লাভ করে যাচ্ছি!
ঘুম
সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের বাণী
وَ
مِنْ اٰیٰتِهٖ مَنَامُكُمْ بِالَّیْلِ وَ النَّهَارِ وَ ابْتِغَآؤُكُمْ مِّنْ
فَضْلِهٖ١ؕ اِنَّ فِیْ ذٰلِكَ لَاٰیٰتٍ لِّقَوْمٍ یَّسْمَعُوْنَ
“আর তাঁর
নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে তোমাদের রাতে ও দিনে ঘুমানো এবং তোমাদের তাঁর অনুগ্রহ
সন্ধান করা। অবশ্যই এর মধ্যে রয়েছে বহু নিদর্শন এমনসব লোকদের জন্য যারা (গভীর মনোযোগ
সহকারে) শোনে।”(আর-রূম-৩০:২৩)
কখন ঘুমানো উচিত?
Benjamin Franklin বিখ্যাত উক্তি, Early to bed and early to rise, makes
a man healthy, wealthy and wise.
রাতে জলদি
ঘুমাতে যাওয়া আর সকালে জলদি ঘুম থেকে উঠা সুস্বাস্থ্য, সম্পদ আর জ্ঞানের পূর্বশর্ত। বিষয়টি রাসুল (সা.)-এর হাদিসের
সঙ্গেও মিলে যায়। আমাদের প্রিয় নবী (সা.)রাতে দেরি করে ঘুমানো অপছন্দ করতেন।
সাহাবায়ে কিরামকে তাগিদ দিতেন এশার পরপরই ঘুমিয়ে যাওয়ার।
হযরত আবূ বারযা (রা:) বলেন,
وَكَانَ
يَسْتَحِبُّ أَنْ يُؤَخِّرَ الْعِشَاءَ. قَالَ وَكَانَ يَكْرَهُ النَّوْمَ
قَبْلَهَا وَالْحَدِيثَ بَعْدَهَا،
“রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম‘ইশার
সালাত একটু বিলম্বে আদায় করাকে তিনি পছন্দ করতেন। আর ‘ইশার’ পূর্বে ঘুমানো এবং পরে কথাবার্তা বলা তিনি অপছন্দ
করতেন।” (সহীহ বুখারী-৫৯৯)
অবশ্য তিনি প্রয়োজনে পরিবারের লোকদের সাথে কথাবার্তা বলতেন, মেহমান থাকলে তার সাথে সৌজন্য কথাবার্তা বলতেন, তিনি দ্বীনী প্রয়োজনে হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর সাথে কথা বলেছেন বলে হাদিসে প্রমাণিত রয়েছে।
তবে তার সাধারন অভ্যাস ছিল এশার পরে দ্রুত ঘুমিয়ে যাওয়া।
স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে রাতে দেরিতে ঘুমানোর
অপকারিতা:
মানুষের সুস্থতার জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম এবং এর
জন্য সবচেয়ে উপযোগী সময় হলো রাত। কেননা আল্লাহ তাআলা রাতকে বিশ্রামের উপযোগী করেই
বানিয়েছেন।মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَّ
جَعَلْنَا نَوْمَكُمْ سُبَاتًاۙ
“তোমাদের
ঘুমকে করেছি শান্তির বাহন,
وَّ
جَعَلْنَا الَّیْلَ لِبَاسًاۙ
রাতকে
করেছি আবরণ।
وَّ جَعَلْنَا
النَّهَارَ مَعَاشًا۪
এবং দিনকে
জীবিকা আহরণের সময়? (আন-নাবা-৭৮:৯-১১)
WHO এর ক্যান্সারবিষয়ক গবেষণা বিভাগ International Agency
for Research Cancer এর তথ্য
মতে,
যখন সূর্যের আলো থাকে না তখন
শরীরকে কাজ করতে বাধ্য করা বা জাগিয়ে রাখা শরীরে মেলাটনিন হরমোন তৈরিতে বাধা
সৃষ্টি করে।
আর এই মেলাটনিনই মানুষের দেহে টিউমারের বৃদ্ধিকে রোধ করে।
