বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব ও
তাৎপর্য-ইসলামের দৃষ্টিকোণ
-এম এ রাজ্জাক হাওলাদার
ভূমিকা: বৃক্ষ ও প্রাণীকুল একে অপরের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
প্রাণীদের বেঁচে থাকার প্রধান ও মূল উপকরণ হ’ল
অক্সিজেন, যা বৃক্ষ থেকেই উৎপন্ন ও
নির্গত হয়। প্রত্যেক নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে প্রাণীজগৎ কার্বনডাই অক্সাইড বর্জন করে।
এটি এক ধরনের বিষাক্ত পদার্থ, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক
ক্ষতিকর। বৃক্ষ সেই দূষিত কার্বনডাই অক্সাইড গ্রহণ করে এবং প্রাণীকুলের বেঁচে
থাকার মূল উপাদান অক্সিজেন নিঃসরণ করে। আর তাই ইসলাম বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব ও তার
অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বর্ণনা করেছে। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোকপাত করা হ’ল।-
বৃক্ষ বা গাছের উপকারিতা:
(১) রিযিকের উৎসমূল হ’ল গাছ : গাছ থেকে উৎপাদিত ফল-ফসল
খেয়ে প্রানীকুল জীবন ধারণ করে। আল্লাহ বলেন,وَأَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَآءِ
مَاءًم بِقَدَرٍ فَأَسْكَنَّاهُ فِي الْأَرْضِ وَإِنَّا عَلَى ذَهَابٍم بِهِ
لَقَادِرُونَ، فَأَنْشَأْنَا لَكُمْ بِهِ جَنَّاتٍ مِّنْ نَخِيلٍ وَّأَعْنَابٍ
لَّكُمْ فِيهَا فَوَاكِهُ كَثِيرَةٌ وَّمِنْهَا تَأْكُلُونَ، وَشَجَرَةً تَخْرُجُ
مِنْ طُورِ سَيْنَآءَ تَنْبُتُ بِالدُّهْنِ وَصِبْغٍ لِّلْآكِلِينَ- ‘আর
আমরা আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করি পরিমাণমত। অতঃপর তা যমীনে সংরক্ষণ করি। আর আমরা
ওটাকে সরিয়ে নিতেও সক্ষম। অতঃপর আমরা তা দিয়ে তোমাদের খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান
সৃষ্টি করি। তোমাদের জন্য সেখানে থাকে প্রচুর ফল-ফলাদি এবং তোমরা তা থেকে ভক্ষণ করে
থাক। আর আমরা সৃষ্টি করেছি (যয়তুন) বৃক্ষ। যা সিনাই পর্বতে জন্মায়। যা থেকে উৎপন্ন হয় তৈল এবং ভক্ষণকারীদের জন্য
রুচিকর খাদ্য’। (মুমিনূন ২৩/১৮-২০)
(২) গবাদিপশুর জীবিকাও বৃক্ষ, লতা-পাতা থেকে উৎপন্ন হয় : আল্লাহ বলেন,أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّا نَسُوقُ الْمَآءَ إِلَى الْأَرْضِ
الْجُرُزِ فَنُخْرِجُ بِهِ زَرْعًا تَأْكُلُ مِنْهُ أَنْعَامُهُمْ وَأَنْفُسُهُمْ
أَفَلاَ يُبْصِرُونَ- ‘তারা কি দেখে না যে,
আমরা
ঊষর ভূমিতে (বৃষ্টির) পানি প্রবাহিত করি। অতঃপর তার মাধ্যমে শস্য উৎপাদন করি। যা
থেকে ভক্ষণ করে তাদের গবাদিপশু এবং তারা নিজেরা। এর পরেও কি তারা উপলব্ধি করবে না?’। (সাজদাহ ৩২/২৭)
(৩) বৃষ্টির মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের জন্য শস্য ও ফলমূল উৎপন্ন
করেন: তিনি বলেন,وَأَنْزَلْنَا مِنَ الْمُعْصِرَاتِ مَآءً ثَجَّاجًا، لِنُخْرِجَ
بِهِ حَبًّا وَّنَبَاتًا، وَجَنَّاتٍ أَلْفَافًا- ‘আমরা পানিপূর্ণ মেঘমালা হ’তে প্রচুর বারিপাত করি। যাতে তা দ্বারা উৎপন্ন করি শস্য ও
উদ্ভিদ এবং ঘনপল্লবিত উদ্যানসমূহ’।(নাবা ৭৮/১৪-১৬)
(৪) ফসল ও ফলমূল আল্লাহর অপার দান : তিনি বলেন,أَفَرَأَيْتُمْ مَّا
تَحْرُثُونَ، أَأَنْتُمْ تَزْرَعُونَهُ أَمْ نَحْنُ الزَّارِعُونَ، لَوْ نَشَآءُ
لَجَعَلْنَاهُ حُطَامًا فَظَلْتُمْ تَفَكَّهُوْنَ، إِنَّا لَمُغْرَمُوْنَ، بَلْ
نَحْنُ مَحْرُوْمُوْنَ- ‘তোমরা যে শস্য বীজ বপন কর, সে
বিষয়ে ভেবে দেখেছ কি? তোমরা কি ওটা উৎপন্ন কর, না
আমরা উৎপন্ন করি? আমরা যদি ইচ্ছা করি তবে
অবশ্যই ওটাকে খড়-কুটায় পরিণত করতে পারি। তখন তোমরা হতবুদ্ধি হয়ে পড়বে। (তখন তোমরা
বলবে) আমরা তো নিশ্চিতভাবে ধ্বংস হয়ে গেলাম। বরং আমরা তো বঞ্চিত হয়ে গেলাম’।(ওয়াক্বি‘আহ ৫৬/৬৩-৬৭)
(৫) বৃক্ষে রয়েছে বান্দাদের জন্য বিভিন্ন উপদেশ ও অফুরন্ত রিযিক: আল্লাহ বলেন,وَالْأَرْضَ مَدَدْنَاهَا وَأَلْقَيْنَا فِيهَا رَوَاسِيَ وَأَنْبَتْنَا فِيهَا مِنْ كُلِّ زَوْجٍم بَهِيجٍ، تَبْصِرَةً وَّذِكْرَى لِكُلِّ عَبْدٍ مُّنِيْبٍ، وَنَزَّلْنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً مُّبَارَكًا فَأَنْبَتْنَا بِهِ جَنَّاتٍ وَّحَبَّ الْحَصِيْدِ، وَالنَّخْلَ بَاسِقَاتٍ لَّهَا طَلْعٌ نَّضِيدٌ، رِزْقًا لِّلْعِبَادِ وَأَحْيَيْنَا بِهِ بَلْدَةً مَّيْتًا كَذَالِكَ الْخُرُوْجُ- ‘আর পৃথিবীকে আমরা প্রসারিত করেছি এবং তাতে পাহাড় সমূহ স্থাপন করেছি। আর তাতে উৎপন্ন করেছি সকলপ্রকার নয়নাভিরাম উদ্ভিদরাজি। প্রত্যেক বিনীত ব্যক্তির জন্য, যা চাক্ষুষ জ্ঞান ও উপদেশ স্বরূপ। আর আমরা আকাশ থেকে বরকতময় বৃষ্টি বর্ষণ করি। অতঃপর তার মাধ্যমে বাগান ও শস্য বীজ উদ্গত করি এবং দীর্ঘ খর্জুর বৃক্ষসমূহ, যাতে থাকে গুচ্ছ গুচ্ছ খেজুরের মোচা। বান্দাদের জীবিকা হিসাবে। আর আমরা এর দ্বারা জীবিত করি মৃত জনপদকে। বস্ত্ততঃ এভাবেই হবে পুনরুত্থান’।(ক্বাফ ৫০/৭-১১)
বৃক্ষরাজি আল্লাহর শৈল্পিক নৈপুণ্য
প্রকাশক:
বৃক্ষরাজি
আল্লাহর সৃষ্টির শৈল্পিক নৈপুণ্য প্রকাশ করে থাকে। আল্লাহই সুনিপুণ স্রষ্টা। তিনি
সৃষ্টি করেছেন বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদরাজি। এসবই আমাদের উপকারার্থে আল্লাহ সৃজন
করেছেন। একই মাটি ও একই পানিতে আমরা বিভিন্ন উদ্ভিদ জন্মাতে দেখি, যাতে
বিভিন্ন ফুল ও ফল হয়। যেগুলি প্রাণীকুলের জীবনোপকরণের জন্য আল্লাহর বিশাল অনুগ্রহ।
আল্লাহ বলেন,فَلْيَنْظُرِ الْإِنْسَانُ
إِلَى طَعَامِهِ، أَنَّا صَبَبْنَا الْمَآءَ صَبًّا، ثُمَّ شَقَقْنَا الْأَرْضَ
شَقًّا، فَأَنْبَتْنَا فِيْهَا حَبًّا، وَعِنَبًا وَّقَضْبًا، وَزَيْتُونًا
وَّنَخْلاً، وَحَدَآئِقَ غُلْبًا، وَفَاكِهَةً وَّأَبًّا، مَتَاعًا لَّكُمْ
وَلِأَنْعَامِكُمْ- ‘অতএব মানুষ একবার লক্ষ্য করুক তার খাদ্যের দিকে। আমরা
