বিশ্ব
আলেমদের দৃষ্টিতে করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯
মহামারী
সমায়ের দাবি বুঝতে হবে আলেসগণকে
মহামারি করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯
বর্তমান যুগের বিশেষজ্ঞগণের কথা বনাম ইসলামের নির্দেশনা
ভূমিকা
১। বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস কোভিড-১৯। প্রতিদিন আক্রান্ত
ব্যক্তি এবং মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। এ সময় প্রতিটি দেশে কোয়ারেন্টিন, লকডাউন
এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। ইসলামিক স্কলারদের দাবি
হলো এসব পদ্ধতি মহামারির বিস্তার রোধে প্রিয়নবী (সা.)-এর একটি নির্দেশনা। এ পন্থার
সর্ব প্রথম প্রয়োগ ছিল ওমর (রা.)-এর যুগে। তাই বলা যায়, সাম্প্রতিক
সময়ে বহুল আলোচিত এই পদ্ধতির নির্দেশনা দিয়েছে সর্বপ্রথম ইসলাম এবং বিশ্বনবী
মুহাম্মদ (সা.)।
জীবন রক্ষার গুরুত্ব এবং মহামারী সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনা
এ বিষয়ে কয়েকটি আয়াত ও হাদিস উসুল তথা মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ
করা যাবে।
মানুষের জীবন রক্ষার গুরুত্ব
সম্পর্কে কুরআনে এসেছে-
وَلَا
تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ ﴿البقرة: ١٩٥﴾
‘এবং তোমরা
নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না।’ (সুরা
বাকারা : আয়াত ১৯৫)
وَلَا
تَقْتُلُوا أَنفُسَكُمْ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا ﴿النساء: ٢٩﴾
‘আর
নিজেদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়াশীল।’ (সুরা
নিসা : আয়াত ২৯)
আয়াত দুটিতে এ কথাই প্রমাণিত হয় যে, জীবন
নাশের কারণ তথা প্রাণঘাতী মহামারি জনিত বিষয়গুলো থেকে বেঁচে থাকা ওয়াজিব বা
আবশ্যক।
রাসুলুল্লাহ
(সাঃ) মহামারি সংক্রান্ত অনেক হাদিস বর্ণনা করেছেন। মহামারি বিস্তৃতি লাভের কারণে
যথাযথ সতর্কতা অবলম্বনের অপরিহার্যতা তুলে ধরেছেন। হাদিসে এসেছে-
عَنْ
أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ
" لاَ يُورِدَنَّ مُمْرِضٌ عَلَى مُصِحٍّ
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, ‘কোনো
ব্যক্তি যেন তার অসুস্থ উটকে সুস্থ উটের কাছে নিয়ে না যায়।’ (বুখারীঃ
তা.পা ৫৭৭১, ৫৭৭৪ ; মুসলিম
৩৯/৩৩, হাঃ ২২২১, আহমদ
৯২৭৪] (আ.প্র.৫৩৪৯, ই.ফা.৫২৪৫)
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) আরো বলেছেন,
وَفِرَّ
مِنَ المَجْذُومِ كَمَا تَفِرُّ مِنَ الأَسَدِ
‘কুষ্ঠরোগী থেকে এমনভাবে পালিয়ে যাও যেভাবে সিংহ থেকে পলায়ন
কর।’ [ বুখারীঃ তা.পা ৫৭০৭, ৫৭১৭, ৫৭৫৭, ৫৭৭০, ৫৭৭৩, ৫৭৭৫]
এ ধরনের আরেকটি হাদিস রয়েছে:
عَنْ
عَمْرِو بْنِ الشَّرِيْدِ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: كَانَ فِي وَفْدِ ثَقِيفٍ رَجُلٌ
مَجْذُومٌ فَأَرْسَلَ إِلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّا قَدْ بَايَعَنَاكَ فَارْجِعُ ( رَوَاهُ مُسْلِمُ)
আমর ইবনু শারীদ (রাঃ) সুত্রে তার
পিতা থেকে বর্ণিত। সাকীফ গোত্রীয় প্রতিনিধি দলের মাঝে একজন কুষ্ঠ রোগী ছিলেন । নবী
(সাঃ) তার কাছে (সংবাদ) পাঠালেন যে, আমরা
তোমাকে বায়আত করে নিয়েছি। তুমি ফিরে যাও। ( মুসলিমঃ ই.ফা. ৫৬২৮, ই.সে.
