ধর্ম যার যার, উৎসব সবার বা সার্বজনীন
এম এ রাজ্জাক হাওলাদার
(প্রথম পর্ব)
ধর্ম:
ধর্ম বলতে বোঝায় কোনো প্রাণী বা বস্তুর বৈশিষ্ট্য।মহাবিশ্বের
প্রতিটি প্রাণী এবং বস্তুর স্ব স্ব ধর্ম অর্থাৎ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বস্তুর যেমন
মৌলিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে ঠিক তেমনি প্রাণীদেরও মৌলিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রাণীদের
ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন গোত্রের প্রাণীদের ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়।
তবে "Homo sapiens"–দের (মনুষ্যের)
ক্ষেত্রে ব্যাপারটি একটু ভিন্ন ধরনের। মানুষ হচ্ছে বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাব
বিস্তারকারী প্রাণী। একমাত্র মানুষদের ক্ষেত্রেই এ ধর্ম কিংবা বৈশিষ্ট্য দুই ধরনের
হয়ে থাকে। ভৌত ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য এবং মানবিক ধর্ম অথবা বৈশিষ্ট্য| -(উইকিপিডিয়া)
ধর্মের ইতিহাস বিভিন্ন ধর্মমতে ভিন্ন ভিন্ন, তবে বর্তমান পৃথিবীর প্রধান তিনটি ধর্ম অর্থ্যাৎ ইসলাম, খ্রিস্টান ও ইহুদি ধর্মমতে পৃথিবীর সকল মানুষ একজন পিতা ও একজন মাতা থেকে জন্ম গ্রহণ করেছে। এই দুইজন আদি পিতা আদম (Adam) ও মাতা হাওয়া (Eve) এর মাধ্যমে পৃথিবীর সকল মানুষের জন্ম। এই তিন ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ যথাক্রমে কুরআন মাজিদ, বাইবেল (নিউ টেস্টামেন্ট) ও তাওরাহ (ওল্ড টেস্টামেন্ট) থেকে এই ঘটনার সুত্র পাওয়া যায়। মানব্জাতির সৃষ্টির পর থেকেই মুলত মানুষের ধর্মের সুত্রপাত।-(উইকিপিডিয়া)
উৎসব:
একটি উৎসব হল একটি অনুষ্ঠান যা সাধারণত একটি সম্প্রদায়
দ্বারা উদযাপিত হয় এবং সেই সম্প্রদায়ের কিছু বৈশিষ্ট্যগত দিক এবং তার ধর্ম বা
সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। এটি প্রায়শই স্থানীয় বা জাতীয় ছুটি, মেলা হিসাবে চিহ্নিত করা
হয়। একটি উৎসব গ্লোকালাইজেশনের সাধারণ ঘটনা, সেইসাথে উচ্চ
সংস্কৃতি-নিম্ন সংস্কৃতির পারস্পরিক সম্পর্ক গঠন করে।
উৎসব আনন্দ প্রকাশ ও লাভের মাধ্যম, এক
কথায় যাকে বলা যায় আনন্দানুষ্ঠান; ইংরেজিতে একে ‘এ জয়ফুল অব অনারিফিক সেলিব্রেশন’ বলে সংজ্ঞায়িত
করা যায়। উৎসব পরিবারকেন্দ্রিক হতে পারে, আবার ব্যাপকভাবে
সমাজকেন্দ্রিকও হতে পারে। কালের বিবর্তনে এসব উৎসবের কোনোটির রূপ বদলায়, কোনোটি বিলুপ্ত হয়, আবার কোনোটি নতুন সৃষ্টি হয়।
উৎসবসমূহের কোনোটিতে থাকে সমাজ ও জাতীয়তার ছাপ, কোনোটিতে
ধর্মের ছাপ, আবার কোনোটিতে থাকে রাজনীতির ছাপ। তবে সব
অনুষ্ঠানের মূলেই রয়েছে আনন্দ লাভ। -(বাংলাপিডিয়া)
