ইসলামী দৃষ্টিকোণে সামাজিক
সম্প্রীতির গুরুত্ব
------------------------------------------------------------------------------
-এম এ রাজ্জাক হাওলাদার
শুরুকথা:
সম্প্রীতি অর্থঃ অপরের সাথে ভালবাসা ও আন্তরিকতাপূর্ণ আচরণ
করা। সবসময় সদ্ভাব বজায় রেখে মিলেমিশে চলা। প্রীতিময় ও শান্তিময় পরিবেশ তৈরি
করা আমাদের সকলের
কাম্য।
মানুষ সামাজিক জীব। একাকী জীবনযাপন করা মানবজাতির পক্ষে
সম্ভব নয়। একজন মানুষ যতই সমৃদ্ধ হোক না কেন, জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে তাকে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র
নির্বিশেষে সবার কাছ থেকে সহযোগিতা নিতে হয়। তাই সমাজে বসবাসরত প্রত্যেকের উচিত
সম্প্রীতিপূর্ণ জীবনযাপন করা। সমাজে এমন সম্প্রীতিপূর্ণ পরিবেশই ইসলাম কামনা করে।
ইসলামের শিক্ষা হলো, প্রথমে ভালো মানুষ হতে হবে, প্রথমে ভালো ইমানদার মানুষ হতে হবে, পরে ভালো মুসলমান। যিনি ভালো মুসলমান তিনি ভালো মানুষও বটে। হাদিসে
নবী (সা.) বলেছেন-
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:
«الْمُؤْمِنُونَ كَرَجُلٍ وَاحِدٍ إِنِ اشْتَكَى عَيْنُهُ اشْتَكَى كُلُّهُ وَإِنِ
اشْتَكَى رَأْسُهُ اشْتَكَى كُله» (مشكاة. رَوَاهُ مُسلم)
# সমস্ত মুমিন একই
ব্যক্তি সত্তার মত। যখন তার চোখে যন্ত্রণা হয়, তখন তার গোটা শরীরই তা অনুভব করে। যদি
তার মাথা ব্যথা হয় তাকে তার গোটা শরীরই বিচলিত হয়ে পড়ে। (মিশকাত-4954)
قَالَ رَسُوْلُ (صـ) اَلْمُوْمِنُ مَالَفَ وَلَا خَيْرَ فِيْمَنْ
لَايَالِفُ وَلَا يُوْلَفُ ـ (مسند احمد)
# মুমিন মহব্বত ও দয়ার প্রতীক।ঐ ব্যক্তির
মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই, যে কারো সাথে মহব্বত বা সম্প্রীতি রাখে
না এবং মহব্বত প্রাপ্ত হয়না। (মুসনাদে আহমদ-)
# তোমরা প্রকৃত মুমিন না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আবার পরস্পরকে ভালোবাসতে না পারা পর্যন্ত প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না’। (বুখারী ও মুসলিম)। অর্থাৎ প্রকৃত মুমিন হতে হলে অন্তরে মানবপ্রেম জাগাতে হবে।
ইসলামই একমাত্র পারস্পরিক সাম্য-সংহতি দিয়েছে:
ইসলামই একমাত্র পারস্পরিক সাম্য-সংহতি, মানবিক প্রেম-প্রীতি, ভ্রাতৃত্বপূর্ণ ও সহানুভুতিশীল সমাজ উপহার দিয়েছে। ইসলামী
সমাজ ব্যবস্থার অধিবাসীরাই সামাজিক সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের এমন অনন্য নজীর স্থাপন
করেছে যা পৃথিবীর অন্য কোন ব্যবস্থায় পরিলক্ষিত হয় না।
আমাদের প্রিয় নবী (সা.) জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের প্রতি
শ্রদ্ধা/সম্মান/ভালোবাসা প্রদর্শন করতেন। একবার আমাদের মহানবীর পাশ দিয়ে একটি লাশ
নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তিনি ওই লাশের সম্মানে দাঁড়িয়ে গেলেন। তাকে বলা হলো, লাশটি তো একজন ইহুদির। মহানবী (সা.) বললেন, সে কি মানুষ নয়? (মুসলিম : ৯৬১)
মানুষের মর্যাদাহানি,
কুৎসা রটানো,
ঠাট্টা-বিদ্রুপ নিষিদ্ধ:
মানুষের মর্যাদাহানি, কুৎসা রটানো, ঠাট্টা-বিদ্রুপ করাকেও ইসলাম সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করে
দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِنْ قَوْمٍ
‘তোমরা অন্য সম্প্রদায়কে হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে যেন
বিদ্রুপ না করে’। (হুজুরাত-৪৯:১১)
কুরআন ও হাদীসে পরস্পরের মধ্যে সম্প্রীতি:
কুরআন ও হাদীসে পরস্পরের মধ্যে সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ববোধ, সমাজবদ্ধতা বা দলীয় জীবন ঐক্যের জন্য অত্যধিক গুরুত্ব
প্রদান করেছে। ইসলামে অনৈক্য ও বিভেদের অবকাশ নেই। ইসলামে ঐক্যের ভিত্তি হচ্ছে
তাওহিদ। তাওহিদে বিশ্বাসীদের একতাবদ্ধ থাকা, ঐক্য সংহতি সৌহার্দ্য সম্প্রীতি রক্ষা করা অপরিহার্য। এবং
এমন সব কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকা, যা
উম্মাহর ঐক্য নষ্ট করে এবং সম্প্রীতি বিনষ্ট করে। ইসলামের দৃষ্টিতে পরস্পর
কলহ-বিবাদে লিপ্ত হওয়া হারাম ও কবিরা গুনাহ। আন)-কে ঐক্যবদ্ধভাবে আঁকড়ে ধরো এবং
পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’
#
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন,
وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ
اللَّهِ جَمِيْعًا وَلَا تَفَرَّقُوْا
‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহর
রজ্জু (ইসলাম ও কোরআন)-কে ঐক্যবদ্ধভাবে আঁকড়ে ধরো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।
(সুরা আলে ইমরান-৩:১০৩)
#
নিকট আত্মীয় ও
এতিম-মিসকিনদের সাথে সদ্ব্যবহার করো।
وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِيْنِ وَالْجَارِ ذِي
الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ وَابْنِ السَّبِيْلِ
আত্মীয়
প্রতিবেশী,
অনাত্মীয় প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসীদের প্রতি সদয়
ব্যবহার করো। (নিসা-৪:৩৬)
وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَآءُ بَعْضٍ
يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ
# ঈমানদার পুরুষ এবং ঈমানদার
স্ত্রীলোকেরাই প্রকৃতপক্ষে পরস্পর পরস্পরের দায়িত্বশীল বা সাহায্যকারী বন্ধু। এদের
পরিচয় এবং বৈশিষ্ট্য এই যে,
এরা নেক কাজের আদেশ দেয়, অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে।” (তাওবা-৯:৭১)
وَلَا تَسُبُّوا الَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ فَيَسُبُّوا
اللَّهَ عَدْوًا بِغَيْرِ عِلْمٍ
# তোমরা তাদের প্রতিমাগুলোকে
গালি দিও না,
ফলে না জেনে তারাও আল্লাহকে
গালি দেবে (আনা'ম-৬:১০৮)
#
রাসুল (সা.) সামাজিক
সম্প্রীতিকে ঈমানের সাথেও জুড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন “সে মু’মিন নয় যে
পেটপুরে খেলো,
অথচ তার প্রতিবেশী না খেয়ে
রইল।”
#
হযরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে
বর্ণিত,
একদা রাসুল (সা.) বললেন, আমি আল্লাহর কসম করে বলছি, সে লোকটি ঈমানদার নয়, (৩বার বললেন) সাহাবীদের মধ্য হতে একজন জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! লোকটি কে? রাসুল (সা.) বললেন, যার অনিষ্ট হতে তার প্রতিবেশী নিরাপদ থাকে না।
