Saturday, November 18, 2023

বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট একটি শক্তিশালী প্রচারমাধ্যম

 


বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট একটি  শক্তিশালী প্রচারমাধ্যম:

-এম এ রাজ্জাক হাওলাদার

প্রথম পর্ব

 

বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট এ সময়ের শক্তিশালী প্রচারমাধ্যম:

ইন্টারনেট এ সময়ের শক্তিশালী প্রচারমাধ্যম। ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোনো দেশে বিপ্লব হচ্ছে। কোথাও বা সরকারের গদি টলে যাচ্ছে। আবার এর মাধ্যমে দুষ্কৃতকারীরা সহজেই গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছে। অশ্লীলতা ও নগ্নতার প্রসার ঘটছে। তরুণ প্রজন্মের কাছে ইন্টারনেট আজ মাদকের মতোই ভয়ংকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার ইন্টারনেটে মানবকল্যাণকর চিন্তা ও উপকারী বার্তাও শেয়ার করে নেকি অর্জন করছে ধর্মপ্রেমিকরা। ইন্টারনেটে যারা অযৌক্তিকভাবে ইসলাম-আরআন এবং নবীজি (সা.)-এর বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিচ্ছে মুসলিম মেধাবী তরুণরা সেসবের যৌক্তিক জবাবও দিয়ে যাচ্ছে। এক কথায় ইন্টারনেট দুনিয়ায় ভালো-মন্দ, সাদা-কালো- দুটো দিকই আছে। এখন আপনাকেই বেছে নিতে হবে আপনি কেন ও কীভাবে ইন্টারনেট ব্রাউজ করবেন। 

রাসূল (সা.)-এর হাদীসে এসেছে, কেউ আমাকে খারাপ বললেও আমি তাকে খারাপ বলব না। অথচ আজকাল আমাকে আর খারাপ বলতে হয় না। কারও কথা বা মত আমার মতের সঙ্গে মেলেনি। ব্যাস! তাকে এমন ভাষায় গালাগাল শুরু করে দিই, যা একজন মুসলমানের মুখে কখনই শোভা পায় না।

মিশকাত শরিফের এক হাদীসে এসেছে, নবীজি (সা.) বলেছেন, “মুমিন কখনও গালিবাজ হয় না। গালি দেয়া সুস্থ মানসিকতার পরিচয় নয়। অভ্যাসের বশে অনেকেই কথায় কথায় গালি দেয়। আবার অনেকে হাসি-ঠাট্টাচ্ছলেও অন্যকে গালি দিয়ে বসে। এসবের কোনোটিই ঠিক নয়। গালি সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন,

 

এমন দুব্যক্তি যারা একে-অপরকে গালি দেয়, গালির পাপ সে ব্যক্তির আমলনামায় লেখা হবে, যে প্রথমে গালি দিয়েছে। যে পর্যন্ত না দ্বিতীয় ব্যক্তি সীমা ছাড়িয়ে যায়।

অন্য হাদীসে আছে,

 

মুমিন কখনও অভিশাপকারী, অশ্লীল ও গালিবাজ হয় না। (জামে তিরমিজি-২০৪৩) 

আচ্ছা বলুন তো দেখি, কাফেররা যে আমাদের নবীজিকে কত কষ্ট দিয়েছে, গালি দিয়েছে বিনিময়ে নবীজি কি একদিনও কাফের-মুশরিকদের পাল্টা গালি দিয়েছেন? তাহলে সেই নবীর উম্মত হয়ে কীভাবে আপনি অন্যকে গালাগাল করেন? একজন মুসলমানকে গালি দেয়া সম্পর্কে নবীজি (সা.) বলেছেন, “কোনো মুসলমানকে গালি দেয়া চরম পাপ কাজ। (বুখারী ও মুসলিম) 

 

ইন্টারনেট বুঝে না বুঝে অন্যের পোস্ট শেয়ার করা:

ইন্টারনেটে অনেকেই না বুঝে অন্যের পোস্ট শেয়ার করে ফেলেন। সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের প্রয়োজনও মনে করেন না। এটিও ঠিক নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত আমি এ পোস্টের সত্যতার ব্যাপারে নিশ্চিত না হব ততক্ষণ পর্যন্ত এ পোস্ট শেয়ার করা আমার জন্য গোনাহ।

প্রসঙ্গতঃ রাসূল (সা.) বলেছেন,

 

কোনো মানুষের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট, সে যা শুনে সত্যতা যাচাই না করে তা-ই বিশ্বাস করে। (মুসলিম-)

চলবে-----।

 

বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট একটি  শক্তিশালী প্রচারমাধ্যম:

-এম এ রাজ্জাক হাওলাদার

দ্বিতীয় পর্ব

 

ইন্টারনেট ব্যবহারের বিধান কী ?

আমরা জানি, ইন্টারনেটে বৈধ-অবৈধ অনেক কিছুই পাওয়া যায়। প্রশ্ন হলো, এ কারণে কি ইন্টারনেট ব্যবহার করা জায়েয হবে? যে বিষয়গুলোর মধ্যে ভালো-খারাপ উভয়টির সংমিশ্রণ রয়েছে সে বিষয়গুলোকে এক কথায় উত্তর দেওয়া যায় না। ইন্টারনেটে ভালো-খারাপ উভয় দিকই আছে। মোট কথা ইন্টারনেট হলো তথ্যের ভাণ্ডার। এখানে ভালো বিষয় যেমন আছে, তেমনি অশ্লীল বিষয়ও রয়েছে। তাই এর হুকুম হবে ব্যবহারকারী হিসেবে। 

সুতরাং যদি কেউ এটাকে অবৈধ কাজে ব্যবহার করে তাহলে তা তার জন্য হারাম হবে। আর যদি বৈধ ও দ্বীনী কাজে ব্যবহার করে তাহলে তা জায়েয হবে। তবে যারা পুরোপুরি দ্বীনের উপর চলতে চায়, পরিপূর্ণ তাকওয়া অবলম্বন করতে চায়, নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে না পারে এবং ইন্টারনেটের এই পিচ্ছিল জগতে হোঁচট খাওয়ার আশঙ্কায় থাকে তাদের জন্য ইন্টারনেট থেকে দূরে থাকাই নিরাপদ। কারণ পাপের দরজা বন্ধ না করে পাপ থেকে বিরত থাকা খুবই কঠিন। 

এ প্রসঙ্গে রাসূল (সা.) বলেন

فَمَنِ اتَّقَى الشُّبُهَاتِ، اسْتَبْرَأَ لِدِيْنِهِ وَعِرْضِهِ، وَمَنْ وَقَعَ فِي الشُّبُهَاتِ وَقَعَ في الحَرَامِ،       

যে ব্যক্তি এই সন্দিহান বস্তুসমূহ হতে দূরে থাকবে, সে তার দ্বীন ও ইজ্জতকে বাঁচিয়ে নেবে এবং যে ব্যক্তি সন্দিহানে পতিত হবে (সন্দিগ্ধ বস্তু ভক্ষণ করবে), সে হারামে পতিত হবে। (সহীহ বুখারী-৫২) 

সুতরাং একান্ত প্রয়োজন না হলে ই্ন্টারনেট থেকে দূরে থাকাই কাম্য। (রদ্দুল মুহতার ৬/৩৫০; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যা মুআসারা-১/৩৫৯) 

 

ইন্টারনেট জগতের গুনাহ: ভয়াবহতা এবং বাঁচার আমল ও কৌশল: 

