মে দিবস ও শ্রমিকের
অধিকার
এম এ রাজ্জাক হাওলাদার
বছর ঘুরে আবার এসেছে মে মাস। শ্রমিকের অধিকার আদায় আন্দোলনের
স্মৃতিবিজড়িত এ মাসের ১ তারিখ সারা বিশ্বে পালিত হয় ‘বিশ্ব
শ্রমিক দিবস’ (International
Workers Day) হিসাবে।
এ দিবসটি আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় শ্রমিকের মর্যাদা ও অধিকার এবং মালিক-শ্রমিক
সম্পর্ক, দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা।
মে দিবসের ইতিহাস :
১৮৮৬ সালের ১লা মে আমেরিকার মেহনতী
শ্রমিকশ্রেণী দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবীসহ আরো কয়েকটি ন্যায্য দাবী ও অধিকার আদায়ের
লক্ষ্যে জীবন বিসর্জন দিয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব শ্রমিক আন্দোলনের সূচনা
করেছিল। ১লা মে’র ঐ ধর্মঘট দিবসের আগে যুক্তরাষ্ট্র বা
বিশ্বের কোথাও শ্রম আইন ছিল না। শ্রমিকদের মানবিক ও অর্থনৈতিক অধিকার বলতেও কিছু
ছিল না। তারা ছিল মালিকদের দাস মাত্র। তাদের কাজের কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা ছিল না।
ছিল না সাপ্তাহিক কোন ছুটি। ছিল না চাকুরীর স্থায়িত্ব ও ন্যায়সঙ্গত মজুরীর
নিশ্চয়তা। মালিকরা তাদের ইচ্ছামত শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করিয়ে নিত। এমনকি দৈনিক ১৮-২০
ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতেও বাধ্য করত শ্রমিকদের। এ অন্যায়, বঞ্চনা
ও যুলুমের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিকরা পর্যায়ক্রমে তীব্র আন্দোলন গড়ে
তুলেছিল।
এ আন্দোলনের অংশ হিসাবে ‘আমেরিকান
ফেডারেশন অব লেবার’-এর ১৮৮৫ সালের সম্মেলনের
সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবীতে ১৮৮৬ সালের ১লা মে আমেরিকা ও
কানাডার প্রায় তিন লক্ষাধিক শ্রমিক শিকাগোর ‘হে মার্কেটে’ ঢালাই
শ্রমিক, তরুণ নেতা এইচ সিলভিসের নেতৃত্বে এক বিক্ষোভ সমাবেশের
মাধ্যমে সর্বপ্রথম সর্বাত্মক শ্রমিক ধর্মঘট পালন করে। শ্রমিকদের সমাবেশ চলাকালে
মালিকদের স্বার্থ রক্ষাকারী পুলিশ ও কতিপয় ভাড়াটিয়া গুন্ডা সম্পূর্ণ বিনা
উস্কানিতে অতর্কিতভাবে গুলী চালিয়ে ৬ জন শ্রমিককে নৃশংসভাবে হত্যা ও শতাধিক
শ্রমিককে আহত করে। কিন্তু এতেও শ্রমিকরা দমে যায়নি। শ্রমিকদের ইস্পাতকঠিন ঐ সফল
ধর্মঘটের কারণে কোন কোন মালিক ৮ ঘণ্টা কর্ম সময়ের দাবী মেনে নিতে বাধ্য হয়। ফলে
শ্রমিকরা আরো উৎসাহী ও আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে ওঠে এবং সর্বস্তরে ৮ ঘণ্টা কর্ম সময়ের
দাবী প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২রা মে রবিবারের সাপ্তাহিক বন্ধের দিনের পর ৩ তারিখেও
ধর্মঘট অব্যাহত রাখে।
ঐ নৃশংস হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে আয়োজিত ৪ঠা
মে শিকাগো শহরের ‘হে’
মার্কেটের
বিশাল শ্রমিক সমাবেশে আবারো মালিকগোষ্ঠীর গুন্ডা
ও পুলিশ বাহিনী বেপরোয়াভাবে গুলী বর্ষণ করে। এতে ৪ জন শ্রমিক নিহত ও বিপুল সংখ্যক
আহত হয়। রক্তে রঞ্জিত হয় ‘হে’
মার্কেট
চত্বর। গ্রেফতার করা হয় শ্রমিক নেতা স্পাইজ ও ফিলডেনকে। ঘটনার এখানেই শেষ নয়। এই
