Wednesday, August 28, 2024

বিড়াল প্রসঙ্গে ইসলামী দৃষ্টিকোণ

 



বিড়াল প্রসঙ্গে ইসলামী দৃষ্টিকোণ

এম এ রাজ্জাক হাওলাদার

মুসলিমদের কাছে পোষা প্রাণী হিসেবে জনপ্রিয় একটি প্রাণী বিড়াল। সবচেয়ে বেশি হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.)বিড়াল খুব পছন্দ করতেন। রাসুলের দরবারে থাকা অবস্থায় একবার তাঁর চাদরের আস্তিন থেকে একটি বিড়ালছানা বেরিয়ে পড়ে। তখন আল্লাহর রাসুল (সা.) তাকে মজা করে বলেন, ইয়া আবু হুরায়রা!অর্থাৎ হে বিড়ালের পিতা!

হাদীসে এসেছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اَلْهِرَّةُ لَا تَقْطَعُ الصَّلَاةَ، لِأَنَّهَا مِنْ مَتَاعِ الْبَيْتِ» (سنن ابن ماجه ــ369)

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)বলেছেন, বিড়াল নামাজ বিনষ্ট করে না। কারণ তা ঘরের জিনিসপত্রের অন্তর্ভুক্ত। (ইবনে মাজাহ:৩৬৯)

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাড়িতে বিড়াল পালনের বহু উপকারিতা রয়েছে। পোষা প্রাণী হিসেবে কুকুর বিড়ালের চেয়ে বেশি প্রভুভক্ত হলেও উপকারিতার দিক থেকে বিড়াল উপকারী ও পরিচ্ছন্ন। বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে তা প্রমাণিতও হয়েছে।

ব্রিটিশ লেখক মারলন বলেন,বিড়াল চমৎকার এক পোষা প্রাণী! এটি বুদ্ধিমান, স্বাধীন, স্নেহশীল, অনুগত এবং তুলনামূলকভাব বেশ শান্ত। বিড়াল নিজেই খুব পরিষ্কার থাকে। অন্য অনেক পোষা প্রাণীর তুলনায় প্রতিদিন একে রক্ষণাবেক্ষণে ও যত্নে খুব কম সময় দিতে হয়। তাদের থাকার জন্য বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না; ছোট বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্টে বসবাসকারী লোকেদের জন্যও এটি বেশ উপযোগী।

তিনি আরো বলেন, ‘অ্যালার্জিতে ভুগছেন এমন লোকদের জন্য বিড়ালও একটি দুর্দান্ত পছন্দ হতে পারে। বিড়াল অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় কম অ্যালার্জেন উৎপাদন করে।

পোষা প্রাণী হিসেবে বিড়াল পালন মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতেও বেশ অবদান রাখতে পারে। ২০২০সালের ১৮ ফেব্রুয়ারিতে-‘Medium ’-এ প্রকাশিত Amelia Carpenter-এর লেখা আর্টিকল ‘Cats are better than dogs, even science says so’-তে উল্লেখ করেন—‘বিড়াল নাটকীয়ভাবে আপনার স্বাস্থ্যের উন্নয়নে সহায়তা করতে পারে।

বিড়ালের সঙ্গে আদরে ভালোবাসায় সময় কাটানো মানুষের হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা ৪০ শতাংশ কমে যায়।

তিনি আরো বলেন, ‘তুলতুলে ছোট বন্ধুসুলভ বিড়ালের সাহচর্যে আপনি আপনার রক্তচাপ ও নিত্যদিনের চাপ (Stress) কমাতে পারেন।

মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক তাঁদের এক গবেষণায় চার হাজার ৫০০জন পুরুষ ও মহিলাকে পর্যবেক্ষণ করে দেখেন যে যারা কখনো বিড়ালের সঙ্গে সময় কাটায়নি তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার আশঙ্কা ৪০শতাংশ বেশি ছিল, যারা বিড়াল পালন করেছে তাদের তুলনায়।

 

বিড়াল পুষলে যেসব উপকার পাবেন

·         হৃদরোগের ঝুঁকি কমবে কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বিড়াল পোষেন তাদের মানসিক চাপ কম থাকে। ...

·         মিউ মিউ ধ্বনি থেরাপি ন্যায় কাজ করে ...

·         ভালো ঘুম হবে ...

·         নারীরা আকৃষ্ট হবে ...

·         রাগ ও উদ্বেগ কমাবে ...

·         শিশুর অ্যালার্জি হবার ঝুঁকি কম ...

·         পরিবেশের জন্যও ভালো ...

