ইসলামে বৃক্ষরোপণ
এম এ রাজ্জাক হাওলাদার
সূচনা:
প্রকৃতি মানুষ ছাড়া বাঁচতে পারে, মানুষ প্রকৃতি ছাড়া বাঁচতে পারে না। আবার
প্রকৃতি মানুষ থেকে কিছুই না নিয়ে বাঁচতে পারে, মানুষ পারে না। এমনিভাবে প্রকৃতির মধ্যেও আছে
রকমভেদ। প্রকৃতির প্রাণকেন্দ্র পৃথিবীর মূল সম্পদ হলো ভূমি, পানি ও পরিবেশগত বৈচিত্র্য। আর পরিবেশ
বৈচিত্র্যের অন্যতম কারিগর উদ্ভিদ। পৃথিবীর মোট উদ্ভিদ প্রজাতির ভেতরকার ২৫ ভাগই
বৃক্ষ। আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ অমূল্য বৃক্ষ ছাড়া কল্পনা করা অবান্তর। তাই ইসলাম
এই প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ ও বৃক্ষরোপণে জনসচেতনতা তৈরিতে কালজয়ী নির্দেশনা
প্রদান করেছে।
ইসলামে পরিবেশ সংরক্ষণ:
সুস্থ ও সুন্দরভাবে জীবনধারণের জন্য প্রতিটি
প্রাণিকুলেরই ভারসাম্যপূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশ দরকার। আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে
যেমনগাছপালা, মাটি, পানি, বায়ু, জীবজন্তু, পশুপাখি, রাস্তাঘাট, নদীনালা, পাহাড়-পর্বত, যানবাহন, বাড়ি-ঘর ও কল-কারখানা ইত্যাদি নিয়েই পরিবেশ।
কোন পরিবেশে বাস করলে মানুষের সুবিধা হবে বা মানুষ বেঁচে থাকতে পারবে, ইসলাম তা সুনিশ্চিত করেছে। তাই ইসলাম
প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। আমাদের চারপাশে যা কিছু রয়েছে এবং
যা প্রাকৃতিক পরিবেশ হিসেবে খ্যাত, এগুলো মহান স্রষ্টার অপার নেয়ামত।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
وَالْأَرْضَ
مَدَدْنَاهَا وَأَلْقَيْنَا فِيهَا رَوَاسِيَ وَأَنْبَتْنَا فِيهَا مِنْ كُلِّ
شَيْءٍ مَوْزُونٍ (19) وَجَعَلْنَا لَكُمْ فِيهَا مَعَايِشَ وَمَنْ لَسْتُمْ لَهُ
بِرَازِقِينَ (20) وَإِنْ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا عِنْدَنَا خَزَائِنُهُ وَمَا
نُنَزِّلُهُ إِلَّا بِقَدَرٍ مَعْلُومٍ (21) وَأَرْسَلْنَا الرِّيَاحَ لَوَاقِحَ
فَأَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَسْقَيْنَاكُمُوهُ وَمَا أَنْتُمْ لَهُ
بِخَازِنِينَ (22)
আমি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছি এবং এতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং আমি পৃথিবীতে
প্রতিটি বস্তু সুপরিমিতভাবে উত্পন্ন করেছি। আমি তোমাদের জন্য তাতে জীবিকার
ব্যবস্থা করেছি এবং তোমরা যাদের রিজিকদাতা নও, তাদের জন্যও। প্রতিটি বস্তুর ভাণ্ডার আমার
কাছে আছে এবং আমি তা প্রয়োজনীয় পরিমাণেই সরবরাহ করে থাকি। আমি বৃষ্টিগর্ভ বায়ু
প্রেরণ করি, অতঃপর আকাশ
থেকে বারিধারা বর্ষণ করি এবং তা তোমাদের পান করতে দিই, বস্তুত এর ভাণ্ডার তোমাদের কাছে নেই। (সূরা আল হেজর-১৫ : ১৯-২২)
আল্লাহ তায়ালা প্রাকৃতিক পরিবেশকে মানুষের
সুস্থ, সুন্দর ও
স্বাভাবিক বাসোপযোগী করে অত্যন্ত ভারসাম্যপূর্ণ করে সৃষ্টি করেছেন। তাই তো আমরা
দেখি প্রচণ্ড শীতপ্রধান অঞ্চলগুলোতে যেখানে বছরের প্রায় পুরোটা জুড়ে মাঠ, ঘাট, নদী-নালাসর্বত্রই বরফে ঢাকা থাকে, সেখানেও প্রাকৃতিক উদ্ভিদকুল সবুজের ডানা
