মুনাজাত শেষে মুখে হাত মোছার বিধান কি?
-এম এ রাজ্জাক হাওলাদার
عَنْ عُمَرَ بْنِ الخَطَّابِ،
قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا رَفَعَ يَدَيْهِ فِي الدُّعَاءِ، لَمْ
يَحُطَّهُمَا حَتَّى يَمْسَحَ بِهِمَا وَجْهَهُ قَالَ مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى
فِي حَدِيثِهِ: لَمْ يَرُدَّهُمَا حَتَّى يَمْسَحَ بِهِمَا وَجْهَهُ.
উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি
বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুআ করার সময় যখন তার উভয়
হাত উঠাতেন, তিনি তা দিয়ে তার
মুখমণ্ডল মর্দন না করা পর্যন্ত নামাতেন না। [সুনানে তিরমিজী-২/১৭৬, শামেলা-৩৩৮৬; মুসনাদে
বাজ্জার-১/২৪৩, হাদীস নং-১১২৯, মুসতাদরাকে
হাকেম-২/৭৪৮, হাদীস নং-১৯৬৭]
অন্য হাদীসে এসেছে-
عَنْ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا تَسْتُرُوا
الْجُدُرَ مَنْ نَظَرَ فِي كِتَابِ أَخِيهِ بِغَيْرِ إِذْنِهِ، فَإِنَّمَا يَنْظُرُ فِي النَّارِ، سَلُوا اللَّهَ
بِبُطُونِ أَكُفِّكُمْ، وَلَا تَسْأَلُوهُ
بِظُهُورِهَا، فَإِذَا فَرَغْتُمْ، فَامْسَحُوا بِهَا وُجُوهَكُمْ»، قَالَ أَبُو
دَاوُدَ: «رُوِيَ هَذَا الْحَدِيثُ مِنْ غَيْرِ وَجْهٍ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ كَعْبٍ
كُلُّهَا وَاهِيَةٌ، وَهَذَا الطَّرِيقُ أَمْثَلُهَا وَهُوَ ضَعِيفٌ أَيْضًا»
‘আবদুল্লাহ
ইবনু ‘আব্বাস রাযিয়াল্লাহু ‘আনহুমা সূত্রে বর্ণিত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের ঘরের দেয়ালগুলো
পর্দায় আবৃত করো না। যে ব্যক্তি বিনা অনুমতিতে তার ভাইয়ের চিঠিতে দৃষ্টি নিক্ষেপ
করলো, সে যেন জাহান্নামের আগুনের দিকে তাকালো। তোমরা হাতের পৃষ্ঠের
দ্বারা নয় বরং হাতের তালুর দ্বারা আল্লাহর কাছে চাইবে। অতঃপর দু‘আ
শেষে তোমাদের হাতের তালু দিয়ে নিজের চেহারা মুছবে। [সুনানে আবু দাউদ-১/২০৯, হাদীস
নং-১৪৮৫, মুস্তাদরাকে হাকেম-২/৭৪৯, হাদীস
নং-১৯৬৮, মুজামে কাবীর
লিততাবারানী-১০/৩১৯, হাদীস নং-১০৭৭৯]
عن الزهرى قال: كان رسول الله
صلى الله عليه وسلم يرفع يديه عند صدره فى الدعاء، ثم يمسح بهما وجهه (مصنف عبد
الرزاق-2/247، رقم-3234
والله اعلم بالصواب
হাত তুলে মুনাজাত করার পর মুখমন্ডল
মাসাহ করা যাবে কি?