ফলে তাদের ধারণা,
রাত জাগা মানুষদের ক্যান্সার
হওয়ার ঝুঁকি বেশি অর্থাৎ রাতের ঘুম অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং এটি কোনোভাবেই দিনের
বেলায় ঘুমিয়ে পুষিয়ে নেওয়া যায় না।
সুতরাং আমাদের সকলকে বিষেশ করে রাতের বেলা গল্পগুজব, সিনেমা, ফেসবুকিংসহ
সব অহেতুক কাজ থেকেই বিরত থাকা প্রয়োজন। কারণ রাতে অহেতুক দেরি করে ঘুমানো মানুষকে
শেষরাতের ইবাদত ও ফজর নামাজ থেকে যেমন বঞ্চিত করে, তেমনি এটি স্বাস্থ্যের জন্যও মোটেই শুভকর নয়।
যুক্তরাজ্যের এক দল গবেষকের মতে, যারা দেরিতে ঘুমায় ও দেরিতে ঘুম থেকে ওঠে, তাদের অকালমৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়। যুক্তরাজ্যের মেডিসিন
বিশেষজ্ঞ ডা. পিরেঞ্জ লেভি বলেন, রাত জাগার
বদ-অভ্যাস যারা গড়ে তুলেছে,
তাদের ৯০ শতাংশই মানসিক
রোগের শিকার। ৩০ শতাংশে থাকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি। এছাড়া স্নায়বিক
সমস্যা থেকে শুরু করে অন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়।
কতক্ষণ ঘুমানো উচিত:
স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীদের মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য সাত ঘন্টা ঘুম প্রয়োজন।
তবে এক্ষেত্রে আমাদের রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনের দিকে তাকালে
কিছুটা ব্যতিক্রম পাওয়া যায়। তা হল- তিনি এশার সালাত আদায় করে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তেন এবং
মধ্যরাতের কিছুক্ষণ পর জেগে যেতেন। অর্থাৎ তিনি আনুমানিক রাত ৯:০০ টার দিকে
ঘুমিয়ে যেতেন এবং রাত ১:০০টা থেকে ২:০০ টার মধ্যে জেগে যেতেন। এরপর মহান আল্লাহর
ইবাদতে লিপ্ত হতেন এবং ফজরের পূর্বে কিছু সময়ের জন্য বিশ্রাম গ্রহণ করতেন । এরপর
ফজরের আযান হলে মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করতেন
অবশ্য স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীদের অভিমত, রাত ৯:০০ টা থেকে ২:০০ টা পর্যন্ত সময়ের ঘুম অন্য সময়ের তিন ঘন্টা ঘুমের
সমান।
মহান আল্লাহ তায়ালা যখন রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবুয়তের কঠিন দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োজিত
করলেন তখন তাঁকে মধ্যরাতের পর জেগে আল্লাহর ইবাদত করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। মহান
আল্লাহ বলেন,
یٰۤاَیُّهَا
الْمُزَّمِّلُۙ
হে বস্ত্র
মুড়ি দিয়ে শয়নকারী,
قُمِ
الَّیْلَ اِلَّا قَلِیْلًاۙ
রাতের
বেলা নামাযে রত থাকো। তবে কিছু সময় ছাড়া,
نِّصْفَهٗۤ
اَوِ انْقُصْ مِنْهُ قَلِیْلًاۙ
অর্ধেক
রাত,
কিংবা তার চেয়ে কিছু কম
