দেনমোহর-‘‘প্রসঙ্গে ইসলামী দৃষ্টিকোণ’’
এম এ রাজ্জাক হাওলাদার
(প্রথম পর্ব)
ভুমিকাঃ
দেনমোহর বিয়ের অন্যতম শর্ত। স্বামীর জন্য বাধ্যতামূলক একটি কর্তব্য। বিয়ের বন্ধন উপলক্ষ্যে স্বামী তার স্ত্রীকে বাধ্যতামূলক যে নগদ অর্থ, সোনা-রূপা কিংবা স্থাবর সম্পদ দিয়ে থাকেন, তাই দেনমোহর।
একজন মুসলমানের বিয়েতে আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক নির্দেশিত অপরিহার্য প্রদেয় স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রী যে অর্থ-সম্পদ পেয়ে থাকে তাকেই দেনমোহর বলে। বিয়ের সময় স্ত্রীকে দেনমোহর প্রদান করা স্বামীর ওপর ফরজ।
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন –
وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً فَإِنْ طِبْنَ لَكُمْ
عَنْ شَيْءٍ مِنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَرِيئًا
“আর তোমাদের স্ত্রীদের তাদের দেনমোহর দিয়ে দাও খুশি মনে। অবশ্য স্ত্রী চাইলে দেনমোহর কিছু অংশ কিংবা সম্পূর্ণ অংশ ছেড়ে দিতে পারে।” [সূরা আন-নিসা-৪:৪]
তবে এ ব্যাপারে স্ত্রীর উপর কোন প্রকারের চাপ প্রয়োগ করা যাবে না। সাধারণভাবে দেনমোহর কম ধার্য করাই মুস্তাহাব।
এ
সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেন –“সে নারী বরকতের মাঝে আছে যাকে প্রস্তাব দেয়া সহজ ও যার দেনমোহর অল্প।” [মুসনাদু আহমাদ; হাসান সানাদে]
এ ছাড়া কুরআনের আরো এক আয়াতে দেনমোহরের অধিকার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে,
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَحْلَلْنَا لَكَ أَزْوَاجَكَ
اللَّاتِي آتَيْتَ أُجُورَهُنَّ
“হে নবী! আমি তোমার জন্য বৈধ করেছি তোমার স্ত্রীদেরকে, যাদের দেনমোহর তুমি প্রদান করেছো।” (সুরা আল-আহজাব-৩৩:৫০)
দেনমোহরের বিষয়টি হালকাভাবে নিয়ে লোক দেখানো ‘অধিক দেনমোহর’ ধার্য করাতে কোনো বরকত নেই। বরং তা অহংকারের পরিচায়ক।
বরকতপূর্ণ বিবাহের বর্ণনা দিতে গিয়ে উম্মাহাতুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, “সবচেয়ে বরকতময় বিয়ে হচ্ছে সুন্নতি বিয়ে, অর্থাৎ যে বিয়েতে খরচ কম হয় এবং কোনো জাঁকজমক থাকে না।”-(মিশকাত শরিফ)
মোহর কি?
মোহর
মূলত একটি সম্মানি। যা স্বামী তার স্ত্রীকে দিয়ে থাকে। যার মূল উদ্দেশ্যই হল
নারীকে সম্মান ও মর্যাদা দেয়া। এটা নারীর মূল্য নয় যে, তা পরিশোধ করলেই মনে করা যাবে যে, নারী নিজেকে
স্বামীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছে।
ইসলামি
শরিয়তের উদ্দেশ্য হল- যখন কোনো পুরুষ স্ত্রীকে ঘরে আনবে তখন তাকে মর্যাদার সঙ্গে
আনবে এবং এমন কিছু উপহার দেবে, যা তাকে সম্মানিত
করে।
তবে ইসলামি শরিয়তের নির্দেশনা হচ্ছে- মোহর এত অল্প নির্ধারণ না করা, যাতে মর্যাদার কোনো ইঙ্গিত না থাকে। আবার এত অধিকও নির্ধারণ না করা, যা পরিশোধ করা স্বামীর পক্ষে সম্ভব না হয়।
দেনমোহরের পরিমাণঃ
দেনমোহরের পরিমাণ কী হওয়া উচিত ইসলামী শারীআতে এ সম্পর্কে বিশেষভাবে কোন নির্দেশ দেয়া হয়নি, কোন সুস্পষ্ট পরিমাণ ঠিক করে দেয়া হয়নি। তবে এ কথা স্পষ্ট যে, প্রত্যেক স্বামীরই কর্তব্য হচ্ছে তার আর্থিক সামর্থ্য ও স্ত্রীর মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রেখে উভয় পক্ষের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোন পরিমাণ নির্দিষ্ট করে বেঁধে দেয়া। আর মেয়ে পক্ষেরও তাতে সহজেই রাজী হয়ে যাওয়া উচিত। দেনমোহর যে কতটা গুরুতপূর্ণ বিষয়, তা বুখারীর হাদীসই প্রমাণ বহন করে।
সাহল ইবনে সাদ (রাঃ) বলেন, ‘’আমি অন্যান্য লোকের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে উপবিষ্ট ছিলাম’’। তখন এক মহিলা দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আমি নিজেকে আপনার জন্য হেবা করলাম, আপনি আমাকে গ্রহণ করুন। কিন্তু রাসূল (সাঃ) কিছুই বললেন না।মহিলাটি এরূপ তিনবার বলল, কিন্তু তিনবারই রাসূল (সাঃ) চুপ থাকলেন। তখন এক সাহাবী দাঁড়িয়ে বললেন আপনি যদি গ্রহন না করেন তাহলে এই মহিলার সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দিন। রাসূল (সাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন তোমার নিকট কি মহিলাকে দেনমোহর দেওয়ার মত কিছু আছে? তিনি বললেন, না। তখন রাসূল (সাঃ) বললেন তোমার বাড়ি থেকে খোঁজ করে একটি লোহার আংটি হলেও নিয়ে আসো। কিন্তু তিনি তাও আনতে পারেনি। তখন রাসূল (সাঃ) বললেন তোমার কি কোরআনের কিছু মুখস্ত আছে? তখন তিনি বললেন আমার ঐ ঐ সূরা মুখস্থ আছে। রাসূল (সাঃ) বললেন, মহিলাকে ঐ সূরাগুলো শিখিয়ে দিও, সেটাই তোমার দেনমোহর।
উপরোক্ত হাদীসটি দ্বারা পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছে যে মহিলাকে দেনমোহর প্রদান করা অত্যাবশ্যক।
দেনমোহর নারীর হকঃ
দেনমোহর একজন নারীর হক, যদি কোনো ব্যক্তি দেনমোহর অনাদায়ের ইচ্ছা নিয়ে বিয়ে করে তাহলে সে ব্যাভিচারী হবে। সে বিষয়েই রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যা মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে।
এ
প্রসঙ্গে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোনো মেয়েকে দেনমোহর দেওয়ার ওয়াদায় বিয়ে করেছে, কিন্তু দেনমোহর দেওয়ার ইচ্ছে নেই, সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট ব্যাভিচারী হিসেবে দাঁড়াতে বাধ্য হবে।”- (মুসনাদে আহমাদ)
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ النِّسَاءِ إِلَّا مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ
كِتَابَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَأُحِلَّ لَكُمْ مَا وَرَاءَ ذَلِكُمْ أَنْ
تَبْتَغُوا بِأَمْوَالِكُمْ مُحْصِنِينَ غَيْرَ مُسَافِحِينَ فَمَا
اسْتَمْتَعْتُمْ بِهِ مِنْهُنَّ فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةً وَلَا جُنَاحَ
عَلَيْكُمْ فِيمَا تَرَاضَيْتُمْ بِهِ مِنْ بَعْدِ الْفَرِيضَةِ إِنَّ اللَّهَ
كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا
“এবং নারীদের মধ্যে সধবা নারী ছাড়া সকল নারীকে তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে যে, তোমরা তোমাদের অর্থের বিনিময়ে তাদেরকে তলব করবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য, অবৈধ যৌনাচারে লিপ্ত হওয়ার জন্য নয়। সুতরাং তাদের মধ্যে তোমরা যাদেরকে ভোগ করেছ তাদেরকে তাদের নির্ধারিত মোহর দিয়ে দাও। আর নির্ধারণের পর যে ব্যাপারে তোমরা পরস্পর সম্মত হবে তাতে তোমাদের উপর কোন অপরাধ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।” (সূরা নিসার-৪:২৪)
এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়, দেনমোহর হতে হবে বিক্রয়যোগ্য বস্তু সম্পদের
মত।সুতরাং
বলা যায় যে, দেনমোহরের সর্বোচ্চ কোনো পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়নি। ন্যূনতম পরিমান সম্পর্কে ইমাম হানাফি (রহ:) এর মাজহাবের মতে ১০ দিরহাম। অর্থাৎ ৩০.৬১৮ গ্রাম রুপা অথবা এর সমপরিমাণ মূল্য নির্ধারণ করা। এর চেয়ে কম পরিমাণ মোহর নির্ধারণ করা স্ত্রী রাজি হলেও তা শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ হবে না।
এ প্রসঙ্গে হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, ১০ দিরহামের কম কোনো মোহর নেই। (বায়হাকি শরীফ, ৭/২৪০) কিন্তু এর উপরে যে কোনো পরিমাণকেই দেনমোহর নির্ধারণ করা যাবে। তবে স্বামী যেহেতু দেনমোহর পরিশোধ করতে বাধ্য- তাই তার পরিশোধের সামর্থ্য বিবেচনা করে তা নির্ধারণ করা উচিৎ। এমন কোনো সিদ্ধান্ত তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া আদৌ উচিৎ হবে না- যাতে সে তা পরিশোধ না করতে পেরে গুনাহগার হয়।
মোহরে ফাতেমিঃ
দেনমোহরের জন্য আমাদের সমাজে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত পরিমান হল মোহরে ফাতেমি।মোহরে ফাতেমি বলা হয় ঐ পরিমাণ মোহর নির্ধারণ করা, যা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মেয়ে হযরত ফাতেমা রাঃ-এর জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর মোহর ৫০০ দিরহাম নির্ধারণ করা হয়েছিল, ১৫৩০.৯ গ্রাম রুপা। (জাওয়াহিরুল ফাতাওয়া-৪/৩৫০)
হযরত উমর (রা.) এর খেলাফতকালে যখন মুসলমানদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসে- তখন সাহাবারা (রাঃ) তাদের সন্তানদের বিয়েতে দেনমোহরে ফাতেমির চেয়ে অনেক গুণ বেশি দেনমোহর নির্ধারণ করতে শুরু করেন। হযরত উমর (রা.) দেনমোহরের ক্রমবৃদ্ধির গতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিলেন। তিনি এত বেশি পরিমান দেনমহরের পক্ষে ছিলেন না। কিন্তু সূরা নিসার ৪ নম্বর আয়াত এর কারনে তা পারেননি।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জানিয়েছেন,
وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً فَإِنْ طِبْنَ لَكُمْ
عَنْ شَيْءٍ مِنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَرِيئًا
“তোমরা স্ত্রীদের তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশি মনে।” (সূরা নিসা-৪:৪)
এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় দেনমোহর অনেক বেশিও হতে পারে।তাই, কোনো প্রকার বিচার-বিবেচনা ছাড়া ঢালাওভাবে সবার জন্য দেনমোহরে ফাতেমি নির্ধারণ করলে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে- যা ইসলাম আদৌ পছন্দ করে না।
আবার মোহরে ফাতেমির চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ দেনমোহর পরিশোধের সামর্থ্য যদি স্বামীর থাকে তবে সেক্ষেত্রে দেনমোহরে ফাতেমিকে দেনমোহর নির্ধারণ করার দ্বারা স্ত্রীকে ঠকানো হয় ও নারীত্বের অবমাননা করা হয়। তাই দেনমোহরে ফাতেমিকে নয়, বরং স্বামীর সামর্থ্যরে সর্বোচ্চ পরিমাণকে দেনমোহর করা উচিৎ।
অন্যসব অধিকারের মতো স্বামীর কাছে দেনমোহর দাবি করা স্ত্রীর জন্য দোষের কিছু নয়। অনেকেই মনে করেন, দেনমোহরের টাকা স্ত্রীকে দিতে হয় শুধুমাত্র বিয়ের বিচ্ছেদ ঘটলে। এটা অজ্ঞতা ও চরম ভুল ধারণা। বিয়ে বিচ্ছেদ না হলেও দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করা ফরজ।
অতএব এর যাবতীয় দিক শরীয়ত অনুযায়ী ও পরিষ্কারভাবে হওয়া উচিত এবং সে হিসেবেই তা পরিশোধের চিন্তা-ভাবনা করা উচিত।
(চোখরাখুন বাকী পর্ব ফেইস বুকে আসবে-চলবে।)
দেনমোহর-‘‘প্রসঙ্গে ইসলামী দৃষ্টিকোণ’’
এম এ রাজ্জাক হাওলাদার
(দ্বিতীয় পর্ব)
দেনমোহরের সর্বোচ্চ পরিমাণঃ
তবে দেনমোহরের সর্বোচ্চ কোনো পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়নি। ১০ দিরহামের ওপরে যে কোনো পরিমাণ দেনমোহর নির্ধারণ করায় কোনো বাধা নেই। স্বামীকে যেহেতু বাধ্যতামূলক দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে তাই তার সামর্থ্য বিবেচনা করে দেনমোহর নির্ধারণ করা উচিত। নারীর নিরাপত্তার বিষয়টি ভেবে স্বামীর সামর্থ্যের বাইরে দেনমোহর চাপিয়ে দেয়া কোনোভাবেই উচিত নয়। কেননা দেনমোহর পরিশোধ করতে না পারলে স্বামী গোনাহগার হবে।
‘এক টাকা’ দেনমোহর কি ইসলামে
বৈধ?