(বুখারী-মুসলিম)
#
আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, নবী সাঃ বলেছেন জিব্রাইল আঃ নিয়মিতই আমাকে প্রতিবেশীর হক
সম্পর্কে তাকীদ দিচ্ছিলেন। এমন কি আমার ধারণা জন্মেছিল প্রতিবেশীকে সম্পত্তির
হকদার বা উত্তরাধিকার করা হবে। (বুখারী-মুসলিম)
#
রাসুল (সা.) বহুবার
প্রতিবেশীদের সাথে সৌজন্য প্রদর্শনের ওপর তাগিদ প্রদান করেছেন। তিনি বলেন, “আল্লাহ তা’আলা
প্রতিবেশীদের প্রতি দায়িত্ব সম্পর্কে এত বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন যে, মাঝে মধ্যে আমার মনে হয়েছে প্রতিবেশীদের হয়তঃ উত্তরাধিকারীর
মর্যাদা দেয়া হতে পারে।”
#
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সকল বিশ্বাসী মানুষ এক দেহসম; দেহের যেকোনো জায়গায় ব্যথা পেলে চোখে পানি আসে, সারা শরীরে জ্বর আসে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
মানুষের সামাজিক পরিচয়:
#
আল কুরআনে বলা হয়েছে,
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ
نَفْسٍ وَاحِدَةٍ
“হে মানুষ! তোমরা তোমাদের
প্রতিপালককে ভয় করো,
যিনি তোমাদের একটি মাত্র
আত্মা থেকে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা নিসা-৪:১)
يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَى
وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ
اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيْرٌ
#
হে মানুষ! আমি তোমাদের
সৃষ্টি করেছি একজন পুরুষ ও একজন নারী হতে, পরে তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার। আর তোমাদের মধ্যে সে
ব্যক্তিই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন, যে
তোমাদের মধ্যে অধিক আল্লাহভীরু।” (সূরা
হুজরাত-৪৯:১৩)
সামাজিক সম্প্রীতি:
সামাজিক সম্প্রীতি সৃষ্টিতে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ নিদেশনা
দিয়েছে। মানুষ তার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও গ্রাম-মহল্লার লোকজনের সঙ্গে মিলেমিশে
বসবাস করবে।
ক.ভ্রাতৃত্ববোধ
সৃষ্টিতে সম্প্রীতি :
সামাজিক সম্প্রীতির ক্ষেত্রে ইসলামের বড় অবদান হলো
পারস্পারিক ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি করা। ছোট বড়, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-গরিব প্রভৃতি সমাজের সকল শ্রেণীর লোকের মধ্যে ঐক্য
থাকবে,
তারা সকলে একতাবদ্ধভাবে
সমাজে বসবাস করবে,
সকলে মিলেমিশে ভ্রাতৃত্ব
বন্ধনে আবদ্ধ হবে। সকলের মধ্যে মায়ামমতা, স্নেহ-ভালোবাসা, শ্রদ্ধা-ভক্তি প্রভৃতি বিরাজমান থাকবে। ইসলাম ঝগড়া-বিবাদ
মিমাংসা করে অতি দ্রুত সামাজিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে জোরালো তাগিদ দিয়েছে, যাতে সাধারণভাবে সমাজে শান্তি বজায় থাকে। আল্লাহতায়ালা বলেন,
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ
وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
‘‘নিশ্চয়ই মুমিনগণ পরস্পর ভাই, অতএব তোমরা তোমাদের দু’ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা কর এবং আল্লাহকে ভয় কর; যাতে তোমরা তার অনুগ্রহ লাভ করতে পার।’’ (হুজরাত-৪৯:১০)