(কিভাবে তাদের জন্য) বৃষ্টি বর্ষণ করে থাকি। অতঃপর ভূমিকে ভালভাবে বিদীর্ণ করি।
অতঃপর তাতে উৎপন্ন করি খাদ্য-শস্য,
আঙ্গুর
ও শাক-সবজি, যায়তূন ও খর্জুর, ঘন
পল্লবিত উদ্যানরাজি এবং ফল-মূল ও ঘাস-পাতা। তোমাদের ও তোমাদের গবাদিপশুর
ভোগ্যবস্ত্ত হিসাবে’।(আবাসা ৮০/২৪-৩২)
বৃক্ষরাজি আল্লাহর গুণগান করে: বৃক্ষরাজি থাকে রবের উদ্দেশ্যে সিজদাবনত। এগুলি আল্লাহর
গুণগান করে। আল্লাহ বলেন,أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللهَ
يَسْجُدُ لَهُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ وَالشَّمْسُ
وَالْقَمَرُ وَالنُّجُومُ وَالْجِبَالُ وَالشَّجَرُ وَالدَّوَآبُّ وَكَثِيرٌ مِّنَ
النَّاسِ وَكَثِيرٌ حَقَّ عَلَيْهِ الْعَذَابُ، وَمَنْ يُّهِنِ اللهُ فَمَا لَهُ
مِنْ مُّكْرِمٍ، إِنَّ اللهَ يَفْعَلُ مَا يَشَآءُ- ‘তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহকে
সিজদা করে যা কিছু আছে নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে এবং সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্ররাজি, পর্বতরাজি, বৃক্ষলতা, জীব-জন্তু
ও বহু মানুষ? আর বহু মানুষ আছে তাদের
উপর শাস্তি অবধারিত হয়েছে। বস্ত্ততঃ আল্লাহ যাকে লাঞ্ছিত করেন তাকে সম্মানদাতা কেউ
নেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ যা চান তাই-ই করেন’।(হাজ্জ ২২/১৮) তিনি বলেন, وَالنَّجْمُ وَالشَّجَرُ يَسْجُدَانِ- ‘আর লতাগুল্ম ও বৃক্ষরাজি সিজদাবনত’।(রহমান ৫৫/৬)
জান্নাতের আপ্যায়ন হবে ফলমূল দিয়ে: নানা রকম ফল-ফলাদি দিয়ে আল্লাহ জান্নাতবাসীকে আপ্যায়ন
করবেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,وَأَصْحَابُ الْيَمِينِ مَآ
أَصْحَابُ الْيَمِينِ، فِي سِدْرٍ مَّخْضُودٍ، وَطَلْحٍ مَّنْضُودٍ، وَظِلٍّ
مَّمْدُودٍ، وَمَآءٍ مَّسْكُوبٍ، وَفَاكِهَةٍ كَثِيرَةٍ، لاَ مَقْطُوعَةٍ وَّلاَ
مَمْنُوعَةٍ- ‘আর ডান পাশের দল। কতই না ভাগ্যবান ডান পাশের দল! (তারা
থাকবে) কাঁটাবিহীন কুল গাছের বাগানে। (সেখানে আরও থাকবে) কাঁদি ভরা কলা গাছ। তারা
থাকবে প্রলম্বিত ছায়াতলে। সদা প্রবাহমান পানির মধ্যে। থাকবে প্রচুর ফলমূলের মধ্যে।
যা শেষ হবে না, নিষেধও করা হবে না’।(ওয়াক্বি‘আহ ৫৬/২৭-৩৩)
বৃক্ষরোপণ ও সংরক্ষণের শারঈ গুরুত্ব ও
তাৎপর্য
বৃক্ষরোপণের
উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বৃক্ষরোপণ করতে হবে।
কেননা তাতে মানবজাতি ও প্রাণীকুলের বৃহত্তর কল্যাণ সাধিত হয়ে থাকে। তাই রাসূল
(ছাঃ) বৃক্ষরোপণ ও বৃক্ষপরিচর্যার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি নিজ হাতে
বৃক্ষরোপণ করেছেন। একে ইবাদত হিসাবে গণ্য করেছেন। তিনি তার উম্মতকে বৃক্ষরোপণ করতে
বারবার তাকীদ দিয়েছেন। যাতে উদ্ভিদ বৃদ্ধি পায় এবং পরিবেশের ভারসাম্য অক্ষুণ্ণ
থাকে।
(১) একটি চারা থাকলেও তা রোপণ করতে হবে :
কারো
কাছে একটি চারা থাকলেও তা রোপণ করার নির্দেশ দিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِنْ قَامَتِ السَّاعَةُ وَبِيَدِ أَحَدِكُمْ فَسِيلَةٌ فَإِنِ
اسْتَطَاعَ أَنْ لاَّ يَقُومَ حَتَّى يَغْرِسَهَا فَلْيَفْعَلْ، ‘যদি ক্বিয়ামত সংগঠিত হওয়ার সময়ও এসে যায়, আর
তোমাদের হাতে একটি চারা গাছ থাকে, তাহ’লে বসা অবস্থায় থাকলে দাঁড়ানোর পূর্বেই যেন সে তা রোপণ করে
দেয়’। [1]
(২) ছাদাকবার অনন্য মাধ্যম বৃক্ষরোপণ :
বৃক্ষরোপণের
মাধ্যমে ছাদাক্বার নেকী অর্জিত হয়। যেমন হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِى الدَّرْدَاءِ أَنَّ رَجُلاً مَرَّ بِهِ وَهُوَ يَغْرِسُ
غَرْساً بِدِمَشْقَ فَقَالَ لَهُ أَتَفْعَلُ هَذَا وَأَنْتَ صَاحِبُ رَسُولِ اللهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَقَالَ لاَ تَعْجَلْ عَلَىَّ سَمِعْتُ رَسُولَ
اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ مَنْ غَرَسَ غَرْساً لَمْ يَأْكُلْ
مِنْهُ آدَمِىٌّ وَلاَ خَلْقٌ مِّنْ خَلْقِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ إِلاَّ كَانَ لَهُ
صَدَقَةً
আবুদ্দারদা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা তিনি দামেশকে
বৃক্ষরোপণ করছিলেন।
এমতাবস্থায়
জনৈক ব্যক্তি তার পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় বলল, আপনি
এ কাজ করছেন, অথচ আপনি রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ)-এর ছাহাবী? তখন তিনি বললেন, আপনি
ব্যতিব্যস্ত হবেন না। আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, তিনি
বলেছেন, ‘যে
ব্যক্তি এমন বৃক্ষরোপণ করল, যা থেকে কোন মানুষ বা
আল্লাহর কোন সৃষ্টিজীব ভক্ষণ করল, তাতে তার জন্য ছাদাক্বা
রয়েছে’।[2]
অন্যত্র
তিনি বলেন,مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَغْرِسُ
غَرْسًا أَوْ يَزْرَعُ زَرْعًا، فَيَأْكُلُ مِنْهُ طَيْرٌ أَوْ إِنْسَانٌ أَوْ
بَهِيمَةٌ، إِلاَّ كَانَ لَهُ بِهِ صَدَقَةٌ، ‘কোন
মুসলমান যদি বৃক্ষ রোপণ করে বা ফসল চাষাবাদ করে, অতঃপর
তা থেকে পাখী, মানুষ অথবা চতুষ্পদ প্রাণী
কিছু খেয়ে নেয়, তবে তার জন্য সেটি
ছাদাক্বাহ হিসাবে গণ্য হবে’।[3]
(৩) রোপিত বৃক্ষের ফল চুরি হয়ে গেলেও তা ছাদাক্বা:
কারো
গাছের ফল অন্য কেউ না বলে খেলেও ছাদাক্বা হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَغْرِسُ غَرْسًا إِلاَّ كَانَ مَا أُكِلَ
مِنْهُ لَهُ صَدَقَةٌ وَمَا سُرِقَ مِنْهُ لَهُ صَدَقَةٌ وَمَا أَكَلَ السَّبُعُ
مِنْهُ فَهُوَ لَهُ صَدَقَةٌ وَمَا أَكَلَتِ الطَّيْرُ فَهُوَ لَهُ صَدَقَةً وَلاَ
يَرْزَؤُهُ أَحَدٌ إِلاَّ كَانَ لَهُ صَدَقَةٌ- ‘কোন মুসলিম যদি বৃক্ষ রোপণ করে, অতঃপর
তা থেকে যা কিছু খাওয়া হয় তা তার জন্য ছাদাক্বা স্বরূপ। যা কিছু চুরি হয়ে যায়, তা
ছাদাক্বা। হিংস্র পশু যা খেয়ে নেয়,