দেনমোহর বিয়ের অন্যতম শর্ত।
স্বামীর জন্য বাধ্যতামূলক একটি কর্তব্য। বিয়ের বন্ধন উপলক্ষ্যে স্বামী তার স্ত্রীকে
বাধ্যতামূলক যে নগদ অর্থ, সোনা-রূপা
কিংবা স্থাবর সম্পদ দিয়ে থাকেন, তাই দেনমোহর। কিন্তু ‘এক টাকা বা নামমাত্র
অংকে’ দেনমোহর দেয়া কি বৈধ? সর্বনিম্ন
দেনমোহর কত হতে হবে? এ সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনাই বা কী?
দেনমোহর স্ত্রীর অধিকার। স্বামীর
জন্য ফরজ বিষয়। মোহর নিয়ে সামাজিক চরম শৈথিল্য একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। সমাজে এমন অনেকে
আছেন, যারা নামাজ-রোজা-হজ-জাকাত
সম্পর্কে ধারণা রাখলেও মোহরের বিষয়টি নিয়ে সচেতন নন। সে কারণে দেখা যায়, মোহরের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে চরম ছাড়াছাড়ি পরিলক্ষিত হয়।
বিয়েকে স্মরণীয় রাখতে কিংবা
উদারতা দেখাতে গিয়ে অনেকেই ১ টাকা দেনমোহর বা নামমাত্র অংকে দেনমোহর নির্ধারণ করে বিয়ে
করার কৃতিত্ব দেখিয়ে থাকেন। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
মোহর কত হওয়া উচিতঃ
ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে
নারীর প্রকৃত অধিকার হলো- ‘মোহরে
মিছাল’। তাহলো- ওই নারীর বংশে তার মতো
অন্যান্য নারীদের সাধারণত যে মোহর নির্ধারণ করা হয়েছে সেটা তার মোহরে মিছাল। যদি
তার নিজের বংশে তার মতো আর কোনো নারী না থাকে, তবে অন্য বংশে তার সমপর্যায়ের নারীদের যে মোহর সাধারণত
নির্ধারণ করা হয়; সেটাই তার মোহরে মিছল। ইসলামি শরিয়তের
দৃষ্টিতে স্ত্রী মূলত মোহরে মিছালেরই হকদার।
সুতরাং মোহর নিয়ে
বাড়াবাড়ি যেমন ঠিক নয়, তেমনি
ছাড়াছাড়িও ঠিক নয়। নারীকে তার যথাযথ সম্মান দেখানোর মাধ্যমে প্রাপ্য অধিকার ও
সম্মানজনক মোহর দিয়ে বিয়ে করাই উত্তম।
দেনমোহর নির্ধারণ
পদ্ধতিঃ
ইসলামে মোহরানার পরিমান সুনির্দিষ্টভাবে বেঁধে
দেয়া হয়নি। তাই তা আপেক্ষিক। অর্থাৎ বর ও কনের উভয়ের দিক বিবেচনান্তে তা নির্ধারিত
হয়। দেনমোহর কত হবে তা নির্ণয়কালে স্ত্রীর পিতার পরিবারের অন্যান্য মহিলা সদস্যদের
ক্ষেত্রে যেমন স্ত্রীর বোন, খালা, ফুফুদের ক্ষেত্রে দেনমোহরের পরিমাণ কত ছিল তা বিবেচনা করা
হয়। তাছাড়া স্ত্রীর পিতার আর্থ-সামাজিক অবস্থান, ব্যক্তিগত যোগ্যতা, বংশ
মর্যাদা, পারিবারিক অবস্থা ইত্যাদির ভিত্তিতে দেনমোহরের পরিমাণ
নির্ধারণ করা হয়। অপর দিকে বরের আর্থিক ক্ষমতার দিকটাও বিবেচনায় রাখা হয়। এসব দিক
বিচার বিবেচনা করেই মূলতঃ দেনমোহর নির্ধারণ করা হয়। উল্লেখ্য, দেনমোহর
একবার নির্ধারণ করার পর এর পরিমাণ কমানো যায় না, তবে স্বামী ইচ্ছা করলে তা
বাড়াতে পারেন।
দেনমোহরের পরিমাণ কী হওয়া উচিত ইসলামী শারীআতে
এ সম্পর্কে বিশেষভাবে কোন নির্দেশ দেয়া হয়নি বা কোন সুস্পষ্ট পরিমাণ ঠিক করে দেয়া
হয়নি। তবে এ কথা স্পষ্ট যে, প্রত্যেক স্বামীরই কর্তব্য হচ্ছে তার আর্থিক সামর্থ্য ও
স্ত্রীর মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রেখে উভয় পক্ষের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোন পরিমাণ
নির্দিষ্ট করে বেঁধে দেয়া আর মেয়ে পক্ষেরও তাতে রাজী হওয়া।
বিয়ের
সময় দেনমোহর নির্ধারণ না হলে:
১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ১০
ধারা মোতাবেক দেনমোহর প্রদানের পদ্ধতি সম্পর্কে কাবিনে বিস্তারিত উল্লেখ না থাকলেও
স্ত্রী চাহিবামাত্র সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করতে হবে। বিয়ের সময় যদি দেনমোহর
নির্ধারণ করা না হয় এমনকি স্ত্রী পরবর্তীতে কোন দেনমোহর দাবী করবে না এ শর্তে বিয়ে
হয় তাহলেও স্ত্রীকে উপযুক্ত দেনমোহর দিতে হবে। দেনমোহর বিয়ের পূর্বে, বিয়ের
সময় এমনকি বিয়ের পরে নির্ধারণ করা যেতে পারে।
দেনমোহরের
প্রকারভেদ:
দেনমোহরের মূলতঃ দুই
প্রকারের, যথা-
(১) নির্ধারিত
দেনমোহর:- যেক্ষেত্রে বিবাহের চুক্তিতে বা বিবাহের
পূর্বে কিংবা পরে দেনমোহরের পরিমাণ নির্ধারিত হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে সেটা নির্ধারিত দেনমোহর।
এইরূপ দেনমোহরের জন্য কোন সর্বোচ্চ পরিমাণ অর্থ নির্ধারিত নাই। দেনমোহর হিসাবে যে
কোন পরিমাণ অর্থ নির্ধারিত হতে পারে,কিন্তু কোন অবস্থায়ই আইনে নির্ধারিত
পরিমাণের কম হতে পারবে না।
নির্ধারিত দেনমোহরের পরিমান
কোন ক্রমেই দশ দিরহামের কম হবে না।এ প্রসঙ্গে হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, "১০ দিরহামের কম কোনো মোহর নেই।" (বায়হাকি-৭/২৪০)
কিন্তু এর উপরে যে কোনো পরিমাণেই
দেনমোহর নির্ধারণ করা যাবে।তবে স্বামী যেহেতু দেনমোহর পরিশোধ করতে বাধ্য- তাই তার