আল্লাহতায়ালা
আরো বলেন,
وَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا
بَيْنَهُمَا
“মুমিনদের দুই দল দ্বন্দ্বে
লিপ্ত হলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেবে। (সূরা আল-হুজরাত-৪৯:৯)
খ.সাহায্য-সহযোগিতা
প্রদান সম্প্রীতি :
মানবজীবনে নানারকম সুযোগ-সুবিধা প্রকাশ করা ও অসুবিধা দূর
করার জন্য পারস্পরিক সাহায্য প্রয়োজন। মহানবী (সা.) বলেছেন, “তোমরা
ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান করবে, পীড়িত
লোকের খোঁজ খবর নেবে এবং ঋণের দায়ে আবদ্ধ ব্যক্তিকে ঋণমুক্ত করে দেবে।” (বুখারি)
রাসুল (সা.) বলেছেন, “মুসলমানদের
জন্য এটা সঙ্গত নয় যে,
সে তার ভাইয়ের সঙ্গে
তিনদিনের বেশি দূরত্ব বজায় রাখবে। যদি তিনদিন অতিক্রান্ত হয়, সে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে এবং তাকে সালাম দেবে, যদি সে তা জবাব দেয় তারা উভয়ে এর প্রতিদান পাবে।” (আবু দাউদ)
গ.প্রতিবেশীর সাথে
সম্প্রীতি :
সমাজিক জীবনে প্রতিবেশী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইসলামে
প্রতিবেশীর অনেক অধিকারের কথা বলা হয়েছে।
#
নবী করিম (সা.) কসম খেয়ে
তিনবার বললেন,
‘‘সেই লোক প্রকৃত ঈমানদার নয়
যার অনিষ্ট হতে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়।’’ (বুখারী,
মুসলিম)
#
যে ব্যক্তি পেট ভরে আহার করল
অথচ তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকল সে মুমিন নয়।’’ (বুখারী,
মুসলিম)
#
যখন তুমি খাবার রান্না করবে
তখন তাতে তুমি অতিরিক্ত পানি দিয়ে ঝোল বাড়াবে, যাতে তুমি তোমার প্রতিবেশীর খবর নিতে পারো।’’ (মুসলিম)
#
একবার নবী করিম (সা.) মুসলিম
নারীদের সম্বোধন করে বললেন,
‘তোমরা তোমাদের প্রতিবেশীর
বাড়িতে খাদ্য পাঠানোকে তুচ্ছ মনে করো না। যদিও তা বকরির পায়ের সামান্য অংশও হয়ে
থাকে।’’
(বুখারী, মুসলিম)
#
একবার নবী করিম (সা.) বললেন, তোমাদের নিকটতম প্রতিবেশীকে হাদিয়া দেয়ার ব্যাপারে
অগ্রাধিকার দেবে।’’
(বুখারী)
বর্ণিত
হাদিসগুলোতে প্রতিবেশী বলতে যেকোনো ধর্ম, বর্ণ, গোত্রীয় সম্প্রদায়ের প্রতিবেশীকে বোঝানো হয়েছে।
ঘ.নারী-পুরুষের
পারস্পারিক সম্প্রীতি :
নারী-পুরুষের সম্পর্ক সামজিক জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ
অধ্যায়। নারী হিসাবে কখনো মা, স্ত্রী, বোন,
কণ্যা হিসেবে তাদের সাথে
অধিকার আদায়ে সম্পৃতির শিক্ষা দিয়েছেন।
১.মা হিসাবেঃ
স্ত্রী হিসাবেঃ আল্লাহ তাআলা নারী-পুরুষের এ সুন্দর বন্ধন
সম্পর্কে বলেন-
هُوَ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَجَعَلَ مِنْهَا
زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ إِلَيْهَا فَلَمَّا تَغَشَّاهَا حَمَلَتْ حَمْلًا خَفِيفًا
فَمَرَّتْ بِهِ فَلَمَّا أَثْقَلَتْ دَعَوَا اللَّهَ رَبَّهُمَا لَئِنْ آتَيْتَنَا
صَالِحًا لَنَكُونَنَّ مِنَ الشَّاكِرِينَ
‘‘তিনি আল্লাহ, যিনি তোমাদেরকে একই প্রাণ থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং একই