তা
ছাদাক্বা। সেখান থেকে পাখী যা খায়,
তা
ছাদাক্বা। আর কেউ ক্ষতি সাধন করলে সেটাও তার জন্য ছাদাক্বা হিসাবে গণ্য হয়’।[4]
(৪) বৃক্ষরোপণ ‘ছাদাক্বায়ে জারিয়া’র মাধ্যম:
বৃক্ষরোপণকে
‘ছাদাক্বায়ে জারিয়া’
বা
প্রবাহমান দান হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) এরশাদ করেন, سَبْعَةٌ يَّجْرِي لِلْعَبْدِ
أَجْرُهُنَّ وَهُوَ فِي قَبْرِهِ بَعْدَ مَوْتِهِ، مَنْ عَلَّمَ عِلْمًا أَوْ
كَرَى نَهَرًا أَوْ حَفَرَ بِئْرًا أَوْ غَرَسَ نَخْلاً أَوْ بَنَى مَسْجِدًا أَوْ
وَرَّثَ مُصْحَفًا أَوْ تَرَكَ وَلَدًا يَسْتَغْفِرُ لَهُ بَعْدَ مَوْتِهِ ‘মানুষের
মৃত্যুর পর তার কবরে ৭টি নেক আমলের ছওয়াব জারী থাকে। (১) যে ব্যক্তি (উপকারী) ইল্ম
শিক্ষা দিল বা (২) খাল-নালা প্রবাহিত করল অথবা (৩) কূপ খনন করল বা (৪) ফলবান
বৃক্ষরোপণ করল অথবা (৫) মসজিদ নির্মাণ করল বা (৬) কুরআনের উত্তরাধিকারী বানাল অথবা
(৭) এমন সুসন্তান রেখে গেল, যে মৃত্যুর পর তার জন্য
ক্ষমা প্রার্থনা করে’।[5]
অপর
এক হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ (ছাঃ) একদা
উম্মে মা‘বাদের বাগানে প্রবেশ করেন। তখন তিনি জিজ্ঞেস
করলেন, হে উম্মে মা‘বাদ!
এ গাছ কে রোপণ করেছে? কোন মুসলমান, না
কাফের? সে বলল, মুসলমান রোপণ করেছে। তখন
তিনি বললেন,فَلاَ يَغْرِسُ الْمُسْلِمُ
غَرْسًا فَيَأْكُلَ مِنْهُ إِنْسَانٌ وَلاَ دَابَّةٌ وَلاَ طَيْرٌ إِلاَّ كَانَ
لَهُ صَدَقَةً إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ، ‘কোন
মুসলমান যদি বৃক্ষরোপণ করে, আর তা থেকে মানুষ কিংবা
চতুষ্পদ প্রাণী অথবা পাখী কিছু ভক্ষণ করে,
তবে
ক্বিয়ামতের দিন পর্যন্ত তার জন্য তা ছাদাক্বা স্বরূপ থাকবে’।[6]
(৫) মুমিনের উপমা সবুজ বৃক্ষের ন্যায় :
সবুজ
বৃক্ষের সাথে মুমিনের সাদৃশ্য বিষয়ে প্রসিদ্ধ একটি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে যে,
عَنِ ابْنَ عُمَرَ يَقُولُ قَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ مَثَلُ الْمُؤْمِنِ كَمَثَلِ شَجَرَةٍ خَضْرَاءَ، لاَ يَسْقُطُ
وَرَقُهَا وَلاَ يَتَحَاتُّ. فَقَالَ الْقَوْمُ هِىَ شَجَرَةُ كَذَا هِىَ شَجَرَةُ
كَذَا، فَأَرَدْتُ أَنْ أَقُولَ هِىَ النَّخْلَةُ. وَأَنَا غُلاَمٌ شَابٌّ
فَاسْتَحْيَيْتُ، فَقَالَ : هِىَ النَّخْلَةُ. فَقَالَ عُمَرَ : لَوْ كُنْتَ
قُلْتَهَا لَكَانَ أَحَبَّ إِلَىَّ مِنْ كَذَا وَكَذَا، مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
নবী
করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘মুমিনের উপমা হ’ল
এমন একটি সবুজ বৃক্ষের ন্যায়, যার পাতা ঝরে পড়ে না এবং
মলিন হয় না। তখন কেউ বলল, এটি অমুক অমুক গাছ। তখন
আমি বলতে চেয়েছিলাম যে, এটি খেজুর গাছ। তবে আমি
অল্প বয়সী হওয়ায় বড়দের সামনে বলতে সংকোচ বোধ করলাম। তখন রাসূল (ছাঃ) বলে দিলেন যে, সেটি
হ’ল খেজুর গাছ। অতঃপর ওমর (রাঃ) বললেন, তুমি
যদি এটা সবার সামনে বলতে, তবে তা এত এত ধন-সম্পদ
থেকেও আমার জন্য বেশী খুশীর কারণ হ’ত’।[7]
উল্লেখ্য
যে, প্রতিটি বৃক্ষের পাতা,
কান্ড, ছাল-বাকল, ফলমূল
সবই যেমন আমাদের জন্য উপকারী, তেমনি প্রতিটি মুমিনের
কথা-বার্তা, আচার-আচরণ, লেনদেন
সবকিছুই অপর মুমিনের জন্য কল্যাণকর হওয়া উচিৎ। উল্লেখিত হাদীছে উক্ত শিক্ষাই দেওয়া
হয়েছে।
(৬) বিনা প্রয়োজনে বৃক্ষ নিধন নিষিদ্ধ :
মহান
আল্লাহর বিশেষ নে‘মত হ’ল
বৃক্ষ। বৃক্ষ প্রাণীকুলকে রোদের প্রচন্ড উত্তাপ থেকে ছায়া প্রদান করে। আমরা যত
সুস্বাদু ফল-মূল ভক্ষণ করি, সবই বৃক্ষ থেকে আহরিত।
মানবদেহের মরণব্যাধি অনেক রোগের ঔষধ এই বৃক্ষের নির্যাস
থেকেই তৈরী হয়। তাই প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) অপ্রয়োজনে বৃক্ষ নিধন করাকে
সম্পূর্ণরূপে নিষেধ করেছেন। যেমন তিনি বলেন,
مَنْ قَطَعَ سِدْرَةً صَوَّبَ
اللهُ رَأْسَهُ فِي النَّارِ ‘যে ব্যক্তি বিনা প্রয়োজনে কুল বৃক্ষ কর্তন করবে, আল্লাহ
তাকে অধোমুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন’।[8]
হযরত
আবুবকর (রাঃ) বৃক্ষ কর্তনের ব্যাপারে সাবধান করেছেন। যেমন তিনি ইয়াযীদ বিন আবি সুফিয়ানকে
শামে প্রেরণের সময় বিনা প্রয়োজনে কোন ফলবান বৃক্ষ কর্তন করতে নিষেধ করেছিলেন (نَهَى أَبُو بَكْرٍ
الصِّدِّيقُ يَزِيدَ أَنْ يَّقْطَعَ شَجَرًا مُّثْمِرًا)।[9]
(৭) বৃক্ষ নিধন আল্লাহর ক্রোধের কারণ :
যারা
নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করবে, তারা আল্লাহর ক্রোধের
শিকার হবে। আল্লাহ বলেন,وَإِذَا تَوَلَّى سَعَى فِي
الْأَرْضِ لِيُفْسِدَ فِيهَا وَيُهْلِكَ الْحَرْثَ وَالنَّسْلَ وَاللهُ لاَ
يُحِبُّ الْفَسَادَ- ‘যখন সে ফিরে যায় (অথবা নেতৃত্বে আসীন হয়), তখন
সে পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টির এবং শস্য ও প্রাণী বিনাশের চেষ্টা করে। অথচ আল্লাহ
অশান্তি পসন্দ করেন না’ (বাক্বারাহ ২/২০৫)। সুতরাং আমরা যেন পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি এবং
শস্যক্ষেত্র ও প্রাণী ধ্বংসের পাঁয়তারা করে আল্লাহর ক্রোধের শিকার না হই।
(৮) ইকোসিস্টেমের পরিমিতিতে বৃক্ষ :
আল্লাহর
বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনে পরিমিতভাবে সৃষ্টি হয়েছে বৃক্ষ। প্রত্যেক সৃষ্ট বস্ত্ত বা
বিষয়ের মধ্যেও আল্লাহ আভ্যন্তরীণ সম্পর্ক নির্ধারণ করেছেন। আল্লাহ বলেন,وَالْأَرْضَ مَدَدْنَاهَا وَأَلْقَيْنَا فِيهَا رَوَاسِيَ
وَأَنْبَتْنَا فِيهَا مِنْ كُلِّ شَيْءٍ مَّوْزُونٍ- ‘আর পৃথিবীকে আমরা বিস্তৃত করেছি এবং তাতে
পর্বতমালা স্থাপন করেছি। আর সেখানে আমরা প্রত্যেক বস্ত্ত উৎপন্ন করেছি পরিমিতভাবে’ (হিজ্র ১৫/১৯)। আল্লাহর সৃষ্টিসমূহের মধ্যে বৃক্ষ এক অনন্য
সৃষ্টি। এর রয়েছে বহুমুখী গুরুত্ব ও তাৎপর্য। বৃক্ষরাজি সহ সম্পূর্ণ ইকোসিস্টেমকে
বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করা আবশ্যক। কেননা তাতেই নিহিত রয়েছে গোটা প্রাণী জগৎ, ভৌত
জগৎ এবং তাদের মিথস্ক্রিয়া। এখানে মানুষ একটি উপাদান মাত্র এবং তার কল্যাণের জন্যই
প্রাকৃতিক ইকোসিস্টেম অবশ্য প্রয়োজন। অন্যথা মনুষ্যজাতি নিজেও একদিন বিপন্ন ও
বিলুপ্ত হয়ে পড়বে।
(৯) বৃক্ষরাজি ও প্রাণীজগত পরস্পর নির্ভরশীল :
বৃক্ষরাজি
ও প্রাণীজগতের মধ্যে এক গভীর সম্পর্ক। তাদের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে পারস্পরিক
নির্ভরশীলতা। বিশেষ করে মানুষ ও উদ্ভিদের পরস্পরের জীবনোপকরণের জন্য একে অন্যের
ওপর পূর্ণভাবে নির্ভরশীল। আল্লাহ মানুষকে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদায় আসীন করেছেন। আর
জগতের সবকিছুই তিনি কোন না কোনভাবে মানুষের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করেছেন। বৃক্ষ বা
তৃণলতাও মানুষের কল্যাণের জন্যই সৃজিত হয়েছে। আল্লাহ নিজেই এর গুরুত্ব সম্পর্কে
উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন,اَلَّذِي خَلَقَ فَسَوَّى،
وَالَّذِي قَدَّرَ فَهَدَى، وَالَّذِي أَخْرَجَ الْمَرْعَى، فَجَعَلَهُ غُثَآءً
أَحْوَى- ‘যিনি সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর বিন্যস্ত করেছেন। যিনি তৃণাদি
উৎপন্ন করেন। অতঃপর তাকে শুষ্ক-কালো বর্জ্যে পরিণত করেন’ (আ‘লা ৮৭/২-৫)। আল্লাহ এখানে বৃক্ষরাজি ও প্রাণীজগতের
পারস্পরিক নির্ভরশীলতা এবং পরিবেশের ভারসাম্যের কথা উল্লেখ করেছেন। যা পৃথিবীর
জন্য অত্যাবশ্যক।
পরস্পরের মাঝে সমন্বয় বিধানের তাৎপর্য :
আল্লাহর
কোন সৃষ্টিকেই অমর্যাদা করা উচিত নয়। প্রয়োজন হ’ল
তাকে যথার্থভাবে কাজে লাগানো। বৃক্ষরাজির পরিকল্পিত উৎপাদন ও ব্যবহারের ওপরই
মানুষের বহু কল্যাণ নিহিত রয়েছে। পৃথিবীতে বৃক্ষের পরিমাণ হ্রাস পেতে থাকলে
অক্সিজেনের অভাবে একসময় মানুষের নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হবে। এমনকি মানবজীবনের জন্য
এটা অত্যন্ত ক্ষতিকর ও মারাত্মক বিপর্যয়কর হয়ে উঠতে পারে। উদ্ভিদ ও পরিবেশ
বিজ্ঞানীরা এ আশঙ্কায়ই বৃক্ষ নিধনকে নিতান্ত ক্ষতির কারণ বলে উল্লেখ করেন এবং
বৃক্ষরোপণের প্রতি যথার্থ গুরুত্ব আরোপ করে থাকেন। পবিত্র কুরআনের উপরোক্ত আয়াতে
আমরা এ ভারসাম্যপূর্ণ সমন্বয় বিধানের দিকনির্দেশনা লাভ করি। আল্লাহ বলেন,
اَلشَّمْسُ وَالْقَمَرُ بِحُسْبَانٍ،... وَالْأَرْضَ وَضَعَهَا
لِلْأَنَامِ، فِيهَا فَاكِهَةٌ وَّالنَّخْلُ ذَاتُ الْأَكْمَامِ، وَالْحَبُّ ذُو
الْعَصْفِ وَالرَّيْحَانُ، فَبِأَيِّ آلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ
‘সূর্য ও চন্দ্র নির্ধারিত হিসাব মতে
সন্তরণশীল। বস্ত্ততঃ তিনি পৃথিবীকে স্থাপন করেছেন সৃষ্টিকুলের জন্য। যাতে রয়েছে
ফলমূল ও আবরণযুক্ত খর্জুর বৃক্ষ। আর রয়েছে খোসাযুক্ত শস্যদানা ও সুগন্ধি গুল্ম।
সুতরাং তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন নে‘মতকে
অস্বীকার করবে?’। (আর-রহমান ৫৫/৫, ১০-১৩)
এতে
বুঝা যায় যে, মহাকাশের
গ্রহ-নক্ষত্ররাজির নির্ধারিত কক্ষপথে আবর্তনের মাধ্যমে প্রাণীকুলের জন্য সৃজিত
পৃথিবীর মাটিকে তৃণলতা ও বৃক্ষরাজির ফলমূল ইত্যাদি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় তাপ
অথবা পানির এ ভারসাম্যপূর্ণ সমন্বয় বিধানের মাধ্যমে আল্লাহ জীবজগতকে ধ্বংসের হাত
থেকে রক্ষা করেছেন। আর তাই ইসলাম বৃক্ষরোপণে উৎসাহিত করে। সেকারণ ইহলৌকিক কল্যাণ ও
পারলৌকিক মুক্তির জন্য আমাদের ইসলামের দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় বৃক্ষরোপণ
ও তার যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।
(তত্থ সূত্র)
[1]আহমাদ হা/১৩০০৪, সনদ ছহীহ। [2]আহমাদ হা/২৭৫৪৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৪০০। [3]বুখারী হা/২৩২০; মুসলিম হা১৫৫২/;
মিশকাত
হা/১৯০০।
[4]মুসলিম হা/১৫৫২ (৭)। [5]বায়হাক্বী শো‘আব হা/৩১৭৫; ছহীহুত তারগীব হা/৭৩। [6]মুসলিম হা/১৫৫২ (১০); আহমাদ হা/১৩০২২।
[7]বুখারী হা/১৩১; মুসলিম হা/২৮১১। [8]আবুদাঊদ হা/৫২৩৯; মিশকাত হা/২৯৭০;
ছহীহাহ
হা/১৬১৪। [9]বায়হাক্বী হা/১৮৬১৬;তিরমিযী হা/১৫৫২সনদ ছহীহ
দ্বিতীয় পর্ব:
বৃক্ষরোপণ
ও বৃক্ষসম্পদ উন্নয়নের আবশ্যকতা:
মানব জীবনে বৃক্ষের গুরুত্ব ও অবদান : জীবজগতের জন্য আল্লাহর শ্রেষ্ঠ উপহার হ’ল বৃক্ষ। পরিবেশ ও জীবজগতের পরম বন্ধু এই
বৃক্ষ। বাস্তবে আমরা দেখি, বৃক্ষ আমাদের ফল-ফসল দেয়, ফুল দেয়, ছায়া দেয় ও কাঠ
দেয়। আর বিজ্ঞানের কল্যাণে আমরা জানতে পেরেছি যে, বৃক্ষ আমাদের আরও অনেক উপকার সাধন করে। যেমন মাটিকে উর্বর করে তোলে বৃক্ষ।
বেঁচে থাকার জন্য আমাদের অতীব প্রয়োজনীয় উপাদান অক্সিজেন আসে এই বৃক্ষ থেকে।
যেখানে বৃক্ষ বেশী থাকে, সেখানে বৃষ্টিপাতও বেশী হয়।
বন্যা-জলোচ্ছ্বাসে মাটির ক্ষয়রোধ, খরায় ছায়া, ঘূর্ণিঝড়, অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টি
হ্রাসে বৃক্ষের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বৃক্ষ ছাড়া প্রাণীকুলের জন্য পৃথিবীতে বসবাস
করা প্রায় অসম্ভব। পৃথিবীর শত কোটি মানুষের খাদ্য, ঔষধ, বস্ত্রের সুতা, ভারসাম্যপূর্ণ আবহাওয়া, পরিষ্কার পানি প্রবাহ, কৃষি জমিতে উৎপাদন বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করা ইত্যাদির ক্ষেত্রে বৃক্ষ অতীব
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর বৃক্ষহীন রুক্ষ মাটি দেশের জন্য, দশের জন্য অভিশাপ স্বরূপ। মোটকথা পৃথিবী বাসোপযোগী থাকা ও
মানুষের জীবন ধারণের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে এই বৃক্ষ। সুতরাং আমাদের জীবনে
বৃক্ষের গুরুত্ব ও অবদান অপরিসীম।
বৃক্ষের বিনিময়ে মুক্তিপণ: খায়বারের ইহূদীদের ভয়াবহ চক্রান্ত ও দুষ্কর্মের কারণে রাসূল (ছাঃ) সপ্তম