৫৬৫৭)
এই নির্দেশের ফলে কুষ্ঠরোগীটি রাসুলের স. সাহাবী হওয়ার
মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হলেন।
হাদিসে আরও এসেছে,
عَنْ
أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ إِذَا سَمِعْتُمْ بِالطَّاعُونِ بِأَرْضٍ فَلَا تَدْخُلُوا عَلَيْهِ
وَإِذَا وَقَعَ وَأَنْتُمْ بِأَرْضٍ فَلَا تَخْرُجُوا فِرَارًا مِنْهُ (بخاري
ومسند احمد)
‘যদি কোনো
এলাকায় মহামারির কথা শুনো তবে সেখানে যেও না। আর যদি (মহামারি আক্রান্ত) কোনো
এলাকায় তোমাদের থাকা অবস্থায় মহামারি সৃষ্টি হয় তাহলে সেখান থেকে বের হবে না।’ (বুখারীঃ
তা.পা ৫৭২৮, ৩৪৭৩](ই.ফা. ৫৩০৮ ই.ফা. ৫২০৪) মুসনাদে আহমাদ- ৩৬/
১৩৯- ২১৮১১)
ইসলামের দৃষ্টিতে সংক্রামক রোগ
ইসলামের
দৃষ্টিতে শরীরে রোগ-ব্যাধি দেওয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ, আবার
তাঁর ইচ্ছায়ই আরোগ্য লাভ করা যায়। কোনো বস্তুর বা ব্যক্তি কাউকে রোগাক্রান্ত করতে
পারে না, আবার তা থেকে সুস্থ করে তুলতেও পারে না। আমাদের জীবন-মৃত্যু, সুস্থতা
অসুস্থতা একমাত্র আল্লাহর হাতেই। তাই মহান আল্লাহ বিভিন্ন রোগ যেমন সৃষ্টি করেছেন, তার
প্রতিষেধকও সৃষ্টি করেছেন, বান্দা কখনো কখনো তাঁর দয়ায় সেই প্রতিষেধক জানতে পারে, আবার
কখনো কখনো জানতে পারে না। আল্লাহ তাআলা এই দুনিয়ায় উপকার গ্রহণের জন্য এবং তার
ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য উপায় অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন। এই জন্যই চিকিৎসা এবং
সর্তকতা দুটিরই গুরুত্ব রয়েছে। হাদিসে এসেছে-
إِنَّ
اللَّهَ لَمْ يَضَعْ دَاءً إِلَّا وَضَعَ لَهُ شِفَاءً، غَيْرَ دَاءٍ وَاحِدٍ
الْهَرَمُ
‘হযরত
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘এমন
কোনো অসুস্থতা নেই যার প্রতিষেধক আল্লাহ অবতীর্ণ করেননি।’ (আবু
দাউদ-৩৮৫৫)
হাদিসে আরোও এসেছে-
عَنْ
أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ قَالَ مَا أَنْزَلَ اللَّهُ
دَاءً إِلَّا أَنْزَلَ لَهُ شِفَاءً
আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে রাসুল
(সা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ
এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি যার নিরাময়ের উপকরণ তিনি সৃষ্টি করেননি। (বুখারি, হাদিস
: ৫৬৭৮)
কোনো
রোগ আপন শক্তিতে মানুষকে আক্রান্ত কিংবা হত্যা করার শক্তি রাখে না, এটাও
সত্য। কিন্তু তাই বলে কোনো এলাকায় রোগ-ব্যাধি দেখা দিলে সেখানে অসতর্ক অবস্থায়
চলাফেরার অনুমতিও ইসলাম দেয়নি। কোনো এলাকায় মহামারি কিংবা সংক্রামক রোগের
প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে মহানবী (সা.) সেখানে যাতায়াত করতে বারণ করেছেন। এর আলোকে
আমরা বুঝতে পারি যে কোথাও রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে আমাদের অবশ্যই সতর্কতা
অবলম্বন করতে হবে। আর لا عدوى ولا طيرة‘সংক্রামক
রোগ বলতে কিছু নেই’ বলতে যে হাদিসটি উল্লেখ করা হয়েছে, তার
মানে হলো, রোগের কোনো নিজস্ব শক্তি নেই মানুষকে আক্রান্ত করার। তবে
যেহেতু রাসুল (সা.) এ সময় সতর্ক থাকতে বলেছেন, তাই
কোথাও এ ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে আমাদের অবশ্যই যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন
করতে হবে।
তাই আমরা সংক্রামক রোগকে মহান
আল্লাহর হুকুমের চেয়ে শক্তিশালী ভাবার যেমন কোনো সুযোগ নেই, তেমনি
কোথাও এ ধরনের রোগ দেখা দিলে তাকে অবহেলা করারও সুযোগ নেই। আমাদের
উচিত সর্বাবস্থায় আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)
নির্দেশিত পথ অনুসরণ করা।
মহামারি থেকে যেভাবে ওমর (রা.)