পরিশোধের সামর্থ্য বিবেচনা করে তা নির্ধারণ করা উচিৎ। এমন কোনো সিদ্ধান্ত তার ওপর
চাপিয়ে দেওয়া আদৌ উচিৎ হবে না- যাতে সে তা পরিশোধ না করতে পেরে গুনাহগার হয়।
দেনমোহর একজন নারীর হক, যদি
কোনো ব্যক্তি দেনমোহর অনাদায়ের ইচ্ছা নিয়ে বিয়ে করে তাহলে সে ব্যাভিচারী হবে। এ বিষয়ে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যে
ব্যক্তি কোনো মেয়েকে দেনমোহর দেওয়ার ওয়াদায় বিয়ে করেছে, কিন্তু
দেনমোহর দেওয়ার ইচ্ছে নেই, সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট ব্যাভিচারী হিসেবে দাঁড়াতে
বাধ্য হবে।” (মুসনাদে আহমাদ)
(২) উপযুক্ত
দেনমোহর:- যেক্ষেত্রে বিবাহের চুক্তিতে বা বিবাহের পূর্বে দেনমোহরের
পরিমাণ নির্ধারিত হয় না সেক্ষেত্রে স্ত্রীকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ হিসাবে দেনমোহর
পরিশোধ করার জন্য আইন দ্বারা নির্ধারণ করা হয়, তাকে উপযুক্ত দেনমোহর বলে। যখন এইরূপ কোন
প্রকাশ্য শর্তে বিবাহের চুক্তি সম্পাদিত হয় যে, কোন মোহরানা পরিশোধ করা হবে না অথবা যখন কোন
মোহরানার পরিমাণ ধার্য করা না হয় তখন সে বিবাহের ক্ষেত্রে স্ত্রী ন্যায্য বা
উপযুক্ত পরিমাণ মোহরানা পাওয়ার অধিকারী হন।
বরকতপূর্ণ বিবাহের বর্ণনা দিতে গিয়ে উম্মাহাতুল
মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, হযরত
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, "সবচেয়ে বরকতময় বিয়ে হচ্ছে সুন্নতি বিয়ে, অর্থাৎ
যে বিয়েতে খরচ কম হয় এবং কোনো জাঁকজমক থাকে না।" (মিশকাত শরিফ)
রাসূল
(সাঃ) আরো বলেন, "সে নারী বরকতের মাঝে আছে
যাকে প্রস্তাব দেয়া সহজ ও যার দেনমোহর অল্প"।দেনমোহরের বিষয়টি হালকাভাবে নিয়ে
লোক দেখানো "অধিক দেনমোহর" ধার্য করাতে কোনো বরকত নেই। বরং তা
অহংকারেরপরিচায়ক।”
স্বামী
দ্বিতীয় বিয়ে করলে কিংবা তালাক হলেঃ
স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করলে প্রথম স্ত্রীর
সম্পূর্ণ দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করতে হবে। তালাক বা স্বামীর মৃত্যুর আগেই স্ত্রী
দেনমোহর দাবি করতে পারে এবং স্বামী তখন নির্ধারিত দেনমোহর পরিশোধ করতে বাধ্য।
দেনমোহর স্ত্রীর কাছে স্বামীর ঋণ তাই যে কোনো সময় স্ত্রী তা দাবি করতে পারে।
স্বামীর
মৃত্যুর পর স্ত্রীর দেনমোহর আদায়ঃ
স্বামীর মৃত্যুর পর দেনমোহর স্ত্রীর কাছে
স্বামীর ঋণ হিসেবে ধরা হবে। অন্যান্য ঋণের মতোই এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
দাফন-কাফনের খরচ করার পর অবশিষ্ট সম্পত্তি থেকে দেনমোহর ও অন্যান্য ঋণ পরিশোধ করতে
হবে, এমন কি এই ঋণ পরিশোধ না করলে স্ত্রী স্বামীর
উত্তরাধিকারীদের বিরুদ্ধে দেনমোহরের জন্য মামলাও করতে পারে। স্বামীর আগে স্ত্রীর
মুত্যু হলেও দেনমোহর দিতে হবে। এক্ষেত্রে স্ত্রীর উত্তরাধিকারীরা এই দেনমোহর পাবার
অধিকারী। তারা দেনমোহর পাবার জন্য মামলাও করতে পারে। এছাড়া স্ত্রীর দেনমোহর পরিশোধ
না হওয়া পর্যন্ত তার স্বামীর অন্যান্য ওয়ারেশদের এবং তার স্বামীর পাওনাদারদের
বিরুদ্ধ জনিত দখল বজায় রাখতে পারবে।
মোহরানা নারীর অর্থনৈতিক অধিকার।
একশ্রেণির মানুষের বদ্ধমূল ধারণা, মোহরানা কেবলই আনুষ্ঠানিক ঘোষণামাত্র।
অনেকে মনে করেন, মোহরানা হলো বিবাহের নিশ্চয়তা, যা কেবল তালাক দিলেই পরিশোধযোগ্য! অথচ
ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী মোহরানার সম্পর্ক বিবাহের সঙ্গে, তালাকের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই।
অন্যদিকে মোটা অঙ্কের মোহরানা ধার্য করা এখন
আমাদের সমাজে সামাজিক "ঐতিহ্যে" পরিণত হয়েছে। অতি ভালোবাসার ছলে কিংবা বাসরঘরের
আনুষ্ঠানিকতার ছদ্মাবরণে "মোহর মাফ" করে দেওয়ার সংস্কৃতি চালু হয়েছে। এ
ব্যাপারে হজরত আশরাফ আলী থানভি (রহ.) লিখেছেন, "মোহরের অর্থ স্ত্রীর হাতে দেওয়ার পর
স্ত্রী যদি তা ইচ্ছামতো খরচ করার সুযোগ লাভ করা সত্ত্বেও স্বামীকে দিয়ে দেন, কেবল সে ক্ষেত্রেই তা মাফ বলে গণ্য হবে, অন্যথায় অর্থ নারীর হস্তগত না করে মাফ
নিলে এ মাফ গ্রহণযোগ্য নয়"। কেননা দেখা যায়, বাসরঘরে এ প্রক্রিয়ায় ‘মাফ’ করে দেওয়ার পর যদি কোনো কারণে সংসার
ভেঙে যায়, ওই নারী মোহরানা দাবি করতে দ্বিধা করেন না, এমনকি নিজের অধিকার আদায়ে মামলাও করে
থাকেন। এতে বোঝা যায়, আগে যে তিনি "মাফ" করে দেওয়ার
কথা বলেছেন, সেটি ছিল কথার কথা কিংবা সামাজিক প্রথা। এ প্রক্রিয়ায় মূলত
মোহরানা মাফ হয় না।
অনেক
বড় অঙ্কের মোহর ধার্য করা যেমন কাম্য নয়, তেমনি তা একেবারে তুচ্ছ ও সামান্য হওয়াও উচিত
নয়। মোহরের পরিমাণ এমন হওয়া চাই,
যা সাধারণত আগ্রহের বিষয় হয় এবং নারীর জন্য