হিজরীতে সেখানে অভিযান পরিচালনা করেন। খায়বার বিজয়ের পর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
সেখানকার ইহূদীদেরকে নির্মূল করতে চেয়েছিলেন এবং তারা সবকিছু ফেলে জান নিয়ে চলে
যেতে রাযীও হয়েছিল। কিন্তু কতিপয় ইহূদী নেতার আবেদনের প্রেক্ষিতে উৎপন্ন ফল-ফসলের
অর্ধাংশ প্রদানের বিনিময়ে রাসূল (ছাঃ) তাদের এ প্রস্তাবে সাময়িকভাবে সম্মত হ’ন। যেমন
হাদীছে এসেছে,
أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَفَعَ إِلَى
يَهُودِ خَيْبَرَ نَخْلَ خَيْبَرَ وَأَرْضَهَا عَلَى أَنْ يَّعْتَمِلُوهَا مِنْ
أَمْوَالِهِمْ وَلِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَطْرُ
ثَمَرِهَا- ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খায়বারের খেজুর গাছের বাগান ও জমি
সেখানকার ইহুদীদেরকে দিয়েছিলেন। তারা নিজেদের অর্থে তাতে কাজ করবে। আর রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) তার ফলের অর্ধাংশ পাবেন’।[1] উপরোক্ত হাদীছে ভূমি আবাদ ও গাছের ফলমূলের মুক্তিপণের
বিনিময়ে রাসূল (ছাঃ) ইহুদীদের সাময়িকভাবে ছাড় দিয়েছিলেন বলে প্রতীয়মান হয়। তবে ওমর
(রাঃ)-এর খেলাফতকালে তাদেরকে খায়বার থেকে বহিষ্কার করা হয়।[2]
আবাদেই মালিকানা : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَنْ عَمَّرَ أَرْضاً لَيْسَتْ لأَحَدٍ فَهُوَ أَحَقُّ بِهَا- ‘যে ব্যক্তি
এমন জমি আবাদ করেছে, যা অন্য কারও মালিকানায় নেই; সে ব্যক্তিই তার হকদার। তাবেঈ উরওয়া বিন যুবায়ের (রহঃ) বলেন, ওমর (রাঃ) তাঁর খেলাফতকালেও মুসলমানদের জন্য একই হুকুম
দিয়েছিলেন’।[3] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ أَحْيَا أَرْضًا مَيْتَةً فَهِيَ لَهُ، وَلَيْسَ
لِعِرْقٍ ظَالِمٍ حَقٌّ- ‘যে ব্যক্তি পতিত অনাবাদী ভূমি চাষাবাদের উপযোগী করে, সেটা তার হক। অন্যায়ভাবে যবর দলখকারীর কোন হক নেই’।[4] উল্লেখিত হাদীছদ্বয়ে পতিত অনাবাদী ভূমি আবাদেই সাময়িক
মালিকানা প্রদান সাব্যস্ত হয়।
বৃক্ষের অপরিহার্যতা : শিশুর পুষ্টি ও সুষম বিকাশের জন্য মাতৃদুগ্ধ যেমন অপরিহার্য, তেমনি জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষার জন্যও বৃক্ষ অপরিহার্য।
পরিবেশ শান্ত-শীতল ও মনোমুগ্ধকর রাখে বৃক্ষ। বৃক্ষ আল্লাহর অপরূপ সৃষ্টি। পৃথিবীর
শোভাবর্ধনে বৃক্ষের অবদান অপরিসীম। চৈত্রের খরতাপে বৃক্ষের ঝিরিঝিরি বাতাস আমাদের
দেহ-মন শীতল করে। নির্মল বায়ু স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। গ্রীষ্মের উত্তপ্ত রৌদ্রে
বৃক্ষছায়া প্রশান্তি ও স্বস্তি আনে। প্রচুর পরিমাণ বৃক্ষ থাকলে পরিবেশের ভারসাম্য
বজায় থাকে। ফলে মানুষ সহজে রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় না। জমির উর্বরাশক্তি ও ফলন
বাড়াতে বৃক্ষের অবদান অপরিসীম। এমনকি গবাদিপশুর জন্য ঘাসের উৎপাদন বাড়াতেও রাসূল
(ছাঃ)-এর নির্দেশনা রয়েছে। তিনি বলেন,لاَ يَمْنَعْ أَحَدُكُمْ فَضْلَ مَاءٍ لِيَمْنَعَ
بِهِ الْكَلأَ- ‘তোমাদের কেউ যেন ঘাস উৎপাদনে বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে
উদ্বৃত্ত পানি ব্যবহারে কাউকে বাধা না দেয়’।[5]
গাছের ডালপালা দিয়ে মিসওয়াক : মিসওয়াক করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। মুখকে পরিচ্ছন্ন ও দুর্গন্ধ মুক্ত
রাখার জন্য এবং রোগ-জীবাণু থেকে বাঁচানোর জন্য সর্বদা দাঁত পরিষ্কার রাখা যরূরী।
আয়েশা (রাঃ) বলেন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, اَلسِّوَاكُ مَطْهَرَةٌ لِّلْفَمِ مَرْضَاةٌ
لِّلرَّبِّ- ‘মিসওয়াক হ’ল মুখ পরিষ্কারকারী এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায়’।[6] গাছের কাঁচা বা শুকনো যেকোন ডালের মাধ্যমে যেকোন সময়
মিসওয়াক করা যায়।[7] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) লম্বা ডাল দিয়ে মিসওয়াক করতেন (ঐ)। তিনি বলেন,لَوْلاَ أَنْ أَشُقَّ عَلَى
أُمَّتِي، لَأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ عِنْدَ كُلِّ صَلاَةٍ- ‘আমার
উম্মতের উপর কষ্টকর মনে না করলে আমি তাদেরকে প্রতি ছালাতের পূর্বে মিসওয়াক করার নির্দেশ
দিতাম’।[8] যদিও শায়েখ উছায়মীন, শায়েখ বিন বায ও আব্দুর রহমান জিবরীন (রহঃ) বলেন, ব্রাশ-পেস্ট ব্যবহার করলেও মিসওয়াক করার সুন্নাত আদায় হয়ে
যাবে। কেননা শুধু মিসওয়াক ব্যবহারের চেয়ে ব্রাশ-পেস্ট ব্যবহারে মুখ বেশী পরিষ্কার
হয় এবং মুখকে দুর্গন্ধ মুক্ত রাখে।[9]
বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে বৃক্ষ রোপণের আবশ্যকতা: উন্নয়নশীল দেশগুলি নিজেদের দেশকে উন্নত দেশে রূপান্তরিত করার চেষ্টায় অবিরাম
ছুটে চলছে। অন্যদিকে উন্নত দেশগুলি নিজেদেরকে আরও সমৃদ্ধশালী করতে অবিরাম চেষ্টা
চালিয়ে যাচ্ছে। আর এসব করতে গিয়ে সমস্ত চাপ এসে পড়ছে বনাঞ্চলের উপর। উন্নত
দেশগুলিতে অধিক হারে বৃক্ষনিধনের ফলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর
কার্বনডাই অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বায়ুমন্ডলের ওযন স্তরে ফাটল ধরছে। যার
ফলে আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত নিত্য-নতুন সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। আর এই সকল সমস্যা থেকে
উত্তরণের জন্য আমাদেরকে বেশী বেশী বৃক্ষরোপণ করতে হবে।
আবহাওয়া পরিবর্তন রোধে বৃক্ষরোপণ: বৃক্ষের সংখ্যা কমে যাওয়ায় আবহাওয়ার আচরণ বদলে যাচ্ছে। গরমের সময় ঠান্ডা, ঠান্ডার সময় গরম পড়ে, বর্ষাকালে স্বল্প পরিমাণে বৃষ্টি হয়। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে কৃষি উৎপাদন
হ্রাস পাচ্ছে। তাই পরিবেশ বাঁচাতে বৃক্ষ রোপণের বিকল্প নেই। মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বৃক্ষরোপণে উৎসাহিত করা যেতে
