Sunday, November 26, 2023

আইয়ামে বিজের রোজা

 


আইয়ামে বিজের রোজা

এম এ রাজ্জাক হাওলাদার

ইয়ামে বিজের রোজা রাখার গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ বছরজুড়ে সহজে রোজার সওয়াব পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম এ রোজা। এ ছাড়াও বছর জুড়ে রোজার সওয়াব পাওয়ার আরও আমল আছে। তবে তুলনামূলক ভাবে সহজে ও সারা বছর রোজার সওয়াব মেলে এ রোজায়। হাদিসের বর্ণনা থেকে তা প্রমাণিত। কিন্তু তা কীভাবে?

প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, “হে আব্দুল্লাহ! তোমার জন্য যথেষ্ট যে, তুমি প্রত্যেক মাসে তিন দিন রোজা রাখবে। কেননা নেক আমলের বদলে তোমার জন্য রয়েছে দশগুণ নেকি। এভাবে সারা বছরের রোজা হয়ে যায়।”

প্রতি চন্দ্র মাসে তিনটি রোজা রাখা মুস্তাহাব। দিনগুলো হলো আইয়ামুল বিজ তথা প্রতি আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫তম দিন। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো এ রোজাগুলো ছাড়তেন না। তিনি সব সময় আইয়ামে বিজের রোজা রাখতেন। এমনকি সফরেও। তবে রোজাগুলো ফজিলতপূর্ণ হলেও তিনি উম্মতের জন্য এ রোজাকে বাধ্যতামূলক করেননি।

অপর একটি হাদীসে এসেছে-

তুমি যদি (প্রতি) মাসে তিনটি রোজা রাখতে চাও, তাহলে তেরো, চৌদ্দ এবং পনেরোতম দিনে রোজা রাখবে।” (তিরমিজি-, নাসাঈ-, ইবনে হিব্বান-, মুসনাদে আহমাদ-)

আইয়ামে বিজের রোজার পুরস্কার:

হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আন প্রতিদিন রোজা রাখতেন। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে প্রতিদিন রোজা রাখতে নিষেধ করেন এবং উপদেশ দেন এভাবে-

“হে আবদুল্লাহ! আমি এ সংবাদ পেয়েছি যে, তুমি প্রতিদিন রোজা রাখো এবং সারা রাত নামাজ আদায় করে থাক। আমি বললাম, ঠিক (শুনেছেন) হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেন- এরূপ করবে না (বরং মাঝে মাঝে) রোজা রাখো আবার ছেড়েও দাও। (রাতে) নামাজ আদায় করো আবার ঘুমাও। কেননা তোমার উপর তোমার শরীরের হাক রয়েছে, তোমার চোখের হাক রয়েছে, তোমার উপর তোমার স্ত্রীর হাক আছে, তোমার মেহমানের হাক আছে। (বরং) তোমার জন্য যথেষ্ট যে, তুমি প্রত্যেক মাসে তিন দিন রোজা রাখবে। কেননা নেক আমলের বদলে তোমার জন্য রয়েছে দশগুণ নেকি। এভাবে সারা বছরের রোজা পালন হয়ে যায়।” (বুখারী-১৯৭৫)

বছরজুড়ে রোজা পালন:

আইয়ামে বিজে রোজা রাখার বিষয়ে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। এবং বলেছেন, “আইয়ামে বিজের রোজা রাখা সারা বছরই রোজা রাখার সমতুল্য।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস বর্ণনা করেছেন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেছেন, “তুমি প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখবে-এটা তোমার জন্য ভালো। কেননা তোমার একটি সৎকাজ দশগুণ সমান; ফলে তুমি যেন পুরো বছরই রোজা রাখছো।” (বুখারী- ; নাসায়ী-২৪২০ ; আবুদাউদ-২৪৫০ )

হয়রত আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রতি মাসে তিনটি রোজা রাখল; সে যেন সারা বছরই রোজা রাখল।”

অতঃপর এর সমর্থনে আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে নাজিল করেন- যে একটি নেকি নিয়ে আসে তার জন্য রয়েছে তার ১০গুণ।অতএব একদিন ১০ দিনের সমান।” (তিরমিজি-)

হযরত ইবনু মিলহান আল-ক্বাইসি তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের আইয়ামে বিজের রোজার ব্যাপারে নসিহত করেছেন; আমরা যেন তা (মাসের) ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ পালন করি। তিনি আরও বলেছেন, এটা সারা বছর রোজা রাখার মতোই।’ (আবু দাউদ-২৪৪৯)

আইয়ামে বিজের রোজা সম্পর্কে আরও বর্ণিত হয়েছে যে-

হযরত আদম ও হাওয়া আলাইহিস সালাম বেহেশতের নিষিদ্ধ ফল খাওয়ার পর তাদের শরীর থেকে জান্নাতি পোশাক চলে যায়। আর তাদের শরীরের রংও কুৎসিত হয়ে যায়। এরপর হজরত আদম ও হাওয়া আলাইহিস সালাম আল্লাহর হুকুমে চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ এবং ১৫ তারিখে রোজা রাখলে আবার তাদের শরীরের রং পূর্বের ন্যায় উজ্জ্বল হয়ে যায়তাই এই তিন দিনকে আইয়্যামে বিজ বা উজ্জ্বলতার দিন বলা হয়।

প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখা কত সময় রোজা রাখার সমতুল্য?

আমরা যদি প্রতি মাসে নিয়মিত ভাবে ৩ দিন রোজা রাখি তাহলে ৩x১০=৩০ দিন রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যাবে। অর্থাৎ আমরা যদি প্রতি মাসেই  দিন করে রোজা রাখি পুরো মাসটাই রোজা রাখার সওয়াব পাব। আর যত দিন বেঁচে আছি এভাবে রোজা রাখতে থাকলে আমরা ইনশাআল্লাহ সারা জীবন রোজা রাখার সওয়াব পাব। সুবহানাল্লাহ!

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, আইয়ামে বিজের রোজা পালন করা। হাদীসের ওপর যথাযথ আমল করানবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিয়মিত আমলটি পালন করে বছরজুড়ে রোজার সওয়াব পাওয়া চেষ্টা করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রত্যেক আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ তিনদিন আইয়ামে বিজের রোজা রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।

No comments:

Post a Comment

razzakhowlader59@gmil.com