সত্ত্বা থেকে তোমাদের জুড়ি বানিয়েছেন যেন তোমরা (পুরুষরা) তাদের (নারীদের) থেকে
শান্তি ও স্থিতি লাভ করতে পার।’’ (সূরা আরাফ-৭:১৮৯)
#
অন্য আয়াতে এই সম্পর্কের কথা
আরো সুন্দর করে বলেন,
هُنَّ لِبَاسٌ لَكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَهُنَّ
‘‘তারা (নারীরা) হচ্ছে তোমাদের
(পুরুষদের) পরিচ্ছদ আর তোমরা (পুরুষরা) তাদের (নারীদের) পরিচ্ছদ।’’ (সূরা বাকারা-২:১৮৭ )
#
আল্লাহ তায়ালা আরো ইরশাদ
করেন,
وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَلِلرِّجَالِ
عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌ
‘‘নারীর ওপর পুরুষের যেমন
অধিকার রয়েছে,
সেরকম তাদের ওপরও নারীদের
ন্যায়সঙ্গত অধিকার আছে।’’
(সূরা বাকারা-২:২২৮)
২.কন্যা হিসাবেঃ
একজন মহিলাকে কন্যা হিসেবে যদি দেখি তাহলে
আমরা তাকে মেয়ের প্রতি যে ভাবে সম্মান দেওয়া উচিৎ সে ভাবে দিতে হবে।
ঙ.পারিবারিক বন্ধনে
সম্প্রীতি :
সামাজিক সম্প্রীতির কেন্দ্র হলো পরিবার। পারিবারিক সস্প্রীতি থাকলে সমাজেও সে সম্প্রীতি প্রসারিত হয়। ইসলামী সমাজে
পরিবার গঠনে পিতা-মাতা,
স্বামী-স্ত্রী, সন্তানদের ভিন্ন-ভিন্ন দায়িত্ব বন্টন করে দিয়েছে এবং
প্রত্যেকের দায়িত্ব পালনে বহু ফজিলাত বনর্না করেছে।
চ.আত্মীয়-পরিজনের
সঙ্গে সম্প্রীতি :
ইসলাম পরিবারের অন্তর্ভূক্ত ও বহির্ভূত, নিকটবর্তী ও দূরবর্তী সকল শ্রেণীর আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে
সামাজিক সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছে।
#
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন,
وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا
وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ
وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ وَابْنِ
السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ مَنْ كَانَ
مُخْتَالًا فَخُورًا
‘‘আর তোমরা পিতা-মাতা, নিকট আত্মীয়স্বজন, ইয়াতিম, মিসকীন, নিকটতম প্রতিবেশী, দূরবর্তী প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, পথিক এবং যারা তোমাদের অধিকারে এসেছে তাদের সকলের প্রতি
সদ্ব্যবহার করবে।’’
(সূরা নিসা-৪:৩৬)
وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَآءَلُونَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ إِنَّ
اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيْبًا
# আর ভয় কর রক্ত-সম্পর্কিত
আত্মীয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক। (সুরা নিসা-৪:১)
#
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি চায়, তাঁর রিজিক বেড়ে যাক এবং তাঁর হায়াত দীর্ঘায়িত হোক, সে যেন আত্মীয়ের সাথে সদ্ব্যবহার করে।(মুসলিম ৭ম খন্ড,পৃঃ নং-৯৫;মিশকাত-৪৭০১)
#
যুবাইর ইবনে মুতয়ীম (রাঃ)
বর্ণনা করেন,
তিনি নবী করীম (সাঃ) কে বলতে
শুনছেন,
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী
জান্নাতে প্রবেশ করবে না।(বুখারী ৯ম খন্ড,পৃঃ ৩৯৬; মিশকাত-৪৭০৫)