নৃশংস হত্যাকান্ডের পর শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে রীতিমত ‘চিরুনী
অভিযান’ চালিয়ে শিকাগো শহর ও এর আশপাশের এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়
আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারী ফিশার, লুইস, জর্জ
এঞ্জেল, মাইকেল স্কোয়ার ও নীবেসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ শ্রমিক নেতাকে।
পরবর্তীতে শ্রমিকদের এই ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনের
বিরোধিতাকারী মালিকপক্ষের ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ‘জুরি’ গঠন
করে ১৮৮৬ সালের ২১ জুন শুরু করা হয় বিচারের নামে প্রহসন। একতরফা বিচারের মাধ্যমে
১৮৮৬ সালের ৯ অক্টোবর ঘোষিত হয় বিচারের রায়। রায়ে বিশ্বজনমতকে উপেক্ষা করে শ্রমিক
নেতা পার্সন্স, ফিলডেন, স্পাইজ, লুইস, স্কোয়ার, এঞ্জেল
ও ফিশারের বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ প্রদান করা হয় এবং ১৮৮৭ সালের ১১ নভেম্বর সে আদেশ
কার্যকর করা হয়। শ্রমিক নেতা ও কর্মী হত্যার এ দিবসটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য
১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে
প্রতিবছর ১লা মে ‘শ্রমিক হত্যা দিবস’ ও
‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস’ হিসাবে
পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। দৈনিক ৮ ঘণ্টা কার্য সময় ও সপ্তাহে এক দিন সাধারণ ছুটি
প্রদানের ব্যবস্থা করে প্রথম শ্রম আইন প্রণীত হয়। অন্যদিকে নারকীয় এ হত্যাযজ্ঞ
গোটা বিশ্বের শ্রমিকদের অধিকারে এনে দেয় নতুন গতি। শিকাগো শহরে সৃষ্ট এ আন্দোলন
ক্রমশ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বময়। পৃথিবীর সকল শ্রমজীবী মানুষ এ আন্দোলনের
সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয় ‘দুনিয়ার
মজদুর এক হও’ শ্লোগানটি। সেই সাথে ১২৫
বছর আগে ঘটে যাওয়া সে ঘটনাটির কথা এখন প্রতিবছর বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্মরণ
করা হয়ে থাকে ‘বিশ্ব শ্রমিক দিবস’ বা
‘মে দিবস’ হিসাবে।
ইসলামে শ্রমিকের
মর্যাদা ও অধিকার :
শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ধর্ম ইসলামে
শ্রমিকের মর্যাদা ও অধিকারের কথা বিধৃত হয়েছে। শ্রমিকদের প্রতি সুবিচারের নির্দেশ
দিয়েছে ইসলাম। ইসলাম শ্রমের প্রতি যেমন মানুষকে উৎসাহিত করেছে (জুম‘আহ ১০),
তেমনি
শ্রমিকের সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার পূর্ণ প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। সর্বকালের
সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদ (স.) শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষকে অত্যন্ত সম্মানের
দৃষ্টিতে দেখতেন। কারণ যারা মানুষের সুখের জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে নিজেদেরকে
তিলে তিলে নিঃশেষ করে দেয়, তারাতো মহান আল্লাহর কাছেও
মর্যাদার অধিকারী।