অর্থনৈতিক শক্তি ও সম্মানের বিষয় হয়। নবী করিম (সাঃ)-এর সুন্নাহ ও সাহাবায়ে
কেরামের সাধারণ রীতি এ ক্ষেত্রে উত্তম আদর্শ। আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান বলেন, আমি
উম্মুল মুমিমিন আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, নবী করিম (সাঃ) কী পরিমাণ মোহর দিয়েছেন? তিনি
বলেন, "নবী করিম (সাঃ) তাঁর স্ত্রীদের সাড়ে বারো উকিয়া অর্থাৎ পাঁচশ দিরহাম মোহর
দিয়েছেন।"
(সহিহ মুসলিম-১৪২৬; সুনানে আবু দাউদ-২১০৫)
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন,
وَإِنْ أَرَدْتُمُ
اسْتِبْدَالَ زَوْجٍ مَكَانَ زَوْجٍ وَآتَيْتُمْ إِحْدَاهُنَّ قِنْطَارًا فَلَا
تَأْخُذُوا مِنْهُ شَيْئًا أَتَأْخُذُونَهُ بُهْتَانًا وَإِثْمًا مُبِينًا
"যদি তোমরা এক স্ত্রীর স্থলে অন্য স্ত্রী পরিবর্তন করতে
ইচ্ছা কর এবং তাদের একজনকে প্রচুর ধন-সম্পদ প্রদান করে থাক, তবে
তা থেকে কিছুই ফেরত গ্রহণ করো না। তোমরা কি তা অন্যায়ভাবে ও প্রকাশ্য গোনাহর
মাধ্যমে গ্রহণ করবে? " (সুরা নিসা-৪:২০)
এ আয়াত থেকে বুঝা যায়, কেউ চাইলে স্ত্রীকে মোটা অঙ্কের মোহরানা দিতে
পারবেন।
যে সব কারণে নারীকে
মোহরানা দিতে হয়:
কয়েকটি
কারণে ইসলামী শরিয়ত নারীকে মোহরানা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
এক. মোহরানা স্ত্রীর প্রতি সম্মান ও অনুরাগ
প্রকাশের একটি মাধ্যম। স্ত্রী তাঁর মা-বাবা, ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজন ত্যাগ করে
স্বামীর ঘরে আসেন। এই কঠিনতম ত্যাগ স্বীকার করে তিনি আসেন অতিথির বেশে। তাই ইসলামী
শরিয়ত মোহরানা ও বিভিন্ন উপঢৌকন দিয়ে এই অতিথিকে বরণ করার নির্দেশ দিয়েছে। এই মোহরানা যে এক ধরনের উপঢৌকন এবং সেটা সন্তুষ্টচিত্তে
দিতে হয়। এ ব্যাপারে আল কুরআনে বলা হয়েছে,
وَآتُوا النِّسَاءَ
صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً فَإِنْ طِبْنَ لَكُمْ عَنْ شَيْءٍ مِنْهُ نَفْسًا
فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَرِيئًا
"আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে। তারা
যদি খুশী হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর।"(সুরা নিসা-৪:৪)
দু্ই. মোহরানা নারীর সৌন্দর্য, মর্যাদা ও প্রভাব প্রতিষ্ঠা করে। কেননা অর্থকড়ি
পার্থিব জীবনের শোভা ও সৌন্দর্যের পরিচায়ক। আল কুরআনে বলা হয়েছে,
الْمَالُ وَالْبَنُونَ زِينَةُ
الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَالْبَاقِيَاتُ الصَّالِحَاتُ خَيْرٌ عِنْدَ رَبِّكَ
ثَوَابًا وَخَيْرٌ أَمَلًا
"সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের
সৌন্দর্য। ‘স্থায়ী সৎকর্ম’ তোমার রবের কাছে পুরস্কার প্রাপ্তির
জন্য শ্রেষ্ঠ এবং আশান্বিত হওয়ার জন্যও সর্বোৎকৃষ্ট। (সুরা কাহফ-১৮:৪৬)
তিন. ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে বিবাহ একটি চুক্তি। ইসলাম এই
চুক্তির শর্ত হিসেবে অর্থ দেওয়ার কথা বলেছে। কেননা অর্থবিনিময় চুক্তিকে সুদৃঢ় করে।
কিন্তু ইসলামে স্ত্রীর কাছ থেকে উপকৃত হওয়ার বিষয়টিকে এই চুক্তির ভিত্তি হিসেবে
স্থির করা হয়নি। তাই বিবাহ হয়ে যাওয়ার পর স্ত্রীর কাছ থেকে দৈহিকভাবে উপকৃত না
হয়েও যদি কেউ স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেন, তবু মোহরানার অধিকার বলবৎ থাকে। কেননা পুরুষ
সেই চুক্তি ভঙ্গ করেছেন। তবে পুরুষ যেন সবদিক থেকে বঞ্চিত না হন, সে
কথা বিবেচনা করে ইসলাম চুক্তিকৃত মোহরানার অর্ধেক পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছে।
এ ব্যাপারে আল কুরআনে বলা হয়েছে,
وَإِنْ طَلَّقْتُمُوهُنَّ مِنْ
قَبْلِ أَنْ تَمَسُّوهُنَّ وَقَدْ فَرَضْتُمْ لَهُنَّ فَرِيضَةً فَنِصْفُ مَا
فَرَضْتُمْ إِلَّا أَنْ يَعْفُونَ أَوْ يَعْفُوَ الَّذِي بِيَدِهِ عُقْدَةُ
النِّكَاحِ وَأَنْ تَعْفُوا أَقْرَبُ لِلتَّقْوَى وَلَا تَنْسَوُا الْفَضْلَ
بَيْنَكُمْ إِنَّ اللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
"তোমরা যদি তাদেরকে স্পর্শ করার আগেই তালাক দাও, অথচ
মোহরানা ধার্য করে থাকো, তবে যা তোমরা ধার্য করেছ তার অর্ধেক তাদেরকে দিতে পার। যদি
না স্ত্রী অথবা যার হাতে বিবাহ-বন্ধন রয়েছে সে মাফ করে দেয় এবং মাফ করে দেয়াই
আত্মসংযমের নিকটতর। তোমরা পরষ্পরের মধ্যে উদারতার কথা ভুলে যেওনা। তোমরা যা কর
আল্লাহ তা দেখেন।"(সুরা বাকারা-২:২৩৭)
চার. ইসলাম পরিবার ও পারিবারিক জীবনকে একটি প্রতিষ্ঠান কল্পনা
করে। দুটি কারণে ইসলাম সেই প্রতিষ্ঠানের মূল দায়িত্ব পুরুষের ওপর অর্পণ করেছে। এক.