চিকিৎসা পেলাম, বাঁচার কৌশলও জানলাম কিন্তু কেবল জেনেই গেলাম, সতর্ক হলাম না, হিম্মত করলাম না, পদক্ষেপ নিলাম না তাহলে মনে রাখবেন, যদি কেউ নিজের পায়ে কুড়াল মারতে চায় তাহলে তাকে বাঁচাবে কে! কেউ যদি আগুনে ঝাঁপ দিতে চায় তাহলে তাকে কে আছে রক্ষা করবে! এজন্য আবারও বলছি, মুজাহাদা করতে হবে, আত্মপ্রত্যয়ী হতে হবে। আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ ভরসা করে সামনে বাড়তে হবে। তাহলে ইন শা আল্লাহ আল্লাহ তাআলা আপনার প্রতি রহমতের দৃষ্টি দিবেন এবং এই ভার্চুয়াল অপশক্তির মোকাবেলা করতে পারবেন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন

وَٱلَّذِيْنَ جَٰهَدُواْ فِيْنَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا ۚ وَإِنَّ ٱللهَ لَمَعَ ٱلْمُحْسِنِيْنَ  

আর যারা আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায় তাদেরকে আমি অবশ্য অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। অবশ্যই আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের সঙ্গে আছেন। (সূরা আনকাবুত-২৯:৬৯) 

যাই হোক, এই পর্যায়ে ইন্টারনেট জগতের গুনাহ থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে আমি আপনাদের সামনে কতিপয় আমল ও কৌশল পেশ করছি। 

 

১. ভালো মজলিসের সঙ্গে নিজে জুড়ে রাখবেন: 

সব সময় একজন হক্কানি আলেমের টাচে থাকবেন, তাঁর মজলিসে নিয়মিত অংশগ্রহণ করবেন। বলতে পারেন, ভেজালের এই জামানায় নেক মজলিস পাবো কোথায়? কার কথা শুনে নিজেকে সংশোধন করবো? কীভাবে বুঝবো যে, অমুক মজলিসটি নেক এবং আল্লাহ তাআলার কাছে মাকবুল। এর সমাধানও হাদীসে আছে। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত

قِيْلَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ، أَيُّ جُلَسَائِنَا خَيْرٌ؟ قَالَ: مَنْ ذَكَّرَكُمُ اللهَ رُؤْيَتُهُ، وَزَادَ فِي عِلْمِكُمْ مَنْطِقُهُ، وَذَكَّرَكُمْ بِالْآخِرَةِ عَمَلُهُ    

এক ব্যক্তি প্রশ্ন করলো, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাদের বসার সঙ্গী বা মজলিস হিসেবে কোনটি সবচেয়ে উত্তম? রাসুলুল্লাহ (সা.) উত্তর দিলেন, যার সাক্ষাৎ তোমাদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, যার কথায় তোমাদের ইলম বেড়ে যায় এবং যার আমল তোমাদেরকে আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। (মুসনাদ ইবন আব্বাস-৬৩৮) 

সুতরাং যে শায়খের মজলিসে এই তিনটি প্রভাব অনুধাবন করবেন তাঁর মজলিসে নিয়মিত আসা-যাওয়া করবেন। তাঁর কথা শুনবেন। এমনকি মাঝে মধ্যে কোনো কাজ না থাকলেও তাঁর কাছে যাবেন, যতক্ষণ পারেন সময় দিবেন, যেতে দেরী হয়ে গেলে ফোন করে খোঁজখবর নিবেন এবং দিবেন। দেখবেন, আমি আপনাকে আশ্বস্ত করছি, এর প্রভাব আপনি তখনও নিশ্চিত অনুভব করবেন, যখন রাতের অন্ধকারে আপনি স্মার্ট ফোনটা হাতে নিবেন। ব্রাউজিং করার সময় গুনাহর চিন্তা যখন আপনাকে তাড়িত করবে, তখন এই নেক সোহবতের নূর আপনি অনুভব করবেন। 

دم كے دم میں قلب نورانی ہوئی 

مرد حق سے ملکے حقا نی ہوئی 

ধীরে ধীরে অন্তর আলোকিত হয়েছে, আল্লাহওয়ালার সঙ্গে মিলে হক্কানি হয়ে উঠেছে।

 