উৎসব বলতে সাধারণত সামাজিক, ধর্মীয় এবং
ঐতিহ্যগত প্রেক্ষাপটে পালিত আনন্দ অনুষ্ঠানকে বোঝায়। তবে উৎসবের সময় জাতি-ধর্ম
নির্বিশেষে সকল মানুষ আনন্দে মেতে ওঠে।
বাংলায় প্রচলিত লোকায়িত উৎসবের মধ্যে রয়েছে পহেলা বৈশাখ, চৈত্র সংক্রান্তি, নবান্ন, পৌষ মেলা ইত্যাদি।মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে রয়েছে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বার্ষিক উৎসবের মধ্যে রয়েছে জন্মাষ্ঠমী, রথযাত্রা, দুর্গা পূজা, সরস্বতী পূজা, লক্ষ্মী পূজা, গণেশ পূজা, জগদ্ধাত্রী পূজা ইত্যাদি।-(উইকিপিডিয়া)
সর্বজনীন ও সার্বজনীন এর অর্থ:
'সর্বজনীন' শব্দের অর্থ হলো: সকলের মঙ্গল বা সবার হিত বা কল্যাণ বা সকলের মঙ্গলের জন্য কৃত বা সকলের জন্য উদ্দিষ্ট'। অন্যদিকে, 'সার্বজনীন' শব্দের অর্থ 'সবার মধ্যে প্রবীণ বা সবার মধ্যে শ্রেষ্ঠ'। যেমন: নেলসন মেন্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকার সার্বজনীন নেতা।
দূর্গাপূজাকে ১জন মুসলিম কিভাবে সার্বজনীন উৎসব বলতে
পারে?
১. উপরের
অর্থ হিসেবে দূর্গাপূজা সর্বজনীন বা সার্বজনীন কোনটিই হতে পারে না। এটার মধ্যে
কারোই কল্যাণ নেই এবং সবচে'
সেরা বা সর্বোত্তম কাজ তো
নয়ই বরং মূর্তি পূজা সবচে,
নিকৃষ্ট কাজ।
২. মূর্তি
পূজা কে ইসলামে বলা হয়েছে, اعظم
الكباير কবীরা গুনাহের মধ্যে সবচে ' জঘণ্য এবং সবচে' বড়।
৩. হযরত
বিলাল (রা:) কে ইসলাম থেকে ফিরাতে এবং মূর্তি পূজার দিকে প্রত্যাবর্তন করাতে বুকে
পাথর চাপা দিয়ে তপ্ত বালুর ওপর দুপুরের কঠিন রোদে ফেলে রাখলে তখন তাঁর অনুভূতি
ব্যক্ত করে বলেছিলেন,
ولن اعود الي عبادة الاصنام ولو قطعتني اربا اربا
আমাকে
কেটে শত টুকরা করলেও আমি ইসলাম গ্রহণ করার পর আর মূর্তিপূজার দিকে ফিরে যাবো না।
৪. হাদীসে
এসেছে,
عَنْ
مُعَاذٍ قَالَ أَوْصَانِي رَسُولُ اللهِ ﷺ بِعَشْرِ كَلِمَاتٍ قَالَ : «لَا
تُشْرِكْ بِاللهِ شَيْئًا وَإِنْ قُتِلْتَ و حرقت
আনাস
(রা:) বলেছেন,
রাসূল (সা:)আমাকে ১০টি
বিষয়ের উপদেশ দিয়েছেন,
তিনি বলেছেন, তোমাকে হত্যা অথবা আগুনে পুড়ে মারা হলেও তবুও আল্লাহর
সঙ্গে শিরক করবেনা। (মিশকাত-৬১, মুসনাদ আহমদ-২১৫৭০)হাদিসের মান: হাসান লিগাইরিহি।
৫. মূর্তি
পূজা তথা শিরকের ব্যাপারে আল কুরআন এর সূরা লুকমানের ১৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে,
لا
تشرك بالله ان الشرك لظلم عظيم
আল্লাহর
সাথে শিরক করোনা নিশ্চয়ই শিরক হলো বড় জুলুম।
৬. আরো
বলা হয়েছে ان الله لا يغفر ان يشرك به
আল্লাহর সাথে শরিক করলে আল্লাহ
তাআলা কখনো তা ক্ষমা করবেন না। (সূরা আন
নিসা-৪৮)
মূর্তি পূজার ব্যাপারে হিন্দু ধর্ম কি বলে?