বেঁচে ছিলেন। ফিলিস্তিনের আল কুদস ও রামলার
মধ্যভাগে অবস্থিত একটি অঞ্চল হলো আমওয়াস বা ইমওয়াস। সেখানে প্লেগ রোগ প্রথম প্রকাশ
পায়। অতঃপর তা শামে ছড়িয়ে পড়ে। ইসলামের ইতিহাসে তা ‘তাউন
ইমওয়াস’ নামে পরিচিত। ১৯৬৭ সালে ইসরায়েল ইমওয়াস অঞ্চল পুরোপুরি
ধ্বংস করে ওই স্থানে কানাডাভিত্তিক ইহুদি তহবিলের অর্থায়নে একটি পার্ক তৈরি করা
হয়। বর্তমানে তা ‘কানাডা পার্ক’ নামে
সবার কাছে পরিচিত।
১৭
হিজরি ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে ওমর (রা.) দ্বিতীয়বারের মতো শাম পরিদর্শনের জন্য বের হন।
ওমর (রা.) শামে পৌঁছার পর শুনতে পান যে সেখানে প্লেগ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। তা ধীরে
ধীরে বিস্তার লাভ করছে।
আবদুল্লাহ
বিন আব্বাস থেকে বর্ণিত, উমর বিন খাত্তাব (রা.) শামের উদ্দেশে বের হন। শামে অবস্থিত
তাবুক গ্রামের ‘সারগ’ নামক
এলাকার কাছে এলে সেনাপতি আবু উবাদাহ ও অন্য নেতাদের সঙ্গে দেখা হয়। ওমর (রা.)-কে
তাঁরা অবহিত করল যে শামে মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে। তাঁদের
কথা শুনে ওমর (রা.) আমাকে বলেন, ‘ইসলামের
প্রথম পর্যায়ের মুহাজিরদের ডাক দাও।’ তাঁদের
সঙ্গে পরামর্শ করলেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিল। কেউ বললেন, আপনি
একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন। তা না করে ফিরে যাওয়া আমরা সমীচীন মনে
করছি না। অনেকে বলল, আপনার সঙ্গে অনেক মানুষ ও রাসুল (সা.)-এর মহান সাহাবিরা
আছেন। এমতাবস্থায় তাঁদের নিয়ে আপনি মহামারি আক্রান্ত এলাকায় যাবেন না।
সবার
কথা শুনে ওমর (রা.) বলেন, ‘তোমরা চলে যাও।’ অতঃপর
ওমর (রা.) আমাকে বললেন, ‘আনসারদের আমার কাছে ডেকে আনো।’ তাঁদের
ডেকে পরামর্শ করলেন। তাঁরাও মুহাজিরদের মতো মতবিরোধ করল। তিনি বলেন, ‘তোমরা
চলে যাও।’ অতঃপর আমাকে বলেন, ‘এখানে
কুরাইশ বংশের প্রবীণ মুহাজির সাহাবিদের ডাক দাও।’ আমি
তাদের ডেকে আনি। তাঁদের মধ্যে দুজনও মতবিরোধ করল না। সবাই অভিন্ন কথা ব্যক্ত করে
বলল, আমরা মনে করছি, আপনি
সব মানুষকে নিয়ে ফিরে যাবেন। মানুষকে এই মহামারিতে নেবেন না।’
অতঃপর
ওমর (রা.) সবাইকে সামনে নিয়ে ঘোষণা দিলেন, ‘আমি
চলে যাব। তোমরাও চলে যাও।’ [তখন শামের গভর্নর ছিলেন আবু উবাদায়
বিন জাররাহ (রা.)] এ কথা শুনে আবু উবাদাহ (রা.) বললেন, ‘আপনি
আল্লাহর তাকদির থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন?’ ওমর
(রা.) বলেন, ‘আহ, হে
আবু উবাদাহ, এমন কথা তুমি ছাড়া অন্য কেউ বলত!’ মূলত
ওমর (রা.) তাঁর মতভিন্নতাকে অপছন্দ করেছেন।
ওমর
(রা.) আবু উবায়দার প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা
আল্লাহর এক তাকদির থেকে অন্য তাকদিরের দিকে পালিয়ে যাচ্ছি। যেমন মনে করো, তোমার
অনেক উট আছে। তা নিয়ে তুমি এক উপত্যকায় এসেছ। উপত্যকার দুটি প্রান্ত আছে। এক
প্রান্ত উর্বর। আরেক প্রান্ত শুষ্ক। তুমি উর্বর প্রান্তে উট চরালে কি আল্লাহর
তাকদিরের ওপর নির্ভর করবে না? এবং