করো।
اَوْ
زِدْ عَلَیْهِ وَ رَتِّلِ الْقُرْاٰنَ تَرْتِیْلًاؕ
অথবা তার
ওপর কিছু বাড়িয়ে নাও। আর কুরআন থেমে থেমে পাঠ করো।
(আল-মুজ্জাম্মিল-৭৩:১-৪)
অপর একটি আয়াতে মহান
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,
وَ
مِنَ الَّیْلِ فَتَهَجَّدْ بِهٖ نَافِلَةً لَّكَ١ۖۗ عَسٰۤى اَنْ یَّبْعَثَكَ
رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُوْدًا
“আর রাতে
তাহাজ্জুদ পড়ো অর্থাৎ রাতে ঘুম থেকে জেগে সালাত আদায় কর। এটি তোমার জন্য নফল। অচিরেই তোমার রব তোমাকে “প্রশংসিত স্থানে” প্রতিষ্ঠিত করবেন।” (বনী ইসরাঈল-১৭:৭৯)
অতএব রাত দুইটা থেকে ফজর পর্যন্ত
সময় শরীর ও মন প্রশান্ত থাকে। এই সময় গবেষণা করা, কোন বিষয় মুখস্ত করা, আল্লাহকে স্মরণ করা এবং এবাদত বন্দেগীর জন্য খুবই উপযোগী
সময়।
তাই আসুন, যারা
দুনিয়া ও আখেরাতে সফলকাম হতে চান, তাদের উচিত ঘুম থেকে উঠে নিজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজটি
সম্পাদন করা।
চলবো--------।
“ঘুম” ইসলাম ও
স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ
-এম এ রাজ্জাক হাওলাদার
২য় পর্ব শেষ
ঘুম খুব ভোরে উঠার উপকারিতা:
ঘুম খুব ভোরে উঠা সকল সম্পদ ও
জ্ঞানের জন্য পূর্বশর্ত।এক কথায় বলা যায় সফলতার চাবিকাঠি।
কেননা ভোররাতে বা দিনের শুরুতে সবচেয়ে বেশি কল্যাণ থাকে। শুধু ইবাদত-বন্দেগিই নয়, দুনিয়াবি কাজের জন্যও এটি সবচেয়ে উপযুক্ত ও বরকতময়
সময়।রাসুলুল্লাহ (সা.)ভোরবেলার কাজের জন্য বরকতের দোয়া করেছেন।
হযরত সখর
গামেদি (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুল
(সা.)-এ দোয়া করেছেন,
“হে আল্লাহ, আমার
উম্মতের জন্য দিনের শুরুকে বরকতময় করুন।” এ জন্যই রাসুল (সা.) কোনো যুদ্ধ অভিযানে বাহিনী পাঠানোর সময়
দিনের শুরুতে পাঠাতেন।
বর্ণনাকারী
বলেন,
সখর (রা.)-ও তার ব্যবসায়ী
কার্যক্রম ভোরবেলা শুরু করতেন। এতে তাঁর ব্যবসায় অনেক উন্নতি হয়। তিনি সীমাহীন
প্রাচুর্য লাভ করেন। (আবু দাউদ-২৬০৬)
তা ছাড়া এ সময় বান্দার রিজিক বণ্টন হয়। যারা তখন ঘুমিয়ে
থাকে তারা সফলতা ও রিজিকের বরকত থেকে বঞ্চিত হয়।
প্রিয় নবী
(সা.) ইরশাদ করেন,
“সকালবেলায় রিজিকের অন্বেষণ
করো! কেননা সকালবেলা বরকতময় ও সফলতা অর্জনের জন্য উপযুক্ত সময়।” (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ-৬২২০)
হযরত ফাতেমা
বিনতে মুহাম্মদ (সা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “একদা
রাসুল (সা.) আমার ঘরে এসে আমাকে ভোরবেলায় ঘুমন্ত অবস্থায় দেখলেন, তখন আমাকে পা দিয়ে নাড়া দিলেন এবং বললেন, মামণি! ওঠো! তোমার রবের পক্ষ থেকে রিজিক গ্রহণ করো! অলসদের