পারে। ‘পাঠচক্র’ বা ‘বই মেলা’র ন্যায় ‘বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী’ পালন করা যেতে পারে। মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে এ
কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।
গ্রীন হাউজ ইফেক্ট প্রতিরোধে বৃক্ষ রোপণ: বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা মতে, পৃথিবীর দক্ষিণ মেরুতে অবস্থিত বরফের চাদরে
আচ্ছাদিত মহাদেশ এন্টার্কটিকা থেকে প্রতি বছর ষোল হাজার কোটি টন বরফ গলে যাচ্ছে।
ফলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে উপকূলীয় অঞ্চলগুলো ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা
দেখা দিচ্ছে। আর সমুদ্র পৃষ্ঠের পানি যদি ১ মিটারও বাড়ে, তাহ’লে পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ, বিশেষ করে মালদ্বীপ ও বাংলাদেশের মত দেশগুলির উপকূলীয় অঞ্চলগুলির বহুলাংশ ১০
ফুট পানির নীচে তলিয়ে যেতে পারে। সেকারণ এর থেকে রেহাই পেতে হ’লে আমাদেরকে
অধিকহারে বৃক্ষরোপণ করতে হবে। কেননা এই বৃক্ষকুল গ্রীন হাউজ ইফেক্ট ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন
প্রতিরোধ করে পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
বায়ুদূষণ রোধে বৃক্ষ রোপণ: বৃক্ষ পরিবেশ থেকে ক্ষতিকর কার্বনডাই অক্সাইড গ্রহণ করে অক্সিজেন নিঃসরণ করে।
কিন্তু অধিকহারে বৃক্ষনিধনের ফলে দিন দিন বাতাসে কার্বনডাই অক্সাইডের পরিমাণ
বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃক্ষহীনতার
ফলে বায়ু দূষণের জন্য দায়ী অন্যান্য উৎসগুলিকেও পরিবেশ নিজ সক্ষমতায় পরিশোধন করতে
পারছে না। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে বায়ুদূষণ এবং এই কারণে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে বায়ুবাহিত
বিভিন্ন প্রাণঘাতী রোগে। তাই বায়ুদূষণ এবং তার থেকে সৃষ্ট রোগবালাই থেকে মুক্ত
থাকতে আমাদেরকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বনায়ন নিশ্চিত করতে হবে। বছরে একটি প্রাপ্তবয়ষ্ক
বড় বৃক্ষ বাতাস থেকে ২৭ কেজির অধিক ক্ষতিকারক গ্যাস কার্বনডাই অক্সাইড শোষণ করে
এবং ১০টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের সমপরিমাণ তাপ নিয়ন্ত্রণ করে আবহাওয়াকে
নাতিশীতোষ্ণ রাখে। আল্লাহর সৃষ্টি নৈপুণ্যের অন্যতম হ’ল বৃক্ষ
থেকে অক্সিজেন তৈরী। বৃক্ষের সবুজ পাতার ক্লোরোফিল ও সূর্যালোকের সমন্বয়ে সালোক
সংশ্লেষণের মাধ্যমে এক ধরনের রন্ধন প্রক্রিয়ায় বিষাক্ত এই কার্বনডাই অক্সাইড
অক্সিজেনে পরিণত হয়। আর কার্বনডাই অক্সাইড বৃক্ষের জন্য শ্বসন ক্রিয়া ও শর্করা
জাতীয় খাদ্যের যোগান দেয়’।[10]
ভূমির ক্ষয়রোধে বৃক্ষরোপণ: বনভূমি ধ্বংসের ফলে ভূমিক্ষয় বৃদ্ধি পায় এবং ক্ষরা ও মরুকরণ দেখা দেয়। তাই
ভূমিক্ষয় রোধের জন্য বৃক্ষরোপণ করা খুবই প্রয়োজন। সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস, বন্যা ও ভূমিক্ষয় রোধে উপকূলীয় অঞ্চলগুলিতে সবুজ বেষ্টনী
গড়ে তোলা আবশ্যক। সেজন্য বলা হয় যে, ‘দেশের বায়ু দেশের মাটি, গাছ লাগিয়ে করবো খাঁটি’।
বজ্রপাত নিরোধে বৃক্ষরোপণ: বজ্রপাত নিরোধে তাল ও নারিকেল গাছ রোপণের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। বজ্রপাত
নিরোধে তালগাছ রোপণ করে ইতিমধ্যেই সুফল পেয়েছে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম। আর এজন্যই
বজ্রপাতের ক্ষয়-ক্ষতি কমাতে দেশব্যাপী তালবীজ রোপণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জানা
গেছে যে, বজ্রপাতের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধে
দেশ জুড়েই তাল ও নারিকেল গাছ রোপণের উদ্যোগ নিয়েছে পরিবেশ, বন ও আবহাওয়া পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। তাল ও নারিকেল পাতার আগা
সূচালো হওয়ায় এগুলি বজ্রপাত রোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সবুজ এই প্রযুক্তিকে কাজে
লাগানো হ’লে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার অনেকটাই কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শক্ত মযবূত গভীরমূলী বৃক্ষ বলে ঝড়-তুফান, টর্নেডো, বাতাস প্রতিরোধ এবং মাটির ক্ষয়রোধে তাল ও
নারিকেল গাছের ভূমিকা অনস্বীকার্য। প্রচলিত আছে যে, বজ্রপাত হ’লে সেটি তালগাছ বা অন্য বড় কোন গাছের উপর পড়ে। আর বজ্রপাতের
বিদ্যুৎ রশ্মি গাছ হয়ে তা মাটিতে চলে যায়। এতে মানুষের তেমন ক্ষয়-ক্ষতি হয় না।
ছাদকৃষি ও ছাদবাগান: যদি ছাদকৃষি ও ছাদবাগানের মাধ্যমে বাসা-বাড়ীর ছাদগুলিকে একটুখানি সবুজায়ন করা
যায়,
তাহ’লে টপ ফ্লোরের তাপমাত্রা কমে আসবে। পরিবেশ
বিজ্ঞানীদে মতে, ছাদবাগান বাইরের তাপমাত্রার চেয়ে ঘরের
তাপমাত্রা প্রায় ১.৭৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস কমাতে সাহায্য করে। সুতরাং শুধুমাত্র শখে নয়, বরং পরিবেশ রক্ষায় ছাদবাগান প্রয়োজন। সবজির একটা গাছ তিন
মাসের জন্য ৩ জনের অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে। আর শহরে ফাঁকা ময়দান কম। সেজন্য
নতুন বাড়ীর অন্তত ২৫ শতাংশ ছাদে বাগান করা যেতে পারে। শুধু পরিবেশগত দিকই নয়, বরং ছাদবাগানে বাড়ীর মালিক-ভাড়াটিয়ারা অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান
হ’তে পারেন। শখের পাশাপাশি বাণিজ্যিক বিবেচনায় অনেকেই ছাদবাগান করে সফলতা
পেয়েছেন।
একটি বৃক্ষ একটি প্রাণ: গাছপালার উপর আমরা নির্ভরশীল খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, ঔষধ, আসবাবপত্র, জ্বালানী, নির্মল বায়ু এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য।
গাছপালার সুন্দর শ্যামলিমা আমাদের মনে অনাবিল আনন্দ সৃষ্টি করে। (১) আমরা প্রধানতঃ
কি খাই?