শুষ্ক প্রান্তে চরালেও কি আল্লাহর তাকদিরের ওপর নির্ভর করবে না?’ কিছুক্ষণ পর আবদুর রহমান বিন আউফ
(রা.) এলেন। কোনো এক প্রয়োজনে তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, এ
বিষয় সম্পর্কে আমার জ্ঞান আছে। আমি রাসুল (সা.)-এর কাছে শুনেছি, ‘তোমরা
কোনো অঞ্চলে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাবের কথা শুনলে তাতে প্রবেশ করবে না। তবে সেখানে
থাকাবস্থায় প্লেগ রোগ ছড়িয়ে পড়লে তোমরা সেখান থেকে বের হবে না।’ এ
কথা শুনে ওমর (রা.) আলহামদুলিল্লাহ বললেন। অতঃপর সবাই ফিরে গেলেন।’ (বুখারি, হাদিস
: ৫৭২৯)
ওমর
(রা.) মহামারি চরম আকার ধারণের খবর অবগত হন। ওমর (রা.) চাইলেন সেনাপতি আবু উবায়দা
(রা.)-কে ফিরিয়ে আনতে। তাই ওমর (রা.) একটি চিঠি লিখলেন, ‘তোমার
ওপর শান্তি বর্ষণ হোক। তোমার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। এ সম্পর্কে সরাসরি তোমাকে বলতে
চাই। তাই তোমাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বলছি, আমার
পত্র পড়ে আমার উদ্দেশে বের হওয়ার আগে পত্রটি তোমার হাতছাড়া করবে না। রাতে পত্র
পৌঁছলে সকাল হওয়ার আগেই যাত্রা শুরু করবে। আর দিনের বেলায় পৌঁছলে সন্ধ্যা হওয়ার
আগেই যাত্রা শুরু করবে।’ আবু উবায়দা (রা.) পত্র পড়ে উদ্দেশ্য বুঝে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ
আমিরুল মুমিনিনকে ক্ষমা করুন।’ অতঃপর
ওমর (রা.)-এর উদ্দেশে একটি পত্র লিখলেন, ‘হে
আমিরুল মুমিনিন, আমি আপনার প্রয়োজনের বিষয় বুঝেছি। আমি এখন মুসলিম
সেনাবাহিনীতে অবস্থান করছি। তাদের ছেড়ে যেতে চাই না। আল্লাহ তাআলা আমিসহ সবার
ব্যাপারে ফায়সালা করবেন। অতএব হে আমিরুল মুমিনিন, আপনার
সিদ্ধান্ত থেকে আমাকে মুক্ত করুন। আমার সৈন্যবাহিনীর সঙ্গে আমাকে ছেড়ে দিন।’
আবু উবায়দা (রা.)-এর পত্র পড়ে ওমর
(রা.) কাঁদতে থাকেন। আশপাশের মুসলিমরা ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘হে
আমিরুল মুমিনিন, আবু উবায়দা কি শহীদ হয়েছেন? ওমর
(রা.) বলেন, ‘না, তিনি
এখনো শহীদ হননি। কিন্তু ৃ।’ অর্থাৎ শিগগির তিনি শহীদ হবেন।’ এর
পরই আবু উবায়দা (রা.) প্লেগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। (আল
বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৭/৪৪)
ওমর (রা.)-এর যুগে যেভাবে মহামারির
সমাপ্তি ঘটে
আবু
উবায়দা (রা.) পরবর্তী সেনাপতি হিসেবে মুআজ বিন জাবাল (রা.)-কে নির্ধারণ করেন। মুআজ
(রা.)-এর মৃত্যুর পর আমর ইবনুল আস (রা.)-কে সেনাপতি নিযুক্ত করা হয়। তিনি মানুষের
উদ্দেশে বক্তব্য দিয়ে বলেন, ‘হে লোকেরা, এই
রোগের প্রাদুর্ভাব হলে তা আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ে। তাই তোমরা পাহাড়ে গিয়ে আশ্রয় নাও।
এক বর্ণনা মতে, তোমরা পৃথক পৃথকভাবে বিভিন্ন উপত্যকায় চলে যাও।’ অতঃপর
সবাই বেরিয়ে পড়ে। বিভিন্ন পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে আশ্রয় নেয়। অবশেষে আল্লাহ
তাআলা এই বিপদ থেকে তাদের মুক্ত করেন। আমর (রা.)-এর গৃহীত পন্থা খলিফা ওমর (রা.)