দলভুক্ত হয়ো না। কেননা আল্লাহ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত মানুষের মধ্যে
রিজিক বণ্টন করে থাকেন।” (আত-তারগিব ওয়াত তারহিব-২৬১৬)
খুব ভোরে উঠা মানুষগুলো সবার থেকে আলাদা ও কর্মদক্ষ হয়ে থাকে।
গবেষণায় দেখা যায়,
যারা খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠে
কিংবা রাতে কম ঘুমায়,
অন্যদের তুলনায় তাদের আইকিউ
(IQ) ভালো হয়।
“টেক্সাস
বিশ্ববিদ্যালয়ের” একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিক্ষার্থী ভোরবেলায়ই জাগতে পারে, তারা দেরিতে জাগ্রতদের চেয়ে বেশি নম্বর পায়। তাদের (GPA)জিপিএ অন্যদের তুলনায় বেশি
হয়। এই সাফল্যের পেছনে তারা বাড়তি উৎপাদনশীলতা এবং ভালো ঘুম হওয়াকেই কারণ হিসেবে
উল্লেখ করে।
সকালে দেরিতে ঘুম থেকে উঠার অপকারিতা:
যুক্তরাজ্যের “সুবে বিশ্ববিদ্যালয়ের” ক্রোনোলজি বিভাগের
অধ্যাপক জন রিচার্ডসন বলেন, “আমরা
দেখেছি,
যারা দেরি করে ঘুম থেকে ওঠে
তারা নানা ধরনের মানসিক ও শারীরিক জটিলতায় ভোগে। তাদের গড় আয়ু নিয়মিত সকালে উঠা
মানুষের চেয়ে সাড়ে ছয় বছর কম।” (ইউকিপিডিয়া)
হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী ঘুম:
ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ অনুযায়ী, সূর্যদয় ও সূর্যাস্তের সময় ঘুমিয়ে থাকলে, সেই ব্যক্তি রোগী ও দরিদ্র হয়। মনে রাখবেন সূর্যাস্তের এক
প্রহর (প্রায় 3
ঘণ্টা) পর ঘুমানো উচিত।
মনুস্মৃতি
অনুযায়ী খালি ও নির্জন ঘরে একা ঘুমানো উচিত নয়। এর পাশাপাশি দেব মন্দির ও শ্মশানে
ঘুমানো অনুচিত।
আবার
বিষ্ণুস্মৃতি অনুযায়ী,
কোনও ঘুমন্ত ব্যক্তিকে হঠাৎ
জাগাতে নেই।
চাণক্য নীতি
অনুযায়ী,
যদি ছাত্র, সেবক বা দ্বারপাল অধিক সময় পর্যন্ত ঘুমায়, তা হলে তাঁদের তৎক্ষণাৎ জাগিয়ে দেওয়া উচিত।
পদ্মপুরাণে
বলা হয়েছে,
আয়ু রক্ষার জন্য সুস্থ
মানুষকে ব্রহ্মমূহুর্তে উঠে যাওয়া উচিত।
ঘুম যাওয়ার সুন্নাত পদ্ধতি:
ইসলাম এমন একটি জীবন ব্যবস্থা যেখানে মানুষের জীবনের
প্রত্যেকটি বিভাগ সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। আর তাই ঘুম ও
এর ব্যতিক্রম নয়। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন
থেকে ঘুমানোর কিছু সুন্নাত ও আদব হলো।
১.
ঘুমানোর আগে ওযু করা। তাতে ঘুম ভালো হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.)ইরশাদ করেছেন- “যখন তুমি বিছানায় গমন করবে তখন সালাতের ওযুর মতো ওযু করে নাও।” (সহীহ বুখারী-২৪৭)
বিশেষ করে কোন ব্যক্তি যদি স্ত্রীর সাথে মিলিত হয় তাহলে
তার উচিত নিজের লজ্জাস্থান ভালো করে পরিষ্কার করে ওযু করে ঘুমানো। এতে সে বিভিন্ন রকমের শারীরিক অসুস্থতা থেকে বেঁচে যাবে।
২.