২. ফেতনা থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা: 

          এতক্ষণে আলহামদুলিল্লাহআমরা অন্তত এতটুকু তো বুঝে গেছি যে, ফেতনাটি কেয়ামতের দিন আমাদের জন্য ইস্যু হয়ে যেতে পারে। আল্লাহ তাআলার ভাষায়

أَنَّمَا يُرِيْدُ اللهُ أَنْ يُّصِيْبَهُمْ بِبَعْضِ ذُنُوْبِهِمْ  (سورة المائدة

আল্লাহ তাআলা তাদেরকে কিছু গুনাহর জন্য শাস্তি দিতে চান। (সূরা মায়েদাহ-৫:৪৯) 

সুতরাং কীভাবে এই আশা করতে পারেন যে, আল্লাহ তাআলার বিশেষ রহমত ও সাহায্য ছাড়া গুনাহটি থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন! এই জন্যই আল্লাহ তাআলার নিকট মুক্তির জন্য দোয়া করবেন। তাঁর কাছে তাঁর বিশেষ রহমত কামনা করবেন। 

ফেৎনা থেকে কীভাবে দোয়া করবেন? তবে একটা ছোট্ট দোয়া আপাতত বলে দেই। দোয়াটি প্রত্যেক নামাজের পর করবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর প্রিয় সাহাবী মুয়ায (রা.)-কে ওসিয়ত করেছেন যে, তুমি প্রত্যেক নামাজের পর দোয়াটি  পড়বে; কখনো ভুল করবে না। দোয়াটি এই

اَللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلٰى ذِكْرِكَ وشُكرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ ـ       

হে আল্লাহ! আপনার স্মরণে, আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশে এবং আপনার উত্তম ইবাদাতে আমাকে সাহায্য করুন। (সুনান আবু দাউদ-১৫২২) 

আমরা জানি, নামজের পরে দোয়া কবুল হয়। সুতরাং দোয়াটি যদি একবার কবুল হয়ে যায় তাহলে ফেতনাটি থেকে বের হয়ে আসা ইন শা আল্লাহ সহজ হয়ে যাবে। 

 

৩. মাঝে মাঝে নির্জনে চোখের পানি ঝড়াতে হবে:

দোয়া তো করবেন। এর জন্য কোনো সময় নেই; বরং যখন মনে চায় তখনই দোয়া করবেন। এমনকি দোয়ার জন্য হাত তোলাও জরুরি নয়। কিন্তু মাঝে মাঝে নির্জনে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটিও করতে হবে। কেননা, গুনাহটা তো এই চোখ দ্বারাই হয় এবং নির্জনে বেশি হয়। সুতরাং নির্জনে কিছু চোখের পানিও দিতে হবে। এটা সাধারণ দোয়া থেকে স্পেশাল। এই চোখের পানির অনেক দাম। আল্লাহ তাআলা হযরত ইবরাহীম আলাইহিসসালামকে বলেন, হে ইবরাহীম! জাহান্নামের আগুনকে নেভানোর শক্তি কোনো পানির নেই। একটা পানি ছাড়া। তাহল, বান্দার চোখের পানি। এই পানি আমার জন্য দিলে জাহান্নামের আগুনও নিভে যায়।  রাসুলুল্লাহ (সা.)  হাদীসে বলেছেন

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لاَ يَلِجُ النَّارَ رَجُلٌ بَكَى مِنْ خَشْيَةِ اللهِ حَتَّى يَعُودَ اللَّبَنُ فِي الضَّرْعِ، وَلاَ يَجْتَمِعُ غُبَارٌ فِي سَبِيْلِ اللهِ وَدُخَانُ جَهَنَّمَ.    

যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে কাঁদে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। দুধ স্তনে ফিরে যাওয়া যেমন অসম্ভব, তেমনি তার জাহান্নামে প্রবেশ করাও অসম্ভব। (জামি তিরমিযী-২৩১১; শামেলা-১৬৩৩) 

গুনাহর কারণে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন। আর আল্লাহর অসন্তুষ্টির চড়ান্ত বহিঃপ্রকাশের নামই হল, জাহান্নাম। আর সেই জাহান্নাম থেকে চোখের পানির উসিলায় যদি বেঁচে যেতে পারেন, এর অর্থ হল, আল্লাহ তাআলা আপনাকে হয় গুনাহটি থেকে বিশেষ রহমতে বাঁচিয়ে নিবেন কিংবা মউতের আগে হলেও এ থেকে তাওবার তাওফীক দিয়ে দিবেন।

 

৪. হাদীসে সাওবান মনে রাখা:  

ইন্টারনেটের গুনাহ থেকে আত্মরক্ষার জন্য এখন যে আমল বা চিকিৎসার কথা বলবো, তা বিশেষভাবে আমাদের মত লোকদের জন্য। অর্থাৎ, যারা দৃশ্যতঃ দ্বীনদার। মা শা আল্লাহ মসজিদে আসে। তবে ফজর নামাজে আসে না। কেন? ঐব্যক্তি রাতের গুনাহর কারণে। আসরের সময় ঘুমে থাকে তারপর সূর্য যখন লাল হয়ে যায়। নবীজির ভাষায় সূর্য যখন শয়তানের দুশিং-এর মাঝ দিয়ে উদয় হয়- তখন তড়িঘড়ি করে নামাজ পড়ে নেয়। কেন? রাতের ঐব্যক্তি গুনাহর কারণে। অনুরূপভাবে বলা যায় যে, দাঁড়ী আছে, টুপি আছে, পাঞ্জাবী আছে, চিল্লায় যায়, আলেমদের সোহবতে যায়, জিকিরের মজলিসে বসে কিন্তু গোপনে গোপনে গুনাহও করে। অর্থাৎ, আমি বুঝাতে চাচ্ছি, যারা বাহ্যিক সুরতে দ্বীনদার। তারা যদি একটি হাদীসের বিষয়বস্তু সব সময় মনে রাখেন, বিশেষ করে যদি গুনাহটি করার সময় মনে রাখতে পারেন তাহলে গুনাহটি করার ভত তার ঘাড় থেকে নেমে যায়। আমি ব্যক্তিগতভাবে আলহামদুলিল্লাহ ফায়দা পেয়েছি। আশা করি আপনারাও পাবেন। হাদীস হুবহু মনে রাখার প্রয়োজন নেই। শুধু বিষয়বস্তুটা মনে রাখলেই চলবে। হাদীসটি এই, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

عَنْ ثَوْبَانَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ قَالَ: ্রلَأَعْلَمَنَّ أَقْوَامًا مِنْ أُمَّتِي يَأْتُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِحَسَنَاتٍ أَمْثَالِ جِبَالِ تِهَامَةَ بِيضًا، فَيَجْعَلُهَا اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ هَبَاءً مَنْثُورًاগ্ধ ، قَالَ ثَوْبَانُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ صِفْهُمْ لَنَا، جَلِّهِمْ لَنَا أَنْ لَا نَكُونَ مِنْهُمْ، وَنَحْنُ لَا نَعْلَمُ، قَالَ: ্রأَمَا إِنَّهُمْ إِخْوَانُكُمْ، وَمِنْ جِلْدَتِكُمْ، وَيَأْخُذُونَ مِنَ اللَّيْلِ كَمَا تَأْخُذُونَ، وَلَكِنَّهُمْ أَقْوَامٌ إِذَا خَلَوْا بِمَحَارِمِ اللَّهِ انْتَهَكُوهَا

