Tuesday, August 27, 2024

বন্যাদূর্গতদের প্রসঙ্গে ইসলাম

 

বন্যাদূর্গতদের প্রসঙ্গে ইসলাম

-এম এ রাজ্জাক হাওলাদার

বাংলাদেশে বন্যা একটি নিয়মিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এ এমন এক দুর্যোগ, যার প্রভাব রয়ে যায় দীর্ঘমেয়াদে। নানা রকম স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি হয় বন্যাদুর্গত এলাকায়।স্বাভাবিক জীবনে ফেরাটা এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।

ঢাকার ধানমণ্ডির পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. সাইফ হোসেন খান বলেন, “বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর মানুষ যখন নিজের বসতবাড়িতে ফিরতে শুরু করেন, সেই সময়টায় সুস্থ ও নিরাপদ থাকতে কিছু বিষয়ে সচেতনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

শুধু যে বন্যার্ত মানুষই এ ঝুঁকিতে থাকেন, তা নয় বরং বন্যায় উদ্ধারকর্মী, ত্রাণকর্মী, স্বাস্থ্যসেবাদানকারীও ঝুঁকিতে থাকেন।

 

আয় আল্লাহ্!তুমি বাংলাদেশের বন্যাদূর্গত যমিনকে আদেশ করোঃ

وَقِیْلَ یَـٰۤأَرۡضُ ٱبۡلَعِی مَاۤءَكِ وَیَـٰسَمَاۤءُ أَقۡلِعِی...

"আদেশ হল, হে জমীন তোমার পা‌নি গি‌লে ফেল, হে আকাশ, পা‌নি বর্ষণ বন্ধ ক‌রো!" (সূরা হূদ-১১:৪৪)

যেমন তুমি হযরত নূহ (আ.)-এর প‌ক্ষে আকাশ ও জমীন‌কে যেভা‌বে আদেশ ক‌রে‌ছিলে।

হাদীসে এসেছে-

فَهَلَّا شَقَقْتَ عَنْ بَطْنِهِ فَعَلِمْتَ مَا فِي قَلْبِهِ ؟.       -ابن ماجه: ٣٩٣٠

কেন তার পেট খুলে তার অন্তরে কি আছে তা বের করবে না? (ইবনে মাযা-৩৯৩০)

মহান আল্লাহ বলেন,

আমা‌দের উপর সেরূপ রহম করো যেটা তুমি পছন্দ কর।

اِنۡ تُبۡدُوا الصَّدَقٰتِ فَنِعِمَّا ہِیَ ۚ وَاِنۡ تُخۡفُوۡہَا وَتُؤۡتُوۡہَا الۡفُقَرَآءَ فَہُوَ خَیۡرٌ لَّکُمۡ ؕ وَیُکَفِّرُ عَنۡکُمۡ مِّنۡ سَیِّاٰتِکُمۡ ؕ وَاللّٰہُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ خَبِیۡرٌ

“তোমরা দান-সদাকা যদি প্রকাশ্যে দাও, সেও ভালো, আর যদি তা গোপনে গরীবদেরকে দান কর তবে তা তোমাদের পক্ষে কতই না শ্রেয়! এবং আল্লাহ তোমাদের মন্দকর্মসমূহের প্রায়শ্চিত্ত করে দেবেন। বস্তুত আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ সম্পর্কে পূর্ণ অবগত।” (আল বাকারা-২:২৭১)

 

বন্যাদুর্গত এলাকায় নামাজ আদায়ের পদ্ধতি:

ইসলামি শরীয়তের দ্বিতীয় ভিত্তি হলো নামাজ। এটি একজন মুমিনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বাধ্যতামূলক ইবাদত। নামাজ সব পাপকাজ থেকে বিরত রাখে। এ বিষয়ে করআনে এসেছে,

إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَآءِ وَالْمُنْكَرِ

নিশ্চয়ই নামাজ অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে। (সূরা আনকাবুত-২৯:৪৫)

একজন মুমিন যে অবস্থায়ই থাকেন না কেন, সুন্নাহ পদ্ধতিতে সময়মতো নামাজ আদায় করতে হবে। তবে স্বাভাবিক অবস্থায় নামাজ আদায়ের যে পদ্ধতি শরিয়তে বলা হয়েছে, অস্বাভাবিক ও বিশেষ অবস্থার ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়। এ বিষয়ে পবিত্র করআনে বলা হয়েছে,

لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا

আল্লাহ সাধ্যের বাইরে কোনো হুকুম বান্দার ওপর আরোপ করেন না‘ (সুরা বাকারা-:২৮৫)

রআনের অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

اَلَّذِيْنَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُوْدًا

তারা দাঁড়ানো, বসা এবং শোয়া অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে। (আলে ইমরান-:১৯১)

বিষয়টি নিয়ে ইমাম দাহহাক বলেন, এই আয়াতে অসুস্থ-অপারগ ব্যক্তিদের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে যে, তারা নিজেদের শক্তি-সামর্থ্য অনুযায়ী (যেভাবে পারে) ইবাদত পালন করবে। (আল মুহিতুল বুরহানি: ৩/২৬)

তাই কোনো মুমিন যখন বন্যার পানিতে আটকা পড়ে যান এবং স্বাভাবিক পদ্ধতিতে নামাজ আদায় করতে না পারেন তখন তার নামাজ আদায়ের পদ্ধতিতে ক্ষেত্রবিশেষে নিম্নলিখিত ছাড় অনুমোদিত হয়

বন্যার্ত ব্যক্তি যদি পানিতে আটকা পড়ে যায় এবং তার কাছে নৌকা থাকে তো নামাজ নৌকাতে পড়ে নেবে। আর যদি নৌকা না থাকে তাহলে সে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার অপেক্ষা করবে। অতঃপর ওয়াক্ত শেষ হওয়ার আগমুহূর্তে পানিতেই নামাজ পড়ে নেবে। এক্ষেত্রে পানিতে দাঁড়িয়ে যেভাবে সম্ভব সেভাবেই নামাজ আদায় করবে।

যেমনপানি যদি অল্প হয় এবং কেউ রুকু করতে সক্ষম হন তাহলে রুকু সহকারে নামাজ আদায় করতে হবে। আর সেজদা করে নেবে ইশারায়। আর যদি কেউ রুকু করতেও সক্ষম না হন তাহলে পানিতে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায়কালে রুকু-সেজদা উভয়টা ইশারায় করে নেবে। (হাশিয়াতুত তাহতাবি আলা মারাকিয়িল ফালাহ: ৪০৭)

এ ছাড়া পানিতে আটকে পড়া ব্যক্তির ওপর জুমার নামাজ ওয়াজিব নয়। কেননা জুমার নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে জামাত শর্ত। জুমার নামাজের জন্য ইমাম ছাড়া কমপক্ষে তিনজন মুসল্লি হতে হবে। ইমাম খুতবা দেবেন, বাকি তিনজন খুতবা শুনবেন এবং জুমায় শরিক থাকবেন। এর চেয়ে কম মুসল্লি হলে জুমা পড়া যাবে না। (রদ্দুল মুহতার: ৩/২৪)

 

 

বন্যাদুর্গত এলাকায় লাশের গোসল, জানাজা ও দাফনের বিধান কী

 

Description: বন্যাদুর্গত এলাকায় লাশের গোসল, জানাজা ও দাফনের বিধান কী

Ø বন্যায় বা পানিতে ডুবে কোনো মুসলিমের মৃত্যু হলে তার শরীর পাক থাকলেও গোসল দেয়ার বিধান রহিত হবে না। এমনিভাবে বৃষ্টি যদি মৃত ব্যক্তিকে গোসল করিয়ে দেয় তারপরও তাকে গোসল দিতে হবে। কেননা গোসল দেওয়ার কাজটা জীবিত ব্যক্তিদের দ্বারা সম্পাদিত হয়নি। তবে, দ্বিতীয়বার গোসল না দিলেও এমতাবস্থায় ওই মৃতব্যক্তির জানাজা পড়া যাবে, কিন্তু জীবিত ব্যক্তিরা গুনাহগার হবেন। কিন্তু পানি থেকে উঠানোর সময় যদি একবার অথবা দুবার অথবা তিনবার গোসলের নিয়তে নেড়ে উঠানো হয়, তাহলে গোসল করানোর দায়িত্ব আদায় হয়ে যাবে। (রদ্দুল মুহতার: ২/১৯৯; ফতোয়ায়ে আলমগিরি: ১/১৫৮; আলবাহরুর রায়েক: ২/১৮৭)