ঘুমানোর আগে বিছানা ঝেড়ে পরিষ্কার করে নেওয়া এবং বাতি নেভানো সুন্নত।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ বিছানায় শয্যা গ্রহণ করতে যায়, সে যেন তার লুঙ্গির/চাদরের ভেতর দিক দিয়ে নিজ বিছানা ঝেড়ে
নেয়। কারণ তার জানা নাই যে,
বিছানার উপর তার
অনুপস্থিতিতে পীড়াদায়ক কোনো কিছু পড়েছে কি না।”
(সহীহ বুখারী-৬৩২০)
৩. ঘর
বন্ধ করার সময় বিসমিল্লাহ বলে দরজা বন্ধ করা। প্রিয় নবীজী বলেন-“তোমরা আল্লাহর
নাম নিয়ে দরজা বন্ধ করবে। কেননা শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না।” (সহীহ বুখারী-৩৩০৪)
৪. ঘুমানোর
আগে প্রয়োজনীয় দোয়া ও জিকির পাঠ করা। যেমন:
(ক) আয়াতুল কুরসি পাঠ: রাসূলুল্লাহ (সা.)বলেছেন, “কোন ব্যক্তি যদি ঘুমানোর পূর্বে আয়াতুল কুরসি পাঠ
করেন তাহলে আল্লাহ তার হেফাজতের জন্য একজন ফেরেশতা নিয়োজিত করেন।”
(খ) সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করে হাতের মধ্যে ফুঁ দিয়ে সমস্ত শরীরে হাত বোলানো।
(গ) সূরা বাকারার শেষ দু‘টি আয়াত পাঠ করা। এ দু‘টি আয়াত এমন, যা মহান আল্লাহতালা মেরাজের রাতে সরাসরি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর উপর নাযিল করেন। এর ফজিলত হল, কোন ব্যক্তি যদি সময় উক্ত দু‘টি আয়াত তেলাওয়াত করে তাহলে
তা ওই ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে।
(ঘ)সুরা
মুলক পাঠ করা। এর ফজিলত হল,
এই সূরাটি ঐ ব্যক্তিকে কবরের আজাব থেকে হেফাজত করবে।
(ঙ) সুবহানাল্লাহ-৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ-৩৩ বার এবং আল্লাহু
আকবার ৩৪ বার পাঠ করা।
৬.
ঘুমানোর দোয়া পাঠ করা তা হল, “আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমূতু ওয়া আহইয়া।”
৭. ডান
কাতে ঘুমানো,
তবে বিশেষ প্রয়োজনে পার্শ্ব
পরিবর্তন করা যাবে।
৮. উপুড়
হয়ে ঘুমানো নিষেধ।
৯. ঘুমের
মধ্যে কোন খারাপ স্বপ্ন দেখলে পার্শ্ব পরিবর্তন করা এবং বাম দিকে তিনবার থুথু ফেলে
“আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম” পাঠ করা তাহলে আশা করা যায় এই স্বপ্নে তার
কোন ক্ষতি হবে না।
১০. ঘুম
থেকে জেগে আল্লাহর প্রশংসা করা এবং দোয়া পাঠ করা: “আলহামদুলিল্লাহিল্লাযি
আহইয়ানা বা'দামা আমা-তানা ওয়া ইলাইহিন নুশূর।”
সার্বিক বিবেচনায় সকালের ঘুম বিপদজনক ও মারাত্মক ক্ষতিকর। প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দু'আ—“اللهم بارك لأمتي في بكورها” “হে আল্লাহ, আমার
উম্মতের জন্য দিনের শুরুর অংশকে বরকতময় করুন।” الصبحة تمنع الرزق “ “সকালের ঘুম রিযিককে বাধাগ্রস্ত করে।”
রঈসুল মুফাস্সিরীন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদি. তাঁর
এক সন্তানকে সকালে ঘুমোতে দেখে বলেছিলেন ”أ تنام في الساعة اللتي تقسم فيها الرزق؟ “তুমি কি এমন সময়ে ঘুমিয়ে আছো, যখন রিযিক বণ্টন হয়?” যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষের ওপর
গবেষণা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়—যারা সকালে ঘুমে অভ্যস্ত তাদের আয়ু কমে যায়, অকালে মৃত্যু হয়। আল্লাহ সকলকে হেফাজত করুক আমিন!!
সমাপ্তি কথা:
ঘুম বান্দার জন্য একটি ইবাদত স্বরূপ। কোন মানুষের যদি সঠিক
ভাবে ঘুম হয় তার শরির ভালো থাকে। প্রদিসের সকল কর্ম সূচী সঠিক ভাবে পালন করা যায়। সর্বোপরি বলতে পারি যে মহান
আল্লাহ তায়ালা এত সুন্দর ঘুম দিয়ে আমাদের শরীর ও মনকে প্রশান্ত করলেন এবং আমাদের
শরীরে শক্তি দিয়ে সতেজ বানালেন, সে মহান
রবের শুকরিয়া স্বরূপ ফজরের সালাত মসজিদে জামাতের সাথে আদায় করা। ঘুমের সমাপ্তি করা। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের এ বিষয়ের উপর আমল করার তাওফিক
দান করুন। আমিন।
No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com