আমি আমার উম্মতের কিছু লোক সম্পর্কে জানি যারা কেয়ামতের দিন তিহামা পাহাড় পরিমাণ শুভ্র নেক আমল নিয়ে হাজির হবে। (অর্থাৎ, হয়ত তাদের জীবনে নফল আছে। তাবলীগ আছে। তালীম আছে। দ্বীনের বহুমুখী খেদমত আছে।) কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাদের এত বিশাল বিশাল আমলকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করে একেবারে লাপাত্তা করে দিবেন। হাদিসটির বর্ণনাকারী সাওবান রাযি.-এটা শুনে বলে উঠলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাদের পরিচয় পরিষ্কারভাবে আমাদের নিকট বর্ণনা করুন, যাতে অজ্ঞাতসারে আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত না হই। রাসুলুল্লাহ (সা.) উত্তর দিলেন, তারা তোমাদেরই ভাই এবং তোমাদেরই সম্প্রদায়ভুক্ত। তোমাদের যেমন রাত আসে তাদের কাছেও রাত আসে। কিন্তু তারা এমন লোক যে, নির্জনে নিভৃতে আল্লাহর নাফরমানীতে লিপ্ত হয়। (ইবন মাজাহ-৪২৪৫) 

সুতরাং ভাবুন, এই ভার্চুয়াল গুনাহ, গোপন গুনাহ আমার আমল নষ্ট করে দিচ্ছে না তো? আমার তাবলীগ, আমার জিহাদ, আমার হজ, আমার ইতেকাফ, আমার সাদাকা অজগরের মত গিলে ফেলছে না তো?! এভাবে চিন্তা ধরে রাখতে পারলে ইন শা আল্লাহ গুনাহগুলো থেকে সহজে বের হয়ে আসতে পারবেন।

চলবে--------।

 

বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট একটি  শক্তিশালী প্রচারমাধ্যম:

-এম এ রাজ্জাক হাওলাদার

তৃতিয় পর্ব- শেষ

 

প্রযুক্তি ইসলামের কাজে সহায়ক হতে পারে: 

ইসলাম ও প্রযুক্তি আদৌ সাংঘর্ষিত নয়, বরং প্রযুক্তি ইসলামের কাজে সহায়ক হতে পারে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন,

وَيَخْلُقُ مَا لَا تَعْلَمُونَ   

আল্লাহ এমন অনেক কিছুই সৃষ্টি করেন যা তোমরা জান না। (–সূরা নাহল-১৬:৮)

নিম্নে প্রযুক্তি যে ইসলামের সহায়ক তার কতিপয় দিক তুলো ধরলাম:

ক.বিজ্ঞান প্রযুক্তির নতুন আবিস্কার:

প্রতিনিয়ত বিজ্ঞান প্রযুক্তির নতুন আবিষ্কার প্রকৃতপক্ষে এ আয়াতেরই বাস্তবরূপ। আর আল্লাহতায়ালা যা সৃষ্টি করেন তা কোনো না কোনোভাবে মানুষের উপকারের জন্যই। সুতরাং নতুন নতুন প্রযুক্তি মানুষের দৈনন্দিন জীবনের উপকারের সঙ্গে মানবিক সীমারেখা রেখে এগুলোকে পার্থিব ও ধর্মীয় কাজে ব্যবহার করাই যুক্তিসঙ্গত। 

প্রায়ই অনেককে বলতে শুনি, ইসলাম ও প্রযুক্তির মাঝে কোনো সম্পর্ক নেই, প্রযুক্তি এবং ইসলামকে কখনও এক করা যাবে না। প্রযুক্তি ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। প্রযুক্তি মানুষকে দিন দিন ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে এ ধারণা ঠিক নয়, ইসলাম ও প্রযুক্তি আদৌ সাংঘর্ষিত নয়। বরং প্রযুক্তি ইসলামের কাজে সহায়ক হতে পারে। প্রযুক্তির সাহায্যে ইসলামের কাজ করা এখন সহজ হয়েছে।

খ.মিডিয়ার ভালো-মন্দ ছড়ায়:  