Ø কোনো কারণে যদি লাশ এতটুকু ফুলে যায় যে, হাত লাগানোর উপযুক্ত না থাকে অর্থাৎ গোসলের জন্য হাত লাগানোর দ্বারা লাশ ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে এ ধরনের নরম লাশে শুধু পানি ঢেলে দেওয়াই যথেষ্ট। ওই অবস্থায় সাধারণ লাশের গোসলের মতো ডলাডলি জরুরি নয়। অতঃপর নিয়মমতো কাফন দিয়ে জানাজার নামাজ পড়ে দাফন করা হবে। তবে জানাজার নামাজ পড়ার পূর্বেই যদি লাশ ফেটে যায় তাহলে নামাজ পড়া ছাড়াই দাফন করে দিতে হবে। (ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া: ২/১৩৬; ফতোয়ায়ে আলমগিরি: ১/১৫৮; বাদায়েউস সানায়ে: ২/২৯)

Ø যদি লাশের অর্ধাংশের বেশি পাওয়া যায় গোসল দেওয়া ও জানাজা পড়া হবে। এমনিভাবে মাথাসহ অর্ধেক পাওয়া গেলেও তার গোসল দেওয়া হবে এবং জানাজা পড়া হবে। যদি শুধু মাথা পাওয়া যায় তবে দাফন করা হবে; গোসল এবং জানাজা লাগবে না। (ফতোয়ায়ে আলমগিরি: ১/১৫৯; আদ্দুররুল মুখতার: ২/১৯৯)

Ø লাশ যদি দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে যায় কিন্তু ফেটে না যায় তাহলেও তার জানাজার নামাজ পড়া হবে। (ফতোয়ায়ে আলমগিরি: ১/১৬৩; বাদায়েউস সানায়ে: ২/৪৭; ফতোয়া দারুল উলুম: ৫/৫৩৫)

Ø লাশ ফুলে গিয়ে ফেটে গেলে তার জানাজার নামাজ রহিত হয়ে যাবে, এমতাবস্থায় ওই লাশের জানাজা পড়া হবে না। (মারাকিল ফালাহ: ১/৪১০; ইমদাদুল আহকাম: ১/৮৩০)

 

বন্যায় ডুবে যাওয়া মসজিদে নামাজের পদ্ধতি কী হবে?

বন্যাদুর্গত অঞ্চলে লাশ কবর দেওয়ার মতো শুকনা জায়গা না থাকলে এবং লাশ শুকনা অঞ্চলে পাঠিয়ে দেওয়ার মতো কোনো ব্যবস্থাও না থাকলে এবং বন্যার পানি চলে যাওয়ার অপেক্ষা করলেও লাশ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকলে এমতাবস্থায় জানাজা ও কাফন সম্পন্ন করে লাশকে ভাসিয়ে দিতে হবে।

ইমাম আহমদ ইনবে হাম্বল (রহ) বলেন, লাশের সাথে ভারী কিছু বেঁধে স্রোতস্বিনী কোনো স্থানে ডুবিয়ে দিবে। শুকনো স্থানে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে বা লাশ নষ্ট হওয়ার আশংকা না থাকলে ডুবিয়ে দেবে না, বরং অপেক্ষা করবে আর যথাযথভাবে দাফন করবে। (হাশিয়াতুত তাহতাবি আলা মারাকিল ফালাহ: ৬১৩; ফতোয়ায়ে শামি: ৩/১৬৬)

পানিতে ডুবে কোনো ব্যক্তি মারা গেলে হাদিসের ঘোষণা অনুযায়ী, তিনি শহিদের মর্যাদা পাবেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সf.) বলেছেনপানিতে ডুবে, কলেরায়, প্লেগে ও ভূমিধসে বা চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তিরা শহিদ। (সহিহ বুখারী-৭২০) 

২০২৪ সালে ১৯ আগষ্ট ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় ১১ জেলায় এখন পর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ৪৯ লাখ মানুষ। যদিও ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের আশ্রয় দিতে মোট ৩ হাজার ১৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

Description: বন্যাদুর্গত এলাকায় কারও মৃত্যু হলে শুকনা অঞ্চলে পাঠিয়ে দেয়া হবে। ছবি: সংগৃহীত

বন্যাদুর্গত এলাকায় কারও মৃত্যু হলে শুকনা অঞ্চলে পাঠিয়ে দেয়া হবে। ছবি: সংগৃহীত

শুক্রবার (২৩ আগস্ট) রাত পর্যন্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে তৈরি করা প্রতিবেদন এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১১ জেলায় এযাবত মোট ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৪৮লাখ ৬৯ হাজার ২৯৯জন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ৯লাখ ৪৬ হাজার ৭৬৯টি। এখন পর্যন্ত বন্যায় মোট ৫০০জন মারা গেছেন। এর মধ্যে অধিকাংশ নারী ও শিশুকুমিল্লায় ৫০জন, ফেনীতে ৪০০, চট্টগ্রামে ১৪৪জন, নোয়াখালীতে ২০০শতজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন, লক্ষ্মীপুরে একজন এবং কক্সবাজারে তিনজন মারা গেছেন।

বন্যায় কোন মৃত্যু হলে করণীয় কি?