সম্ভবত এ কারণেই মূর্তিপূজার ব্যাপারে হিন্দুদের চারটি বেদ
ঋকবেদ,
সামবেদ, যজুর্বেদ এবং অথর্ববেদ গ্রুন্থে এ শ্লোক মন্ত্র এসেছে। একে
বেদের ব্রহ্মসুত্রও বলা হয়ে থাকে- ‘‘একম ব্রহ্মা দ্বৈত্য নাস্তি নহিনা নাস্তি
কিঞ্চান"। (ঈশ্বর ১তার মতো কেউ নেই, কেউ নেই সামান্যও নেই)
#
আরও এসেছে, তিনি একজন তারই
উপাসনা করো। (ঋকবেদ-২/৪৫/১৬)
# এক্ম এবম অদ্বৈতম ‘‘অর্থাত তিনি একজন তার মত আর দ্বিতীয় কেউ নেই। (ঋকবেদ-১/২/৩) ‘‘একজনই বিশ্বের প্রভূ” (ঋকবেদ-১০/১২১/৩)
এছাড়াও অনেক জোর দিয়ে বলা হয়েছে-
ন্
দ্বিতীয় ন্ তৃতীয় চতূর্থ না পুচ্যতে।
ন্ পঞ্চম
ন্ ষস্ট সপ্ত না পুচ্যতে।।
ন্ অস্টম
ন্ নবম দশমো নআ পুচ্যতে।
য এতং দেব
মেক বৃত্যং বেদ।।
(অথর্ব বেদ সুক্ত-১৪/৪/২)
পরমাত্মা এক। তিনি ছাড়া কেহই দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থ, পঞ্চম, ষস্ট, সপ্তম, অস্টম, নবম বা দশম বলিয়া অবিহিত আর কেহই নাই। যিনি তাহাকে এক বলিয়া জানেন তিনিই তাহাকে প্রাপ্ত হোন। (Iqna News Agency, 23 July 2016)
সম্ভবত: এসব কারণেই
১. রাজা
রামমোহন রায় মূর্তিপূজা ছেড়ে একেশ্বরবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েন এবং হিন্দু ধর্মের
পৌত্তলিকতা নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েন। ইসলামী সূফীবাদের প্রতি আকৃষ্ট হোন। এ
নিয়ে তার পিতার সাথে বিরোধ চরমে উঠে ফলে তার পিতা তাকে "তাজ্যপুত্র"
ঘোষণা করে। (BBC
News বাংলা, ৮ মার্চ, ২০২০)
# এ ছাড়াও সতীদাহ প্রথা বিলুপ্ত করতে চেষ্টা করার জন্যই রাজা রামমোহন রায় বিখ্যাত হয়ে উঠেন। (উইকিপিডিয়া)
মূর্তিপূজার প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতেন তিনি।
২. রবি ঠাকুরকে হিন্দু হিন্দু বলে গালি দেয়া হয় তিনি (সেরকম)
হিন্দু নন। হ্যা ঠিক। উনি ব্রাহ্ম ধর্ম পালন করতেন। উনার বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
ছিলেন ব্রাহ্ম ধর্মের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও প্রচারক। ঠাকুর পরিবার ব্রাহ্ম ধর্মের
পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এবং মূর্তিপূজার বিরোধী ছিলেন। রবি ঠাকুর আদি ব্রাহ্ম সমাজের
সাধারন সম্পাদক ছিলেন দীর্ঘদিন।
মূর্তিপূজার বিরোধিতা করায় অনেক সময়ই কোপানলে পরেছেন
হিন্দুসমাজের। ঠাকুরবাড়িতে পূজা হত না।ঠাকুর বাড়িতে কেউ বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হতে
হলে তাকে অবশ্যই ব্রাহ্ম ধর্ম গ্রহণ করতে হত। ইউরোপে যেমন রেনেসাঁ যুগে কিছু মানুষ
অগ্রপথিক ছিলেন বাংলায় ব্রাহ্ম সমাজ আধুনিকায়নে অগ্রপথিক ছিলেন। জগদীশ চন্দ্র বসু
কিন্তু ব্রাহ্ম লোকের অনুরাগী ছিলেন! (সূত্র: রঙ্গীন ভালোবাসা
স্বপ্নহীন পৃথিবী, ২১ এপ্রিল, ২০১৬ থেকে নেয়া)
# রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষ ভাবেই কোনো প্রতীক চিহ্নের বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি সবসময় বোঝাতে চেয়েছেন মিলনের মধ্যদিয়ে অসীমকে পাওয়া যায়। কোন দেবতাকে নয়। তিনি ছিলেন আপাদমস্তক অসাম্প্রদায়িক মানুষ। তাই দুর্গাপূজার সময়গুলোতে তিনি পূজার চেয়েও বেশি আনন্দ উপভোগ করতেন মানুষের মিলনের মেলায় এসে।(Quora)
কোন গুলো সার্বজনীন উৎসব?