পুরুষ নারীর অর্থ ব্যয় করে থাকেন,
যদিও নারী বিত্তবান হন। দুই. বুদ্ধিমত্তা, সিদ্ধান্ত
গ্রহণে দৃঢ়তা ও দৈহিক শক্তিমত্তা। এই দুটি বিষয় বিবেচনা করে ইসলাম পরিবার নামক
প্রতিষ্ঠানের মূল দায়িত্ব স্বামী তথা পুরুষের ওপর অর্পণ করেছে।
এ বিষয়ে কুরআনে বলা হয়েছে,
الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى
النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنْفَقُوا
مِنْ أَمْوَالِهِمْ فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِلْغَيْبِ بِمَا
حَفِظَ اللَّهُ وَاللَّاتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ
فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلَا تَبْغُوا عَلَيْهِنَّ
سَبِيلًا إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيرًا
"পুরুষেরা নারীদের অভিভাবক। কারণ, আল্লাহ
তাদের একের ওপর অপরকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং পুরুষেরা নিজের ধন-সম্পদ থেকে
ব্যয় করে। সতী-সাধ্বী স্ত্রীরা অনুগত এবং বিনম্র। স্বামীর অনুপস্থিতিতে তারা তাঁর
অধিকার ও গোপন বিষয় রক্ষা করে। আল্লাহই গোপনীয় বিষয় গোপন রাখেন।যদি স্ত্রীদের
অবাধ্যতার আশংকা কর তবে প্রথমে তাদের সৎ উপদেশ দাও। এরপর তাদের শয্যা থেকে পৃথক কর
এবং তারপরও অনুগত না হলে তাদেরকে শাসন কর৷ এরপর যদি তারা তোমাদের অনুগত হয়, তবে
তাদের সাথে কর্কশ আচরণ করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমু্ন্নত-মহীয়ান।" (সুরা নিসা-৪:৩৪)
কিন্তু ইসলাম একদিকে অর্থ ব্যয়ের বিষয়টিকে
সামনে এনে পুরুষের ওপর পরিবারের মূল দায়িত্ব অর্পণ করেছে, অন্যদিকে
পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানে মর্যাদায় ভারসাম্য আনার লক্ষ্যে নারীর জন্য একটি বিশাল
অ্যামাউন্ট বরাদ্দ করে নারীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখেছে। ইসলামের ভাষায় এটাকেই মোহরানা বলা হয়।
পাঁচ. ইসলামী শরিয়তে মানুষের প্রতিটি অঙ্গের একটি আর্থিক মূল্য
আছে, যদিও মানব অঙ্গ-প্রতঙ্গ অমূল্য সম্পদ। তথাপি জাগতিক নিয়মে
কেউ কারো অঙ্গহানি করলে এর বিনিময় প্রদান জরুরি। আর বিবাহের মাধ্যমে যেহেতু
পুরুষের মাধ্যমে নারীর এক ধরনের অঙ্গহানি হয়, তাই ইসলামী শরিয়ত এর ক্ষতিপূরণ হিসেবে মোহরানা দেওয়ার
নির্দেশ দিয়েছে।
এ বিষয়ে কুরআনে বলা হয়েছে,
وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ
مِنْكُمْ طَوْلًا أَنْ يَنْكِحَ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ فَمِنْ مَا
مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ مِنْ فَتَيَاتِكُمُ الْمُؤْمِنَاتِ وَاللَّهُ أَعْلَمُ
بِإِيمَانِكُمْ بَعْضُكُمْ مِنْ بَعْضٍ فَانْكِحُوهُنَّ بِإِذْنِ أَهْلِهِنَّ
وَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ مُحْصَنَاتٍ غَيْرَ مُسَافِحَاتٍ وَلَا
مُتَّخِذَاتِ أَخْدَانٍ فَإِذَا أُحْصِنَّ فَإِنْ أَتَيْنَ بِفَاحِشَةٍ
فَعَلَيْهِنَّ نِصْفُ مَا عَلَى الْمُحْصَنَاتِ مِنَ الْعَذَابِ ذَلِكَ لِمَنْ
خَشِيَ الْعَنَتَ مِنْكُمْ وَأَنْ تَصْبِرُوا خَيْرٌ لَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ
رَحِيمٌ
"তোমাদের মধ্যে যারা স্বাধীন ও ঈমানদার নারী বিয়ে করার মত
আর্থিক সঙ্গতি রাখে না, তারা নিজেদের অধিকারভুক্ত ঈমানদার ক্রীতদাসীদের বিয়ে করবে।
আল্লাহ তোমাদের ঈমান সম্পর্কে বেশী জানেন। তোমরা একে অপরের সমান। সুতরাং তাদেরকে
বিয়ে করবে তাদের মালিকের অনুমতি নিয়ে। তারা ব্যভিচারী অথবা উপপতি গ্রহণকারিণী না
হয়ে সতী-সাধ্বী হয়ে থাকলে তাদের মোহরানা ন্যায় সঙ্গতভাবে দেবে। বিয়ের পর তারা যদি ব্যভিচার করে, তবে
তাদের শাস্তি স্বাধীন নারীর অর্ধেক। এ ধরনের বিয়ে তাদের জন্যেই, যারা
স্ত্রী না থাকার কারণে পাপে লিপ্ত হতে পারে বলে ভয় করে। কিন্তু ধৈর্য ধরা ও
স্বাধীন নারীদের বিয়ে করাই তোমাদের জন্য উত্তম। আল্লাহ ক্ষমাশীল এবং
দয়ালু।"(সুরা নিসা-৪:২৫)
এ আয়াতের থেকে বোঝা যায়, মোহরানা
নারীর প্রাপ্য ও অধিকার। এর একটি বিনিময় মূল্য রয়েছে। এটি নারীর অধিকার।
ছলে-বলে-কৌশলে কিছুতেই নারীকে সে অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।
(চোখরাখুন বাকী পর্ব ফেইস বুকে আসবে-চলবে।)
দেনমোহর-‘‘প্রসঙ্গে ইসলামী দৃষ্টিকোণ’’
এম এ রাজ্জাক হাওলাদার
(তৃতীয় পর্ব)-শেষ
মোহরানা তলব করার অধিকার:
মোহরানা নগদ আদায় না করলেও বিবাহ শুদ্ধ হবে ঠিক, তবে
পরে আদায়ের মেয়াদ নির্ধারিত করে নিতে হবে। কিন্তু কেউ যদি তাও না করেন, তাহলে
ইসলামী শরিয়ত স্ত্রীকে এ অধিকার দিয়েছে যে মোহর আদায় না হওয়া পর্যন্ত স্ত্রী
নিজেকে স্বামীর হাতে অর্পণ করা থেকে বিরত থাকতে পারবেন এবং ওই অবস্থাতেও স্বামীকে
স্ত্রীর ব্যয়ভার নিয়মিত বহন করতে হবে। কারণ স্ত্রীর ভরণ-পোষণ এবং মোহরানা সম্পূর্ণ
আলাদা জিনিস। যে মোহরের মেয়াদ নির্ধারিত হয়নি, তা তলব করা স্ত্রীর বৈধ অধিকার। একে অবাধ্যতা বিবেচনা করে স্ত্রীর নিয়মিত
ব্যয়ভার বন্ধ করার অধিকার স্বামীর নেই। ইসলামী আইনবিদরা স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, স্বামী
মোহর আদায় করে স্ত্রীকে নিজের বাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন। যদি মোহরানা আদায় না করে
নিয়ে যেতে চান, আর স্ত্রী মোহরানা দাবি করে নিজ ঘরে অনড় থাকেন, তাহলেও
স্ত্রী মোহর তো পাবেনই, উপরন্তু নিয়মিত ভরণ-পোষণ পাওয়ার অধিকার থাকবে। কারণ তিনি
তাঁর ন্যায়সংগত দাবি আদায়ের স্বার্থেই বাড়ি যাচ্ছেন না। এমনকি মোহরানা উসুল না
হওয়া পর্যন্ত স্বামীকে শয্যাযাপন,
ভ্রমণ ইত্যাদি থেকে বাধা দেওয়ার অধিকারও স্ত্রীর
রয়েছে। (দুররে মুখতার : ৪/২৯০)
দেনমোহর থেকে
স্বামীকে মুক্ত করে দেওয়ার বিধান:
স্ত্রী চাইলে কি তার স্বামীকে দেনমোহর থেকে
মুক্ত করে দিতে পারে?
