Monday, January 17, 2022

আদর্শ সন্তান গঠনে পিতা-মাতার দায়িত্ব

 


আদর্শ সন্তান গঠনে পিতা-মাতদায়িত্ব

এম এ রাজ্জাক হাওলাদার

ভুমিকা:

সন্তান সন্ততি আল্লাহ দেয়া বড় নিয়ামত। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন, যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন, কাউকে পুত্র-কন্যা উভয়টি দান করেন আবার কাউকে নিঃসন্তান রাখেন। যাদেরকে আল্লাহ মেহেরবানী করে সন্তান দান করেন তার বড় দায়িত্ব হলো সন্তানগুলোকে আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ে তোলা। তা নাহলে সন্তান বিপথগামী হয়, পিতা-মাতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সমাজ ধ্বংস হয় এবং মানবজাতি কলঙ্কিত হয়। তাই আমাদের সকলের উচিত সন্তানদেরকে আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো।

আদর্শ সন্তান গঠনে পিতা-মাতদায়িত্ব সমূহ

নিম্নে আমরা আদর্শ সন্তান গঠনের জন্য পিতা-মাতার দায়িত্ব সমূহ কি কি তা এখন আলোচনা করব।

সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার শোভা-সৌন্দর্য:

الْمَالُ وَالْبَنُونَ زِينَةُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَالْبَاقِيَاتُ الصَّالِحَاتُ خَيْرٌ عِنْدَ رَبِّكَ ثَوَابًا وَخَيْرٌ أَمَلًا

ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য এবং স্থায়ী সৎকর্মসমূহ আপনার পালনকর্তার কাছে প্রতিদান প্রাপ্তি ও আশা লাভের জন্যে উত্তম। (সূরা কাহাফ-১৮ : ৪৬)

সন্তান-সন্ততি দ্বারা মৃত্যুর পর উপকারিতা লাভ:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثَةٍ: إِلَّا مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যখন মানুষ মৃত্যুবরণ করে তখন তিন প্রকার আমল ছাড়া তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায় । যে তিনটি আমল জারি থাকে সেগুলো হলো (ক) সাদাকায়ে জারিয়াহ (খ) ইলম যার দ্বারা উপকৃত হয় এবং (গ) পুণ্যবান সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে। (মুসলিম : ৪১১৫)

নেক সন্তানগণ ও পিতা-মাতা এক সাথে জান্নাতে থাকবে:

وَالَّذِينَ آمَنُوا وَاتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّيَّتُهُمْ بِإِيمَانٍ أَلْحَقْنَا بِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَمَا أَلَتْنَاهُمْ مِنْ عَمَلِهِمْ مِنْ شَيْءٍ كُلُّ امْرِئٍ بِمَا كَسَبَ رَهِينٌ

যারা ঈমানদার এবং যাদের সন্তানরা ঈমানে তাদের অনুগামী, আমি তাদেরকে তাদের পিতৃপুরুষদের সাথে মিলিত করে দেব এবং তাদের আমল বিন্দুমাত্রও হ্রাস করব না। প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃত কর্মের জন্য দায়ী। (সূরা তুর-৫২ : ২১)

 

সন্তান-সন্ততি বিপদের কারণ:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّ مِنْ أَزْوَاجِكُمْ وَأَوْلَادِكُمْ عَدُوًّا لَكُمْ فَاحْذَرُوهُمْ وَإِنْ تَعْفُوا وَتَصْفَحُوا وَتَغْفِرُوا فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ إِنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ وَاللَّهُ عِنْدَهُ أَجْرٌ عَظِيمٌ

হে মুমিনগণ! তোমাদের কোন কোন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি তোমাদের দুশমন। অতএব তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাক। যদি মার্জনা কর, উপেক্ষা কর এবং ক্ষমা কর, তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়। তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো কেবল পরীক্ষাস্বরূপ। (সূরা তাগাবুন-৬৪ : ১৪-১৫)

সন্তান-সন্ততি আল্লাহর যিকিরের পথে অন্তরায়:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُلْهِكُمْ أَمْوَالُكُمْ وَلَا أَوْلَادُكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ

হে মুমিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স¥রণ থেকে গাফেল না করে। যারা এ কারণে গাফেল হয়, তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা মুনাফিকুন-৬৩ : ০৯)

পিতা-মাতার ইচ্ছায় সন্তানের ভবিষ্যৎ গঠন:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا مِنْ مَوْلُودٍ إِلَّا يُولَدُ عَلَى الفِطْرَةِ، فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ أَوْ يُنَصِّرَانِهِ أَوْ يُمَجِّسَانِهِ، كَمَا تُنْتَجُ البَهِيمَةُ بَهِيمَةً جَمْعَاءَ، هَلْ تُحِسُّونَ فِيهَا مِنْ جَدْعَاءَ ثُمَّ يَقُولُ أَبُو هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: {فِطْرَةَ اللَّهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لاَ تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللَّهِ ذَلِكَ الدِّينُ القَيِّمُ} [الروم: ৩০]

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, প্রত্যেক নবজাতকই ফিতরাতে উপর জন্মলাভ করে। অতঃপর তার পিতামাতা তাকে ইহুদী, খ্রিস্টান বা অগ্নিপূজক হিসাবে গড়ে তোলে। যেমন চতুষ্পদ পশু একটি পূর্নাঙ্গ বাচ্চা জন্ম দেয়। তোমরা কি তাকে জন্মগতভাবে কানকাটা দেখতে পাও? অতঃপর আবু হুরায়রা (রাঃ) তিলাওয়াত করেন: আল্লাহর দেয়া ফিতরাত অনুসরণ কর, যে ফিতরাতের উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন, এটাই সরল সুদৃঢ় দ্বীন। (সূরা রূম-৩০ : ৩০) {বুখারী : ১৩৫৯}

মায়ের কোল সন্তানের জন্য বড় বিদ্যাপীঠ:

ইরাকী কবি মারুফ রুসাফী (১৮৭৫-১৯৪৫) তার কবিতায় লিখেছেন, মায়ের কোল হলো সন্তানের জন্য বিদ্যাপীঠ। যেখানে সন্তানগণ শিক্ষা লাভ করেন। সন্তানগণের চরিত্র পরিমাপ করা হয় মাতৃগণের চরিত্রের দ্বারা।

فحضن الأم مدرسة تسامــــت *** لتربية البنين أو البــــــــــنات

وأخلاق الوليد تقاس حقــــــــا *** بأخلاق النساء الوالـــــــدات

মায়ের কোল হলো সেই বিদ্যাপীঠ যেখানে ছেলে-মেয়ের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়,

জন্মদাত্রী মায়ের স্বভাব দিয়ে সন্তানের স্বভাব পরিমাপ করা হয়।

সন্তানের জন্য উপযুক্ত মা নির্বাচন পিতার দায়িত্ব:

কোন পুরুষ আজ যাকে তার স্ত্রী হিসাবে পেতে চায়, সে যদি তার স্ত্রী হয় তাহলে এই নারীই তার সন্তানের মা হবে। অতএব যারা অবিবাহিত তাদেরকে সন্তানের জন্য ভালো মা খুঁজতে হবে। নিচে হাদিসটির দিকে দৃষ্টি দিলে এ ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হবে।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: تُنْكَحُ المَرْأَةُ لِأَرْبَعٍ: لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَجَمَالِهَا وَلِدِينِهَا، فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ، تَرِبَتْ يَدَاكَ

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, চারটি বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রেখে মেয়েদেরকে বিয়ে করা হয়। তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার সৌন্দর্য ও তার দ্বীনদারী। সুতরাং তুমি দ্বীনদারীকেই প্রাধান্য দেবে নতুবা তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (সহীহ বুখারী : ৫০৯০ ; সহীহ মুসলিম : ৩৫৩৭)

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: الدُّنْيَا مَتَاعٌ، وَخَيْرُ مَتَاعِ الدُّنْيَا الْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, এই দুনিয়ার সবই নিয়ামত এবং দুনিয়ার সর্বোত্তম নিয়ামত হলো পুণ্যবতী নারী। (সহীহ মুসলিম : ৩৫৩৫)

সম্রাট নেপোলিয়ন বলেছেন,

Give me a good mother I will give you a good nation.