কেউ ভাত, আবার কেউ রুটি খাই। ভাত আসে মূলতঃ ধান থেকে, আর রুটি আসে গম থেকে। এ দু’টিই কৃষিজ উদ্ভিদ থেকে উৎপন্ন হয়। কারণ খাদ্যের জন্য এদের
চাষাবাদ করা হয়। (২) আবার ভাত বা রুটির সঙ্গে আমরা তরকারী খাই। তরকারী উদ্ভিদ
থেকেই আসে। তরি-তরকারীর মধ্যে আলু, কচু, ডাটা, ওলকপি প্রভৃতিকে ‘কান্ড সবজি’ বলা হয়। কারণ তারা উদ্ভিদের কান্ড। (৩) মূলা, মিষ্টি আলু, শাক আলু, গাজর, শালগম, বীট প্রভৃতি হ’ল ‘মূল সবজি’। কারণ এসব গাছের মূলই সাধারণতঃ সবজি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। (৪)
বাঁধাকপি, পালংশাক, পুঁইশাক, লেটুস প্রভৃতি হ’ল ‘পাতা সবজি’। ফুলকপি, ব্রকলি প্রভৃতি ‘ফুল সবজি’। (৫) আর লাউ, কুমড়া, শশা, খিরা, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, কাকরোল, পটল, শিম, বেগুন, ঢেঁড়শ, পেঁপে, বরবটি প্রভৃতি হ’ল ‘ফল সবজি’। (৬) মসুর, মুগ, মটর, ছোলা প্রভৃতি ডাল এরা বিভিন্ন উদ্ভিদের
শস্যফল। ডালে প্রচুর আমিষ থাকে। এছাড়াও অন্যান্য খাদ্যশস্যের মধ্যে রয়েছে ভুট্টা, যব, কাউন ইত্যাদি। সকল সবজি আমরা পেয়ে থাকি বিভিন্ন উদ্ভিদ থেকে। সেকারণ এক একটি
বৃক্ষ এক একটি প্রাণের মত কাজ করে।
ফলজ, বনজ ও ভেষজ বৃক্ষ: স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীদের মতে, আহারের পর ফল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তাছাড়া সুস্থ
শরীর গঠনের জন্য ফল অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। (ক) ফলে বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন আছে। সব
রকম ফলই গাছপালা থেকে পাওয়া যায়। রসগোল্লা, চমচম, সন্দেশ, মিষ্টি, সেমাই, পায়েস প্রভৃতি কে-না পসন্দ করে! মিষ্টি তৈরীর জন্য প্রয়োজন চিনি বা গুড়। আর
এগুলি আসে ইক্ষু, তাল, খেঁজুর প্রভৃতি গাছপালার সুমিষ্ট রস থেকে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে। (খ) শীত
নিবারণ ও শরীর ঢাকার জন্য চাই বস্ত্র। শালীন বস্ত্র সভ্য সমাজের জন্য আল্লাহর
বিশেষ দান (আ‘রাফ ৭/২৬)। সুতা দিয়ে বস্ত্র
তৈরী হয়। আর সুতা আসে বনজ বৃক্ষের তুলা থেকে। তুলা হ’ল কার্পাস
গাছের বীজের বর্ধিত কিছু ত্বকলোম। পাট এবং পাটজাতীয় অাঁশ থেকেও কিছু বস্ত্র তৈরী
করা হয়। অর্থাৎ বস্ত্রের জন্যও আমরা উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল। (গ) মাছ-গোশত-সবজি
প্রভৃতি কাঁচা খাওয়া যায় না। তাই এদের রান্না করতে হয়। রান্না করতে এদের সঙ্গে
লাগে বিভিন্ন প্রকার মসলা এবং তেল। মসলা এবং তেলও কিন্তু ভেষজ উদ্ভিদেরই অংশ।
এগুলি ভেষজ গুণসম্পন্ন এবং পশু ও মানুষের রোগনিবারক উদ্ভিদ। মসলার মধ্যে জিরা, ধনিয়া, মরিচ, এলাচ, গোলমরিচ প্রভৃতি
ভেষজ ফল। লবঙ্গ ফুলের কুঁড়ি। জাফরান ফুলের গর্ভদন্ড। যাকে ইংরেজিতে বলে স্টিগমা (Stigma)। দারুচিনি গাছের
বাকল। তেজপাতা, পুদিনা, ধনিয়া প্রভৃতি গাছের পাতা। রসুন, পেঁয়াজ প্রভৃতি রসালো শল্কপত্র। আদা, হলুদ প্রভৃতি মাটির নিচের কান্ড। তেলের মধ্যে রাইস ব্রান, সরিষা, তিল, বাদাম, পাম, ক্যানোলা, সয়াবিন, সূর্যমুখী তেল, ভুট্টার তেল, অলিভ ওয়েল, নারিকেল প্রভৃতি প্রধান। আর এগুলির তেল বীজ থেকে পেষণের মাধ্যমে আহরণ করা হয়।
বৃক্ষ থেকে জীবন রক্ষাকারী ঔষধ: আমাদের চারদিকে রয়েছে রোগ-জীবাণুর ছড়াছড়ি। তাই আমরা মাঝে-মধ্যে অসুস্থ হয়ে
পড়ি। কখনও সামান্য অসুস্থ হই, আবার কখনও গুরুতর
অসুখে পড়ি। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত ঔষধ। জীবন রক্ষাকারী ভেষজ বিভিন্ন
ঔষধের মূল্যবান উপাদানও আমরা বৃক্ষ থেকে পাই। হোমিওপ্যাথী, অ্যালোপ্যাথী, ইউনানী ও আয়ুর্বেদী সহ সকল প্রকার চিকিৎসা পদ্ধতির শতকরা প্রায় নববই ভাগ ঔষধই
বিভিন্ন গাছপালা থেকে সংগ্রহ করা হয়। আর পথ্যের অধিকাংশই আসে উদ্ভিদ থেকে।
পেনিসিলিন (Penicillin), টেরামাইসিন (Terramycin), স্ট্রেপ্টোমাইসিন (Streptomycin), এমোক্সিসিলিন (Amoxicillin), অ্যাম্পিসিলিন (Ampicillin), নাফসিলিন (Nafcillin), এরোমাইসিন (Eromycin), এরিথ্রোমাইসিন (Erythromycin) প্রভৃতি মহামূল্যবান অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ অতিক্ষুদ্র
বিভিন্ন উদ্ভিদ থেকে সংগ্রহ করা হয়।
সভ্যতা বিনির্মাণে বৃক্ষ: (১) আমরা যে ঘরে বসবাস করি, তা দালান হ’লে তাতে চাই
কাঠের সুন্দর দরজা-জানালা। বিভিন্ন অভিজাত আসবাবপত্র বৃক্ষের কাঠ থেকেই বানানো হয়।
আর যদি তা বাঁশ বা কাঠ নির্মিত ঘর হয় তবে তো আর কথাই নেই, সম্পূর্ণটাই উদ্ভিদ নির্ভর। ইট পোড়াতেও কিন্তু খড়ি বা কয়লার
দরকার হয়। খড়ি সরাসরি গাছপালা থেকেই আসে। আর কয়লা আসে খনি থেকে।
(২) কাগজ হ’ল সভ্য
জগতের অতীব প্রয়োজনীয় বস্ত্ত। যে বই পড়ে জ্ঞান আহরণ করা হয়, তার জন্য চাই কাগজ। কাগজের প্রধান উপকরণও কিন্তু উদ্ভিদ। যে
কাগজে খবর ছাপা হয় তা হ’ল নিউজপ্রিন্ট। আমাদের দেশে নিউজপ্রিন্ট উৎপন্ন হয়। এর
কাঁচামাল সুন্দরবনের গেওয়া গাছ। আর সাদা কাগজের প্রধান কাঁচামাল হ’ল বাঁশ ও
আখের ছোবড়া।
(৩) বিরতিহীনভাবে
কাজ করতে করতে অথবা পড়তে পড়তে আমরা যখন একটু ক্লান্ত ও অবসাদগ্রস্ত হই, তখন এক কাপ চা বা কফি পান করি। আর ‘চা’ আসে চা
গাছের কচি পাতা থেকে। আর ‘কফি’ আসে কফি
গাছের বীজ থেকে।
বৃক্ষপূজা হ’তে বিরত থাকুন!