স্ত্রী
যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে মোহরের কিছু অংশ ছেড়ে দেয় কিংবা গ্রহণ করার পর স্বামীকে
উপহার দিয়ে দেয়—তাহলে স্বামী তা সানন্দে ভোগ করতে পারবে। পূর্ণ মোহর ছেড়ে
দেওয়ার বা পূর্ণ মোহর স্বামীকে উপহার দেওয়ারও অধিকার স্ত্রীর রয়েছে, তবে
সাধারণ অবস্থায় পূর্ণ মোহর না দিয়ে কিছু অংশ দেওয়াই ভালো।
মহান আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনে
বলেন,
وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ
النِّسَاءِ إِلَّا مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ كِتَابَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ
وَأُحِلَّ لَكُمْ مَا وَرَاءَ ذَلِكُمْ أَنْ تَبْتَغُوا بِأَمْوَالِكُمْ
مُحْصِنِينَ غَيْرَ مُسَافِحِينَ فَمَا اسْتَمْتَعْتُمْ بِهِ مِنْهُنَّ
فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةً وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا تَرَاضَيْتُمْ
بِهِ مِنْ بَعْدِ الْفَرِيضَةِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا
"অতএব তাদের নিকট থেকে তোমরা যে আনন্দ
উপভোগ করেছ (সে কারণে) তাদের ধার্যকৃত মোহর তাদের প্রদান করবে। আর মোহর নির্ধারিত
থাকার পরও কোনো বিষয়ে পরস্পর সম্মত হলে তাতে তোমাদের কোনো অপরাধ হবে না। নিশ্চয়ই
আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়"। (সুরা নিসা-৪:২৪)
মহান
আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনে
বলেন অন্যত্র বলেন,
وَآتُوا النِّسَاءَ
صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً فَإِنْ طِبْنَ لَكُمْ عَنْ شَيْءٍ مِنْهُ نَفْسًا
فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَرِيئًا
"এবং তোমরা নারীদেরকে দাও তাদের মোহর
খুশিমনে। এরপর তারা যদি স্বেচ্ছায় স্বাগ্রহে ছেড়ে দেয় কিছু অংশ তোমাদের জন্য
তাহলে তা স্বচ্ছন্দে ভোগ কর।" (সুরা নিসা-৪:০৪)
তবে এখানে কিছু কথা
জেনে নেওয়া আবশ্যক:
এক. মোহর মূলত একটি সম্মানী - যা স্বামী তার স্ত্রীকে দিয়ে
থাকে।যার মূল উদ্দেশ্যই হলো নারীকে সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া। এটা শুধু কথার কথা নয়।
যা শুধু ধার্য করা হয়, পরিশোধ করার বাধ্যবাধকতা থাকবেনা ,বরং শরিয়তের উদ্দেশ্য হলো যখন কোনো
পুরুষ স্ত্রীকে ঘরে আনবে তখন তাকে মর্যাদার সঙ্গে আনবে এবং এমন কিছু উপহার দেবে, যা তাকে সম্মানিত করে।শরিয়তের দৃষ্টিতে
এটা এতটাই অপরিহার্য যে, মোহর ছাড়া বিয়ে হয় না। আকদের সময়
উল্লেখ না করলেও কিংবা না দেওয়ার শর্ত করলেও মোহর বাতিল হয় না।
দুই. উপরোক্ত আয়াতদ্বয় থেকে কিছু বিষয় প্রমাণিত হয়।
• মোহর আদায় করা ফরয। কেননা স্বয়ং আল্লাহ
তাআলা মোহর আদায়ের আদেশ করেছেন। সুতরাং স্বামীর কর্তব্য যথাযথভাবে মোহর পরিশোধ
করা।
• মোহর যদিও একটি মধুর লেনদেন এবং ওইভাবেই
তা আদায় করা উচিত, তবে তা নিছক উপহার নয় যে, ইচ্ছা হলে দেওয়া যায়, আবার ইচ্ছে হলে বিরত থাকা যায়। বরং তা
হলো স্ত্রীর প্রাপ্য অধিকার। স্ত্রী যেমন প্রীতি ও ভালবাসার সঙ্গে নিজেকে অর্পণ
করেছে, স্বামীরও কর্তব্য সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে তার মোহর আদায় করা।
অতএব, মোহরের উপর নারীর অধিকার সাব্যস্ত হওয়ার পর তা পরিশোধ না করা, কিংবা অন্যায়ভাবে ফেরত নেওয়া সম্পূর্ণ অবৈধ
ও হারাম।
• স্ত্রী যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে মোহরের
কিছু অংশ ছেড়ে দেয় কিংবা নেওয়ার পর স্বামীকে উপহার দিয়ে দেয় তাহলে স্বামী তা
স্বচ্ছন্দে ভোগ করতে পারবে। পূর্ণ মোহর ছেড়ে দেওয়ার বা পূর্ণ মোহর স্বামীকে উপহার
দেওয়ারও অধিকার স্ত্রীর রয়েছে, তবে সাধারণ অবস্থায় পূর্ণ মোহর না দিয়ে
কিছু অংশ দেওয়াই ভালো।
• স্ত্রীর মোহর ফাঁকি দেওয়া অতি হীন কাজ। কারণ এর
অর্থ দাঁড়ায়, ভোগ করতে রাজি, কিন্তু বিনিময় দিতে রাজি নয়। যে স্বামীর মনে
স্ত্রীর মোহর আদায়ের ইচ্ছাটুকুও নেই হাদিস শরিফে (মাজমাউজ জাওয়াইদ: ৪/৫২২-৫২৩)
তাকে বলা হয়েছে ‘ব্যাভিচারী’।
• স্বামী যদি চাপ দিয়ে বা কৌশলে পূর্ণ মোহর বা
কিছু অংশ মাফ করিয়ে নেয়, তাহলে আল্লাহর বিচারে তা মাফ হবে না। (আহকামুল কোরআন, জাসসাস:
২/৫৭-৫৮; তাফসিরে ইবনে কাছির: ১/৪৪২; বয়ানুল কোরআন: ২/৯৩; তাফসিরে
উসমানি, পৃষ্ঠা: ১০০)।
তিন. কারো মনে হতে পারে, জীবনে তো কতো কিছুই স্ত্রীকে দিয়েছি। সবকিছু তো
আমার উপর অপরিহার্যও ছিল না। সুতরাং বিয়ের সময় সামান্য যে কিছু টাকা ধার্য করা
হয়েছিল তা নিয়ে এত চুলচেরা হিসাব-নিকাশের কী প্রয়োজন?