·         ব্যক্তি স্মার্ট হয়

 

একটি বিড়াল পোষার সঙ্গে কিছু দায়িত্ব পালনের চ্যালেঞ্জ আছে। এগুলো হচ্ছে বিড়ালের খাবার এবং চিকিৎসার বিল জোগাতে হবে। এর পাশাপাশি তাকে স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের ট্রেনিং দিতে হবে। এই চ্যালেঞ্জ নিতে পারলে বিড়াল পুষতে পারেন। এর অনেক ইতিবাচক দিক রয়েছে।  যে ব্যক্তি বিড়াল ভালোবাসেন তারও রযেছে মজার একটি নাম।

 

প্রথমেই বিড়াল সম্পর্কে কিছু তথ্য জানা দরকার।  

·         এরা তাদের উচ্চতার পাঁচগুণ এবং দৈর্ঘ্যের ছয়গুণ উপরে লাফ দিতে পারে। জীবনের দুই-তৃতীয়াংশ সময় ঘুমিয়ে কাটাতে পারে।

·         দিনে প্রায় ১৬ ঘন্টা ঘুমায়। সাধারণত পুরুষ বিড়াল বাম পা প্রথমে দিয়ে হাঁটে, নারী বিড়াল ডান-পা প্রথমে বাড়ায়।

·         খ্রিষ্টপূর্ব ৩৬০০ থেকে বিড়াল পোষা হচ্ছে।

·         মনোযোগ পাওয়া জন্য মিয়াউ করে আর খাবার পাওয়ার জন্য মায়াও শব্দ করে।

·         বিড়ালের হাড়ের সংখ্যা ২৩০টি।

·         তারা মানুষের চেয়ে অনেক বেশি শব্দ শুনতে পায়।

·         যিনি বিড়াল ভালোবাসেন তাকে আইলুরোফাইল বলা হয়। বিড়াল পুষলে বেশ কিছু উপকার পাওয়া যায়। 


বিড়ালের কিছু গুনাগুন:

v বিড়াল বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে: সারাদিন অফিস করে বাসায় ফিরে দেখবেন পোষা বিড়ালটি আপনার জন্য অপেক্ষা করে আছে। সে আপনাকে দেখামাত্র কাছে চলে আসবে। লোমশ বন্ধুটি আপনার শরীরে স্নেহময় ঘেঁষা দেবে। এতে আপনি দুঃশ্চিন্তা করার সময় পাবেন না। স্ট্রোকের ঝুঁকি কমবে। মন ভালো থাকবে। বিড়ালের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক বরাবর বন্ধুত্বপূর্ণ হয়। 

v বিড়ালের সঙ্গ আপনাকে খুশি রাখতে পারে: একটি পিং-পং বল দিয়ে তার সঙ্গে খেলতে পারেন। এতে আনন্দ পাবেন।

v কম খরচে পোষা যায়: অন্যান্য পোষা প্রাণীর তুলনায় কম বাজেটে বিড়াল পুষতে পারেন। এরা স্বাধীন প্রকৃতির। সারাদিন মানুষের মনোযোগ আশা করে না। দিনের বেশির ভাগ সময় ঘুমিয়ে কাটায়। বিড়ালদের জন্য একটি ট্রে দরকার হয়। এতে কিছু খাবার রাখলে তারা খেয়ে নিতে পারে। এরা দিনে বেশ কয়েকবার পানি পান করে।

v কম জায়গায় বিড়াল পুষতে পারেন: আপনি যদি শহরে বসবাস করেন আর একটি পোষা প্রাণী নিজের বাসায় রাখতে চান সেক্ষেত্রে বিড়াল রাখতে পারেন। এরা অল্প জায়গায় বসবাস করতে পারে।

v বিড়ালছানার সৌন্দর্য আপনার মন কেড়ে নেবে: একটি বিড়াল ছানার দিকে তাকিয়ে আপনি প্রতিটি মিনিট সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। এদের বড় বড় চোখ, নিষ্পাপ চাহনি, নরম লোম, আর মিউ মিউ-ডাকে আপনার হৃদয় গলে যাবে।

v ঘরের ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ দূর করে: ঐতিহাসিকভাবে, বিড়ালদের পোষার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে ঘর থেকে ইঁদুর তাড়ানো এবং অন্যান্য কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করা। গৃহপালিত বিড়াল এখনও এই সেবা মানুষকে দিয়ে আসছে। তার শিকারের কৌশলও দারুণ।

পরিশেষে বলা যায়, বিড়ালকে ভালোভাবে তত্ত্বাবধান করলে এটি আমাদের অনেক উপকারে আসতে পারে। এটি আমাদের একাকিত্ব দূর করে আমাদের চাপ মুক্ত ও সুস্থ থাকতে সহায়তা করতে পারে। আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।

তাই তো উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেও বাড়িতে পোষা প্রাণী হিসেবে বিড়াল রাখার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে।

রাসুল (সা.)-এর প্রিয় সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) বিড়ালের সঙ্গে সব সময় আনন্দঘন মুহূর্ত কাটাতেন। ইসলামী জীবনযাপনের পাশাপাশি হয়তো বিড়ালের নিরবচ্ছিন্ন সাহচর্যেই তিনি সব সময় প্রাণবন্ত ছিলেন।

 

No comments:

Post a Comment

razzakhowlader59@gmil.com