বৃক্ষের বিবিধ
উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অবগত হ’লাম। এজন্য আবার বিশেষ কোন বৃক্ষকে বিশেষ সময়ে যেন পূজা না
করি। কেননা বৃক্ষরাজি নিজেই আল্লাহর উদ্দেশ্যে সিজদাবনত থাকে। যেমন আল্লাহ বলেন,وَالنَّجْمُ وَالشَّجَرُ
يَسْجُدَانِ- ‘আর তৃণলতা ও বৃক্ষরাজি উভয়ে থাকে সিজদাবনত’। (আর-রহমান ৫৫/৬)
অষ্টম হিজরীতে
হোনায়েন যুদ্ধে যাওয়ার পথে ছাহাবায়ে কেরাম ‘যাতু আনওয়াত্ব’ (ذَاتُ أَنْوَاطٍ) নামক একটি বড় বৃক্ষ দেখতে পান। মুশরিকরা
গাছটিকে ‘মঙ্গলবৃক্ষ’ বলে ধারণা করে তার ডালে সমরাস্ত্র সমূহ
ঝুলিয়ে রাখত। তা দেখে ছাহাবীদের কেউ বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! তাদের ‘যাতু আনওয়াত্বে’র ন্যায়
আমাদের জন্য একটা ‘যাতু আনওয়াত্বে’র ব্যবস্থা করুন। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
আশ্চার্যান্বিত হয়ে বলে উঠলেন, ‘সুবহানাল্লাহ! এটিতো সেরূপ মারাত্মক কথা যেরূপ কথা মূসার
কওম বলেছিল, اِجْعَل لَّنَا إِلٰهًا كَمَا لَهُمْ آلِهَةٌ، ‘তাদের যেমন
অনেক উপাস্য রয়েছে তদ্রুপ আমাদের জন্যও একজন উপাস্যের ব্যবস্থা করে দিন’ (আ‘রাফ ৭/১৩৮)। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) বললেন, وَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ لَتَرْكَبُنَّ سُنَنَ مَنْ كَانَ
قَبْلَكُمْ- ‘সেই সত্তার কসম করে বলছি যাঁর হাতে আমার জীবন নিহিত, অবশ্যই তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতি অবলম্বন করবে’।[11] অতএব বিভিন্ন
দরগাহ-খানক্বাহ ও মাযারে বিবিধ নিয়তে সুতা গিঁট দেওয়া ও নানাবিধ বৃক্ষপূজার
কুসংস্কার থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
বনাঞ্চল উন্নয়নে প্রস্তাবনা: দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অন্যান্য চাহিদা পূরণের জন্য বনভূমি ও ফলজ, বনজ এবং ভেষজ সম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু আমাদের দেশে
প্রয়োজনের তুলনায় গাছপালার পরিমাণ অত্যন্ত কম। অবাধে বৃক্ষ নিধনের ফলে দেশে বনভূমি
সংকুচিত হয়ে আসছে। কিন্তু আমাদের সার্বিক প্রয়োজনে এই সম্পদের সংরক্ষণ ও
সম্প্রসারণ করা অতীব প্রয়োজন। আর এজন্য যা করণীয়-
(১) অবাধে
বৃক্ষনিধনকারীদের প্রতিহত করতে হবে। (২) নতুন নতুন বনভূমি গড়ে তুলতে হবে। পতিত জমি, সরকারী খাস জমি, নদী তীর, বাঁধ, পাহাড়ী এলাকা ও উপত্যকা, রাস্তা ও রেল
লাইনের দু’পাশে এবং সমুদ্র উপকূলে প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগাতে হবে। (৩)
জনসাধারণের মধ্যে বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে চারাবৃক্ষ বিতরণ, রোপণ ও সংরক্ষণের ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। (৪) দেশের
কোন মাটিও যেন অনাবাদী না থাকে, সেজন্য বৃহৎ জাতীয়
পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। বছরে যেন গড়ে কমপক্ষে ৩টি ফসল উৎপন্ন হয়, সেজন্য কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। (৫) সরকারী
তত্ত্বাবধানে বনাঞ্চল সংরক্ষণ ও বৃক্ষরোপণ করতে হবে। বনজ সম্পদ রক্ষায় ও এর
উন্নয়নের জন্য বনবিভাগের কর্মকর্তাদের যথেষ্ট প্রশিক্ষণ দিতে হবে। (৬) ১টি বৃক্ষ
কাটা হ’লে তদস্থলে কমপক্ষে ৩টি নতুন বৃক্ষরোপণ করে সেই শূন্যতা
পূরণ করতে হবে। সেই সাথে জ্বালানী কাঠের বিকল্প তৃণমূল পর্যায়ে সম্প্রসারিত করতে
হবে। (৭) বৃক্ষরোপণ অভিযানকে শুধুমাত্র একটি সপ্তাহে সীমাবদ্ধ না রেখে পুরা
বর্ষাকাল ও বছরের অন্যান্য সময়ে তা চালিয়ে যেতে হবে।
উপসংহার : বিশ্ব মানবতার শেষনবী হযরত
মুহাম্মাদ (ছাঃ) বৃক্ষরোপণ ও সংরক্ষণের প্রতি তাকীদ দিয়েছেন। নিবন্ধে উল্লেখিত
কুরআনে কারীমের আয়াত সমূহ ও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছহীহ হাদীছ সমূহ যার বাস্তব
প্রমাণ। সেই সাথে বিশ্বের সমকালীন পরিবেশবিদগণ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষ
রোপণের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছেন। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সমূহ, ইন্টারনেট, সভা-সেমিনার, রেডিও-টিভিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ বিষয়ে ফলাওভাবে প্রচারণা
চালানো উচিৎ। অতএব পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং বিশ্বকে ফুলে-ফলে সুশোভিত ও
সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে এবং পৃথিবীর অস্তিত্ব রক্ষায় বৃক্ষরোপণের প্রতি আমাদেরকে
সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন- আমীন!
[1].মুসলিম হা/১৫৫১; মিশকাত হা/২৯৭২ রাবী আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ)।
[2]. ইবনু হিশাম, আস-সীরাতুন নববিইয়াহ ২/৩৫৭ পৃ.; ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ৪/২১৯
প্রভৃতি। [3].আহমাদ হা/২৪৯২৭; মিশকাত হা/২৯৯১ রাবী আয়েশা (রাঃ)। [4].আবূদাঊদ হা/৩০৭৩; তিরমিযী হা/১৩৭৮; মিশকাত
হা/২৯৪৪ রাবী সাঈদ বিন যায়েদ (রাঃ)। [5]. ইবনু মাজাহ হা/২৪৭৮; বুখারী হা/২৩৫৩; মুসলিম
হা/১৫৬৬ রাবী আবূ হুরায়রা (রাঃ)। [6].আহমাদ হা/২৪৩৭৭; নাসাঈ হা/৫; মিশকাত হা/৩৮১
হাদীছ ছহীহ।
[7].বুখারী ‘ছিয়াম’ অধ্যায়, ‘ছিয়াম পালনকারীর জন্য কাঁচা ও শুকনা বস্ত্ত দ্বারা মিসওয়াক
করা’ অনুচ্ছেদ-২৭; তরজমাতুল বাব-২৭, ৭/২৩৪ পৃ.; لاَ بَأْسَ أَنْ يَّسْتَاكَ
الصَّائِمُ بِالسِّوَاكِ الرَّطْبِ وَالْيَابِسِ-মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/৯১৭৩, ২/২৯৬ পৃ., রাবী আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ)।
[8].আবুদাঊদ হা/৪৭; বুখারী হা/৮৮৭; মুসলিম
হা/২৫২; মিশকাত হা/৩৭৬ রাবী
আবু হুরায়রা (রাঃ)।
[9]. শায়েখ ছালেহ আল-উছায়মীন (১৩৪৭-১৪২১ হি./১৯২৯-২০০১ খৃ.), ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দার্ব, ৭/২ পৃ.; শায়েখ বিন বায, উছায়মীন এবং
আব্দুর রহমান আল-জিবরীন সমন্বয়ে সংকলিত; ফাতাওয়া ইসলামিইয়াহ (রিয়ায : দারুল ওয়াত্বান, ১৪১৩-১৪১৫ হিজরীতে ৪ খন্ডে প্রকাশিত) ২/১২৭ পৃ.।
[10]. ড. সরোজ কান্তি সিংহ হাজারী এবং অধ্যাপক হারাধন নাগ, রসায়ন প্রথম পত্র : একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী (ঢাকা : হাসান
বুক হাউস, চতুর্থ সংস্করণ
২০১৯)।
[11]. তিরমিযী হা/২১৮০; ছহীহ ইবনু
হিববান হা/৬৭০২; আহমাদ হা/২১৯৫০; মিশকাত হা/৫৪০৮ রাবী আবু ওয়াক্বেদ লাইছী (রাঃ)।
No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com