এই ধারণা কোনোভাবেই ঠিক নয়। কেননা মোহর আদায়ের
নিয়ত ছাড়া নিছক উপহার হিসেবে যা কিছু দেওয়া হয় তার দ্বারা মোহর আদায় হয় না। আর
পাওনাদারের পাওনা পরিশোধের ক্ষেত্রে চুলচেরা হিসাব করা দোষের বিষয় নয়; বরং
হক আদায়ে সতর্কতার কারণে তা প্রশংসনীয়ও বটে। তেমনি পাওনাদারও যদি চুলচেরা হিসাব
করে পাওনা বুঝে নিতে চায় তাহলেও তার নিন্দা করার অবকাশ নেই। কারণ এটা তার অধিকার।
তবে কোরআন-হাদিসে উভয় পক্ষকেই সহজ ও উদার হওয়ার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।
মোহরানা
পরিশোধ ছাড়া স্ত্রীর সাথে রাত্রিযাপনের হুকুম কী?
দেনমোহর বিয়ের আকদের পর প্রদান করাতে কোন
সমস্যা নেই। তবে সহবাসের পূর্বে প্রদান করাই উত্তম। তবে যদি স্ত্রী দেনমোহর প্রদান
করা ছাড়াই সহবাসের অনুমতি প্রদান করে তাহলে কোন সমস্যা নেই। বাকি স্ত্রী দেনমোহর
প্রদান করা ছাড়া প্রথম সহবাসের পূর্বে বাঁধা প্রদান করতে পারবে। কিন্তু একবার
সহবাস হয়ে গেলে আর বাঁধা দিতে পারবে না। কিন্তু স্বামীর জিম্মায় দেনমোহর আদায় না
করলে তা ঋণ হিসেবে বাকি থেকে যাবে।
স্ত্রী
যদি উক্ত দেনমোহর মাফ না করে, আর স্বামীও তা পরিশোধ না করে, তাহলে কিয়ামতের ময়দানে স্বামীর অপরাধী
সাব্যস্ত হবে। তাই দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করে দেয়া জরুরী।
দেনমোহর কি কখনো
মাফ হয়:
স্ত্রী দেনমোহর মাফ করতে পারে। যদিও স্বামী
চাইল আর স্ত্রী সাথে সাথে তা মাফ করে দিলো, বিষয়টা এত সহজ নয়। সহজে দেনমোহর মাফ হয় না।
দেনমোহর মাফ করার সময় স্ত্রীর পূর্ণ সম্মতি থাকতে হবে। একইসাথে তাকে স্বেচ্ছায়, কোন
রকম প্ররোচণা ছাড়া মুক্তমনে দেনমোহর মাফ করতে হবে।একজন উদার ও ন্যায়পরায়ন স্ত্রী
স্বামীর আর্থিক ও বাস্তব প্রতিকূলতা বুঝে ইচ্ছে করলে তার মোহরের দাবি ত্যাগও করতে
পারেন। কিন্তু একবার যদি মোহর নির্ধারিত হয়ে যায় বিশেষত লিখিত আকারে, তবে
সে মোহর স্বামীকে অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে। কোন স্ত্রীকে তার স্বামী বা অন্য কেউ
মোহরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কোন প্রভাব খাটাতে বা চাপ প্রয়োগ করতে পারবে না।
সবশেষে,স্বামী-স্ত্রী মিলেই একটি সংসারের
শুভসূচনা হয় এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা-সম্মান-মর্যাদা ও ভালবাসার মাধ্যমেই একটি
দাম্পত্য জীবন সফল হয় এবং পরিবার সুখের হয়। আর এটার শুরু হয় বিয়ের দিন থেকে এবং
উভয়ের প্রতি উভয়ের কাজ-কর্মের মাধ্যমেই তা প্রতিষ্ঠিত হয়।যার শুরুটা হতে পারে
দেনমোহর পরিশোধের মাধ্যমে।আর দেনমোহর স্ত্রীর হক এবং এর সাথে তার সম্মান-মর্যাদা
জড়িত।
আর
স্ত্রীকে সম্মান-মর্যাদা দিলে তা পরোক্ষভাবে স্বামীর সম্মান-মর্যাদাই বৃদ্ধি করে।
তাই সকল স্বামীকে তার স্ত্রীর দেনমোহর স্ত্রীকে ভালবেসে এবং তার সম্মান-মর্যাদার
প্রতি লক্ষ্য রেখে পরিশোধ করা উচিত যা তাকে স্ত্রীর নিকট করে তুলবে সম্মানিত এবং
সংসার হয়ে উঠবে সুখের ও আনন্দময়।
উপসংহারঃ
আমরা এই আলোচনা থেকে বুঝতে পারলাম যে দেনমোহর স্ত্রীর হক যা অবশ্যই স্বামীকে প্রদান করতে হবে এবং খুশি মনে প্রদান করতে হবে। এটা স্ত্রীর প্রতি কোন দয়া বা দান নয় বরং স্ত্রীর পাওনা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম
উম্মাহকে সামর্থ্য অনুযায়ী দেনমোহর নির্ধারণ ও তা পরিশোধ করার তাওফিক দান করুন।
আমিন।
No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com