#
আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত; রাসূল (সা.) বলেন, আদম সন্তানের আমলসমূহ প্রতি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত্রিতে
(আল্লাহ তা‘আলার নিকট) উপস্থাপন করা হয়। তখন আত্মীয়তার বন্ধন
বিচ্ছিন্নকারীর আমল গ্রহণ করা হয় না। (আহমদ-১০২৭৭)
#
সর্বশ্রেষ্ঠ সদকা হচ্ছে
আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে যে আপনার শত্রু তার ওপর সদকা করা” (আহমাদ-১৫৩৫৫, বায়হাকী-১৩০০২)
#
আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখো
ওর সঙ্গে যে তোমার সঙ্গে সে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে, দাও ওকে যে তোমাকে বঞ্চিত করেছে এবং যালিমের পাশ কেটে যাও
তথা তাকে ক্ষমা করো”। (বায়হাকী-২০৮৮০;আহমাদ-১৭৩৭২, ১৭৪৮৮)
আত্মীয়তার
বন্ধন রক্ষা করলে আত্মীয়-স্বজনদের ভালোবাসা পাওয়া যায় এবং ধন-সম্পদ ও বয়স বেড়ে
যায়। (তিরমিযী-১৯৭৯)
#
অন্ততপক্ষে সালাম বিনিময়ের
মাধ্যমে হলেও তোমরা তোমাদের আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করো”। (বায্যার-১৮৭৭)
#
২টি গুনাহের শাস্তি আল্লাহ
তা‘আলা দুনিয়াতেই দিবেন (আর আখিরাতের শাস্তি তো আছেই) গুনাহ্
২টি হচ্ছে,
অত্যাচার ও আত্মীয়তার বন্ধন
ছিন্নকারী”। (আবু
দাউদ-৪৯০২;
তিরমিযী-২৫১১)
ছ.ছোট-বড়ের মধ্যকার
সম্প্রীতি:
আমরা পরিবার ও সমাজে ছোট-বড় সবাইকে নিয়ে একত্রে বসবাস করি।
আমাদের পরিবার বা সমাজে মুরব্বিরাই নেতৃস্থানীয়। পিতা-মাতা, বয়োজ্যেষ্ঠ ভ্রাতা-ভগ্নি, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবকরাই মুরব্বিশ্রেণীর পর্যায়ভুক্ত।
জীবন ও জগৎ সম্পর্কে তাদের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা
ও দূরদর্শিতা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি। সে ক্ষেত্রে মুরব্বিদের আদেশ-নিষেধের প্রতি
শ্রদ্ধাশীল হওয়া,
তাই মুরব্বিদের প্রতি ভদ্রতা, নম্রতা ও নমনীয়তা দেখাতে হবে। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআন
মজিদে বলা হয়েছে,
‘‘মানুষের সঙ্গে ভদ্রচিত আলাপ
করো। অন্য শ্রেণীর লোকের প্রতি অবজ্ঞাভরে বিদ্রুপ করো না।
#
আমাদের প্রিয় নবী (সা)
বলেছেন,
“যে বড়দের শ্রদ্ধা এবং ছোটদের
স্নেহ করে না,
সে আমার উম্মত নয়।” (মুসনাদে আহমদ)
#
তিনি আরো বলেছেন, ‘‘যে যুবক কোনো বৃদ্ধের প্রতি তার বার্ধক্যের কারণে সম্মান
প্রদর্শন করবে,
আল্লাহতায়ালা সেই যুবকের শেষ
বয়সে তার প্রতি সম্মানকারী লোক পয়দা করবেন।’’ একটি সুন্দর সমাজে এ গুণটি সকলের মেনে চলা উচিত।
জ.অমুসলিমদের সাথে
সম্প্রীতি:
বস্তুত মানবজীবনের দু’টি ক্ষেত্র রয়েছে..যথা:
প্রথমটি হচ্ছে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে নৈতিক জীবন গঠন করা।
দ্বিতীয়টি হচ্ছে
ধর্মীয় অনুশাসন মেনে পার্থিব জীবন সমৃদ্ধ করার মাধ্যমে সুন্দর আদর্শ সমাজ
প্রতিষ্ঠা করা। ইসলাম
যথেষ্ট উদারতার সাথে মানবজীবনের এ দু’টি ক্ষেত্রকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
আর মুসলিম সম্প্রদায়ের আচার অনুষ্ঠানগুলো অন্য কোনো
সম্প্রদায়ের ওপর চাপিয়ে দেয় না ইসলাম। এ বিষয়ে কুরআনে বলা হয়েছে, ‘দ্বীন তথা জীবনবিধান গ্রহণের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই; কেননা