জানার বিষয় হচ্ছে, বন্যায় কোনো মুসলমানের মৃত্যু হলে তার জানাজা ও দাফনের বিধান কী? ইসলামি শরিয়তে বন্যায় কারও মৃত্যু হলে তার শরীর পাক থাকলেও গোসল দিতে হবে। গোসল দেয়ার কাজটা জীবিত ব্যক্তিদের দ্বারা হয়নি। তবে, দ্বিতীয়বার গোসল না দিলেও এমতাবস্থায় ওই মৃতব্যক্তির জানাজা পড়া যাবে, কিন্তু জীবিত ব্যক্তিরা গুনাহগার হবেন। পানি থেকে উঠানোর সময় যদি একবার অথবা দুইবার অথবা তিনবার গোসলের নিয়তে নেড়ে উঠানো হয়, তাহলে গোসল করানোর দায়িত্ব আদায় হয়ে যাবে। (রদ্দুল মুহতার: ২/১৯৯; ফতোয়ায়ে আলমগিরি: ১/১৫৮)

কোনো কারণে যদি লাশ এতটুকু ফুলে যায় যে, হাত লাগানোর উপযুক্ত না থাকে অর্থাৎ গোসলের জন্য হাত লাগানোর দ্বারা লাশ ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে এ ধরনের নরম লাশে শুধু পানি ঢেলে দেয়াই যথেষ্ট। অতঃপর নিয়মমতো কাফন দিয়ে জানাজার নামাজ পড়ে দাফন করা হবে। তবে জানাজার নামাজ পড়ার পূর্বেই যদি লাশ ফেটে যায় তাহলে নামাজ পড়া ছাড়াই দাফন করে দিতে হবে। (ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া: ২/১৩৬; বাদায়েউস সানায়ে: ২/২৯)

          বন্যাদুর্গত এলাকায় কারও মৃত্যু হলে শুকনা অঞ্চলে পাঠিয়ে দেয়া হবে। শুকনা অঞ্চলে পাঠিয়ে দেয়ার মতো কোনো ব্যবস্থাও না থাকলে এবং বন্যার পানি চলে যাওয়ার অপেক্ষা করলেও লাশ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে এমতাবস্থায় জানাজা ও কাফন সম্পন্ন করে লাশকে ভাসিয়ে দিতে হবে। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) বলেন, লাশের সাথে ভারী কিছু বেঁধে স্রোতস্বিনী কোনো স্থানে ডুবিয়ে দেবে। শুকনো স্থানে পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা থাকলে বা লাশ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা না থাকলে ডুবিয়ে দেবে না, বরং অপেক্ষা করবে আর যথাযথভাবে দাফন করবে। (হাশিয়াতুত তাহতাবি আলা মারাকিল ফালাহ: ৬১৩; ফতোয়ায়ে শামি: ৩/১৬৬)

পানিতে ডুবে কোনো ব্যক্তি মারা গেলে হাদিসের ঘোষণা অনুযায়ী, তিনি শহিদের মর্যাদা পাবেন। বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পানিতে ডুবে, কলেরায়, প্লেগে ও ভূমিধসে বা চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তিরা শহিদ। (বুখারী-৭২০) 

 

 

 

 

 

 

 

বন্যা ও পানিতে ডুবে মৃতদের দাফনের নিয়ম

Description: বন্যা ও পানিতে ডুবে মৃতদের দাফনের নিয়মপ্রতীকী ছবি-২০২৪ সালের ২৩আগষ্ট

মানুষ এবং যেকোনো জীব মৃত্যু বরণ করে। জীব হিসেবে জ্ন্ম নিলে মৃত্যু বরণ করতেই হবে এটাই অমোঘ নিয়ম। সবাইকে এই সত্য বিশ্বাস করতে হয়, বিশ্বাস না করে কোনো উপায় নেই। মৃত্যু স্বাভাবিক মেনেই কেউ মারা গেলে অন্যরা তার দাফন, কাফনের ব্যবস্থা করেন। 