মেলে এবং বরফ আচ্ছাদিত মত্স্যকুল স্বাভাবিক জীবন পরিচালনের মাধ্যমে স্রষ্টার অপার
মহিমার জানান দেয়। মূলত মহান আল্লাহ আমাদের অশেষ কল্যাণে ও উপকারের জন্য নানা
প্রজাতির পশুপাখি ও জীবজন্তু সৃষ্টি করেছেন। মানুষ ও প্রাণিকুলের বেঁচে থাকার জন্য
উদ্ভিদ ও গাছপালা সৃষ্টি করেছেন।
আবার পানি ও বায়ুর প্রয়োজন উদ্ভিদ ও
প্রাণিকুলের। অন্যদিকে পাহাড়-পর্বত রক্ষা করে প্রাকৃতিক ভারসাম্য। আর নদী-নালা, সাগর-মহাসাগর পরিবেশের অন্তর্নিহিত
প্রাণপ্রবাহ অব্যাহত রাখে। তাই আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে পৃথিবীর মানুষকে প্রাকৃতিক পরিবেশের
ভারসাম্য রক্ষার দিকনির্দেশনা দিয়ে ঘোষণা করেছেন,
اللَّهُ
الَّذِي يُرْسِلُ الرِّيَاحَ فَتُثِيرُ سَحَابًا فَيَبْسُطُهُ فِي السَّمَاءِ
كَيْفَ يَشَاءُ وَيَجْعَلُهُ كِسَفًا فَتَرَى الْوَدْقَ يَخْرُجُ مِنْ خِلَالِهِ
فَإِذَا أَصَابَ بِهِ مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ إِذَا هُمْ يَسْتَبْشِرُونَ
তিনিই আল্লাহ, যিনি বায়ু
প্রেরণ করেন। অতঃপর তা (বায়ু) মেঘমালাকে সঞ্চালিত করে। অতঃপর তিনি (আল্লাহ)
মেঘমালাকে যেভাবে ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তাকে (মেঘমালাকে) স্তরে স্তরে রাখেন।
এরপর তুমি দেখতে পাও, তার মধ্য
থেকে বারিধারা নির্গত হয়। তিনি তার বান্দাদের মধ্যে যাদের ইচ্ছা তা (বৃষ্টি)
পৌঁছান, তখন তারা
আনন্দিত হয়। (সূরা
রুম-৩০:৪৮)
সুন্দরভাবে বাঁচার জন্য চাই সুস্থ ও মনোরম
প্রাকৃতিক পরিবেশ। অনুকূল ও সুন্দর পরিবেশ ছাড়া কোনো জীবের অস্তিত্ব দীর্ঘায়িত হতে
পারে না। বনভূমি ও পশুপাখি আল্লাহ তায়ালার অকৃত্রিম দান ও প্রকৃতির অনিন্দ্য
শোভাবর্ধক। তাই রাসুল (সা.) প্রকৃতি-পরিবেশ সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য
বিশেষভাবে নির্দেশনা প্রদান করেছেন। পরিবেশ সংরক্ষণ ও তাপমাত্রা কমানোর জন্য
প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য অতীব প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ।
এ জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার দাবিতে
দুনিয়াজুড়ে আজ সম্মিলিত রব উঠেছে। কিন্তু কিছু
মানুষের অদূরদর্শিতা ও অমানবিক আচরণের কারণে প্রাকৃতিক পরিবেশ দিন দিন ভারসাম্য
হারিয়ে ফেলছে। অথচ প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে ইসলামের মৌলনীতি হলো, প্রকৃতির অন্যান্য সৃষ্টির কোনোরূপ ধ্বংস বা
বিনাশ, অপচয় বা
অপব্যবহার করা সমীচীন নয়। কেননা প্রতিটি সৃষ্টিই কোনো না কোনোভাবে মানুষ বা অন্য
কোনো সৃষ্টিকে সেবা দানে সদা অবিচল। এ জন্য পরিবেশ ধ্বংসের যেকোনো ধরনের উদ্যোগ বা
প্রচেষ্টা মানুষসহ অন্যান্য সৃষ্টিকে আল্লাহ প্রদত্ত সেবা থেকে বঞ্চিত করার
নামান্তর। তাই বিনা প্রয়োজনে আযৌক্তিকভাবে সৃষ্টিকে কোনো সেবা থেকে বঞ্চিত না করা
প্রকৃত মুমিনের পরিচায়ক।
ইসলামে বৃক্ষরোপণ:
পরিবেশের স্বাভাবিক ভারসাম্য রক্ষায় ও
দূষণমুক্ত সবুজাভ পরিবেশ তৈরিতে বৃক্ষ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুধু
পরিবেশ রক্ষার জন্যই নয়; বরং ধর্মীয়
কারণেও মানুষকে বৃক্ষরোপণ করতে হবে। মানবদরদি রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.) পরিবেশের
ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষরোপণ ও তা পরিচর্যার কথা উল্লেখ করে গেছেন।
পৃথিবীতে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য মানুষ
প্রাকৃতিক উপায়ে খাদ্যশস্য ও মৌসুমি ফলমূল উত্পাদনের যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করে, বৃক্ষরোপণ তন্মধ্যে অত্যাবশ্যকীয় কাজ। আল্লাহ
তায়ালা মানুষ সৃষ্টি করে ভূপৃষ্ঠের প্রয়োজনীয় জীবনোপকরণ হিসেবে ফলবান বৃক্ষরাজি ও
সবুজ-শ্যামল বনভূমির দ্বারা একে সুশোভিত ও অপরূপ সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছেন। গাছপালা
দ্বারা ভূমণ্ডল ও পরিবেশ-প্রাকৃতিক ভারসাম্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে তাই ঘোষণা এসেছে,
وَالْأَرْضَ مَدَدْنَاهَا وَأَلْقَيْنَا فِيهَا رَوَاسِيَ
وَأَنْبَتْنَا فِيهَا مِنْ كُلِّ زَوْجٍ بَهِيجٍ (7) تَبْصِرَةً وَذِكْرَى لِكُلِّ
عَبْدٍ مُنِيبٍ (8) وَنَزَّلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً مُبَارَكًا فَأَنْبَتْنَا بِهِ
جَنَّاتٍ وَحَبَّ الْحَصِيدِ (9)
আমি ভূমিকে বিস্তৃত করেছি ও তাতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং তাতে নয়নাভিরাম
সর্বপ্রকার উদ্ভিদ উদ্গত করেছি। আর আমি আকাশ থেকে কল্যাণময় বৃষ্টিবর্ষণ করি এবং এর
দ্বারা উদ্যান ও পরিপক্ব শস্যরাজি উদ্গত করি, যেগুলোর ফসল আহরণ করা হয়। (সূরা কাফ্ব-৫০:৭-৯)
গাছবিহীন এক মুহূর্তও আমরা কল্পনা করতে পারি
না। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শাস্ত্র-পুরাণ, নীতিকথা, বাণিজ্য, দর্শন, শিল্প-সংস্কৃতি, আশ্রয়-প্রশান্তি এবং যাপিত জীবনের সব কিছুই
গাছকে ঘিরে ও গাছকে নিয়ে। গাছ নিহত হলে গাছ শুধু একাই মরে না। মানুষসহ সব প্রাণসত্তার
জন্যই তা ঝুঁকি ও উত্কণ্ঠার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একটি পূর্ণবয়স্ক বৃক্ষ বছরে যে
পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ করে তা কমপক্ষে ১০ জন পূর্ণবয়স্ক মানুষের বার্ষিক
অক্সিজেনের চাহিদা মেটায়। ভারতের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টি এম দাস ১৯৭৯
সালে পূর্ণবয়স্ক একটি বৃক্ষের অবদান আর্থিক মূল্যে বিবেচনা করে দেখান যে ৫০ বছর
বয়সী একটি বৃক্ষের অর্থনৈতিক মূল্য প্রায় এক লাখ ৮৮ হাজার মার্কিন ডলার (সূত্র: ইন্ডিয়ান বায়োলজিস্ট, ভলিয়ম-১১, সংখ্যা-১-২) টি এম দাসের হিসাবে, ৫০ বছর বয়সী একটি বৃক্ষ বছরে প্রায় ২১ লাখ
টাকার অক্সিজেন সরবরাহ করে। বছরে প্রাণিসম্পদের জন্য প্রোটিন জোগায় এক লাখ ৪০
হাজার টাকার।
ইসলামে হালাল জীবিকা উপার্জন ও জনকল্যাণমূলক