#
সত্য পথ হতে ভ্রান্ত পথ
সুস্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।’
(সূরা বাকারা-২:২৫৬)
অন্য
আয়াতে বলা হয়েছে,
لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِيَ دِيْنِ
তোমাদের
জন্য তোমাদের দ্বীন/কর্মফল,
আর আমাদের জন্য আমাদের দ্বীন/কর্মফল।
(সূরা কাফিরূন-১০৯:৬)
বস্তুত ইসলামের মূল কথা হচ্ছে এক দিকে মুসলিম সম্প্রদায়
জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামের নৈতিক ও পার্থিব অনুশাসন মেনে চলে একটি আদর্শ সমাজ ও
পৃথিবী গড়ে তুলবে যার সুফল অন্য সব সম্প্রদায়ের লোকেরা ভোগ করবে এবং এর প্রতি
আকৃষ্ট হবে। অপর দিকে অন্য সম্প্রদায়ের লোকদের স্বাধীনভাবে ধর্মীয় রিতি-নীতি পালন
করার সুযোগ পাবে এবং তাতে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে না। কুরআনে বলা হয়েছে,
وَلَا تَسُبُّوا الَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ فَيَسُبُّوا
اللَّهَ عَدْوًا بِغَيْرِ عِلْمٍ كَذَلِكَ زَيَّنَّا لِكُلِّ أُمَّةٍ عَمَلَهُمْ
ثُمَّ إِلَى رَبِّهِمْ مَرْجِعُهُمْ فَيُنَبِّئُهُمْ بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
আল্লাহ
ছাড়া যাদের তারা ডাকে তোমরা তাদের গালমন্দ করো না, তা হলে তারা শত্রুতা পোষণ করে অজ্ঞতাবশত আল্লাহকে গালমন্দ
করবে।
(সূরা আল-আনআম-৬: ১০৮)
অমুসলিমদের
সাথে নবী করিম (সা.)-এর ব্যক্তিগত আচরণ ছিল খুবই অমায়িক।
#
সাহাবি আবু বছরা বর্ণনা করেন, ‘‘ইসলাম গ্রহণের পূর্বে আমি এক রাতে নবী করিম (সা.)-এর মেহমান
হই। তাঁর ঘরে যে কয়টি বকরি ছিল, সব কয়টির
দুধ আমি একাই পান করে ফেলি। ফলে সে রাতে নবী করিম (সা.) সহ পরিবারের সবাই অভুক্ত
অবস্থায় রাত যাপন করেন। তবুও তিনি আমার প্রতি বিন্দুমাত্রও বিরক্ত হন নি।’’ (মুসনাদে আহমদ)
# হজরত আসমা(রা.)বর্ণনা করেন, “হুদায়বিদায় সন্ধির পর তিনি তাঁর অমুসলিম মায়ের সাথে আচরণ সম্পর্কে নবী করিম (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলে জবাবে তিনি বললেন, ‘‘মা যেই হোন না কেন তার সাথে সদাচরণ করতেই হবে।’’ (বুখারী)
মানুষের জীবনের নিরাপত্তায় সম্প্রীতি:
ইসলাম সমাজে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য
অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এই মর্মে আল কুরআনে ইরশাদ
হয়েছে,
مَنْ قَتَلَ نَفْسًا بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍ فِي الْأَرْضِ
فَكَأَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِيْعًا وَمَنْ أَحْيَاهَا فَكَأَنَّمَا أَحْيَا
النَّاسَ جَمِيْعًا
যে
ব্যক্তি কাউকে হত্যা করা কিংবা যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করা ছাড়া যে কাউকে হত্যা করল, সে যেন সব মানুষকে হত্যা করল। আর যে তাকে বাঁচাল, সে যেন সব মানুষকে বাঁচাল। (সুরা মায়িদা-৫:৩২)
#
যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কোন
মুমিনকে হত্যা করবে তার শাস্তি জাহান্নাম। সেখানেই সে চিরকাল থাকবে।
#
হত্যা সম্পর্কে মহানবী (সা.)