মুনাজাত
বা হাত তুলে দো‘আ শেষে মুখমন্ডল মাসাহ করার পক্ষে কোন ছহীহ
হাদীছ বর্ণিত হয়নি। ইমাম আবুদাঊদ (রহঃ) মুখে হাত মাসাহ করা সংক্রান্ত হাদীছ বর্ণনা
করে তা যঈফ হিসাবে উল্লেখ করেছেন (আবুদাঊদ হা/১৪৮৫,
পৃঃ
২০৯)।
শায়খ
আলবানী (রহঃ) এ সংক্রান্ত হাদীছগুলো পর্যালোচনা শেষে বলেন, ‘দো‘আর পর মুখে দু’হাত
মাসাহ করা সম্পর্কে কোন ছহীহ হাদীছ নেই’ (আলবানী, মিশকাত হা/২২৫৫-এর টীকা দ্রষ্টব্য)।
ইমাম
ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) থেকে হাত তুলে
দো‘আ করার ব্যাপারে বহু ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু
মুখমন্ডল মাসাহ করার ব্যাপারে এক বা দু’টি বর্ণনা এসেছে, যার
দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় না ।(মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২২/৫১৯) -মাসিক তারীক-প্রশ্ন-১৫/৩৩৫ জুন ২১
আমাদের দেশে দোয়া-মোনাজাত শেষে
মুখমণ্ডলে হাত মোছার একটা ব্যাপক প্রচলন আছে। অনেকে আবার মোনাজাত শেষে হাত ছেড়ে
দেন। কিন্তু বেশিরভাড় মানুষকে দেখা যায়, মুখে
হাত মুছতে। এটার পক্ষে-বিপক্ষে কথা ও যুক্তিও আছে। তবে দোয়া শেষে হাত চেহারায় মোছা
হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। তাই চেহারায় এভাবে হাত মোছা হাদিস সম্মত। তবে হাত না
মুছলেও কোনো সমস্যা নেই।
হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করার সময় যখন তার উভয় হাত উঠাতেন, তিনি
তা দিয়ে তার মুখমণ্ডল মর্দন না করা পর্যন্ত নামাতেন না। (সুনানে তিরমিজি: ২/১৭৬)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)
সূত্রে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা
তোমাদের ঘরের দেয়ালগুলো পর্দায় আবৃত করো না। যে ব্যক্তি বিনা অনুমতিতে তার ভাইয়ের
চিঠিতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো, সে যেন জাহান্নামের আগুনের দিকে
তাকালো। তোমরা হাতের পৃষ্ঠের দ্বারা নয় বরং হাতের তালুর দ্বারা আল্লাহর কাছে
চাইবে। অতঃপর দোয়া শেষে তোমাদের হাতের তালু দিয়ে নিজের চেহারা মুছবে। (সুনানে আবু
দাউদ: ১/২০৯)
আরেকটি বিষয় হলো, দোয়া
বা মোনাজাতে কোনো ধরনের উদাসীনতা প্রকাশ করা যাবে না। অনেক সময় দেখা যায়, অনেকেই
দোয়ার জন্য তোলার পর উদাসীন। বিশেষ করে জুমার দিন বিষয়টি বেশি চোখে পড়ে। মসজিদ
থেকে বের হচ্ছে আর হাঁটতে হাঁটতে হাত তুলে দোয়া করছে। অর্থাৎ নিছক হাত তুলেছে।
এমনও দেখা যায় যে, হাত তুলে আরেকজনের সঙ্গে গল্প করছে, হাতের
আঙ্গুল ফোটাচ্ছে ইত্যাদি। এ সবই উদাসীনতার সঙ্গে দোয়া করার শামিল, যা
কখনোই উচিত নয়।
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, উদাসীনতার
সঙ্গে দোয়া করলে আল্লাহ সে দোয়া কবুল করেন না। ইরশাদ হয়েছে, হজরত
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দোয়া কবুল করা হবে এই বিশ্বাস নিয়ে তোমরা দোয়া করো এবং
জেনে রাখো আল্লাহতায়ালা উদাসীন হৃদয়ের দোয়া কবুল করেন না। (সুনানে জামে তিরমিজি:
৪৭৯)
সব সময় দোয়ায় অংশগ্রহণ করতে হবে এটা
তো জরুরি না। দোয়ায় যদি শরিক হওয়ার সময় না থাকে তাহলে শরিক হবো না। কিন্তু
আল্লাহতায়ালার সামনে হাত তুলে মনোযোগ অন্যদিকে থাকা কখোনোই সমীচীন নয়। এটা
পরিত্যাগ করতে হবে।
No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com