বিষয় হিসেবে কৃষিকাজ তথা ফলবান বৃক্ষরোপণ ও শস্যবীজ বপনের প্রত্যক্ষ ইঙ্গিত রয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা মানুষকে প্রকৃতির যতগুলো নিয়ামত দান করেছেন, তন্মধ্যে শ্রেষ্ঠতম হচ্ছে বৃক্ষরাজি।
সৃষ্টিকুলের জীবন-জীবিকা ও বৃহৎ কল্যাণের জন্য গাছপালা, বৃক্ষলতা এবং মৌসুমি ফল-ফসলের প্রয়োজনীয়তা
অনস্বীকার্য।
মহান আল্লাহর সৃষ্টি বৃক্ষরাজি যে কত বড়
নিয়ামত পবিত্র কোরআনে একাধিক আয়াত থেকে তার প্রমাণ প্রতীয়মান। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ
হচ্ছে,
أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّا نَسُوقُ الْمَاءَ إِلَى
الْأَرْضِ الْجُرُزِ فَنُخْرِجُ بِهِ زَرْعًا تَأْكُلُ مِنْهُ أَنْعَامُهُمْ وَأَنْفُسُهُمْ
أَفَلَا يُبْصِرُونَ
তারা কি লক্ষ করে না, আমি উষর
ভূমির ওপর পানি প্রবাহিত করে তার সাহায্যে উদগত করি শস্য, যা থেকে তাদের গবাদি পশু এবং তারা নিজেরা
আহার গ্রহণ করে। (সূরা
আস সাজদা-৩২:২৭)
মানুষের জীবনধারণের প্রয়োজনীয় উপকরণ, পুষ্টিকর ফলমূল, খাদ্যদ্রব্যের উপকারিতা ও স্বাস্থ্য সচেতনতার
বিষয়ে ইসলামে দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। মানবদেহের জন্য খাদ্য হিসেবে বৃক্ষের
ফলমূল বিশেষ উপকারী, তাই আল্লাহ
এটিকে সৃষ্টির প্রতি বিশেষ নিয়ামত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এ ব্যাপারে ঘোষণা এসেছে,
يُنْبِتُ لَكُمْ بِهِ الزَّرْعَ وَالزَّيْتُونَ وَالنَّخِيلَ
وَالْأَعْنَابَ وَمِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَةً لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
তিনি তোমাদের জন্য বৃষ্টির দ্বারা উত্পাদন করেন ফসল, জয়তুন, খেজুর, আঙুর এবং সর্বপ্রকার ফলমূল। নিশ্চয়ই এতে
চিন্তাশীলদের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা নাহাল-১৬: ১১)
ইসলামে ফলদ বৃক্ষরোপণ ও ফসল ফলানোকে সবিশেষ
সওয়ারের কাজ হিসেবে সদকায়ে জারিয়া বা প্রবহমান দানরূপে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কেননা
ব্যক্তি যদি একটি বৃক্ষরোপণ ও তাতে পরিচর্যা করেন, তাহলে ওই গাছটি যত দিন বেঁচে থাকবে এবং মানুষ
ও অন্যান্য জীবজন্তু যত দিন তার ফল বা উপকার ভোগ করতে থাকবে, তত দিন ওই ব্যক্তির আমলনামায় পুণ্যের সওয়াব
লেখা হতে থাকবে। সদকায়ে জারিয়ার জন্য ছায়াদানকারী ফলবান বৃক্ষই তুলনামূলক বেশি
উপকারী। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা করেছেন,
যদি কোনো মুসলমান একটি বৃক্ষরোপণ করে অথবা কোনো শস্য উত্পাদন করে এবং তা থেকে
কোনো মানুষ কিংবা পাখি অথবা পশু ভক্ষণ করে, তবে তা উত্পাদনকারীর জন্য সদকাহ (দান) স্বরূপ
গণ্য হবে। (বুখারী-২৩২০, মুসলিম-১৫৬৩/১২)
বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা করতে নির্দেশ দিয়ে মহানবী (সা.) বলেছেন,
যদি নিশ্চিতভাবে জানো যে কিয়ামত এসে গেছে, তখন হাতে যদি একটি গাছের চারা থাকে, যা রোপণ করা যায়, তবে সেই চারাটি রোপণ করবে।(হজরত আয়েশা (রা.)