যেসব উৎসবের সাথে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই বা যেগুলোর সাথে
নিছক দেশীয় বা জাতীয় বিষয় বা ইস্যু জড়িত সেগুলো দেশের সবাই মিলে পালন করতে কোন
অসুবিধা নেই,
বরং সবাই মিলেই এসব উৎসব বা
অনুষ্ঠান পালন করাই উচিত যদি কোনভাবেই শরীয়ত লঙ্ঘনের সম্ভাবনা না থাকে। আর জাতীয়
এসব অনুষ্ঠান গুলোই সার্বজনীন উৎসব বা অনুষ্ঠান। যেমন:
১. শহীদ
দিবস বা আন্তর্জাতিক মাতৃ ভাষা দিবস।
২.
স্বাধীনতা দিবস।
৩. বিজয়
দিবস। এগুলো সব
নাগরিক মিলে সম্মিলিতভাবে পালন করতে হবে। কারণ এগুলো আমাদের জাতীয় অনুষ্ঠান।
পক্ষান্তরে যে সব উৎসব ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে জড়িত, সে সব উৎসব ধর্মের অংশ হিসেবে পরিগণিত। তাই কোন
ধর্মের ধর্মীয় উৎসবের ক্ষেত্রে "ধর্ম
যার যার উৎসব সবার" বা সার্বজনীন উৎসব বা এক ধর্মের উৎসব অন্য ধর্মের
লোকের জন্য উৎসব হতে পারেনা। কিন্তু আমাদের দেশের কিছু লোক না বুঝে এসব কথা বলে থাকেন বা
শারদীয় পূজার শুভেচ্ছা বলে থাকেন বা মূর্তির ছবি সংবলিত পোস্টার ছাপিয়ে শুভেচ্ছা
জানিয়ে থাকেন যা মোটেই ঠিক নয়। এসব কাজ সরাসরি প্রকাশ্য শিরক কে সমর্থন করা বা উৎসাহ দান
করা। একজন মুসলিম
যা জ্ঞাতসারে করতে পারেনা। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
و من يشرك بالله فكانما خر من السماء
কেউ যদি
আল্লাহর সাথে শরীক করে সে যেন আসমান থেকে ছিটকে পড়লো অর্থাৎ ধ্বংস হয়ে গেলো। (সূরা
হজ্জ-৩১)
মূর্তিপূজা উপলক্ষে ১জন মুসলিম যেসব কাজ করতে পারবেনা:
১. এসব
অনুষ্ঠানকে উৎসব বলা, সার্বজনীন
বলা, শুভেচ্ছা
জানানো যাবেনা।
২.
মূর্তির ছবি সংবলিত পোস্টার ছাপিয়ে বিতরণ করা কুফরী, শিরক ও হারাম।
৩. বিনা
দরকারে এসব অনুষ্ঠানে/পূজার মেলায় গমন/অংশ গ্রহণ করা যাবেনা। হযরত ইব্রাহীম (আ:)
মুর্তি পূজার মেলায় যাননি। (সূরা সাফফাত- ৮৫ থেকে ৮৯)
৪. পূজার
অনুষ্ঠানে সব রকমের সাহায্য/সহযোগিতা করা।
৫. মেলা
থেকে কোনো কিছু কেনাকাটা করা হারাম।
ক. হাদীসে
এসেছে,
عَنِ
ابْنِ عُمَرَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَنْ
تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
ইবনু উমার
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূল
(সা:) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত গণ্য হবে। (আবু দাউদ-৪০৩১) তাহক্বীক: হাসান সহীহ।
খ.