অনেককে এটাও বলতে শুনেছি মিডিয়া ও প্রযুক্তি মানুষকে ইসলাম থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। অনেকের ধারণা মিডিয়া হলো শুধুমাত্র একটা বিনোদন মাধ্যম। এমন কথারও কোনো ভিত্তি নেই। আসলে প্রতিটি বিষয়েরই ভালো-মন্দ দুটি দিক রয়েছে। আর এ ভালো-মন্দটা নির্ভর করে ব্যবহারকারীর ব্যবহারের ওপর। 

ইন্টারনেট এখন অধিকাংশ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পূর্ণ একটা দিন তো দূরের কথা, মাত্র কয়েক ঘণ্টাও মানুষ এখন ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চায় না। ইন্টারনেটে প্রায় সব বিষয়ের তথ্যই রয়েছে। ইসলাম সম্পর্কে অনেকে তথ্যও পাওয়া যায় এখানে। ইসলামের ইতিহাস, হজরত নবী করিম (সা.)-এর জীবনী, নবী যুগের অবস্থা, ইসলামি গ্রন্থ, কোরআনের তাফসির, হাদিসের গ্রন্থ ও এসবের ব্যাখ্যাও পাওয়া যায়।   

ইন্টারনেটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো- ইউটিউব। ইউটিউবে নানা বিষয়ের চ্যানেল আছে। সেসব চ্যানেলে ইসলামি বক্তৃতা পাওয়া যায়। তাফসিরুল কোরআন, সিরাত ও ফেরাকে বাতেলার মতো বড় বড় সভার বক্তৃতাগুলো এখানে সংরক্ষিতভাবে পাওয়া যায়। যে কারণে অনেক মানুষ ঘরে বসেই ইসলামের অসংখ্য বিষয় শিখতে পারছে খুব সহজে।

 

গ.ওয়েবসাইট, প্রযুক্তি, ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার:  

বর্তমানে যোগাযোগ মাধ্যমের সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়েবসাইট হলো- ফেসসবুক। সমাজের ছোট-বড়, যুবক, বৃদ্ধ, ধনী-গরিব প্রায় সবাই এখন ফেসবুকের সঙ্গে পরিচিত। ফেসবুক জগৎটাই অন্যরকম। যদিও তার ইতিবাচক দিক থেকে নেতিবাচক দিক বেশি কিন্তু তার এ ভালো-মন্দটা নির্ভর করে ব্যবহারের ওপর। 

ফেসবুকেও এখন অনেক ইসলামি পেজ আছে। যেগুলোতে ইসলামের অনেক শিক্ষণীয় বিষয় পোস্ট করা হয়। কুরআন-হাদীসের তথ্যও পাওয়া যায়। কিন্তু এগুলোর অধিকাংশই ভুলে ভরা। এখানে সম্পৃক্ত হয়ে ইসলাম বিষয়ে অভিজ্ঞদের কাজ করতে হবে।   

এখন মানুষের হাতে হাতে আছে স্মার্ট ফোন। ধার্মিক মানুষের ধারণা স্মার্ট ফোন তরুণ প্রজন্মের সময় নষ্টের অন্যতম কারণ। কিন্তু এ স্মার্ট ফোন অনেক উপকারেও আসে। এখানে কোরআন-হাদিস এবং অনেক বড় বড় গ্রন্থ রাখা যায়। আজানের সময় এলার্ম দেওয়া, দিক নির্ণয় এমন বহুবিধ সুবিধাই পাওয়া যায় স্মার্ট ফোন থেকে। 

কিছু মানুষের ধারণা প্রযুক্তি, ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া এগুলো বর্তমান প্রজন্মের পথভ্রষ্ট হওয়ার কারণ। এমন ধারণা পুরোপুরি ঠিক না। আসলে বর্তমান প্রজন্ম এগুলো থেকে অনেক কিছু শিখছেন। প্রযুক্তি এবং ইন্টারনেটের সুব্যবহারের মাধ্যমেই তো তারা ভবিষ্যতে ইসলামকে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে প্রচার করতে পারবেন।


--------------------------------------------

No comments:

Post a Comment

razzakhowlader59@gmil.com