Saturday, March 01, 2025

পেশা হিসেবে খেলাধুলা গ্রহণকরা ‘প্রসঙ্গে ইসলামী দৃষ্টিকোণ’

 



পেশা হিসেবে খেলাধুলা গ্রহণকরা ‘প্রসঙ্গে ইসলামী দৃষ্টিকোণ’

-এম এ রাজ্জাক হাওলাদার

সলাম কেবল ইবাদত-বন্দেগির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যা মানুষের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আত্মিক চাহিদাকে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে সমাধান করে। বিনোদন, বিশ্রাম ও খেলাধুলাও জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা শরীর ও মনের প্রশান্তি আনতে সহায়ক হতে পারে। তবে এগুলো যেন নৈতিকতা, সংযম ও আল্লাহর বিধানের বিপরীতে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি।

 

১. শরীর চর্চামূলক খেলা এবং ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি:

ইসলাম এমন খেলাধুলাকে উৎসাহিত করে, যা শরীরের সুস্থতা বজায় রাখে, শৃঙ্খলা শিক্ষা দেয় এবং আত্মরক্ষা ও জীবনের প্রয়োজনে কাজে লাগে। হাদিসে এমন কিছু খেলাধুলার প্রশংসা এসেছে, যেমন

 

  তীরন্দাজি ও অশ্বারোহণ:

নবী (সা.)বলেন:

"তোমরা তীর ছুঁড়ো, আমি তোমাদের জন্য তা পছন্দ করি।" (সহিহ মুসলিম: ১৯১৭)

 

  সাঁতার ও কুস্তি:

"যে ব্যক্তি সাঁতার জানে, সে যেন তা শেখায়; আর যে ব্যক্তি তীরন্দাজি জানে, সে যেন তা শেখায়।" (মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাক: ১৩৫৭৭)

এই খেলাগুলো শুধু বিনোদনের জন্য নয়, বরং আত্মরক্ষা ও শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

২. পেশা হিসেবে খেলাধুলা: হালাল নাকি হারাম?

খেলাধুলাকে যদি বিনোদন বা শরীরচর্চার জন্য করা হয়, তবে তা বৈধ। কিন্তু যখন এটি পেশা বা উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা হয়, তখন কিছু বিষয় বিবেচনা করা জরুরি।

  বৈধ হওয়ার শর্তসমূহ:

১. আয় হালাল হতে হবে:

যদি খেলা থেকে অর্জিত অর্থ হালাল উপায়ে আসে (যেমনবৈধ প্রতিযোগিতা, স্পন্সরশিপ, চাকরি), তাহলে তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে। হারাম উপাদান (যেমনজুয়া, সুদ, মদ বা অশ্লীল স্পন্সরশিপ)সম্পৃক্ত থাকলে তা হারাম হবে।

২. ইসলামের মৌলিক বিধান অক্ষুণ্ণ থাকতে হবে:

নামাজের সময় নষ্ট না হওয়া অশ্লীলতা, নগ্নতা, অহংকার বা গীবত না থাকা সহিংসতা, মারামারি বা ইসলামের আদর্শবিরুদ্ধ আচরণ না থাকা

৩. সময়ের সঠিক ব্যবস্থাপনা:

যদি খেলাধুলার কারণে ইবাদত, পরিবার, সমাজ বা দ্বীনের দায়িত্বগুলো অবহেলিত হয়, তাহলে তা পরিত্যাগ করা আবশ্যক।

  যেসব কারণে খেলাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করা হারাম বা সন্দেহযুক্ত হতে পারে:

১. জুয়া ও হারাম লেনদেন:

অনেক খেলায় বেটিং, জুয়া ও হারাম অর্থ লেনদেন থাকে, যা সুস্পষ্টভাবে হারাম। (সূরা মায়িদা: ৯০-৯১)

অশ্লীলতা ও শরীর প্রদর্শন:

আজকাল অনেক খেলাধুলায় এমন পোশাক পরতে হয়, যা শরীয়াহসম্মত নয়।

নারী-পুরুষের সংমিশ্রণ ও অশালীনতা থাকলে তা হারাম হয়ে যায়।

৩. ইবাদতের প্রতি অবহেলা:

যদি খেলাধুলার জন্য ফরজ ইবাদত (নামাজ, রোযা) ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে তা বৈধ হবে না।

৩. ইসলাম কি খেলাকে পেশা হিসেবে সমর্থন করে?

  যদি খেলাধুলা উপরের শর্তগুলোর মধ্যে থাকে, তাহলে এটি একটি বৈধ পেশা হতে পারে।

👉 যেমন: একজন মুসলিম ফুটবলার, ক্রিকেটার বা অ্যাথলেট যদি হালালভাবে উপার্জন করেন এবং ইসলামের বিধান মেনে চলেন, তাহলে পেশা হিসেবে খেলাধুলায় সমস্যা নেই।

   কিন্তু যদি এটি ইসলামের মৌলিক নীতিগুলোর পরিপন্থী হয়, তাহলে এটি পরিত্যাজ্য।

👉 যেমন: যদি কেউ এমন খেলায় জড়িত হন, যেখানে জুয়া, মদ বা অশ্লীলতা প্রচারিত হয়, তাহলে তা হারাম হবে।

৪. পেশা হিসেবে খেলার বিকল্প সমাধান:

  কোচিং বা প্রশিক্ষক হওয়া:

যদি কেউ খেলাধুলায় আগ্রহী হন, তবে তিনি প্রশিক্ষক বা কোচ হতে পারেন, যা অধিকতর নিরাপদ ও হালাল উপার্জনের মাধ্যম হতে পারে।

  শরীরচর্চা ও হালাল বিনোদনের জন্য খেলা:

যদি উদ্দেশ্য শুধুই সুস্থ থাকা ও বিনোদন, তাহলে তা প্রশংসনীয়।

৫. ইসলামি নির্দেশনার আলোকে চূড়ান্ত উপসংহার:

📌 হালাল পদ্ধতিতে, সংযতভাবে এবং ইসলামের বিধান মেনে খেলা পেশা হিসেবে গ্রহণ করা যায়।

📌 কিন্তু হারাম উপাদান থাকলে, তা থেকে বিরত থাকা জরুরি।

📌 সমস্ত খেলাধুলা যদি দুনিয়াবি মোহ, অহংকার ও ইসলামের বিধানের লঙ্ঘনের দিকে নিয়ে যায়, তাহলে তা থেকে দূরে থাকাই উত্তম।

🔹 আল্লাহ আমাদেরকে হালাল পেশা গ্রহণ করার তাওফিক দিন এবং হারাম থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

No comments:

Post a Comment

razzakhowlader59@gmil.com