হিজরতের পরে, সাহাবা
কিরাম (রা:) ইহুদিদের দুটি বড় উৎসব "নওরোজ" এবং "মেহেরজান"
দেখে যখন তাতে শরিক হতে চাইলেন তখন রাসূল (সা:) বললেন, না আমি চাই মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব হবে স্বতন্ত্র। হাদীসে এসেছে,
عَنْ
أَنَسٍ قَالَ: قَدِمَ النَّبِيُّ ﷺ
الْمَدِينَةَ وَلَهُمْ يَوْمَانِ يَلْعَبُونَ
فِيهِمَا فَقَالَ: «مَا هذَانِ الْيَوْمَانِ؟»
قَالُوا:
كُنَّا نَلْعَبُ فِيهِمَا فِي الْجَاهِلِيَّةِ
فَقَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «قَدْ أَبْدَلَكُمُ اللّهُ بِهِمَا خَيْرًا
مِنْهُمَا: يَوْمَ الْأَضْحى وَيَوْمَ الْفِطر
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী (সা:)
মাদীনায় আগমন করার পর তাদের দু’টি দিন
ছিল। এ দিন দু’টিতে তারা
খেলাধুলা ও আমোদ-প্রমোদ করত। (এ দেখে) তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ দু’টি দিন কি? তারা বলল ইসলামের পূর্বে জাহিলিয়্যাতের সময় এ দিন দু’টিতে আমরা খেলাধুলা করতাম। (এ কথা শ্রবণে) রাসূল (সা:)
বললেন, এ দু’দিনের পরিবর্তে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জন্য আরো উত্তম দু’টি দিন দান করেছেন। এর একটি হলো ঈদুল আযহার দিন ও অপরটি
ঈদুল ফিত্রের দিন।(আবূ দাঊদ-১১৩৪, মুসনাদ আহমাদ-১৩৬২২, মুসতাদরাক লিল হাকিম-১০৯১, মিশকাত-১৪৩৯) তাহক্বীক: সহীহ হাদীস।
গ.
মুসলমানদের জন্য অন্য ধর্মের লোকদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার ব্যাপারে
হজরত উমর (রা:) বলেছেন, তোমরা
আল্লাহর দুশমনদের উৎসবগুলোতে অংশগ্রহণ থেকে বেঁচে থাকো।(আস সুনানুল কুবরা-১৮৮৬২)
কারণ এসব
উৎসবে এমন কর্মকাণ্ড হয়, যা মহান
আল্লাহর সাথে সরাসরি শিরক।
ঘ. হাদীসে
এসেছে, خالفوا اليهود ইহুদীদের সাথে ভিন্নতা অবলম্বন কর। (আবু দাউদ-৬৫২, তিরমিজী-৭৫৫)
অন্য হাদীসে এসেছে, خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ মুশরিকদের সাথে ভিন্নতা অবলম্বন কর। (বুখারী-৫৮৯২, মুসলিম-৪৯০)
সব উলামা হযরত একমত যে তাদের প্রসাদ ভক্ষণ হারাম। কেননা ইহা মূর্তিপূজা উপলক্ষেই তৈরী।
সংখ্যালঘুদের/অমুসলিমদের ব্যাপারে আমাদের/মুসলিম
নেতাদের করণীয় হলো:
১.সংখ্যালঘুদের/অমুসলিমদের
সার্বিক নিরাপত্তা দিতে হবে। দরকার হলে স্ব শরীরে উপস্থিত থেকে নিরাপত্তা দিতে
শরীয়ত নির্দেশ দিয়েছে।
২.আমাদের
ধর্ম তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া যাবেনা, আমাদের ধর্ম গ্রহণের ব্যাপারে জবরদস্তি করা যাবেনা। আল্লাহর