 

কামনা বাসনার পূর্বে দোয়া পাঠ করা:

স্বামী-স্ত্রী মিলন একটি ভালো ও সাওয়াবের কাজ। এ কাজটি করার ক্ষেত্রে এবং এ থেকে সুফল প্রাপ্তির ক্ষেত্রে শয়তান যাতে কোন প্রভাব ফেলতে না পারে তাই মহানবী (স.) দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন।

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، يَبْلُغُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا أَتَى أَهْلَهُ قَالَ بِاسْمِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا، فَقُضِيَ بَيْنَهُمَا وَلَدٌ لَمْ يَضُرُّهُ

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, তোমাদের কেউ তার স্ত্রীর সাথে মিলনের পূর্বে যদি বলে, بِاسْمِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا، আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। আল্লাহ তুমি আমাদেরকে শয়তান থেকে দূরে রাখ এবং যা আমাদেরকে দান করবে তাকেও শয়তান থেকে দূরে রাখ। এ মিলনের দ্বারা তাদের কোন সন্তান হলে শয়তান সে সন্তানের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। (সহীহ বুখারী : ১৪১ ;  সহীহ মুসলিম: ৩৪২৫)

নেক সন্তান লাভের জন্য কুরআনের ভাষায় দোয়া:

وَالَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا

যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান কর এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শস্বরূপ কর। (সূরা ফুক্বান-২৫ : ৭৪)

رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ

হে আমার পরওয়ারদেগার! আমাকে এক নেক সন্তান দান কর। (সূরা ছাফফাত-৩৭ : ১০০)

هُنَالِكَ دَعَا زَكَرِيَّا رَبَّهُ قَالَ رَبِّ هَبْ لِي مِنْ لَدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاءِ

যাকারিয়া তাঁর পালনকর্তার নিকট প্রার্থনা করলেন। বললেন, হে আমার পালনকর্তা! তোমার নিকট থেকে আমাকে পুত-পবিত্র সন্তান দান কর-নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা শ্রবণকারী। (সূরা আলে ইমরান- : ৩৮)

সন্তান জন্ম নেওয়ার পবে পিতা-মাতার করণিয়

জন্মের পর কানে আযান দেয়া:

عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي رَافِعٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَذَّنَ فِي أُذُنِ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ حِينَ وَلَدَتْهُ فَاطِمَةُ بِالصَّلَاةِ

উবায়দুল্লাহ ইবনে আবু রাফে (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন ফাতিমা (রাঃ) আলী (রাঃ) এর পূত্র হাসান (রাঃ) কে প্রসব করলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (স.) তার কানে সালাতের আযানের ন্যায় আযান দিয়েছিলেন। (আবু দাউদ : ৫১০৫)

عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ: حَدَّثَنِي سَعِيدُ بْنُ المُسَيِّبِ، قَالَ: قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: مَا مِنْ بَنِي آدَمَ مَوْلُودٌ إِلَّا يَمَسُّهُ الشَّيْطَانُ حِينَ يُولَدُ، فَيَسْتَهِلُّ صَارِخًا مِنْ مَسِّ الشَّيْطَانِ، غَيْرَ مَرْيَمَ وَابْنِهَا ثُمَّ يَقُولُ أَبُو هُرَيْرَةَ: {وَإِنِّي أُعِيذُهَا بِكَ وَذُرِّيَّتَهَا مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (স.) কে বলতে শুনেছি যে, এমন কোন আদম সন্তান নেই যাকে জন্মের সময় শয়তান স্পর্শ করেনি। জন্মের সময় শয়তানের স্পর্শের কারণেই সে চিৎকার করে কাঁদেতবে মারইয়াম (আঃ) ও তাঁর ছেলে ঈসা (আঃ)-এর ব্যতিক্রম। অতঃপর আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার নিকট তাঁর ও তাঁর বংশধরদের জন্য বিতাড়িত শয়তান হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (সূরা আলে ইমরান- : ৩৬) {সহীহ বুখারী : ৩৪৩১}

আকীকা করা:

عَنِ الْحَسَنِ، عَنْ سَمُرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: كُلُّ غُلَامٍ مُرْتَهَنٌ بِعَقِيقَتِهِ، تُذْبَحُ عَنْهُ يَوْمَ السَّابِعِ، وَيُحْلَقُ رَأْسُهُ، وَيُسَمَّى

সামুরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, প্রত্যেক শিশু তার আকীকার সাথে দায়বদ্ধ থাকে। তার জন্মের সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে পশু যবেহ করতে হয়, তার মাথা কামাতে হয় এবং নাম রাখতে হয়। (ইবনু মাজাহ : ৩১৬৫)

তাহনীক করা:

عَنْ أَسْمَاءَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا: أَنَّهَا حَمَلَتْ بِعَبْدِ اللَّهِ بْنِ الزُّبَيْرِ، قَالَتْ: فَخَرَجْتُ وَأَنَا مُتِمٌّ فَأَتَيْتُ المَدِينَةَ فَنَزَلْتُ بِقُبَاءٍ فَوَلَدْتُهُ بِقُبَاءٍ، ثُمَّ أَتَيْتُ بِهِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَوَضَعْتُهُ فِي حَجْرِهِ، ثُمَّ دَعَا بِتَمْرَةٍ فَمَضَغَهَا، ثُمَّ تَفَلَ فِي فِيهِ، فَكَانَ أَوَّلَ شَيْءٍ دَخَلَ جَوْفَهُ رِيقُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ حَنَّكَهُ بِتَمْرَةٍ ثُمَّ دَعَا لَهُ، وَبَرَّكَ عَلَيْهِ وَكَانَ أَوَّلَ مَوْلُودٍ وُلِدَ فِي الإِسْلاَمِ تَابَعَهُ خَالِدُ بْنُ مَخْلَدٍ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ مُسْهِرٍ، عَنْ هِشَامٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَسْمَاءَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، أَنَّهَا هَاجَرَتْ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهِيَ حُبْلَى

আসমা (রাঃ) থেকে বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের যখন আমার পেটে তখন আমি হিজরত করি। আমি ছিলাম আসন্ন প্রসবা। আমি মদিনায় এসে কুবাতে অবতরণ করি। এ কুবাতেই আমি পূত্র সন্তানটি প্রসব করি। এরপর আমি তাকে নিয়ে মহানবী (স.) এর কাছে এসে তার কোলে দিলাম। তিনি একটি খেজুর আনলেন এবং তা চিবিয়ে তার মুখে থুথু দিলেন। কাজেই সর্বপ্রথম যে জিনিসটি আব্দুল্লাহ পেটে গেল তা হল মহানবী (স.) এর থুথু। মহানবী (স.) সামান্য চিবানো খেজুর নবজাতকের মুখের ভিতরের তালুর অংশে লাগিয়ে দিলেন। এরপর তার জন্য দোয়া করলেন এবং বরকত চাইলেন। তিনি হলেন প্রথম নবজাতক সন্তান যিনি হিজরতের পর মুসলিম পরিবারে জন্মলাভ করেন। (সহীহ বুখারী : ৩৯০৯)

বুকের দুধ পান করানো:

وَالْوَالِدَاتُ يُرْضِعْنَ أَوْلَادَهُنَّ حَوْلَيْنِ كَامِلَيْنِ لِمَنْ أَرَادَ أَنْ يُتِمَّ الرَّضَاعَةَ وَعَلَى الْمَوْلُودِ لَهُ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ لَا تُكَلَّفُ نَفْسٌ إِلَّا وُسْعَهَا لَا تُضَارَّ وَالِدَةٌ بِوَلَدِهَا وَلَا مَوْلُودٌ لَهُ بِوَلَدِهِ وَعَلَى الْوَارِثِ مِثْلُ ذَلِكَ فَإِنْ أَرَادَا فِصَالًا عَنْ تَرَاضٍ مِنْهُمَا وَتَشَاوُرٍ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا وَإِنْ أَرَدْتُمْ أَنْ تَسْتَرْضِعُوا أَوْلَادَكُمْ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ إِذَا سَلَّمْتُمْ مَا آتَيْتُمْ بِالْمَعْرُوفِ وَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ – (بقرة : ২৩৩)