জানতে পারেন। তিনি তা অপছন্দ করেননি। (ফাতহুল বারি, ১০/১৯৯)
বর্তমান যুগের বিশেষজ্ঞগণের কথা
বনাম ইসলামের নির্দেশনা
(ক) সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন
হাদীস শরীফে এসেছে,
عَن
عَبد الله بن أبي أوفى، قال: قال رسول الله صَلَّى الله عَليْهِ وَسلَّم: كلم
المجذوم وبينك وبينه قيد رمح، أَو رمحين.الطب النبوي لابى نعيم الاصفاهنى –)292)
কুষ্ট রোগী
(মহামারীতে আক্রান্ত) ব্যক্তির সাথে কথা বলার সময় তোমাদের এবং তার মাঝে এক বল্লম
বা বর্ষা পরিমাণ দূরত্ব বজায় রাখবে। (আত-তিব্বুন নাববী লি আবি নাঈম আল-ইসফাহানী-২৯৬)
عَنِ
ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ النَّبِيَّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ " لاَ
تُدِيمُوا النَّظَرَ إِلَى الْمَجْذُومِينَ "
ইবনে আববাস থেকে বর্ণিত। নবী (সা) বলেন, ‘কুষ্ঠ
রোগীদের দিকে অপলক নেত্রে তাকিয়ে থেকো না।’ (ইবনে
মাজাহ-৩৫৪৩)
عَنْ
أَبِيهِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «لَا تُدِيمُوا
النَّظَرَ إِلَى الْمُجَذَّمِينَ، وَإِذَا كَلَّمْتُمُوهُمْ، فَلْيَكُنْ
بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُمْ قِيدُ رُمْحٍ
রাসূলুল্লাহ্ (সা)
বলেন, ‘কুষ্ঠ রোগীদের দিকে অপলক নেত্রে
তাকিয়ে থেকো না। তোমরা যখন কোনো কুষ্ট রোগী (মহামারীতে আক্রান্ত) ব্যক্তির সাথে
কথা বলবে, তবে তোমাদের এবং তাদের মধ্যে এক বল্লম
বা বর্ষা পরিমাণ দূরত্ব নিশ্চিত করবে।(gymbv‡` Avng`-581)
اجعل
بينك وبين المجذوم قدر رمح أو رمحين
তুমি কুষ্টরোগী থেকে এক বর্শা অথবা দুই বর্শা পরিমাণ দূরত্ব
বজায় রাখ। (মুসনাদে আহমদ-২২৩১)
আশ্চার্যের বিষয় হচ্ছে, এক বল্লম বা বর্ষা তখনকার সময় সাধারণত ৬ থেকে ৮ ফুট পর্যন্ত লম্বা হত! আর
এতটুটু দূরত্ব বজায় রাকার জন্যে এডভাইস করছেন বর্তমান যুগের বিশেষজ্ঞগণ।
(খ) পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা
বিশেষজ্ঞগণ বলছেন পরিস্কার পরিচ্ছন্নের কথা অথচ দেড় হাজার
বছর আগেই তা বলা হয়েছে।
আল্লহ
বলেন,
إِنَّ
اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ ﴿البقرة: ٢٢٢﴾
“নিশ্চয়ই আল্লহ
তাওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন।” (সুরা বাকারা-২২২)
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন,
الطهور
نصف الايمان وفي رواية الطهور شطر الايمان (بيهقي ومسلم)
‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
ও পবিত্রতাকে ঈমানের অঙ্গ বলেছেন।
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) আরোও বলেন,
نَظِّفُوا
أُرَاهُ قَالَ: أَفْنِيَتَكُمْ " رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
‘তোমরা (তোমাদের বাড়ী, চত্তর)
পরিচ্ছন্ন রাখবে।’ (তিরমিযী; মিশকাত-৪৪৮৭)
খাওয়ার পূর্বে হাত ভালভাবে ধুয়ে নিবে। (তুহফাতুল আহওয়াযী
৫/৪৮৫) আর খাবার পরে হাত ধোয়া যরূরী। রাসূল (ছাঃ) খাবার পরে কুলি করেছেন এবং হাত
ধুয়েছেন। (মুসনাদে আহমাদ হা/২৭৪৮৬; ইবনু
মাজাহ হা/৪৯৩)
তিনি বলেন,
مَنْ
نَامَ وَفِي يَدِهِ غَمَرٌ، وَلَمْ يَغْسِلْهُ فَأَصَابَهُ شَيْءٌ، فَلَا
يَلُومَنَّ إِلَّا نَفْسَهُ،
‘যে ব্যক্তি
হাতে গোশতের গন্ধ ও চর্বি না ধুয়ে তা নিয়েই ঘুমায়, অতঃপর
কোন বিপদ ঘটে, তাহ’লে সে যেন নিজেকে ছাড়া আর কাউকে দোষারোপ না করে’। (আবূদাঊদ
হা/৩৮৫২; তিরমিযী হা/১৮৬০; ইবনু
মাজাহ হা/৩২৯৭)
এখানে বিপদ বলতে, হাত
না ধুয়ে ঘুমানোর ফলে চর্বির গন্ধে তেলাপোকা, ইঁদুর
বা অন্য কোন প্রাণী হাত বা আঙ্গুল কামড়াতে পারে। তাছাড়া এতে কোন রোগ-ব্যাধি হওয়ারও
সম্ভাবনা থাকতে পারে।
(গ) হাঁচি ও হাই তোলার ব্যাপারে ইসলামরে বধিান কি?