বাণী, لا اكراه في الدين (ধর্মের ব্যাপারে জবরদস্তি নেই) (সূরা আল বাকারা-২৫৬) এ আয়াত এর তাফসীরে বলা হয়েছে, لا اكراه في قبول الدين (ধর্ম গ্রহণের ব্যাপারে কোন বাড়াবাড়ি নেই)।
৩.তাদের
প্রতিমাকে গালি দেয়া যাবেনা, নিন্দা
করা যাবেনা, তিরস্কার
ও ব্যঙ্গ, বিদ্রুপ
করা যাবেনা। আল্লাহ তাআলা বলেন,
لا
تسبوا الذين يدعون من دون الله فيسبوا الله عدوا بغير علم
আল্লাহ
ছাড়া যাদেরকে কাফেরগণ আহ্বান করে এদেরকে গালি দিয়োনা, তাহলে তারাও তোমাদের আল্লাহকে না বুঝে শত্রুতা বশত গালি
দিবে। (সূরা আন আম-১০৮)
এ আয়াতে মূর্তির নিন্দা, ব্যঙ্গ করা, বিদ্রুপ করা, গালি দেয়া সবই নিষেধ করা হয়েছে। (মায়ারিফুল কুরআন দেখুন)
৪.ধর্ম
পালনের সুযোগ ও নিরাপত্তা দিতে হবে, কোন ভাবেই জুলুম করা যাবেনা। বাধা দেয়া যাবেনা। হাদীসে
এসেছে,
الا
من ظلم معاهدا او انتقضه او كلفه فوق طاقته او اخذ منه شيئا بغير طيب نفس فانا
حجيجه يوم القيامة
সাবধান! যদি কোন মুসলমান অমুসলিম নাগরিকের ওপর নির্যাতন চালায়, অধিকার খর্ব করে, জোর পূর্বক কোন বস্তু ছিনিয়ে নেয়, তাহলে ঐ মুসলিমের বিরুদ্ধে অমুসলিমের পক্ষ অবলম্বন করে আল্লাহ তাআলা এর কাছে আমি নালিশ করবো। (আবু দাউদ-৩০৫২) তাহক্বীক: সহীহ হাদীস।
সুতরাং আসুন শ্লোগানটি
পাল্টিয়ে এভাবে বলি:
"ধর্ম যার
উৎসবও তার"।
"ধর্ম যার উৎসব
সবার"
১. এটা
সম্পূর্ণ শিরকী কথা।
২. কুফরী
কালাম।
৩. এক শ্রেণীর মানুষ ধোঁকা দিতেই এ রকম শ্লোগান তৈরী করা হয়েছে।
সবিনয়ে জানতে চাই:
ধর্ম যার যার উৎসব সবার এর অর্থ হলো, ধর্মীয় দিক থেকে এক ধর্মের লোকের সাথে অন্য ধর্মের ভিন্নতা
থাকলেও উৎসবের দিক দিয়ে সবাই এক। অর্থাৎ ধর্মের অনুশাসন সবাই নিজ ধর্ম অনুযায়ী
পালন করবে আর উৎসব একত্রে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে পালন করবে।
তাহলে কি এটি বলা যায় যে,
১.
মুসলমানরা হিন্দুদের পূজায় শরীক হবে?
২. আর
হিন্দুরা অংশ গ্রহণ করবে ঈদের নামাযে?
৩. বুদ্ধ পূর্ণিমার
দিনটা বৌদ্ধদের পাশাপাশি মুসলমানরাও উৎযাপন করবে?
না এটি হতে পারে না।
শেষকথা:
পরিশেষে বলতে হয়, কোন মুসলমান একথা বলতে পারে না যে, ধর্ম্ যার যার
উৎসব সবার। যেহেতু প্রত্যেক জাতী বিভিন্ন বিভিন্ন তাই যার যার ধর্ম সে সেই পালন
করবে। উৎসবও যার যার আলাদা। সুতরাং আসুন আমরা সকলে নিজ নিজ ধর্ম
সুন্দর ভাবে পালন করি। আল্লাহ
তাআলা আমাদের সবাইকে বুঝার তৌফিক দান করুন। আমীন।
No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com