-এম এ
রাজ্জাক হাওলাদার
একজন মুমিন ব্যক্তির দায়িত্ব ও কর্তব্যকে ব্যক্তিকেন্দ্রিক
ও সামাজিক এ দুভাগে ভাগ করা যেতে পারে। এ প্রবন্ধে পবিত্র কুরআনের আলোকে একজন
মুমিন ব্যক্তির ব্যক্তিগত দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
১. আত্ম গঠন : ইমানদার
ব্যক্তি সবার আগে নিজেকে তৈরী করবে। কোনটি ভাল কল্যাণকর আর কোনটি মন্দ অকল্যাণকর
তা ভালভাবে জানবে এবং সে অনুযায়ী আমল করবে। পবিত্র কুরআনুল কারিম
বিশ্বাসী ব্যক্তিদেরকে আত্মসংশোধনের জন্য আহবান জনাচ্ছে :“ হে বিশ্বাসিগণ! তোমাদের দায়িত্ব তোমাদের
ওপরই ন্যাস্ত, তোমরা যখন
সঠিক পথে আছ তখন পথভ্রষ্টরা তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না”।
২. প্রকৃত বিশ্বাস : যে কেউ
আল্লাহর প্রতি ইমান ও বিশ্বাসের দাবী করতে পারে কিন্তু মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে
যে ইমান গ্রহণযোগ্য তা হচ্ছে আল্লাহ, তার নবী (সা.), কুরআন এবং আরো অন্যান্য আসমানী গ্রন্থসমূহের প্রতি যথার্থ
বিশ্বাস :“হে বিশ্বাসিগণ!
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি এবং যে গ্রন্থ তিনি তাঁর রাসূলের ওপর অবতীর্ণ করেছেন
এবং সেই গ্রন্থের প্রতিও বিশ্বাস স্থাপন কর যা তিনি পূর্বে অবতীর্ণ করেছেন”।
৩. আল্লাহর দাসত্ব : ইমানের রুহ
হচ্ছে, বিনাবাক্যে আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলা
এবং তার দাসত্ব করা। এই প্রকার দাসত্বের উজ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে ব্যক্তিগত ইবাদত ও
প্রর্থনা :“হে আমার বিশ্বাসী
বান্দাগণ! নিশ্চয় আমার ভূম-ল প্রশস্ত, সুতরাং তোমরা আমারই উপাসনা কর”।
৪. সিয়াম বা রোযা : ইমানদার ব্যক্তির আরেকটি দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে রোযা
যা ইমানকে দৃঢ় ও মজবুত কর এবং প্রবিদ্ধি ঘটায়: “হে বিশ্বাসিগণ! রোযা যেরূপ তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর
আবশ্যিক ছিল তেমনি তোমাদের ওপরও তা আবশ্যিক করা হল; হয়ত তোমরা সাবধানী (ও আত্মসংযমী) হবে ”।
৫. আল্লাহ ও রাসূলের
(সা.) আহবানে সাড়া দেয়া : আল্লাহ ও তার রাসূলের পথনির্দেশনাই মানুষকে প্রকৃত জীবনের সন্ধান দান করেন।
পবিত্র কোরআনে যে জীবনকে “হায়াতে তাইয়্যেবাহ” বা পবিত্র জীবন বলা হয়েছে :“ হে বিশ্বাসিগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আহ্বানে সাড়া
দাও যখন সে (রাসূল) তোমাদের এমন বিষয়ের প্রতি আহ্বান করে যা তোমাদের জীবিত করে”।
৬. আল্লাহর শত্রুদের সাথে বন্ধুত্ব না করা : মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এটা পছন্দ করেন না যে, ইমানদার ব্যক্তিরা আল্লাহর শত্রু এবং
মুমিনব্যক্তিদের শত্রুদের সাথে বন্ধুত্ব করবেন। পবিত্র কুরআনে এ ব্যাপারে
কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে :“হে বিশ্বাসিগণ! আমার ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধুরূপে গ্রহণ কর
না”।
৭. খোদাভীতি :
আত্মসংযম ও খোদাভীতি এমন এক আত্মিক শক্তি যা দ্বারা মন্দ কাজ থেকে নিজেকে দূরে
রাখা যায়। অনুরূপভাবে ভাল কাজও করা যায়। মুমিনদের কর্তব্য হচ্ছে এই মহামূল্যবান
সম্পদকে নিজেদের মধ্যে উদ্ভাবন করা এবং দৃঢ় ও মজবুত করা :“ (হে নবী) বলুন : হে আমার বান্দারা, যারা ইমান এনেছো, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকে ভয় কর”।
৮. প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করা : যেসব বিশ্বাসীব্যক্তিরা তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনা
মহান আল্লাহ তাআলা প্রতিবাদী কন্ঠে তাদের তিরস্কার করেছেন :“হে বিশ্বাসিগণ! তোমরা এমন কথা কেন বল যা
তোমরা কর না?”। অর্থাৎ যদি প্রকৃত মুমিন হও তবে অবশ্যই নিজস্ব অঙ্গিকার
অনুযায়ী কাজ কর। যদি বল যে, আল্লাহর প্রতি এনেছো তবে শুধুমাত্র তারই দাসত্ব কর, কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করনা এবং কাজে
কর্মে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো দাসত্ব করনা।
মুমিনের সমাজিক
কর্তব্য :
একজন মুমিন
ব্যক্তির যেমন ব্যক্তিগত দায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে তেমনি সামাজিক দায়িত্ব কর্তব্যও
রয়েছে। নিম্নে পবিত্র কুরআনের
আলোকে একজন ইমানদার ব্যক্তির কতিপয় সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে ইঙ্গিত
করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
১. সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা : পবিত্র কুরআনে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকে নবী
রাসূলদের আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। তাদের দায়িত্ব
হচ্ছে ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় মুমিন ব্যক্তিদের আহবান করা :“ এবং তাদের
সাথে গ্রন্থ ও ন্যায়দ- (নিক্তি) অবতীর্ণ করেছি, যাতে
মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে”। একই প্রেক্ষাপটে পবিত্র কুরআন অন্য এক বর্ণনার দ্বারা সুবিচার ও জনহিতকর
কাজ করার জন্য নির্দেশ দিচ্ছে :“ নিশ্চয় আল্লাহ
ন্যায়পরায়ণতা এবং সদাচরণের আদেশ করেন”।
২. ব্যয়ভার বহন করা : ইমানদার ব্যক্তিদের দায়িত্ব রয়েছে তারা
তাদের অভাবি দ্বীনি ভাইকে আর্থিক সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবেন। এমনকি অমুসলিমদের
সাহায্যার্থে অর্থ খরচ করাও খুব ভাল কাজ। ব্যয়ভার বহন করার গুরুত্ব এতই যে, পবিত্র কুরআনের অসংখ্য আয়াতে নামাজের পাশাপাশি তা এসেছে
:“ যারা অদৃশ্যে বিশ্বাসী এবং নামায প্রতিষ্ঠা করে ও তাদের যা
প্রদান করেছি তা থেকে (আল্লাহর পথে) ব্যয় করে”।
৩. সৎ কাজের নির্দেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ : মুমিন ব্যক্তি
নিজেকে যেমন ভালকাজে রত করেন আর মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখেন। তেমনি তার
দায়িত্ব রয়েছে সমাজের অন্যান্য মানুষকেও মন্দ কাজে বাধা দেয়া এবং ভালকাজে আদেশ করা
:“ বিশ্বাসী পুরুষ ও বিশ্বাসী নারীরা একে অপরের বন্ধু; তারা
সৎকর্মের আদেশ দেয় এবং অসৎকর্ম হতে নিবৃত্ত করে”।
আল্লাহর এই হুকুম
পবিত্র কুরআনের কোন কোন আয়াতে নামাজ যাকাতের মত
আবশ্যিক কর্তব্যের সাথে উল্লেখ করা হয়েছে যা তার অত্যাধিক গুরুত্বের পরিচয় বহন
করে।
৪. হারাম খাওয়া থেকে বিরত থাকা : ইমানদার ব্যক্তি অর্থনৈতিক লেনদেনের
ক্ষেত্রে বিশেষ যতনবান, যেন
আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা লংঘিত না হয় এবং ইসলামী শরিয়তে যেগুলোকে হারাম বলে
উল্লেখ করা হয়েছে জীবনযাত্রার জন্য যেন সেগুলোকে নির্বাচন না করে :“হে
বিশ্বাসিগণ! তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের ধন-সম্পদ ভক্ষণ কর না”।
৫. মন্দ ধারণা থেকে বিরত থাকা : ইসলামী সমাজের নিরাপত্তা এবং শান্তি
রক্ষার্থে অবশ্যই বিশ্বাসী ভাই বোনদের সম্পর্কে কু-ধারণা করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
কেননা খারাপ ধারণা পারস্পরিক সৌহার্দ সম্প্রীতি ও ভালবাসাকে দূর্বল করে দেয় :“ হে
ইমানদার ব্যক্তিরা তোমরা বেশী বেশী অনুমান করা থেকে বেচে থাক,
(কেননা) কিছু কিছু অনুমান অপরাধ (পাপ)”।
No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com