ইচ্ছেকৃত হাইতোলা ভাল নয়। হাইকে যথা সম্ভব রুখে রাখার
চেষ্টা করা উচিত। তবে যদি এসেই যায়, তাহলে
মুখে হাত দিয়ে রাখবে। যাতে মুখ খোলা না থাকে। এটাই রাসূল সাঃ এর শিখানো পদ্ধতি।
عَنْ
أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ: ” إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ العُطَاسَ، وَيَكْرَهُ التَّثَاؤُبَ، فَإِذَا
عَطَسَ فَحَمِدَ اللَّهَ، فَحَقٌّ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ سَمِعَهُ أَنْ
يُشَمِّتَهُ، وَأَمَّا التَّثَاؤُبُ: فَإِنَّمَا هُوَ مِنَ الشَّيْطَانِ،
فَلْيَرُدَّهُ مَا اسْتَطَاعَ، فَإِذَا قَالَ: هَا، ضَحِكَ مِنْهُ الشَّيْطَانُ
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত।
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ পাক হাঁচি দেয়াকে পছন্দ করেন এবং হাই তোলাকে অপছন্দ
করেন; সুতরাং তোমাদের কেউ হাঁচি দিলে এবং “আলহামদুলিল্লাহ” বললে
এমন প্রত্যেক মুসলমানের উপর “ইয়ারহামুকাল্লাহ” বলা
বাধ্যতামূলক হয়ে যায়, যে হাঁচিদাতার “আলহামদুলিল্লাহ” বলা
শুনেছে। আর হাই তোলা হল শয়তানের প্রভাব দ্বারা কৃত। অতএব যখন তোমাদের কারো হাই আসে
তখন যথাসাধ্য তা প্রতিরোধ করবে। কেননা, কেউ
হাই তোললে অর্থাৎ মুখ হা করলে শয়তান বিদ্রুপের হাসি হাসে। {মুসনাদুল
বাজ্জার, হাদীস নং-৮৫০৮, বুখারী, হাদীস
নং-৬২২৩}
(ঘ) হাদীসের আলোকে হোম কোরেন্টাইন
عَن
عُقْبةَ بن عامرٍ قَالَ: لَقِيتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ فَقُلْتُ: مَا النَّجَاةُ؟ فَقَالَ
أَمْلِكْ عَلَيْكَ لِسَانَكَ وَلْيَسَعْكَ بَيْتُكَ وَابْكِ عَلَى
خَطِيئَتِكَ (رَوَاهُ أَحْمد
وَالتِّرْمِذِيّ)
উকবা ইবনে আমের (রাঃ) একবার রাসূলে কারীম (সাঃ)-কে জিজ্ঞাসা
করলেন, ‘নাজাতের উপায় কী? কোন
পথে চললে আমি নাজাত পেতে পারি? রাসূলে
কারীম (সাঃ) উত্তরে তিনটি আমলের কথা বললেন,
এক. তুমি তোমার যবান হেফাজত করো।
দুই. যেখানেই থাকো না কেন, প্রয়োজন
ছাড়া ঘর থেকে বের হোয়ো না।
তিন. গোনাহর জন্য আল্লাহর দরবারে কাকুতি-মিনতি করে কান্না-কাটি
করো।(তিরমিযী-২৪০৬; মেশকাত-৪৮৩৭)
(তিনটি বিষয়ই বর্তমানে করোনা ভাইরাস থেকে বাচার একমাত্র
মাধ্যম
(ঙ) জনসমাবেশ করার ব্যাপারে ইসলামের
নির্দেশনা
প্রতিকূল আবহাওয়ায় মানুষের কষ্টের কথা বিবেচনা করে তিনি
জামাতে নামাজ পড়াকে নিরুৎসাহিত করতেন। এর সপক্ষে আমি দ’টি
হাদিস লক্ষ্য করার অনুরোধ করছি।
عَنْ
أَبِي الْمَلِيحِ، قَالَ خَرَجْتُ فِي لَيْلَةٍ مَطِيرَةٍ فَلَمَّا رَجَعْتُ
اسْتَفْتَحْتُ فَقَالَ أَبِي مَنْ هَذَا قَالَ أَبُو الْمَلِيحِ . قَالَ لَقَدْ
رَأَيْتُنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَوْمَ الْحُدَيْبِيَةِ
وَأَصَابَتْنَا سَمَاءٌ لَمْ تَبُلَّ أَسَافِلَ نِعَالِنَا فَنَادَى مُنَادِي
رَسُولِ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ " صَلُّوا فِي رِحَالِكُمْ "
১. আবু সালীহ তার পিতার থেকে
বর্ণনা করেছেন, তিনি হুদায়বিয়ার দিন নবীর (সাঃ) কাছে হাজির হলেন। সেদিন
সামান্য কিছু বৃষ্টি হয়েছিল, যাতে
আমাদের জুতাও ভিজল না। এ অবস্থায় নবী (সাঃ) তাদেরকে নিজ নিজ তাবুতে নামাজ পড়ে নিতে