আর সন্তানবতী নারীরা তাদের সন্তানদেরকে পূর্ণ দু'বছর দুধ খাওয়াবে, যদি দুধ খাওয়াবার পূর্ণ মেয়াদ সমাপ্ত করতে চায়। আর সন্তানের অধিকারী অর্থাৎ, পিতার উপর হলো সে সমস্ত নারীর খোর-পোষের দায়িত্ব প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী। কাউকে তার সামর্থের অতিরিক্ত চাপের সম্মুখীন করা হয় না। আর মাকে তার সন্তানের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না এবং যার সন্তান তাকেও তার সন্তানের কারণে ক্ষতির সম্মুখীন করা যাবে না। আর ওয়ারিশদের উপরও দায়িত্ব এই। তারপর যদি পিতা-মাতা ইচ্ছা করে, তাহলে দু'বছরের ভিতরেই নিজেদের পারস্পরিক পরামর্শক্রমে দুধ ছাড়িয়ে দিতে পারে, তাতে তাদের কোন পাপ নেই, আর যদি তোমরা কোন ধাত্রীর দ্বারা নিজের সন্তানদেরকে দুধ খাওয়াতে চাও, তাহলে যদি তোমরা সাব্যস্তকৃত প্রচলিত বিনিময় দিয়ে দাও তাতেও কোন পাপ নেই। আর আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রেখো যে, আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ অত্যন্ত ভাল করেই দেখেন। (সূরা বাকারা- : ২৩৩)

সুন্দর নাম রাখা উত্তম শিক্ষাদান:

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّهُمْ قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، قَدْ عَلِمْنَا حَقَّ الْوَالِدِ عَلَى الْوَلَدِ، فَمَا حَقُّ الْوَلَدِ عَلَى الْوَالِدِ؟ قَالَ: أَنْ يُحْسِنَ اسْمَهُ، وَيُحْسِنَ أَدَبَهُ وَمُحَمَّدُ بْنُ الْفَضْلِ بْنِ عَطِيَّةَ ضَعِيفٌ بِمَرَّةٍ، لَا تَفْرَحْ بِمَا يَنْفَرِدُ بِهِ – (شعب الايمان : ৮২৯১)

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তারা রাসূলুল্লাহ (স.) কে বললেন, সন্তানের উপর পিতামাতার হক সম্পর্কে জানতে চাইলাম। আমাদেরকে বলুন, পিতামাতার উপর সন্তানের কি হক রয়েছে? তিনি বললেন, সুন্দর নাম রাখা এবং উত্তম আদব শিক্ষা দেয়া। (শুয়াবিল ঈমান : ৮২৯১)

عَبْدُ الحَمِيدِ بْنُ جُبَيْرِ بْنِ شَيْبَةَ، قَالَ: جَلَسْتُ إِلَى سَعِيدِ بْنِ المُسَيِّبِ، فَحَدَّثَنِي: أَنَّ جَدَّهُ حَزْنًا قَدِمَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: مَا اسْمُكَ قَالَ: اسْمِي حَزْنٌ، قَالَ:بَلْ أَنْتَ سَهْلٌ قَالَ: مَا أَنَا بِمُغَيِّرٍ اسْمًا سَمَّانِيهِ أَبِي قَالَ ابْنُ المُسَيِّبِ:فَمَا زَالَتْ فِينَا الحُزُونَةُ بَعْدُ

সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তার দাদা মহানবী (স.) এ নিকট আসলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কি? তিনি বললেন, আমার নাম হাযন (দুশ্চিন্তা বা কষ্ট)। মহানবী (স.) বললেন, বরং তোমার নাম সাহল (সহজ)। তিনি বললেন, আমার পিতা আমার যে নাম রেখেছেন, তা অন্য কোন নাম দিয়ে আমি বদলাবো না। সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যাব (রহঃ) বলেন, এরপর থেকে আমাদের বংশের মধ্যে দুঃখ-কষ্টই চলে এসেছে। (বুখারী : ৬১৯০)

সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দায়িত্ব

হালাল খাদ্যের সুব্যবস্থা করা:

যদি সন্তানকে আমরা উত্তমরূপে গড়ে তুলতে চাই তাহলে তার জন্য হালাল খাদ্যের সুব্যবস্থা করতে হবে। হারাম খাদ্যে গঠিত দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং সে দেহ জাহান্নামে যাওয়ারই বেশী উপযুক্ত। আর জাহান্নামের উপযুক্ত মানুষ দুনিয়াতে আদর্শবান মানুষ হতে পারে না।

عَنْ أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ نَبَتَ لَحْمُهُ مِنَ السُّحْتِ فَالنَّارُ أَوْلَى بِهِ

আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, হারাম খাদ্যে গঠিত দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না, সে দেহ জাহান্নামে প্রবেশ করারই বেশী উপযুক্ত। (হাকেম- ৭১৬৪)

উপদেশের বিপরীত কাজ না করা:

আদর্শ সন্তান হিসাবে গড়ে তুলতে উপদেশ প্রদান করা জরুরী। তবে মনে রাখতে হবে সন্তান যেন আমাদেরকে উপদেশের বিপরীত কাজ করতে না দেখে। কাজেই নীতি নৈতিকতা বিবর্জিত কাজ করা যাবে না। আর করলে পরে কোন না কোন সময় সন্তানের দৃষ্টিতে তা ধরা পড়বেই। তখন সন্তান আর পিতার উপদেশ শুনবে না।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا تَفْعَلُونَ كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللَّهِ أَنْ تَقُولُوا مَا لَا تَفْعَلُونَ

হে মুমিনগণ! তোমরা যা কর না, তা কেন বল? তোমরা যা কর না তা বলা আল্লাহর কাছে খুবই অসন্তোষজনক। (সূরা সফ-৬১ : ০২-০৩)

বিপথগামিতা থেকে সন্তান-সন্ততিকে রক্ষা কর:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَائِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ

হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও প্রস্তর, যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোর স্বভাব ফেরেশতাগণ। তারা আল্লাহ তা'আলা যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং যা করতে আদেশ করা হয়, তাই করে। (সূরা তাহরীম-৬৬: ০৬)

عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ، يَقُولُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ:كُلُّكُمْ رَاعٍ، وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، الإِمَامُ رَاعٍ وَمَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالرَّجُلُ رَاعٍ فِي أَهْلِهِ وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ فِي بَيْتِ زَوْجِهَا وَمَسْئُولَةٌ عَنْ رَعِيَّتِهَا، وَالخَادِمُ رَاعٍ فِي مَالِ سَيِّدِهِ وَمَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ قَالَ: - وَحَسِبْتُ أَنْ قَدْ قَالَ - وَالرَّجُلُ رَاعٍ فِي مَالِ أَبِيهِ وَمَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَمَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِه

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মহানবী (স.) বলেছেন, তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। কাজেই প্রত্যেকেই নিজ অধিনস্থদের বিষয়ে জিজ্ঞাসার সম্মুখীন হবে। যেমন জনগণের শাসক তাদের দায়িত্বশীল, কাজেই সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। একজন পুরুষ তার পরিবার পরিজনের দায়িত¦শীল, কাজেই সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী স্বামীর ঘরের এবং তার সন্তানের দায়িত্বশীল, কাজেই সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। আর ক্রীতদাস আপন মনিবের সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণকারী। কাজেই সে বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। শোন! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্ব দায়িত¦শীল। কাজেই প্রত্যেকেই আপন অধিনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। (বুখারী : ৮৯৩)

সন্তানদের মধ্যে ন্যায়বিচার করা:

عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ، قَالَ: تَصَدَّقَ عَلَيَّ أَبِي بِبَعْضِ مَالِهِ، فَقَالَتْ أُمِّي عَمْرَةُ بِنْتُ رَوَاحَةَ: لَا أَرْضَى حَتَّى تُشْهِدَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَانْطَلَقَ أَبِي إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِيُشْهِدَهُ عَلَى صَدَقَتِي، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَفَعَلْتَ هَذَا بِوَلَدِكَ كُلِّهِمْ؟ قَالَ: لَا، قَالَ: اتَّقُوا اللهَ، وَاعْدِلُوا فِي أَوْلَادِكُم، فَرَجَعَ أَبِي، فَرَدَّ تِلْكَ الصَّدَقَةَ