শ্রমের মর্যাদা বুঝাতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (স.) এরশাদ করেন, مَا أَكَلَ أَحَدٌ طَعَامًا قَطُّ خَيْرًا مِنْ أَنْ يَّأْكُلَ
مِنْ عَمَلِ يَدَيْهِ وَإِنَّ نَبِىَّ اللهِ دَاؤُوْدَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ كَانَ
يَأْكُلُ مِنْ عَمَلِ يَدَيْهِ- ‘কারো জন্য স্বহস্তের
উপার্জন অপেক্ষা উত্তম আহার্য আর নেই। আর আল্লাহর নবী দাঊদ (আঃ) স্বহস্তে জীবিকা
নির্বাহ করতেন’।[ বুখারী, মিশকাত হা/২৭৫৯]
শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম বদ্ধপরিকর। আর একজন
শ্রমিকের সবচেয়ে বড় অধিকার বা দাবী হ’ল, তার
শ্রমের যথোপযুক্ত পারিশ্রমিক লাভ করা। এজন্য রাসূলুল্লাহ (স.) এরশাদ করেন, أُعْطُوا الْأََجِيْرَ أَجْرَهُ قَبْلَ أَنْ يَّجِفَّ عَرقُهُ- ‘তোমরা শ্রমিককে তার শরীরের ঘাম শুকানোর
পূর্বেই পারিশ্রমিক দিয়ে দাও’।[ ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৯৮৭, ‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়]
ইসলামে
মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক :
ইসলামে মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক হবে
পিতা-সন্তানের ন্যায়। নিজের পরম আত্মীয়ের মতোই শ্রমিকের সাথে আন্তরিকতাপূর্ণ আচরণ
করা, পরিবারের সদস্যদের মতই তাদের আপ্যায়ন করা, শ্রমিকের
সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার প্রতিটি
মুহূর্তের প্রতি মালিকের খেয়াল রাখা এবং তাদের সুবিধা-অসুবিধার কথা বিবেচনা করা
মালিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য। শ্রমিককে তার প্রাপ্য পূর্ণভাবে যথাসময়ে প্রদান করাও
মালিকের একটি প্রধান দায়িত্ব। অনেক সময় শ্রমিকদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মালিকগণ
উপযুক্ত মজুরী না দিয়ে যৎ সামান্য মজুরী দিয়ে শ্রমিকদের অধিকার বঞ্চিত করে। এ ধরনের
মালিকদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (স.) এরশাদ করেন, ‘মহান আল্লাহ বলেন,
ক্বিয়ামতের
দিন তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হবে। তাদের মধ্যে একজন হ’ল-
وَ رَجُلٌ أسْتَأْجَرَ
أَجِيْرًا فَاسْتَوْفَى مِنْهُ وَلَمْ يُعْطِهِ أَجْرَهُ- ‘যে শ্রমিকের নিকট থেকে
পূর্ণ শ্রম গ্রহণ করে অথচ তার পূর্ণ মজুরী প্রদান করে না’।[ বুখারী, মিশকাত হা/২৯৮৪]
অপরদিকে একজন শ্রমিকের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য হ’ল-
চুক্তি মোতাবেক মালিকের প্রদত্ত কাজ অত্যন্ত নিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততার সাথে সম্পাদন
করা। রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন, إِنَّ اللهَ تَعَالَى يُحِبُّ
مِنَ الْعَامِلِ إِذَا عَمِلَ أَنْ يُّحْسِنَ- ‘আল্লাহ ঐ শ্রমিককে ভালবাসেন যে সুন্দরভাবে কার্য সমাধা করে’।[ছহীহুল জামে‘ হা/১৮৯১, হাদীছ হাসান] কিন্তু কোন কোন শ্রমিক মালিকের কাজে ফাঁকি
দিয়ে নিয়মিত হাযিরা খাতায় স্বাক্ষর করে বেতন উত্তোলন করে থাকে, যা
অত্যন্ত গর্হিত কাজ। এজন্য তাকে ক্বিয়ামতের মাঠে অবশ্যই বিচারের সম্মুখীন হ’তে
হবে। আর যদি শ্রমিক তার উপর অর্পিত দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করে, তাহ’লে