আদেশ করলেন। নাসায়ী-৮৫৪, আবূ দাঊদ-১০৫৭, আহমাদ-১৯৭৬৯, ২০১৮৮)
عَنِ
ابْنِ عُمَرَ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
يُنَادِي مُنَادِيهِ فِي اللَّيْلَةِ الْمَطِيرَةِ، أَوِ اللَّيْلَةِ الْبَارِدَةِ
ذَاتِ الرِّيحِ صَلُّوا فِي رِحَالِكُمْ
২. ইবনে উমার (রা.) থেকে বর্ণিত। বৃষ্টিপাতের রাতে
অথবা শীতের রাতে বায়ু প্রবাহ হলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর ঘোষক ডেকে বলতেন, তোমরা
তোমাদের আবাসস্থলে সলাত পড়ো। (বুখারী ৬৩২, ৬৬৬; মুসলিম
৬৯৭/১-২, নাসায়ী ৬৫৪, আবূ
দাঊদ ১০৬০-৬৩, আহমাদ ৪৪৬৪, ৪৫৬৬, ৫১২৯, ৫২৮০, ৫৭৬৬; মুওয়াত্ত্বা
মালিক ১৫৯, দারিমী ১২৭৫)
(চ) মসজিদে আযান ও নামাজ
মসজিদে নামাজ বন্ধ থাকা এবং মসজিদের দরজা বন্ধ রেখে আজান
দেয়ার বিষয়টির অনুমোদন দিয়েছেন। হাদিসের ঘোসণা মোতাবেক আজানের শব্দও পরিবর্তন হবে।
ابْنُ
عَبَّاسٍ لِمُؤَذِّنِهِ فِي يَوْمٍ مَطِيرٍ: إِذَا قُلْتَ أَشْهَدُ أَنَّ
مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، فَلاَ تَقُلْ حَيَّ عَلَى الصَّلاَةِ، قُلْ صَلُّوا
فِي بُيُوتِكُمْ، فَكَأَنَّ النَّاسَ اسْتَنْكَرُوا، قَالَ: فَعَلَهُ مَنْ هُوَ
خَيْرٌ مِنِّي، إِنَّ الجُمْعَةَ عَزْمَةٌ وَإِنِّي كَرِهْتُ أَنْ أُحْرِجَكُمْ
فَتَمْشُونَ فِي الطِّينِ وَالدَّحَضِ
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
তাঁর মুয়াজ্জিনকে এক বর্ষণ মুখর দিনে বললেন, যখন
তুমি (আযানে) [ أَشْهَدُ
أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ ] ‘আশহাদু
আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ বলবে, তখন
[حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ ] ‘হাইয়া আলাস সালাহ’ বলবে
না, বলবে, [ صَلُّوا فِي بُيُوتِكُمْ ] ‘সাললু
ফী বুয়ুতিকুম’- তোমরা নিজ নিজ বাসগৃহে স্বলাত আদায়
কর । তা লোকেরা অপছন্দ করল । তখন তিনি বললেনঃ আমার চাইতে উত্তম ব্যক্তিই
(রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তা করেছেন । জুমু’আ
নিঃসন্দেহে জরুরী । আমি অপছন্দ করি যে, তোমাদেরকে
মাটি ও কাদার মধ্য দিয়ে যাতায়াত করার অসুবিধায় ফেলি ।’ (বুখারীঃ
তা.পা ৬১৬ ) ( আ.প্র. ৮৪৮, ই.ফা. ৮৫৫ )
(ছ) নিজ ঘরে যে নামাজ আদায়ে রয়েছে
কল্যাণ
নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে বান্ধার সেতুবন্ধের অন্যতম মাধ্যম।
ফরজ নামাজ ছাড়া অন্যান্য সুন্নাত ও নফল নামাজ নিজ ঘরে লোকচক্ষুর অন্তরালে পড়াই
উত্তম। এ কারণেই হাদিসে পাকে সুন্নাত ও নফল নামাজ নিজ ঘরে আদায়ের ব্যাপারে তাগিদ
প্রদান করেছেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ
جَابِرٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَضَى
أَحَدُكُمُ الصَّلَاةَ فِي مَسْجِدِهِ، فَلْيَجْعَلْ لِبَيْتِهِ نَصِيبًا مِنْ
صَلَاتِهِ، فَإِنَّ اللهَ جَاعِلٌ فِي بَيْتِهِ مِنْ صَلَاتِهِ خَيْرًا
জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আল্লাহর
(রাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন মসজিদে (ফরজ)