নুমান ইবনে বশীর (রাঃ) বলেন, আমাকে আমার পিতা তার সম্পদ থেকে কিছু প্রদান করেন। আমার মা আমরাহ বিনতু রাওয়াহা বললেন, আমি সন্তুষ্ট হতে পারছি না, যতক্ষণ না আপনি রাসূলুল্লাহ (স.) কে সাক্ষী রাখেন। এরপর আমার পিতা আমাকে নিয়ে মহানবী (স.) এর নিকট আসেন, আমার দানের উপরে তাঁকে সাক্ষী রাখার জন্য। রাসূলুল্লাহ (স.) তাঁকে বললেন, এরূপ কাজ কি তুমি তোমার অন্য সব পুত্রদের সাথে করেছো? তিনি বললেন, না। মহানবী (স.) বললেন, আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমার সন্তানদের মধ্যে ন্যায়বিচার কর। তখন আমার পিতা চলে আসেন এবং সে দান ফিরিয়ে নেন। (মুসলিম : ৪০৭৩)

বিরক্ত হয়ে সন্তানদের জন্য বদ দোয়া না করা:

عَنْ جَابِرٍ رضي الله عنه قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَا تَدْعُوا عَلَى أَنْفُسِكُمْ، وَلَا تَدْعُوا عَلَى أَوْلَادِكُمْ، وَلَا تَدْعُوا عَلَى أَمْوَالِكُمْ، لَا تُوَافِقُوا مِنَ اللهِ سَاعَةً يُسْأَلُ فِيهَا عَطَاءٌ، فَيَسْتَجِيبُ لَكُمْ

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, তোমরা তোমাদের সন্তানদের উপর এবং নিজেদের ধন-সম্পদের উপরও বদ দোয়া করো না। এমন যেন না হয় যে, তোমরা এমন মুহূর্তে বদ দোয়া করবে যখন আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়া হয় এবং তা কবুল হয়। (মুসলিম : ৭৪০৫)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ثَلاَثُ دَعَوَاتٍ مُسْتَجَابَاتٌ لاَ شَكَّ فِيهِنَّ: دَعْوَةُ الْمَظْلُومِ، وَدَعْوَةُ الْمُسَافِرِ، وَدَعْوَةُ الوَالِدِ عَلَى وَلَدِهِ

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, তিন প্রকারের দোয়া অবশ্যই মুঞ্জুর করা হয়, তাতে কোন প্রকার সন্দেহ নেই। মাযলুমের দোয়া, মুসাফিরের দোয়া এবং সন্তানের প্রতি বাবার বদ দোয়া। (তিরমিযী : ১৯০৫)

বস্ক প্রপ্ত হলে পিতা-মাতার করণিয়

সালাতের আদেশ দান করা:

يَا بُنَيَّ أَقِمِ الصَّلَاةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَاصْبِرْ عَلَى مَا أَصَابَكَ إِنَّ ذَلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ

হে বৎস! সালাত কায়েম কর, সৎকাজে আদেশ দাও, মন্দকাজে নিষেধ কর এবং বিপদাপদে সবর কর। নিশ্চয় এটা সাহসিকতার কাজ। (সূরা লুকমান : ১৭)

عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مُرُوا أَوْلَادَكُمْ بِالصَّلَاةِ وَهُمْ أَبْنَاءُ سَبْعِ سِنِينَ، وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا، وَهُمْ أَبْنَاءُ عَشْرٍ وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ فِي الْمَضَاجِعِ

আমর ইবনে শুয়াইব (রহঃ) পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, তোমাদের সন্তানদের বয়স সাত বছর হলে সালাতের জন্য নির্দেশ দাও। যখন তাদের বয়স দশ বছর হয়ে যাবে তখন সালাত আদায় না করলে শাসন করবে এবং তাদের বিছানা আলাদা করে দিবে। (আবু দাউদ : ৪৯৫)

যথাসময়ে বিবাহ দান করা:

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، وَابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ وُلِدَ لَهُ وَلَدٌ فَلْيُحْسِنِ اسْمَهُ وَأَدَبَهُ، فَإِذَا بَلَغَ فَلْيُزَوِّجْهُ فَإِنْ بَلَغَ وَلَمْ يُزَوِّجْهُ فَأَصَابَ إِثْمًا، فَإِنَّمَا إِثْمُهُ عَلَى أَبِيهِ

আবু সাঈদ ও আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যার কোন সন্তান জন্মগ্রহণ করে সে যেন সুন্দর নাম রাখে এবং উত্তম আদব শিক্ষা দেয়। আর যখন প্রাপ্ত বয়স্ক হয় তখন যেন বিয়ে দেয়। প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর যদি বিয়ে না দেয় আর সন্তান কোন গুনাহের কাজে জড়িয়ে পড়ে তবে তার গুনাহ পিতার উপর বর্তাবে। (শুয়াবিল ঈমান : ৮২৯৯)

সন্তানের প্রতি উত্তম বিচার করা:

এ প্রসঙ্গে হযরত উমর (রাঃ) এর বিচারের ফয়সালা শুনুন:

جاء رجل إلى عمر بن الخطاب يشكو إليه عقوق ابنه، فأحضر عمر الولد وعنفه على عقوقه لأبيه وأنبه على تمرده عليه ونسيانه لحقوقه فقال الولد: يا أمير المؤمنين أليس للولد حقوق على ابيه؟ قال: بلى، قال: فما هي يا امير المؤمنين؟ قال عمر: ان ينتقي امه، ويحسن اسمه.. ويعلمه الكتاب - القرآن -، قال الولد: يا امير المؤمنين، ان ابي لم يفعل شيئا من ذلك، اما امي فانها زنجية كانت لمجوسي، وقد سماني: جُعَلا (خنفساء) ولم يعلمني من الكتاب حرفا واحدا..! فالتفت عمر الى الاب وقال له: جئت اليَّ تشكو عقوق ابنك وقد عققته قبل ان يعقك، واسأت اليه قبل ان يسيء اليك..؟! قم عني

এক ব্যক্তি উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর কাছে আসলো এবং তার সন্তানের অবাধ্যতা বিষয়ে অভিযোগ করলো। উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) সন্তানকে ডাকালেন, তার পিতার অবাধ্যতার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন এবং বিদ্রোহের বিষয়ে তার হকের বিষয়ে সতর্ক করলেন। সন্তানটি জিজ্ঞেস করল, হে আমীরুল মুমিনীন! পিতার উপর সন্তানের কি কোন হক নেই? তিনি বললেন: হ্যাঁ আছে। সন্তানটি বলল, হে আমীরুল মুমিনীন! সেগুলো কি? উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বললেন, একজন ভালো মা দেয়া, একটা সুন্দর নাম রাখা এবং কিতাব তথা আল কুরআন শিক্ষা দেয়া। ছেলেটি বলল, হে আমীরুল মুমিনীন! আমার পিতা এর একটিও করেনি। আমার মা একজন নিগ্রো অগ্নিপূজক, আমার নাম রেখেছে খুনফুসাহ (গুবরেপোকা) আর আমাকে আল কুরআনের একটা অক্ষরও শিক্ষা দেয়নি। এরপর উমর (রাঃ) অভিযোগকারী পিতার দিকে ফিরলেন এবং বললেন, সন্তানের অবাধ্যতার অভিযোগ নিয়ে এসেছো? অথচ সে মন্দ করার আগে তুমি তার সাথে মন্দ করে রেখেছো। এরপর ধমক দিয়ে বললেন, যাও আমার কাছ থেকে।

 

শেষকথা:

সম্মানিত শ্রোতা বৃদ্ধ! আজকের আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে, পিতা-মাতার জন্য সন্তান-সন্ততি আল্লাহর দেয়া অনেক বড় নিয়ামত। তাদেরকে আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ে তোলা পিতা-মাতার কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। আর সেটি যথাযথভাবে করতে পারলে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র এবং জাতির জন্য কল্যাণকর। মহান আল্লাহ আমাদের সন্তানগুলোকে আদর্শবান হিসাবে গড়ে তোলার তাওফীক দান করুন। আমীন

 

No comments:

Post a Comment

razzakhowlader59@gmil.com