বলেছেন,
“হত্যাকারীর ফরয-নফল কোন
ইবাদতই আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না।” (তিরমিযী)
#
রাসুল (সা.)বলেন, কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম মানুষের মধ্যে হত্যা সম্বন্ধে বিচার
করা হবে। (বুখারি-মুসলিম)
অধিনস্তদের সাথে সম্প্রীতি:
অধিনস্তদের অধিকার রক্ষায় ইসলাম অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে।
আল্লাহর রাসূল (সা.) এ ব্যাপারে সতর্ক করে বলেন, ‘হে মানববৃন্দ! কোন দূর্বল মানুষের উপর অত্যাচার করো না, গরীবের উপর অত্যাচার করো না। সাবধান! কারো অসম্মতিতে কোন
জিনিস গ্রহণ করো না। সাবধান! মজুরের শরীরের ঘাম শুকাবার পূর্বেই তার মজুরী মিটিয়ে
দিও। দাসদাসীর প্রতি সবসময় সদয় ব্যবহার করো। তোমরা যা খাবে ও পরবে তা তোমাদের
দাস-দাসীদের খেতে ও পরতে দিও। যে মানুষ দাস-দাসীদের ক্ষমা করে ও ভালবাসে আল্লাহ
তাকে ক্ষমা করেন ও ভালবাসেন।
পারস্পরিক লেনদেনে সম্প্রীতি:
সামাজিক জীবনে পারস্পরিক লেনদেন করতে হয়। এতে উভয়পক্ষর
অধিকার ও সম্প্রীতি রক্ষাকরা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا لَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُمْ
بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ إِلَّا أَنْ تَكُونَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِنْكُمْ
وَلَا تَقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيْمًا
“হে ঈমানদারগণ। তোমরা একে
অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না, কেবলমাত্র তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয়
তা বৈধ।”
(সূরা নিসা-৪:২৯)
সামাজিক সম্প্রীতি নষ্টের কারণসমূহ পরিহার :
ইসলাম সামাজিক সুসম্পর্ক বজায় রাখার প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা
প্রদান করেছে। সামাজিক সম্প্রতি নষ্টের অন্যতম কারণ হলো একে অন্যের প্রতি উপহাস
করা।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِنْ قَوْمٍ
عَسَى أَنْ يَكُونُوا خَيْرًا مِنْهُمْ وَلَا نِسَاءٌ مِنْ نِسَآءٍ عَسَى أَنْ
يَكُنَّ خَيْرًا مِنْهُنَّ وَلَا تَلْمِزُوا أَنْفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا
بِالْأَلْقَابِ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ وَمَنْ لَمْ يَتُبْ
فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
“হে ঈমানদারগণ! কোনো পুরুষ
যেন অপর কোনো পুরুষকে উপহাস না করে; কেননা, যাকে
উপহাস করা হয়,
সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম
হতে পারে। তোমরা একে অন্যের প্রতি দোষারোপ করো না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে
ডেকো না;
।” (সূরা আল-হুজরাত-৪৯:১১)
রাসূলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা করেছেন,
‘‘তোমরা একে অপরের দোষত্রুটি
অন্বেষণ করবে না,
গুপ্তচরবৃত্তি অবলম্বন করবে
না। পরস্পর কলহ করবে না। পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ করবে না, একে অপরকে ঘৃণা করবে না। একে অপরের ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে
পেছনে লাগবে না: আর তোমরা সকলে আল্লাহর বান্দা হিসেবে পরস্পর ভাই ভাই হয়ে যাও।’’ (বুখারী-মুসলিম)
সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় ও মজবুত করার জন্য ইসলাম গুজব ছড়ানো
ও মিথ্যা অপবাদ রটানো নিষিদ্ধ করেছে।
আল্লাহ
তাআলা বলেন,
وَلَا تُطِعْ كُلَّ حَلَّافٍ مَهِيْنٍ () هَمَّازٍ مَشَّآءٍ بِنَمِيْمٍ
“তুমি তার আনুগত্য করবে না :
যে অধিক শপথ করে,
যে লাঞ্ছিত, যে পশ্চাতে নিন্দা করে, একে অপরের কথা লাগিয়ে বেড়ায়।” (সূরা কালাম-৬৮:১০-১১)
# রাসূল (সা) বলেন, “তোমাদের মধ্যে যে গুজব ছড়িয়ে বেড়ায় সে কখনো জান্নাতে প্রবেশ
করবে না।”
(বুখারী ও মুসলিম)
শেষকথা:
ইসলামীক দৃষ্টিকোণে সামাজিক সম্প্রীতির
গুরুত্ব অনেক বেশী। সামাজিক জীবনে যে যত এর গুরুত্ব দিয়েছে
তাদের জীবনে সফলতা পেয়েছে। আর যারা এর অবমূল্যায়ন করেছে তাদের জীবনটা ছিন্নভিন্ন
হয়ে পরেছে। সুতরাং আসুন! আমরা সমাজের সকলের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলি মমান
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সাহায্য করুন। আমিন।
No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com