নামাজ সম্পন্ন করে তখন তার উচিত সে যেন তার নামাজের কিছু অংশ (সুন্নাত নামাজ)
নিজের বাড়ির জন্য রাখে। কারণ বাড়িতে আদায় করা কিছু নামাজের মধ্যে আল্লাহ তাআলা কল্যাণ
নিহিত রেখেছেন।’ (সহীহ মুসলিম-১৬৯২)
উপসংহারঃ
মহামারিতে ভীত হওয়া, বা ভয় ছড়ানো ভালো ঈমানের লক্ষণ নয়। একে
কেন্দ্র করে মিথ্যার বেসাতি বিলানো আরো ভয়াবহ। আলিম উলামার উপর কর্তব্য একে
ট্যাকল করতে যেয়ে মানুষকে আল্লাহ মুখী করা ফেলা। কা’বাহ নিয়ে যেভাবে মানুষকে সাঊদি বিরোধি করা হচ্ছে, বাংলাদেশের অপ্রতুলতার জন্য যেভাবে ক্ষেপিয়ে তোলা হচ্ছে, আরবদের বিরুদ্ধে মসজিদ বন্ধের কারণে যেভাবে ট্রল করে তুচ্ছ ও তাচ্ছিল্য করা
হচ্ছে এই সব গুলো উম্মাতের সুস্থতার লক্ষণ নয়। মহামারিতে আমিও হতে পারি মৃত
ব্যক্তিদের একজন। আমার মুখ, আমার বুক, আমার মাথার
গ্রন্থির নানা কম্পার্ট্মেন্ট,
ও আমার
হৃদয়ের কন্দরে কন্দরে ইসলাম ও মুসলিমের জন্য ফুলের বসন্ত ফুটাই, ঘৃণার বীজ নয়, অহংকারের আগুন নয়, নয় মানুষকে ছোট করার বিবমীষাময় বক্তব্য।
এই রোগের বিষয় ক্বারি ইয়াদ্ব (র)
বলেনঃ আমি যখন অসুস্থ হই, তখন চার কারণে
আমি আল্লাহর প্রশংসা করি।
(১) তিনি চাইলে এর চেয়েও বড় রোগ আমাকে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি আমার উপর রহম
করেছেন। কাজেই তাঁর জন্য প্রশংসা করি।
(২) তিনি এই রোগ হওয়া সত্বেও আমাকে সবর করার তাওফীক্ব দিয়েছেন। কাজেই তাঁর ই
প্রশংসা করতেই হয়।
(৩) তিনি আমাকে ইন্না লিল্লাহ পড়ার সুযোগ দিয়েছেন। যা বললে তিনি সালাওয়াত ও
রাহমাহ দেবেন বলে ওয়াদাহ করেছেন। তাই আবারো তাঁর প্রশংসা করি।
(৪) আর প্রশংসা এই জন্য যে তিনি এই বিপদ আমার শরীরে দিয়েছেন। আমার দীনে কোন
বিপদ দেননি।
অতীতের সমস্ত গ্লানী, পাপাচারের কালীমা
ও ব্যর্থতার পিছুটান থেকে মুক্ত হয়ে এক নতুন জীবনধারা গড়তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
সকলের সাথে সম্পর্কের নতুন পাতা খুলতে হবে। নতুন পাতা আল্লাহর সাথে, তাঁর আনুগত্যের শপথ নিয়ে, নাফরমানি বর্জনের ঘোষণা দিয়ে। নতুন পেইজ রাসূলের সাথে।
তাঁর আদর্শ ধারণের মাধ্যমে। বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে। প্রত্যেকের হক যথার্থভাবে আদায়
করে। সমস্ত মুসলমানের সাথে। ন্যায়ানুগ আচরণ ও মানবকি মূল্যবোধে উজ্জীবিত হয়ে।
আমাদের দেশে রমাদানকে সামনে রেখে দু’ধরনের প্রস্তুতি চলে। এক. অধিক পরিমাণে খাদ্য মজুত করার
প্রস্তুতি। দুই. অধিক পরিমাণে ইবাদাতের মাধ্যমে রমাদানকে বরণের প্রস্তুতি। যেমন, বেশি বেশি নফল, কিয়ামূল লাইল, দান-খয়রাত করার অব্যাহত প্রচেষ্টা, হারাম বর্জনের আপ্রাণ চেষ্টা ইত্যাদি।
এতক্ষণ আলোচনা
থেকে বুঝা গেল শেষোক্ত প্রস্তুতিই হচ্ছে মুমিনের আদর্শ। আর ইবাদাতের চেতনাহীন শুধু
খাবার-দাবারের প্রস্তুতি হচ্ছে মুসলিম নামধারী ভোগবাদীদের আদর্শ। যারা ইসলামকে
শুধু কিছু প্রাণহীন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া অন্যকিছু মনে করেনা। যাদের আরেক নাম
ধর্মনিরপেক্ষাবদী। এবার আপনি সিদ্ধান্ত নিন, আপনার প্রস্তুতি
কেমন হবে? কিভাবে হবে? আল্লাহ আমাদের
সঠিক পথে পরিচালিত করুন।
No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com