ঘূর্ণিঝড়
থেকে রক্ষায় মহানবীর (সা.) নির্দেশনা
এম এ রাজ্জাক হাওলাদার
************************************
একদিকে মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের
মানুষ নানান সমস্যা জর্জরিত অপর দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’। যার ফলে উপকূলীয়বাসী পড়েছে বড়ই বিপাকে।
খবরে বলা হয়েছে, প্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আরও ঘনীভূত ও
উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বুধবার (২৬ মে-২০২১) দুপুর নাগাদ উত্তর উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ
উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমের সময় খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম জেলা এবং তাদের
অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোয় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিসহ ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার
বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
বিশ্বময় সব ধরণের বিপদাপদ থেকে কেবলমাত্র
আল্লাহতায়ালাই পারেন বিশ্ব মানবতাকে রক্ষা করতে। এজন্য বিশ্ব মানবতার উচিত রহমান
খোদার প্রকৃত বান্দায় পরিণত হওয়া। সৃষ্টিকর্তার আদেশ-নিষেধ মেনে জীবন পরিচালনা
করা।
হাদিস শরিফে আছে, যখন কোথাও ভূমিকম্প সংঘটিত হয় অথবা
সূর্যগ্রহণ হয়, ঝড়ো বাতাস বা
বন্যা হয়, তখন সবার উচিত
মহান আল্লাহর কাছে তওবা করা, তার কাছে নিরাপত্তার জন্য দোয়া করা, মহান আল্লাহকে স্মরণ করা এবং ক্ষমা প্রার্থনা
করা।
এ ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ (সা.) নির্দেশ দিয়ে
বলেছেন, ‘দ্রুততার সঙ্গে মহান আল্লাহর জিকির করো, তার নিকট তওবা করো।’ (বুখারী ও মুসলিম)
আল্লাহর জিকিরের সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে নামাজ
পড়া, কোরআন
তিলাওয়াত বা দোয়া-দরুদ পাঠ করা।
হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া বইলে রাসুলুল্লাহ (সা.)
মসজিদে যেতেন এবং নামাজে মশগুল হতেন। (মিশকাত)
সাহাবাদের জীবনে আমরা দেখি, বিপদে-মুসিবতে তারা নামাজে দাঁড়াতেন ও ধৈর্য
ধারণ করতেন। (মিশকাতুল মাসাবিহ)
ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় রাসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উম্মতকে বিচলিত না হয়ে দোয়ার শিক্ষা দিয়েছেন।
ঘূর্ণিঝড় ও বিপদাপদ থেকে নিরাপদ থাকতে পবিত্র কোরআনের বিশেষ দোয়া-
رَبَّنَا اكْشِفْ عَنَّا الْعَذَابَ إِنَّا مُؤْمِنُونَ
হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের উপর থেকে আপনার
শাস্তি প্রত্যাহার করুন, আমরা বিশ্বাস
স্থাপন করছি। (সুরা দুখান-৪৪/১২)
এছাড়া হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে, বৃষ্টির সময় দোয়া কবুল হয়। এ জন্য মুমিন
মুসলমানের উচিত নিজেদের সব চাওয়াগুলো পূরণে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা।
প্রবল ঘূর্ণিঝড়-বৃষ্টিতে যদি মানুষের জন
জীবনের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে কিংবা ফসলাদি নষ্ট হয় বা চলাচলের রাস্তা-ঘাট পানিতে
তলিয়ে যায়, তবে সে
অবস্থায় প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দোয়া পড়তেন- ‘আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়ালা আলাইনা।’ (বুখারী)
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের থেকে (ঘূর্ণিঝড়, বৃষ্টি) ফিরিয়ে নাও, আমাদের ওপর দিয়ো না।
জোরে বাতাশ প্রবাহিত হলে যে দোয়া পড়তে হবে- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা, ওয়া আউযুবিকা মিন শাররিহা’
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট এর
কল্যাণটাই কামনা করি এবং আপনার নিকট এর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই।
(আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেছেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেঘের
গর্জন শুনলে বা বিদ্যুতের চমক দেখলে সঙ্গে সঙ্গে এই দোয়া করতেন-
‘‘আল্লাহুম্মা
লা-তাক্বতুলনা- বিগযাবিকা ওয়া লা তুহলিকনা বিআ’জাবিকা, ওয়া আ’ফিনা ক্বাবলা যালিকা।’’
অর্থ: হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে তোমার
ক্রোধের কারণে মেরে ফেলো না আর তোমার আযাব দিয়ে আমাদের ধ্বংস করো না। বরং এর আগেই
আমাদেরকে ক্ষমা ও নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করে নাও। (তিরমিজি)
ঝড় বা বাতাশ থেকে বাঁচতে যে দোয়া পড়তে হবে- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন খাইরি হাজিহির
রিহি ওয়া খাইরা মা ফিহা ওয়া খাইরা মা উরসিলাত বিহি, ওয়া আউযুবিকা মিন শাররিহা, ওয়া শাররি মা ফিহা ওয়া শাররি মা উরসিলাত
বিহি।’
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট প্রার্থনা
করি এর কল্যাণ, এর মধ্যকার
কল্যাণ এবং যা এর সাথে প্রেরিত হয়েছে তার কল্যাণ। আর আমি আপনার আশ্রয় চাই এর
অনিষ্ট থেকে, এর ভেতরে
নিহিত অনিষ্ট থেকে এবং যা এর সঙ্গে প্রেরিত হয়েছে তার অনিষ্ট থেকে। (বুখারী)
দয়াময় প্রভুর দরবারে সবিনয় প্রার্থনা, হে প্রভু! তুমি আমাদের পাপ সমূহ ক্ষমা করে
বিশ্ব মানবতাকে সকল বিপদাপদ থেকে রক্ষা কর, আমিন।
সংগ্রহীত :অন লাইন।
No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com