তার জন্য রাসূলুল্লাহ (স.) দ্বিগুণ পুরস্কারের কথা ঘোষণা করে বলেন, ‘তিন শ্রেণীর লোকের দ্বিগুণ ছওয়াব প্রদান করা হবে। তাদের
মধ্যে এক শ্রেণী হ’ল- وَالْعَبْدُ الْمَمْلُوْكُ إِذَا أَدَّى حَقَّ اللهِ
وَ حَقَّ مَوَالِيْهِ ‘ঐ শ্রমিক যে নিজের মালিকের
হক্ব আদায় করে এবং আল্লাহর হক্বও আদায় করে’।[ বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/১১, ‘ঈমান’ অধ্যায়] রাসূলুল্লাহ (স.) আরো বলেন, لِلْعَبْدِ الْمَمْلُوْكِ الصَّالِحِ أَجْرَانِ- ‘সৎ শ্রমিকের জন্য দু’টি
প্রতিদান রয়েছে’। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, وَالَّذِىْ نَفْسُ أَبِيْ هُرَيْرَةَ بِيَدِهِ لَوْلاَ الْجِهَادُ
فِىْ سَبِيْلِ اللهِ وَالْحَجُّ وَبِرُّ أُمِّىْ لَأَحْبَبْتُ أَنْ أَمُوْتَ
وَأَنَا مَمْلُوْكٌ- ‘যেই সত্তার হাতে আবূ
হুরায়রার প্রাণ তার কসম! যদি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ, হজ্জ
ও আমার মায়ের প্রতি সদ্ব্যবহারের ব্যাপারগুলো না থাকত, তাহ’লে
আমি শ্রমিক হিসাবে মৃত্যুবরণ করতে পসন্দ করতাম’।[ বুখারী হা/২৫৮৪; মুসলিম হা/৪৪১০]
শ্রমিকদের যে বিষয়টি মনে রাখা যরূরী তা হ’ল-
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের ব্যক্তি স্বাধীনতা রয়েছে। সুতরাং মে
দিবসে যেকোন ব্যক্তির যানবাহন চালানোর বা শিল্প প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট খোলা রাখারও
অধিকার আছে। তাতে বাধাদানের অধিকার কারো নেই। কিন্তু আমাদের দেশে মে দিবসে যদি কেউ
যানবাহন চালায় বা দোকানপাট খোলা রাখে তাহ’লে উচ্ছৃংখল কিছু শ্রমিককে
গাড়ি ভাংচুর করতে এবং দোকানপাট জোর করে বন্ধ করে দিতে দেখা যায়। যা আদৌ
সমর্থনযোগ্য নয়। অনুরূপভাবে হরতাল-ধর্মঘটও বর্জন করা আবশ্যক।
পরিশেষে বলা যায়,
এ
সুন্দর পৃথিবীর রূপ-লাবণ্যতায় শ্রমিকদের কৃতিত্বই অগ্রগণ্য। কিন্তু শত আক্ষেপ! সভ্যতার
কারিগর এ শ্রেণীটি সর্বদাই উপেক্ষিত,
অবহেলিত
ও সুবিধাবঞ্চিত। উদয়াস্ত উষ্ণ ঘামের স্যাঁতসেঁতে গন্ধ নিয়ে খেটে যে শ্রমিক তার
মালিকের অর্থযন্ত্রটি সচল রাখে, সেই মালিকেরই অবিচারে
শ্রমিকদের অচল জীবনটি আরো দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। এটাকে সেই মৌমাছির সাথে তুলনা করা যায়, যারা
দীর্ঘ পরিশ্রমের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করে চাকে সঞ্চয় করে, কিন্তু
তার ভাগ্যে একফোঁটা মধুও জোটে না। সুতরাং সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদী অর্থ ব্যবস্থায়
মালিক-শ্রমিকের বৈরিতাপূর্ণ সম্পর্কের অবসান ঘটিয়ে ইসলামী অর্থ ব্যবস্থা ও
শ্রমনীতি বাস্তবায়ন করে তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। আর এজন্য
সর্বাগ্রে উচিত ইসলাম প্রদর্শিত মালিক-শ্রমিক নীতিমালার পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ ও
বাস্তবায়ন। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন-আমীন!

মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর পোস্ট যাজাকাল্লাহ
ReplyDelete