তবে কিছুর মৃত্যুর কারণে মৃত ব্যক্তিকে স্বাভাবিক নিয়মে দাফন করা যায় না। অনেক সময় লাশ পাওয়া যায় না। কখনো কখনো লাশ কবরস্থ করার জায়গাও পাওয়া যায় না। এমন মৃত্যুগুলো ঘটে থাকে জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, লঞ্চডুবি, ট্রলারডুবি, নৌকাডুবির কারণে।  এসব ব্যক্তির মরদেহ গোসল, কাফন, দাফন ও জানাজায় করণীয় বিষয়ে ইসলামি আইন ও ফেকাহশাস্ত্রবিদদের মতামত হলো

পানিতে ডুবে কোনো মুসলিম মারা গেলে তাকে গোসল করাতে হবে স্বাভাবিক মৃতদের মতোই। মৃতের শরীর পবিত্র থাকলেও গোসল করাতে হবে। তবে কোনো কারণে মৃতকে দ্বিতীয়বার গোসল দিতে না পারলে এমতাবস্থায় ওই মৃতব্যক্তির জানাজা পড়া যাবে, কিন্তু জীবিত ব্যক্তিরা গুনাহগার হবেন। 

কিন্তু পানি থেকে উঠানোর সময় যদি একবার অথবা দুবার অথবা তিনবার গোসলের নিয়তে নেড়ে উঠানো হয়, তাহলে গোসল করানোর দায়িত্ব আদায় হয়ে যাবে।

কোনো কারণে যদি লাশ এতটুকু ফুলে যায় যে, হাত লাগানোর উপযুক্ত না থাকে অর্থাৎ গোসলের জন্য হাত লাগানোর দ্বারা লাশ ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে এ ধরনের নরম লাশে শুধু পানি ঢেলে দেওয়াই যথেষ্ট। ওই অবস্থায় সাধারণ লাশের গোসলের মতো ডলাডলি জরুরি নয়। এরপর নিয়মমতো কাফন দিয়ে জানাজার নামাজ পড়ে দাফন করা হবে। 

তবে জানাজার নামাজ পড়ার পূর্বেই যদি লাশ ফেটে যায় তাহলে নামাজ পড়া ছাড়াই দাফন করে দিতে হবে। 

যদি লাশের অর্ধাংশের বেশি পাওয়া যায় গোসল দিতে হবে এবং জানাজা পড়তে হবে। এমনিভাবে মাথাসহ অর্ধেক পাওয়া গেলেও তার গোসল দিতে হবে এবং জানাজা পড়তে হবে। যদি শুধু মাথা পাওয়া যায় তবে দাফন করা হবে; গোসল এবং জানাজা লাগবে না। (ফতোয়ায়ে আলমগিরি: ১/১৫৯; আদ্দুররুল মুখতার: ২/১৯৯)

লাশ যদি দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে যায় কিন্তু ফেটে না যায় তাহলেও তার জানাজার নামাজ পড়তে হবে। আর লাশ ফুলে গিয়ে ফেটে গেলে জানাজার নামাজ পড়তে হবে না। (মারাকিল ফালাহ: ১/৪১০; ইমদাদুল আহকাম: ১/৮৩০)

পানিতে ডুবে কোনো ব্যক্তি মারা গেলে তিনি শহীদের মর্যাদা পাবেন। এক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সা. বলেছেন

পানিতে ডুবে, কলেরায়, প্লেগে ও ভূমিধসে বা চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তিরা শহীদ। (বুখারী-৭২০) 

অপর বর্ণনায় এসেছে, একবার রসুলুল্লাহ সা. বললেন, তোমরা তোমাদের মধ্যে কোন কোন ব্যক্তিকে শহীদ বলে গণ্য কর? তারা বলল, হে আল্লাহর রসুল! আল্লাহর পথে যে নিহত হয়, সেই শহীদ। তিনি বললেন, তাহলে তো আমার উম্মতের মধ্যে শহীদ খুবই অল্প।

লোকেরা বলল, তাহলে কারা শহীদ বলে গণ্য হবে, হে আল্লাহর রসুল? তিনি বললেন, যে আল্লাহর পথে নিহত হয় সে শহীদ, যে আল্লাহর পথে মারা যায় সে শহীদ, যে প্লেগ রোগে মারা যায় সে শহীদ, যে পেটের রোগে প্রাণ হারায় সে শহীদ এবং যে পানিতে ডুবে মারা যায় সেও শহীদ। (রিয়াদুস সালেহিন-১৩৬২)

No comments:

Post a Comment

razzakhowlader59@gmil.com