হতে বর্ণিত) এমনিভাবে পবিত্র কুরআন ও হাদিসে বৃক্ষরোপণের প্রতি মানুষকে
বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। একদা নবী করিম (সা.) হজরত সালমান ফারসি (রা.)-কে
মুক্তির জন্য তাঁর মালিকের কাছে গেলেন। মালিক মুক্তিপণ হিসেবে ১০০ খেজুর গাছ
রোপণের শর্তারোপ করলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাতে রাজি হলেন এবং নিজ হাতে ১০০ খেজুর
গাছের চারা রোপণ করে তাঁকে মুক্ত করলেন।
এ জন্য পরিবেশ সংরক্ষণে মানুষের সর্বপ্রধান
দায়িত্ব হলো, দূষণের
যথার্থ কারণ চিহ্নিত করে তা রোধকল্পে কার্যকরী ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বায়ু, পানি, বৃক্ষরাজি ও পাহাড়-পর্বত ইত্যাদি। প্রাকৃতিক
পরিবেশের উল্লিখিত উপকরণগুলোর মধ্যে নির্মল বায়ু ও সুপেয় পানিপ্রাপ্তি সব
সৃষ্টজীবেরই প্রত্যাশিত। বিশেষ করে মানুষের জন্যই এই পরিবেশের এত বিশাল আয়োজন। আর
বিশ্বব্যাপী মানুষই শিল্পায়ন ও নগরায়ণের আড়ালে প্রাকৃতিক পরিবেশ তুলনামূলক নষ্ট
করছে বেশি। শিল্পায়নের যুগে কল-কারখানার নির্গত কালো ধোঁয়া একদিকে যেমন বাতাসে
অক্সিজেনের মাত্রা কমিয়ে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বাড়িয়ে জীবনকে করে তুলছে
দুর্বিষহ। অন্যদিকে কতেক কল-কারখানার নির্গত
শিল্পবর্জ্য পানিতে মিশে পানিকে করছে দূষিত, যা মানুষের স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও মত্স্য প্রজাতির জন্য মারাত্মক
হুমকিস্বরূপ।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিশ্রুত চিকিৎসাবিজ্ঞানী আবু
আলী ইবন সিনার উক্তিটি প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, পৃথিবীর এত ধূলি, ধোঁয়া ও গ্যাস যদি মানুষের ফুসফুসে না ঢুকত, তাহলে মানুষ হাজার বছর ধরে সুস্থ অবস্থায়
জীবিত থাকত। এমনিভাবে নগরায়ণ ও শিল্পায়নের প্রভাবে প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্য
পাহাড়-পর্বত বিরান ভূমিতে এবং বনভূমি প্রতিনিয়ত উজাড় হচ্ছে। মূলত মানুষ অবিবেচকের
মতো বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার পরিবেশগত বিপর্যয়কে আরো বেশি ত্বরান্বিত
করেছে। তা ছাড়া পরিবেশবাদীরা বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা চিহ্নিত করতে
গিয়ে প্রথমেই প্রাকৃতিক পরিবেশের দূষণকেই দায়ী করছেন।
এ ক্ষেত্রে পরিকল্পিত নগরায়ণ এবং
পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নই পারে আমাদের প্রাণসত্তার লীলাভূমি প্রাকৃতিক পরিবেশ
সুরক্ষিত রাখতে। আর বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে ছোট আয়তনের একটি দেশ
হয়েও প্রাণবৈচিত্র্য এবং ভিন্ন রকম প্রতিবেশ ও জটিল বাস্তুসংস্থানে ভরপুর এক অনন্য
পরিসর। কিন্তু দিন দিন দেশের এই বৈচিত্র্যময় প্রাণ ও পরিসর নিশ্চিহ্ন হয়ে এক
সংকটময় পরিস্থিতি তৈরি করছে।
সূতরাং আসুন, প্রাকৃতিক পরিবেশের বন্ধুখ্যাত গাছকে
নির্বিচারে না কেটে প্রচুর বৃক্ষরোপণের উদ্যোগ গ্রহণ করি।
No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com