Friday, January 17, 2025

ইসলামে ভালো মানুষের গুণাবলী

 


ইসলামে ভালো মানুষের গুণাবলী

-এম এ রাজ্জাক হাওলাদার

সূচনা:

ইসলামে একজন ভালো মানুষের গুণাবলী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কুরআন ও হাদসে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে একজন ভালো মানুষের গুণাবলী বিভিন্ন কর্মের মাধ্যমে ফুটেউঠে।

মহা গ্রন্থ আল-কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِمَّنْ دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ

যে আল্রাহর দিকে দাওয়াত দেয় সৎকার্ম করে এবং বলে, আমি একজন আজ্ঞাবহ, তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার হতে পারে” (সূরা ফুসসিলাত-৪১:৩৩)

হাদীসে এসেছে,

قَالَ: «مَنْ أَحْسَنَ فِي الإِسْلاَمِ لَمْ يُؤَاخَذْ بِمَا عَمِلَ فِي الجَاهِلِيَّةِ، وَمَنْ أَسَاءَ فِي الإِسْلاَمِ أُخِذَ بِالأَوَّلِ وَالآخِرِ»

অর্থ: রাসূল করিম (সা.)বলেন, যে লোক ইসলামী যুগে সৎ কাজ করবে সে জাহিলী যুগের কাজ কর্মের জন্য পাকড়াও হবে না(বুখারী-৬৯২১শামেলা)

আসুন! ইসলামে ভালো মানুষের গুনাবলী নিয়ে আলোচনা করি। 

ভালো মানুষ বলতে কি বুঝায়?

একজন ভালো মানুষের মধ্যে উদারতা, সহানুভূতি, সততা, সত্যকথোন, সহানুভূতি, শ্রদ্ধা এবং নিঃস্বার্থতার মতো গুণাবলী রয়েছে। যারা নৈতিক মূল্যবোধ প্রদর্শন করে, অন্যদের সাথে ন্যায্য আচরণ করে এবং তাদের কর্ম, শব্দ এবং পছন্দের মাধ্যমে বিশ্বে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে চেষ্টা করে। তাদেরকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে বলে।

 

কুরআন হাদীসের দৃষ্টিতে ভালো মানুষের গুণাবলী

১. আল্লাহর প্রতি ঈমান ও তাকওয়া:

কুরআন বলছে:

إِنَّ ٱلْمُتَّقِينَ فِى جَنَّـٰتٍۢ وَعُيُونٍۢ

 নিশ্চয় মুত্তাকিরা (যারা আল্লাহভীরু) জান্নাতে ও ঝর্ণার পাশে থাকবে।” (সূরা আয-যারিয়াত- ৫১:১৫)

তাকওয়া একজন ভালো মানুষের মৌলিক গুণ। যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে এবং তাঁকে ভয় করে, তারা নিজেদের সব কাজে সতর্ক থাকে।

২. নম্রতা ও বিনয়

আল্লাহ বলেন:

وَعِبَادُ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى ٱلْأَرْضِ هَوْنًۭا وَإِذَا خَاطَبَهُمُ ٱلْجَـٰهِلُونَ قَالُوا۟ سَلَـٰمًۭا

রহমানের বান্দারা হলেন তারা, যারা জমিনে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং মূর্খরা তাদের সঙ্গে কথা বললে তারা বলে, ‘সালাম।” (সূরা আল-ফুরকান-২৫:৬৩)

৩. সত্যবাদিতা

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:

عَلَيْكُمْ بِالصِّدْقِ فَإِنَّ الصِّدْقَ يَهْدِي إِلَى الْبِرِّ وَإِنَّ الْبِرَّ يَهْدِي إِلَى الْجَنَّةِ

 তোমরা সত্যবাদিতা অবলম্বন করো। কেননা, সত্যবাদিতা মানুষকে কল্যাণের দিকে নিয়ে যায়, আর কল্যাণ তাকে জান্নাতে পৌঁছে দেয়।” (সহীহ বুখারী:৫৭৪৩)

৪. ধৈর্য ও সহনশীলতা

কুরআনে বলা হয়েছে:

وَٱصْبِرْ فَإِنَّ ٱللَّهَ لَا يُضِيعُ أَجْرَ ٱلْمُحْسِنِينَ

ধৈর্য ধারণ করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না। (সূরা হুদ, ১১:১১৫)

৫. পরোপকারিতা ও উদারতা

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:

مَنْ لاَ يَرْحَمُ لاَ يُرْحَمُ

 যে দয়া করে না, তাকে দয়া করা হবে না।”(সহীহ বুখারী:৫৯৯৭)

৬. পরিবার ও প্রতিবেশীর প্রতি সদ্ব্যবহার

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:

مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلَا يُؤْذِ جَارَهُ

 যে আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।” (সহীহ বুখারী, হাদিস: ৬০১৮)

৭. ক্ষমা ও উদার মনোভাব

কুরআনে আল্লাহ বলেন:

وَلْيَعْفُوا۟ وَلْيَصْفَحُوٓا۟ ۗ أَلَا تُحِبُّونَ أَن يَغْفِرَ ٱللَّهُ لَكُمْ ۗ

 তারা যেন ক্ষমা করে এবং উদার মনোভাব গ্রহণ করে। তোমরা কি চাও না যে আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন?” (সূরা আন-নূর, ২৪:২২)

৮. অসৎ কাজ ও গুনাহ থেকে বিরত থাকা

আল্লাহ বলেন:

وَٱلَّذِينَ هُمْ عَنِ ٱللَّغْوِ مُعْرِضُونَ

 আর যারা অনর্থক কাজ থেকে বিরত থাকে।”(সূরা আল-মুমিনুন, ২৩:৩)

৯. ন্যায়পরায়ণতা ও ইনসাফ

আল্লাহ বলেন:

إِنَّ ٱللَّهَ يَأْمُرُ بِٱلْعَدْلِ وَٱلْإِحْسَـٰنِ

 নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা ও সৎকর্মের আদেশ দেন।” (সূরা আন-নাহল, ১৬:৯০)

১০. আমানতদারিতা

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:

لَا إِيمَانَ لِمَنْ لَا أَمَانَةَ لَهُ

যার মধ্যে আমানতদারিতা নেই, তার কোনো ঈমান নেই।” (মুসনাদ আহমাদ:১২৪১০)

১১. সৎ উপার্জন ও হারাম বর্জন

আল্লাহ বলেন:

يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ كُلُوا۟ مِن طَيِّبَـٰتِ مَا رَزَقْنَـٰكُمْ

 হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদের জন্য যা পবিত্র রিজিক দিয়েছি, তা খাও।” (সূরা আল-বাকারাহ, ২:১৭২)

১২. শোকরগুজার হওয়া

আল্লাহ বলেন:

لَئِن شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ

 তোমরা যদি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, আমি অবশ্যই তোমাদের আরও দান করব।” (সূরা ইবরাহিম, ১৪:৭)

 আমি কেন ভালো হওয়ার চেষ্টা করব?

ভালো থাকার মাধ্যমে আমরা ন্যায়পরায়ণতা, ন্যায়পরায়ণতার বোধ অর্জন করি এবং আমরা অপরাধবোধ এবং লজ্জা এড়াই আরও প্রতিফলন আমাদের বিস্ময়ের দিকে নিয়ে যায় যে বিবেকের কণ্ঠস্বর কোথা থেকে আসে এবং সেই কণ্ঠস্বর আমাদের যা বলে তার ন্যায্যতা কী। আমরা নিজেদেরকে কর্তব্যবোধের সাথে খুঁজে পাই এবং আশ্চর্য হই যে কে বা কি সেই দায়িত্ব আরোপ করে তার জন্য চেষ্টা করি।

 

একজন ভালো মানুষের কি কি গুনাবলী থাকা উচিত

মানুষ তার গুনাবলীর মাধ্যমে সমাজে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করে। একজন সত্যিকারের মানুষের কি কি গুন থাকা উচিত? কি কি গুন থাকলে আমরা একজন মানুষকে ভাল মানুষ বলব? মনের মধ্যে কত-শত কথাই না উকি দিয়ে যায়। আমার মতে ভাল মানুষ হওয়ার জন্য য়ে সব গুনাবলী অবশ্যই থাকতে হবে, সেগুলো হলো:

(১) সময়ের কাজ সঠিক সময়ে, সঠিকভাবে সম্পন্ন করা।

(২) অপরের ভাল করতে না পারলেও তার ক্ষতির চিন্তা না করা।

(৩) মানুষ মাত্রই লোভী। কিন্তু সেই লোভকে একান্ত প্রয়োজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা।
(
৪) অপরকে কোন সময়ই ছোট করে না দেখা। মানুষের দূর্বল জায়গায় আঘাত না করা।
(
৫) নিজেকে, নিজের দেশকে ভালবাসা। যে নিজেকে ভালবাসতে পারে না সে নিজের দেশকে, দেশের মানুষকেও ভালবাসতে পারে না।

(৬) নিজের উপর বিশ্বাস রাখা।

(৭) সর্বদা সত্য কথা বলা। নিজ নিজ ধর্মের বিধি-বিধান গুলো মেনে চলা।

এই সব গুনাবলী যদি কারো মধ্যে থাকে তাহলে নিঃসন্দেহে আমরা তাকে ভাল মানুষ বলতে পারি।

 

ভালো মানুষের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল:

Ø  সৎ ও ন্যায়পরায়ণ: সত্যবাদী, ন্যায়ের পথে থাকে।

Ø  দয়ালু ও সহানুভূতিশীল: অন্যদের প্রতি সহানুভূতিশীল, সাহায্য করে।

Ø  সম্মানশীল: সকলের প্রতি সম্মানশীল আচরণ করে।

Ø  ক্ষমাপ্রার্থী: ভুল স্বীকার করে এবং ক্ষমাপ্রার্থী হয়।

Ø  দায়িত্বশীল: নিজের দায়িত্ব পালন করে।

 

নিজেকে কিভাবে ভালো করা যায়?

v নিজের সেরা সংস্করণ হতে হবে।

v আপনাকে কোনও অনুশোচনা ছাড়াই বাঁচতে হবে।

v আপনাকে আপনার কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে আসতে হবে

v ঝুঁকি নিতে হবে এবং ব্যর্থ হতে হবেহ্যাঁ, ব্যর্থযাতে আপনি আবার ফিরে আসতে পারেন এবং সফল হতে পারেন।

v আপনার কী করা উচিত তা বলা বন্ধ করুন এবং এটি করা শুরু করুন।

 

উপসংহার

উপরোক্ত গুণাবলী একজন ভালো মুসলিম ব্যক্তির জীবনে প্রতিফলিত হওয়া উচিত। এসব গুণ অর্জনের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা লাভ করতে পারে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে এই গুণাবলী অর্জনের তৌফিক দান করুন। আমিন।

No comments:

Post a Comment

razzakhowlader59@gmil.com